আলস্যের জমিদারি

নীড় সন্ধানী এর ছবি
লিখেছেন নীড় সন্ধানী (তারিখ: বুধ, ০৯/০৪/২০১৪ - ১২:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কর্মময় জীবন আর ভালো লাগিতেছে না। আসলে যে কাজ করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিতেছি সেই কাজের প্রতি এক প্রকার অনীহা তৈরী হইয়াছে। 'কাজ' আমাকে পছন্দ করিতেছে না আমি 'কাজ'কে পছন্দ করিতেছি না। আমাদের অবনিবনার ফসল একরকমের বিবমিষা।

আমি দিনের পর দিন একই চেয়ারে বসিয়া কীবোর্ড পিষিবার/ভাঙ্গিবার কাজ করিতেছিলাম। আমার কীবোর্ড পিষাপিষিতে দেশ জাত কুল কাহারো কোন উপকার যে হয় নাই তাহা আমি শতভাগ নিশ্চিত। তবে মাস শেষের মাহিনার অর্থ যখন ব্যাংকের খাতায় জমা হয় তখন এক প্রকার নিরুপদ্রপ অনিবার্য সুখবোধ পিলপিল করিতে থাকে। শুধুমাত্র একটি মাসিক পুলকিত সুখবোধের জন্য আমি বাকী ত্রিংশ দিন (অ)কাজের সহিত ঘস্তাঘস্তি(ঘষতে ঘষতে কুস্তি) করিয়া মরিব ইহা আর মানিতে পারিতেছি না। এই অনাকাংখিত ঘস্তাঘস্তি হইতে আমি অবিলম্বে মুক্তি লাভ করিতে চাহি।

আসলে আমি একাই মুক্তি চাহি না। কাজও আমা হতে মুক্তি চায়, প্রবলভাবেই চায়। না চাহিয়া উপায় কি? আমার মতো অপদার্থ অকর্মণ্য কর্মী সে ইতিপূর্বে কখনো দেখে নাই। শুনিয়া আপনারা ভাবিতেছেন আমি নতুন কোন মতলবের মন্ত্রণায় এইসব অবাঞ্ছিত কথা বলিতেছি কিনা। আসলে মোটেও তাহা নহে। আমি অনেক ঘাস, খইল, বিবিধ ঘোলাজল খাইয়া, ১৮ বৎসর অতিবাহিত করিবার পর উপলব্ধি করিলাম যে কর্মময় জীবন আমার জন্য নহে। আমার দরকার ছিল একটা নির্বিবাদী জমিদারীর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। যাহাতে আমি গদিতে শুইয়া শুইয়া হুকুম করিব আর দেওয়ান গোমস্তা কামলা প্রজাবৃন্দ আমার পদতলে সকল প্রকার সেবা প্রদান করিবে এবং আমি উহাদের অনুগ্রহ ভিক্ষা দিব। কিন্তু জগতের কুটিল অনিয়মতান্ত্রিকতা আর অবিচারের ফলে তাহা হইবার উপায় নাই। আমি তাই ভিন্ন রকমের এক জমিদারির কথা ভাবিতেছি - যাহার নাম 'আলস্যের জমিদারি'।

ভাবিয়া দেখুন, আলস্যের মতো আনন্দদায়ক ব্যাপার জগতে আর কিছুতে আছে? দেখেছেন কেউ? আমি নিশ্চিত, দেখেন নাই। আলস্যের মতো আনন্দ আর কিছুতে নাই। যুগে যুগে আলস্যের মর্যাদা দিতে যাহারা ব্যর্থ হইয়াছেন তাহারা জীবনের অনাবিস্কৃত আনন্দসম্ভার থেকে পরম ও চরমভাবে বঞ্চিত হইয়াছেন।

জীবনের প্রকৃত আনন্দের অন্যতম উপায় হইল প্রতিদিন বেলা দশ ঘটিকা হইবার পর আস্তে আস্তে চক্ষু মেলিয়া জানালার ওপাশে আমগাছটার শীর্ষ দেশে কাকস্য বংশের কারো ত্রাহি চিৎকার শুনিয়া উঠিয়া বসা। অতঃপর কয়েকখানা দীর্ঘ হাই তুলিয়া, হাত দুখানিকে দুপাশে প্রসারিত করিয়া, মেরুদণ্ডের হাড়গুলো স্থান চ্যুত হইয়াছে কিনা তাহা পরখ করা। সব ঠিক থাকিলে, ধীরে ধীরে প্রাতঃকৃত্য সারিয়া, জল আহার সারিয়া বেলা এগারোটা নাগাদ চায়ের মগটা হাতে লইয়া খবরের কাগজ মেলিয়া কিছুক্ষণ হেডলাইনে চোখ বুলাইয়া অবহেলার সহিত কাগজখানা খাটের তলায় ছুঁড়িয়া মারা। দুনিয়ার কোথাও সুসংবাদ নাই। তারপর টেলিভিশন নামক বোকা বাক্সের দূরবর্তী নিয়ন্ত্রক(রিমোট)খানা হাতে লইয়া চ্যানেল ঘুরাইতে ঘুরাইতে আগাপাশতলা চষিয়া 'বন্ধ কর' বোতামে টিপ দিয়া তাহাও একসময় সোফার কোনায় ছুঁড়িয়া মারিয়া উঠিয়া দাঁড়ানো। এরপর 'কিসসু ভালো লাগিতেছে না' জাতীয় উদাসীনতা লইয়া ম্যাড় ম্যাড়ে বইয়ের তাক হইতে খুঁজিয়া খুঁজিয়া যে কোন একটা যুতসই প্রাচীন বই নামাইয়া সাড়ে তেরো পাতা পড়ার পর আবিষ্কার করা যে এই বইখানা ইতিমধ্যে আরো একবার পঠিত হইয়াছে।

কিছু পর উহাও যথাস্থানে রাখিয়া দেরাজ খুলিয়া খাতা কলম বাহির করিয়া আধখানা খসড়া গদ্য রচনা করিয়া তৃপ্তির সহিত ভাবিতে বসা, আহ কী অপূর্ব সাহিত্য রচনা করিলুম, রবীন্দ্রনাথের অমিত চ্যাটার্জি দেখিলেও চমকে উঠিতো প্রতিভার অকাল বিস্ফোরণে আর লাবণ্য দেখিলে তো ……...না, থাক। লাবণ্যের কথাটা উত্থাপন করাটা এখন নিরাপদ নহে। রান্নাঘরে তাওয়ায় রুটি গরম করিতেছে গিন্নী, হাতে তাহার গরম ছেনি।

এই করিতে করিতে বেলা দুপুর পার হইয়া ঘড়ির কাটা তিন ঘটিকার দিকে রওনা দিরে স্নানাদি সারিয়া তিন পদের ভর্তার সাথে দুই পদের ছোটমাছের ঝোল দিয়া ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাত পেট ভর্তি করিয়া খাইয়া ফের বিছানায় গড়াগড়ি করা। গড়াগড়ি করিতে করিতে দেওয়াল টিভির বড় পর্দায় একখানা লাতিন আমেরিকান মুভি ছাড়িয়া দিয়া দশ মিনিট দেখা শেষ না হইতেই নাসিকাগর্জন সমেত নিদ্রাপুরীতে পৌঁছে যাওয়া এবং নিদ্রার অবকাশে ঘড়িটাকে সাড়ে পাঁচ ঘটিকা পার করিয়া দেওয়া। ঘড়ির কাঁটা সাড়ে পাঁচ ঘটিকায় পৌঁছানোর মানে আপিসে ছুটির ঘন্টা বাজা। অর্থাৎ আজিকার 'কর্মসময়' সমাপ্তি ঘোষণা।

নির্ধারিত 'কর্মসময়' পার করিবার পর বিছানা হইতে নামিয়া গায়ে খাদির পাতলা ফতুয়া চড়াইয়া হাওয়া খাইবার জন্য পল্টন ময়দানের উদ্দেশ্যে বাহির হইয়া যাওয়া। 'কর্মময়' অফিস টাইমের পরে বৈকালিক ভ্রমণের মতো আনন্দ আর কিছুতে নাই। .........কি ব্যাপার? অত বড় হা করিয়া কি দেখিতেছেন? এখনো বুঝেন নাই? না বুঝারই কথা। কারণ উপরোল্লিখিত 'কর্মময়' জগত বাস্তবে আপনারা কস্মিনকালেও দেখেন নাই। আমিও দেখি নাই। ইহা কেবলই একটা ইউটোপিয়া মাত্র।

হা পিত্যেস করে লাভ কি? দুঃখের কথা এই- বাস্তব জগতে এরকম সুখময়তার কোন অবকাশ কেউ রাখে নাই।। বাস্তব জগত একটি নিরেট 'খাইট্যা খা' ধরনের বস্তু। উহাতে আমি বা আর কেহ স্বচ্ছন্দ বোধ করে না। তবু তাহা মানাইয়া লইয়া বাঁচিয়া থাকে।

সাম্প্রতিককালে আমি প্রতিদিন অপেক্ষা করি 'কাজ' কখন নিজ হইতে আমাকে খেদাইয়া দিবে। তাহা হইলে এই মানবিক যন্ত্রণা হইতে মুক্তি পাইতাম। হইতে পারে, কাজও আমারই প্রতীক্ষা করে, কখন আমি আপোষে কাজকে ছাড়িয়া ভাগিয়া যাইবো। কিন্তু কোনটাই ঘটিতেছে না। ফলে আমাকে এই রচনা প্রস্তুত করিয়া উভয়ের মধ্যে মিলন ঘটাইবার বন্দোবস্ত করিতে হইলো। কর্তার চোখে ইহা পড়িলে যে কোন মহেন্দ্র ক্ষণে কাজ এবং আমি পরস্পরকে বিদায় জানাইতে পারি।

অতঃপর আমি নিশ্চিন্তে আলস্যের জমিদারির কুসুমাস্তীর্ণ পথে নিরুদ্বিগ্ন পদযুগল সঞ্চালন করিতে পারিব। আলস্যের এই মহান চেতনা আমি জগত ব্যাপিয়া ছড়াইয়া দিতে চাহি। আহ আনন্দ!

আলাস্যাং হি মনুশ্যানাং শরীরস্থ মহারিপুঃ
নাস্ত্যদ্যাম সমবন্ধুঃ কৃত্বা ইয়ং নায়সিদতি


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

দীর্ঘদিন ধরে অতি আলস্য বোধহয় সুখকর নহে। গত ১০-১২ দিন আপনার গল্পের মতোই আলস্যকে সাথী করে দিনযাপন করে সেটাই বুঝলাম। আপনার আলস্য জীবনে দেখলাম ফেবু নেই, ব্লগ নেই ক্যামনে কি? চিন্তিত এই অপরাধে দেখি ৫৭ ধারায় আপনার নামে কিছু করা যায় কিনা? হো হো হো

মাসুদ সজীব

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনি ১০-১২ দিন জমিদারি করেই ত্যক্ত? আপনার জন্য অশেষ করুনা। দেঁতো হাসি
আমি যদি এক নাগাড়ে অতদিন জমিদারির সুযোগ পেতাম, তাহলে এক যুগ আয়ুবৃদ্ধির সুখ অর্জন করে ফেলতাম খাইছে

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

এক লহমা এর ছবি

অহো, কি পড়িলাম! ধড়াচূড়া পড়িয়া কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশে বাহির হইবার পূর্বক্ষণে আলস্য দেবীর ছি চরণে নিবেদিত এমন লেখাটি পড়িয়া সারাটা দিন কেমন আকুলতায় কাটিবে ভাবিলেই শরীর-মনে বিপুল পুলক শিহরণ জাগাইতেছে। আমার কপালে আপাততঃ কাজের সহিত ছাড়াছাড়ির কোন সম্ভাবনা নাই। এমন কি কর্তা যদি বাংলা বুঝিতেন ও এই মন্তব্য পড়িতেন, তবুও না। অথচ ইহা আমার কতদিনের সাধ! অতএব, আপনার মুক্তি ঘটিবে এই আমোদ-এর দিবাস্বপ্নে, এবং আপনার এবম্বিধ লেখালেখি চালু থাকিবে, উহাতে আলস্য আসিবে না এই বিশ্বাসে সমস্ত আশাকে ছড়াইয়া দিয়া এইবেলা বাহির হইয়া পড়ি। হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বোঝা গেল আপনি জগতে প্রয়োজনীয় মানব সন্তানকূলের একজন। অর্থাৎ আপনি রবীন্দ্রনাথের ভাষায় এক আনার দলে। আমাদের মতো আলস্যবাদীগন জগতে পনের আনা দখল করিয়া রাখিয়াছে বলিয়া জগত টিকিয়া আছে। অন্য কথায় জগতের ভারবাহী পশু আমরা হো হো হো

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মেঘলা মানুষ এর ছবি

শিশুকালে আদর্শলিপিতে পড়িয়াছিলাম, "আলস্য দোষের আকড়"। বাকি জীবন সেই আকড়ের উপরে বসিয়া, আলস্য বৃক্ষের পদতলে বংশীবাদন করিয়া কাটাইতে পারিলে নেহায়েত মন্দ হইত না চিন্তিত

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আলসে মানুষ দেখলেই বলতে ইচ্ছে করে ভুখে আয় বাভুল হাততালি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবতায় জীবনধারণের জন্য অর্থের প্রয়োজন। আর এ কারনেই মানুষকে অর্ধ উপার্জনের কর্মকান্ডে যুক্ত থাকতে হয়। এই অর্থ উপার্জনের প্রক্রিয়াটি পৌনঃপুনিকতার চক্রে আবদ্ধ। যা কিনা মানুষকে ক্লান্ত করে। ভারাক্রান্ত করে। বিষণ্ণ করে।

চীনা দার্শনিক লাও-ৎসু বলেছেন,

"মামুষের জীবনে একটি স্বাভাবিক ছন্দ আছে, যা আমরা সমাজের ও নীতির শাসন দিয়ে নষ্ট করেছি। নিজেকে সরলভাবে বোঝ। নিজের সহজ অনুভূতিকে বিকশিত করো। কৃত্রিম বন্ধন ত্যাগ করে প্রকৃতির সহজ পথ খোঁজ।
সমাজের নিয়ম-কানুন ও সভ্যতার (আর্থিক) উন্নয়নের চাপে পড়ে যা কিছু সৎ ও শুভ তা বিলিন হয়ে যায়।"

নীড় সন্ধানী এর ছবি

অর্থ উপার্জনের প্রক্রিয়াটি পৌনঃপুনিকতার চক্রে আবদ্ধ। যা কিনা মানুষকে ক্লান্ত করে। ভারাক্রান্ত করে। বিষণ্ণ করে।

এই যন্ত্রণায় সভ্য জগত ছেড়ে ধীর স্থির কোন প্রাচীন জগতের সন্ধানে বের হতে ইচ্ছে করে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আলতাইর এর ছবি

অহো!! অতিশয় মনোমুগ্ধকর পরিকল্পনা! স্বত্বঃই মাথা নত হইয়া আসে। তা সচিবালয়ে আবেদনপত্র প্রেরন করেন নাই ভ্রাতঃ? উহাদের দিনপঞ্জিকার সহিত আপনার কল্পরাজ্যের কর্মযজ্ঞের প্রভূত সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হইতেছে। কোলাকুলি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আবেদন করার বয়স থাকিলে অবশ্যই করিয়া দিতাম ভ্রাতঃ হো হো হো

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

জমিদারি'র সাতকাহন খানা পড়িয়া বড়ই প্রীত হইলাম। আ-হা! আমিওতো এমন জীবনই সঙ্গোপনে কামনা করি! আফিসে কর্মচোর উপাধি পাইবার কিঞ্চিত ভয়ের সহিত গিন্নীর 'গরম ছেনীর' ভয় সাওদাগরী কেরানীগিরি হইতে আমাকে মুক্তি দেয়না।
রবি বুড়ো বেহুদাই লিখিয়া গিয়াছে 'তোমার মুক্তি আলোয় আলোয়', মুক্তি যে কোথা তাহাই খুঁজিয়া বেড়াই সকাল সাজে।

দুর্দান্ত লিখিয়াছেন। চলুক

-দেব প্রসাদ দেবু

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মাথার উপর বয়সের চাপ আর হাতে যথেষ্ট সময় না থাকলে জমিদারীতে নেমে যেতে পারেন স্বচ্ছন্দে হো হো হো

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

-
-
-
-
-
আলস্যের কারণে মন্তব্য করিতে পারিলাম না।

____________________________

নীড় সন্ধানী এর ছবি

" ................................................................................................... "
(বিরাট একটা হাই তুললাম) গড়াগড়ি দিয়া হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মন মাঝি এর ছবি

অহো, আমারও এমন জমিদারি চাই!

আমিও বেলা এগারো ঘটিকা বাজিবার পর ধীরে ধীরে চক্ষু অর্ধ-নীমিলিত করিয়া দুগ্ধফেননিভ মোলায়েম শয্যায় গড়াগড়ি খাইতে খাইতে, উঠিব কি উঠিব না সেই মধুর সমস্যা লইয়া অর্ধচেতন অবস্থায় মধুরতর গবেষণা করিতে করিতে, অবশেষে শয্যা-চা পান করিয়া চক্ষুদ্বয় পূর্ণ নীমিলিত করিয়া মুক্ত বাতায়নের ওপাশে আম্রবৃক্ষের শীর্ষে পক্ষীকুলের পল্লীসঙ্গীত শুনিতে শুনিতে মধ্যাহ্ণ বারোটা নাগাদ উঠিয়া বসিব। অতঃপর একটি হস্ত পূর্ণ প্রসারিত করিয়া ও অপরটি ব্যাদান করা মুখের উপর স্থাপন করিয়া আলস্যমেদুর ভঙ্গিতে কয়েকপ্রস্থ সুদীর্ঘ জৃম্ভণ (প্রাকৃত ভাষায় 'হাই') করিয়া সাড়ে বারোটা নাগাদ শয্যা ত্যাগ করিব।

স্নানাদি, জলখাবার সারিবার পর আসিবে আমার দেওয়ান-নায়েব-গোমস্তা--কামলা-প্রজাবৃন্দ, পান-তামুক--চা-ফরাস-তাকিয়া-পত্রিকা-ল্যাপি ইত্যাদি সাজাইয়া দিবে। বোকাবাক্স ছাড়িয়া দিবে। আমি পায়ের উপর পা তুলিয়া চা ও তাম্রকূট সেবন করিতে করিতে, একই সাথে পত্রিকা পাঠ করিতে করিতে, বোকাবাক্সের বোকামি দেখিতে দেখিতে, সঙ্গীতরস উপভোগ করিতে করিতে, ল্যাপিতে সচলায়তন ব্রাউজ করিতে করিতে এবং আরও সুখাবিষ্ট জৃম্ভণ করিতে করিতে পরম আহ্লাদে আমার কর্মময় দিবস শুরু করিব অপরাহ্ণ দুইটা নাগাদ।

যাউক, এরপরের বিবরণ আর দিব না, আপনারাই বুঝিয়া লন। নীড় সন্ধানীর সহিত খুব একটা পার্থক্য নাই। আপ্তবাক্যে আছে "প্রজ্ঞাবান মানুষ একই প্রকার চিন্তা করে" (wise men think alike)। মহাদার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল তো এহেন 'আলস্যের জমিদারি'র অপরূপত্বে মুগ্ধ হইয়া আলস্যের জয়গান গাহিতে গাহিতে "আলস্যের প্রশংসায়" তথা "ইন প্রেইজ অব আইডল্‌নেস" নামক একখানা সুদীর্ঘ প্রবন্ধই ফাঁদিয়া গিয়াছেন।

আসুন আমরা সকলেই আলস্যের এই মহাচেতনা অত্রদেশে প্রথম প্রচার করিবার জন্য নীড় সন্ধানীকে সাধুবাদ জানাই। হাততালি চলুক

****************************************

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমরা তো শুধু স্বপ্নের কথাই বলে গেলাম।

সত্যিকারের আলস্যের জমিদারি দেখতে হলে মফস্বলের সমবায় অধিদপ্তর জাতীয় কোন অফিসে ঘুরে আসতে পারেন। আমার এক বন্ধু ছিল মফস্বলের তেমন এক অধিদপ্তরে। সে এগারোটার দিকে কর্মস্থলে পৌছানোর পর দৈনিক পত্রিকা নিয়ে বসতো। কিছুক্ষণ পর পিয়ন চা নিয়ে আসতো। চা খেতে খেতে পত্রিকার যতটা পড়া যায় পড়ে নিত। তারপর হাই তুলে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে একটা বাজাতো। তারপর আস্তে আস্তে পত্রিকা গুছিয়ে, তালাবন্ধ করে বাড়ির পথে রওনা দিত। ও হ্যাঁ বাড়ি ফেরার আগে হাজিরা খাতায় একটা সাক্ষর অবশ্যই করতে হতো। শয়তানী হাসি

শুধু মাসে একদিন তাকে ঝামেলা পোহাতে হতো। সেদিন ব্যাংকে গিয়ে লাইন ধরে বেতনের টাকাটা তুলতে হতো। সে বলতো, টাকাটা নগদে অফিসে পৌঁছে দিলে এই হ্যাপা হতো না। দেঁতো হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

হো হো হো

____________________________

তাহসিন রেজা এর ছবি

মাস দুয়েক আগে গ্রাজুয়েশন শেষ করে আমি আরো ভাবছিলাম এইবার কিছু করে খাবো। কিন্তু এমন লেখা পড়ে আমার এখন
মনে হচ্ছে আরো কিছুদিন অলসতা করে নিই । দেঁতো হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বাস্তব জগত একটি নিরেট 'খাইট্যা খা' ধরনের বস্তু।

ওঁয়া ওঁয়া

ইয়ে, শেষ দু'লাইনের অর্থ কি? ইয়ে, মানে...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।