সাম্পানের যুগ নেই এখন। একসময় কর্নফুলী নদীটা সাম্পানে সাম্পানে সয়লাব ছিল। দিনগুলো আর নেই আগের মতো। সেই সাম্পানযুগে একবার কয়েকবন্ধু দুপুরবেলা এসে জানালা দিয়ে ডাক দিল, "ওই শোন, সাম্পানে চড়ে কর্নফুলী বেড়াবো, যাবি? কেঁককুঁররুত কেঁককুঁররুত........"
আবার জিগায়!! স্যান্ডেলটা পায়ে দিয়ে দরজাটা খুলে এক দৌড়ে সঙ্গী হলাম ওদের।
সাম্পানে চড়ার মজাই আলাদা। ওই যাত্রাগুলোর কোন গন্তব্য ছিল না। কেবল কেঁককুঁররুত কেঁককুঁররুত... করে মাঝ নদী দিয়ে দুলতে দুলতে বয়ে যাওয়া। ও নদী তোমার যেখানে খুশী নিয়ে যাও, ও বাতাস তোমার যেখানে ইচ্ছা যেখানে নিয়ে যাও। যেতে যেতে মাঝে মাঝে অচেনা জায়গায় নেমে পড়তাম। নদীর পাড়ে বসে বিড়ি ফুঁকতাম বাতাসের আদর খেতে খেতে।
একবার সাম্পানটাকে অচেনা জায়গায় থামিয়ে নেমে গেলাম সবাই। শীতের শেষ। ধুঁ ধুঁ মাঠে কোন ফসল নেই। হাঁটতে হাঁটতে যেখানে গিয়ে থামলাম জেনে অবাক হলাম ওটা নাকি সূর্যসেনের বাড়ী। চিন্তাই করিনি নদীপথে কোন জায়গায় এসে পড়েছি। জায়গাটার নাম নোয়াপাড়া, রাউজান। ওখানে সমাধির মতো আছে একটা সিমেন্টের বেদী, অবহেলিত। বাসী ফুল পড়ে আছে কতগুলো। গ্রামের লোকজন বললো, ওটাই সূর্যসেনের স্মৃতিস্তম্ভ। আমরা আগ্রহ নিয়ে ঘিরে দাড়াতেই গ্রামের কে যেন ফিস ফিস করে বললো, সাকাচৌ'র ছেলেরা এসে সমাধিটা তছনছ করে গেছে কদিন আগে। এখানে বেশীক্ষন দাঁড়ানো নিরাপদ না। চলে যেতে বললো আমাদের।
ভেবে একটু অবাক হলাম। সূর্যসেন তো বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। সাকাচৌ বা তার বাপের বা তার বাপের বাপ পাকিস্তানের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করেনি। যুদ্ধ করেছিল বৃটিশ শাসনের বিরূদ্ধে। তবু কেন সুর্যসেনের স্মৃতিস্তম্ভ তছনছ করেছে তার সাঙ্গপাঙ্গরা? প্রশ্নটা মনে মনেই রেখে দিলাম। কারন উত্তরটা জানি। দেশকাল ভেদে প্রতিক্রিয়া সবসময়ই প্রগতির শত্রু । সে যেই যুগেরই হোক না কেন। প্রগতিশীল যোদ্ধা হিসেবে সূর্যসেনের ওই অপমানটা পাওনাই থাকে রাজাকারদের কাছে।
আগামীকাল বিজয় দিবস। আনন্দের একটা দিন হবার কথা। কিন্তু বিশ বছর আগে যে আনন্দ পেতাম এখন পাই না কেন? বিজয় দিবস এলে ইদানীং কেন যেন মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়েও রাজাকারদের কথা বেশী মনে পড়ে।
মুক্তিযোদ্ধাদের তুলনায় তারা কি অনেক বেশী ফোকাসড? সাকাচৌদের দাম্ভিক মুখের দেঁতো হাসি কি টিভি চ্যানেলগুলো আবারো তারিয়ে তারিয়ে দেখাবে?
রাজাকারেরা কি আশাতীত সাফল্য পেয়ে গেছে সমাজে?
মন্তব্য
আপনার ভাবনা হৃদয় ছুয়ে গেল। ভাল থাকবেন।
দিশা
_____________________________
যে পাখি আকাশে ওড়ে আকাশ ছোবার ইচ্ছেয়
দিশা
_____________________________
যে পাখি আকাশে ওড়ে আকাশ ছোবার ইচ্ছেয়
রাজাকাররা তো সাফল্য পেয়েই আছে...
একজন সচল অনিকেত এর মন খারাপ নিয়ে এই কথাটা লিখেছিল-
রাজাকারদের ভালো দিন চলতেছে...
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"
-----------
চর্যাপদ
হয়তো পেয়েছে, কিন্তু আপাতত...
একদিন সব বদলাবে ঠিকই!!
--------------------------------------------------
"সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
১.
চট্টগ্রামে যাওয়া হয়েছে বহুবার। কর্ণফুলির উপর থেকে সাম্পানও দেখেছি বহুবার। কখনও চড়া হয় নি।
২.
রাজাকাররা আশাতীত সাফল্যই পেয়েছে। এবং সেটা আমাদের দোষে। আমরা সেই দোষ কাটাতে সক্রিয় কিনা, সেটার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যত বাংলাদেশের অনেক কিছু।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
ওরে সাম্পানওয়ালা আমারে তুই করলি দিওয়ানা এই গানটা ছাড়া সাম্পান সম্বন্ধে আসলে আর কোন জ্ঞান ছিল না। ভেনিসে বেড়াতে গিয়ে যখন পার পার্সন দশ ইউরো করে (টাকার কষ্টে বুকে ব্যথা নিয়ে) গন্ডোলা চড়েছি যেটা আমাদের সাম্পানের ইটালিয়ান ভার্সন তখন থেকেই মনে সাধ ছিল দেশে একবার সাম্পান চড়ব। কিন্তু সেন্ট মার্টিন যেয়ে এপার থেকে ওপার যেতে দুই হাজার টাকা চায়। অনেক খোঁজাখুজি করে একজনকে পেয়েছিলাম দুইশ টাকায় একটু ওর সাম্পানে জাষ্ট বসে দুলতে দিয়েছিল ধরতে গেলে ঃ)
দেশকাল ভেদে প্রতিক্রিয়া সবসময়ই প্রগতির শত্রু ।
ধন্যবাদ সত্য কথাটি লেখার জন্য আপনাকে।
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
এই বরাহদের শিকার করতে হবে
রাজাকারদের ছানাপোনাদেরতো এত জ্ঞান নেই যে কে কোন সময়ের শহীদ, তারা শুধু জানে পক্ষে আর বিপক্ষে
নতুন মন্তব্য করুন