পাঠ্যক্রমে নতুন ঢঙে ইতিহাস পড়ানো হোক

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০৬/২০১৪ - ১১:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সপ্তম শ্রেণীতে যখন পড়ি, ছোটোখাটো এক বিষণ্ণ চেহারার শিক্ষিকা এলেন আমাদের ক্লাসে। আমরা নতুন এই ম্যাডামকে খালি হাতে ক্লাসে ঢুকতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম, একটু নিরাপদে বিটকেলপনা করা যাবে, এ-ই ভেবে। সেই ভুলজন্মা স্বস্তি মিনিট পাঁচেক স্থায়ী ছিলো। ম্যাডাম নিচু গলায় জানালেন, তাঁর নাম মিসেস ত্রিবেদী। তাঁর পূর্বপুরুষ তিনটি বেদ কণ্ঠস্থ করেছিলেন বলে তাঁদের এই পদবী। তারপর তিনি চেশায়ার বেড়ালের মতো হাসিমুখে আমাদের বললেন, আমার পূর্বপুরুষ যদি তিনটি বেদ মুখস্থ করতে পারেন, তোমরা সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের এক পাতা মুখস্থ করতে পারবে না কেন? রোজ এক পাতা করে মুখস্থ করে আসবে বাড়ি থেকে। ক্লাসে আমি পড়া ধরবো। যে পারবে না তাকে বেতের বাড়ি খেতে হবে।

এরপর দপ্তরী দাঁত বের করে হাসতে হাসতে প্রকাণ্ড এক বেত নিয়ে আমাদের ক্লাসে ঢুকলো। সেই বেতের উচ্চতা মিসেস ত্রিবেদীর সমান, প্রস্থে আমাদের একেকজনের হাতের বুড়ো আঙুলের মতো। মিসেস ত্রিবেদী বেতটা নিয়ে বাতাসে সপাং করে একটা শব্দ করলেন, আমরা বহু কষ্টে প্যান্ট শুষ্ক রেখে ক্লাসটা কোনোমতে পার করলাম।

এরপর বছরভর সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের এক এক পাতা করে আমাদের মুখস্থ করতে হয়েছে। আমি জীবনে একবারই ত্রিবেদী ম্যাডামের ধোলাই খেয়েছিলাম। তিনি দুঃখিত চিত্তে বলেছিলেন, তুমি তো অন্যদিন পারো, আজকে পারলে না কেন? আমি অন্যদিন পারি বলে সেদিন আমাকে ছাড় দেননি, লোকে যেভাবে অন্য লোকের গরুকে পিটিয়ে ক্ষেত থেকে তাড়ায়, সেভাবে পিটিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে গোসল করতে গিয়ে দেখি আমার বাহু আর কাঁধে বেতের চাকা চাকা দাগ হয়ে আছে।

ক্লাস সেভেনে সমাজ বিজ্ঞানের একটা বিরাট অংশ ছিলো ইতিহাস। বখতিয়ার খিলজির পর হোসেনশাহী, তারপর মোগল আমল, তারপর ইংরেজ আমল নিয়ে পাতার পর পাতা সাল আর নামে কণ্টকিত তখনকার আমার চোখে নিরর্থক সব কথাবার্তা দিয়ে বইটা বোঝাই ছিলো। আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পাতা মুখস্থ করার কয়েকদিন পর আবার ওয়ারেন হেস্টিংসের পাতা মুখস্থ করতে হতো, ততোদিনে আলাউদ্দিন হোসেন শাহের কিছুই আমার আর মনে নেই। সেটাও সমস্যা ছিলো না। কিন্তু সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের ঐ নীরস, বিশুষ্ক তথ্যে ঠাসা লেখার ধরনের জন্যেই হোক, কিংবা মিসেস ত্রিবেদীর গরুপেটা ধোলাইয়ের কারণেই হোক, এই ইতিহাসের ওপর আমার মনে একটা মর্মান্তিক বিরাগ জন্মায়। আমাদের স্কুলে অন্যান্য ম্যাডামরাও ক্লাস সেভেনের পর বছরখানেক সমাজ বিজ্ঞান পড়িয়েছিলেন, তাঁরা অনেক স্নেহ নিয়ে পড়ালেও আমরা সাধারণত ঐ একটা ঘণ্টা হট্টগোল করে কাটিয়ে দিতাম।

ক্লাস সিক্সে বিজ্ঞান বইতে পড়েছিলাম, এনোফিলিস মশা ভূমির সাথে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি কোণ করে বসে, আর কিউলেক্স মশা বসে ভূমির সাথে সমান্তরাল হয়ে। দুই যুগ আগে পড়া এই তথ্য এর পর একবারও পুনরাবৃত্ত হয়নি লেখাপড়ার কোনো কাজে, তারপরও, এখনও মনে আছে, কারণ অনেক বিস্ময় নিয়ে তখন ক্লাসে বসে ভাবছিলাম, যারা বই লেখে, তারা কীভাবে এই কোণটা মাপলো? মশাগুলো কি চুপচাপ বসে থেকে চাঁদা দিয়ে কোণ মাপা বরদাশত করেছিলো? মতিকণ্ঠের ভাষায় সংক্ষেপে বলতে গেলে, "কায়দাটা কী"? এই প্রশ্নের সম্ভাব্য সমাধান অনেক পরে ত্রিকোণমিতি শেখার পর নিজে ভেবে বের করেছিলাম, কিন্তু এখন চিন্তা করলে মনে হয়, কোণ কীভাবে মাপা হয়েছিলো, সেটা বলা না থাকলেও বইটা একটা কাজের কাজ করতে পেরেছিলো, আমার মনে কৌতূহলটা জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলো, যেটা ঐ বয়সের ছাত্রছাত্রীদের জন্যে আবশ্যক।

অথচ সমাজ বিজ্ঞান বইতে পড়ার পর আরো বহুবার পড়েছি, কিন্তু আমার এখন মনে নেই, আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কবে গদিতে বসেছিলো, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কবে হয়, কিংবা কোন লর্ডের পর কোন লর্ড ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় পদে সমাসীন ছিলো। এর পেছনে মিসেস ত্রিবেদীর লাঠ্যৌষধি পাঠদানের ভূমিকা থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু তারচেয়ে বহুগুণে আছে এই ব্যাপারগুলো কীভাবে আমাদের পড়তে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেই ক্লাস সেভেনেরও আগে সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কিশোর ক্লাসিকের নানা গল্প, যেগুলোতে মূলত ইতিহাসের গল্পই বলা হয়েছে, সেগুলো কিন্তু মনে গেঁথে ছিলো বহুদিন। থ্রি মাস্কেটিয়ার্স কিংবা আ টেল অব টু সিটিজ সাগ্রহে পড়ে গেছি, কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংসের শাসনামল নিয়ে পড়তে গিয়ে ভীষণ বিরক্ত লেগেছে। এমন কেন হয়েছিলো?

এমনকি গরুও ঘাসের সেলুলোজ একা একা হজম করতে পারে না। তার জন্যে তাকে নিজের পেটে জীবাণু পালতে হয়। সেই জীবাণুরা সেলুলোজ ভেঙে গরুকে বাঁচায়, আমরাও দুধ আইসক্রিম ইত্যাদি খাওয়ার সুযোগ পাই। আমাদের পাঠ্যক্রমের ইতিহাস বইগুলো এমনভাবে লেখা, যেন গরুর বদলে মানুষকে ঘাস খেতে দেওয়া হচ্ছে। এখন কী অবস্থা, আমি জানি না, কিন্তু এখনকার ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এতে খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয়নি। আমাদের পাঠ্যবইগুলো যাঁরা লেখেন, তারা ছাত্রছাত্রীদের প্রতি কতোটা সদয়, এ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।

ওয়ারেন হেস্টিংসীয় ইতিহাসের প্রতি আমার বিরাগমোচন (রাগমোচনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না) ঘটতে অনেক দেরি লেগেছিলো। সেটাও ঘটেছে গল্প উপন্যাসের হাত ধরে। বিনয়-বাদল-দীনেশের কাহিনী পড়ে দারুণ রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম, কিন্তু এঁদের গল্প আমাদের পাঠ্যবইতে আসেনি। আব্রাহাম ইরেইলির বইগুলো পড়ে ভারতবর্ষ বা মোগলদের ইতিহাস পড়ে যতোটা তৃপ্তি পাওয়া যায়, সমাজবিজ্ঞান বইতে তা পাইনি। কেন এমন হলো?

ইতিহাস তো আসলে গল্পই। কিন্তু সে গল্প কাকে বলা হচ্ছে, সেটা গল্প বলার সময় মাথায় থাকতে হবে। এগারো বছরের বাচ্চাদের এতো শয়ে শয়ে নাম আর সাল গরুপেটা করে মুখস্থ করানোর নাম কেন শিক্ষাদান হবে? এটা তো নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে।

সমাজ বিজ্ঞানে লেখা ইতিহাস পড়ে খুব বেশি কৌতূহল জাগেনি মনে। মনে হয়েছিলো, ঐ লোকগুলো কেবল আমাদের নির্যাতন করার জন্যই প্রতি দশ বছর পর পর ১৪৫০, ১৬৮০, ১৭৭০, এরকম মুখস্থবান্ধব সালে ক্ষমতা না ছেড়ে মাঝামাঝি নানা বছরে গদি ছেড়েছে। আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তার ছেলেকে ক্ষমতাই যখন দেবে, কেন তার নাম আমাদের কথা বিবেচনা করে সালাউদ্দিন হোসেন শাহ রাখেনি, সেটা নিয়েও একটু চাপা অনুযোগ ছিলো আমাদের মধ্যে। হেস্টিংস, ডালহৌসি, ক্যানিং, মিন্টো, রিপন, লিটন হাবিজাবি নামগুলোকে মনে হয়েছে এদের বাবামায়ের বিটকেলপনা। আর এতো নাম আর সাল মুখস্থ করে এসে নিজের দেশের নিকট ইতিহাস পড়তে গেলে আরো আটকে যেতে হতো, কারণ সেগুলোও অনেক একঘেয়েভাবে লেখা ছিলো। এখনকার ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করে, ১৯৭১ এর পর কীভাবে কী হলো, সেটা তারা জানতে চায়, কিন্তু ভালো বই নেই।

ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা এক জিনিস, আর কিশোরপাঠ্য ইতিহাস লিখতে পারা আরেক জিনিস। আমাদের এতো শয়ে শয়ে নাম মুখস্থ না করিয়ে যদি কৌতূহলের চাবিটা তুলে দেওয়া হতো, তাহলে ইতিহাস মুখস্থ করার বদলে আমরা ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী হতে শিখতাম। হয়তো ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার কী কী ক্ষতি করে গেছে, নিজেরাই এ বই ও বই টুকে খোঁজ করার চেষ্টা করতাম, যদি শুধু আমাদের শিক্ষকেরা কৌতূহলী হতে শেখাতেন। এখনও তো বাচ্চাদের প্রকাণ্ড ভারি বোঝা নিয়ে স্কুলে-কোচিঙে-টিউটরের কাছে হানা দিয়ে অনেক কিছু গলাধকরণ করতে হয়, কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, কোনটা জরুরি? এই তথ্যগুলো মুখস্থ করানো, নাকি তথ্যগুলো নিয়ে তাদের চমৎকৃত হতে শেখানো?

আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত খুব চতুর কোনো লোক, কিংবা একাধিক লোক, আলগোছে একটা পুরো জাতিকে নিজেদের ইতিহাস নিয়ে নির্লিপ্ত, এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বীতশ্রদ্ধ বানানোর পথ খুঁজে পেয়েছে আমাদের দেশে। আমাদের ইংরেজি আর আরবি মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা দেশের ইতিহাস কতোটুকু কীভাবে জানে, আমি জানি না। বাংলা মাধ্যমে আমি লেখাপড়া করে এসেছি, শুধু পাঠ্যবই দিয়ে ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ জাগানো আমার মতো বইপড়ুয়ার জন্যেও ছিলো না। এটা কি কেবল গ্রন্থরচয়িতাদের অবহেলায় হয়েছে, নাকি পরিকল্পিত ছকেই?

ইতিহাস জানতে হয় নিজেকে চিনে নেওয়ার জন্যে। আজ থেকে শয়ে শয়ে বছর আগে কোন রাজার পর কোন নবাব গদি দখল করেছিলো, সেই সাল আর নাম মুখস্থ করার চেয়েও বেশি জরুরি, আমাদের সমাজটা কীভাবে সেই রাজা-নবাবদের হাতে পড়ে নিজের চেহারা পাল্টেছে। কেন আলীবর্দি খাঁয়ের চেয়ে সিরাজউদ্দৌলার শাসন খারাপ ছিলো, ওয়ারেন হেস্টিংসের হাতে পড়ে সেটা আরো খারাপ কীভাবে হলো?

আমরা শৈশব-কৈশোরে, কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও, বর্তমানকে মানদণ্ড হিসেবে ধরে নিই। কিন্তু বর্তমান যে একটা দীর্ঘ প্রবাহের ফল, সেটা বুঝতে আমাদের অনেক সময় লেগে যায়। প্রবাহটাকে বুঝতে না পারলে জাতি হিসেবে আমাদের গন্তব্য কোথায়, সেটাও ধরতে আমাদের বেগ পেতে হয়। এই ধরতে পারাটা কেবল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির কাজ নয়, এটা সামষ্টিকভাবে ধরতে শিখতে হবে, কারণ আমাদের গন্তব্যও কমবেশি সামষ্টিক।

আজ আমরা বুড়িগঙ্গার দূষণ দেখে নাক কোঁচকাই, কিন্তু যে কিশোরটি বুড়িগঙ্গার অদূষিত চেহারা দেখেনি, তাকে কীভাবে এই দূষণের খারাপ দিকগুলো বোঝাবো আমরা? বোঝাতে গেলে আমাদের ইতিহাস শিক্ষায় ফিরে যেতে হবে। শিক্ষার এই গুরুত্বপূর্ণ শাখাটিকে আমরা এমন তথ্যকণ্টকিত করে রেখেছি, যে ইতিহাস শেখানো মানে যে গল্প বলা, সেটাও আমরা বিস্মৃত হয়েছি।

ইতিহাস মানে অসংখ্য রোমাঞ্চকর গল্পেরও সমষ্টি। আমাদের কিশোর-কিশোরীদের কথা চিন্তা করে নতুন ঢঙে ইতিহাস পড়ানো শুরু হোক। তথ্যের কাঁটায় তাদের ঝাঁঝরা না করে, কৌতূহলের চাবিটা তাদের হাতে ধরিয়ে দিন। ক্লাস শেষে ইতিহাসের গল্প নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের লেখা নাটক মঞ্চায়িত হোক, ছাত্রছাত্রীরা নিজেরা বই ঘেঁটে নিজেদের পছন্দসই ঐতিহাসিক চরিত্রের ওপর প্রবন্ধ লিখতে শিখুক, ইতিহাসের পরিণতি কীভাবে ভিন্ন হতে পারতো, তা নিয়ে বিতর্ক হোক।

মিসেস ত্রিবেদী বেঁচে আছেন কি না জানি না। যদি তিনি বেঁচে থাকেন, আর এই লেখা তাঁর কাছে কোনোভাবে পৌঁছায়, তাহলে তাঁকে বলতে চাই, আমি নিশ্চিত, তিনি তাঁর নাতি-নাতনিদের ছুটির দুপুরে অনেক আদর করে পুরাণ আর ইতিহাসের নানা গল্প শোনান, তাদের গায়ে মারের দাগও নেই। আপনার বেতের বাড়ি আমার কোনো উপকারে আসেনি ম্যাডাম। এখন রজার ক্রাউলির লেখা ইতিহাসের ওপর চমৎকার একটা বই "সিটি অব ফরচুনস" পড়ছি, আর চিন্তা করছি, আপনার মতো আরো কতো শিক্ষক-শিক্ষিকা কতো ছেলেমেয়েকে ইতিহাস থেকে বেতিয়ে বিমুখ করেছেন। আপনি যে বইয়ের পাতা মুখস্থ করাতেন, সে বইয়ের লেখকদের সঙ্গে নিয়ে আপনার মতো মানুষগুলো অবসর নিয়ে শিক্ষাঙ্গন থেকে দূর হয়ে যাক। ভালো থাকবেন।


মন্তব্য

সজীব ওসমান এর ছবি

আমার প্রায় সব সাবজেক্টের শিক্ষকের কাছেই মার খাওয়ার উদাহরণ আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেন মার খেলাম বুঝতেই পারতাম না। একটা ঘটনা বলি। কয়েকজন মিলে একবার ইয়োইয়ো খেলছিলাম, টিফিন ছুটিতে। স্যার দেখে ফেললেন। সবগুলা ইয়োইয়ো কেড়ে নিয়ে মেরে আগাপাশতলা লাল করে দিলেন। পরেরদিন দেখি উনি ইয়োইয়ো আবার নিয়ে এসেছেন। আমাদেরকে ফেরত দেবেন। কিন্তু ফেরত দেয়ার সময় আবার সবাইকে একদফা মার। আমার পালা আসার পর আমি বললাম 'স্যার ইয়োইয়ো'র দরকার নাই, আপনে রেখে দেন।' স্যার বললেন 'না নিতে হবে তোকে'। অগত্যা মারের বদলে ইয়োইয়ো ফেরত পেলাম।

আর বিজ্ঞান স্যার মার দিতেন সেই মুখস্ত না বলতে পারলেই। যেমন, গাছের পাতার রঙ সবুজ হয় কেন- জিজ্ঞেস করলেন, না পারলেই বেত। এখন যদি ক্লোরোফিল নামটা কিভাবে এসেছে বোঝাতেন তাহলে আমাদের মনে থাকতো মুখস্ত করা ছাড়াই। যেমন, গ্রীক ক্লোরোফিলের 'ক্লোরোস' মানে সবুজ, আর 'ফাইলন' মানে পাতা। অর্থাৎ ক্লোরোফিল মানে 'সবুজ পাতা'। আর ক্লোরোফিলের জন্যই গাছের রঙ সবুজ।

আসলেই, শুধু সমাজবিজ্ঞান নয়, বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর পড়ানোরও আমূল পরিবর্তন দরকার বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে।

সুবোধ অবোধ এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু

বড় গুন্ডে কিন্তু আমাদেরকে সুন্দর ভাবে ইতিহাস শিখানোর প্রকল্প ইতিমধ্য নিয়ে নিয়েছেন। চোখ টিপি

সাইদ

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ইতিহাস তো অতীতেরই 'সত্য' গল্প। এটা পড়তে কেন আমদের বিরাগ জন্মায় সেটা বুঝতে পারিনি স্কুলে থাকতে। ভাবতাম, একটাু মজা করে লিখলে, আর এর উপর পরীক্ষা না দিতে হলে (মামা বাড়ির আব্দার!) হয়ত মজাটা পেয়ে যেতাম। আরেকটা কারণ হল, আমাদের সমাজে 'ইতিহাস' পড়া ব্যাপারটা কিঞ্চিত অবহেলিত। বই মেলায় গেলে বাবা-মায়েরা শিশুকে "জীবজগতের অজানা কথা" কিনে দিতে যতটা আনন্দ পান, সেটা তাঁরা "মোঘল আমলের শিশুতোষ কাহিনী" কিনে দিতে গিয়ে পান না (হয়ত কিনেই দেন না)।

হুমায়ূন আহমেদের "বাদশাহ নামদার" পড়ে মজা পেয়েছি। লেখক হুমায়ূন ঐতিহাসিকভাবে কতটা সঠিক সেটা বলতে পারব না, আমার দখল নেই তেমন ইতিহাসে। ইতিহাস আঁকড়ে ধরে হয়ত সত্যপীর ভাইয়ের মতই হুমায়ূন ফিকশন ঢুকিয়েছেন। তবে, ইতিহাস নিয়েও যে কাহিনী পাঠককে আকৃষ্ট করে সেটা টের পেয়েছি। অনেক ভালো ইতিহাস রচয়িতাও নিশ্চয়ই আছেন, যারা সঠিক ইতিহাসটা একটু 'নরম' করে শিশুদের জন্য আর 'শক্ত' করে বড়দের জন্য উপস্থাপন করতে পারবেন।
(৪৭ পরবর্তী সময়ের জন্য নরম করার দরকার নাই, আমরা শিশুদের কালো কে কালো, সাদা কে সাদা বলতে শেখাতে চাই, কালো -কে ধুসর বলার কারণ নাই)

শুভেচ্ছা হাসি

অফটপিক: ত্রিবেদী নামের এই মর্মার্থ জানা ছিল না। অনুপম ত্রিবেদী -দা কে এখন থেকে মুখস্থ পড়া ধরতে হবে খাইছে

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ক্লাস নাইনে আমাদের ভুগোল পড়ানো হত ঠিক এইভাবে, পাতার পর পাতা মুখস্ত করে। একদিন ভুগোলের স্যার অসুস্থ, তার জায়গায় পাঠানো হল অঙ্কের টিচার সিরাজুল ইসলাম স্যারকে। আমাদের ধারণা ছিলো বদলি টিচার আসলে সাধারনত যা করেন, আমাদের কিছু একটা ফালতু কাজ ধরিয়ে দিয়ে বসিয়ে রাখবেন, তারপর নিজে বসে বসে পেপার পড়বেন, চলে যাবেন। ইনি এসেই জিজ্ঞেস করলেন ভুগোল বইয়ের কোন জায়গাটা পড়ছি আমরা। বলা হল এশিয়া। কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা খুলে স্যারের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করলো। স্যার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কারা কারা চোখ বন্ধ করে পৃথিবীটা দেখতে পাও বলো তো? আমরা চুপচাপ। উনি বলে চললেন, চোখ বন্ধ করে উড়তে শুরু করে দাও সবাই দেখি। উড়ে উড়ে ঢাকা পার হয়ে যাও, একটু পরে যমুনা নদী পাড় হয়ে যাও। তারপর বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরের উপর দিয়ে নেপাল, তারপর হিমালয়... কি শীত করছে? বরফ দেখতে পাও? ওই যে দূরে দেখো গঙ্গোত্রী হিমবাহ। ... ... উনি বলে চললেন, আমরা নিশ্চুপ মুগ্ধ হয়ে শুনলাম। ক্লাসের ঘন্টা যখন বাজলো উনি তখন সিনাই পর্বতের কাছাকাছি কোথাও গিয়ে থেমেছেন। এখন বুঝি স্যারের একটা যাদুময়ী কন্ঠ ছিলো। একটা প্যাশন ছিলো শেখানোর ব্যাপারে। পরে জেনেছি স্যার কোনদিন দেশের বাইরে তো নয়ই, ঢাকা আর তার দেশের বাড়ি ছাড়া তেমন কোথাও যানও নি। এটুকু মনে আছে ভুগোলের স্যার পরের ক্লাসে এসে উনার চোখ বন্ধ করে ওড়া নিয়ে "অঙ্কের টিচার ভুগোল শিখাইবো, তাইলেই হইসে" টাইপের একটা মন্তব্য করেছিলেন।

কিন্তু সেদিন অঙ্কের স্যারের ভুগোল ক্লাসের পরে এশিয়ার চ্যাপ্টারটা আমাদের আর কোনদিন, এমন কি পরীক্ষার আগের দিনেও আর মুখস্ত করতে হয় নি। এত বছর পরে এই সেদিনও গুগল আর্থ যখন ছিলো না, চোখ বন্ধ করে গঙ্গোত্রী হিমবাহ ঠিক ঠিক দেখতে পেতাম।

শুধু ইতিহাস কেন, পাঠ্যক্রমে নতুন ঢঙে সবকিছুই পড়ানো হোক

নির্ঝর অলয় এর ছবি

চলুক

নির্ঝর অলয় এর ছবি

ঠিক যে সময়ে পাঠ্যবইয়ের ইতিহাস বিভীষিকার অন্য নাম ছিল, ঠিক সে সময়েই সুনীল এঁকে দিলেন ইতিহাসের বর্ণিল ছবি। ক্লাস টেনে পড়লাম "সেইসময়।" আমাদের ইতিহাস বইতে বঙ্গভঙ্গ রদ প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল, "অবশেষে কায়েমী স্বার্থবাদী হিন্দুদের প্রচেষ্টায় বঙ্গভঙ্গ রদ হল।" ক্ষুদিরাম প্রসঙ্গে লেখা ছিল, "সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষুদিরামকে ফাঁসি দেয়া হয়"- সুনীলের "প্রথম আলো" পড়ার পর আসল সত্যগুলো কিছুটা জেনেছিলাম।

পাঠ্যপুস্তক সূক্ষ্মভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। কখনো লেখে নি রবীন্দ্রনাথের রাখিবন্ধনের কথা, নজরুলের অগ্নিযুগের বিদ্রোহী উচ্চারণের কথা। কখনোই বলে নি- "ভাই ভাই এক ঠাঁই, ভেদ নাই, ভেদ নাই।"

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ । একটা ভালোমানুষী ফাজলামো লক্ষ করেছেন কি? নবম দশম শ্রেণীর পদার্থ বিজ্ঞান বইয়ের প্রথম চ্যাপ্টারে 'ভৌত বিজ্ঞানের বিকাশ ' বর্ণনা করতে আরবের বিজ্ঞানীদের অবদান প্রায় দেড় পাতা আর আর্যভট্ট বরাহ মিহির, জগদীশ বসু, সত্যেন বোস, মেঘনাদ সাহাদের কপালে জুটেছে 'এড়ানো যাচ্ছে না' টাইপের ছোট্ট এক প্যারা! একে কি বলবেন ?

রাজর্ষি

অতিথি লেখক এর ছবি

নিজের কথা বলি, সামাজিক বিজ্ঞান বইতে ৪৭-৭১ পর্যন্ত যেভাবে লেখা হয়েছে, সে চ্যাপ্টারগুলো পড়তে ভয় ভয় লাগত, কঠিন প্রশ্ন মুখস্ত করার ভয়। এই ইতিহাস বই দেশের শত্রুদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় নি। এক ভীষণ নির্লিপ্ততা জন্ম নিয়েছিল।
বঙ্কিমচন্দ্রের 'আনন্দমঠ' উপন্যাস পড়ে কিছুটা আঁচ করেছি ফকির বিদ্রোহ কেমন ছিল ! স্বদেশী আন্দোলনের সময়কার তীব্র দেশাত্ববোধকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে পাঠ্য বইগুলোতে লেখা 'এটা শুধুমাত্র কায়েমী স্বার্থবাদী হিন্দুদের আন্দোলন' ছিল।নেতাজী সুভাষ বসুর আন্দোলন, অগ্নিযুগের সূর্যসেন, বিনয়-বাদল-দিনেশ অসমসাহসিক বিপ্লবীদের সম্পর্কে তেমন কিছুই লেখা নেই ।(আগ্রহীদের জন্য অন্তত রেফারেন্স থাকতে পারতো,অনেকটা সহপাঠের মতো করে, যাতে আনন্দ নিয়ে সেটা সবাই পড়তে পারতো ।)

রাজর্ষি

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের দেশে পাঠ্যবইগুলি যারা লেখেন, আমার মনে হয় না তারা কেউ আসলে ভাল লেখক। "কত নদী সরোবর" এবং "লাল নীল দীপাবলি" পড়ে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য সম্পর্কে যা জেনেছি, স্কুলের পাঠ্য বই পড়ে তা জানিনি, অথবা জানার ইচ্ছা হয়নি। স্কুল জীবনে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রকাশিত একটা বই পড়েছিলাম, "অঙ্কের মজার খেলা" (অথবা "অঙ্কের মজার গল্প"; সঠিক নাম এখন মনে নেই) নামে। সেই বই পড়ার পর সেখানে দেয়া সমস্যাগুলি সমাধান করার চেষ্টা করতাম, ভুল হোক আর ঠিক হোক। কিন্তু স্কুলের অঙ্ক বই দেখলেই ভয় লাগত। মনে আছে, আমার হাতে সেই বই দেখে স্কুলের এক অঙ্ক স্যার ধমক দিয়ে বলেছিলেন এসব "আউট বই" যেন না পড়ি।

Emran

এক লহমা এর ছবি

"ইতিহাস জানতে হয় নিজেকে চিনে নেওয়ার জন্যে। আজ থেকে শয়ে শয়ে বছর আগে কোন রাজার পর কোন নবাব গদি দখল করেছিলো, সেই সাল আর নাম মুখস্থ করার চেয়েও বেশি জরুরি, আমাদের সমাজটা কীভাবে সেই রাজা-নবাবদের হাতে পড়ে নিজের চেহারা পাল্টেছে। কেন আলীবর্দি খাঁয়ের চেয়ে সিরাজউদ্দৌলার শাসন খারাপ ছিলো, ওয়ারেন হেস্টিংসের হাতে পড়ে সেটা আরো খারাপ কীভাবে হলো?" - চলুক

"ইতিহাস মানে অসংখ্য রোমাঞ্চকর গল্পেরও সমষ্টি। আমাদের কিশোর-কিশোরীদের কথা চিন্তা করে নতুন ঢঙে ইতিহাস পড়ানো শুরু হোক। তথ্যের কাঁটায় তাদের ঝাঁঝরা না করে, কৌতূহলের চাবিটা তাদের হাতে ধরিয়ে দিন। ক্লাস শেষে ইতিহাসের গল্প নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের লেখা নাটক মঞ্চায়িত হোক, ছাত্রছাত্রীরা নিজেরা বই ঘেঁটে নিজেদের পছন্দসই ঐতিহাসিক চরিত্রের ওপর প্রবন্ধ লিখতে শিখুক, ইতিহাসের পরিণতি কীভাবে ভিন্ন হতে পারতো, তা নিয়ে বিতর্ক হোক।"
- বি. এড. পড়তে আসা শিক্ষক মশাই কয়েকটি মাসের জন্য ষষ্ঠশ্রেণীতে আমাদের আফ্রিকার ইতিহাস পড়াতে এসে এই পদ্ধতির প্রয়োগ করেছিলেন। সে এক অসাধারণ সুখের অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

পঞ্চম শ্রেণীতে আমাদের মিসেস ত্রিবেদী স্টাইলেই ইতিহাস পড়ানো হত, একপাতা কিংবা দেড় দু পাতা মুখস্ত করে আসা। তাতে ব্যর্থ হলেই লাঠ্যৌষধী, তবে সে ঔষধ যে অব্যর্থ ছিল তা বলা যাবে না। অবশেষে এলেন এক নতুন শিক্ষক, তিনি পড়া দিলেন বিষয়ের ভিত্তিতে। পরদিন পড়া ধরলেন সুনিদ্রিস্ট তথ্যের ভিত্তিতে, যেমন পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ কার কার মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল? এ যুদ্ধে কে জয়ী হয়েছিল? ইত্যাদি। প্রথম প্রথম প্রশ্নের ধরন বুঝে উঠতে কারো কারো সমস্যা হচ্ছিল, প্রশ্ন যাই হোক, আগপাশতলা মুখস্ত বলার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু অচিরেই আমরা দেড়পাতা দুপাতা মুখস্ত করার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম।
আমাদের এখানে যে প্রক্রিয়ায় বইয়ের লেখক এবং সম্পাদক নিয়োগ দেয়া হয়, তাতে আশানুরূপ লেখার আশা করা দুরাশা মাত্র। আপাতত শিক্ষক এবং অভিভাবকগনের সহৃদয় বিবেচনা বোধই একমাত্র ভরসা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের স্কুলটা গার্লস স্কুল ছিল বলে হয়ত মারের আশঙ্কা থেকে আমরা মোটামুটি মুক্ত ছিলাম শুধু ধর্ম ক্লাসে প্রতিদিন একটি করে হাদিস আরবি উচ্চারণসহ মুখস্ত করে আসতে হত আর তা না হলে স্যার ডাস্টার ছুড়ে মারতেন, কেউ যদি নিজেকে বাঁচানোর জন্য একটু সরে দাঁড়াত তো তাকে আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে হত যতক্ষণ না ডাস্টার তার গায়ে লাগে। এই বিভীষিকাময় স্যারের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের বহু আন্দোলন করতে হয়েছে। এখন যদিও শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক পরিবর্তিত হয়েছে তবুও হয়ত কিছু কিছু বিষয় এখন শিক্ষার্থীদের বিরক্তির কারণ আর তা ঠিক করতে হয়ত সবার মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

ফাহিমা দিলশাদ

নির্ঝর অলয় এর ছবি

লোকে যেভাবে অন্য লোকের গরুকে পিটিয়ে ক্ষেত থেকে তাড়ায়, সেভাবে পিটিয়েছিলেন।

এই লাইনটা বিশেষভাবে মনে ধরল হিমু ভাই!

ক্লাস নাইনে একদিন সিলেবাস নিয়ে যাই নি বলে, হেডু বললেন সিলেবাসের ১৫ নম্বর নিয়ম মুখস্থ বল। বলতে পারিনি। পেঁদিয়ে বেন্দাবন দেখিয়ে দিয়েছিলেন। দুসপ্তাহের ওপর সেই দাগ ছিল।

পরবর্তীতে ভালো ফলের সুবাদে স্কুলের বিদায়ী বক্তৃতার সুযোগ পেয়ে এই ১৫ নম্বর নিয়মের বারোটা বাজিয়ে দিলাম। নিয়মটা ছিল, স্কুল প্রাঙ্গনের কোথাও কোন ধরনের খেলাধুলা করা যাবে না। আমি ওই শেষ দিনেও নিরাবেগ গলায় বলেছিলাম পৃথিবীর কোন স্কুলে এমন বর্বর নিয়ম নেই। ছোট ভাইয়ের কাছে শুনতে পেলাম নিয়মটি বাতিল হয়েছে!

আমাদের শিক্ষকদের ধারণা পিটিয়ে ও চাপ সৃষ্টি করেই শুধু শেখা যায়। আনন্দের মধ্য দিয়ে যে শিক্ষার ভিতটা পোক্ত হয় সেটা প্রাচীন ভারতে বুঝলেও রবিঠাকুরের আগে আধুনিক ভারতে কেউ বুঝতে পারেন নি। বর্তমানে শিক্ষকজীবনে দেখছি অধ্যাপকরা সবসময়ই ব্যস্ত ছাত্রদের বাঁশ দেয়ার নানা প্রক্রিয়া উদ্ভাবনে। মেডিকেল কলেজে এ বছর বুয়েট-কুয়েট স্টাইলে পি,এল চালু হয়েছে। পি,এল এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধ্যাপকরা- এটা কোন ছুটি নয়, এই সাতদিন ব্যাচটিচারের কোলে বসে পড়িতে হইবেক!

টার্ম পরীক্ষার পর সাতদিন ছুটি। সেটাও গায়ের জোরে কেড়ে নিল বুড়ো-হাবড়া অধ্যাপকগণ! কিছু ছাত্র ছুটি কাটিয়ে শেষে জরিমানা গুণেছে। শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের ওপর জবরদস্তি চলেছে, চলছে, চলবেই!

মন মাঝি এর ছবি

১। আমার মতে স্কুল / কলেজে শুধু উপমহাদেশীয় ইতিহাস বা ইসলামের ইতিহাস জাতীয় কিছু না পড়িয়ে ঐ বয়সের উপযোগী করে বিশ্ব-ইতিহাস পড়ানো উচিত। শিশুকিশোরদের মনের দিগন্ত ঐ বয়স থেকেই প্রসারিত করার সুযোগ দেয়া উচিত। এই প্রসারিত দিগন্তে পরে অন্য কারও পক্ষে মৌলবাদ, সঙ্কীর্ণ আঞ্চলিকতাবাদ বা কুপমণ্ডুকতার বীজ বপন বা চাষ করা কঠিন হবে। অনেক আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রকাশিত ও বাংলায় অনুদিত বিশ্ব-ইতিহাসের উপর শিশু-কিশোরদের উপযোগী অতি চমৎকার কিছু বই দেখেছিলাম। নাম ছিল খুব সম্ভবত - 'পৃথিবীর ইতিহাস'। আমাদের স্কুলে পাঠ্যবই হিসেবে এই ধরণের বই থাকলে খুব ভাল হত।

২। বাচ্চাদের জন্য ইতিহাসের বইতে টেক্সটের পাশাপাশি বিষয়সংশ্লিষ্ট প্রচুর ছবি থাকলে ভাল হয়। আকার্ষনীয় আলোকচিত্র আর আঁকা ছবি। এতে টেক্সটের বিষয়বস্তু ভিস্যুয়ালাইজ করা সহজ হয়। অদেখা বিষয় ভিস্যুয়ালাইজ করতে পারলে শিক্ষনীয় বিষয় হৃদয়ঙ্গম করা এবং মনে রাখাও অনেক দ্রুত, সহজ ও কার্যকরী হয়। ইতিহাস পঠনটাও উপভোগ্য হয়। উপরে বলা সোভিয়েত বইটাও এইরকমই ছিল।

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

ইতিহাস নতুন ঢঙে লেখার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থায়, আমাদের আপামর চিন্তা ধারায় একটি তীব্র পরিবর্তন দরকার। ইতিহাস লেখা কেমন হওয়া উচিত, এবং অনুচিত, অন্যান্য শিক্ষার বই গুলি কেমন হওয়া উচিত বা অনুচিত, সব কিছু নিয়েই। এখন একমাত্র অল্টারনেটিভ আমাদের হাতে সোচ্চার হওয়া, আর নিজেরাই ইন্টারেস্টিং ইতিহাস এর বই লেখা, নয়তো ইতিহাস ভিত্তিক গল্প, উপন্যাস, নাটক।

আপনার লেখা দিয়ে ও এই ব্যানার দিয়ে শুরু হোক। এই আলোচনা গুলি চলতে থাকুক, এতে করে যদি কোনো পরিবর্তন আসে শিক্ষা ব্যবস্থায়।

-আনন্দময়ী মজুমদার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিস্তারিত আলোচনার আগে পোস্টের গুরুত্ব বিবেচনা করে এটাকে স্টিকি করার দাবী জানাচ্ছি। পোস্টটাতে কয়েকদিন ধরে চোখের সামনে আলোচনা হোক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। শুধু ইতিহাস কেন, সকল বিষয়ে আমাদের স্কুল পর্যায়ের (তা সে যে মিডিয়ামই হোক) পাঠ্যক্রমে যে ঢঙে বই লেখা ও পড়ানো হয় তাতে শিক্ষার্থীরা খুব কম জিনিসই আত্মস্থ করতে পারে। সারা জীবনের জন্য মনে থাকে আরো কম। এক বাংলা ভাষার কথাই ধরুন, এটার পাঠ্যপুস্তক এমন কায়দায় লেখা আর তা এমন ঢঙে পড়ানো হয় তাতে শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষাটা শুদ্ধরূপে বলতে, পড়তে, লিখতে এবং শুনে বুঝতে পারে না। তারা জানে না কবিতা কী করে পড়তে হয়, সাহিত্যের রস কী করে নিতে হয়, কোন শব্দের উচ্চারণ আর বানান কী হয়, বিরামচিহ্ন কী করে ব্যবহার করতে হয়। বলাইবাহুল্য, তাদের শিক্ষকদের অবস্থা তাদের চেয়ে খুব ভালো কিছু নয়। এই অশিক্ষার পরম্পরা এদেশে দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

২। পাঠদান পদ্ধতির ব্যাপারে পরে বলছি, আগে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকের ব্যাপারে বলে নেই।

আমাদের ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে ইতিহাস বলতে শুধু অতীতের ঘটনার কালানুক্রমিক বর্ণনাকে বোঝায়। একটু উপরের ক্লাসের বইয়ে এক-আধটু সামাজিক জীবন, সাহিত্য-সংস্কৃতি, অর্থনীতির কথা আসে। তা কালানুক্রমিক বর্ণনা হোক আর সংস্কৃতি-অর্থনীতির কথা হোক তার সবই লেখা হয় শাসকগোষ্ঠীর চোখ দিয়ে দেখে। সেসব বর্ণনা ব্যক্তিস্তুতি, বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ভুয়া জাতীয়তাবাদ, শ্রেণী বিদ্বেষ ইত্যাদি বিষে পূর্ণ থাকে। দেশের সিংহভাগ মানুষ ঐ সময়কালে আসলে কেমন ছিল বা তারা ঐ আমলটাকে কী চোখে দেখতো সেগুলো এসব বইয়ে অনুপস্থিত থাকে। আসলে যারা এইসব বই লেখেন তারা তো আর ঐতিহাসিক নন্‌, তাই কলোনিয়াল ঐতিহাসিকরা যে চশমা তাদের চোখে লাগিয়ে দিয়ে গেছে সেটা তারা খুলতে পারেন না। যে চোখে দেখতে পায় না সে তো অন্যের বর্ণনা অনুযায়ীই পুনঃবর্ণনা করে যাবে। এটাই স্বাভাবিক।

একটা উদাহরণ দেই। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খানের আমলকে মোটামুটি স্বর্ণযুগ বলে দাবি করা হয়। তার সুশাসনের উদাহরণ হিসেবে বলা হয় তার আমলে 'টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত'। অশিক্ষিত ইতিহাস রচয়িতারা যেটা বলে না সেটা হচ্ছে আট মণ চালের বিক্রয়মূল্য এক টাকা হলে তার উৎপাদন ব্যয় কত হয়? এবং উৎপাদনকারী কৃষক সেখানে কত টাকা পায়? আট মণ চাল এক টাকায় বিক্রয় হলে উৎপাদনকারী কৃষক যে ধনেপ্রাণে মারা যায় সেই বোধ ঐ সব অশিক্ষিতিদের নেই। তারা আরও বলে না যে, শায়েস্তা খান ঐ সময়ের হিসাবে প্রতিদিন দুই লাখ টাকার বেশি লুট করে ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিল। তার এই লুটপাটের ফলে এই দেশ শ্মশানে পরিণত হয়েছিল।

এমন উদাহরণ বহু বহু দেয়া যাবে। ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে ইতিহাসকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গী ও বিশ্লেষণের পদ্ধতি না পাল্টালে এসব ইতিহাস পাঠ কোন কাজে তো লাগবে না-ই সাথে সাথে এগুলোর রেফারেন্স দিয়ে ভবিষ্যতে বর্ণবাদী, সাম্প্রদায়িক, ভুয়া জাতীয়তাবাদী, শ্রেণী বিদ্বেষী গ্রুপ তৈরি করা যাবে। উগ্র জাতীয়তাবাদী/সাম্প্রদায়িক/বর্ণবাদী গোষ্ঠীগুলো আকাশ থেকে পড়েনি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

স্কুলগুলোতে কি ভঙ্গীতে শিক্ষাদান করতে হবে তার কোন গাইড লাইন নেই। তাছাড়া একেক শিক্ষকের একেকটা ভঙ্গী থাকে পড়ানোর। এটা ট্রেনিং দিয়ে কতটা উন্নত করা যাবে তার নিশ্চয়তা না থাকলেও একটা গাইডলাইন থাকা উচিত। দ্বিতীয় ব্যাপার হলো পাঠ্যবই। আপনি যে ভোগান্তির কথা বললেন, সেটা অধিকাংশ ছাত্রেরই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা। শুধু ইতিহাস না, প্রায় সবগুলো পাঠ্যবই নিয়ে কথাটা সত্য। আর আমাদের সমস্যার আসল ভুত লুকিয়ে পাঠ্যবইগুলোতে। ওগুলো যারা লেখেন তাদের অনেকে ভালো গদ্য লিখতে পারেন না। বিটিভির আটটার সংবাদ বা সরকারী প্রেসনোটের ভাষায় লেখা বইগুলো মগজের কোথাও স্পর্শ করে না। আমার মতে সবগুলো বই নতুন করে লেখা উচিত আবার। প্রতি ক্লাসে। অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো একদম বাদ দেয়া দরকার। মধ্যযুগীয় ইতিহাসের সাল মুখস্ত করতে করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখার বাইরে থেকে যায়।

আমি স্কুলে বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক ব্যাপার শুধু মুখস্ত করেই পাশ করেছি। বড় হবার পর আরজ আলী মাতুব্বরের বিজ্ঞান পর্বগুলো পড়ে আমার মাথাটা সত্যিকার অর্থে ওই ব্যাপারগুলো বুঝতে পেরেছে। কেন হলো এটা? আরজ আলী মাতুব্বর তো পেশাদার কোন লেখিয়ে না। কিন্তু তিনি নিজে বোঝার জন্য যে সহজ করে লিখেছেন সেটা দশ জনের জন্যও সহজ হয়ে গেছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৩। ইতিহাসের পাঠ্যক্রমে কী থাকা উচিত? বাবুর আর তার ছানাপোনার বাখানী কয়েক অধ্যায় জুড়ে পড়ানোর চেয়ে অনেক অনেক বেশি দরকার পাকিস্তানীদের শোষণের, মুক্তিযুদ্ধে তাদের চালানো নৃশংস হত্যাযজ্ঞের, ধর্ষণের, জাতির মেরুদণ্ড গুড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত পড়ানো। আরো দরকার মুক্তিযুদ্ধোত্তর কালে এই বাহিনী-সেই বাহিনীর নামে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত ও হত্যাযজ্ঞ, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও দেশে সামরিক শাসন জারি, সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া আর পতিত সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের চালানো অরাজকতা, নৃশংসতা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা, ১৯৯১ সাল থেকে গণতান্ত্রিক শাসনের নামে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি আর লুটপাটের বিস্তারিত পড়ানো। চেঙ্গিস খান, হালাকু খান বা নাদির শাহের চেয়ে ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খান, রাও ফরমান আলীদের অথবা মীর জাফর, জগৎশেঠ, উমিচাঁদদের চেয়ে গোলাম আজম, কাদের মোল্লা, চৌধুরী মঈনুদ্দীনদের চেনা বেশি জরুরী।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৪। প্রথমে ছবি, কার্টুন স্ট্রিপ দিয়ে শেখানো শুরু করতে হবে। বইগুলোকে এখনকার দুর্দশা থেকে উদ্ধার করে ছবি, ছাপা, রঙের মান উন্নত করতে হবে। ইতিহাস পাঠের সাথে ভুগোলের পাঠ জরুরী। নয়তো মেহেরপুর কোথায়, পলাশী কোথায় সেগুলো শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারবে না। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ আরো জরুরী। বেত মেরে বা মুখস্থ করিয়ে যে কিছুই শেখানো যায় না সেটা তাদের মাথায় ঢোকাতে হবে। দেশ বলতে কোনটাকে বোঝায় আর বহিরাগত দখলদার কারা সেটা শিক্ষার্থীদের চিনিয়ে দিতে হবে। নিম্নবর্গের কনটেক্সট থেকে ইতিহাসকে বোঝা শেখাতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

দীনহিন এর ছবি

বেত মেরে বা মুখস্থ করিয়ে যে কিছুই শেখানো যায় না সেটা তাদের মাথায় ঢোকাতে হবে।

চলুক
বেশ মনে আছে, পান্ডবদা, আমি ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত অংক দারুন ভয় পেতুম! কিন্তু ভার্সিটিতে উঠে যখন একজন বিদেশী রাইটারের বই হাতে এল, শুধু দুই পাতা জোর করে পড়তে হয়েছিল, বাকীটা লেখকই টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন, অংকের টেক্সবুক-টিকে তিনি এত গল্পের মত লিখেছিলেন, এমন এক যাদুর জগৎ নির্মান করেছিলেন, যে আমি তার মায়ায় চাপ্টারের পর চাপ্টার শুধু ভ্রমন করেছি, এমনকি, সিলেবাসের বাইরের চাপ্টারগুলিও আমি গিলেছি গোগ্রাসে!

হ্যা, একই সাবজেক্টের উপর বাংলাদেশী লেখকদের বইও বাজারে ছিল এবং হাতেও এসেছিল বাধ্যতামূলকভাবেই, কিন্তু মজার ব্যাপার জানেন কি? বাংলাদেশী টেক্সবুক লেখকরা বাহুল্য একদম পছন্দ করেন না, বিদেশী লেখক যে বিষয়টির উপর খরচ করে ফেলেছেন বিশ পাতা, বাংলাদেশী লেখকরা এমনকি এক পাতাও খরচ করেননি তার জন্য, মাত্র একটি প্যারাতেই শেষ করে দিয়েছেন।

তবে দেশী লেখকদের বইগুলোরও উপযোগীতা ছিল; পরীক্ষার জন্য ঐ এক প্যারা মুখস্ত করলেই যে চলছিল!

বলতে কি, দেশী লেখকরা যেখানে একটি টেক্সবুককে নোটবই বানিয়ে ফেলেন (যা আসলে ছাত্রদের কাজ, মানে টেক্সবুক থেকে অতি প্রয়োজনীয় অংশটুকু খাতায় নোট করা বা বইতেই হাইলাইট করা), বিদেশী লেখকরা সেখানে একটি টেক্সবুককেও বানিয়ে ফেলেন রোমহর্ষক ফিকশান! আর পার্থক্যটা এখানেই!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

হাওয়াইমিঠাই  এর ছবি

অঙ্ক বইটার নাম কি?
লেখক কে? বলবেন কি?
আমি ও অঙ্ক ভিতু।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

উত্তম জাঝা!

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

দুর্দান্ত এর ছবি

ইন্ডিয়ায় অমর চিত্রকথা বলে একটা কার্যক্রম ছিল। ঐপথে পোলাপানকে স্কুলের বাইরে ইতিহাস শেখানো সম্ভব।
***
একটা ওলন্দাজ স্কুলে দেখলাম ইতিহাস পড়ানো শুরু করা হয় কাছের থেকে। যেমন যে গ্রামের স্কুল ঐ গ্রামে গত কয়েকবছর কি কি কে কে কোথায় কেন এগুলো থেকে শুরু করা হল স্কুলে তৃতীয় বছরের গড়ায়। বছরের শেষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর ইউরোপ তক যেতে পেরেছিল। এভাবে ষষ্ঠ বর্ষে মিশর ভারত পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। পড়ার ধরনটাও অভিনব। প্রতি পাঠের পরে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষিকার পরীক্ষা নিত, উদ্দেশ্য শিক্ষিকা যাতে সবচাইতে কম নম্বর পায় - পাঠক বুঝতেই পারছেন ঐ পরিক্ষায় গোল্লা খেতে শিক্ষিকার কোনই লজ্জা শরমের বালাই ছিলনা। বলছিনা এটাই উত্তম পন্থা। কিন্তু দরকার একটু উৎসাহ আর খোলা মন।

অতিথি লেখক এর ছবি

অমর চিত্রকথার দেখাদেখি ১৯৮০'র দশকে বাংলাদেশেও ইসলামিক ফাউনডেশন ইতিহাস-ভিত্তিক কমিক বই প্রকাশ করেছিল (এখনও করে কিনা জানি না)। তবে যেহেতু প্রকাশক ছিল ইসলামিক ফাউনডেশন আর সময়-স্থান ১৯৮০'র দশকের বাংলাদেশ, সেহেতু সেসব কমিক্সের বিষয়বস্তু ছিল দেশবিভাগ-পূর্ব ভারতবর্ষের মুসলিম বীরদের কীর্তিকলাপ, আর মুস্লিম-দখলের আগে ভারতের মানুষের অবস্থা যে কতটা খারাপ ছিল তার বর্ণনা। মজার জিনিশ হল এই কমিক্সগুলির অনেক ইলাসট্রেশন ছিল অমর চিত্রকথা কমিক্সগুলির হুবহু নকল।

Emran

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক, ইতিহাস পড়ানোর সাথে বিষয় বস্তু নির্বাচনও জরুরী। ইতিহাসের প্রতিটি চরিত্রকে পুস্তকে স্থান দেয়া সম্ভব নয়, তাই কাকে রেখে কাকে বেছে নিতে হবে সেটা একটি মূল বিষয়। হাত লম্বা ইখতিয়ার খিলজি কে ইতিহাসে নায়কের পর্যায়ে স্থান দেয়া হয়, অথচ সেদিন পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই এক পরিচিতা মহিলা বললেন- সূর্য সেনের জন্ম ইন্ডিয়ায় না? দেশ ভাগ তখনও হয়নি, এক হিসেবে ইন্ডিয়ান বলা যেতেই পারে। কিন্তু কথাটির মাঝে তার উন্নাসিকতা, অজ্ঞতা, সবই প্রকাশ পায়।
আবার সেদিন যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে তর্কের এক পর্যায়ে একজন বলে উঠলেন- ৭১ এ কোনো গেরিলা যুদ্ধ কি আদৌ হয়েছিল?
যাইহোক, আপনার লেখাটি কার্যকরী।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি ভাবেন খুব ভালো আর সেটা সুন্দর করে প্রকাশও করতে পারেন। এজন্যই আপনার লেখা এত ভালো লাগে।

গোঁসাইবাবু

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার মনে হয় আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাকেই আবার ঢালাও ভাবে সাজানো উচিৎ।

-আরাফ করিম

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের দেশে যারা শিক্ষকতা করেন কিংবা যারা বই লেখেন, তারা কখনই আমাদের কোমল মতি শিশুদের কথা চিন্তা করে কিছু করেন না। আর বেশির ভাগ ইতিহাসই থাকে লুকায়িত। ফলে আমরা একদিকে যেমন ইতিহাস পড়ার আগ্রহ পাই না, অন্য দিকে যতটুকু জানার সুযোগ হয় তাও আবার সম্পূর্ণ নয়। প্রকৃত ইতিহাস ছাড়া কোন জাতিই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। লেখকদের উচিৎ ইতিহাসের বইগুলোকে মজাদার করে লেখা আর শিক্ষকদের উচিৎ আমাদের শিক্ষার্থীরা তা যেন আগ্রহ করে পড়ে সেই ভাবে তা পড়ানো।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে স্কুলের অনেক কথা মনে পড়ে গেলো । তখন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলে ' সমাজ বিজ্ঞান ' বিষয়টাই তুলে দিবো ।
আর আপনি যে সকল ইতিহাসের কথা বললেন তা পাঁচ বছর অন্তর অন্তর আহামরি পরিবর্তিত হয় না কিন্তু দেশের ইতিহাস হয় । একজনের কথাই একবার থাকে না আরেকবার আরেকজন মূল নায়ক ।
অনেক সময় বাসা থেকে পড়া ভালো করে শিখে যেতাম কিন্তু স্যারের চেহারা দেখে এবং কিছুক্ষণ আগে কারো সাথে ঘটে যাওয়া ভয়ানক দৃশ্য সব ভুলিয়া দিয়ে আমাকেও তার শিকার করতো । আচরণের জন্য মার খেলে কোন আফসোস থাকতো না কিন্তু পড়ার জন্য খেলে থাকতো ।
আর এখন কিন্তু কোন শিক্ষক কোন ছাত্রের গায়ে হাত তুলতে পারে না । এইটা একদিন থেকে ভালো হলেও আরেকদিক থেকে খারাপ হইছে সবার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে তারা এখন শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে চলে তাই শিক্ষকরাও গা ছাড়া ভাব দেখায় । ' ছাত্র জাহান্নামে যাক আমার কি ? '

অতিথি লেখক এর ছবি

সালের সাথে তো আবার সমাজবিজ্ঞানীদের সংজ্ঞাও মুখস্ত করা লাগে। সে ব্যাপারে কি করা যায়? এখন অবশ্য নৈর্বত্তিক এ তেমন সাল আসে না। আসলে এমন সাল আসে যেটা উত্তর দিতে সহজ হয়। কিছু সাল অবশ্য জেনে রাখা জরুরি যেমন- পলাশীর যুদ্ধ, বঙ্গভঙ্গ, বঙ্গভঙ্গ রদ, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ, ইত্যাদি,

প্রশ্ন এর ছবি

সম্পূর্ণ সহমত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।