আগেকার পর্বগুলি এইখানেঃ
পর্ব ১ -
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46479
পর্ব ২ -
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46554
পর্ব ৩ -
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46617
পর্ব ৪ -
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46698
পর্ব ৫ –
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/46791
~যবনিকা~
দুদিন পর এক সকালে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা তিষ্যাকে বললেন “আমাদের যাদুবিদ্যায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ন বিদ্যা কি বলত?”
তিষ্যা ব্যস্তভাবে বলল “এখন আমার ম্যাজিক শেখার সময় নেই বাবা, সামনে পরীক্ষা।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “ম্যাজিক শেখাচ্ছি না। যে বিদ্যার কথা বলছি সেটা তুই জানিস, মন্ত্রগুপ্তি। যদি তোর মন্ত্রগুপ্তি রপ্ত হয়ে থাকে তবে দশটা নাগাদ আমার অফিস ঘরে আসিস।“
বাবার হেঁয়ালিতে তিষ্যা অভ্যস্থ্, তবু ওর বেশ কৌতুহল হল। দশটার সময় বাবার অফিস ঘরে পৌছে দেখে দুজন মহিলা বসে আছেন। পরিচয় নেই, কিন্তু অতি পরিচিত মুখ। “ওস্তাদের মার শেষ পাতে” রিয়েলিটি শো এর উপস্থাপিকা রিমি আর সীজন টু-এর রানার্স-আপ্ প্রবীনা প্রতিমা পালিত।
তিষ্যা অবাক হয়ে বলল “আপনারা হঠাৎ?”
রিমি বলল “আমাকে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা ফোন করে আসতে বললেন। এসে দেখি প্রতিমাদিও এসেছেন।”
রিমিকে দেখে মনে হল ও একটু অস্বস্তিতে রয়েছে। প্রতিমা পালিত একটু অবসন্ন ভাবে বসে আছেন। তিষ্যাকে দেখে সামান্য হাসলেন। এই সময় ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা ঘরে ঢুকলেন।
এই ঘরটা তিষ্যাদের বিশাল বাড়ির শেষ প্রান্তে। নামে অফিসঘর হলেও এটা আসলে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার যাদুবিদ্যা সাধনার ঘর। তাঁর বিশ্ববিখ্যাত ম্যাজিক গুলি এই ঘরেই জন্মলাভ করেছে। এঘরে সচরাচর বাইরের লোক কেউ আসেনা। তিষ্যাও ঢুকতে পায় শুধু ম্যাজিক সেখার সময়। এঘরে বাবা দুজন বাইরের লোককে ডেকেছেন দেখে তিষ্যা বেশ আশ্চর্য হল।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা প্রতিমা পালিত আর রিমিকে বললেন, “কিছু মনে করবেন না; কিছু জরুরি আর গোপনীয় আলোচনার জন্য আপনাদের ফোন করেছিলাম। আপনাদের অনুমতি থাকলে আজকের আলোচনায় তিষ্যাকেও রাখতে চাই। আমার কাজ এবং জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ কথা তিষ্যাকে জানাই। তাই আজকের আলোচনায় ওকেও রাখতে চাই।”
রিমি অধৈর্য্য স্বরে বলল “কিন্তু আলোচনাটা কি নিয়ে কিছুই তো বুঝতে পারছি না।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “বলছি, কিন্তু তার আগে একটা পুরোনো ঘটনা মনে করতে চাই।”
প্রতিমা পালিত বললেন “কথাবার্তা শুরু হবার আগে এটা একটু রাখো বাবা, সামান্য ছানার কালিয়া বানিয়ে এনেছি, তোমার মেয়ে তো আমার হাতের রান্না খায়নি, তোমারও ভালো লাগবে হয়ত।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “অসংখ্য ধন্যবাদ।”
তিষ্যার ছানার কালিয়ার নামেই জিভে জল এল। কিন্তু ও মুখ ফিরিয়ে দেখল বাবার মুখ গম্ভীর।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে করতে বললেন “বছর বারো আগে কলকাতার একটা নামী হোটেল ‘বেঙ্গল এক্সপ্রেস’এ একটা মর্মন্তুদ অগ্নিকান্ড ঘটে। হোটেলের ব্যাঙ্কয়েট হলে একটা জন্মদিনের পার্টি চলছিল। নিউ-আলিপুরের বিখ্যাত পি সেন জুয়েলার্সের মালিক প্রকাশ সেনের মেয়ে সান্ত্বনার জন্মদিন উপলক্ষে ওই হোটেলে প্রকাশ সেনের আত্মীয় স্বজন আর সান্ত্বনার স্কুলের বন্ধুরা জড় হয়েছিল। আগুনে পুড়ে বারোজন মারা যায়, যাদের মধ্যে এগারো জন টিন এজার, সান্ত্বনা আর ওর স্কুলের বন্ধুরা। আর একজন রেস্টুরেন্টের কর্মী। বাকি পাঁচজন সারাজীবনের মত পঙ্গু হয়ে যায়, তারাও সান্ত্বনার ক্লাসমেট। সেই সময় মিডিয়া এই ঘটনা নিয়ে ঝড় তোলে। কিন্তু দুচার মাস পরে সবাই ভুলে যায়। শুধু ভুলতে পারেনা তারাই যাদের প্রিয়জন এই দুর্ঘটনার স্বীকার হন।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা দম নিতে থামেন, রিমি একটু উশখুশ করে, প্রতিমা পালিত স্থির হয়ে বসে আছেন। তিষ্যার মনে হয় একটা নাটক শুরু হতে চলেছে, সে প্রতিক্ষা করে।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা আবার শুরু করেন। “ঘটনাচক্রে প্রায় বারো বছর বাদে এই ঘটনার সাথে জড়িত কয়েকজন “ওস্তাদের মার শেষ পাতে” রিয়েলিটি শোতে জড় হন। তাদের মধ্যে দু জনের কথা অনেকেই জানেন। বান্টি ঘোষ, বেঙ্গল এক্সপ্রেস হোটেলের মালিক। অনেকের মতেই অগ্নিকান্ড ও সকলের মৃত্যুর জন্য বান্টি ঘোষ-ই দায়ী। বান্টি অতিরিক্ত লাভের আশায় হোটেলে আগুন নেভাবার ব্যাবস্থা রাখেনি। ঢোকার পথ জুড়ে ছিল হোটেল সংলগ্ন বে-আইনি পার্কিং লট। এমনকি বারোটা প্রাণ যাবার পরেও বান্টি ঘোষ একেবারেই অনুতপ্ত ছিল না। বরং উঠেপড়ে লেগে প্রমান করেছিল আগুন লাগাবার দোষ কিছুতেই হোটেলের মালিকের ওপর বর্তায় না বরং উপ্সথিত অতিথিদের ওপর বর্তায়। এই নিয়ে আদালতে কেস চলে বেশ কয়েক বছর। মিডিয়া কিছুদিন হইছই করে ভুলে যায়। হাইকোর্টে বান্টি জিতে যায়।
এই ঘটনার ভিলেন বান্টি হলে ভিক্টিম ছিল ঝিলাম। ওর পিসেমশাই বেঙ্গল এক্সপ্রেস হোটেলের কর্মচারী ছিলেন। আগুন লাগতে ভদ্রলোক উদ্ধারের জন্য ছুটে যান কিন্তু নিজেই আগুনে পুড়ে মারা যান। বান্টি ওঁর পরিবারকে ক্ষতিপুরন দেওয়া দূরের কথা সহানুভুতি পর্যন্ত জানায়নি। উলটে ‘ওনার পাকামি করে আগুনে ঝাঁপ দেওয়া উচিত হয়নি’ এইসব বাজে মন্তব্য করে ওদের পরিবারের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়। ঝিলামের মনে এই নিয়ে ক্ষোভ জমে আছে।
এই দুজনের কথা আমি ছাড়াও আরও অনেকেই জানেন। কিন্তু আমি ঘটনাচক্রে আরো দুজনের কথা জানি যারা ঐ রিয়েলিটি শো তে উপস্থিত ছিলেন এবং বাংলার মুখ হোটেলের অগ্নিকান্ডের সাথে জড়িত। প্রকাশ সেনের মেয়ে সান্ত্বনা পড়ত বিদ্যাভবন মেমোরি্যালের ক্লাস টেনে।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা হঠাৎ রিমির দিকে ফিরে বললেন “সান্ত্বনা তোমার ক্লাসমেট ছিল তো?”
রিমি চমকে ওঠে তারপর সামলে নিয়ে বলে “আমি এলাহাবাদ থেকে টেন পাশ করেছি। হ্যাঁ বিদ্যাভবনে ছোটবেলায় কয়েক বছর পড়েছি, অত মনে নেই।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বলেন “আমি স্কুলে খোঁজ নিয়ে জেনেছি তুমি ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর স্কুল ছেড়েছ। ওই ঘটনার ঠিক পড়েই।”
রিমি উত্তেজিত হয়ে বলে “হ্যাঁ তাই, খারাপ স্মৃতি মনে রাখতে চাইনা , ভুলে গেছি।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “পুরোপুরি ভুলেছ কি না পরে দেখা যাবে। যাই হোক আমাদের রিয়েলিটি শোতে আরেক জন ছিলেন যিনি এই ঘটনার সাথে জড়িত। বিদ্যাভবন মেমোরি্যালের শিক্ষিকা প্রতিমা পালিত।”
তিষ্যা চমকে প্রতিমা পালিতের দিকে তাকালো। কিন্তু দেখল উনি ভাবলেশহীন মুখে বসে আছেন।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা প্রতিমা মাসিমাকে বললেন “ওস্তাদের মার শেষ পাতে শো তে রিমি অনেকবার আপনাকে প্রাক্তন শিক্ষিকা বলে উল্লেখ করেছ , কিন্তু কোন স্কুলের শিক্ষিকা সেটা সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছে। আপনাদের যে আগে পরিচয় আছে সেকথাও কাউকে বুঝতে দেননি।“
প্রতিমা পালিত কিছু বললেন না। ওনার ভাব দেখে মনে হল উনি বলতে আসেননি শুনতে এসেছেন। রিমি বলে উঠল “আমাদের আগে থেকে জানাশোনা আছে এটা শো-তে জানালে সবাই ভাবত আমি প্রতিমা মাসিমা কে পার্শিয়ালিটি করছি, তাই জানাই নি।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা রিমি কে কিছু বললেন না। প্রতিমা মাসিমা কে বললেন “আপনার পূর্ব পরিচয় নিয়ে কেউই মাথা ঘামায়নি। এমন কি বান্টি ঘোষের রহস্যজনক মৃত্যুর পর পুলিসের রুটিন এনকোয়ারিতেও প্রতিমা পালিতে-র ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কেউ ঘাঁটাঘাঁটি করেনি। কারণ সাদামাটা কাপড় পরা , বড়ি খোঁপা বাঁধা নিছক মাসিমা টাইপের মহিলার সাথে বান্টির মত ধুরন্ধর ব্যাবসাইয়ীর কোনো লেনদেন থাকতে পারে এটা কারো মাথাতে সেভাবে আসেনি। আপনি আর রিমি খুব যত্ন করে এই ‘মাসিমা’র ভাবমুর্তিটা তৈরী করেছিলেন। রিমি আপনার শিক্ষিকা পরিচয়টা হাল্কা ভাবে ছুঁইয়ে গেছিল। বারে বারে দর্শকদের মনে করিয়ে দিচ্ছিল প্রতিমা পালিত আসলে সাধারণ, ঘরোয়া, সেকেলে, স্নেহপরায়না মহিলা। ঘরসংসারের বাইরে সেরকম কিছু জানেন না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে প্রবীনা নবীনার লড়াই জমিয়ে শো এর টি-আর-পি বাড়ানোই এর উদ্দেশ্য। ডিরেক্টরও তাই চাইছিলেন, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, এই প্ল্যানটা রিমি আর আপনি ছকেছিলেন অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে।”
রিমি প্রতিবাদ করে বলল ‘কি সব যা-তা বলছেন আপনি? আমাদের কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। কি প্রমাণ করতে চাইছেন বলুন তো?”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা শান্ত ভাবে বললেন “আমি কিছু প্রমাণ করতে চাই না, তা চাইলে পুলিসে বা কোর্টে যেতাম, তোমাদের ডেকে পাঠাতাম না।“ প্রতিমা মাসিমার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললেন “ আমি শুধু আমার দুএকটা পর্যবেক্ষণের কথা আপনাদের জানাতে চাই। সি-আই-ডি অফিসার অরুন বাসুর বাড়িতে আমরা ফাইনাল পর্বের সমস্ত রেকর্ডিং খুঁটিয়ে দেখছিলাম। পুলিস তন্নতন্ন করে দেখেও সন্দেহজনক কিছু পায়নি। শুধু আমার যাদুকরের দৃষ্টিতে একটা হাতসাফাই ধরা পড়ে গেছে।“
তিষ্যার মনে হল ঘরের বাতাসে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। তিষ্যার চোখেমুখে তীব্র কৌতুহল, রিমির চোখে আশংকা, প্রতিমা মাসিমা স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা প্রতিমা পালিতের দিকে তাকিয়ে বললেন “ প্রথম পর্ব থেকেই দেখেছি মাঝে মাঝে খোঁপাটা শক্ত করে বেঁধে নেওয়াটা আপনার একটা মুদ্রাদোষ। গ্র্যান্ড ফাইনালের তৃতীয় রাউন্ডে ডেসার্ট রান্নার সময় আপনি খোঁপা থেকে কিছু একটা বার করে হাতের মুঠোয় নেন। এই হাতসাফাইটা আমি ছাড়া কেউ ধরতে পেরেছে বলে মনে হয়না। আপনার কায়দার তারিফ করতে হয়। বার বার প্র্যাক্টিস ছাড়া এরকম কৌশল রপ্ত করা সম্ভব নয়। দেখুন আমাদের ম্যাজিকের পরিভাষায় যেকোনো ট্রিকের তিনটে ধাপ আছে। প্রথম ধাপকে বলা হয় ‘প্লেজ’। এই ধাপে যাদুকর কোন সাধারণ জিনিস দর্শককে ভালো করে পরীক্ষা করতে বলে, এই যেমন ধরুন কোন টুপি, বা ফুলদানি, বা তাস ইত্যাদি। দর্শককে দেখানোর উদেশ্য হ’ল এটা প্রমাণ করা যে জিনিসটা রীয়াল ওয়ার্ল্ডের, কোন চালাকি নেই। দ্বিতীয় ধাপকে বলে ‘টার্ন’। এই সময়ে যাদুকর জিনিসটাকে ‘ভ্যানিশ’ করে দেয়! এক্ষেত্রে প্লেজ আর টার্ন আপনি মিশিয়ে দিয়েছেন। খোঁপাটাই আপনার প্লেজ। বারবার দর্শকের সামনে খোঁপা আলগা করেছেন আর শক্ত করে বেঁধেছেন, তাই দর্শক প্রথম থেকেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে এই মুদ্রাদোষে। টার্ন আপনি করেছেন, কিন্তু দর্শকের সামনে থেকে কিছু ভ্যানিস করে লুকিয়ে রাখেননি, আগে থেকেই খোঁপায় কিছু লুকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এটা শেষ ধাপ নয়। আসল কেরামতি হল সেই জিনিসটা স্থানবদল করে ফিরিয়ে আনা। তাই ম্যাজিকের তৃতীয় আর শেষ ধাপকে বলে ‘প্রেস্টিজ’, এটাই সবথেকে কঠিন, আর এর পরেই হাততালির শব্দে কান পাতা দায় হয়। এখানে আপনি হাততালি কুড়াবার আশায় ম্যাজিক দেখাননি। কিন্তু আপনার প্রেস্টিজের নৈপুণ্য অনবদ্য। বাঘা বাঘা পুলিশ অফিসারের চোখকে ঘোল খাইয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আপনার দুর্ভাগ্য আপনার এই কৌশলের ক্যামেরাবন্দি রাশ প্রিনটটা পুলিশ ছাড়াও একজন পেশাদার যাদুকর দেখছিল। আর জানেন নিশ্চয়ই আমরা আবার চারপুরুষের যাদুকর। কাজেই আমার চোখে এই হাতসাফাইটা ধরা পড়ে।”
- “কিন্তু বাবা, আমরা তো সবাই দেখেছি প্রিন্টটা, এই হাতসাফাই তো আমরা কেউই দেখিনি”, তিষ্যার হতভম্ব প্রশ্ন।
- “তাহলেই বোঝ, তোকে কেন আরও বেশী প্র্যাক্টিস করতে বলি। তবে আরও একবার বলছি, আমিও এই কৌশলের উদ্দেশ্যে টুপি খুলছি সসম্মানে। স্রেফ অসাধারণ!” এরপর আবার প্রতিমা পালিতের দিকে ফিরে বললেন, “এখন কথা হচ্ছে আপনার হাতসাফাই এর উদ্দেশ্য কি? যদি ধরেনি আপনার উদ্দেশ্য বান্টিকে খুন করা। সেই উদ্দেশ্যে আপনি খোঁপায় করে বিষ এনেছিলেন। তাহলে একটা বড় ফাঁক থেকে যায় আপনি কিভাবে বিষ মেশালেন? এরপরের কোনো ভিডিও ক্লিপিং কোথাও বিষ মেশানোর হদিশ পাইনি। আমি ভিডিওটেপটা পুলিসের থেকে চেয়ে এনে আরো কয়েকবার দেখেছি। কিন্তু আমি আজও চর্মচক্ষে কোন বিজাতীয় বা বেক্ষাপা জিনিস মেশাতে দেখিনি। এর পরে আমি শ্যেন্দৃষ্টিতে দেখেছি আপনি খাবারে কি মেশাচ্ছেন। কিন্তু আলু, পেঁয়াজ, মাশরুম, লংকা এইসব জিনিস ছাড়া আর কোনকিছুই আপনাকে নাড়তে চাড়তে দেখিনি। তখন আমার একটা থীয়োরি মাথায় আসে। জিনিসটা কোন খাবার জিনিসের মত দেখতে নয়ত? বা আরও সাংঘাতিক একটা সম্ভাবনা মাথায় এল, জিনিসটা কোন খাবার উপকরণ নয়ত?
- তিষ্যা বলে উঠল “না, তা কিকরে হবে, অরুণ আঙ্কল তো বললই যে রান্নায় বিষ মেশালে যারাই খাবে তারাই পটল তুলবে, বেছে বেছে বান্টির বিষক্রিয়া হবে, এটা হতে পারেনা। রান্না তো আর একেক জাজের জন্য আলাদা আলাদা করে রান্না হয়নি বাবা?”
- “আমি অনেক ভেবেছি এই ব্যাপারে, জানিস? প্রথম দুটো রাউন্ডে আলাদা ভাবে কোন রান্না হয়নি, কিন্তু শেষ রাউন্ডে প্রতিমা পালিত বানালেন মাশরুম টি। বিশেষ কোন উপকরণ ব্যাবহার করেননি। জল, চা, চিনি, মাশরুম এ ছাড়া আন্য কিছু নিয়ে কাজ করেননি। এই চারটের মধ্যে কার ওপর সন্দেহ পরে?
- “মাশরুম!”, তিষ্যার প্রশ্ন।
- “হতে পারে। কিন্তু সেখানে দুটো ধাক্কা খেলাম। এক, প্রত্যকটা পদ রান্না হয়েছিল সাদা খুব কমন বাটন মাশরুম দিয়ে। থার্মোকলের বাটিতে সেলোফেন পেপারে মোড়া ডজন ডজন প্যাকেট এসেছিল সেদিন গ্র্যান্ড ফিনালের রান্নার উপকরণ হিসেবে। দূর থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মাশরুম। প্রতিমা পালিতের সামনে আমি ওই সাদা বাটন মাশরুম ছাড়া কোন দ্বিতীয় রকম মাশরুম চোখে পড়েনি। আমি আক্ষরিক অর্থে দশবার প্রিন্টটা রিওয়াইন্ড করে দেখেছি। দুই, অরুণবাবুর ব্যাখ্যা। তুই যা বললি। জল ফোটানো হয়েছে এক কেটলিতে, চাপাতা, চিনি সবকিছুই মেশানো হয়েছে এক পাত্রে, মোটের ওপর অপার্চুনিটি খুঁজেই পাচ্ছিলামনা।”
ঘরে তখন পিনপতন নীরবতা। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা এক গ্লাস জল ঢেলে খেলেন। তারপর ধীরে সুস্থে আবার শুরু করলেন। এবার যেন কতকটা নিজেকেই নিজে বলছিলেন।
- “মাশরুম নিয়ে তখন একটু পড়াশোনা করলাম। গুগ্ল্ সার্চ দিতে মাশরুম সম্পর্কে ভুরি-ভুরি তথ্য উঠে এল। আশ্চর্য হয়ে গেলাম একটা জিনিস জানতে পেরে। মাশরুম চেনা নাকি বেশ কঠিন। অনেক বিষাক্ত মাশরুম আছে যা খেলেই মৃত্যু। দেখলাম যে বিষাক্ত মাশরুম মানেই খুব রংচঙে দেখতে হবে – এই ধারণাটা নাকি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তখন ওয়েপন হিসেবে মাশরুমকেই ফাইনালআইজ করলাম। মাথায় একটা সম্ভাবনা দানা বাঁধছিল। একটা থীয়রী তৈরি হছিল ওয়েপন আর অপর্চুনিটি নিয়ে। কিন্তু ওই দুটো ধাঁধার উত্তর মিলছিলনা। আরও ভালো করে খোঁজ করতে লাগলাম গুগ্ল্এ। ব্যাস্! পেয়ে গেলাম যা চাইছিলাম। ‘ডেস্ট্রয়িং অ্যাঞ্জেল’ বা বাংলায় বললে বিনাশ-পরী। দেখতে একদম বাটন মাশরুমের মত, সাদা, নির্দোষ। পরীর মতোই নিষ্পাপ। কাজেই একি রকম দেখতে অন্য এই মারাত্মক মাশরুম খোঁপা থেকে বের করে রান্নার উপকরনের সাথে মিশিয়ে ফেলা খুব সহজ। আমি এও পড়লাম বিশ্বের যত মাশরুম পয়জনিং বা মাইসেটিজ্মে মৃত্যু হয়েছে তার সিংহভাগই নাকি এই বিনাশ-পরীর হাতযশ। আরও দেখলাম যে বিশ্বের সর্বত্রই এই বিনাশপরী পাওয়া যায়, এমনকি আমাদের বঙ্গেও। কাজেই প্রথম ধাঁধার উত্তর পেয়ে গেলাম। বাটন মাশরুমের সঙ্গে মিশিয়ে রাখা একটা ডেস্ট্রয়িং অ্যাঞ্জেল মাশরুম কিছুতেই ধরা পড়বেনা কারোর চোখে। মাশরুম এক্সপার্টের চোখেও।
- “ওয়েপন তাহলে খোঁপায় করে লুকিয়ে আনা হুবহু বাটন মুশরুমের মত দেখতে ডেস্ট্রয়িং অ্যাঞ্জেল?” তিষ্যার গলায় বিস্ময়। তারপর একটু মিইয়ে গিয়ে বলল, “কিন্তু তোমার দ্বিতীয় ধাঁধার উত্তর তো তাও পাওয়া গেলনা বাবা।”
- “তাও আছে। মনে করে দেখ প্রতিমা মাসিমা ফাইনাল পর্বের শেষ রাউন্ডে কি বানিয়েছিলেন?”
- তিষ্যা বলল “ডেজার্টে? কি একটা যেন মাশরুম টি।”
-ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “কম্বুচা মাশরুম টি। এর বিষেশত্ব হল প্রতিটা চা এর কাপে একটা করে মাশরুম ডোবানো ছিল। আমাদের বাকি তিন বিচারকের জন্য ছিল সাধারন মাশরুম, কিন্তু বান্টির চায়ে ডোবানো ছিল সেই হাতসাফাই করা বিনাশপরী। মনে আছে নিসচই কম্বুজা মাশরুম টি ডেজার্ট হিসাবে একেবারেই ফেল করেছিল। সকলে ধরে নিয়েছিল সাবেকি মাসিমা বিদেশী রেসিপি বানাতে গিয়ে ফেল করেছেন। কিন্তু তলিয়ে ভাবলে মনে হয় সাবেকী মাসিমা তো রান্নার ফিউশনেও সিদ্ধহস্ত। যিনি মাশরুমের হরগৌরীর মত ফিউশন রেসিপি আবিস্কার করতে পারেন তার পক্ষে এমন কি কঠিন ছিল মাশরুমের পায়েস বা ওই জাতীয় কিছু রাঁধা? আসলে কম্বুচা মাশরুম টি তৈরীর উদ্দেশ্যই ছিল বাকি সবাইকে বাদ দিয়ে শুধু বান্টিকে বিষাক্ত মাশরুমটা সার্ভ করা। পুলিস প্রতিটি খাবারের স্যাম্পেল নিয়ে টেস্ট করে দেখেছিল। কম্বুজা মাশরুম টি এর স্যাম্পলও নিয়েছিল। কিন্তু প্রতিটা কাপ থেকে আলাদা করে স্যাম্পল নেবার কথা তাদের মাথাতেও আসেনি। অবশ্য বান্টির কাপে স্যাম্পেল নেবার মত চা অবশিষ্ট ছিল না। রিমি নিন্দাচ্ছলে যে কম্বুচা মাশরুম টি এর কাপ বেসিনে খালি করেছিল সেটাই ছিল বান্টি ঘোষের কাপ।”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা দম নিতে থামলেন। প্রতিমা মাসিমার এখনো কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না যেন অন্য কাউকে ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা খুনের দায়ে অভিযুক্ত করছেন। রিমি পুরোপুরি বিধ্বস্ত, মাথায় হাত দিয়ে মুখ নিচু করে বসে আছে। তিষ্যাও হতবাক, টিভি দেখে অন্য অনেকের মত ও প্রতিমা মাসিমার ফ্যান হয়ে পড়েছিল। উনি সুপরিকল্পিত ভাবে কাউকে খুন করেছেন এটা ও চট করে মেনে নিতে পারছিল না।
প্রতিমা পালিত শান্ত ভাবে বললেন “আপনি তো সব জেনে গেছেন, তাহলে আমাকে ডেকে পাঠালেন কেন? পুলিশকে জানালেই পারতেন। তবে রিমিকে ডাকলেন কেন? ওর সাথে আমার পরিচয় ছিল কিন্তু খুনের বিষয়ে ও কিছুই জানে না।“
তিষ্যা বলল “আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছেনা, ফাইনাল পর্বে মাশরুমের আইডিয়াটা ওর মাথা থেকেই বেরিয়েছিল। তাছাড়া বান্টির কাপের মাশরুম চা টা রিমিদি ইচ্ছা করে বেসিনে ফেলে দেয় যাতে পয়জনের ট্রেস না পাওয়া যায়। আমার তো এখন বাবার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনারা দুজনে মিলে খুনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন।”
প্রতিমা পালিত বলে উঠলেন “না না…”
রিমি বলল “থাক প্রতিমাদি , ওরা সব বুঝতে পেরেছেন, লুকিয়ে লাভ নেই। হ্যাঁ আমি প্রতিমাদিকে সাহায্য করেছি।“ একটু থেমে বলল “তার জন্য আমার কোনো অনুশোচনা নেই। বলুন আর কি জানতে চান?”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “সম্পুর্ণ মোটিভটা জানতে চাই। যখন বুঝতে পারি প্রতিমা পালিত খুন করেছেন এবং রিমি তাতে সাহায্য করেছে তখন আপনাদের দুজনের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে বান্টির সাথে একটা যোগসূত্র পাই। কিন্তু আমি এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি বারো বছর আগের একটা দুর্ঘটনা কিভাবে প্রতিমা পালিতের মত সত্তরোর্দ্ধা ঘরোয়া বাঙালি মহিলাকে খুনের মত দুঃসাহসিক কাজ করতে বাধ্য করল। কেনই বা রিমির মত একজন উঠতি টিভিস্টার কেরিয়ারের ঝুঁকি অগ্রাহ্য করে প্রতিমা পালিত কে সাহায্য করতে রাজি হল?”
প্রতিমা পালিত বলে উঠলেন “দুর্ঘটনা বল না বল খুন।“ তাঁর কন্ঠস্বরের তীব্রতায় তিষ্যা চমকে উঠে দেখল প্রতিমা পালিতের মধ্যে আর সেই অবসন্ন ভাব নেই। চোখ দুটো জ্বলছে, স্বরে উত্তেজনা। তিনি বলে চললেন “দশ দশ টা কচি প্রান, দশটা সম্ভবনা আগুনে পুড়ে, ঝলসে, শেষ হয়ে গেল, পাঁচটা মেয়ে চিরদিনের মত পঙ্গু হয়ে জীবন্মৃত হয়ে রইল। সেটা দুর্ঘটনা ছিল না। ছিল বান্টি ঘোষের লোভের পরিনাম। বেশী মুনাফার লোভে শুধু যে আগুন নেভাবার কোনো ব্যবস্থা রাখেনি তাই নয়, ব্যঙ্কোয়েট হলে পাশে সিঁড়ির তলায় বে-আইনি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত রেখেছিল। যে মেয়েরা বেঁচে ফিরেছিল ওরা বলেছিল ওখান থেকেই আগুন লাগে। অথচ কোর্টে কেস ওঠার পর কোথাও সে কথার উল্লেখ ছিল না। বান্টি টাকা দিয়ে সাক্ষী কিনল, ঘুষ দিয়ে পুলিস রিপোর্ট জাল করল, তারপর কোর্টে প্রমাণ করল আমার মেয়েগুলো যারা জীবন্ত দগ্ধ হল, তারা নাকি আগুন লাগিয়েছিল। এর থেকে বড় অবিচার হয়? আপনি বলুন?“
প্রতিমা পালিতের চোখের জ্বলন্ত দৃষ্টি নিভে গিয়ে দুচোখে এখন জলের ধারা। চোখ মুছে বললেন “দশ বছর ধরে যাদের চোখের সামনে বড় হতে দেখছিলাম, হাসপাতালের মর্গে তাদের জ্বলা পোড়া শরীর গুলো পড়ে থাকতে দেখেও বিস্বাস হারাইনি। ভেবেছিলাম দেশে আইন আদালত আছে , ভগবান আছে, এর বিচার হবে। জানেন তারপর ক্লাসরুমে ঢুকলে বুকের ভেতরটা কেমন করত? তিরিশ জনের ক্লাসে পনেরোটা সীট ফাঁকা। পড়াতে পড়াতে একটু অন্যমনস্ক হলে কোনো মৃত ছাত্রীর নাম ধরে ডেকে উঠতাম, তারপর চমকে উঠে দেখতাম সারা ক্লাস মুখ নামিয়ে বসে আছে।
টীচার্সরুমে আমার বদনাম ছিল নরম ধাতের মানুষ বলে। সকলে অভিযোগ করত আমি ছাত্রীদের বেশী শাসনে একটু ঢিলেমি করি। পাঁচ বছর ওই ক্লাসের ক্লাস টীচার ছিলাম আমি। চার বছর ধরে অন্য শিক্ষিকারা অনুযোগ অভিযোগ করেছেন আমার ক্লাসের মেয়েদের দুষ্টুমি আর দস্যিপনা নিয়ে। তারপর হঠাত সব বন্ধ। মনে হত বোবাদের ক্লাসরুমে বসে আছি।“
একটু ম্লান হেসে বললেন “আমাকে সবাই বলতেন নরম মানুষ, কড়া শিক্ষিকা হিসাবে খ্যাতি ছিল কর্মশিক্ষার শিক্ষিকা কাকলির। ওর হাতে মার না খেয়ে কোনো মেয়ে নাকি আমাদের স্কুল ছাড়েনি। সেই কাকলি খবর শুনে হাউমাউ করে কেঁদেছিল। বড়দির হাত ধরে বলেছিল আমাদের আর ওই ক্লাসে ক্লাস নিতে বল না।
তখন সমস্ত রাগের দুঃখের মধ্যেও একমাত্র আশা ছিল আমাদের মেয়েরা সুবিচার পাবে। সাত বছর ধরে মামলা চলল। আমাদের বড়দি মামলার দিন পড়লে নিজে কোর্টে যেতেন বা শিক্ষিকাদের কাউকে বলতেন যাবার জন্য। আমরা পরদিন বসে থাকতাম খবরের আশায়। প্রথম দিকে ভালোই চলছিল। একজন উদ্যমী পুলিশ অফিসার চমৎকার কেসটা সাজিয়েছিলেন। ওনার সাক্ষ্যে আমরা জানতে পারলাম কুড়িটা ফায়ার এক্সটিংগুইসার থাকার কথা কিন্তু কটা ছিল জানেন? একটাও না। ব্যাঙ্কোয়েট হলের পাশে লুকিয়ে রাখা ছিল বে-আইনি ভাবে সংগ্রহ করা গ্যাস সিলিন্ডার। সরকারী রাস্তা দখল করে বান্টি তার হোটেলের ভ্যালে পার্কিং এর ব্যাবস্থা করেছিল। যার জন্য দমকল , অ্যাম্বুলেন্স কিছুই কাছাকাছি পৌঁছতে পারেনি। হোটেলের ভিতরেও যথেষ্ট জলের ব্যাবস্থা ছিল না যা দিয়ে আগুন নেভানো যায়। আগুন লাগার খবর শুনে বান্টি ঘোষ রাতারাতি পালিয়ে যায়। তারপর আগাম জামিন নিয়ে শরীর খারাপের অজুহাতে একটা নামী নার্সিংহোমে ভর্তি থাকে।
তিষ্যা বলল “আগুনটা লাগল কি ভাবে? ওই পার্টিটা থেকে?”
প্রতিমা পালিত বললেন “যে মেয়েরা বেঁচে ফিরেছিল তারা জানায় আগুন প্রথমে লাগে ব্যাঙ্কোয়েট হলের পেছনের জানলায় ওখান থেকেই আগুন ছড়ায় , গ্যাস সিলিন্ডার বার্স্ট করায় দ্রুত আগুন ছড়ায়। শুনেছিলাম ওই জানলার পিছনে অনেক ইলেক্ট্রিক কনেকশন ছিল। একজন খবরের কাগজের রিপোর্টার পার্সোনাল তদন্ত করেছিল। যেখানে উল্লেখ করেছিল বান্টি ঘোষের হোটেলে মাত্র দশটা উইন্ডো এসি চালানোর মত ইলেক্ট্রিক কনেকশনের পারমিশন ছিল। কিন্তু কমপক্ষে পঁচিশটা এসি চলছিল। যার ফলে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লাগে। যদিও পরে পুলিস রিপোর্টে সেটার উল্লেখ ছিল না। ইলেক্ট্রিসিটি ডিপার্টমেন্ট সব অস্বীকার করে। টাকা দিয়ে বান্টি প্রথমেই ওদের মুখ বন্ধ করে। তবু বাকী সাক্ষ্য প্রমাণের জোরে লোয়ার কোর্টে দুবছর কেস চলার পর বান্টি ঘোষ দোষী প্রমাণিত হয়। ওর দশ বছরের জেল হয়। কিন্তু বান্টি ততক্ষনাত হাইকোর্টে আপীল করে। হাইকোর্টে যখন কেস ওঠে তখন দেখি সব কিছু বদলে গেছে। আগের পুলিশ অফিসার কে সরিয়ে দেওয়া হল। গভর্মেন্টে যে পার্টি আছে তাদের পার্টিফান্ডে বান্টি কিছু প্রনামী দিতেই আগের পুলিশ ওফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বান্টি ঘোষ পুলিশ মহলে প্রচুর টাকা ছড়িয়ে আগের সব রিপোর্ট গায়েব করে দেয়। সাক্ষীরা সবাই উলটো গাইতে শুরু করে। সকলে বার বার বলতে থাকে বাচ্চাদের দোষে আগুন লাগে। সান্ত্বনার বাবা প্রকাশ বাবু আর ওদের দুজন আত্মীয় সাক্ষী দিয়েছিলেন। কিন্তু বিরোধী পক্ষের উকিল প্রমান করে দেয় ওরা আগুন লাগার সময় কাছাকাছি ছিলেন না। চার পাঁচটি মেয়ে যারা বেঁচে ফিরেছিল, চিরদিনের মত পঙ্গু হয়ে, তারা বার বার বলছিল আগুন বাইরে থেকে ব্যাঙ্কোয়েট হলে আসে। কিন্তু জুভেনাইল বলে আদালতে ওদের সাক্ষ্য গ্রাহ্য হয় না। শুধু টাকা ছড়িয়ে বান্টি ঘোষ হয় কে নয় করে দিল। আমরা অসহায়ের মত বসে বসে দেখলাম জেতা কেস আমরা হেরে গেলাম। শেষের দিকে গুজব শুনলাম সরকারী উকিল ও নাকি ভালো মত কেস লড়ছেন না। কোনো এক অজানা বন্ধর থেকে উনি একটা দামী গাড়ি উপহার পান। পাঁচ বছর পর বান্টি বেকসুর খালাস পেল। আদালত জানালো বার্থডে পার্টির অতিথিদের দোষেই আগুন লেগেছে । জজ সাহেব বাচ্চাদের বাবা-মাদের পরোক্ষে দোষী করলেন বাচ্চাদের উপর নজর না রাখার জন্য। সরকার থেকে মৃতদের পরিবার কে দু লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। কত আশা আকাঙ্খা সম্ভবনা নিয়ে বিকশিত হচ্ছিল মেয়ে গুলো, তাদের প্রাণের দাম হল দুলাখ টাকা!!!”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “আপনি সাত বছরে ধরে কেসটা ফলো করেছিলেন? আশ্চর্য! ব্যপারটা নিয়ে সেই সময় খুব হইচই হয়েছিল কিন্তু তারপর যা হয় মিডিয়ার ফলো আপ বন্ধ হতেই সবাই ভুল গেল।“
প্রতিমা পালিত বললেন “এখোনো পরিস্কার মনে আছে মেয়েদের উচ্ছল মুখগুলো। ক্লাসের ফার্স্টগার্ল তপতী, গম্ভীর মুখে সামনের বেঞ্চে বসে নোট নিত, ছিপছিপে লম্বা সুস্মিতা স্কুলের সমস্ত অনুষ্ঠানে নাচ করত, পড়াশোনায় কাঁচা ছিল বলত বেশী পড়ব না দিদি বারো ক্লাসের পর নাচ শিখতে চেন্নাই যাব। মুখরা শতভিষা সারাদিন কথা বলত, টকেটিভ বলে কত শাস্তি পেত, আবার শর্বরী সারাদিনে তিনটে কথা বললে তা টীচার্সরুমে আলোচনার বিষয় হত। আনিশার মাথায় কোঁকরানো চুল , বিনিতার মিষ্টি গানের গলা সব আমি চোখ বুজলেই দেখতে পাই, শুনতে পাই। কেস শেষ হবার দুবছর আগে আমি রিটায়ার করি। তারপর থেকে আমিই কেসের দিন কোর্টে যেতাম, পরদিন স্কুলে গিয়ে খবর পৌছে দিতাম। শুধু আমি কেন টিচাররা কেউ ভুলতে পারেননি। কাকলি রাগে ফুঁসত, স্বপ্না নিশব্দে চোখের জল মুছত, বড়দি চোখ বুজে কি যে প্রার্থনা করতেন কে জানে। যেদিন কোর্টের রায় বেরোল পরদিন স্কুলে গিয়ে দেখি সারা স্কুল থমথম করছে। আমাদের ক্লাস ফোর স্টাফ মঙ্গলা কেঁদে বলেছিল এটা ভগবানের অবিচার। তারপর থেকে আমার এই কথাটা মাথায় ঘুরে ফিরে বেড়াতো। বান্টি আরো ফুলে ফেঁপে ঊঠল। আমার কেবলি মনে হত আইন , আদালত , সমাজ ভগবান কেউ কেন ওকে শাস্তি দেয় না? হঠাও একদিন দেখি টিভিতে “ওস্তাদের মার শেষ পাতে” শো এর সীজন ওয়ানে বান্টি ঘোষ বিচারক এবং রিমি উপস্থাপিকা। রিমি কে সেই স্কুল ছাড়ার পর আর দেখিনি কিন্তু চিনতে ভুল হয়নি। দেখেই কেমন যেন মনে হল এই সমাপতন কাকতালীয় নয়। বান্টি ঘোষ , আমাদের পুরোনো ছাত্রী রিমি এবং রান্নার প্রতিযোগীতা এই ত্রহস্পর্শের একটা উদ্দেশ্য আছে। ভগবানের রাজত্বে অবিচার হয় না। হয়ত অপঘাতে মৃত্যুই বান্টির প্রাপ্য। তাই ভগবান ওকে দশ বছরের কারাবাস থেকে বঞ্চিত করেছেন।
রিমিরর সাথে গোপনে দেখা করে ওকে এই কথা বললাম। ও সাহায্য করতে রাজী হল। তবে ও কোনোভাবেই হত্যার সাথে জড়িয়ে নেই। ওকে আমি বলেছিলাম তিনটে জিনিস দেখতে। একনম্বর, সীজন টুতেও যেন বান্টি বিচারক থাকে। দুনম্বর আমি যেন বাছাই পঞ্চাশের মধ্যে থাকি। জানতাম তারপর আর সাহায্যের দরকার নেই। নিজের রান্নার জোরে ফাইনালে পৌছে যাব। তিননম্বর হল ফাইনালের ইনগ্রাডিয়েন্টে যেন মাশরুম থাকে।“
তিষ্যা বলল “কিন্তু মাশরুমের আইডিয়াটা তো ঝিলামের কথা থেকেই উঠে এসেছিল। প্লাস ডিরেক্টর রিমিদিকে পুশ করেছিল বিদেশী ইনগ্রাডিয়েন্ট দিতে।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “তুই খেয়াল করে দেখিস নি, ব্যাং এর ছাতা বলে ব্যাঙ্গো করে প্রতিমা মাসিমা ঝিলাম কে তাতিয়েছিলেন মাশরুমের নামটা উল্লেখ করতে। যাতে রিমির উপর সন্দেহ না পড়ে। রিমি পুরো শোতেই প্রবীনা বনাম নবীনার লড়াই কে উস্কে গেছে দুটো উদ্দেশ্যে। প্রথমত প্রতিমা পালিতের প্রবীনা , সাবেকী , ঘরোয়া ভাবমুর্তিকে পাকাপোক্ত করা। দ্বিতীয়ত ডিরেক্টরকে বোঝানো মাশরুমের মত বিদেশী ইনগ্রেডিয়েন্ট রাখলে ফাইনালে প্রতিমা পালিত কে ব্ল্যাকহর্স প্রতিপন্ন যাবে যাতে মোটের উপর টি-আর-পি বাড়বে। রিমি শুধু উপস্থাপিকা নয়, শো এর ইভেন্ট ম্যানেজার হিসাবেও কাজ করত। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রতিভা কে কাজে লাগিয়ে ও নিজেকে আর প্রতিমা মাসিমার উপর থেকে বেশীর ভাগ সন্দেহের তীর গুলো সরিয়ে দিতে পেরেছে। মাশরুমের নাম টা ঝিলাম কে দিয়ে বলিয়ে নিয়েছে, প্রথমে ঝিলামের বানানো মেন কোর্সের একটা ডিস কথার ছলে ট্র্যাশে ফেলে দিয়েছে। তারপর একি কায়দায় বান্টির চায়ের কাপের অর্ধভুক্ত চা বেসিনে ঢেলে দিয়ে মাশরুম পয়সনিং এর প্রমাণ লোপ করেছে।“
প্রতিমা মাসিমা বাধা দিয়ে বললেন “না না রিমি কোনো প্রমাণ লোপ করেনি, আমি বলিনি কিছু করতে।“
রিমি মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল। হঠাৎ মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে বলল “না প্রতিমা দি এগুলো সব সত্যি। তুমি যা করেছ সেই তুলনায় কিছুই করতে পারিনি কিন্তু এটুকু করেছি ভেবে একটু সান্ত্বনা পেতে দাও।“ ম্যাজিশিয়ান গুপ্তার দিকে তাকিয়ে বলল “শুনলেন তো সব সাক্ষ্য প্রমাণ থাকা স্বত্তেও বান্টি কেমন বেকসুর খালাস পেল। ও যে ভাবে দশটা খুনের প্রমাণ লোপ করেছে, এটুকু ওর প্রাপ্য।“
তিষ্যার দিকে ফিরে বলল “তখন আমি তোমার থেকেও ছোট, পনেরো বছর বয়স। আমাড় বেস্টফ্রেন্ড সান্ত্বনার জন্মদিনের পার্টি ছিল। বাবা নিয়ে যেতে দেরী করল। বাবার উপর খুব রাগ করেছিলাম। এখন ভাবি ভাগ্যিস দেরী করেছিল। না হলে আমিও বন্ধুদের পাশে শুয়ে থাকতাম। পৌঁছে দেখি ব্যাঙ্কোয়েট হল জ্বলছে। চারিদিকে অব্যাবস্থা। দমকল , অ্যাম্বুলেন্স কিছুই ঢোকার জায়গা নেই। আমার বাবা, আমাদের ড্রাইভার সুরেশকাকু দৌড়ে গিয়ে উদ্ধারে হাত লাগালো। হোটেলের বেশীরভাগ স্টাফ পালিয়েছিল। আশে পাশের ছেলেরা , বাবা , সুরেশকাকু আমার বন্ধুদের জ্বলে যাওয়া বডি নিয়ে আসছিল। গাড়ির মধ্যে বসে আমার ধোঁওয়ায় চোখ জ্বালা করছে, বমি আসছে, বুকের মধ্যে কান্না ঠেলে উঠছে। হঠাত দেখি সুরেশকাকু গাড়ি স্টার্ট করল পিছনের সীটে আমার একবন্ধু অপর্ণা , রোজ ওর সাথে আমার ঝগড়া হত আবার রোজ ভাব হত। সুরেশকাকু বলল অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারছে না কিন্তু অপর্ণাকে এক্ষুনি হাস্পাতালে নিয়ে যেতে হবে। সুরেশকাকু সেদিন ঝড়ের বেগে গাড়ি চালালো, ট্র্যাফিক নিয়মের তোয়াক্কা না করেই। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। গাড়ি তে আমাদের চোখের সামনে অপর্না মারা গেল। আমি আর পারিনি তারপরেই জ্ঞাল হারিয়েছিলাম। সেই ট্রমা হল কাটতে একমাস লাগল। যেদিন স্কুলে ফিরলাম, ক্লাসরুমে ঢুকতেই সব স্মৃতি ফিরে এল। আবার জ্ঞান হারালাম। আর ওই স্কুলে ফিরতে পারিনি। এলাহাবাদে মামারবাড়ি চলে যাই। ওখান থেকেই বাকি পড়াশোনা শেষ করি। বাড়ির লোকে চাইত না আমি এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে আর কোনো খবর পাই। তাই জানতে পারিনি কেসের ফল কি হল। যখন খুব মন খারাপ হত দিদিমা বলতেন ভাবিস না ভগবান ঠিক বিচার করবেন। তারপর স্মৃতি কিছুটা ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আবার কলকাতা ফিরে নতুন জগতে কাজ শুরু করি। কিন্তু যেদিন প্রতিমাদি সামনে এসে দাঁড়ালো সেদিন দেখলাম কিছুই ভুলিনি। প্রতিমাদির থেকে জানলাম বান্টি কিভাবে বেকসুর খালাস পেল। প্রতিমাদি যখন প্ল্যানটা বলল আমার দিদিমার কথা মনে পড়ল। মনে হল বান্টির বিচার শেষ হয়নি। যতদূর পেরেছি প্রতিমাদি কে সাহায্য করি। যদিও আমি মনে করিনা কোনো দোষ করেছি তবু আইনের চোখে যদি বান্টিকে খুন করা দোষ হয় তবে আমিও সমান দোষী। প্রতিমাদি ধরা পড়লে আমিও ধরা দেব।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা সামান্য হেসে বললেন “তার দরকার নেই রিমি। প্রতিমা মাসিমা ধরা পড়লেও, কোর্টে খুনের কথা প্রমাণ করা যাবে না। আমি যে হাত সাফাই ধরে ফেলেছি বা তোমাদের খুনের মোটিভ ছিল, এগুলো সবই অপ্রত্যক্ষ প্রমাণ। যতক্ষন না প্রমাণ করা যাবে প্রতিমা মাসিমা বান্টি ঘোষের খাবারে বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়েছন ততক্ষন ওনাকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে
না। এবং সেটা প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব।
তিষ্যা জিজ্ঞেস করল “কেন বাবা? বান্টি ঘোষের অটোপ্সি রেপোর্টে কি আসবে তো আমরা এখনও জানিনা। মাশরুম পয়জনিং এ মৃত্যু, এই তথ্যটা তো উঠে আসতেই পারে রিপোর্টে?”
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “প্রতিমা মাসিমার খুনের প্ল্যানিংটার মাস্টার পীস হল কম্বুচা মাশরুম চা। বিনাশ পরী মাশরুম এতোটাই বিষাক্ত যে সেটা চা এ ডোবালেই যথেষ্ট বিষক্রিয়া হয়, খাওয়ার দরকার পড়ে না। প্রতিমায় মাসিমা সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন। বান্টির চা এ ডোবানো হয়েছ বিনাশ পরী, কিন্তু আমি সিওর বান্টির পেটে কোনো বিষাক্ত মাশরুমের চিন্থ অটোপ্সি রিপোর্টে পাওয়া যাবেনা।“
তিষ্যা বলল “কিন্ত বিষাক্ত মাশরুমে মৃত্যু হয়েছে সেটা তো বোঝা যাবে। অরুনকাকু বলেছেন ফুল অটোপ্সি হবে।“
প্রতিমা মাসিমা বললেন “ফুল অটোপ্সি হলেও ধরা পড়বে না। তুমি জানো ফুল অটোপ্সি বলতে কি বোঝায়?”
তিষ্যা মাথা নাড়ল। অটোপ্সিতে বডি কাটাছেঁড়া ছাড়া আর কি হয় সে বিষয়ে তার ধারনা ছিল না।
প্রতিমা মাসিমা বললেন “আমার ছেলে ডাক্তার, দিল্লি তে অটোপ্সি সার্জন। বান্টিকে শাস্তি দেবার পরিকল্পনাটা মাথায় আসার পর ওর কাছে মাস খানেক কাটিয়ে আসি। তখন অটোপ্সি নিয়ে অনেক কিছু জেনে আসি। অটোপ্সিতে এইটা ডিক্লেয়ার করে মৃত্যু কিভাবে হয়েছে, অ্যাক্সিডেন্ট, খুন, আত্মহনন নাকি স্বাভাবিক কারণে মৃত্যু। আর এক ধরণের মৃত্যু হয় যাকে বলে ইন্ডিটার্মিনেট, এটা একটু রেয়ার। যখন কিছুতেই বোঝা যায়না কিভাবে মৃত্যু হয়েছে। অটোপ্সির পদ্ধতিটা হল খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজার মত। সমস্ত বডি পরীক্ষা করা হয়েছে কোন ইঞ্জেকশান দেওয়া হয়েছিল কিনা, কোন বড় আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা এইসব দেখা। তারপর ইউরিন, রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হয় কোনো কমন টক্সিক সাবস্ট্যান্স আছে কিনা। এই কমন টক্সিক সাবস্ট্যান্স থাকলে তবেই বলা চলে খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য মৃত্যু হয়েছে। মাশরুম পয়জনিং এর কথা মাথায় রেখেই আমি কমন টক্সিক সাবস্ট্যান্স নিয়ে ডিটেলে পড়াশোনা করি। কিছুটা বইপ্ত্র পড়ে , কিছুটা ছেলে কে জিজ্ঞেস করে কমন টক্সিক সাবস্ট্যান্স এর যে লিস্টটা পাই তার মধ্যে অ্যামাটক্সিন ছিল না। অ্যামাটক্সিন হল সেই টাইপের পয়জন যা বিনাশ পরী বা ডেস্ট্রয়িং অ্যাঞ্জেল মাশরুমে আছে। তাই তখনই আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম ফুল অটোপ্সি হলেও অ্যামাটক্সিন পয়জন টেস্ট করার কথা কারো মাথাতে আসবে না যদি না পেটে সেই বিষাক্ত মাশরুমের ভুক্তাবসাশ থাকে। এক্ষেত্রেও দেখো ফুল অটোপ্সির পর মৃত্যুর কারণ লিভার ফেলিওর ধরা পড়বে কিন্তু কোনো পয়জনিং এর চিন্থ পাওয়া যাবে না। একটা জিনিস আমার প্ল্যানিঙে ছিল। অটোপ্সি করার সময় খাবারে অনেক মাশরুমের অবশিষ্টাংশ থাকবে, কাজেই সেইগুলো পরীক্ষা করে কিছু না পেলে আবার নতুন করে কোন অজ্ঞাত মাশুরুমের বিষ পরীক্ষা করার কথা কারোর মাথায় আসবেনা। দুই, ডেস্ট্রয়িং অ্যাঞ্জেল যে অ্যামা-টক্সিন রিলিজ করে সেটা কয়েক ঘন্টার মধ্যে লিভার ফেইলিওর ঘটায়।”
তিষ্যা বলল “কিন্তু আপনি ডেস্ট্রয়িং অ্যাঞ্জেল পেলেন কোথায়?”
প্রতিমা পালিত বললেন “প্ল্যানটা ঠিক করার পর আমি বাড়িতে শখের মাশরুম চাষ শুরু করি। বিনাশ পরী কে বাড়ির ছাদের টবে তৈরী করেছি। একলা বিধবা মানুষ, এককালে বায়োলজির শিক্ষিকা ছিলাম, তাই আমার শখের মাশরুম চাষকে কেউ সন্দেহের চোখে দেখেনি“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা প্রতিমা পালিতের দিকে তাকিয়ে বললেন “পুলিসের কাছে যাবার ইচ্ছা থাকলে আপনাদের ডেকে পাঠাতাম না। আমি জানি শিক্ষিকাদের কাছে ছাত্র ছাত্রীরা সন্তানতুল্য। সেদিনের ওই দুর্ঘটনায় আমার মেয়ে থাকলে আমি আপনার মতই প্রতিশোধের কথা ভাবতাম। আর আমি এটাও জানি অত বড় দুর্ঘটনা অত গুলো মৃত্যুর পরেও বান্টির কোনো অনুশোচনা ছিল না। সে একি পদ্ধতিতে হোটেল চালাতো । ঘুষ দিয়ে পুলিশ প্রশাসনের মুখ বন্ধ রাখত। এমন কি এই রিয়েলিটি শোতেও সে ডিরেক্টরকে কুপরামর্শ দিয়েছিল পুলিসকে ঘুষ দিয়ে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা কমিয়ে সেই খাতে টাকা বাঁচাতে।“
তিষ্যা বলে উঠল “আচ্ছা প্রতিমা মাসিমা, শুনেছিলাম আপনি শো এর মাঝখানে নাম তুলে নেবার হুমকি দিয়েছিলেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট নয় বলে সেটা কি সত্যি না আপনার কোনো চাল। সত্যি নাম তুলে নিতে হলে তো পুরো পরিকল্পনাটাই বানচাল হয়ে যেত। ধরুন যদি প্রোডিউসার বা ডিরেক্টর বলতেন ওরা সিকিউরিটির ব্যাবস্থা করবে না, তাহলে কি করতেন?”
প্রতিমা মাসিমা বললেন “তাহলে নাম তুলে নিতাম। স্কুলে-স্কুলে গিয়ে বারণ করে আসতাম বাচ্চাদের না পাঠাতে।“ একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন “দরকার হলে প্রেস কনফারেন্স ডেকে সকল কে অনুরোধ করতাম কেউ যেন ওই শোতে বাচ্চা না পাঠান।“ সামান্য থেমে শান্ত হয়ে বললেন “ওই বাচ্চাদের জীবনের দাম আমার প্রতিশোধের ইচ্ছার থেকে অনেক বেশী। ওদের জীবন নিয়ে কোনোরকম ঝুঁকি নিতে পারতাম না।“
তিষ্যার মনে প্রতিমা মাসিমার জন্য আবার জায়গা তৈরী হচ্ছিল। প্রতিমা মাসিমা আর রিমির অভিজ্ঞতা শোনার পর ও যেন একযুগ আগে ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ড চোখের উপর দেখতে পাচ্ছিল। যদিও সেই উচ্ছল ছাত্রীদের সে চোখে দেখেনি তবু তাদের এই ভাবে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাওয়া সে মেনে নিতে পারছিল না। ওর মনে একটা অন্ধ রাগ ফেনিয়ে উঠছিল। সেইসাথে প্রতিমা মাসিমার সংকল্প আর সাহসের জন্য বাহবা দেবার ইচ্ছা হচ্ছিল। মানুষ খুন করা তিষ্যা মেনে নিতে পারে না। কিন্তু ওর একটা মন আরেকটা মনের সাথে তর্ক করছিল বান্টি ঘোষ বেঁচে থাকলে এমন কান্ড আবার হতে পারত। হয়ত এবার রিমির বন্ধুদের মত পরিণতি তিষ্যার বন্ধুদের হত। তিষ্যা প্রতিমা মাসিমারকে বলল “জানেন তো আমরা চার পুরুষের জাদুকর। মন্ত্রগুপ্তি আমাদের রক্তে। বাবা যদি না চান তবে আজকের আলোচনা এঘরের বাইরে যাবে না।“ রিমিকে বলল “তুমি ঠিক করেছ। আমার বন্ধুদের সাথে এরকম হলে আমিও একি কাজ করতাম।“
রিমির মুখ থেকে উদবেগের মেঘটা আস্তে আস্তে কেটে গেল । প্রতিমা মাসিমার ক্লান্ত মুখে অল্প হাসি ফুটল।
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “তিষ্যার কাছে আশ্বাস পেলেন তো? আমাদের ম্যাজিকের কৌশলের মত আজকের আলোচনাও বাইরের পৃথিবী জানতে পারবে না। আমি আপনাদের ডেকেছিলান দুটো কারণে। এক হচ্ছে কিছু খটকা ছিল মোটিভ , অপারচুনিটি আর ওয়েপ্ন নিয়ে। আপনাদের ডেকে যাচাই করে নিলাম আমার অনুমান গুলো ঠিক কিনা। দুই হচ্ছে আপনাদের জানিয়ে দিলাম আমি জানি। আমি চাই না আপনারা দ্বিতীয়বার এরকম কাজ করুন, তা সে যতই জোরাল মোটিভ থাক না কেন।“
প্রতিমা পালিত বললেন “না তা আর হবে না। এই তিয়াওর বছরের দেহে আর খুনের ধকল দূরে থাক, আরেকটা রিয়েলিটি শো এর ধকলও সইবে না। অনেকগুলো চ্যানেল সাধাসাধি করতে একগাদা শো এর অফার নিয়ে। ওদের এড়াতে ভাবছি বড় মেয়ের কাছে নিউ-ইয়র্কে চলে যাব মাস ছয়েকের জন্য।“
ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা বললেন “সেটা আপনার পক্ষে ভালই হবে।“ রিমির দিকে ফিরে বললেন “তুমি এবার এইসমস্ত ঘটনা ভুলতে চেষ্টা কর রিমি। তোমার অল্প বয়স , মন দিয়ে কাজ কর, উন্নতি কর।“
রিমি মাথা নেড়ে সায় দিল। প্রতিমা মাসিমা আর রিমি ওঠবার জন্য তৈরী হলেন। তিষ্যা এবং ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা ওদের এগিয়ে দিতে আসছিলেন। দরজার কাছে এসে প্রতিমা মাসিমা ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন “ছানার কালিয়া নির্ভয়ে খেও। নিজেকে বাঁচাবার জন্য তো নয়ই, রিমি কে বাঁচাবার জন্যও আমি আরেকটা খুন করার কথা ভাবব না।“
তিষ্যা বলে উঠল “বাবা খেতে পাবে কি না সে গ্যারান্টি দিতে পারছি না। মনে হচ্ছে পুরোটাই আমি শেষ করব।“
চারজনে হাসতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
পরেরদিন তিষ্যার ফোন বেজে উঠল দুপুরবেলা নাগাদ। অরুণ বাসুর গলা।
- “হ্যাঁ হ্যালো তিষ্যা। অটোপ্সি রিপোর্ট বেরিয়েছে, তুমি বলেছিলে তোমায় জানাতে তাই ফোন করছি।”
- “হ্যাঁ কাকু, বলুন।” তিষ্যার মনে এখন উত্তেজনার কোণটা একদম তিনশো-ষাট ডিগ্রি ঘুরে গেছে। অটোপ্সি রিপোর্টের ব্যাপারে প্রধান আকর্ষণই ছিল খুনটা কিভাবে হয়েছে সেটা জানার বিষয়ে। আর এখন উত্তেজনাটা হচ্ছিল এটা ভেবে যে রিপোর্টে যেন জানা না যায় যে মৃত্যুটা মাইসেটিজ্ম্এর কারণে হয়েছে।
- অরুন বাসু বললেন “ফুল্ অটোপ্সিই করা হয়েছে এই হাই-প্রোফাইল কেসে। সেরকম সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। ডেথ বাই ন্যাচারাল কজেজ ডিক্লেয়ার করেছে। ধরা পড়েছে লিভার ফেইলিওর হয়ে বান্টি ঘোষের মৃত্যু হয়েছে। ‘প্রি-এগজিস্টিং ইলনেস’ হিসেবেই সার্জেন এটাকে ব্যাখ্যা করেছে কারণ জানা গেছে অত্যধিক মাত্রায় অ্যালকহল খাওয়াটা বান্টির বহুদিনের নেশা।”
ফোনটা রেখে তিষ্যা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। তারপর প্রতিমা মাসিমার নম্বর ঘোরালো। অটোপ্সির খবরটা প্রতিমা মাসিমা কে দিইয়ে নিশ্চিন্ত করবে আর সেই সাথে ছানার কালিয়ার রেসিপিটাও জেনে নেবে।
তিন মাস পরে...
প্রতিমা মাসিমা মেয়ের বাড়ি নিউ জার্সিতে আছেন। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা সামনের মাসে নিউ জার্সিতে শো করতে যাচ্ছেন জেনে তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছেন। ম্যাসিজিয়ান গুপ্তা ভালোমন্দ খাবার লোভে এককথায় রাজি হয়ে গেছেন।
তিষ্যা আর রনির মধ্যে বান্টি ঘোষের মৃত্যুর ব্যাপারটা নিয়ে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। ওরকম নাটকীয় মৃত্যুর এরকম নিরানিষ পরিণতিতে রনি বেশ হতাশ। ওর মনে হয় কোনো একটা রহস্য ছিল যেটা সবাই মিস করে গেছে। তিষ্যার বহুবার লোভ হয়েছে রনিকে সব কথা জানানোর কিন্তু চারপুরুষের যাদুকরের রক্ত মন্ত্রগুপ্তির শপথ ভাঙ্গতে পারেনি।
ডিরেক্টর রাজা বোস “ওস্তাদের মার শেষ পাতে” রিয়েলিটি শো এর সীজন থ্রী এর কাজ শুরু করেছেন। প্রোডিউসার বাজাজ বিনা আপত্তিতে টাকা ঢেলেছেন। ধুরন্ধর ব্যাবসায়ী বাজাজ হিসাব করে দেখেছেন সব রকম সেফটি সিকিউরিটির ব্যাবস্থা সুষ্ঠ ভাবে করেও ভালোই মুনাফা করে যায়।
রিমি বেশ কয়েকটা রিয়েলিটি শো এবং সিরিয়ালের কাজে ব্যাস্ত। ডিরেক্টর রাজা বোস কে ও পরামর্শ দিয়েছে ম্যাজিক নিয়ে একটা রিয়েলিটি শো করবার। ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা কথা দিয়েছেন তিনি সাহায্য করবেন। তবে তিষ্যার ইচ্ছা বাংলা চ্যানেলে যেন ক্রাইম নিয়ে কোনো একটা রিয়েলিটি শো হয়।
ঝিলাম হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাস করা মাত্র দেখের বিভিন্ন নামী রেস্টুরেন্ট থেকে দারুন সব চাকরির অফার পেয়েছে। কিন্তু ওর ইচ্ছা কুনালের রেস্টুরেন্টে জয়েন করার।
বান্টি ঘোষের মৃত্যুর পর প্রতিমা মাসিমা পাঁচটি ফোন কল পেয়েছিলেন ওঁর স্কুলের পাঁচ জন প্রাক্তণ ছাত্রীর কাছ থেকে যারা সকলেই বর্তমানে শারীরিক ভাবে পঙ্গু। সকলের সাথেই ‘কেমন আছেন’ ইত্যাদি গোছের সাধারণ কথাবার্তা হয়। কিন্তু ওদের না বলা কথা দুটি নীরব বক্তব্য রেখে যায়। যে কথা ম্যাজিশিয়ান গুপ্তা জেনেছিলেন তার ক্ষুরধার বুদ্ধি আর পর্যবেক্ষন শক্তির সাহায্যে , সেই কথা এই হতভাগ্য মেয়ে গুলোও বুঝেছিল নিজেদের পঙ্গু জীবনের বেদনা দিয়ে। ওদের না বলা কথার বক্তব্য ছিল ‘প্রতিমাদি আমরা জানি’।
তাই ওরা সকলেই ওদের প্রিয় প্রতিমাদিকে নীরবে বলেছিল “ধন্যবাদ”।
[সমাপ্ত]
- ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
মন্তব্য
সত্যি বলছি, আমি কিন্তু মাশরুমকেই সন্দেহ করেছিলাম ! কিন্তু ওই যে গত পর্বে বললেন বাকিদের আলোকিত করবেননা তাই আর কিছু বলিনাই ! তবে রিমির কথা কল্পনাও করিনাই ! মারাত্মক ! অসাধারন লেগেছে আমার প্রতিটা পর্বই ! সত্যি এখন থেকে আপনাদের লেখার জন্য বসে থাকব । এই গল্প পড়ে আমার ভীষন ইচ্ছা করেছে সব রান্নাগুলি চেখে দেখতে ! ম্যাজিশিয়ান গুপ্তাকে নিয়ে আরো গল্প চাই ।
অগ্নির - আপনি প্রথম পর্ব থেকে ফলো করছেন এই উপন্যাসটা। শেষে পৌঁছেও ভালো লেগেছে শুনে যারপরনাই পুলকিত হলাম।
ভালো থাকবেন।
হ্যাঁ, আমরা একটা সিরিজ লিখব, তবে এই মুহূর্তে পরেরটা রেডি নেই।
যা যা ভেবেছিলাম সব মিলে গেছে। তারপরেও লেখনির জোরে দারুন হয়ে গেল! আপনারা সত্যিই শব্দ দিয়ে ছবি ফোটাতে পারেন।
হ্যাঁ, এটা একটা স্ক্রিনপ্লে-র মত করেই লিখব ভেবেছিলাম আমরা যেহেতু টিভির পর্দায় রিয়্যালিটি শো চলছিল।
প্রশংসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মারাত্মক!
..................................................................
#Banshibir.
অসংখ্য ধন্যবাদ পীরদাদা।
সবগুলো একসাথে পড়ে ফেললাম। পঞ্চম পর্বে একটু বেশি ইঙ্গিত দিয়ে ফেলেছিলেন। তাছাড়া বেশ ভালো লাগলো। আরো লিখুন
হিন্ট্স্ গুলো কিন্তু ডেলিবারেট। আমরা একেবারে দম্বন্ধ হুডানিট লিখতে চাইনি। শেষ পর্বের শুরুতেই দেখলেন না কেমন মাত্র দুজনকে ডেকে পাঠালাম। তখনই তো বোঝা যাচ্ছিল এই দুই কাল্প্রিট। এটা একটা সামাজিক উপন্যাসের মত করে শেষ করার প্ল্যান ছিল আগাগোড়া।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
বেশ ভালো লাগলো সব মিলিয়ে। আরও লিখতে থাকুন।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
আরে আমি তো দেখি মহিলা সারলক হম্নি হয়ে গেলাম ! আপনাদের এত চমৎকার লেখা থেকেও খুনি কে চেনা চেনা লাগছিল । বেশভাল লিখেন আপনারা । পরবর্তী সিরিজের দ্রুতাগমনের অপেক্ষায় রইলাম
মৌটুশি বাশার
পরেরটা একটা ছোটগল্প আপ্লোড করব ভাবছি।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
আসলে মাশরুম এর কথা যখন লিখেছিলেন আমরা বোধহয় সবাই বুঝে ফেলেছিলাম:)
আমার কেনো যেন সাত খুন মাফ ছবিটার শেষের খুনটার কথা মনে হচ্ছিল খুব।
আপনারা বই লেখেন না কেন? বই দেখতে চাই। আর আরো অনেক অনেক অনেক গল্প চাই
বই লিখতেই চাই। পরের স্টেপ-গুলো জানা নেই। আগ্রহী প্রকাশক আর ঈশ্বরদর্শন নাকি সমার্থক।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
প্রথম তিনটা পর্ব আগে পড়া হয়নি, পড়ে ফেললাম। খাসা লেখা আপনাদের!
থ্রিলার লেখা জারি থাকুক!
আরে রংতুলি? চার, পাঁচ, ছয় আগে পড়ে তারপর এক, দুই, তিন পড়লেন??
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
দারুণ লাগলো। নতুন কোন উপন্যাস আসছে কি সামনে?
একটা প্লট মাথার মধ্যে জমছে। কিন্তু অনেক বড় হবে। বর-বউ হাত দিতে ভয় পাচ্ছি। বছর-খানেকের প্রজেক্ট মনে হচ্ছে।
অনেক ধন্যবাদ।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
হাচল হওয়ার অভিনন্দন জানাই। -রু
দুর্দান্ত। থ্রিলার লেখা জারি থাকুক!
গোয়েন্দা গল্প সবসময় ভালো লাগে।
পরবর্তী লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
অত বুদ্ধি নেই আমাদের। বেশী গোয়েন্দা গল্প লিখতে পারব কিনা জানিনা।
আমরা চেষ্টা করি সবসময় ডাইভার্স টপিক নিয়ে লেখালিখি করতে। পরেরটা একটা ছোটগল্প। আই-টি কন্সাল্টেন্সি কোম্পানি নিয়ে।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
খুব ভালো লাগলো
যথেষ্ট হিন্টস দিয়ে আগে থেকে খুনী কে বুঝতে দেয়ার স্টাইলটা কিন্তু ভালোই । পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিলো আমি একটা জিনিস জানি, দেখি কে / কীভাবে এটা বের করতে পারে।
হ্যাঁ, আসলে "কি করে কি হইয়া গেল" টাইপের 'ডিন্যুমেন্ট' আমাদের আসলে ভালো লাগেনা। আমরা চাই হাতের সব তাস দেখিয়ে দিতে।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
এটা একটা পরীক্ষামূলক মন্তব্য - আমরা পরীক্ষা করছি হাচল হলাম কিনা।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
গতবছর পশ্চিমবঙ্গে একটা বেসরকারী নার্সিং হোমে একটা মর্মন্তুদ অগ্নিকান্ড ঘটে।
আমরা লস্-_অ্যাঞ্জেলেসে বসেও খবরটা পড়ে একটা রাত রাগে দুঃখে ঘুমোতে পারিনি। সেখান থেকেই এই প্লটের সূত্রপাত, বা মোটিভের সূত্রপাত।
http://articles.timesofindia.indiatimes.com/2011-12-09/kolkata/30497549_1_amri-icu-patients-bodies
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
হাচলত্বের অভিনন্দন ।
conract অ্যাট sachalayatan বরাবর ইমেল করে Ipsito পাল্টে ঈপ্সিত করা যায় কিনা দেখেন তো। ইংরেজিটা চোখে লাগছে।
..................................................................
#Banshibir.
শুধু তাই নয়, আমি এটাও চেষ্টা করব যদি কোন ভাবে নামটা ঈপ্সিত/চম্পাকলি করে দেওয়া যায়। যেদিন প্রথম নিবন্ধন করেছিলাম সেদিন অতটা বুঝতে পারিনি, একটা ইউজার-নেম লিখে দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে যে একার নাম থাকাটা কেমন যেন অসমিচীন।
দেখি ইমেল করে।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটা পড়া হয়ে ওঠে নি।
ব্লগে বার বার ফিরে আসি কিন্তু টানা সময় দিতে পারি না।
একদিন ছুটির দিন দেখে একটানে সবগুলো পর্ব পড়ে ফেলব।
লেখক-জুটির জন্য শুভ কামনা। আরো লেখা চাই।
(Y
অনেক ধন্যবাদ নিলয়। কেমন লাগল আমাদের প্রথম উপন্যাস জানাতে ভুলবেন না যেন।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
হাচলত্বের অনেক অভিনন্দন
অসংখ্য
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
হাচলত্বে অভিনন্দন।
গল্প তো দারুন লাগল। তবে ব্লগ হওয়াতে শেষটুক নিজে যতটা আচ করতে পেরেছি সবার মন্তব্যে আরো শিওর হয়ে গেছি। বই হলে প্রেডিক্টেবল হলেও সাসপেন্স থাকত আরো বেশি। এরপরের গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আসলে আঁচ করতে দিতে তো আপত্তি নেই, তাতে বরং অন্যরকম কোউতুহল থাকে যে মোটিভ-টা কি, বা অপার্চুনিটি কি?
মাশরুমটা বেশ ইউশ্যুয়াল সাস্পেক্ট, কাজেই ওয়েপনটাই যা হিন্ট্স্এ ছিল।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
তাই বলে রিমিও!!!এতটা আলো আমিও ফেলতে পারি নাই!!!
শেষটা চমৎকার হয়েছে।সত্যি!!অভিনন্দন।
যাক, ভালো লেগেছে শুনে খুব খুশী হলাম। আমরা কিন্তু ক্লু দিচ্ছিলাম। রিমি বান্টির চা ফেলে দিল, রিমি মাশরুম সাজেস্ট করল, গল্পে ছড়িয়ে রেখেছিলাম।
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
হাচলাভিনন্দন
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ঈপ্সিত আর চম্পাকলি
---------------------------------
বোলতা কহিল, এ যে ক্ষুদ্র মউচাক,
এরি তরে মধুকর এত করে জাঁক!
মধুকর কহে তারে, তুমি এসো ভাই,
আরো ক্ষুদ্র মউচাক রচো দেখে যাই।
--------------------------------------------
হাচলত্বের অভিনন্দন!
নিজেকে সফল গোয়েন্দার ভূমিকায় খুজে পেয়ে ভাল লাগলো।
পরের গল্প তাড়াতাড়ি আসুক।
নতুন মন্তব্য করুন