আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের "প্রেমের গপ্পো"

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: রবি, ১৫/০২/২০০৯ - ৮:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইলিয়াস আমাদের কাছে খুব বেশি মালমশলা রেখে যান নাই, মাত্র ২৮ টা গল্প, অল্প কিছু প্রবন্ধ আর ২ টি উপন্যাস, সাকুল্যে এই আমাদের সম্পদ। কিন্তু অল্প সংখ্যক লেখা দিয়াই তিনি নিজের স্টাইল দাঁড় করে ফেলেছেন। যে কারণে ইলিয়াসের লেখা পড়েই আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না এটা কার লেখা।
তো কি সেই স্টাইল?
আমি জেনারালাইজড করতে পারছি না। তবে নিজের পাঠানুভুতি বলতে পারি।
ইলিয়াসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ লাগে বর্ণনা। আমি নিজে বর্ণনার খুব ভক্ত। গল্প যখন মাথার ভেতর সিনেমা হয়ে ওঠে, সেই মুহুর্তেই আমার গল্পরে ভালবাসতে ইচ্ছা করে। তার আগ পর্যন্ত দুরে ঠেলে বসিয়ে রাখি। ইলিয়াসের গল্পগুলান এই দিক দিয়ে একদম যা-তা রকমের ভাল। বর্ণনাগুলা এত সাবলীল যে মাত্র অল্প কিছু লাইনের পরেই মাথার ভেতরে গল্পের দৃশ্যগুলার চিত্রায়ন করে নিতে কোনরূপ সমস্যা হয় না। তারপরে ক্রমশ সেটা ফেনায়িত হতে থাকে, গরম কফির মত। তখন খানিকটা নেশাও লেগে যায়, বর্ণনার গুণেই।
ইলিয়াস পড়তে গিয়া আমি যে সমস্যায় পড়েছি, সেটা সাধারণত অমনোযোগী/ নতুন পাঠকদের বেলায় ঘটে। কিন্তু আমি মনোযোগী পাঠক, তবু এই সমস্যার কারণ ধরতে পারি নাই বলে দোষটা ইলিয়াসের গদ্যের উপরই চাপিয়ে দিতে দ্বিধা করি নাই। সমস্যাটা হলো- বর্ণনার এই অস্বাভাবিক গুণের কারণেই মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলতে হয়। দৃশ্য বা দৃশ্যচিত্রে এমন করে ডুবে যেতে হয় যে, গল্প থেকে সরে যাই মাঝে মাঝে, ছবিটাই মাথা জুড়ে আসন গাড়ে। তখন খানিকটা গা ঝাড়া দিয়ে মনে করে নিতে হয়- গল্পটা আসলে এই ছিলো!
*

প্রেমের গপ্পো- আমি বলবো- ইলিয়াসের অন্যগুলার চেয়ে একটু আলাদা।
ভাষা একদম সহজ সরল, ইলিয়াসের অন্যগুলোর তুলনায়। ইলিয়াস যেটা করেন, চরিত্রগুলার চিন্তা-চেতনারে সাথে নিয়ে গল্প এগুতে থাকেন। অনেকে এই ক্ষেত্রে স্বগতোক্তি ব্যবহার করেন, কিন্তু ইলিয়াস সেইটার ধার ধারেন না। উনি নিজেই চরিত্রের মনের কথা, অলমোষ্ট, চরিত্রের ভাষায়ই গল্পে তুইলা আনেন।
সংলাপ গুলায় কোন অবাস্তবতা নাই। নতুন বিয়ার পরে স্বামী-স্ত্রী যেভাবে আলাপ করে, ঠিক সেই সুরে পুরা গল্পের সংলাপ আর বয়ান এগিয়ে যায়, কোন ছন্দপতন ছাড়াই।
একটা সংলাপ যেমন, " আমার থ্রো দেখে বলে, আপনার হাতের মুভমেন্ট খুব ম্যাজেস্টিক, আবার খুব ফাস্ট।"- এইখানে আমরা হয়তো ইংরেজি শবদগুলারে ঠিক এইভাবে লিখতে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম, কিন্তু তাহলে যেটা হইতো, এইটা ঠিক রিয়েল হয়ে উঠতো না। আবার যদি শুধু সংলাপে এইরকম সাবলীলতা রাইখা বর্ণনায় বিশুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করতেন, তাহলে হয়তো বাংলা গল্প লেখার নিয়ম মানা হইতো, শুদ্ধ গল্প লেখা হইতো, কিন্তু আবারো সেইটা রিয়েলিটি থেকে সরে যেত।
যেমন এইখানে-
বুলা ফের হাসে, 'আবার ঢাকাইয়া ল্যাংগুয়েজ।'
কিন্তু জাহাংগীরের তখন ফ্লো এসে গেছে। ' এক্কেরে লাইন। বনানী, গুলশান...'
এই যে বর্ণনাতেও গল্পের চরিত্রগুলার মতনই কথা ব্যবহার করা, এইটাই আমার কাছে ভাল লাগলো। ইলিয়াসের অন্য গল্পগুলার মতন, এই গল্পটাও পড়ার পর মনে হইলো, যেন একটা সংগীতসন্ধ্যার শুরুতে কোন একজন ওস্তাদ তার যন্ত্রপাতি গুলা টিউন করে রাখছেন, তারপর সেই সুরেই পুরো বাজনা বাজাইলেন। কোথাও সুর কাটে নাই।
*

এই গল্প নিয়া আলাপ করতে গিয়ে (আনোয়ার সাদাত) শিমুল একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, হাসপাতাল ও তার পরবর্তী বিশ্লেষণের স্পষ্টতা কী?
আমি মনে করি, সুনীলদাকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া এবং তার পরবর্তী ঘটনাগুলা আসলে জাহাংগীরের চরিত্র নির্মাণের জন্যেই দরকার ছিলো।
জাহাংগীর আসলে কেমন মানুষ। আপাতত সৎ, এবং একটু সহজ সরল মানুষ। জীবনের খুব বেশি উন্নতি করতে পারে নাই, এখনো স্ট্রাগলিং। এই ধরণের মানুষগুলা খুব বেশি কল্পনা বিলাসে ভোগে আসলে। তারা বাস্তবে যা পারে নাই, কল্পনায় সেটা অধিকার বা দখল করার চেষ্টা করে। এ কারণেই, চাকরিতে সমস্যার পরেও জাহাংগীরের এটা ভেবে নিতে ভাল লাগে, অফিসে সবাই তারে খুব সম্মান করে। কলেজ জীবনে কোন মেয়ের সাথে কখনোই কথা বলে নাই। এই অতৃপ্তিটা পোষানোর জন্যে তার কাছে আসলে কল্পনার আশ্রয় নেয়া ছাড়া কোন গতি থাকে না। সে তাই কোন এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে শোনা মাত্র এক লাইন শুনেই শাহীন বা শাহনাজের পুরো চরিত্র দাঁড় করে ফেলে। যেখানে সে নিজেই হিরো। কল্পনা বিলাসী মানুষ এই রকম কল্পনাগুলা নিজে খুব বিশ্বাস করে, এবং এই বিশ্বাসটাকে ভিত্তি দেবার জন্যে যাদের সাথে ঐ ঘটনার কোন যোগ নাই, তাদের কাছে সত্যের মত করেই গল্প করে। হিপ হিপ হুররে-র প্রসঙ্গে তার ভাবনা-চিন্তাগুলো এরকম হবার কারণও এই।
সুনীলদার হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে যখন মুশতাক আর বুলা কান্না করে, তখন জাহাংগীরের একটা ঈর্ষা হয়, সে টের পায়, ও ঠিক বুলা-মুশতাকের লেভেলের মানুষ না। বুলা-মুশতাক কোন লেভেলের? যে লেভেলে যাবার কল্পনা সে করে। কিন্তু বাস্তবে পারে নাই।
এই কারণেই বুলা-মুশতাক যখন একসাথে কান্নাকাটি করে, তখন জাহাংগীর নিজের ভেতরে টের পায়, কারো সাথে আসলে স্মৃতি নিয়া তার কোন ভাগাভাগি নাই। কল্পনায় সে নিজেই নিজের নায়ক, ঐখানে নানা মেয়ে তাকে প্রস্তাব দেয়, ওইখানে সে হিরোর মতন সবাইকে রক্ষা করে, কিন্তু বাস্তবে সে আসলে বড় একা। এই সুখকল্পনাগুলা একান্তই তার নিজের, একার।
একজন আধা-সফল ( প্রকারন্তরে আধা-ব্যার্থ ) মানুষের চরিত্রের একটা পার্ফেক্ট ছবি হলো এই জাহাংগীর।
*

ইলিয়াসের এই গল্পটা তাই আমার খুব প্রিয় গল্প। পড়ার পরেই আমার মনে হয়েছিলো, আরেসশালা! কেউ কইবো এইটা ইলিয়াসের গল্প?
কিন্তু, তারপরেই মনে হইছে, এই কারুকার্যময় গল্পটা পড়ার পরে যে কেউই বুঝে যাবে- এই গল্প কেবল ইলিয়াসেরই!


মন্তব্য

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ইলিয়াসের ছোট গল্প পড়া হয় নাই। উনার যে উপন্যাস মাত্র দুইটা জানতাম না। মনটা খারাপ হয়ে গেল। কারণ দুইটা পড়া হয়ে গ্যাসে।

তারেক ভাইরে ক্যাডেট কলেজের লাইব্রেরিটারে খুব মিস করি। তখন বুঝি নাই কী জিনিস আছিল।

লেখা মারাত্নক।এইডা আর না বলি।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

কনফুসিয়াস এর ছবি

হুম, লাইব্রেরীটা আসলেই অনেক রিচ ছিলো। মিস করি।
ছোট গল্পগুলা পড়ে ফেল, টাস্কি খেয়ে বসে থাকবা।

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নিবিড় এর ছবি

ইলিয়াসের বর্ণনা মারাত্মক। উনি যে সাবলীল ভাষায় দারুন নিখুত বর্ণনা দেন তা পুরা মাথায় ঝিম ধরিয়ে দেয়।
*********************************************************
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

কনফুসিয়াস এর ছবি

ঠিক! ঝিম ও তার যতগুলা প্রতিশব্দ করা সম্ভব।
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

রণদীপম বসু এর ছবি

তিনটা মাত্র গ্রন্থ দিয়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাংলা সাহিত্যে যা দিয়ে গেলেন, তা ভাবলে শতশতগ্রন্থপ্রসবকারীদের জন্য দুঃখই হয় !
আলোচনাটা ভালো হয়েছে। তবুও অতৃপ্তি রয়ে গেলো...

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

কনফুসিয়াস এর ছবি

এটাই ভাল। কারণ কবি বলেছেন, অন্তরে অতৃপ্তি রবে ইত্যাদি ইত্যাদি। হাসি
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কলেজে আমার বাংলার স্যার (আমার ভীষণ পছন্দের ব্যক্তিত্ব) "চিলেকোঠার সেপাই" এর মাধ্যমে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তবে তাঁর ছোটগল্প পড়া হয়নি।

দুর্দান্ত লিখেছেন কনফু ভাই। পড়তে ইচ্ছা করছে গল্পটা। কিন্তু হাতের কাছে এখন পাই কই?!

কনফুসিয়াস এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দূর্দান্ত, কনফু।

সে-ই প্রশ্নটা করে, এবং উত্তর জেনে আমি টের পেয়েছিলাম আপনি কতো গভীরভাবে আখতারুজ্জামান পড়েন।

কনফুসিয়াস এর ছবি

বেশি গভীরে যাওয়ার উপায় নাই, ডুবে যাওয়ার ভয় আছে। হাসি
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মাল্যবান  এর ছবি

প্রথম ওর গল্প পড়ি 'মিলির হাতে স্টেনগান' তারপর 'খোয়াবনামা'/ ব্যস, তারপর থেকেই আমি ওর লেখার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ি। খোয়াবনামা এ পর্যন্ত তিনবার পড়েছি। এবং আশ্চর্য এই যে আজ এই কিচ্ছুক্ষন আগেও খোয়াবনামার ২৭ নং পাতা পর্যন্ত পড়ে উঠলাম। অর্থাৎ খোয়াবনামা চতুর্থবার পড়া শুরু করেছি।
নিবিড় ঠিকই বলেছেন, ওর লেখা মাথায় ঝিম ধরিয়ে দেয়। কয়েকমাস অন্য লেখা না পড়লেও চলে।

কনফুসিয়াস এর ছবি

মিলির হাতে স্টেনগান আমার পড়া ওয়ান অব দ্য বেস্ট ছোট গল্প!
আরেকটা হলো- রেইনকোট।
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা পড়ে তার ছোটো গল্প পড়তে সাধ জাগছে। তার উপন্যাস অবশ্য পড়া আছে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেকদিন ধরে ভাবছি ইলিয়াস পুরোটা আবার পড়বো। গত জন্মদিনে বউকে বলেছিলাম আমাকে যেন ইলিয়াস সমগ্র গিফট করে...
করলো না... (আরে বাপ, ট্যাকা তো আমিই দিতাম) তারপর আর কেনা হয়ে ওঠেনি।
ইলিয়াস পাঠে কতটুকু ধূলো জমেছে তা আপনার লেখাটা পড়ে বুঝলাম। অচিরেই ইলিয়াস আবার পড়বো বলে মনস্থ করলাম।

লেখায় জাঝা গুল্লি বুড়া আঙ্গুল... সব...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বস, দুই কপি কিন্যেইন। ফাশট বুক দিয়া রাখলাম।

সামনে আমার জন্মদিন আইতাছে। আমি যদি সশরীরে বইটা কালেক্ট করবার নাও পারি, যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তাইলেও ডি এইচ লরেন্স (ডিএইচএল) মারফত পাঠায়া দিবা। ডর নাই, পয়সা দিবো গৌরী সেন। হাসি

জয় বাংলা।

[পোয়েটিক তুমি তুকারী, ধৃষ্টতা মার্জনীয়]
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

DHL কিন্তু দেউলিয়া ঘোষিত... চোখ টিপি

পুরুজিত এর ছবি

আমার মতে ইলিয়াস বাংলা সাহিত্যের সেরা তো বটেই, বিশ্বেরও সেরা গদ্যলেখকদের একজন।
তবে জীবনানন্দের মত তাঁরও একই সমস্যা, অনুবাদ করা সম্ভব নয় বলে সীমিত পরিচিতিই থেকে যাবে।
তবে বাংলা পাঠকদের মাঝেও তাঁর সীমিত পরিচিতি একটা ধাঁধাই থেকে গেল আমার কাছে।

কনফুসিয়াস এর ছবি

এই অনুবাদের ব্যাপারটা নিয়ে আমারও অনেক দুঃখ লাগে। অনুবাদের প্রচেষ্টা কি কখনো হয়েছিলো আসলে? জানতে ইচ্ছে করে।

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নিঝুম এর ছবি

দুনিয়ার আয়োজন করে যাচ্ছি প্রতিদিনই... এই পড়ব... এই পড়ব বলে... তার উপর আপনার এই পোস্ট । এর আগেও আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস কে নিয়ে আপনার পোস্ট টা পড়েই মূলত তার বইগুলো দেশ থেকে আনিয়েছি । আমার এক কঠিন অসুখ ভেতরে বাসা বেঁধে আছে । হুমায়ুনোসাইটিস...দুই লাইন পড়ি ...তো... সব ছেড়ে ছুড়ে ...আবার ডুবি হুমায়ুনে... ডুবেই থাকি । আর ওঠা হয় না ।

এই পোস্ট পড়ে আবার হয়ত বা বইটা নিয়ে বসব । জানি পড়া হবে না । এই করেই...

--------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

কনফুসিয়াস এর ছবি

ঠিক্না ঠিক্না। সব মিলায়ে ঝিলায়ে পড়েন।
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

তানবীরা এর ছবি

চিলেকোঠার সেপাই নিয়ে এসেছি, পড়ব।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

কনফুসিয়াস এর ছবি
দময়ন্তী এর ছবি

কনফু রে,

আমি এখন পাশাপাশি "চিলেকোঠর সেপাই' (এটা তৃতীয়বার) আর কমলকুমার মজুমদারের সাহিত্যচর্চার মূল্যায়নের ওপর একটা বই, রাঘব বন্দ্যো'র লেখা, একসাথে পড়ছি ৷ পাশাপাশি এই দুটো পড়া এক অভিজ্ঞতা বটে ৷ তোর লেখাটা পড়ে এবার ইলিয়াসের ছোটগল্প পড়তে ইচ্ছে করছে ৷ এখন পাই কোথায়? মন খারাপ
----------------------- ----
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

কনফুসিয়াস এর ছবি

আমি তো এখনো রেইনকোট বা মিলির হাতে স্টেনগান নিয়ে লেখার সাহস করি নাই। ওগুলা আরো দারুণ!

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অতিথি লেখক [অতিথি] এর ছবি

সকলের অবগতির জন্য জানাই,আমাদের এখানকার 'অনুষ্টুপ প্রকাশনী'(অনুষ্টুপ নামক লিটল ম্যাগাজিন-এর প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত ইলিয়াসের পাঁচটি গল্প নিয়ে "জাল স্বপ্ন ,স্বপ্নের জাল" নামে একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৯৭ সালে। এই গ্রন্থটিতে 'প্রেমের গপ্পো' ছাড়াও 'ফোঁড়া', 'জাল স্বপ্ন,স্বপ্নের জাল' ,'কান্না' ও 'রেইনকোট' গল্পগুলি আছে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গদ্য আমার কাছেও শক্ত লাগত। জোর করে বসে বেশ কয়েকটা গল্প পড়েছিলাম। তবে উপন্যাস পড়তে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। এবার আমার বুক শেলফ থেকে আবার আনানোর ব্যবস্থা করেছি।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

কনফুসিয়াস এর ছবি

হু, তা ঠিক। খেই হারানোর একটা ব্যাপার আছে।

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সচেতনা এর ছবি

অ তাই বলি, আখতারুজ্জামান রচনাসমগ্রের প্রথমখন্ড লাইব্রেরি থেকে কোথায় গেল!!! কেননা ---
ফিরে পড়ছি আখতারুজ্জামানের লেখা আমিও। উপন্যাস দুটো বেশ ক'বার পড়েছি আগে। এই প্রথম পড়ছি প্রবন্ধ। প্রবন্ধও যে কত সাবলীল হতে পারে, যেমন সহজ ভঙ্গী তেমনই লেখন শৈলী, ওনার লেখা না পড়লে বুঝতাম না। । ভাষাকে কী অসামান্য দক্ষতায় মুঠোর মধ্যে ধরে রেখে ঘুড়ির সূতোর মত ছাড়তে থাকেন একটু একটু করে। প্রতিটি লাইন যেন দায়িত্ব নিয়ে খুব ধীরে ধীরে তৈরী করেছেন। এত সহজভাবে বলে যান নিজের চিন্তা ভাবনা কিন্তু মোটেই এলেবেলে করে বা যাহোক তাহোক একটি শব্দও লেখেন না। প্রতিটি শব্দকে নিখুতভাবে ব্যবহার করেছেন।
ছোট গল্প নিয়ে তোমার এই লেখাও অপূর্ব হয়েছে। তোমার পর্যবেক্ষণ দারুণভাবে প্রকাশ করেছো। খুব ভাল লাগলো তোমার বর্ণনাও। যাইহোক, প্রথম খন্ড হাতে পেলে তবেই পড়তে পারবো গল্পগুলো।

কনফুসিয়াস এর ছবি

দিদি,
এই জিনিসটা আমিও ভেবেছি, এই যে ভাবনা চিন্তা করে প্রতিটি শব্দের ব্যাবহার, কিন্তু তারপরেও সাবলীল, কোথাও আটকায় না!
আর ইয়ে মানে, লাইব্রেরীর বই ওখানেই আছে, এটা আমার নিজের বই। কেউ ধার চাইলে অবশ্য দিতে পারি আবারও। হাসি

-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

কীর্তিনাশা এর ছবি

খোয়াবনামা পড়ার অভিজ্ঞতা এখনো মনে আছে -

কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম তখন। একটানা পড়তে কষ্ট হতো। আবার না পড়েও বেশিক্ষন থাকা যেত না। কেমন একটা নেশার মতো।

কনফু ভাই'র লেখার স্টাইলটা ভালো লাগছে। অন্যরকম! হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

কনফুসিয়াস এর ছবি
সচেতনা এর ছবি

'ধার চাইলে অবশ্য দিতে পারি আবারও' - তুমি আমায় আগে আবার কখন দিলে হে? দাঁড়াও, দেখি এর মধ্যে খোঁজ করে আরেকবার লাইব্রেরিতে। 'বাংলা ছোটগল্প কি মরে যাচ্ছে' শিরোনামে একটা প্রবন্ধ আছে ওনার লেখা, সেটা কি আছে তোমার কাছে? পড়ে দেখো। ছোটগল্পের প্রোটাগনিষ্ট কেও যে তিনি কীভাবে বিভিন্ন আঙ্গীকে দেখার চেষ্টা করতেন ওই প্রবন্ধ পড়লে বোঝা যায়। এবার সব গুলো গল্প নিয়ে লিখে ফেলো একেক করে। পাঠ প্রতিক্রিয়া খুব ভাল হচ্ছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।