অদৃশ্য সেসব সংগ্রহ

মহাস্থবির জাতক এর ছবি
লিখেছেন মহাস্থবির জাতক (তারিখ: সোম, ১১/১০/২০১০ - ৫:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ড্রেসডেনের পরের জংশনটাতেই, এক বয়স্কমতো ভদ্রলোক আমাদের কামরায় উঠলেন। অন্য যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে বিনীত, ভদ্র হাসি হাসলেন তিনি, আর বিশেষ করে আমায় একটা নড করলেন, পরিচিতদের যেমনটা করা হয়। দেখলেন যে আমি একটু বিভ্রান্ত, তাই জানালেন নিজের নাম। ওঃ হো, তাঁকে তো ভালোই চিনি! বার্লিনের অন্যতম সেরা এক কলারসিক এবং শিল্পবণিক তিনি। যুদ্ধের (প্রথম বিশ্বযুদ্ধ=অনুবাদক) আগে প্রায়ই যেতাম তাঁর কাছে, কিনেছি অজস্র ফটোগ্রাফ আর দুষ্প্রাপ্য বই। আমার উল্টোদিকের খালি আসনে বসলেন ভদ্রলোক, কিছুক্ষণ ধরে আমরা আগড়ম-বাগড়ম বকে গেলাম। তারপর কথা পাল্টে জানালেন যে-যাত্রা থেকে তিনি ফিরছেন তার উদ্দেশ্য। তাঁর মতে, এ-ব্যবসায় তাঁর সাঁইত্রিশ বছরের জীবনে এটা অন্যতম বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। যাক্, ভনিতা অনেক করলাম। তাঁর নিজের জবানিতেই আপনাদের শোনাচ্ছি পুরো গল্পটা, কোনো উদ্ধৃতি চিহ্ন আর লাগালাম না-একটার ভেতরে আবার আরেকটা ঢোকানোর ঝামেলা কেন করি?
---------------------------------------------------------------------------

আপনার তো জানা আছে (তিনি বলছেন) বাতাসে বায়বীয় পদার্থের মতো যেভাবে টাকার দাম মিলিয়ে যাচ্ছে তাতে আমার ব্যবসার কী হাল হয়েছে। যুদ্ধের সময় ব্যবসা করে আঙুল ফুলে যারা কলাগাছ হয়েছে তারা হঠাৎ করে ওল্ড মাস্টারদের ব্যাপারে রুচিবান হয়ে উঠেছে (ম্যাডোনা আর ওইরকম যা যা আছে আর কি), তারপর ধরুন incunabula-র ব্যাপারে, পুরনো দিনের ট্যাপেস্ট্রির ব্যাপারে। তাদের চাহিদা মেটানোই দুষ্কর; আর আমায় তো জানেনই, নিজের ব্যবহার আর আনন্দের জন্যে সবচেয়ে ভালোটাই রাখা আমার অভ্যেস, নিজের ঘরের দেওয়াল থেকে খুলে খুলে বিক্রি করাটা আমার ঠিক ধাতে নেই। ওদের যদি একবার সুযোগ দেই, কি বলবো আপনাকে, পারলে বোধহয় আমার শার্টের কাফ-লিংক আর লেখার টেবিলের ল্যাম্পটাও কিনে নেয়। মালপত্র জোগানো দিনকে দিন কঠিনই হয়ে পড়ছে। বুঝতে পারছি এজায়গায় ‘মাল’ শব্দটার ব্যবহার আমার আপনার খুব কানে লাগলো, কিন্তু আসলে আমি নাচার, মাফ করবেন। ওই নতুন নতুন খদ্দেরদের থেকে শিখলাম শব্দটা, কুসঙ্গে যা হয় আর কি...অমার্জিত চোখে ওভারকোট দেখলে যেমন লাগে, অনেক পুরনো ভেনিসের ছাপাখানার একটা বই চোখে পড়লেও এখন তেমন লাগে, মনে হয় দাম এত বা এতশ’ ডলার। গুয়ের্চিনোর একটা স্কেচ দেখলে মনে হয় ওটা বেচলে কয়েক হাজার ফ্রাঁ পাওয়া যাবে। অভ্যেস রে ভাই, সব অভ্যেস। টাকা নিয়ে ছেলেখেলা করে ওড়ায় সবকটা, ওদের খাঁই মেটানো অসম্ভব। একদিন রাতে চারপাশ জরিপ করে বুঝলাম, বিক্রি যে করবো এমন কোনো ভালো জিনিসই তো নেই। এবার বুঝি ব্যবসায় লালবাতি জ্বলার সময় এলো। বাপ-দাদার আমলের এমন ভালো ব্যবসাটা, অথচ চারপাশে যত ঝড়তিপড়তি রদ্দি মাল, ১৯১৪ সালের আগে কোনো ঠেলাগাড়িওয়ালাও ওগুলো ঠেলায় করে বেচতে লজ্জা পেতো।

এই গোলমালে পড়ে মনে হলো পুরনো হিসেবের খাতাগুলো একবার উল্টে যাই। হয়তো পুরনো খদ্দেরদের খোঁজ পেয়েও যেতে পারি যাঁরা সুদিনে যা কিনেছেন এখন সেগুলো বিক্রির ধান্ধায় আছেন। অবশ্য নিজের কাছেই মনে হচ্ছিলো ওসব গ্রাহকদের ফর্দ করা মানে বোধহয় লাশে-ভরা একটা যুদ্ধক্ষেত্রের মুখোমুখি হওয়া। দুদিন যেতেই টের পেলাম যে সুদিনে এই দোকান থেকে যাঁরা কেনাকাটা করেছেন আজ তাঁদের বেশিরভাগই ওপারে নয়তো বিশ বাঁও জলের নিচে। যেসব কাজ তাঁরা কিনেছেন এতোদিনেও বিক্রি না করে থাকেন নি নিশ্চয়। শেষমেষ একজনের লেখা একগাদা অর্ডারের চিঠি পেলাম, মনে হলো তিনি বোধহয় বেঁচে-থাকা সবচে’ বুড়ো মানুষ, অবশ্য যদি বেঁচে থাকেন। এতো বয়স হয়েছে যে ভুলেই বসেছিলাম তাঁর কথা। কারণ ১৯১৪ সালের গ্রীষ্মের ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণের পর থেকে আর কিছুই কেনেন নি তিনি। অনেক, অনেক পুরনো। সবচাইতে পুরনো চিঠিগুলো প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে লেখা, আমার ঠাকুর্দা তখন ছিলেন ব্যবসার হর্তাকর্তা। গত সাঁইত্রিশ বছরে এই কাজে আছি কিন্তু একবারও তাঁর সাথে যোগাযোগের কোনো কথা মনে পড়ছে না।

সব লক্ষণ মিলিয়ে মনে হলো জার্মানির মফস্বলে টিকে-থাকা দু’একজন আদ্যিকালের খ্যাপাটের একটি নমুনা তিনি। তাঁর চাহিদা যত সব তাম্রফলকের কাজের, আর যে-ক’টা অর্ডার তিনি দিয়েছেন, তার সবগুলোর নিচে লাল কালির দাগ। দামগুলো সব লেখা আছে কথায় আর সংখ্যায়, তাই ভুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এইসব উল্টোপাল্টা ব্যাপার, তারপর ছিঁড়ে-নেয়া ফ্লাই-লিফের কাগজে চিঠি লেখা, খামগুলোও ফালতু কাগজের, সব মিলিয়ে মোটামুটি বোঝা যাচ্ছিলো মফস্বলের কোনো জরাজীর্ণ ঘর থেকে ওগুলো এসেছে। নাম সইয়ের নিচে সবসময় তাঁর পুরো পদবি থাকতোঃ ‘ফরেস্ট রেঞ্জার এবং অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত; লেফটেন্যান্ট, অবসরপ্রাপ্ত; ফার্স্টক্লাস আয়রনক্রস পদকপ্রাপ্ত’। বুঝলাম ১৮৭০-’৭১ সালের যুদ্ধের পুরনো সৈনিক তিনি, তাই বয়েস তাঁর কমপক্ষে আশি তো হবেই।

তাঁর মিতব্যয়িতা আর খামখেয়ালিপনার পরিচয় তো পেলামই, আবার দেখলাম ছবি এবং এচিঙের সংগ্রাহক হিসেবেও তিনি অসাধারণ দক্ষতা, জ্ঞান আর রুচির পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর অর্ডারগুলো সব ভালো করে খতিয়ে দেখলাম, সে-আমলে সব মিলিয়ে দাম তেমন বেশি তিনি দেন নি।
কিন্তু চমৎকার জার্মান উডকাটের জন্যে এখন যেখানে অনেকেই মুখিয়ে আছে সেখানে ওই বুড়োটার কাছে গাদাগাদা খোদাইকাজ আর এমনি আরও কতো কিছু। যুদ্ধে যারা হঠাৎ নবাব হয়েছে তাদের ঢোল-পেটানো সংগ্রহের চাইতে তাঁর নিজের সংগ্রহশালা অনেক বিশাল। গত কয়েক দশক ধরে শুধু আমাদের কাছ থেকেই উনি যা কিনেছেন তার দামই আজকালকার দিনে হবে বিশাল একটা অঙ্ক। মনে করার কোনো কারণ নেই যে অন্য কোনোখান থেকে আর কিছু তিনি খরিদ করেন নি। ওই সংগ্রহ কি ফুরিয়ে গেলো? সে-আমল থেকে আজ পর্যন্ত বাজারে যেসব বেচাকেনা হয়েছে, তার মোটামুটি খবর আমার কাছে সবই আছে। এরকম কোনো সংগ্রহ হাতবদল হলে একদম হাওয়া পাবো না এতো হতেই পারে না। তিনি যদি এখন মারা গিয়েও থাকেন, সম্ভবত তাঁর উত্তরাধিকারীদের হাতেই আছে সেসব শিল্পকর্ম।

ব্যাপারটা বেশ তাতিয়ে দিলো আমায়। দেরি না করে পরদিনই (গতকাল সন্ধ্যেয়) রওনা দিলাম স্যাক্সনির বহুদূর প্রান্তের এক শহরে। খুদে রেলওয়ে স্টেশনটা ছেড়ে নামলাম বড় রাস্তায়। নিজের কাছেই একদম অসম্ভব ঠেকছিলো যে এধরনের আদ্যিকালের বাড়িতে এমন একজন থাকেন, বাড়িগুলোর বিবরণ আর নাই বা দিলাম, ও আপনি ভালোই বুঝছেন, এমন কেউ যাঁর কাছে হয়তো রেমব্রাঁর খোদাইয়ের একটা পুরো সেটই আছে, ড্যুরারের এতগুলো উডকাট আছে যেগুলো আর কোথাও খুঁজে পাবেন না, আর মাঁতেনা-র এক্কেবারে সব কাজ। যাই হোক খোঁজ নিলাম পোস্টাপিসে গিয়ে, একেবার চমকে গেলাম, বুঝলেন, শুনলাম কোন এক আমলের ফরেস্ট রেঞ্জার এবং অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বেঁচে আছেন এখনও। ভালো করে ঠিকানাটা বুঝে নিলাম। মিথ্যে বলবো না, হাঁটার সময়ে বুকের ভেতরটায় যেন হাতুড়ি পড়ছিলো। দুপুর হতে তখনো দেরি।

দেখা গেলো যে-কলারসিকের খোঁজ করছি তিনি থাকেন গত শতকের ষাটের দশকে ফটকাবাজেরা তাড়াহুড়ো করে জার্মান সৈনিকদের তৈরি-করা যেসব বাড়ি দাঁড় করিয়েছে সেরকমই একটার তিন তলায়। দোতলায় একটা দর্জির দোকান। তিনতলার বাঁয়ের ঘরটায় এলাকার পোস্টাপিসের ম্যানেজারের নেমপ্লেট, আর ডানদিকে চিনেমাটির ফলকে আমার খোঁজাখুঁজির ফলাফল। তন্ন তন্ন করে খোঁজা আমার সার্থক হলো! ঘন্টা বাজালাম, খুব তাড়াতাড়িই খুলে গেলো দরজা। খুলেছেন শণচুলের এক ভদ্রমহিলা, অনেক বয়েস হয়েছে। মাথায় কালো লেসের টুপি। আমার কার্ডটা তাঁকে দিলাম, জিজ্ঞেস করলাম ঘরের কর্তা আছেন কি না। বেশ সন্দেহ নিয়ে আমায় দেখলেন তিনি, দেখলেন কার্ডটা, আবার ফিরে তাকালেন আমার দিকে। এই পাণ্ডববর্জিত ছোট শহরে বড় কোনো শহরের বাসিন্দার আসাটা ঝামেলার বৈকি। যাইহোক, টেনেটুনে মোটামুটি ভদ্রভাব গলায় এনে দু’এক মিনিট হলঘরে দাঁড়াতে বলে পাশের একটা দরজা খুলে হারিয়ে গেলেন তিনি। শুনতে পাচ্ছি ফিসফিস, আর তারপরেই শুনলাম একটা দরাজ আন্তরিক পুরুষালি গলাঃ “কী বললে? বার্লিন থেকে হের রেকনার? অ্যান্টিক আর্টের সেই নামকরা ব্যবসায়ী? নিশ্চয় দেখা করবো।” তক্ষুনি সেই বৃদ্ধা এসে আমায় ডেকে নিয়ে গেলেন ভেতরে।
ওভারকোটটা খুলে চললাম তাঁর পায়ে পায়ে। সস্তা আসবাবে সাজানো ঘরটার মাঝখানে আমায় স্বাগত জানাতে এক লোক দাঁড়ানো। বয়েসে অনেক বুড়ো হলেও স্বাস্থ্য টসকায় নি তেমন, বিশাল একজোড়া গোঁফ, পরে আছেন আধাসামরিক স্মোকিং জ্যাকেট। দিলখোলাভাবে আমায় বরণ করতে দুটো হাতই বাড়িয়ে দিলেন তিনি। ভঙ্গিটা স্বতঃস্ফূর্ত, কোনো অংশেই ভান না, অথচ তাঁর দাঁড়ানোর এবং শরীরের অন্য ভঙ্গির আড়ষ্টতার সাথে এটা যেন বড্ড বেশি বেমানান। আমার দিকে তিনি এগিয়ে এলেন না, তাই বাধ্য হয়ে আমিই (মানছি যে একটু ধাক্কা খেয়েছিলাম) হাত মেলানোর আগে তাঁর দিকে এগুলাম। তারপর খেয়াল করলাম যে তাঁর হাত আমারগুলো না খুঁজে অপেক্ষা করছে কখন আমি তাঁরগুলো জড়িয়ে ধরবো। তক্ষুনি বুঝে গেলাম আমার খটকা লাগছে কেনো। ভদ্রলোক দৃষ্টি হারিয়েছেন।

সেই বাচ্চাবয়েস থেকেই অন্ধদের কাছে গেলে আমি কেমন যেন বড্ড জড়োসড়ো হয়ে পড়ি। একটা মানুষ দিব্যি জলজ্যান্ত অথচ তারপরেও তার সব ইন্দ্রিয় সে ব্যবহার করতে পারছে না, এই ব্যাপারটায় খুব বিব্রত লাগে। খুব বেকায়দায় আর লজ্জায় পড়ে যাই। মনে হয় অন্যায় কোনো সুবিধা নিচ্ছি বুঝি। ভদ্রলোকের খোঁচা খোঁচা সাদা ভুরুর নিচে স্থির, দৃষ্টিহীন বৃত্তগুলো দেখে আমার একই অনুভূতি জাগছিলো। অন্ধ মানুষটা কিন্তু বেশিক্ষণ আমার অস্বস্তিটা রাখতে দিলেন না। ঘরফাটানো খুশির হাসি হেসে তিনি বলে চললেনঃ
“মনে রাখার মতো দিন বটে! আপনার মতো বার্লিনের এমন একজন ডাকসাইটে লোক পা দিলেন আমার ঘরে, অলৌকিক কাণ্ড। আমরা মফস্বলের লোক, তা আপনাদের মতো নামজাদা ব্যবসায়ী যখন লড়াইতে নামেন তখন আত্মরক্ষা করতে হবে তো। আমাদের এদিকে একটা কথা আছে বুঝলেনঃ ‘যদি বেদেরা আশেপাশে থাকে তবে দরজা লাগাও, পকেটের বোতাম আঁটো।’ থাক থাক, বলতে হবে না, দিব্যি বুঝতে পারছি এত কষ্ট করে কেনো দেখা করতে এসেছেন। ব্যবসায় মন্দা নির্ঘাৎ। কেনার লোকই নেই, থাকলেও এত কম যে পুরনো খরিদ্দারদের আবার খোঁজ পড়েছে। খারাপই লাগছে আপনার জন্যে, মনে হয় খালি হাতেই ফিরতে হবে। আমরা পেনশনারেরা দিনান্তে যে দুটুকরো শুকনো রুটি পাচ্ছি, তা-ই ভাগ্য বলে মানি। দিনকালে আমি সংগ্রাহক ছিলাম বটে, কিন্তু এখন তো একেবারে মাঠের বাইরে। কেনার দিন সে অনেক আগেই চলে গেছে।”

তাঁর যে বোঝার ভুল হচ্ছে, বিক্রির কোনো ধান্দা যে আমার নেই সে কথা এনাকে বলতে কেমন যেন ইতস্তত লাগছিলো। আফসোস লাগছিলো এতো পুরনো একজন ক্রেতা, একই সাথে বেশ বিখ্যাত একজন জার্মান সংগ্রাহকের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে অথচ তাঁকে শ্রদ্ধাটুকুও জানানোর সুযোগ পাই নি। কথাগুলো আমার মুখ থেকে বেরিয়েছে কি বেরোয় নি, তাঁর মধ্যে হঠাৎ করেই বেশ একটা পরিবর্তন দেখলাম। ঘরের মাঝখানেই তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু আলো জ্বলে উঠলো তাঁর মুখে, সেই সাথে গর্বে ভরে উঠলো চেহারাটা। যেদিকটায় তাঁর স্ত্রী দাঁড়ানো বলে মনে করেছিলেন সেদিক ঘুরে এমন ভঙ্গিতে একটু মাথা নোয়ালেন যেন বলছেন, “শুনলে তো কথাগুলো?” তারপর আমার দিকে ফিরে আবার কথা শুরু করে দিলেন। ড্রিল সার্জেন্টের কড়া গলা ঝেড়ে ফেলে আমার সাথে এখন তিনি ব্যবহার করছেন শুধু ভদ্র না, রীতিমত নরম গলাঃ
“ধন্যবাদ, অসংখ্য ধন্যবাদ...তবে হ্যাঁ, খুব কষ্ট পাবো যদি এতদূর এসে এই বুড়োটার সাথেই শুধু পরিচয় করে যেতে হয়। আপনাকে দেখানোর মতো আমার কিছু আছে, বার্লিনে, বা ভিয়েনার আলবের্টিনায় কিংবা এমনকি ল্যুভ-এ (খোদার গজব পড়ুক প্যারিসে) আপনি যা দেখবেন তার চাইতেও দারুণ কিছু। একটা লোক, যে গত পঞ্চাশ বছর ধরে কষ্ট করে এসব জমিয়েছে, যার রুচি আছে, তার কাছে এমন কিছু গুপ্তধন আছে যেগুলো রাস্তার কোনায় কোনায় পাওয়া যায় না। লিসবেথ, কাবার্ডের চাবিটা একটু দেবে?”

এবার ঘটলো আশ্চর্য এক ঘটনা। এতক্ষণ ধরে তাঁর যে স্ত্রী মৃদু হাসি নিয়ে তাঁর কথা শুনছিলেন, এবার চমকে উঠলেন পুরোপুরি। আমার দিকে নিজের দুটো হাত বাড়িয়ে সেগুলো মিনতির ভঙ্গিতে আঁকড়ে ধরে মাথা নাড়তে লাগলেন ভদ্রমহিলা। এসব করে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন তা আমার কাছে গোলকধাঁধা। এরপর তিনি স্বামীর কাছে গিয়ে কাঁধটা ছুঁলেন, বললেনঃ
“ফ্র্যানজ, ডিয়ার, তুমি বোধহয় আমাদের অতিথিকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছো তাঁর আর কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে কি না। এদিকে খাওয়ার সময় তো হয়েই গেলো, আসলে, আমি ক্ষমা চাইছি,” আমার দিকে তাকিয়ে তিনি বলছেন এখন, “মানে আপনাকে ঠিক আশা করি নি তো, আসলে খাওয়ানোর মতো বাড়তি কিছু ঘরে নেই। আপনি নিশ্চয় হোটেলে খাচ্ছেন। পরে এসে আমাদের সাথে এক কাপ কফি খেয়ে যান, আমার মেয়ে অ্যানে মারিয়া আসছে, ওই পোর্টফোলিওগুলোয় কী আছে তা আমার চাইতে ও-ই ভালো জানে।”

আবারো আমার দিকে তিনি করুণ চোখে চাইলেন। বুঝতে পারছি যে তিনি ঐমুহূর্তে কোনোভাবেই চান না সংগ্রহগুলো আমি দেখি। ইঙ্গিতটা বুঝে বললাম যে গোল্ডেন স্ট্যাগ-এ ডিনার করার কথা আমার, তবে তিনটার মধ্যেই ফিরে আসতে পারবো। তাহলে হের ক্রোনফেল্ড যা দেখাতে চান দেখার যথেষ্ট সময় পাওয়া যাচ্ছে। ছ’টার আগে আমি যাচ্ছি না।

বাচ্চারা খেলনা না পেলে যেমন খুঁতখুঁতে হয়ে ওঠে, বয়স্ক ভদ্রলোকের অবস্থা হলো সেরকমই।

“অবশ্য”, তিনি ভারি গলায় বলে চললেন, “বার্লিন থেকে আসা আপনাদের সময়ের বড্ড দাম আমি জানি। তবুও বলি, ঘন্টাখানেক আমার সাথে থাকতে খারাপ লাগবে না আপনার। আপনাকে স্রেফ দু’তিনটে প্রিন্ট দেখাবো না, সাতাশটা পোর্টফোলিওর কাজ, প্রত্যেকটা বড় বড় শিল্পীর, আর প্রতিটাতেই অনেকগুলো করে ছবি। ঠিক তিনটায় আসুন, ছ’টার মধ্যেই চলে যেতে পারবেন।”

ভদ্রলোকের স্ত্রী বাড়িয়ে দিতে এলেন আমায়। বাইরের হলঘরের বেরুনোর দরজা খোলার আগে গলা খাদে নামিয়ে বললেনঃ
“আপনি এখানে আসার আগে অ্যান মারিয়া যদি হোটেলে আপনার সাথে দেখা করতে যায় তবে কিছু মনে করবেন না তো? অনেক দিক দিয়ে ব্যাপারটা ভালো হবে। সব আপনাকে এখনই খুলে বলতে পারছি না।”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, খুব ভালো হয় তাহলে। আমি তো আসলে একাই খাচ্ছি, তা আপনার মেয়ে খাওয়াদাওয়া শেষ করেই আমার ওখানটায় চলে আসতে পারে।”

এক ঘন্টা পর, গোল্ডেন স্ট্যাগের খাওয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে আমি যখন লাউঞ্জে, তখন আবির্ভাব ঘটলো অ্যানে মারিয়া ক্রোনফেল্ড-এর। ভদ্রমহিলারও বয়েসের ছাপ পড়েছে চেহারায়, চামড়া গেছে কুঁচকে, ভীতু ভাব, সাদামাটা জামা পরনে, বিব্রতভাবে তিনি আমার দিকে চাইছিলেন প্রত্যাশার দৃষ্টিতে। তাঁকে সুস্থির করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালালাম। বললাম যদি তাঁর বাবা অধৈর্য হয়ে পড়েন, তবে তাঁদের ওখানটায় আমি এখনই যেতে তৈরি আছি, যদিও দেখা করার কথা আরো পরে, তারপরও। আমার কথায় তিনি লাল হয়ে উঠলেন, হয়ে উঠলেন আরো কেমন যেনো বিভ্রান্ত, আর তারপর তোৎলে-টোৎলে অনুরোধ জানালেন বেরুনোর আগে আমরা যেন একটু কথা বলার জন্যে বসি।

“বসুন প্লিজ,” আমি জবাব দিলাম, “বলুন, আপনার জন্যে কি করতে পারি?”

শুরুটাই তাঁর জন্যে বেশ কষ্টের হলো। কাঁপছিলো তাঁর হাত আর ঠোঁটগুলো। শেষমেষঃ
“মা পাঠালেন আমায়। আপনার কাছে একটা অনুরোধ। আপনি তো ওখানটায় যাবেন, বাবা তাঁর সংগ্রহগুলো আপনাকে দেখাতে চাইবেন; আর ওই সংগ্রহের...সংগ্রহের, মানে, ওগুলোর খুব বেশি কিছু আর বাকি নেই।”

হাঁপাচ্ছেন তিনি, ঘেমে প্রায় নেয়ে উঠেছেন, দম বন্ধ করে বলে চলেছেন একটানাঃ
“সবটা খুলেই বলি...আপনি তো জানেন কী ভয়ঙ্কর অবস্থা আজকাল, আমি জানি আপনি বুঝবেন। যুদ্ধ বাধার কিছু পরেই বাবা পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গেলেন। তাঁর দৃষ্টিশক্তি এমনিতেই কমে আসছিলো। মনের ক্ষোভেই বোধহয় ব্যাপারটা আরো তাড়াতাড়ি হলো। সত্তুরের ওপর বয়েস, তবুও গোঁ ধরলেন যুদ্ধে যাবেন, অনেকদিন আগে যুদ্ধ করেছেন, নিশ্চয় সেসব কথা মনে পড়ছিলো। আসলে কিছুই তো উনি করতে পারতেন না ওখানে। তারপর, আমাদের সেনাদের হার যখন থেকে শুরু হলো, ব্যাপারটায় খুব লাগলো বাবার। ডাক্তার বললেন ওটাতেই উনি আরো তাড়াতাড়ি অন্ধ হয়ে গেলেন। কিন্তু অন্যান্য দিকে তো দেখলেন, তিনি বেশ ভালোই আছেন। ১৯১৪ সালের পরে তিনি অনেকক্ষণ ধরে হাঁটতেন, শিকার যেতেন। কিন্তু চোখ হারানোর পরে তাঁর সংগ্রহগুলোই আঁকড়ে ধরলেন তিনি। প্রতিদিন ওগুলো তাঁর দেখা চাই। বললাম, ‘দেখা চাই’, আসলে তো কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। প্রত্যেকটা দিন বিকেলে টেবিলে পোর্টফোলিওগুলো রেখে বসবেন, একটার পর একটা ছবির প্রিন্টগুলোর ওপর আঙুল বোলাবেন, এতো বছর ধরে দেখছেন, ভালোই জানেন কোনটার পর কোনটা সাজানো। আর অন্য কোনো কিছুতেই আগ্রহ নেই। নিলামের খবর পড়ে পড়ে তাঁকে শোনাতে হবে; দাম যতো চড়া হবে, ততোই তাঁর আনন্দ বাড়বে।

“এবার আসল ঘটনাটা বলি। বাবা তো বেদম মুদ্রাস্ফীতির কোনো খবরই রাখেন না; জানেন না আমরা একেবারে চালচুলোহীন; জানেন না তাঁর মাসের পেনশনে আমাদের একবেলা খাবার জোগাড়ও হয় না। এদিকে আবার মুখও বেড়েছে খাবারের। ভের্দানে আমার বোনজামাই খুন হলো, তাদের ঘরে চারটে বাচ্চাকাচ্চা। টাকার এই টানাটানির খবর তাঁর কাছ থেকে গোপনই রেখেছিলাম। যদ্দুর পারি সংসারের খরচ কমিয়ে আনলাম, কিন্তু তারপরও দু’বেলা দু’মুঠোর জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়ছিলো। তারপর ঘরের জিনিসপত্র বেচা শুরু করলাম, ছোটোখাটো টুকিটাকি জিনিসপত্র এইধরনের যা আছে আর কি, কিন্তু ওগুলোও তেমন কিছুই ছিলো না। বাবা যা টাকা পেতেন সব খরচ করতেন উডকাট, তামার পাতের খোদাই কাজ আর এমনি সবগুলোতে। সংগ্রাহকের পাগলামি! শেষপর্যন্ত ব্যাপারটা দাঁড়ালো তাঁর সংগ্রহে হাত দেবো নাকি তাঁকে সহ ঘরের সবাইকে উপোসে রাখবো। কোনো অনুমতি চাই নি তাঁর কাছে। কী লাভ? খাবার জোগাড় করা যে কী দুঃসহ কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে সেসম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি; শোনেনও নি যে জার্মানি হেরে গেছে, ফিরিয়ে দিয়েছে অ্যালসেস-লোরেন। পত্রিকা থেকে এসব কিছুই আমরা তাঁকে পড়ে শোনাই নি!

“প্রথম যে-কাজটা বিক্রি করলাম, খুব দামি একটা কাজ ছিলো ওটা, রেমব্রাঁর একটা এচিং। ব্যবসায়ী ভদ্রলোক আমাদের অনেক টাকাই দিয়েছিলেন, বেশ অনেক হাজার মার্ক। ভাবলাম ওটাতেই বছরখানেক চলবে। কিন্তু তো আপনি তো জানেন ১৯২২ থেকে ’২৩-এর মাঝামাঝি টাকার দাম কি পরিমাণ সস্তা হয়ে যাচ্ছিলো। জরুরি প্রয়োজন মিটিয়ে বাকিটা একটা ব্যাংকে রেখে দিলাম। মাত্র দুটো মাসে সব টাকা উড়ে গেলো। আরেকটা খোদাইয়ের কাজ বিক্রি করলাম, তারপর আরেকটা। মুদ্রাস্ফীতর সবচে’ খারাপ সময়টাতেই আমরা পড়লাম। যাদের কাছেই ছবি বিক্রির জন্যে নিয়ে যাই, তারা দরদাম করে টাকা দেয় পরে, যাতে তাদের দামের দশভাগ বা একশভাগ হয় টাকাটা। নিলামঘরেও গেছি, সেখানেও ঠকেছি বিস্তর। নিলামে অবশ্য অনেক লাখই দাম উঠতো। কিন্তু যখন মিলিয়ন বা মিলিয়ার্ড (বিলিয়ন=অনুবাদক)-মার্কা নোটগুলো আসতো ততক্ষণে ওগুলো স্রেফ বাতিল কাগজের টুকরো। এভাবে সংগ্রহ পুরোটা চলে গেলো দিরে রুটি জোগাতে, তাও তো জুটলো না।

“তাই আজ আপনি যখন এলেন, মা-তো অসম্ভব ভয় পেয়ে গেছেন। পোর্টফোলিওগুলো সামনাসামনি খোলা হলে আমাদের নির্দোষ ঠকবাজি ধরা পড়ে যেতো। প্রতিটা ছবি তিনি ছুঁয়ে চিনতে পারেন। যে-ক’টা প্রিন্ট বিক্রি করেছি, প্রত্যেকটার জায়গায় একই মাপের, একই রকমের পুরু একটা খালি কার্ট্রিজ কাগজ লাগিয়ে রেখেছি, হাত দিলে যেন কিছু টের না পান। ওগুলো দেখে যে আনন্দ পেতেন, এখনো ওগুলো একটার পর একটা ছুঁয়ে, গুনে ঠিক ততটাই আনন্দ এখনো পান। এখানকার কাউকে উনি কখনো ছবিগুলো দেখাতে চান না, এখানে সমঝদার বলতে কেউ নেই। কিন্তু প্রতিটা ছবির ওপর তাঁর এতো টান, যদি উনি জানেন ছবিগুলো নেই তাহলে তাঁর বুকটাই বোধহয় ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। শেষবার যাঁকে উনি ছবিগুলো দেখানোর জন্যে ডেকেছিলেন তিনি ড্রেসডেনের তাম্রফলকের খোদাইকাজের কিউরেটর, বছরখানেক আগে উনি মারা গেছেন।

“আপনার পায়ে পড়ি”, তাঁর গলা আটকে গেলো, “ওঁর ভুলটা ভেঙে দেবেন না, ওঁর বিশ্বাস চুরমার করবেন না। আপনি বলবেন যা যা উনি দেখাচ্ছেন সব ঠিকঠাক আছে। ওগুলো যে নেই এটা জানলে বাবাকে আর বেশিদিন বাঁচানো যাবে না। হয়তো আমরা তাঁকে ঠকিয়েছি, কিন্তু আর কি-ই বা করতে পারতাম? পেট তো চালাতে হবে। পুরনো প্রিন্টের চাইতে এতিম ছেলেমেয়েগুলোর দাম অনেক বেশি। তার ওপর, প্রতিদিন বিকেলে তিনঘন্টা ধরে তাঁর কাল্পনিক সংগ্রহগুলো নিয়ে তিনি বসবেন, ওটাই তাঁর জীবন আর বিনোদন। প্রত্যেকটার সাথে বন্ধুর মতো কথা বলবেন। চোখ হারানোর পর থেকে আজকের দিনটাই বোধহয় তাঁর সবচাইতে আনন্দের দিন। কতদিন ধরে যে তাঁর ইচ্ছে একজন বিশেষজ্ঞের কাছে নিজের রত্নভাণ্ডার দেখাবেন! যদি আমাদের এই ঠকানোটা মেনে নেন...”

আমার এখনকার ঠাণ্ডা গলায় বোঝাতে পারবো না কী করুণ ছিলো তাঁর আবেদন। আমার ব্যবসায়ী জীবনে অনেক মন-খারাপ করা লেনদেন দেখেছি; নির্বিকারভাবে দেখতে হয়েছে মুদ্রাস্ফীতিতে নিঃস্ব লোকজন গর্ব করার মতো উত্তরাধিকার একমুঠো ধুলোর বিনিময়ে বিক্রি করতে বাধ্য হলো। কিন্তু তারপরও আমার মনে পুরোপুরি কড়া পড়ে যায় নি। এই কাহিনী আমার বুকের একেবারে ভেতরটা ছুঁয়ে দিলো। বলতে হবে না বোধহয় যে আমি তাঁদের অভিনয়ের অংশীদার হওয়ার প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম।

প্রথমেই গেলাম তাঁদের বাসায়। রাস্তায় যেতে যেতেই শুনলাম কী ভীষণভাবে তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। এই অজ্ঞ সরল মহিলারা প্রিন্টগুলোর অনেকগুলোরই অসম্ভব কম দাম পেয়ে ঠকেছেন যেগুলোর বেশিরভাগই অসাধারণ মূল্যবান, কিছু তো একেবারেই অনন্য। শুনে খুব দুঃখ পেলাম (অবশ্য আশ্চর্য হই নি মোটেও)। তাতে তাঁদের সাহায্য করার আমার ইচ্ছেটা আরো দৃঢ় হয়ে উঠলো। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে শুনলাম একটা আনন্দের চিৎকারঃ “আরে আসুন! আসুন!” বুড়োর চোখ যাওয়াতে কান হয়ে উঠেছে একেবারে ধারালো, চেঁচিয়ে উঠেছেন আমাদের পায়ের ক্ষীণ আওয়াজ শুনেই। এরই জন্যে তো তাঁর এতোক্ষণের অপেক্ষা।

“দুপুরে ফ্রানৎস সাধারণত একটু গড়িয়ে নেয়, কিন্তু উত্তেজনায় আজ তার ঘুমই আসে নি,” বয়স্ক রমণীটি আমাদের ঘরে ঢোকাতে ঢোকাতে বললেন। মেয়ের দিকে একনজর তাকিয়েই বুঝে নিয়েছেন সবই ঠিকঠাক আছে। পোর্টফোলিওগুলো সব টেবিলের ওপর রাখা। অন্ধ সংগ্রাহক আমার হাত ধরে টেনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলেন, আমার জন্যে আগে থাকতেই ওটা ওখানে রাখা ছিলো।

“তাহলে শুরু করা যাক। দেখার তো আসলে অনেক আছে, কিন্তু সময়টা বড্ড কম। প্রথম পোর্টফোলিওতে সব ড্যুরারের কাজ। প্রায় পুরো একটা সেট, একটা আরেকটার চাইতে দারুণ। এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায় দ্যাখ। নিন, নিজেই দেখে বিচার করুন।”

কথা বলতে বলতে পোর্টফোলিও খুলছেন তিনি, বলছেনঃ
“শুরুটা অ্যাপোক্যালিপ্স সিরিজ থেকেই হোক।”
তারপর খুব যত্ন করে, আদর করে (লোকেরা যেভাবে ভঙ্গুর দামি জিনিস নাড়াচাড়া করে) খালি কার্ট্রিজ-কাগজের প্রথমটা বের করে এনে গর্বিতভাবে আমার দৃষ্টিময় চোখ আর তাঁর দৃষ্টিহীন চোখের মাঝখানে রাখলেন। এতো উৎসাহ উপচে পড়ছে তাঁর দৃষ্টিতে, দেখে বিশ্বাস করা কঠিন তিনি দেখতে পান না। যদিও বুঝতে পারছি আমার কল্পনা, তবুও মনে হচ্ছিলো তাঁর কুঞ্চিত চেহারা পরিচিত কিছু দেখার আনন্দে উদ্ভাসিত।

“এর চাইতে সূক্ষ্ম-কাজওয়ালা প্রিন্ট চোখে পড়েছে কখনো? ছাপগুলো কী ঝকঝকে! প্রতিটা জিনিস একেবারে কাচের মতো স্বচ্ছ। ড্রেসডেনেরটা-র সাথে আমারটা মিলিয়ে দেখেছি; ওটাও ভালো, মানতেই হবে, কিন্তু আমারটার তুলনায় বেশ একটু ‘ঝাপসা’। তারওপর আমারটার আবার খান্দানি ঘরানার ছাপও আছে।”

কাগজটা উল্টে পেছনের একটা জায়গায় এতো নিঃসংশয়ে উনি আঙুল তুলে দেখালেন যে আমিও আপনাআপনিই ওই অদৃশ্য মার্কাটার দিকে ঝুঁকে পড়লাম।

“ন্যাগলের সংগ্রহশালার ছাপ, এরপর এর মালিক ছিলো রেমি আর এসডেইল। আমার বিখ্যাত পূর্বসূরীরা নির্ঘাৎ ভাবেন নি তাঁদের গুপ্তধন ডেরা গাড়বে আমার ছোট্ট কুটিরে।”

উৎসাহভরে সন্দেহহীন লোকটা যখন ছবিটার সবকিছু নিয়ে আলাপ করে যাচ্ছেন আমি তখন প্রায় থরথর করে কাঁপছি। অনেকদিন আগে মারা-যাওয়া সংগ্রাহকদের কল্পিত ছাপটা ঠিক যেখানে ছিলো, সেখানটায় যখন নখ রাখছিলেন তিনি, তখন আমি কুঁকড়ে যাচ্ছি ভেতরে ভেতরে। পুরো ব্যাপারটাই লাগছে ভৌতিক, যেসব মৃত লোকদের নাম করলেন তিনি তাদের আত্মা যেনো কবর থেকে এসে ঘুরপাক খাচ্ছিলো চারপাশে। মুখের ভেতর আমার জিভ আটকে গেছে, শেষে যখন চোখে পড়লো হের ক্রোনফেল্ডের স্ত্রী আর মেয়ের হতাশ মুখ, তখনই সম্বিৎ ফিরে পেলাম। শুরু করলাম নিজের পালায় অভিনয়। জোর-করা আন্তরিকতা নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখালামঃ
“একদম ঠিক কথা। এই জিনিসের তো তুলনাই হয় না।”

বিজয়গর্বে ফুলে উঠলেন তিনি।

“আরে এটাতো কিছুই না,” বলে চললেন তিনি। “এই দুটো দেখুন, মেলাঙ্কলিয়া আর প্যাশন-এর এই ঝলমলে প্রিন্টটা। একদম শপথ করে বলতে পারি, পরেরটার কোনো জুড়িই পাবেন না। রংগুলো একেবারে জীবন্ত! একবার যদি আপনার বার্লিনের অন্য দোকানদার কিংবা পাবলিক গ্যালারির কিউরেটরেরা এগুলো দেখে, হিংসেয় পেট ফেটে মরবে।”

যাহোক, খুঁটিনাটি বলে আর বিরক্ত করবো না। এ্ভাবেই জয়গান চললো আর কি প্রায় দু’ঘন্টার ওপর। ভাবুন একবার কী অদ্ভুত কাণ্ড চলছে, প্রায় দু’তিনশোটা খালি কাগজ দেখছি, ঠিক সময়মতো উনার তালে তাল দিয়ে আমিও প্রশংসা করে যাচ্ছি। আমার কথা শুনে অন্ধ লোকটা এতো খুশি হয়ে উঠছেন (আমার সান্ত্বনা) যে বারবার তাঁর বিশ্বাস আমায় আরো জাগিয়ে তুলছে।
শুধু একবার হলো ছন্দপতন। আমাকে উনি রেমব্রাঁর এ্যান্টিওপি-এর (এ্যান্টিওপি বলে রেমব্রাঁর কোন কাজ পাই নি, একটা পেলাম জুপিটার ও এ্যান্টিওপি নামে, সম্ভবত এটার কথাই বলা হচ্ছে=অনুবাদক) একটা দারুণ প্রিন্ট ‘দেখাচ্ছেন’ যেটার দাম এক কাঁড়ি টাকা আর যেটা নির্ঘাৎ বিক্রি করা হয়েছে কানাকড়িতে। ছবিটার সূক্ষ্মতা নিয়ে তিনি যথারীতি গুণগান করেই যাচ্ছেন, এমন সময় তাঁর আঙুলের ছোঁয়ায় বোধহয় পরিচিত কোনো চিহ্ন বাদ পড়ে গেলো। অমনিই তাঁর মুখ অন্ধকার হয়ে গেলো, ঠোঁট কাঁপতে লাগলো, বলে উঠলেনঃ
“এটা, এটা ঠিক ঠিক এ্যান্টিওপি তো? আমি ছাড়া তো এই উডকাট, এচিংগুলোয় কেউ হাত দেয় না। ওটা ওলটপালট হয়ে গেলো কি করে?”

তাড়াতাড়ি তাঁর হাত থেকে ‘প্রিন্ট’টা নিয়ে বললাম, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, হের ক্রোনফেল্ড, এটা অবশ্যই এ্যান্টিওপি।” তারপর ছবিটা সম্পর্কে যা যা জানতাম সব একত্র করে বর্ণনা দেয়া শুরু করলাম।

মুখ থেকে মেঘ সরে গেলো। যতোই প্রশংসা করি, সংগ্রাহক ততই খুশি হন। শেষপর্যন্ত আনন্দে গদগদ হয়ে মহিলা দুজনকে বলেই বসেনঃ
“এতোদিনে আসল একজন জহুরি পেলাম! তোমরা তো আমার এই কাজগুলোর পেছনে ‘টাকা ওড়ানো’ নিয়ে কত কথাই যে শোনাতে। এটা ঠিক যে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে বিয়ার, ওয়াইন, সিগার, বেড়ানো, থিয়েটারে যাওয়া, বই কেনা সব বাদ দিয়ে তোমাদের চক্ষুশূল এই সওদাগুলো সব করেছি। দেখলো তো এখন, হের রেকনার আমায় তারিফ করলেন কি না। যখন আমি মরে ভূত হয়ে যাবো তখন শহরের সবচাইতে বড়লোক হবে তোমরা, ড্রেসডেনের ওই বিশাল ধনীদের মতো। আর তখন আমার ‘পাগলামি’-র জন্যেই তোমাদের নামডাক কিরকম ছড়াবে দেখো। কিন্তু যতদিন আমি বেঁচে আছি, আমার সংগ্রহ আমার সাথেই থাকবে। কফিনে ঢুকিয়ে আমাকে মাটির নিচে কবর দেয়ার পর এনার বা আর কারোর কাছে ছবিগুলো বেচে দিও। দিতে তো অবশ্য হবেই, মরার সাথে সাথেই তো পেন্সন বন্ধ হয়ে যাবে।”

বলতে বলতে সর্বস্বান্ত পোর্টফোলিওগুলোর ওপর আঙুল বোলাচ্ছিলেন তিনি। ভয়াবহ ব্যাপারটা, মর্মান্তিকও। ১৯১৪ সাল থেকে কোনো জার্মানের মুখে এরকম অবিমিশ্র আনন্দ আমি দেখি নি। তাঁর স্ত্রী, মেয়ে জলভরা চোখে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে, তারপরও তাঁদের চোখে উচ্ছ্বাস। দেখে তাঁদের মনে হচ্ছে একই সাথে আতঙ্কিত আর আনন্দিত, যেনো চোখের সামনে জেরুজালেমের দেয়ালের বাইরের বাগানে পাথর সরিয়ে শবাধার বের করার পর দেখছেন সেটা শূন্য। আমার বাহবা শোনার জন্যে অবশ্য উনি বসে নেই। পোর্টফোলিও থেকে পোর্টফোলিও খুলছেন, সমানে উল্টে যাচ্ছেন ‘প্রিন্ট’-এর পর ‘প্রিন্ট’, আমিও এদিকে প্রশংসা করেই যাচ্ছি। শেষতক হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। মিথ্যেবাদী ফাঁকা কাগজগুলো ফিরে গেলো তার জায়গায়, টেবিলে কফি দেয়ার জন্যে ঠিকঠাক করা হলো ঘর।

আর ঘরের কর্তা ক্লান্ত হবেন কি, বরং আরো জ্বলে উঠেছেন। কিভাবে তাঁর বিশাল সম্পদ জোগাড় করেছেন এ নিয়ে একের পর এক কাহিনী শোনাচ্ছেন, আবার এর ছুতোয় ছবিগুলো আবারো বের করে দেখাতে চাইছেন। আমি বলি, তাঁর বৌ-মেয়ে বলে, আর দেরি করলে আমি ট্রেন ফেল করবো, তারপর কোনোরকমে ওনাকে আটকাই, তখনো অবশ্য মুখ গোমড়া...

অবশেষে আমাকে বিদায় জানানোর মতো অবস্থায় উনি এলেন, তাঁর গলা আবেগে ভরা; আমার হাত দু'টো তাঁর হাতে নিয়ে অন্ধের পক্ষে যতোটা সম্ভব কৃতজ্ঞতায় ভরিয়ে দিলেন।

“আপনি দেখা করতে আসায় কী যে ভালো লাগছে”, গলায় তাঁর সূক্ষ্ম কম্পন। “কতোদিন পর আমার সংগ্রহের যোগ্য সমঝদার একজন পেলাম। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটা সুযোগ আমায় দিন। একটা অন্ধ বুড়ো লোকের সাথে দেখা করতে আসাটা আপনার একেবারে বৃথা যাবে না। আমার উইলে লেখা থাকবে যে আপনাদের নামজাদা ফার্মটাই আমার সংগ্রহগুলো নিলাম করবে।”

মূল্যহীন পোর্টফোলিওগুলোর ওপর স্নেহে হাত বোলাচ্ছেন তিনি।
“কথা দিন ওরা একটা সুন্দর ক্যাটালগ বানাবে। এর চাইতে ভালো কোনো স্মৃতিচিহ্ন আমি চাই না।”

আমি রমণী দু’জনের দিকে চাইলাম। সর্বশক্তি দিয়ে তাঁরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করছেন পাছে তাঁদের ফোঁপানোর এতটুকু শব্দ তাঁর কানে যায়। অসম্ভব প্রতিজ্ঞাটা করলাম। প্রত্যুত্তরে আমার হাতে একটু চাপ দিলেন তিনি।
স্ত্রী এবং কন্যা আমাকে দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এলো। কথা বলতে তাঁরা সাহস পাচ্ছিলেন না, কিন্তু সমানে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আমার অবস্থাও বিশেষ ভালো না। ছবির ব্যবসায়ী হিসেবে দরাদরি করতে এলাম। অথচ ঘটনা এমনভাবে মোড় নিলো যে আমি হয়ে বসেছি সৌভাগ্যের দেবদূত, সৈনিকদের মতো সমানে মিথ্যে বলে একটা বুড়ো মানুষকে খুশি করার জন্যে একটা ধোঁকাবাজিতে অংশ নিলাম।

মিথ্যে বলার জন্যে লজ্জা পাই নি মোটেও, বরং মিথ্যে বলে বেশ ভালোই লাগছে। কমসে কম এই দুঃখ আর মনখারাপের সময়ে কিছু আনন্দ তো দিতে পারলাম।

রাস্তায় যখন নেমেছি, হঠাৎ শুনলাম ওপরের একটা জানালা খুলে গেলো, আর কানে এলো কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। বুড়ো মানুষটা আমায় দেখতে পাচ্ছেন না, কিন্তু ঠিক জানেন আমি কোন দিকে যাবো। তাঁর অন্ধ চোখগুলো সেদিকেই আটকানো। এতো বেশি উনি ঝুঁকে আছেন যে পড়ে যাওয়ার ভয়ে তাঁর উদ্বিগ্ন আত্মীয়েরা তাঁকে আঁকড়ে রেখেছেন। রুমাল দুলিয়ে উনি চেঁচিয়ে উঠেছেনঃ
“যাত্রা আনন্দময় হোক, হের রেকনার।”

গলার আওয়াজটা যেনো বাচ্চা ছেলের। জীবনে ভুলতে পারবো না সেই হাসিভরা মুখ, রাস্তার অন্যসব দুর্ভাবনাময় চেহারার চাইতে ওটা এতো আলাদা। এতোক্ষণ ধরে যে ধোঁকা দিয়ে গেলাম তাতে করে তাঁর জীবনে আনন্দই নেমে এসেছে। গ্যেটেই বলেছিলেন নাঃ “সংগ্রাহকেরা সুখী হয়”?

[স্টিফেন ৎসোয়াইগের 'দ্য ইনভিজিবল কলেকশন' অবলম্বনে]


মন্তব্য

সাইফ তাহসিন এর ছবি

একমত বস!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

পারলেন দুঃখী মানুষটারে এভাবে খোঁচা দিয়া কথা বলতে?

হাত্তিমার্কা বালতির কথা জানতাম, এখানেরটার শানেনজুল জানাইবেন কি? তাৎপর্য বুঝিয়াছি।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

সাইফ তাহসিন এর ছবি

অ্যাঁ এইটা কি পড়লাম! লিখেন কেমনে এইসব? এক প্যারা ইংরেজি পড়লেই তো দাঁত সব খুইল্লা মাটিত পইড়া গড়াগড়ি দেয় হো হো হো আমার। চলুক আপনার হাতি মার্কা অভিযান চলুক

অট: প্যারাগ্রাফ ফরম্যাটিং করলে ভালু হয়। শুরুতে justify আর শেষে /justify ৩য় ব্রাকেট এর মাঝে দিয়ে দিয়েন, বড় লেখা দেখতে ভালু লাগে! যেমন [জাস্টিফাই] *** লেখা*** [/জাস্টিফাই], জাস্টিফাই বাংলায় লিখলাম নাইলে দেখাইবো না।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

ডাঙ্কে ব্রো! ফর্ম্যাটিং-এর কথাটা তাসনীম ভাইও একবার তিথির এক লেখায় উপদেশ হিসেবে দিয়েছিলেন, কিন্তু খেয়াল থাকে না। চেষ্টা করবো আশা করি পরে মনে রাখার।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

অদ্রোহ এর ছবি

সুপাঠ্য ,গতিময় অনুবাদ। মনে হল, চোখের সামনে দেখলাম সবকিছু। একটা সামান্য খটকা, অন্ধদের ষষ্ঠেন্দ্রিয় অত্যন্ত প্রখর হয়ে থাকে ,সেই হিসেবে লোকটার কি কিছুমিছু টের পেয়ে যাওয়ার কথা না?

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

হ, আমারও তাই মনে হৈসিল, কিন্তু এহন দেহি ভুল কর্সিলাম। অন্ধদের ব্যাপারটা ঠিক, তবে এখানে তিনি প্রথমত দীর্ঘদিনের অন্ধ নন। দ্বিতীয়ত, ছবিগুলো ঠিক ত্রিমাত্রিক নয় যে, একটা কার্ট্রিজ থেকে অন্যটা বিশেষভাবে আলাদা হবে। তারপরও, শেষদিকে কিন্তু এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। আর মনে সন্দেহ না থাকলে স্বাভাবিকভাবেই নিশ্চিন্ত থাকা যায়। মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট ছেলেটাকে আর ছোট করবো না। চোখ টিপি
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

অদ্রোহ এর ছবি

আমার হাইট পাক্কা পাঁচ ফুট ন ইঞ্চি, আমারে ছুড মনে হইল ক্যা? চিন্তিত

--------------------------------------------

আজি দুঃখের রাতে, সুখের স্রোতে ভাসাও তরণী
তোমার অভয় বাজে হৃদয় মাঝে হৃদয় হরণী।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

তীরন্দাজ এর ছবি

অনুবাদ পড়ে খুবই ভালো লাগলো। নিজের প্রচেষ্টার পাশাপাশি রেখে আনন্দ পেলাম।

নিজেও গল্পটি প্রায় দেড় বছর আগে অনুবাদ করেছিলাম। আমার অনুবাদগ্রন্থ 'অন্যশরীরে' একই লেখকের উপন্যাস Schachnovelle সহ আরো কয়েকজন ওনার সমসাময়িক জার্মান লেখকের অনুবাদ পাবেন। সরাসরি জার্মান থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছি।

আপনার "অদৃশ্য সেসব সংগ্রহ" এর পাশাপাশি আমার 'অদৃশ্য শিল্পকর্ম' পড়ে দেখতে পারেন। তবে আরো ত্রুটিমুক্ত অনুবাদটি বইয়ে পাবেন।

http://www.sachalayatan.com/tirondaz/10391

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। আমার জানাই ছিলো না এই তথ্য। আমি নিজেও অবশ্য এর অনুবাদ আগে পড়েছি, তবে ওটা অনেক সংক্ষিপ্ত ছিলো। ওটা ছিলো কলকাতার তুলিকলমের 'ওয়ার্ল্ড ক্লাসিকস' নামের একটা ছোটগল্প সংকলন। আমি অনুবাদ করেছি অবশ্য ইংরেজি থেকে। নীলক্ষেত থেকে কেনা 'ওয়ার্ল্ডজ গ্রেটেস্ট শর্ট স্টোরিজ' নামের একটা বই থেকে।

আপনার অনুবাদের সাথে কোথাও কোথাও আমার পাওয়া গল্পের গড়মিল পেয়েছি; এজন্যেই বোধহয় বলা হয় 'যা ভাষান্তরে হারিয়ে যায়, তাই হচ্ছে অনুবাদ।' আপনি আরো জার্মান লেখকের সরাসরি অনুবাদ চালিয়ে যাবেন, এই কামনায় এবং আপনার সুদীর্ঘ আয়ু ও স্বাস্থ্যপ্রত্যাশায়।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

দুর্দান্ত এর ছবি

শুধু বলতে চাইঃ বাহ!

---
এ্যান্টিওপ বলে রেমব্রাঁর কোন কাজ পাই নি, একটা পেলাম জুলিয়েট ও এ্যান্টিওপ নামে, সম্ভবত এটার কথাই বলা হচ্ছে

জুলিয়েট নাকি জুপিটার? রাম্ব্রন্ট এর একটা বড় প্রিন্ট আছে সুন্দরী এন্টেওপি আর খাইষ্টা জুপিটারের। তাছাড়া রাম্ব্রান্ট এর প্রায় সমসাময়িক শেক্সপিয়ারের জুলিয়েট চরিত্রটি নিয়ে ছবি আঁকার সম্ভাবিলিটি সীমিত।

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

গল্পটা পোস্ট করতে গিয়ে একবার আপনাকে উৎসর্গ করার কথাও মাথায় এসেছিলো, কিবোর্ডের কসম!

পরের তথ্যের জন্যে অজস্র ধন্যবাদ। ওটা কলম(বা, কিবোর্ড)পিছল ভুলই ছিলো। এখন সংশোধন করে দিলাম।

শুভেচ্ছা।

অপ্রা: আপনি কি চিত্রাংকনের বা সমালোচনার সাথে পেশাগতভাবে জড়িত?
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গল্পটা সাইজে বড়। বিষয়বস্তুর কারণে আগ্রহ পেলাম, এম্নিতে যাদের এইসব কলাপ্রীতি নেই-তাদের জন্যে বেশ কষ্টকর হতে পারে...

যাজ্ঞা, অনুবাদের কাজ চলুক। (খালি সাইজে একটু ছোট কিসু দিয়েন, কিংবা দুই কিস্তিতে দিয়েন...)

_________________________________________

সেরিওজা

মহাস্থবির জাতক এর ছবি

আমার মনে হচ্ছিলো, গল্পের ভেতর মানবিকতার টানটাই পাঠকের কাছে আগ্রহী হবে, দেখা যাচ্ছে ভুল ভেবেছিলাম। অনুবাদের চেষ্টা চলুক সবখানে, সবার হাতেই, সবার জন্যে।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!

(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)

বাউলিয়ানা এর ছবি

একটু বড় বলে আস্তে আস্তে পড়ে শেষ করলাম। ভাল লেগেছে।

আপনার ধৈর্যের প্রশংসা করতে হয়।

তিথীডোর এর ছবি

দৈর্ঘ্যের কথা বলেছেন দেখছি অনেকেই। কই, বড় বলে সেরকম বোরিং লাগেনি তো।

চমৎকার অনুবাদ!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।