'আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, উলফা,বাংগালী অভিবাসন'--- সঞ্জীব বড়ুয়ার একটি আলাপচারীতা[শেষ পর্ব]

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: রবি, ০৫/০৮/২০০৭ - ৭:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..

।।প্রথম পর্ব ।।

এখানে প্রাসংগিক ভাবেই একটা প্রশ্ন আসতে পারে, কাশ্মির কিংবা পাঞ্জাব সমস্যা ভারতীয় মুল স্রোতে যতটুকু আলোড়ন তুলেছে, আসাম ও উত্তরপুর্বাঞ্চলের সমস্যাগুলো ততোটাই অনুচচারিত কেনো? সর্বভারতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক মিডিয়া এসব এড়িয়ে যাওয়ার কারন কি?

ভারতে জনগনের জন্য মনোযোগ আকর্ষক বিষয়ের অভাব নেই । কাশ্মীর আলাদা মনোযোগ দাবী করে কারন কাশ্মীর ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রের জন্য অমীমাংসিত দ্বন্ধ । এটা একই সাথে আভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক ইস্যু । অপরদিকে পাঞ্জাব দিল্লীর খুব নিকটে । পাঞ্জাব সমস্যাসংকুল হলে দিল্লী আক্রান্ত হয় । এ ছাড়া সামরিক বাহিনী থেকে ব্যবসা বানিজ্য সব ক্ষেত্রে পাঞ্জাবীদের রয়েছে জোরালো অবস্থান । সুতরাং তাদেরকে উপেক্ষা করার সুযোগ কেন্দ্রের নেই ।
অপরদিকে আসাম ও উত্তরপুর্বাঞ্চল যেনো বহুদুরের দেশ । কেন্দ্র এটাকে সংজ্ঞায়ত করে 'সমস্যাসংকুল সীমান্ত' হিসেবে । এর বেশী কিছু নয় ।
সুতরাং উত্তরপুর্ব কে বারবার কেন্দ্রে ছূটে যেতে হবে । মিডিয়ার কাছে,সংবাদপত্র,টিভি,বুদ্ধিজীবি ও সিদ্ধান্তগ্রহীতার কাছে ধর্না দিতে,করূনা প্রার্থনা করতে হবে-'আমার দিকে দয়া করে আপনারা মনোযোগী হোন' । তাই করতে হবে কারন সবকিছু তো দিল্লী থেকেই নিয়ন্ত্রিত । এ কারনেই আমি বিকেন্দ্রীকরনের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানাই ।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে,আরো সুনির্দিষ্টভাবে এই অঞ্চলে সশস্ত্র সংঘাতের জন্য অনেক বিশেষজ্ঞই 'অসম্পুর্ন উন্নয়ন' কে দায়ী করেছেন । এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?

আমার মনে হয়না সব আঞ্চলিক সংঘাতগুলো উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত । এমন নয় যে পুর্নমাত্রায় উন্নয়ন সম্ভব হলেই সংঘাত এড়ানো যেতো । তাহলে স্পেনের বাস্ক কিংবা কানাডার কুইবেক নিয়ে সমস্যা তৈরী হতোনা । এমন কি ভারতের পাঞ্জাবে দশক জুড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছে অথচ পাঞ্জাব ভারতের সবচেয়ে উন্নত রাজ্যগুলোর একটি ।
আমি বরং বলতে চাই এই সংঘাতগুলোর জন্ম হয়েছে একটি অত্যাধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ভেতর । আর তা হলো 'জাতিরাষ্ট্র' । মানব ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় দেখা যায়- একটি আদর্শ রাজনৈতিক সীমানা গড়ে উঠে তার অন্তর্গত জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে । আধুনিক কালে এটাকেই আমরা সংজ্ঞায়িত করেছি 'জাতি' হিসাবে । খেয়াল করুন সর্ব্বোচচ আন্তর্জাতিক সংগঠনটির নামকরন হয়েছে 'জাতিসংঘ', 'রাষ্ট্রসংঘ' নয় । কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভিত্তি করে জোর করে জাতি বানানো, সবসময়ই একটি রক্তাক্ত অমানবিক প্রক্রিয়া । এটা শুধু তৃতীয় বিশ্বের সমস্যা নয়, এই সমস্যা ফ্রান্সের মতো উন্নত রাষ্ট্রে ও আছে ।আমরা মানব ইতিহাসের স্বাভাবিক গতিধারা অস্বীকার করে জোরকরে এক একটি আঁটোসাটো,শৃংখলিত জাতিস্বত্বা তৈরী করতে চাচ্ছি । 'জাতিরাষ্ট্র' তৈরীর এই গ্লোবাল নির্দেশই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্টীগুলোকে সশস্ত্র সংঘাতে ঠেলে দিচ্ছে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে ।


আপনি আপনার গ্রন্থে আরেকটা বিষয় উল্লেখ করেছেন যে- ১৮৭৪ সালে বৃটিশরা আসাম রাজ্য গঠন করার সময় যে সব পলিসি নির্দিষ্ট করেছিল, সেগুলো এ অঞ্চলের মানুষের আন্তঃসম্পর্ককে বদলে দিয়েছে । যেমন, উপনিবেশিক শাসকেরা পাহাড়ের মানুষ ও সমতলের মানুষকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছে( উদাহরন স্বরুপঃ নাগা ও অহমিয়া) । সেই উপনিবেশিক পলিসিগুলো কি এখনো প্রভাবক হিসাবে কাজ করে?

বৃটিশরা ভারতের অন্যান্য রাজ্য গঠনের ক্ষেত্রে যে পলিসি গ্রহন করেছিলো,আসামের ক্ষেত্রে তা ছিলো ভিন্ন । এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র বিবেচনায় না এনে প্রশাসনিক সুবিধাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । অবশ্য ভারত স্বাধীন হবার পর আরো অনেক রাজ্যের মতো আসাম রাজ্যের ও কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস ঘটে ।

এবার আসি আপনার প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশে । ১৮৭৩ সালে বৃটিশরা এ অঞ্চলের জন্য রুপরেখা প্রনয়ন করে। রুপরেখা অনুযায়ী সমতলের রাজ্যগুলো ও পাহাড়ী রাজ্যগুলোকে আলাদা করা হয় । বিশেষ অনুমতি ছাড়া পাহাড়ী রাজ্যসমুহে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয় । নিঃসন্দেহে এটা সেসময়ে খুব জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত ছিলোনা । কারন পাহাড় ও সমতলের রাজ্যসমহের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আদানপ্রদান ছিলো । উদাহরন দেয়া যায়ঃ আসামের রাজ দরবারে অনেক গুরুত্বপুর্ন পদে নাগা রা ছিলো । এমন কি অহমিয়া ও নাগা ভাষার সমন্বয়ে 'নাগামিজ' নামে উপভাষা ও চালু হয়েছিল ।
তবে এই রুপরেখা পাহাড়ী রাজ্যগুলোকে অন্তত একটা ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা ও দিয়েছি । সমতলের রাজ্যগুলো -আসাম ও ত্রিপুরা যেমন অভিবাসীদের দ্বারা ভরে গেছে,পাহাড়ী রাজ্য অরুনাচল কিংবা মিজোরামের বেলা তা হয়নি ।

আরেকটা ঔপনিবেশিক পলিসি ছিলো-আসাম কে কেবলমাত্র বাংলার একটি সম্প্রসারিত এলাকা বলে বিবেচনা করা । এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?

আসামকে বাংলার একটা সম্প্রসারিত এলাকা বলে বিবেচনা করার বেশ কিছু কারন ছিলো । প্রথমতঃ পুর্ববংগে তখনো কৃষিজমির তুলনায় জনসংখ্যার চাপ ছিলো বেশী । অপরদিকে আসামে ছড়িয়ে ছিলো বিশাল অনাবাদী কিন্তু উর্বরা জমি । ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সময়ের মধ্যে বৃটিশরা পুর্ববংগের বহু ক্ষুদ্র ও ভুমিহীন কৃষককে আসামে নিয়ে আসে ।
দ্বিতীয়তঃ ১৮৭৪সালে যে আসাম প্রোভিন্স গঠিত হয় তার ভেতর অন্তর্ভুক্ত ছিলো বৃহত্তর সিলেটের মতো বিশাল বাংলাভাষী অঞ্চল (বর্তমানে বাংলাদেশের একটি বিভাগ) । তার ও আগে আসাম প্রশাসনিকভাবে বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিলো ,১৮৭৩ সাল পর্যন্ত আদালত ও শিক্ষার মাধ্যম ছিলো বাংলা ।
এমনকি ১৯০৫-১৯১২ সময়ের মধ্যে ঢাকাকে রাজধানী করে পুর্ববংগ ও আসাম মিলিয়ে নতুন প্রোভিন্স তৈরী করার ও চেষ্টা করা হয়েছিলো ।

সুতরাং এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে বহু আগে থেকেই আসামে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর বসবাস । তবে এটা ও মনে রাখা দরকার অনেক বাংলাভাষীদের পরের প্রজন্ম যাদের জন্ম আসামে,তারা অহমিয়া ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত । একই সময়ে, ঐতিহাসিক কারনেই বাংগালী সংস্কৃতি ও অহমিয়া সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র‌্য বজায় রাখার চাপ ছিলো অহমিয়াদের । এই চাপ থেকেই অনেক সময় বাংগালী-অহমিয়া সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, কখনো কখনো যা সশস্ত্র সংঘাতে ও রূপ নিয়েছে

এরকম একটা মতামত শুনা যায় যে, রাষ্ট্রীয় ভাবে ভারতের অতিমাত্রায় কেন্দ্রীকরন নীতি আসাম এবং অন্যান্য রাজ্যসমুহের বিচ্ছিন্নতাবাদকে উস্কে দিচ্ছে । অতিকেন্দ্রীকরনের কারনে প্রান্তিক রাজ্যগুলোর আত্নীকরন ঘটছেনা । আপনার কি মনে হয়?

পুর্ববংগ থেকে আসামে অভিবাসন অস্বাভাবিক পর্যায়ে বেড়ে যায় ১৯৪৭ এর পর পর। এর আগে অভিবাসন ছিলো একটি স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক অভিবাসন । কিন্তু ৪৭ এ দেশ বিভাগের পর আসাম ভিন্ন দেশের অংশ হয়ে গেলেও অভিবাসন মাত্রা বেড়ে যায় অনেক বেশী এবং তার প্রকৃতি ও যায় বদলে । অর্থনৈতিক অভিবাসনের বদলে ঘটতে থাকে রাজনৈতিক অভিবাসন । দেশবিভাগের পর বড় মাত্রায় পুর্বপাকিস্তানের হিন্দু বাংগালী আসামে অভিবাসী হয় । পাকিস্তান আমলের বিভিন্ন সময়ে এ অভিবাসন ঘটেছে । এমন কি বাংলাদেশ রাষ্ট্র উদ্ভব হওয়ার পর ও এই অভিবাসন বন্ধ হয়নি । বিশেষ করে ৮০ র দশকে বাংলাদেশ থেকে আরো উল্লেখযোগ্য হারে রাজনৈতিক অভিবাসন ঘটে ।

এরকম একটা পরিস্থিতিতে, রাষ্ট্রের অতি কেন্দ্রীকরন নীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে । তাত্বিকভাবে, এর থেকে সমাধান পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো ফেডারেল গভর্মেন্ট পদ্ধতি যেখানে রাজ্যসরকার অভিবাসনের মতো গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে একক সিদ্বান্ত গরহন করতে পারবে । সর্বোপরি ফেডারেল সিস্টেমই একমাত্র কার্যকর পদ্ধতি যা কেন্দ্রীয় সরকারের নিপীড়নমুলক আচরনকে প্রতিহত করে,সাংবিধানিকভাবে রাজ্যসমুহের স্বায়ত্বশাসনের অধিকার নিশ্চিত করে ।


গত নির্বাচিনে অহমিয়া জাতীয়তাবাদের শ্লোগান দেয়া অগপ, হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সাথে মোর্চা গঠন করেছে । এ ব্যাপারটা আপনি কিভাবে ব্যখ্যা করবেন? একদিকে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ অপরদিকে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ?

গত নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি, আসামের অগপ এর মতো প্রায় সকল রাজ্যেই আঞ্চলিক দগুলোর সাথে মোর্চা করেছে । এর আগের নির্বাচনে 'অহমিয়া জাতীয়তাবাদের' ব্যনারে অগপ ভালো ফলাফল করতে পারেনি । তাই বিজেপির সাথে তারা জোটবদ্ধ হয়েছে । অপরদিকে বিজেপি সারা ভারতে বৃহত্তর 'সংঘ পরিবার' গড়ে তুলেছে সাম্প্রদায়িক উগ্রতাকে পুঁজি করে । আসামের জন্য এই প্রবনতা বিপদ্দজনক । বহুদিন থেকে চলা 'আসাম মুভমেন্ট' এর মুল প্রেরনা 'অহমিয়া জাতীয়তাবাদ', হিন্দুত্ব নয় । কিন্তু হিন্দুত্বকে উস্কে দিয়ে মুল জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিপথগামী করার আশংকা তৈরী হচ্ছে ।
তবে আশার কথা এইযে, আসামের আদিবাসী মুসলমানেরা নিজেদেরকে অহমিয়া সংস্কৃতির অংশ বলেই মনে করে ।


মন্তব্য

সৌরভ এর ছবি

হুমম।
রাষ্ট্রকে ভিত্তি করে জাতি র ধারণাটা আসলেই অবান্তর।
কৃতজ্ঞতা এরকম একটা লেখা পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

টী ব্রেক এর ছবি

অত্যন্ত আগ্রহোদ্দীপক আর্টিকেল। এর ধারাবাহিকতা প্রত্যাশিত। ধন্যবাদ।

দিগন্ত এর ছবি

আমি এ বিষয়ে উত্তর দিয়েছি আলাদা একটা ব্লগে। পড়ে দেখে নেবেন। বিতর্ক চাই ...


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

অলৌকিক হাসান লিখেছেন:
ব্যবসা-বাণিজ্যের খাতিরে তখন বাংলাদেশেরই লাভ হবে।

আলদা দেশ হলে যে ব্যবসা বানিজ্যের উন্নতি হবে সেটা আপনার একটা ধারনা মাত্র। উত্তর-পূর্বের সাথে সরাসরি যোগাযোগ আছে চিন ও মায়ানমারের। আলদা দেশ হলে চিন তাদের বাজার দখল করবে। তাছাড়া, উত্তর-পূর্বে সত্যি বাজার বলে কিছু আছে কি? তার মূল্য কত?

আরেকটা ব্যাপার হল, রপ্তানী বাড়ানোর জন্য শুধু দেশ হলে হয়না। রাজ্য হলেও চলে। আপনারা এদের সাথে সরাসরি বানিজ্য-চুক্তি করুন। চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করে এদের রপ্তানীর সুযোগ দিন। বানিজ্য এমনিতেই বাড়বে। নাহলে দেরি হলে মায়ানমারের বন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্বের সামগ্রী রপ্তানী শুরু হবে। এখনই চিন-ভারত আর মায়ানমার-ভারত রাস্তা বানানো হচ্ছে, সাথে মায়ানমারের উত্তরে সিটওয়ে তে বন্দর বানানো হচ্ছে ভারতীয় উদ্যোগে।

বানিজ্যিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক ভাবে আসেনা, আসে বানিজ্যিক ভাবেই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

ট্রান্সিটের ব্যাপারটা গিভ অ্যান্ড টেক। আমার মনে হয় যদি চিন-নেপাল-ভুটানের সাথে উত্তর-পূর্বের ট্রানসিট একসাথে নিয়ে ডিল করেন - তাহলে সফল হবেন। আমি তো পত্র-পত্রিকায় পড়ি আপনাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন রক্ত দেবেন তবু ট্রানসিট দেবেন না। তাহলে ব্যাপারটা উলটো হল না?
তবে এটা মূল প্রসঙ্গ থেকে আলাদা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

দাদাগিরি তো আছেই, কিন্ত বলুন তো পৃথিবীর কোথায় সেটা নেই? গোটা পৃথিবীতে আমেরিকার দাদাগিরি, পূর্ব এশিয়াইয় চিন আর জাপান, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান আর সৌদি, আরো কত ...
পাড়ার মস্তানেরাও দাদা।
কিন্তু প্রশ্ন হল দাদাগিরি এড়িয়ে কি সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

আর আমার খারাপ কিছু লাগেনি, আপনি সব দিকগুলো ভেবে তারপরে নিজস্ব মতামত গঠন করুন - সেটাই আমি চাই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

"ওই দাদাগিরি সামলে কিছু আদায় করে নেয়াটাও কিন্তু রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সফলতা।" - আমি কয়েকটা উদাহরণ দিই।
১) চিনকে দেখুন। রাশিয়ার দাদাগিরি সহ্য করবেনা বলে আমেরিকার দলে ১৯৭২ সালে ভিড়ে গেল। তার ফলে তারা জাতিসংঘে যোগ দিতে পারল, তাও স্থায়ী সদস্য হিসাবে।
২) এখন চিন এশিয়ায় দাদা। তাই ভারত আমেরিকার দিকে ঝুঁকে গেছে। জাপান, তাইওয়ান এমনকি ভিয়েতনামও আমেরিকার সাথে চিন-বিরোধী।
৩) বাংলাদেশ ভারতের দাদাগিরির মোকাবিলা করতে পারে চিনের সাথে সমান সম্পর্ক রেখে, তাহলেই হবে। এই কাজটা পাকিস্তান দেখবেন অনেক আগে থেকেই করে আসছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

দিগন্ত এর ছবি

"উই আর নট ইন্ডিয়ান, উই আর নাগা।" - এটা ওনার ব্যক্তিগত মতামত। সবাই একরকম হয় না। কেউ কেউ তো নিজের পরিবারের বাইরে কিছু ভাবতে পারি না। গ্রামের দিকে এখনো লোক পাওয়া যায় যারা নিজের আর আসেপাশের কয়েকটা গ্রাম আর হয়ত একটা শহর নিয়েই তাদের জগত। তাদের পক্ষে এরকম ভাবা স্বাভাবিক। বন্ধুকে বলতে পারেন গোটা ভারত ঘুরে দেখতে, ভারতীয়রা তাদের থেকে আলাদা কিনা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ঝরাপাতা এর ছবি

চমতকার একটা লেখা পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

উই আর নট ইন্ডিয়ান, উই আর নাগা।" - এটা ওনার ব্যক্তিগত মতামত।

এটা যে কারো ব্যক্তিগত অভিমত নয়,উত্তরপুর্বাঞ্চলের বেশীর ভাগ মানুষের সার্বজনীন অভিমত, সেটা ব্যখ্যা করেছি আপনার ব্লগের মন্তব্যে ।

রাজ্য হলেও চলে। আপনারা এদের সাথে সরাসরি বানিজ্য-চুক্তি করুন।

বাংলাদেশের অনেক পণ্যেরই ঐ অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা । টয়লেট্রিজ,ইলেক্ট্রনিক্স,পোশাক,সিরামিক । কিন্তু ঐ রাজ্যগুলো কি কেন্দ্র কে অগ্রাহ্য করে সরাসরি বাংলাদেশের সাথে বানিজ্য চুক্তি করতে পারে? আপনার বোধ হয় জানা আছে, সাতটি রাজ্যেই সরাসরি কেন্দ্রের শাসন । নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী থাকলে ও কেন্দ্রের মনোনীত গভর্নরই মুল সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখেন ।

এ কারনেই সঞ্জীব বড়ুয়া তার আলাপচারীতায় ফেডারেল সিস্টেমের দাবী জানান যাতে রাজ্যগুলো আন্তর্জাতিক বানিজ্যের মতো গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা গ্রহন করতে পারে ।

দিল্লীকেন্দ্রিক ভারত প্রশাসন এ ক্ষেত্রে হিসাব কষে, ঐ বাজারে বাংলাদেশ ঢুকলে বাংলাদেশ আরেকটু অর্থনৈতিক স্বনির্ভর হবার সুযোগ পেয়ে যায় ।এই সুযোগ দিলে যে তার একটা অঞ্চলের নাগরিকের সুবিধা হয়, সেটা ঐ বহুদুর দিল্লীতে বসে তাদের ভাবনায় হয়তো ধরা পড়েনা ।
সে কারনেই হয়তো ঐ অঞ্চলের মানুষ এমন দুর্বিনীত উচচারন করতে পারে
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দিগন্ত এর ছবি

আপনাকে প্রথমে ভুল শুধরে দিই একটা -
"সাতটি রাজ্যেই সরাসরি কেন্দ্রের শাসন । নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী থাকলে ও কেন্দ্রের মনোনীত গভর্নরই মুল সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখেন ।" - সমস্ত স্টেটেই গভর্নর আছে এবং তারা কোনোভাবে রাজ্যের সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করতে পারেন না। তবে রাজ্য সরকারকে ফেলে দেবার অনুরোধ করতে পারেন প্রেসিডেন্টের কাছে, তবে ঐতিহাসিকভাবে সেটা মনে হয় ২বার ঘটেছে (প্রথমবার ১৯৫৬ইয় কেরলে), ২ বারই কেন্দ্রের প্রচুর সমালোচনার মধ্যে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীরা পুনর্নিরবাচিত হয়েছেন। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কথাই শেষ কথা।

"ঐ রাজ্যগুলো কি কেন্দ্র কে অগ্রাহ্য করে সরাসরি বাংলাদেশের সাথে বানিজ্য চুক্তি করতে পারে?" - আমার যে বন্ধুরা ওই অঞ্চলে মার্কেটিং এ জড়িত আছে, তাদের বক্তব্য অনুসারে ওই অঞ্চলে চিনা দ্রব্যের চাহিদা বেশী। তবে যে কোনো রাজ্য আলাদা বানিজ্য চুক্তির জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করতেই পারে। যেমন, শ্রীলঙ্কার সাথে শুল্কমুক্ত বানিজ্য শুরু হবার পরে কেরলে নারকেল তেলের ব্যবসা মার খাচ্ছিল বলে কেরলে শ্রীলঙ্কান নারকেল তেলের প্রবেশের ওপর বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছিল। কেরল রাজ্যের অনুরোধেই তা করা হয়েছিল। আমার জানার মধ্যে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর কাছ থেকে এরকম কোনো অনুরোধ নেই (থাকলে আমাকে জানান)।

"ফেডারেল সিস্টেমের দাবী জানান যাতে রাজ্যগুলো আন্তর্জাতিক বানিজ্যের মতো গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা গ্রহন করতে পারে।" - আমি এ বিষয়ে ওনার সাথে একমত। ভারতের ব্যবস্থা আরো ফেডারেল হওয়া উচিত। বানিজ্যের ক্ষেত্রে তো বটেই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

দুঃখিত দাদা,আপনার দেশের গভর্মেন্ট পদ্ধতি আপনাকেই আবার মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে বলে ।কেন্দ্র নিয়োজিত গভর্নর তো থাকেনই প্রত্যেকটা রাজ্যের । কিন্তু কোন রাজ্যে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে ' কেন্দ্রের শাসন জারী হইলো' বলে যে ঘোষনা দেয়া সেটা কি জিনিস?
পশ্চিম বংগের পলিসি মেকিংয়ে কেন্দ্রের খবরদারী যতোটুকু, কাশ্মীর কিংবা সেভেন সিস্টার্সের ক্ষেত্রে কি তা সমান? আরেকটু ঘেঁটে দেখুন তো দাদা ।

আপনার যে বন্ধুরা ঐ অঞ্চলে মার্কেটিংয়ে জড়িত তারা ভুল বলেননি । ভুটিয়া নামে পরিচিত তিব্বতীরা চীনা দ্রব্যের বিকিকিনি করে । শিলং,গৌহাটি,ইটানগর,আইজলে ভুটিয়াদের আলাদা মার্কেট আছে ।
৯৯-২০০০ সালের দিকে আমরা যখন NEHU(North Eastern Hill University )পড়ি,তখন দেশে এলে বন্ধুদের জন্য বাংলাদেশের সাবান,শ্যম্পু,ক্রীম,সার্ট,প্যান্ট, সিডি, ক্যাসেট বন্ধুদের জন্য নিয়ে যেতাম । ওদের অনুরোধে বারবার নিতে হতো কারন এগুলো খুব জনপ্রিয় ছিলো ওদের কাছে কিন্তু মার্কেটে পাওয়া যেতোনা । এখনো যায়না । বাংগালী মাসি-দিদি দের জন্য জামদানী শাড়ী কলকাতার চেয়ে সিলেট থেকে পৌঁছে দেয়া অনেক সহজ এবং খরচ ও স্বল্প ।
কিন্তু আবারো বলছি,কোন মেঘালয়ের বাজারে কোন বাংলাদেশী কোণ পণ্য ঢুকবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার এক্তিয়ার উইলসন লাপাংয়ের রাজ্য সরকারের নেই । সিদ্ধান্ত দেবেন দিল্লীর মনোমহন সিংজি

আর দিল্লী যে কতো দূর সেটা আপনি দিগন্ত কতোটুকু জানেন আমি জানিনা, তবে নমিনিতা চেটিয়া, হিনিলু ইমচেন,লিলি ডাখার যে হাড়ে হাড়ে জানে,সেটা জেনেছি মাত্র ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দিগন্ত এর ছবি

বানিজ্যিক যে ব্যাপারটা আপনি বলছেন, সেটা ভারতের সমস্ত প্রান্তেই প্রযোজ্য। মেঘালয়ে যা পাওয়া যায় না তাকি পশ্চিমবঙ্গে পাওয়া যায়? এটার হল ভারতে প্রথম ৫০ বছরের বস্তাপচা স্বনির্ভরতা প্রচেষ্টার ফল। ফলে যেখানে শিল্প গড়ে উঠেছে, সে জায়গাগুলো এগিয়ে গেছে। যেখানে ওঠেনি, তারা পিছিয়ে গেছে। তবে আমি একদম একমত, যে রাজ্যগুলোকে আরো অধিকার দেওয়া উচিত। কেরলের যে উদাহরণ দিলাম সেটা একরকম ব্যতিক্রম।

"কোন মেঘালয়ের বাজারে কোন বাংলাদেশী কোণ পণ্য ঢুকবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার এক্তিয়ার উইলসন লাপাংয়ের রাজ্য সরকারের নেই" -
আপনি কি মনে করেন উইলসন লাপাং কোনো অনুরোধ করেছেন মনমোহন সিংহকে? রেফারেন্স? নাকি আপনার দাবি অনুরোধ করার অধিকারও নেই? আর মনমোহন সিংহ আসামের নির্বাচিত প্রতিনিধি, ১৯৯১ সাল থেকে। তিনি তার কেন্দ্রে যথেষ্ট জনপ্রিয়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মনমোহন সিং আসামের কোন আসনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি,একটু জানাবেন কি? এটা বেশ ইন্টারেস্টিং তথ্য,আমি জানতাম না । পাঞ্জাবী ভদ্রলোক হাজার মাইল দুরের রাজ্যের জনপ্রতিনিধি হয়ে গেলেন,বিশেষ করে স্থানীয়রা যেখানে বহিরাগতদের ঠিক স্বাগত জানায়না ।

একটু বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ করছি । কোন আসন, প্রতিদ্বন্ধি কে ছিলেন? সম্ভব হলে ভোটের ব্যবধান এই সব ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দিগন্ত এর ছবি

আচ্ছা, আবার একটা পোস্ট দেব।

মনমোহন সিং রাজ্যসভার প্রতিনিধি, লোকসভার নন। কিন্তু রাজসভার প্রতিনিধিরাও বিধানসভা থেকে নির্বাচন পেয়েই যান।

দেখুন এখানে। লেখার শেষে দেখবেন নির্মলানন্দ বরদলই এর বক্তব্য - ওটাও গুরুত্বপূর্ণ।

এই আলোচনা এখানেই শেষ করলাম।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।