প্রেতসভা

খেকশিয়াল এর ছবি
লিখেছেন খেকশিয়াল (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৭/০৮/২০০৯ - ৪:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গোল টেবিলটা ঘিরে আছে ওরা। টেবিলের উপর নিজেদের দুই হাতের বুড়ো আঙ্গুলগুলো আর প্রান্তের কেনো আঙ্গুলগুলো স্পর্শ করে একটা বৃত্ত তৈরী করে ওরা মোমবাতিটা ঘিরে। মোমবাতির আলো সবার মুখের উপর পড়ে, অদ্ভুত অতিপ্রাকৃত দেখায় সবাইকে। ওরা পাঁচজন। ওরা সবাই চিন্তা করছে একজনের কথা।

সুমন বলছিল, প্ল্যানচেটের কথা। ওর মাথায় সবসময় আধিভৌতিক ব্যাপার স্যাপার ঘুরে। তন্ত্র মন্ত্রের কিছু বই পড়ে ইদানীং নাকি কিছু প্রয়োগও করছে। কিন্তু কাউকে কিছু দেখায় না। দেখাতে বললেই বলে, হু হু..এইগুলা দেখানোর জিনিস না..
সুমনের কথায় কাজল মুখ ঝামটা দিয়ে উঠেছিল, বলেছিল, "ফাজলামি বাদ দে?" রফিক বলেছিল, "সুমন, তুই কোন নিয়মে প্ল্যানচেট করবি?" শাওন আর পরাগ যমজ দুটা একসাথে বলে উঠেছিল, "কচু করবে, ব্যাটা জানে নাকি কিছু?" যমজ দুটা মাঝে মাঝে একসাথে একই কথা বলে।
"আমি কি করব ওইটা আমার ব্যাপার তোরা করবি নাকি বল.." বলেছিল সুমন। কাজল অনেক আপত্তি করেছিল। কিন্ত শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গিয়েছিল সবাই। মজা হবে সবাই ভেবেছিল।

আমি সবাইকে স্পষ্ট দেখছিলাম। সুমনের সেই খোঁচা খোঁচা দাড়ি, মানিকজোড় শাওন পরাগ , কাজল .. রফিক আর তার বোতাম ছেড়া শার্ট। ওরা সবাই চিন্তা করছে আমার কথা। আমার সাথে কথা বলতে চায় ওরা। আমাকে ডাকে সবাই। আমি আসি.. মোমবাতি নিভে যায়।
সুমন হেলে বসে পড়ে মাথা উলটে দিয়ে.. সবসময়ের মত। শাওন পরাগের চোখে ভয়। রফিক জিজ্ঞাসা করে, "অনিক, তুই এসেছিস?"
আমি বলি, "হু ", নড়ে উঠে সুমনের মুখ।
শাওন পরাগ কেঁপে উঠে। কোত্থেকে যেন একটা চাপা আবছা আলো এসে পড়ে ঘরে, অন্ধকার কাটে কিছুটা। রফিক আবার জিজ্ঞাসা করে, "অনিক তুই কেমন আছিস, কোথায় আছিস?"
কিছু বলি না আমি।
"তুই কি একটা প্রশ্নের জবাব দিবি?"
"বল.." একটা দীর্ঘঃশ্বাস বেরোয় যেন আমার কথা থেকে।
একটু থেমে যায় রফিক, আবার প্রশ্ন করে,
"..তুই দরজাটা আটকাতে গেলি কেন?"
আমি কিছু বলতে পারি না, আমার খুব খারাপ লাগে। সেই অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে ধরে আমাকে। খুব ভয় করে, খুব ভয় করতে শুরু করে আমার.. এক্ষুণি চলে যেতে হবে, এক্ষুণি!
"আমাকে মাফ করে দে তোরা.. আমাকে মাফ করে দে, আমাকে যেতে দে.." অনুরোধ করি আমি..
"অনিক তুই দরজাটা খুলে দে" আমার সুরেই পালটা অনুরোধ করে ওঠে পরাগ।
"হ্যাঁ দোস্ত, খুলে দে দরজাটা .. দেখ আমরা বেরুতে পারছি না।" বলে শাওন।
আমি কিছু দেখতে চাই না, চোখ বুঁজে ফেলি আমি। কিন্তু দেখি তারপরেও.. যেন আমার চোখে কোন পাতা নেই.. দেখি সারা ঘরটায় আগুন জ্বলে দাউ দাউ করে। আগুন জ্বলে রফিকের গায়ে, ম্লান মুখ করে বসে আছে ও। আগুন জ্বলছে শাওন পরাগের গায়ে, ওরা বলতে থাকে,
"অনিক কি দেখছিস, দরজাটা খুলে দে!"
ওদের মুখ দুমড়ে পুড়ে গলে যেতে থাকে .. দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে সুমন.. জ্বলতে জ্বলতে কাজলের মাথা ঢলে পরে টেবিলে। ওর আঙ্গুল শাওনের আঙ্গুলের সাথে লাগানো, পুড়তে থাকে ওরা .. কি বীভৎস! ওহ! সহ্য করতে পারি না! আমি সহ্য করতে পারি না!

চিৎকার করে জেগে বসি আমি। ঘেমে গেছি একদম.. হাপাচ্ছি পাগলের মত! ওরা আবার ডেকেছিল আমাকে। আবার ডেকেছিল ওরা! ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠি আমি। ওহ! ওরা কেন আমাকে ভুলতে পারে না?.. পাঁচ বছর.. পাঁচটা বছর! ওরা কেন ভুলে না আমাকে? কেন ঘুমাতে দেয় না আমায়? আমি তো শুধুই মজা করে আটকে দিয়েছিলাম দরজাটা, শুধুই মজা। ওরা কেন বোঝে না?.. প্ল্যানচেট করতে চেয়েছিল ওরা.. সুমনের বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে.. আমাকে নিলো না ওরা। প্রেতসভা শুধুই নাকি বেজোড় সংখ্যক লোকে হয়। কিন্তু সবসময় আমিই কেন?
ওরা চক্রে বসলে আস্তে করে ছিটকিনি তুলে দিয়ে পালাই আমি।
আমি কি করে জানবো?
কি করে জানবো আগুন লেগেছিল ঘরে?
কিভাবে দাউ দাউ করে পুড়িয়ে মারলো ওদের!
কি করে জানবো ওরা বেরুতে পারছিল না?
ওরা কেন বোঝে না? কেন ডাকে আমাকে? আমি ঘুমাতে পারি না.. ঘুমালেই হাজির হয় ওরা বীভৎস সব স্বপ্ন হয়ে..
ওরা কেন আমাকে মাফ করতে পারে না?

আমাকে মাফ করে দে দোস্তরা.. ডাকিস না আর আমাকে, দোহাই তোদের..


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

অসাধারণ! আপনার লেখা যা পড়েছি এইটা তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো!

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

চলুক চলুক চলুক
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

হিমু এর ছবি
অনিকেত এর ছবি

লা জবাব!!!!

_প্রজাপতি এর ছবি

মজা পেলুম ।

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...

জাহিদ হোসেন এর ছবি

খুবই ভালো লাগলো। ট্যুইস্টটা দারুণ!
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

যুধিষ্ঠির এর ছবি

দুর্দান্ত!

কীর্তিনাশা এর ছবি

চ্রম ! চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

আকতার আহমেদ এর ছবি

প্যাঁচাইলাম, থুক্কু পাঁচাইলাম!
দারুণ চলুক

মৃত্তিকা এর ছবি

দারুণ গল্প!
___________________________________
সামনে যদি যাবি ওরে, থাক-না পিছন পিছে পড়ে।

মামুন হক এর ছবি

দুর্দান্ত! পাঠকদার সাথে একমত।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

মূলোদার সাথে একমদ চোখ টিপি
খেকশিয়ালের কামড় কী জিনিস, আজকে টের পাইলাম!
--------------------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগলো।

নৈশী।

নিবিড় এর ছবি

চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সমুদ্র এর ছবি

চমৎকার লাগলো!

"Life happens while we are busy planning it"

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

জোশ !!! উড়কি অণুগল্প !!! হিংসায়িত ...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

অসাধারন বললেও কম বলা হবে!!!!!!!!!!! চাল্লু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমিও মূলোদার লগে একমদ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তীরন্দাজ এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ফাহিম এর ছবি

জটিল!

=======================
ছায়ার সাথে কুস্তি করে গাত্রে হলো ব্যাথা!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

s-s এর ছবি

ভালো।
বেশ ভালো।
শুন্যতা>শূন্যতা

খেকশিয়াল এর ছবি

মূলত পাঠক কিংকর্তব্যবিমূঢ় হিমু ভাই অনিকেতদা _প্রজাপতি ধুগো জাহিদ হোসেন যুধিষ্ঠির কীর্তিনাশা আকতার ভাই মৃত্তিকা মামুন হক মৃদুলদা বিডিআর নৈশী নিবিড় সমুদ্র সুহান রিজওয়ান দৈত্যসিমন নজুরাম ভজুয়া তীরুদা ফাহিম s-s
আপনাগো হগলরে ধইনাপাতা

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

কনফুসিয়াস এর ছবি

একরকম ফিনিশিং ভেবেছিলাম, কিন্তু আপনি খুব ভাল মোচড় দিয়েছেন।

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

বইখাতা এর ছবি

দারুণ !

এনকিদু এর ছবি

ভৌতিক হতে গিয়েও হলনা, হয়ে গেল অন্যরকম একটা গল্প । অসাধারণ ! চলুক

আপনার আজকাল কাজ কর্ম কিছু নাই, নিয়মিত গল্প বেরোচ্ছে দেখি । বেশি কাজ কর্ম করা ঠিক না । লেখালেখির ক্ষতি হয় ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

নজমুল আলবাব এর ছবি
জি.এম.তানিম এর ছবি

অসাধারণ! চলুক
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

খেকশিয়াল এর ছবি

কংফু ভাই বইখাতা এনকিদু অপুভাই জি এম তানিম অনেক ধন্যবাদ

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।