খ-এ খুন! - পর্ব ১

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি
লিখেছেন ঈপ্সিত আর চম্পাকলি [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২১/০৩/২০১৪ - ১০:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(১)

- “হ্যালো, সি-আই-ডি চেন্নাই? চেন্নাই ইন্টারন্যাশ্নাল এয়ারপোর্ট থেকে বলছি। ইমিডিয়েট এখানে লোক পাঠান। একটা খুন হয়েছে।”
- “এয়ারপোর্টে খুন হয়েছে?”
- “না খুন হয়েছে ফ্লাইটে। ইনফ্যাক্ট ফ্লাইটটা এখানকার নয়। ইজিপ্ট থেকে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল। টু বি প্রিসাইস্‌ - কাইরো থেকে কুয়ালা-লাম্পুর। ক্লাউড্‌স্‌-ভিল্‌ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট। আকাশপথেই খুনটা হয়। ভিক্টিম ইজিপ্সিয়ান নাগরিক। জানতে পেরে পাইলট এখানে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং করতে চায়, আমরা ঘটনার গুরুত্ব বুঝে অনুমতি দিয়েছি। ফ্লাইটের প্যাসেঞ্জার দের অন-বোর্ড রেখেছি। আপনারা এসে কাজ শুরু করুন।”
- “আরে যাচ্ছিল ইজিপ্ট থেকে মালয়েশিয়া, এয়ারলাইনস ও আমাদের নয়, ভিক্টিমও আমাদের নাগরিক নন তাহলে আপনারা এই ঝামেলা ঘাড়ে নিলেন কেন? ল্যান্ডিং এর পারমিশন না দিলেই ঝামেলা চুকে যেত।”
- “ইন্টারন্যাশনাল রুল অনুসারে আমরা ল্যান্ডিং এর অনুমতি দিতে বাধ্য। তাছাড়া যিনি খুন হয়েছেন তিনি ইজিপ্টের একজন ডিপ্লোম্যাট। আপনারা ফোর্স না পাঠালে আমাকে সেন্ট্রাল গভর্মেন্টে খবর দিতে হবে।”
- “আরে ফোর্স পাঠাব না কখন বললাম? আধঘন্টায় ফোর্স পৌছে যাবে। আমি নিজেও যাচ্ছি একঘন্টার মধ্যে। কে খুন হয়েছেন? নাম পরিচয় কি? কিভাবে খুন হলেন?”
-“নাম রসিদ খান। পরিচয় তো বললাম। ইজিপ্শিয়ান গভর্মেন্টের নাকি খুব পাওয়ারফুল ডিপ্লোম্যাট। মানে যা শুনলাম ওনার সঙ্গীদের থেকে। পাইলট বললেন স্ট্যাব্‌ড্‌ টু ডেথ অর্থাৎ ছুরি মেরে খুন । আমি অবশ্য দেখিনি।”
-“খুনি ফ্লাইটে ছুরি পেল কোথায়? ক্যারি-অন্‌ লাগেজে তো অ্যালাওড নয়?”
-“সেটা আমি কি করে জানব? পুলিশ এসে খুঁজে বের করুক।”
-“দ্যাটস নট আ প্রব্লেম। আমাদের ফোর্স দু মিনিটে খুঁজে বের করে দেবে। এয়ারপোর্টের সিকিউরিটি চেক-ইন এর চোখ হয়ত এড়ানো যায় তবে পুলিসের চোখ এড়ানো অসম্ভব।
-“দেখুন এসে কি করতে পারেন। আমাদের তো যত তাড়াতাড়ি ফয়সালা হয় ততই ভাল। একটা গেট আটকে রয়েছে।”

ফোনটা রেখে চেন্নাই সি-আই-ডি ডিপার্টমেন্টের অফিসার শ্রীনিভাসন বেজার মুখে স্বগোতক্তি করলেন "যতসব উটকো ঝামেলা।" এয়ারপোর্ট অথরিটির সিকিউরিটি অফিসার পদ্মনাভন বেশ ত্যাঁদোড় লোক। আগেও দু-একবার ওর সাথে ঠোকাঠুকি হয়েছে। শালা সব সময় রুল দেখায়। আজকেও সেন্ট্রাল গভর্মেন্টের ভয় দেখিয়ে এই ঝাড়ের কেস ঘাড়ে ফেলল। কোথায় মালয়েশিয়ার ডিপ্লোম্যাট, আকাশপথে খুন, এসব তদন্ত কি স্টেট পুলিস করতে পারে? এসব করতে ইন্টেরপোলের লোক দরকার। কিন্তু সেকথা বললেই পদ্মনাভন ওপরতলায় গিয়ে লাগাতো শ্রীনিভাসনের ডিপার্টমেন্ট অপদার্থ। তাই দায়টা নিতেই হল।

শ্রীনিভাসন তেতো মুখে ওর আন্ডারের এক অফিসার প্রবীর পাল কে ডাকলেন। প্রবীরকে তিনি মোটেই পছন্দ করেননা। একে তো ব্যাটা বাঙালি। শ্রীনিভাসনের দেশোয়ালি ভাইদের চাকরিতে ভাগ বসিয়েছে। তারপর আবার সব সময় বসকে টেক্কা দেবার চেষ্টা। তিন চার টে কেস একাই সল্ভ করে কমিশনারের সুনজরে পড়েছে। আরে বাবা শ্রীনিভাসন যে ওকে ওই সব ভালো ভালো কেস গুলো তে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন তার কি কোনো দাম নেই? আর ছোকরা এমন বেয়াদপ, পুরো কৃতিত্ব নিজে নিয়ে নিল! তবু যে এবার আবার ওকেই ডাকলেন তার কারণ ছোকরার মাথাটা চলে ভালো। মার্ডার ওয়েপন খুঁজে না পেলে পদ্মনাভনের সামনে বেইজ্জতির শেষ থাকবে না। ছোকরাকে আগে পাঠিয়ে খানিক পরে শ্রীনিভাসন নিজে উপস্থিত হবেন। যাতে কেস সল্ভের পুরো কৃতিত্বটা তিনি একাই নিতে পারেন। এরকম একটা হাই প্রোফাইল কেস সল্ভ করলে উপরমহল থেকে প্রচুর প্রশংসা পাওয়া যাবে। আর কেস সল্ভ না হলে প্রবীর ছোকরার ঘাড়ে দোষ চাপানো যাবে। তবে কেস সল্ভ না হলে পদ্মনাভনের কাছে মুখ থাকবে না।
প্রবীর কে ডেকে কেসটা বোঝাতেই ছোকরা একাবারে উৎসাহে লাফিয়ে উঠল। শালা বাঙালি গুলো পারেও বটে। খুঁজে খুঁজে ঝাড়ের বাঁশ ঘাড়ে নেওয়া। ওকে বললেন এয়ারপোর্টে গিয়ে তদন্ত শুরু করতে, তিনি ঘন্টাখানেক পরে যাচ্ছেন।

(২)

“হ্যালো রনি!”
“হ্যালো তিষ্যা? সেকিরে? এই মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন করছিস কেন? এত তাড়াতাড়ি পৌছে গেলি মালয়েশিয়া? কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রোমিং উঠছে নিশ্চয়ই?”
“উঃফ, তুই থামবি? আমি মালয়েশিয়া থেকে ফোন করছি না। চেন্নাই থেকে করছি।”
“আরে, আমি মাথামুন্ডু কিছুই বুঝছি না। তুই ইজিপ্টের কায়রো ইন্টার্ন্যাশানাল এয়ার্পোর্ট থেকে কয়েক ঘন্টা আগেই ফোন করে বললি তো যে সেল্‌-ফোন সুইচ্‌-অফ্‌ করতে বলছে আর এয়ারোব্রিজ উইথড্র করে নিচ্ছে। তো মালায়েশিয়া না গিয়ে চেন্নাই গেল প্লেনটা? নাকি মেঘনাদকাকুর হঠাৎ ইচ্ছে হল কুয়ালালাম্পুরের ম্যাজিক শো-টা ক্যান্সেল করে চেন্নাই-এ শো করার? আর পাইলটকে হুকুম করলেন ‘গাড়ি ঘুমাকে চেন্নাই লে চলো!’?”
“উঃফ্‌, তুই থামবি রনি? এত কথা বলিস যে কি বলব! আরে এদিকে মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে। আমাদের ফ্লাইটে একজন খুন হয়েছেন! মালয়েশিয়াতে ল্যান্ড না করে তাই আমাদের পাইলট সাহেব তড়িঘড়ি নিয়ারেস্ট এয়ার্পোর্টে ল্যান্ড করার সিদ্ধান্ত নেন। আর নিয়ারেস্ট এয়ার্পোর্ট ঘটনাক্রমে ছিল চেন্নাই। তাই আমি আমার মোবাইল থেকেই ফোন করছি। পেলি এবার তোর সব প্রশ্নের উত্তর?”
“অ্যা!! ফ্লাইটে খুন? বলিস কি রে? তবে একদিকে ভালোই হয়েছে। নিশ্চয়ই ঘন্টা দু-তিনের মধ্যে ধরা পড়ে যাবে। ফ্লাইট থেকে তো আর ঝাঁপ দিয়ে পালাতে পারবে না? নিশ্চয়ই বলবি না যে হলিউডের সিনেমার মত ভিলেন ইমার্জেন্সি এগজিট খুলে প্যারাশ্যুট নিয়ে লাফ দিয়েছে অ্যারেবিয়ান সী-তে?”
“আবার শুরু করলি? না সেরকম কিছু হয়নি। এখন আমাদের চেন্নাই এয়ার্পোর্টে নামিয়ে চিরুনি তল্লাসি চালাচ্ছে। স্ট্রিপ-সার্চ করছে প্রত্যেককে আর প্রত্যেকটা ক্যাবিন লাগেজ প্রায় ম্যাগ্নিফায়িং গ্লাস দিয়ে দেখার মত করে দেখছে।”
“তা তো দেখবেই। কিন্তু কি রোমহর্ষক ব্যাপার রে বাবা। আচ্ছা একটু প্রথম থেকে গুছিয়ে বলতো তিষ্যা শুনি কিভাবে খুন হল? আই মীন তোর চোখের সামনে হল?”
“আরে না, চোখের সামনে হয়নি। আমি আর বাবা তো ইকনমি ক্লাসে ট্র্যাভেল করছিলাম। আমরা কিছু জানতেও পারিনি প্রথমে। যে ভদ্রলোক খুন হয়েছেন তিনি যাচ্ছিলেন…”
“বিজনেস্‌-ক্লাসে?” তিষ্যার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রনির প্রশ্ন।
“না, বিজনেস ক্লাসেরও এক ধাপ ওপরে, একেবারে ফার্স্ট ক্লাসে ট্র্যাভেল করছিলেন ভদ্রলোক। কাজেই নিজের একটা প্রাইভেট ছোট স্যুইট মত ছিল ওনার, অন্য ফার্স্ট-ক্লাস প্যাসেঞ্জারদের মতই। সেখানেই ওনাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।”
“কিন্তু খুন বলছিস কেন? মানে হার্ট-অ্যাটাক-ঠ্যাটাক ইত্যাদি হতে পারে না? সেই সেবারের রান্নার রীয়্যালিটি শো-এর মত হয়ত দেখবি লিভার ফেইলিওর-টোর কিছু হতে পারে, পারে না?”
“আরে না রে বাবা। একেবারে নির্জলা ছুরি মেরে খুনের কেস এটা। আমরা তো আর দেখিনি, কোন ইকনমি ক্লাসের প্যাসেঞ্জারকে এমনিতেই ফার্স্ট ক্লাসের স্যুইটে ঢুকতে দেয় না, আর এখন তো মার্ডার কেস। তবে যখন ইমার্জেন্সি অ্যানাউন্সমেন্ট করল পাইলট তখন বলল ‘স্ট্যাব্‌ড্‌ টু ডেথ’!”
“‘স্ট্যাব্‌ড্‌ টু ডেথ’! ফ্লাইটে!! ছুরি নিয়ে উঠতে দেয় নাকি কাউকে ফ্লাইটে?”
“আরে সেটাই তো রহস্য। এখনও নাকি ওয়েপনটা পাওয়া যায়নি। এদিকে কায়রো ইন্টার্ন্যাশানাল এয়ার্পোর্টে তো সিকিউরিটি চেকিনের বড্ড কড়াকড়ি ছিল, কিকরে যে কাউকে ছুরি নিয়ে ফ্লাইটে উঠতে অ্যালাউ করল কে জানে!”
“অল্‌রেডি তিনঘন্টা হয়ে গেছে খোঁজ চলছে। আরও কত দুর্ভোগ কপালে আছে কে জানে! পরে আবার তোকে ফোন করব। এখন দেখি, ওই সামনের কাউন্টার থেকে জুস্‌ দিচ্ছে, বাবার আর আমার জন্য নিয়ে আসি।”
“যাক্‌। ফোন করতে যে অ্যালাউ করছে এটা ভালো ব্যাপার। অনেক সময় সার্চ চলাকালীন তো ফোন করা অ্যালাউড নয়।”
“না, সেইদিক থেকে কোন নিষেধ নেই। আরে অ্যালাউ করার পেছনে একটা যুক্তি আছে। একজন এয়ার-হোস্টেসের সাথে আলাপ হয়েছিল তার সাথে কথা বলছিলাম কতক্ষনের ধাক্কা, আমাদের অ্যাকোমোডেশান বা খাবারের কি হবে ইত্যাদি, তখন ফোন করার ব্যাপারে বলল যে ইচ্ছে করেই কর্তৃপক্ষ অ্যালাউ করেছে যাতে পরে ফোনের লগ্‌ চেক করে বোঝা যায় কোন সন্দেহজনক কথাবার্তা হয়েছে কিনা বা কে কার সাথে ফোন করছিল, সেইসব নাম্বার ওই মৃত ভদ্রলোকের সাথে কোনভাবে কানেক্ট করা যায় কিনা, আই মীন তদন্তে অসুবিধার থেকে বরঞ্চ সুবিধাই অনেক বেশী হবে ফোন করতে দিলে। ভেবে দেখলাম কথাটা মন্দ বলেনি। ঠিকই। আমাদের পুলিশ বিভাগকে যতই বোকা ভাবি, ঘটে বুদ্ধি আছে কিন্তু। আচ্ছা, এখন রাখছি বুঝলি? কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন পড়ে গেছে।”
“আচ্ছা যা, হামলে পড়ে গেল্‌ গিয়ে ফ্রুট জুস্‌!”
“বাই, রনি।”

(৩)

ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা দেখলেন একজন পুলিশ অফিসার হাসিমুখে ওনার দিকে এগিয়ে আসছেন। ওনারও মুখটা চেনা চেনা লাগল, কিন্তু ঠিক মনে করতে পারলেন না কোথায় দেখেছেন।
“আরে স্যর, আপনি এখানে? এই ফ্লাইটে ছিলেন? আমায় চিনতে পারছেন স্যর? আমি ইন্সপেক্টার প্রবীর পাল। ডিসিপি অরুণ বাসুর আন্ডারে পাঁচবছর কাজ করেছিলাম। সেই যে বছর আপনি হীরে সঙ্ক্রান্ত মামলায় নাটের গুরুকে ধরিয়ে দিলেন, তখন আমি অন ডিউটি ছিলাম বউবাজারের ওই গয়নার দোকানটায়। আবার ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’ রীয়্যালিটি শো-এর সেই মৃত্যুর ব্যাপারে যখন অরুণ স্যার তদন্ত করছিলেন, তখন আমি ওনাকে অ্যাসিস্ট করছিলাম। আমাদের বাড়িতে আমার ছেলে মেয়ে আপনার খুব ফ্যান।”
“নমস্কার প্রবীর বাবু। আপনি কি এখন চেন্নাই-এ আছেন?”
“হ্যাঁ গতবছর ট্র্যান্সফার হয়েছি। আমার ওয়াইফ আই-বি-এম্‌ চেন্নাইতে বদলি হওয়ার পর আমিও এখানে ধরে করে চলে আসি।”, তারপর গলাটা নিচু করে বললেন, “তবে অরুণ বাবুর মত বস্‌ আর পাইনি। আমার বস্‌ এসে পড়লেন বলে। এলেই দেখবেন।”

ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা কিছু না বলে একটু হাসলেন। প্রবীর পাল বললেন, "বলছিলাম স্যার এবারেও আমাকে একটু তদন্তে সাহায্য করে দিন না। কেস টা বেশ কমপ্লিকেটেড। ফ্লাইটের মধ্যে স্ট্যাব হয়েছে, অথচ ফ্লাইটে ছুরি জাতীয় কোন জিনিস নিয়ে ওঠাই যায় না। মার্ডার ওয়েপন টা কোথা থেকে এল আর কোথায় বা মিলিয়ে গেল কোনো কুল কিনারা পাচ্ছি না। আপনি একটু দেখবেন নাকি?"
ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা বললেন হ্যাঁ বসেই তো আছি, দেখতে অসুবিধা কি? তবে এসব খুন জখমের ব্যাপারে আমি কত টা সাহায্য করতে পারব জানি না।"
প্রবীর বলল "আপনার পর্যবেক্ষণ শক্তির উপর আমার ভরসা আছে, আমি এই ট্যাবলেটে ইনিশিয়াল কেস ডিটেল টা নোট করেছি, একবার চোখ বুলিয়ে নিন। ভাবছি এবার ইন্টারভিউগুলো সারব। আপনি চাইলে আসতে পারেন আমার সাথে"
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা নোটে চোখ বোলাতে বোলাতে বললেন "কাকে প্রথম ডাকতে চান?"
প্রবীর বলল "যে এয়ার-হোস্টেস প্রথম খুনটা আবিষ্কার করেন, তাকে দিয়েই শুরু করি, কি বলেন?"
- "উত্তম প্রস্তাব।"

(৪)
“খুনটা কি আপনি আবিষ্কার করেন?”, সুবেশা এয়ার-হোস্টেসকে প্রশ্ন করলেন প্রবীর পাল।
“হ্যাঁ”, ঈষৎ ভীত কন্ঠে উত্তর এল।
“আচ্ছা, গোড়া থেকে একটু জিজ্ঞাসা করছি। আপনার নাম?”
“আদিলা বাহারি”, গলার স্বরটা একটু ধরা ধরা।
“কতদিন হল আপনি এই ‘ক্লাউড-ভিল্‌’ এয়ারলাইন্সে কাজ করছেন?”
“এই সামনের মাসে পাঁচ বছর হবে।”
“এর মধ্যে এরকম কোন ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন?”
“ন্না।”
“মৃত ব্যাক্তি রশীদ খানকে আপনি আগে থেকে চিনতেন?”
“না”
“আচ্ছা, এবার বলুন কটার সময় কি ভাবে আপনি খুনটা আবিষ্কার করেন।”, প্রবীর পাল একবার আড়চোখে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তের দিকে তাকিয়ে দেখেন। মেঘনাদ গুপ্তা এক দৃষ্টে আদিলার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বলেন, “আপনি এক কাজ করুন প্রথম থেকেই বলুন, খুনের আগেও কতবার আপনার সাথে দেখা হয়েছিল সবটা শুনলে আমাদের সময় সম্পর্কে বা রশীদের বিহেভিয়ারও একটু জানা হবে ”
“আমাদের এই ফ্লাইট সকাল দশটায় কায়রো এয়ার্পোর্ট থেকে ছাড়ে। রশীদ ট্রাভেল করছিলেন ফার্স্ট ক্লাসে। ওই প্রাইভেট স্যুটের দায়িত্ত্বে আমি ছিলাম। ওনার প্রায়রিটি বোর্ডিং হয় সাড়ে নটার সময়। নিয়মমত আমি ৯:৩৫ এ ওনার স্যুটে গিয়ে জানতে চাই কোন বেভারেজ সার্ভিস চাই কিনা। এও বলি যে আমাদের এয়ারলাইন্স ফার্স্ট ক্লাস গেস্টদের জন্য স্পেশাল ‘বুক্‌ ইয়োর কুক্‌’ সার্ভিস চালু করেছে যাতে আমাদের আন্তর্জাতিক কালিনারি প্যানেলের অন্যতম মাস্টার-শেফ্‌ আব্দুল ইস্মাইল নিজে এসে ওনার খাবারের অর্ডার নিয়ে যাবেন এবং ওনার একান্ত ব্যক্তিগত রুচিসম্মত খাবার সার্ভ করে দিয়ে যাবেন। রশীদ খান কোন বেভারেজ অর্ডার করেন না। আমি ওনাকে পাঁচ মিনিট পর গরম তোয়ালে আর পুরুষদের অ্যামেনিটি কিট দিয়ে যাই।”
“এক সেকেন্ড। ওই অ্যামেনিটি কিটে কি থাকে?”
“শেভিং সেট্‌, ডিওডোরেন্ট, টুথপেস্ট, টুথব্রাশ, মোজা, চিরুনি, আই-শেড, আর ইয়ার-প্লাগ।”
“আচ্ছা, বলে যান।”
“কম্বল, বালিশ, পাজামা, সোয়েটার দিয়ে আমি ৯:৪৫ মিনিটে আমি ওনার ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে আসি। ঠিক দশটায় একবার নক করে ঢুকে ওনাকে সীট্‌ বেল্ট বেঁধে নিতে বলি টেক-অফের সময়। মাঝে আমাদের মাস্টার শেফ্‌ প্রত্যেক স্যুটে গিয়ে প্রাতঃরাশের অর্ডার নিয়ে আসেন। আমার তখন বিশেষ কাজ থাকে না। আমি বিজনেস ক্লাসের গেস্টদের ব্রেকফাস্ট মেনু পরিবেশন করতে থাকি।”
“শেফ্‌ বিজনেস ক্লাসে যাননা?”
“না, ওই সুব্যাবস্থা শুধুমাত্র ফার্স্ট ক্লাসের জন্য। বিজনেস ক্লাসে মেনু অনুযায়ী আপনি খাবার অর্ডার করতে পারেন।”
“অ। ইকনমি ক্লাসের মতই তাহলে।”
“না তা নয়। কারন…”
“আচ্ছা, ঠিকাছে। এখনই সেটা জানাটা রেলিভ্যান্ট নয়। আপনি বলে যান।”
“উনি টেক্‌-অফের ঘন্টা দুয়েক পরে বারোটা নাগাদ একবার আমায় কল করেন। ওনার কম্ব্লে বেশী গরম লাগছিল। উনি আরও হাল্কা কিছু চাইছিলেন। তো আমি আমাদের একটা লাইট থ্রো ওনাকে দিয়ে আসি। তখনও ওনার ব্রেকফাস্ট খাওয়া শেষ হয়নি। আরো আধ-ঘন্টা পর গিয়ে ওনার ব্রেকফাস্টের প্লেট, বোল, আরও অন্যান্য ট্র্যাশ নিয়ে বেরিয়ে আসি।”
“আচ্ছা সেই সময় সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করেছেন কি?”
“না”
“আচ্ছা, তারপর?”
“দুপুর একটা নাগাদ বিজনেস্‌ ক্লাসের জনৈক গেস্ট মারিও ক্লিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন রশীদ খান কোন স্যুটে আছেন।”
প্রবীর পাল আর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা একবার পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। তারপর প্রবীর পাল বললেন, “আপনি কি বললেন?”
“আমি বললাম স্যুট নাম্বার আমাদের পাব্লিক ইনফর্মেশান নয়, তবে আপনি চাইলে আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করে আসতে পারি আপনার সাথে উনি দেখা করবেন কিনা।”
“সেটা শুনে কি বললেন?”
“উনি আর কিছু বললেন না। এর পর দুটো নাগাদ আবার আমাদের মাস্টার শেফ্‌ ফার্স্ট ক্লাসে লাঞ্চের অর্ডার নিতে গেলেন আর আমি বিজনেস ক্লাসে লাঞ্চের অর্ডার নিতে গেলাম। সাথে গ্যেদা, জারিনা আর হানি ছিল। তিনটে নাগাদ ওনাকে লাঞ্চ সার্ভ করা হয়। চারটে নাগাদ আমি রশীদ খানের স্যুটে লাঞ্চের থালা, বাটি, ট্র্যাশ ফেলে দেওয়ার জন্য ঢুকে ওই বিভৎস দৃশ্যের সম্মুখীন হই”, একবার যেন শিউরে উঠল আদিলা।
“আপনি কি স্যুটে কোন জিনিসে হাত দিয়েছেন বা স্থান-বদল করেছেন?”
“না, আমি জানি এটা পুলিশ কেস হতে চলেছে, কাজেই কিছুতেই হাত দিইনি।”
“আচ্ছা, আপনার আর কিছু বলার না থাকলে আপনি আসতে পারেন।”
একটু ইতস্তত করে আদিলা বলল, “জানি না, এটা বলা ঠিক হবে কিনা, কোন নির্দোষ মানুষের ওপর অহেতুক সন্দেহ ফেলতে চাইনা, তবে রশীদের স্যুটে ঢোকার আগে যখন তার দুটো স্যুট আগের একজন গেস্টের ট্র্যাশ কালেক্ট করে বেরোচ্ছি, তখন ফার্স্ট ক্লাসের টয়লেট থেকে মারিও ক্লিনিকে বেরোতে দেখি।”
“আপনি ঠিক চিনেছিলেন যে উনিই মারিও ক্লিনি? মানে ফ্লাইটে তো এত প্যাসেঞ্জার আছে, আর আপনি নিশ্চয়ই মারিও ক্লিনিকে আগে থেকে চিনতেন না?”
“হ্যাঁ, চিনতে ভুল হয়নি কারণ প্রথমত উনিই আমাকে ডেকে রশীদের স্যুটের নম্বর জানতে চেয়েছিলেন, আর দ্বিতীয়ত আমি ওনাকে ফার্স্ট ক্লাস টয়লেট থেকে বেরোতে দেখে ওনাকে বিজনেস ক্লাসের টয়লেট ব্যাবহার করার অনুরোধ জানাই।”
“আচ্ছা মিস্‌ আদিলা, আপনি এবার যেতে পারেন। "
আদিলা চলে যাওয়ার পর প্রবীর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অস্কুটেই বললেন, তার মানে এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে খুনটা তিনটে থেকে চারটের মধ্যে হয়েছে। কারণ তিনটের সময় লাঞ্চ সার্ভ করা হয়েছে অথচ চারটের সময় ভুক্তাবশেষ পরিস্কার করতে গিয়ে আদিলা ওনাকে মৃত অবস্থায় দেখে।
- "এরপর কার সাক্ষাৎকার নিতে চাও?"
- "নিহতের সেক্রেটারি এই ফ্লাইটেই যাচ্ছিলন। তাকে এবারে ডাকলে হয়না? তাহলে নিহতের সম্পর্কে আরও কিছু জানা যেতে পারে।"
-"তাই হোক।"

(৫)
আরমান আভেদিনকে দেখলে মনে হয় মাঝ বয়সী, তবে চট করে বয়স বোঝা যায় না। ছ ফুটের কাছাকাছি লম্বা, ফর্সা , দোহারা চেহারা, মাথায় কাঁচাপাকা চুল, বেশ শান্ত , সৌম্য মুখশ্রী , বয়স পঁইত্রিশ থেকে পঞ্চান্নর মধ্যে যা খুশি হতে পারে। বিদেশ বিভুঁই তে এরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়েও ভদ্রলোকের মাথা বেশ ঠান্ডা আছে। দিশেহারা হয়ে পড়েননি , তবে কিছুটা বিচলিত।
প্রবীরের ডাকে এসে চেয়ারে বসে বললেন "দেখুন আপনাদের আমি সব রকম সাহায্য করতে রাজী তবে সবার আগে আমাদের এম্বাসীতে খবর দেবার ব্যাবস্থা করুন। মিস্টার খান আমাদের দেশের একজন বড় ডিপ্লোম্যাট। তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর আমাদের দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরী করতে পারে। কোনো রকম গুজব ছড়ানোর আগে সরকারী ভাবে খবরটা দেশের সবাইকে জানানো দরকার। আর আপনারা পারমিশন দিলে আমি নিজে মিস্টার খানের পরিবারের সাথে কথা বলে খবরটা জানাতে চাই।"
প্রবীর বলল "আপনি ব্যাস্ত হবেন না। আমার উপরওয়ালা নিজে এম্বাসীর সাথে কথা বলছেন। আর আপনি অবশ্যই মিস্টার খানের পরিবারের সকলকে খবরটা জানান। আমাদের তরফ থেকে কোনো বাধা নেই। কাকে জানাতে হবে? ওনার স্ত্রী আছেন? ছেলে , মেয়ে কজন?"
মিস্টার আভেদিন বললেন "মিস্টার খানের দুই স্ত্রী, একটি ছেলে , বড়বিবির ছেলে, সে প্যারিসে থাকে। আমি ওনার বড়বিবি কে জানাব। মিস্টার খানের পর তিনি ওঁদের পরিবারের প্রধান। তারপর উনি সবাইকে জানানোর ব্যাবস্থা করবেন। তার আগে আপনাদের জিজ্ঞাস্য সেরে নিন।"
প্রবীর মোটামুটি বাঁধা গতে প্রশ্নোত্তর শুরু করল। ওর দুটো উদ্দেশ্য ছিল। এক রসীদ খানের ব্যাকগ্রাউন্ডটা জানা , দ্বিতীয় খুনের পিছনে আরমানের কোনো হাত আছে কিনা বোঝা।
আরমান আভদিন জানালেন তিনি প্রায় বছর দশেক মিস্টার খানের সেক্রেটারী হিসাবে আছেন। তার আগে উনি বছর পাঁচেক একটি পর্যটন সংস্থায় কাজ করেছেন। আরমানের আদি বাসস্থান ইজিপ্টে নয়, আদতে তিনি আর্মেনিয়ার বাসিন্দা, নানা দেশে ভাগ্য অন্বেষনে ঘুরে ইজিপ্টে মোটামুটি থিতু হয়েছেন। মিস্টার খান ও নাকি ইজিপ্টের আদি বাসিন্দা নন , তবে আরমান জানেন না উনি আদতে কোথাকার বাসিন্দা ছিলেন। মিস্টার খান ত্রিশ বছরেরও বেশী সময় ইজিপ্টে আছেন। ওনার বড়বিবির সাথে বিয়ে হয়েছে প্রায় চুয়াল্লিস বছর। বছর চারেক আগে বেশ ঘটা করে চল্লিস বছরের বিবাহ বার্ষিকী পালিত হয়েছিল। বড়বিবি কোন দেশের বাসিন্দা তাও আরমান জানেন না। তবে শুনেছেন ওদের বিয়ে হয় মিস্টার খান ইজিপ্টে আসার আগে। মিস্টার খানের একটি ছেলে ইমরান। বছর ত্রিশেক বয়স। প্যারিসে থাকে । শুনেছেন ওখানে এক নিউজ পেপারের সাব এডিটর। তবে মিস্টার খান প্রায় ই খরচ পত্র পাঠান ছেলেকে। মাস ছয়েক আগে ছেলে একবার ইজিপ্টে গিয়েছিল। মিস্টার খানের সাথে কিছু কথা কাটাকাটি হয় সেই সময়। ইমরান দু চার দিন বাদে আবার প্যারিসে ফিরে যায়। মিস্টার খানের ছোটবিবির সাথে বিয়ে হয় বছর খানেক হল। এই বিয়ে তে বড় বিবির কোনো অমত ছিল না। ছোটবিবি মনিকার বয়স মধ্য তিরিশ। একসময় ইতালিতে ছিল, তবে আদতে ইজিপ্টের বাসিন্দা। আরমানের কথা মত মনিকা এককালে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ভক্ত ছিল। বিদেশে মডেলিং করেছে, দেশেও সিনেমা লাইনে ছিল। মারিও নামে একজন ইতালিয়ানের সাথে লিভ টুগেদার করত। কিন্তু বছর দেড়েক আগে তার মধ্যে হঠাৎ পরিবর্তন আসে। সে রশীদ খানের পার্টিতে যোগ দিয়ে দেশের কাজ করতে চায়। তারপর কিছুদিন আলাপ পরিচয়ের পর মিস্টার খান ওকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে এককথায় রাজী হয়ে যায়।
তবে মনিকার প্রাক্তন প্রেমিক এবং লিভ টুগেদার পার্টনার মারিও এই বিয়ে নিয়ে বেশ ঝামেলা করে। মনিকা কে শাসিয়েছিল বিয়ে করলে মারিও ওকে প্রাণে মেরে ফেলবে। মিস্টার খান পলিটিকাল ইনফ্লুয়েন্স দিয়ে ব্যাপার টা সামলান। তবে মনিকা বেশ ভয় পেয়েছে। এখওনো রাস্তা ঘাটে একা চলাচল করে না। আরমান বলে ইনফ্যাক্ট মারিও এই ফ্লাইটেই আছে। ফ্লাইটে ওঠার আগে ওরা যখন ইজিপ্টের এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জে অপেক্ষা করছিলেন তখন মারিও ঢোকে। মিস্টার খান কে দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে গালিগালাজ করে। মূল বক্তব্য উনি নাকি জোর করে মনিকাকে আটকে রেখেছেন। মারিও শাসিয়েছিল মনিকা কে ছেড়ে না দিলে ফল ভাল হবে না।
প্রবীর জিজ্ঞাসা করে "খুন করবে বলে শাসিয়েছিল?" আরমান বলেন "না সেরকম স্পেসিফিক কিছু বলেনি,শাসানি শুরু করতেই মিস্টার খানের দেহরক্ষী ওকে ঘর থেকে বার করে দেয়। তখন অত খেয়াল করে শুনিনি মারিও কি বলছিল। কিন্তু এখন ঘটনা টা ঘটার পর মনে হচ্ছে মারিও হয়ত রাগের মাথায় কিছু করতেও পারে।"
"মারিও তো আপনার সাথে বিজনেস ক্লাসে ছিল , ও খুনের সময় বা আগে সিটে ছিল কিনা লক্ষ্য করেছিলেন?"
"না আমার অনেকগুলো পেনডিং কাজ পরেছিল। ফ্লাইটে উঠে ল্যাপটপ খুলে কাজ করতে বসে যাই। মারিও কে সে ভাবে আর লক্ষ্য করিনি।"
"আপনি তিনটে থেকে চারটের মধ্যে কোথায় ছিলেন?"
"আমি সারাক্ষন সিটে বসে কাজ করছিলাম, শুধু দু একবার টয়লেট গিয়েছিলাম। "
"আচ্ছা আপনি এবার গিয়ে মিস্টার খানের পরিবারকে খবর দিন। আমাদের দরকার হলে আপনাকে পরে আবার ডাকব।"
আরমান বেরিয়ে গেলে প্রবীর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তাকে জিজ্ঞেস করল "কি বুঝলেন?" ম্যজিশিয়ান গুপ্তা বললেন রসীদ খানের খুন হবার জন্য মোটিভের অভাব নেই এটুকু বোঝা গেল। তবে ওয়েপ্‌ন আর অপারচুনিটি মাঝ আকাশে কার কতটা ছিল সেটাই দেখার।"
তিষ্যা জিজ্ঞেস করল "মোটিভের অভাব নেই কেন?"
ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা বললেন "প্রথমত লোকটা একজন ডিপ্লোম্যাট। এইধরনের লোক জনের প্রফেশনাল শত্রূ সব সময় থাকে এবং তারা খুব পাওয়ারফুল। তারা মনে করলে প্রফেশনাল কিলার দিয়ে কাউকে খুন করাতে পারে। আবার আরমানের থেকে রশীদ খানের ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কে যা শুনলাম তাতেও মনে হল রশীদের মৃত্যুতে অনেকের লাভ হবে। ধর রশীদের ছেলে। রসীদ তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দিয়েছে। প্রেমিকা বা বাবার সম্পত্তির মধ্যে তাকে যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে। এই অবস্থায় যদি রশীদ মারা যান তবে আর কোনো উইল করার সুযোগ পাবেন না। ছেলে বাপের সম্পত্তি এবং ফরাসী রাজকন্যা একসাথে পেয়ে যাবে।" তারপর ধর রশীদের দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রাক্তন প্রেমিক। সেতো রশীদ কে রাগের মাথায় হুমকি ও দিয়েছে। তার মোটিভ অপারচুনিটি দুতোই আছে। সে এই ফ্লাইটেই উপস্থিত। কাজেই হাতের কাছে একটা ওয়েপ্‌ন পেলে রাগের মাথায় খুন করে বসতেও পারে। তারপর ধর আরমান। খুবই চৌখশ লোক , চারিদিকে নজর। মনিবের হাঁড়ির খবর জানে। যদি এই হাঁড়ির খবরের মধ্যে আপত্তিকর কিছু থাকে যা রশীদ লুকতে চায় , আরমান তা জেনে ফেলে রসীদ বা রসীদের বউদের কাউ কে ব্ল্যাক্মেল করতে পারে। হয়ত সেই নিয়ে কথা কাটাকাটি থেকে খুনটা হতে পারে।" অপারচুনিটির কথা যদি ধর তাহলে অবশ্য কেবিন ক্রুদের ও সন্দেহর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় না। এরা বেশ কয়েকবার একা রসীদ খানের কেবিনে ঢুকেছে। কেবিন ক্রুরা এই রুটে নিয়মিত যাতায়াত করে। সিকিউরিটি চেকিং এর অন্ধিসন্ধি নখদর্পনে। তাদের পক্ষে সিকিউরিটি ফাঁকি দিয়ে ছোটখাট অস্ত্র প্লেনের ভিতরে নিয়ে আসা অপেক্ষাকৃত সহজ।"
প্রবীর বলল "সে তো বুঝলাম কিন্তু এগুলো তো সবটাই অনুমান। এর থেকে তো কোনো কন্‌ক্লুশনে আসা গেল না। মোটিভ , অপরচুণিটি যাই থাক মাঝ আকাশে খুনি ওয়েপ্‌নটা পেল কোথা থেকে। সিকিউরিটি চেক ইন এ তো সমস্ত চেকিং হয়। অস্ত্র নিয়ে প্লেনে ওঠা বারণ। আর তর্কের খাতিরে যদি ধরে নি কেউ একজন অস্ত্র নিয়ে ফ্লাইটে উঠেছিলেন এবং মাঝ আকাশে খুন ও করেছিল তাহলেও বা অস্ত্র টা গেল কোথায়?" আমি আট জন লোক লাগিয়েছি অস্ত্রটা খোঁজার জন্য। সবার হ্যান্ড লাগেজ চেক করা হল। আরো ছ জন ছিল সবার বডি সার্চ করার জন্য। ফ্লাইটের ভিতর সর্বত্র তো তন্ন তন্ন করে খোঁজা হল। যাকগে, এবারে একে একে বাকি ক্যাবিন্‌-ক্রূদের ডাকা যাক। শেফ্‌কেই ডাকি, সেই তো শেষ জীবিত দেখেছিল রসীদ খানকে।"
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন "হ্যাঁ তা ডাক। তবে তার আগে তোমার টীমের ছেলে দের কাউকে বল রসীদ খান আর আরমান আভেদিনের পাসপোর্ট দুটো ভাল করে চেক করতে। দেখতে বল ওরা দুজন ইজিপ্ট ছাড়া অন্য কোন কোন দেশে বসবা্স করেছেন।"
প্রবীর ফোনে ওর জুনিয়র অফিসার কে পাসপোর্ট চেক করার কথা বলে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা কে জিজ্ঞেস করল "আপনি কিছু সন্দেহ করছেন?" ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা বললেন, "নাহ্‌ সন্দেহ বলা চলে না শুধু তথ্য সংগ্রহ।"

৬)

এক মিনিটের মধ্যে ধপ্‌ধপে সাদা পোশাক আর মাথায় লম্বা সাদা শেফ্‌-এর টুপি পরে আব্দুল ইস্মাইল এসে বসলেন ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা আর প্রবীর পালের সামনের চেয়ারে।
“আপনিই আব্দুল ইস্মাইল, এই ফ্লাইটের মাস্টার শেফ্‌?” প্রবীর পালের প্রশ্ন।
“ইয়েস্‌ স্যর। দ্যাটস্‌ রাইট।”
মালয়েশিয়ান পাস্‌পোর্টটা উল্টে-পাল্টে দেখতে দেখতে প্রবীর পাল নিয়ম্মাফিক জিজ্ঞাসা করলেন, “কতদিন ক্লাউড্‌স্‌-ভিল এয়ার্লাইন্সের সাথে যুক্ত আছেন আপনি?”
“তা বছর দুয়েক হবে। আমি আগে কুয়ালা-লাম্পুরের ‘প্যাটিনা’ বলে একটি পাঁচতারা রেস্টুরেন্টে্র শেফ্‌ ছিলাম বছর পনেরো। ওটা মিশেলিন গাইডে ফাইভ-স্টার পেয়েছিল পরপর তিন বছর”, বেশ গর্বের সঙ্গে বলল আব্দুল।
এদিকে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা মিশেলিন গাইডটা ভালো বুঝলেন না, মনে হল প্রবীর পালও ভালো বোঝেন নি। তাই জিজ্ঞাসা করলেন, “মিশেলিন গাইডটা কি?”
“মিশেলিন স্টার জানেন না?” গলায় তাচ্ছিল্য মাস্টার শেফের, “মিশেলিনের ক্রিটিক প্যানেল হাতে গোনা যে কয়েকটা বিশ্বজোড়া রেস্টুরেন্টকে অনবদ্য রান্নার জন্য পাঁচতারা ঘোষনা করেছে, তার মধ্যে আমার প্যাটিনা অন্যতম। মনে রাখবেন, মিশেলিনের পাঁচতারা মানে শুধুই রান্নায় পাঁচতারা। কে কত ভালো ইন্টিরিয়ার ডেকরেশান করল বা কত সেক্সি ওয়েট্রেস আনল তাতে কিস্যু এসে যায় না। দুবছর আগে ক্লাউড্‌স্‌-ভিল্‌ এয়ারলাইন্স তাদের এই ‘বুক ইয়োর কুক্‌’ সার্ভিস চালু করল। তার কয়েক মাস আগে শেফ্‌ হেড্‌হান্ট-এ বেরিয়েছিল। তৈরি করেছিল ওদের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কালিনারি প্যানেল, দশজন মাস্টার শেফ্‌ নিয়ে। তখন থেকে ক্লাউড্‌স্‌-ভিল্‌ এয়ারলাইন্সএর সাথেই আছি। গতবছর আমরা স্কাইট্র্যাক্স্‌ ওয়ার্ল্ড এয়ারলাইন অ্যাওয়ার্ড্‌স্‌ পেয়েছি বেস্ট ফার্স্ট ক্লাস ক্যাটেরিং-এ।”
“আচ্ছা, এবার খুনের প্রসঙ্গে আসছি। আপনিই শেষ ব্যাক্তি যিনি রশীদ খানকে জীবিত অবস্থায় দেখেছেন, ঠিক কি না?”
“তা কি করে বলব? আমি দুবার করে খাবারের অর্ডার নিতে গিয়েছিলাম, ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চের আর তারপর দুবার খাবার সার্ভ করে এসেছি। লাঞ্চ যখন সার্ভ করে বেরিয়ে এলাম তখনও ভদ্রলোক বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন।”
“আচ্ছা, আপনি কখন ওনাকে লাঞ্চ সার্ভ করেন?”
“আমি তিনটে আটে ওনাকে লাঞ্চ সার্ভ করি।”
“বাব্বা, তিনটে আটেই করেছিলেন? সাতেও না, নয়ও না?”
“না, স্পষ্ট মনে আছে। কারন ওনার স্যুটে ঢোকার আগে কিচেনের ঠিক লাগোয়া স্যুট ফোর-এ সার্ভ করে বেরিয়ে আসার সময়ে ওই স্যুটের গেস্ট জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমাদের ইন্‌-ফ্লাইট্‌ ওয়াই-ফাই কোথাকার সময় ধরে, কায়রো, নাকি কুয়ালা-লাম্পুর নাকি যে দেশের ওপর দিয়ে যাচ্ছি সেই দেশের।”
শুনে তিষ্যা হেসে ফেলল। প্রবীর পাল বললেন, “আপনি কি উত্তর দিলেন?”
“আমি উত্তর দিতে পারিনি, কিন্তু আমাদের ফ্লাইট্‌ অ্যাটেন্ডান্ট জারিনাকে ডেকে আমাদের মাইক্রো-ওয়েভ ওভেনের টাইমার-টা দেখিয়ে বলেছিলাম যে এখানে তো তিনটে পাঁচ দেখাচ্ছে, ওয়াই-ফাই-এ কত দেখাচ্ছে জানলে বোঝা যাবে অ্যাট-লিস্ট কায়রোর টাইম দিচ্ছে কিনা, কারণ ওঠার সময় মাইক্রো-ওয়েভ ওভেনের টাইমার কায়রো টাইমে সেট করা ছিল। ওকে বলি ওই গেস্ট মিস্টার হাতেম সালেহ্‌কে জিজ্ঞাসা করতে ওনার ওয়াই-ফাই কটা দেখাচ্ছে। আর এর পর আমি ঘড়ি ধরে তিন মিনিট রশীদের খাবার গরম করে ওনাকে সার্ভ করে আসি। তাই বলছিলাম ওনার ঘরে আমি এগজ্যাক্টলি তিনটে আটে ঢুকেছিলাম।”
“কতক্ষন ছিলেন ওই ঘরে?”
“’হিয়ার্স ইয়োর লাঞ্চ স্যর আজ্‌ ইউ অর্ডার্ড’ আর ‘বন অ্যাপেতি’ বলে হেসে বেরিয়ে আসতে পঁইয়তাল্লিশ সেকেন্ডের বেশী লাগে কি? আমি বেরিয়ে এসে পরে জারিনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে ও মিস্টার হাতেমকে জিজ্ঞাসা করে এসেছিল কিনা ওয়াই-ফাই-এর ব্যাপারে। জারিনা বলেছিল যে ও যখন গেছিল তখন হাতেমের ওয়াই-ফাই নাকি ছটা-আটত্রিশ দেখাচ্ছিল।”
“জারিনা, মানে এই এয়ারলাইন্সের চীফ্‌ ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট?"
"হ্যাঁ"
"মাইক্রো-ওয়েভ ওভেন কি টাইম দেখাচ্ছিল?”
“তিনটে দশ।”
“আচ্ছা, আবার খুনএর প্রসঙ্গে ফিরে যাই। এর পর আপনি আর ওই স্যুটে গেছিলেন কোন কারণে?”
“না।”
“আপনি যখন লাঞ্চ সার্ভ করলেন ওই ঘরে আর কেউ ছিল বা কোন সন্দেহজনক কিছু দেখেছেন?”
“না, সেরকম কিছু দেখিনি। আর ঘরে অন্য কেউ ছিল না।”
“আপনি বেরিয়ে আসার পরে কেউ ওঁর ঘরে ঢুকেছিল কিনা নজর করে দেখেছিলেন?”
“সেটা বলতে পারব না। আমি অন্যান্য স্যুটে লাঞ্চ সার্ভ করার পর কিচেনের অন্যান্য কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি।”
“আচ্ছা, কিচেনে ছুরি-কাঁটা কি কি থাকে?”
“দুঃখের বিষয়, কিস্যু থাকে না”
“দুঃখের বিষয় বললেন কেন? আর না থাকলে রান্না করেন কি করে আপনি?”
“সেটাই তো দুঃখের বিষয় যে ‘বুক ইয়োর কুক্‌ সার্ভিস’ চালু হল কিন্তু সিকিউরিটির নিয়ম তো আর বদলাল না। শেফ্‌ হিসেবে যে কত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আমাদের একটা ফার্স্ট ক্লাস ডাইনিং এক্সপেরিয়েন্স ক্রিয়েট করতে হয় আমাদের গেস্টদের জন্য, সেটা বেশীর ভাগ লোকই বোঝে না।”

ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা খুব অবাক হলেন এটা জেনে। সত্যি তো! ছুরি-কাঁটা না থাকলে রান্না হবে কি করে? এদিকে ঘটা করে অর্ডার নিতে যায় মানে নিশ্চয়ই রান্না করে ফ্লাইটে। ওনার ইকনমি ক্লাসে তো শুধু জিজ্ঞাসা করেছিল ভেজ্‌ নাকি নন-ভেজ্‌। সেরকম হলে মানা যায় যে কিছু প্যাকেটের লাঞ্চ কায়রো থেকে তুলে স্রেফ গরম করে সার্ভ করে দেয়, কিন্তু শেফ্‌ রেখে অর্ডার নিয়ে ওই প্যাকেটের লাঞ্চ নিশ্চয়ই সার্ভ করে না। উনি জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে আপনি রান্না করেন কি করে? কোন রকম ছুরিই কি অ্যালাউড্‌ নয়?”
“নাঃ। শুধুমাত্র প্লাস্টিকের ছুরি ছাড়া কোন রকম ছুরি আনা যায় না। ছুরি না, রেজর না, আইস্‌-অ্যাক্স্‌ না, মাংস কাটার ক্লীভার না, কোন রকম কাটার না। এমনকি চার ইঞ্চির বেশী বড় কাঁচি পর্যন্ত অ্যালাউড্‌ না। একটা ঠিকঠাক স্টোভ পর্যন্ত আনা যানা। মাইক্রো-ওয়েভ কাম্‌ কনভেক্‌শান ওভেন দিয়ে কাজ চালাতে হয়, বুঝেছেন? এদিকে গেস্টদের পোয়া বারো। পার্সোনাল শেফ্‌ পেয়ে অম্‌লেট সানি সাইড আপ্‌, স্কিউয়ার্ড চিকেন উইথ্‌ পীনাট্‌ সস্‌, স্মোক্‌ড্‌ শ্যামন্‌, ফ্রেশ স্যালাড যা ইচ্ছে তাই অর্ডার দিয়ে বসে। এদিকে আমার হাত বাঁধা। দারুণ কোন খাবার স্ক্র্যাচ্‌ থেকে বানাতে পারি না। শুধু কিছু পরিবর্তন করতে পারি, মশলা যোগ করে, সস্‌ ঢেলে, কনভেক্‌শান ওভেনে গ্রিল করে, মাইক্রো-ওয়েভ ওভেনে গরম করে আর নয়ন-লোভন করে পরিবেশন করে। ফাইনেস্ট বোন-চায়না, ফাইনেস্ট ওয়াইন্‌, দামী ডেকরেশানের সরঞ্জাম এইগুলোই আমার সম্বল।”

বোঝাই যায় মাস্টার শেফ্‌ তাঁর নিজের প্রোফেশান নিয়ে বেশ গর্বিত। ফ্লাইটে কিভাবে কি খাবার বানানো বা পরিবেশন করা যায় তাই নিয়ে সদা-সর্বদাই অনেক চিন্তা-ভাবনা-কল্পনা করে চলেছেন। নিজে থেকেই আবার বললেন, “কত ছোট কিচেন কল্পনা করতে পারবেন না। এদিকে ৩৫০০০ ফুট ওপরে মানুষের টেন পার্সেন্ট টেস্ট্‌-বাড মরে যায়, কাজেই সব রান্নাই আমায় টেন-পার্সেন্ট বেশী বোল্ড ভাবে বানাতে হয় যাতে সঠিক নুন, ঝাল, মিষ্টি, টক খেতে হয়।”
“রশীদ খান কি অর্ডার দিয়েছিলেন?”
“স্মোক্‌ড্‌ শ্যামন, গ্রীল্‌ড্‌ বীফ্‌ আর ক্রেম-ব্রুলে। খুব একটা অসুবিধা হয়নি।”
“আচ্ছা আপনি যখন তিনটে আটে খাবার সার্ভ করে এলেন, তখন উনি ঠিক কি করছিলেন?”
“ল্যাপ্‌টপ খুলে কিছু কাজ করছিলেন।”
“আচ্ছা মিস্টার আব্দুল ইস্মাইল, আপনি এখন আসতে পারেন। চীফ্‌ ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট জারিনা হামিদকে পাঁচ মিনিট পর পাঠিয়ে দিন প্লীজ।”

(৭)
প্রবীর পাল ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার দিকে ফিরে বললেন, “আমার একটা কথা মাথায় এল আব্দুলের কথা শুনে। কটা ওবধি রশীদ ওয়াই-ফাই ইউজ করেছে সেটা দেখে খুনের টাইমটা আন্দাজ করা যেতে পারে। ডাক্তার তো বারোটা থেকে পাঁচটা বলেছে, রেঞ্জটা এতটাই চওড়া যে আমাদের কোন লাভ হয়নি। আমরা তো জানিই যে আদিলা বারোটায় কম্বল দিয়ে গেছে বা তিনটে আটে লাঞ্চ খেয়েছেন রশীদ। খুন হলে এর পরেই হবে। দেখি কামেশকে বলি ল্যাপ্‌টপ্‌টা চেক্‌ করতে। কামেশ কৃষ্ণণ আমাদের ইনফর্মেশান সিকিউরিটির হেড, যেকোন পাস্‌ওয়ার্ড ৩ সেকেন্ডে ক্র্যাক করে দিতে পারে। কায়রোর মিনিস্ট্রি থেকে অনুমতি দিয়েছে তদন্তের স্বার্থে ল্যাপ্‌টপ্‌ চেক করার।”

প্রবীর পাল ফোনে ইন্সট্রাকশান দেওয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে জারিনা হামিদ এসে বসলেন। উনি চীফ্‌ ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট। খুবই অভিজ্ঞ ক্যাবিন ক্রু। ক্লাউড্‌স্‌-ভিল্‌ এয়ারলাইন্সে বছর দশেক আছেন। কম কথা বলেন, কিন্তু সব কিছু যেন নখদর্পণে। জানালেন উনি আর আদিলা ফার্স্ট ক্লাসের দায়িত্ত্বে ছিলেন। মাত্র বারোটা ফার্স্ট ক্লাস স্যুট, কাজেই ওনারা দুজনেই যথেষ্ট। বিজনেস ক্লাসে ওঁরা দুজন ছাড়াও গ্যেদা আর হানি ডিউটিতে ছিল। ইকনমি ক্লাসে আরও আটজন অ্যাটেন্ড্যান্ট ছিল। না, উনি কোন সন্দেহজনক কিছু লক্ষ্য করেননি। না, অন্য কোন গেস্টকে উনি নিহতের স্যুটে ঢুকতে দেখেননি। হ্যাঁ, উনি কিচেনে ছিলেন যখন আদিলা সাড়ে বারোটায় ব্রেক্‌ফ্যাস্টের ট্র্যাশ কালেক্ট করে ফেরে বা তিনটে দশ নাগাদ যখন আব্দুল লাঞ্চ সার্ভ করে ফেরে। হ্যাঁ, তিনটে পাঁচে উনি স্যুট ফোরে গিয়ে কায়রোর টাইম জানিয়ে আসেন আর শুনে আসেন যে তখন ওয়াই-ফাইএ ছটা আটত্রিশ দেখাচ্ছিল। হ্যাঁ, উনিও ধারণা করেছিলেন ওটা ইন্ডিয়ার টাইম হবে। তারপর উনি পাশের স্যুট থেকে ডাক পান একটা এক্স্‌ট্রা কম্বলের জন্য, সেটা দিয়ে এসে ইকনমি ক্লাসে একবার ঢুঁ মেরে আসেন কয়েক মিনিটের জন্য সব ঠিকঠাক আছে কিনা। ফের ঘন্টাকখানেক পরে আদিলার চিতকার শুনে ছুটে গিয়ে দেখেন রশীদ খানের রক্তাক্ত দেহটা খাবার টেবিলে মুখ গুঁজরে পড়ে রয়েছে। হ্যাঁ, ঘড়িতে তখন চারটে পাঁচ।
প্রবীর পাল ওনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তাকে জিজ্ঞাসা করলেন ওনার কিছু জিজ্ঞাস্য আছে কিনা। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা জিজ্ঞাসা করলেন, “কিচেনে কোন ছুরি-কাঁচি থাকে না শুনলাস শেফ আব্দুলের মুখে। সত্যি? ”
“হ্যাঁ, সত্যি। কেন, আব্দুল মিথ্যে বলছে এরকম সন্দেহ কেন হল?”
“নানা, মিথ্যে বলছে এরকম সন্দেহ একেবারেই হয়নি। জাস্ট ক্রস্‌-ভেরিফিকেশান করতে জিজ্ঞাসা করলাম। আসলে ফ্লাইটে ছুরি মেরে খুন এতটাই অবিশ্বাস্য! চেক্‌-ইন লাগেজে কেউ ছুরি নিয়ে উঠতে পেরেছে এটা মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আর তিনঘন্টা হয়ে গেল তন্নতন্ন করে সার্চ করা চলছে এখনও ওয়েপন্‌টা আবিষ্কার করা গেলনা।”
“তা বেশ তো, কিচেনে নিজেরাই ভালো করে দেখে নিন কোন ছুরি উঠেছে কিনা” বেশ বিরক্ত স্বরে জারিনার মন্তব্য।
“আমরা কিন্তু কারোর ওপরে অহেতুক সন্দেহ করছি না, জাস্ট সব্দিক খতিয়ে দেখতে চাইছি”, তারপর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার দিকে ফিরে বললেন, “কি বলেন মিস্টার গুপ্তা? একবার যাবেন নাকি কিচেনে ঢুঁ মারতে? চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জন হয়ে আসা যাক!”
জারিনা বেরিয়ে যাবার পর ওরা কিচেনের দিকে রওনা দিল। তিষ্যা বলল আদিলা ,জারিনা আর আবদুলের কথা শুনে মনে হল ওরা যেন খুনের সাক্ষী দেবে বলে রেডি হয়ে বসে ছিল। কে কখন কোথায় ঢুকছে , বেরোচ্ছে সব একেবারে ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে মিলিয়ে উত্তর দিচ্ছিল। আমার বেশ সন্দেহজনক ঠেকছে। ওরা তো আর জানত না রসীদ খান খুন হবে। তাহলে প্রতিবার ওর ঘরে ঢোকার সময় কেন ঘড়ি দেখছিল।"
প্রবীর বলল "তিনজনে প্লান করে খুন করেছে বলতে চাও?"
-"তিন জনে না হলেও এদের মধ্যে দুজন প্লান করেছে হয়ত। দুজনে মিলে হয়ত তৃতীয় জনকে সময় সংক্রান্ত হিসাব গুলো বুঝিয়েছে।"
ম্যাজিসিয়ান গুপ্তা বললেন সেটা একটা সম্ভবনা বটে। তবে ঘড়ি মেলানো নিয়ে আশ্চর্যের কিছু নেই। কেবিন ক্রু দের কাজের একটা রুটিন আছে। কোন সুইটে কে কখোন কোন সার্ভিসের জন্য যাবে। ওরা তো রসীদ খানের সুইট বলে প্রথমে মনে রাখেনি। সুইট নাম্বার সেভেন বলে মনে রেখেছে। আমার ধারণা সুইট নাম্বার টু তে কে কখোন কোথায় ঢুকেছে জিজ্ঞেস করলেও এইরকম সময় সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাবে। ভুলে যেওনা ওরা এই রুটে দিনের পর দিন ফ্লাই করছে। প্রতিদিন ই আদিলা সুইট নাম্বার সেভেনে নির্দিষ্ট সময় অ্যামিনিটি কিট দিয়ে আসে বা আব্দুল খাবারের অর্ডার নিয়ে আসে।"

কথা বলতে বলতে ওরা ঢুকল ফ্লাইটের কিচেনে। ছোট্ট কিচেন, নড়াচড়ার জায়গা বিশেষ নেই বললেই চলে। তিষ্যা বলে উঠল, “বাপ্‌ রে এখানে রান্না করে কি করে? এলেম আছে মাস্টার শেফের!”
ওরা দেখল সামনের কাউন্টারে কিছু সোডার ক্যান রাখা রয়েছে। পাশেই বড় ট্র্যাশ ব্যাগ। বাঁ-দিকে প্লাস্টিকের কাট্‌লারি। ওদিকে কিছ স্যালাড বানাবার কাঁচা আনাজ, পেঁয়াজ, শশা, লেটুস্‌, টমেটো ইত্যাদি। পাশে ছোট ছোট মশলার কৌটো, আর সসের সম্ভার। ছোট্ট একটা রেফ্রিজারেটরে ঠাসা হাফ্‌-কুক্‌ড্‌ সব খাবারের প্যাকেট। রেফ্রিজারেটরের ওপর মাইক্রো-ওয়েভ কাম্‌ কনভেকশান ওভেন। এখনও ভেতরে চিকেনের ছোট ছোট কিউব স্কিঊওয়ারে গ্রিল হচ্ছে। জারিনা হামিদ বন্ধ করে দিলেন ওভেনটা। ওই গন্ডগোলে আর এটা বন্ধ করার কথা খেয়াল হয়নি আরকি। পাশের কাবার্ডে ঠাসা বোন-চায়নার বাসনপত্র। প্লাস্টিকের গ্লাস আর তার পাশে জলের কল। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা অনেক খুঁটিয়ে দেখলেন সব কিছু। তিষ্যা বাবার কানে ফিস্ফিসিয়ে বলল, “বাবা, এটাতো আর ‘ওস্তাদের মার শেষ পাতে’র রীয়্যালিটি শো নয়, তুমি এই ক্র্যাম্প্‌ড্‌ কিচেন ঘুরে সময় নষ্ট করছ কেন?” ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা গম্ভীর হয়েই রইলেন।

ওঁরা কিচেন পেরিয়ে গেলেন স্যুট সেভেনে। এখনও বডি সরানো হয়নি প্রাথমিক তদন্ত চলছে বলে। প্রবীর পাল আঙ্গুল দিয়ে দেখালেন কোথায় ছুরি মারা হয়েছে। একেবারে হৃৎপিন্ড এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছে। প্রবীর পাল বললেন “আমি আগে একবার দেখে গেছি। আপনি ভালো করে দেখুন তো, কোন সন্দেহজনক জিনিস আমাদের চোখ এড়িয়ে গেল কিনা? একটা জিনিস দেখুন খাওয়া দাওয়া প্রায় কমপ্লিট হয়ে গেছিল। প্লেটে সেরকম কিছু দেখছিই না। শ্যামন বা বীফের অংশ দেখছি না। শুধু এই ডেসার্টটা পড়ে আছে অভুক্ত। তার মানে ধরে নেওয়া যায় পৌনে চারটের মধ্যে খুনটা হয়েছে, কারণ ডেসার্ট খাওয়ার সময় দেয়নি আততায়ী।”
“হ্যাঁ, সেরকম সন্দেহজনক কিছু তো দেখছি না। ল্যাপ্‌টপ্‌টা দেখছি না? নিয়ে গেছে আপনাদের ডিপার্টমেন্টের লোক?”
“তাই হবে। দাঁড়ান দেখি কামেশ কিছু পেল নাকি।”
ফোনে কামেশের সাথে কথা বললেন প্রবীর পাল। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার দিকে ফিরে উত্তেজিত স্বরে বললেন, “ভালো খবর আছে। কামেশ একটা প্রিলিমিনারি ডেটা নিয়ে আসছে। ততক্ষণে আমরা বরং রশীদ খানের ছোটবিবির প্রাক্তন প্রেমিকপ্রবরের সাথে মোলাকাতটা সেরে নি।”

(৮)

মারিও ক্লিনিকে আপাদমস্তক ভালো করে দেখে নিয়ে প্রবীর পাল ঈষৎ গলা খাঁকারি দিয়ে শুরু করলেন জিজ্ঞাসাবাদ। মারিওর ইতালিয়ান পাসপোর্টটা নেড়ে চেড়ে দেখলেন।
“আচ্ছা, গোড়া থেকে একটু জিজ্ঞাসা করছি। আপনার নাম?”
“মারিও ক্লিনি”, গলার স্বরটা বেশ ভেল্ভেটের মতন মোলায়েম। ইংরেজীটায় একটা ইতালীয় টান আছে যেটা শুনতে বেশ লাগে। বেশ সুদর্শন সুবেশ বছর চল্লিশেক বয়স।
“আপনি নিহত রশীদ খানকে আগে থেকে চিনতেন?”
“হ্যাঁ।”
“কি সূত্রে আলাপ আপনার নিহতের সাথে?”, উত্তর আগেই জানা, তাও রিঅ্যাকশানটা দেখার জন্য ফের প্রশ্ন।
“আমার প্রাক্তন প্রেমিকাকে লোকটা বিয়ে করে। প্রিমিটিভ পলিগ্যামাস্‌ স্কাউন্ড্রেল।”
“আই সী। তা এই বিবাহ কতদিন আগেকার কথা?”
“গতবছরের নভেম্বারে বিয়ে হয়। তার দু-মাস আগে আমায় মনিকা ছেড়ে চলে যায়।”

তিষ্যার বেশ অবাক লাগল। এমন এলিগ্যান্ট ইতালিয়ান ছেড়ে মধ্যবয়সী রশীদের প্রেমে পড়ল সেই না-দেখা মনিকা? মনিকা নিজে দেখতে কেমন কে জানে? রশীদকে যে দেখতে ভালো নয় সে তো দেখাই যাচ্ছে। অবশ্য ব্যাথায় আর বিস্ময়ে কুঁকড়ে থাকা মুখটা এমনি সময়ে কিরকম দেখতে সেটা এখনো মনে মনে রি-কন্সট্রাক্ট করতে পারেনি তিষ্যা।

“আপনি আজকে ফ্লাইটে রশীদের সাথে দেখা করতে চাইছিলেন কেন?”

সামান্য অপ্রস্তুত মনে হল মারিওকে। তবে সেটা এক মুহূর্তের জন্য। পরক্ষনেই হেসে বললেন, “খুন করতে না। এমনিই দেখা করতে চাইছিলাম।”

“দেখুন সত্যি কথা এখন আমাদের না বলতে চাইলে পরে কিন্তু অনেক হাঙ্গামা পোয়াতে হবে।”
“বললাম তো, এমনিই দেখা করতে চাইছিলাম। বোর্ডিং-এর সময় প্ল্যাটিনাম গেস্টদের যখন বোর্ড করাচ্ছিল তখন দেখলাম রশীদকে। তাই ভাবলাম পরে গিয়ে কিছু কথা বলে আসি। মনিকা এখন আশ্চর্যভাবে পুরো পর্দানসীন হয়ে গেছে আর ইমেল থেকে আরম্ভ করে কোন কমিউনিকেশানই করছে না আগেকার বন্ধুদের সাথে। আমার ধারণা ওই রাস্কেলটা ধর্মের ধুয়ো তুলে ওকে এসব থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। তাই দুকথা শুনিয়ে দিতে চেয়েছিলাম আর জানতে চাইব ঠিক করেছিলাম আসল ব্যাপারটা কি।”
“বোর্ডিং-এর সময় আপনি সর্বসমক্ষে রশীদ-কে যে হুম্‌কি দিয়েছিলেন সেটারই কি পরিণতি এইটা?”
“খুন করার ইচ্ছে থাকলে যে পাঁচশো লোকের সামনে হুম্‌কি দিতে নেই সেটুকু বুদ্ধি আমার আছে মিস্টার প্যাল। দু নত ইন্সাল্ত মাই ইন্তেলিজেন্স।”
“রাগের বশে লোকে অনেকসময় এমন অনেক কাজ করে যেটা তাদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়না। আপনি রশীদকে ‘দেখে নেব’ বলে বোর্ডিং গেটে শাসান এবং সেই দেখে নেওয়ার সুযোগ এসে যায় রশীদের নিভৃত ফার্স্ট ক্লাস ক্যাবিনে।”
“সর্বৈব মিথ্যে। গার্ল-ফ্রেন্ড ছেড়ে চলে গেলে লোকে সভ্য সমাজে খুন করে বলে কস্মিনকালেও শুনিনি। বড়জোর গালিগালাজ করে। আমার ধারণা মনিকাকে ওই বর্বরটা সবরকম কমিউনিকেশান করা থেকে বিরত রেখেছে। শুধু আমার সাথে না, ওর কোন বন্ধুই এখন ওর সাথে আর যোগাযোগ রাখতে পারছে না। ফেস্‌বুক, টুইটার, লিঙ্ক্‌ড্‌ইন, গুগ্ল, কোত্থাও পাত্তা নেই মনিকার। এই প্রিমিটিভ বিস্টটাকে সেটাই ভালো করে বুঝিয়ে দিতে চাইছিলাম যে মনিকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ও এটা করতে পারেনা। তবে আমার অন্য কোন গ্রাজ নেই ওর ওপর। মনিকা নিজের ইচ্ছেয় ওকে বিয়ে করেছে। জানত যে রশীদের আগে একটা অল্রেডি বউ আছে। জাস্ট পলিটিক্যালি ইনফ্লুয়েনশিয়াল বলে মনিকা এই ডিসিশান নিয়েছিল নিজের থেকে তিরিশ বছর বয়স বেশী কাউকে বিয়ে করার। কাজেই তার জন্য আমি রশীদকে খুন করতে যাব কেন?”

“আপনার পাস্‌পোর্ট তো ইতালির। আপনি কি ইজিপ্টেই বসবাস করেন?”
“হ্যাঁ”
“রশীদের দ্বিতীয় স্ত্রী অর্থাৎ আপনার প্রাক্তন প্রেমিকাও কি বিয়ের আগে ওখানেই থাকতেন?”
“হ্যাঁ”।
“আচ্ছা, এবার সরাসরি খুনের প্রসঙ্গে আসি।”
“হ্যাঁ।”
“সোয়া তিনটে নাগাদ আপনি কি করছিলেন?”
“কোন সওয়া তিনটে? কায়রোর?”
“হ্যাঁ।”
“দেখুন, সময় দেখিনি। এইসব ইন্টার্ন্যাশানাল ফ্লাইটে অত সময় বোঝাও যায়না। নামার আগে স্রেফ ঘড়িটা ডেস্টিনেশান সিটির সাথে মিলিয়ে নিয়ে নেমে পড়ি।”
“ভেবে বলুন। মনে রাখবেন এইটাই আপনার অ্যালিবাই হিসেবে কাজ করবে।”
“সত্যি মনে নেই। বসে বসে কোন মুভি দেখছিলাম।”
“আমাদের কাছে খবর আছে আপনি সেই সময় ফার্স্ট ক্লাসে রশীদের ক্যাবিনে ছিলেন। আপনাকে ঢুকতে দেখেছে ক্যাবিন-ক্রু।” হাল্কা করে মিথ্যেটা ভাসিয়ে দিলেন হাওয়ায় প্রবীর পাল। যদি লেগে যায়।
আঁতকে উঠে মারিও বলল, “দ্যাট্‌স্‌ আ ড্যাম লাই! আমি মোটেই রশীদের ক্যাবিনে যাইনি। ইন্‌ফ্যাক্ট আমি জানিও না ও কোন ক্যাবিনে ছিল। হ্যাঁ আমি একজন এয়ার-হোস্টেসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেম বটে, কিন্তু সে উত্তর দেয়নি প্রাইভেসি রুল দেখিয়ে।”
“আপনি ফার্স্ট ক্লাস এরিয়ায় সেই সময় ছিলেন না বলছেন? ফার্স্ট ক্লাসের রেস্ট্রুম ইউজ করেননি আপনি? আপনার সাথে এই ব্যাপারে কোন ক্যাবিন-ক্রুর কোন কথাবার্তা হয়নি বলতে চান?”
আমতা আমতা করে মারিও বলল, “না মানে, সে মানে আমি অনেক্ষন একটানা মুভি দেখছিলেম আর হঠাৎ যখন হুঁশ হল, খেয়াল হল যে আমার একবার খুব আর্জেন্টলি টয়লেটে যেতে হবে। তখন হুড়মুড়িয়ে উঠে দেখি যে দু-দুটো রেস্টরুমই অকুপায়েড। তাই তখন ফার্স্ট ক্লাসের রেস্টরুমগুলো দেখতে গেছিলাম। ভেক্যান্ট দেখে একটায় ঢুকে পড়েছিলাম। ব্যাস্‌ এই পর্যন্তই।”
“ইকনমি ক্লাসের টয়লেটগুলোতে ঢুঁ মারার ইচ্ছা হয়নি? ইকনমি ক্লাসে তো সংখ্যায় অনেক বেশী টয়লেট ছিল।”
“ফার্স্ট ক্লাসে আমার প্রাক্তন প্রেমিকার বর্তমান স্বামী খুন হবে জানলে আমি ইকনমি ক্লাসের টয়লেটে ঢুঁ মারতাম পাক্কা!”, বেজার মুখে মারিওর মন্তব্য।
“আপনি কি কোন বিশেষ রকম ছুরি নিয়ে ফ্লাইটে উঠেছিলেন?”
“না। ফ্লাইটে ছুরি নিয়ে আমায় উঠতে দেবে কেন? আর আমিই বা উঠব কেন?”
“ঠিক ঠিক জবাব দিন। স্টিলেটো নিয়ে আপনি ট্র্যাভেল করছেন কি?”
“না।”
“আমাদের কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে খুনটায় যে ছুরি ব্যাবহার করা হয়েছে সেটা ইতালীর প্রসিদ্ধ ছুরি স্টিলেটো।”
“আর আমি ইটালিয়ান বলে আপনি ডিডিউস্‌ করলেন যে একমাত্র আমিই ওই ছুরি ক্যারি-অন্‌ লাগেজে করে নিয়ে আসতে পারি?” বাঁকা হেসে মারিও বলে উঠলেন, “এইরকম একটা ডিস্ক্রিমিনেটরি অ্যালেগেশান আনলে কিন্তু আমি আমার ইটালিয়ান কন্স্যুলেটের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হব।”
“ঠিক আছে। বেশী গরম হওয়ার কোন কারণ নেই। দ্য ল উইল্‌ টেক ইট্‌স্‌ ওন কোর্স। আপনি এখন আসতে পারেন। পরে আবার দরকার হলে ডাকব।”

মারিও বিদায় নিতে প্রবীর ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার দিকে ফিরে বললেন, “কি মনে হয় মেঘনাদবাবু? আপনি তো পাব্লিক সাইকোলজি বেশ গুলে খেয়েছেন। মারিও সত্যি বলছে? বেশ কুল কাস্টমার মনে হল।”
“হোল ট্রুথ বলছে কিনা বলতে পারব না। তবে একেবারে ফ্লাইটে এসে ইতালীয় ছুরি ব্যাবহার করে খুন করার মত কাঁচা কাজ করবে না সেটা বলতে পারি। শুনেছি ইতালীয়রা বেশ ইম্পালসিভ হয়, তবে এই খুনটা তো আর ইম্পালসিভ হত্যা নয়, ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে খুন বলেই মনে হচ্ছে, কারণ ফ্লাইটে কারওর সাথে তো আর রশীদের ঝগড়া হয়নি।”
“কিন্তু কি আশ্চর্য, এত ঘন্টা হয়ে গেল এখনো স্টিলেটোটা খুঁজে বের করা গেলনা?”, তিষ্যার অধৈর্য প্রশ্ন।
“ইকনমি ক্লাসেও নিশ্চয়ই তল্লাসি চালানো হচ্ছে?”
“হ্যাঁ, তা তো হবেই। স্টিলেটোটা যেকোন জায়গাতেই লুকিয়ে ফেলতে পারে আততায়ী। এমন কি রেস্টরুমের সব কমোডের চেম্বার আমরা পাম্প করে তল্লাসি চালাচ্ছি যে কোন ছুরি কেউ ফ্ল্যাশ করে দিয়েছে কিনা দেখতে। কাজেই ধরা পড়বেই।”
“এর পর কাকে ডাকতে চান জিজ্ঞাসাবাদের জন্য?”
“রশীদের বডি-গার্ড মোবারক সালামকে ডাকতে পারি, কি বলেন?”, প্রবীর পাল ম্যাজিশিয়ান গুপ্তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। প্রায় সাথে সাথেই ওনার সেল্‌ফোন বেজে উঠল। ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের টেলিকম ডিপার্টমেন্টের গণেশান ফোন করেছে। প্রবীর বলে উঠলেন, “হ্যাঁ, বল গণেশান, কিছু খবর আছে?”
“হ্যাঁ স্যার। আপনি যে টেলিফোন নাম্বারগুলোর লগ্‌ দেখতে দিলেন তার মধ্যে একটা সোর্স আর ডেস্টিনেশান দুটোই ম্যাচ করেছে।”
“বলকি?”
“হ্যাঁ। রশীদের দেহরক্ষী মোবারক সালাম ইন্টার্ন্যাশানাল ডায়ালিং করেছে রশীদের ছেলে ইমরানকে। শুধু তাই নয়, কথাবার্তা ইংরেজিতেই হয়েছে আর বেশ সন্দেহজনক। রেকর্ডিং-এর সারসংক্ষেপ শুনবেন?”
“তুমিই বলে দাও না শর্টে।”
“মোবারক ফোনে ইমরানকে বলছে যে একটা ফর্চুনেট অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। রশীদ স্ট্যাব্‌ড্‌ টু ডেথ। ইমরান যেন আর টেনশান না নেয় কোন ব্যাপারে।”
“হুম্‌, রশীদের মৃত্যুকে ফর্চুনেট বলবে কেন? সর্ষের মধ্যেই ভূত মনে হচ্ছে। দেহরক্ষীই হয়ত ছেলের কাছ থেকে টাকা খেয়ে খুন করেছে। আরমান তো বলেই ছিল যে বাপ-ছেলের সম্পর্ক একেবারেই সুবিধার নয়, আর ছেলেকে নিজের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দিয়েছিল রশীদ। কাজেই যদি আরমানের কথা সত্যি বলে ধরে নিই তাহলে কিন্তু ছেলের মোটিভটা খুবই গুরুতর। ওয়েপন আর অপার্চুনিটি নিজের দেহরক্ষীর থেকে বেশী কারও থাকে না। কাজেই দুইয়ে দুইয়ে চার করলে এটার একটা সমাধান আমি দেখতে পাচ্ছি।”
“কিন্তু ওয়েপনটা তো এখনো পাওয়া গেলনা?” তিষ্যা আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিল।
“দেখি মোবারকের সাথে কথা বলে। ”

--------আগামী সংখ্যায় সমাপ্য--------------------------------


মন্তব্য

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

অনেকদিন পরে একটা বড়গল্প শেশ করলাম দুজনে মিলে। আগের বছর শুরু করেছিলাম, আর শেষ করার সময় পাচ্ছিলাম না। পরের সপ্তাহে বাকি অংশ আপ্‌লোড করে দেব।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

মন মাঝি এর ছবি

আরে, ফাটাফাটি তো! এক্কেবারে অত্যাধুনিক ক্রাইম স্টোরি দেখি! সিকি ভাগ পড়েই বুঝলাম সময় নিয়ে বেশ জমিয়ে পড়তে হবে। বাকিটা তাই পরে পড়ব, তবে এখনই সাধুবাদ জানিয়ে গেলাম।
চলুক চলুক

****************************************

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

অত্যাধুনিক কিনা জানিনা, তবে ক্রাইম থ্রিলার বটে... উত্সাহ দেওয়ার জন্যে অনেক আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

স্পর্শ এর ছবি

অনেকদিন পর আয়েস করে পড়ার মত একটা গল্প। উত্তম জাঝা!
পরের পর্বও রেডি জেনে খুশি হলাম। কিছু অনুমান করতে পারছি। কিন্তু আপনারা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নেয়ান সেই অপেক্ষায় থাকি বরং।

দুজন মিলে কীভাবে যে গল্প লেখেন, প্রসেসটা নিয়ে কৌতূহল হয়। হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

ঈপ্সিত/চম্পাকলি  এর ছবি

দুজনে মিলে কিকরে গল্প লিখি, সেই নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম একবার।... সচলেই আছে আমাদের ব্লগে।
ভালো লেগেছে জেনে পুলকিত।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাদের গল্পের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ঠাস বুনোট আর গতিময়তা। কিছু অসঙ্গতির কথা (আমার চোখে) উল্লেখ করি ‍-

ধর রশীদের ছেলে। রসীদ তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দিয়েছে। প্রেমিকা বা বাবার সম্পত্তির মধ্যে তাকে যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে।

সেক্রেটারি আরমান তো রশীদ সম্পর্কে এতো কিছু বলেনি প্রবীরকে, তাহলে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা জানলো কিভাবে?

একজন ফরেন ডিপ্লোম্যাটের খুনের জিজ্ঞাসাবাদে একজন জাদুকর ও তার কন্যার (অথবা পুত্র) উপস্থিতি কতটা যৌক্তিক?

এই খটকাগুলো বাদে পুরো গল্পটাই টানটান উত্তেজনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অপেক্ষায় আছি শেষ পর্বের থ্রিলিং সমাপ্তির জন্য।

ফারাসাত

অতিথি লেখক এর ছবি

ফারাসাত, আমার প্রশ্নই আপনি বলে দিলেন। তিষ্যর উপস্থিতি হটাত হটাত। এমনকী ''নো ট্রেস্পাস'' অঞ্চলেও। এটা একটু খটকা লেগেছে। তবে যেহেতু গল্প শেষ হয়নি তাই দেখা যাক আগামি পর্বে কী ঘটে।

Shah Waez (শাহ্‌ ওয়ায়েজ।)
Facebook

..............................................................................................
কোথাও নেই ঝুমঝুম অন্ধকার
তক্ষক ডাকা নিশুতিতে
রূপকথা শুনে শিউরে উঠে না গা
স্বপ্নে আমার শরীরে কেউ ছড়ায় না শিউলি ফুল
আলোর আকাশ নুয়ে এসে ছোঁয় না কপাল

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আগামী পর্বে তিশ্যার উপস্থিতি নিয়ে কিছু নতুন থাকবে না. এটাকে গল্পের গরু বলেই মেনে নিলে খুব খুশি হব. খাইছে

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনাদের গল্প সব সময়েই উপাদেয় হয় বলে অপেক্ষা করে থাকি।

কিছু বানানরীতির ব্যাপারে একটু সতর্ক হবেন। "তিন চার টে" > তিন-চারটে, "কেস গুলো তে" > কেসগুলোতে। কমা দাঁড়ি ইত্যাদির আগে স্পেস হয় না।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আমাদের বাবা মা কমা দাঁড়ি,বানানরীতির দেখে দেন। হাসি । তারা এখন এদেশে নেই বলে বড্ড ভুল হচ্ছে। শিগগিরি ওরা আসবেন। তখন ভুলের পরিমাণ কমে যাবে। গল্প লেখাটা আমাদের প্রায় পারিবারিক প্রজেক্ট হয়ে যাচ্ছে। হাসি

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

মরুদ্যান এর ছবি

প্রবীর এত ভাল পুলিশ অফিসার, কিন্তু কোন চেষ্টা করার আগেই কেন তাকে গুপ্তার সাহায্য নিতে হয়? এরকম অবাস্তব তদন্ত কাহিনী হজম হয়না কেন জানি।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

গল্প খুব ভাল না লাগলেও মন্তব্য করেছেন সেজন্য ধন্যবাদ। প্রচলিত গোয়েন্দা কাহিনী অনেক সময় ই বাস্তবের সীমা অতিক্রম করে। অনেক ভালো পুলিশ অফিসাররা প্রাইভেট গোয়েন্দার সাহায্য নেন। ভালো লাগা না লাগাটা অবশ‌্য নিজস্ব রুচি। আমার যেমন ফেলুদার গল্প গুলো বেশ লাগে যদিও অনেক সময় তত বাস্তব সম্মত নয়। আবার কুক্কু কলিনং পড়লাম। বাস্তব সম্মত গোয়েন্দা গল্প খুব ভাল লাগেনি।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

এক লহমা এর ছবি

গল্পে অনেক ফাঁক আছে। তবে, আমি সেগুলিতে নজর ব্যস্ত না রেখে পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন লাগছে, আপ্নদের গল্প ভাল লাগে চলুক , পরের পর্বের অপেক্ষায় পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম
ইসরাত

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- আশা করি শেষ পর্বে ভাল লাগাটা ধরে রাখতে পারব।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

বাহ! ছুটির দিন সন্ধ্যায় জমিয়ে বসে পড়ার মতো রহস্য-গল্প।

একটা জিনিস একটু পরিষ্কার করে দিলে হতো, কোথায় বসে সাক্ষাৎকারগ্রহণ পর্ব সারা হচ্ছে? প্যাসেঞ্জারদের থেকে আলাদা কোন অংশে করতে হবে কাজটা, কিন্তু কোথায় ঢুকছেন আর বেরুচ্ছেন সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা, তা উল্লেখ করা হয়নি।
আর আরেকটা জিনিসে খটকা লাগলো, যাদুকরের কন্যা ইন্টারভিউতে উপস্থিত আছেন, এটা প্রথমে বোঝা যায়নি, তার সাথে পুলিশের গোয়েন্দা প্রবীর সাহেবের কোন কুশল বিনিময়ও ছিলো না। এই চরিত্রগুলোর আগের গল্প পড়া হয়নি, তাই ব্যাখ্যা আছে কিনা জানি না, তবে ব্যাপারটা একটু অবাস্তব - ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা না হয় সাহায্য করছেন পুলিশের গোয়েন্দা প্রবীরকে, কিন্তু একজন ডিপ্লোম্যাটের খুনের তদন্তে সন্দেহভাজনদের সাক্ষাৎকারে তার মেয়ের উপস্থিতি সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বা পুলিশ কর্তৃপক্ষ কীভাবে দেখছে?

পরের/শেষপর্ব তাড়াতাড়ি আসবে আশাকরি। অপেক্ষায় থাকলাম। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি এর ছবি

যাদুকরের কন্যার উপস্থিতি টা অবাস্তব হতে পারে সেটা লেখার সময় মনে হয়েছিল। তবে ফেলুদা , বোমকেশের হাত ধরে তোপসে অজিত ও অনেক জায়্গায় উপস্থিত ছিল যেখানে তাদের থাকাটা বাস্তবে সম্ভব নয়। গোয়েন্দা গল্পের রীতি মত গোয়েন্দার সহকারীর চোখ দিয়েই গল্পটা বলার চেষ্টা করেছি। গল্পে ফাঁক রয়েছে সেটা মন্তব‌্য থেকে টের পাচ্ছি। মনে হচ্ছে আরো ঘষামাজার দরকার ছিল। শেষপর্ব রেডি, আগামী শুক্রবার পোষ্ট করব।

ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

সত্যজিত সবসময়ে তোপসের উপস্থিতির জন্যে অনুমতির বা প্রয়োজনীয়তা ফেলুদাকে দিয়ে উল্লেখ করিয়ে নিয়েছেন। ব্যোমকেশের অজিতের উপস্থিতিও যতদূর মনে পড়ছে তাই। হুট করে মাঝে তিষ্যার উপস্থিতিটা খেই হারাবার উপক্রম করেছিলো পড়বার সময়ে, তাই বললাম। গল্প কিন্তু ভালো লাগছে। আগামীকালের অপেক্ষায় আছি। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথম পর্ব শেষ করলাম। সব থ্রিলার পাঠকের মতোই খুনি কে সেটা অনুমান করার চিন্তাও করছিলাম! আমার মনে হচ্ছে 'মনিকা' খুনি!! যদিও মনিকার উপস্থিতি এখানে নেই। স্টিলেটোটাও খুঁজে পাওয়া যাই নি। দেখি পরের পর্বটা শুরু করি! দেঁতো হাসি

সুবোধ অবোধ এর ছবি

গোয়েন্দা কাহিনী লেখা অনেক পরিশ্রমের ব্যাপার। আমার দ্বারা মনে হয়না হবে এই কর্ম! তবে গোয়েন্দা গল্প পড়তে খুবই ভাল লাগে। এটা পড়তেও বেশ লাগছে। চলুক
ছোটখাটো কিছু অসংগতি থাকলেও সব মিলিয়ে বেশ ভাল। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করছিলাম একসাথে পড়ব বলে। যাই এখন, শেষ করিগে... হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।