গল্পঃ শব্দশিল্পী

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/১০/২০০৭ - ১:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

১।
এরকমটা অনেকের মধ্যেই আছে, জানি, দেখেছি অনেক। তবে আমাদের ক্ষেত্রে এটাকে পারিবারিক বদভ্যাসের বিশেষ মর্যাদা দিয়ে দেয়া যায় অবশ্য। এ ব্যাপারটা মানে, এই ধরণের আলটপকা আশাবাদ অথবা ভবিষ্যদ্বানী করে বসাটা।
আমার ছোট কাকা যেবার দশম শ্রেণীর জীববিজ্ঞান ব্যবহারিক ক্লাশ করার সময় ইশকুলে প্রায় বীরদর্পে একটা অজ্ঞান ব্যাং কাটাকুটি করে তার পিত্তথলি আর পাকস্থলির সঠিক অবস্থান দেখাতে গিয়ে গলদঘর্ম হলেন, আমার দাদী সেদিন ততোধিক বীরোচিত স্বরে ঘোষণা দিয়ে বসলেন, 'ওরে দ্যাখ, দ্যাখ, পোলায় আমার ডাক্তর হইয়া গ্যাছে।'
তার বহু বছর বাদে পড়াশোনার পাট সমাপ্ত করে ছোট কাকা ডাক্তার হননি অবশ্য, হয়েছেন ফরেস্ট অফিসার। কিন্তু তাতেই বা কী? এরকম বাণী বর্ষণ সেখানেই থেমে থাকেনি। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময়ে আমি একদিন গলা কাঁপা কাঁপা করে দুনিয়ার সমস্ত আবেগ সেখানে ঢেলে দিয়ে রবি ঠাকুরের 'বীরপুরুষ' কবিতা আবৃত্তি করলাম, 'মনে করো যেন বিদেশ ঘুরে, মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে...।' নেহাতই খেয়ালের বশে, অথবা হয়তো, ইশকুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একটা কিছু করে দেখাবার প্রস্তুতিই ছিলো সেটা। এর বাইরে আমি আলাদা করে কিছু ভাবি নি, তবে দাদী-পুত্র আমার বাবা ঠিক তার গরবিনী মায়ের মতই সদর্পে জানান দিলেন, ছেলে তাঁর বড় হয়ে একদিন দেশবরেণ্য আবৃত্তিকার হবে।

এখানে একটুখানি বলে রাখি, গলাটা আমার মন্দ ছিলো না কোনমতে। ইশকুল বা জেলা শহরের নানারকম আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রায় ডজনখানেক ধাতব পুরস্কার এ কথাটাকে কতটুকু সমর্থন করে, ঠিক নিশ্চিত নই, তবে, তবুও, যে বয়সে নাকের নিচে হাল্কা গোঁফের রেখা দেখা দিলো আমার, আর গলা ভেঙে খানিকটা ফ্যাসফ্যাসে, খানিকটা ঘষা কাঁচ, এবং ততোধিক কিড়মিড়ে; ঠিক তার আগ পর্যন্ত আমি ছিলাম একজন সফল ক্ষুদে আবৃত্তিকার।

গলা ভেঙে যাবার পরেও আশ্চর্যভাবে তার কোন পরিবর্তন হয়নি। বরঞ্চ সময় গেলে পরে, আমার আবৃত্তিকারের আসন আরো বেশি পাকাপোক্ত হয়ে উঠলো নিজে থেকেই। দু'পাশে ঘড়ির পেন্ডুলামের মত মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে আগে যখন রিনরিনে কণ্ঠে আবৃত্তি করতাম, 'বাবুদের তাল পুকুরে, হাবুদের ডাল কুকুরে...', সেই আশ্চর্য বয়সের পরে আমি দেখলাম, তারও চেয়ে বেশি ভালো লাগে 'আমি বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত, আমি সেই দিন হবো শান্ত-' খুব জোরে জোরে পড়তে।
সেই বয়েসেই মাঝে মাঝে বুকের মধ্যে পুলক লাগতো খুবই, যখন, বাবার কবিতার বই থেকে লুকিয়ে পড়তাম, 'কেউ কথা রাখে নি...।' আর কী আশ্চর্য, চোখ বুজলেই আমার নিজের কাছেই মনে হতো, যেন আমি নই, পাশ থেকে দাঁড়িয়ে বাবা-ই আবৃত্তি করছেন সেটা।

এরকম সবগুলো ঘটনাকে পেন্সিলের ডগায় তুলে নিয়ে এক্স আর ওয়াই অক্ষে ফেলে দিয়ে যদি রেখা টানা যেত, তবে সেটা হয়তো একদিন আমাকে একজন নামকরা আবৃত্তিকারের বিন্দুতে পৌঁছে দিত ঠিক। কিন্তু শেষমেষ যে সেরকমটা হলো না, তার জন্যে অবশ্য আর কেউ দায়ী নয়, দায়ী আমি নিজেই।

আবার, ঠিক আমি নিজেও নই। এতদূর উঠে আসা এই ঊর্দ্ধমুখী গ্রাফটির কোথাও কেন যে ব্যাপারটা আগেই ধরা পড়লো না, আদতে আমি নিজেও সেটা বুঝতে পারিনি।

ঘটনা হচ্ছে এই যে, আমি 'হৃদয়' শব্দটা ঠিকঠাক উচ্চারণ করতে পারি না!

আমি জানি, ব্যাপারটা অবিশ্বাস্যের কাছাকাছি, কিন্তু কোন এক দৈব দূর্বিপাকে এটাই সত্যি।
আমার জিভে এই অদ্ভুত আড়ষ্টতা আছে, বহুবার চেষ্টা করে দেখেছি, হৃদয় বলতে গেলে আমি হয় হিদয় বলে ফেলি, অথবা রিদয়। এই হি আর রি এর মাঝখানে যিনি বসে আছেন, সেই হৃ বেচারা কিছুতেই আমার আয়ত্বে আসেন না। এমনিতে বলবার সময় চট করে বলে ফেলি, কেউ টের পায় না, কিন্তু আবৃত্তির ব্যকরণ তাকে শুদ্ধ মানবে কেন?

এ ব্যাপারটা প্রথমবার টের পাওয়াটা বেশ লজ্জাজনক ছিলো আমার জন্যে। আমাদের আবৃত্তি গোষ্ঠীর কোন এক রিহার্সালের দিন, কোন একটা কবিতায় যেন হঠাৎ করেই এই নিটোল কোমল শব্দের আবির্ভাব। আমি আমার এতদিনকার আত্মবিশ্বাস গলায় এনে দরাজ কন্ঠে সেটা বলতে গিয়ে নিজেই টের পাই, হচ্ছে না তা। ঠিকঠাক আসছে না। পরপর বেশ কয়েকবার চেষ্টার পরেও জিভে সায় দিলো না। আমি বেশ আহত হলাম, অবাক হলাম। সে চেষ্টায় আপাত ক্ষান্ত দিলাম। যদিও সেদিন হলের রুমে ফিরে একটা দীর্ঘ সময় আমার কেটে গেল এই হৃদয়-কে হৃদীকরণ প্রক্রিয়ায়। আমাকে হতাশায় ডুবিয়ে আমার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ প্রমাণিত হলো। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, কেমন করে এটা সম্ভব হলো যে শৈশব কৈশোরের এতগুলো সময় আমি সব 'হৃদয়'হীন কবিতাই শুধু আবৃত্তি করে গেছি! আমি বেশ বুঝে গেলাম একজন হতে-যাচ্ছেন-স্বনামধন্য আবৃত্তিকারের এহেন সীমাবদ্ধতা মানায় না একদম, শেষমেষ যেটা হলো, আমি আবৃত্তিই ছেড়ে দিলাম।

কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই গলা অথবা কণ্ঠের ওপর আমার দখল ছিলো বেশ ভালো। পুরোপুরি হরবোলা না, কিন্তু তার কাছাকাছি মানের নকলবাজ ছিলাম আমি। অনেক বিখ্যাতদের আবৃত্তিতো বটেই, এমনকি যে কোন গায়কের গায়কী বা কণ্ঠ চট করে অনুকরণ করাটা আমার কাছে ছিলো রীতিমতন ডাল-ভাত। আশ পাশের যে কারো মত করে কথা বলাটাও খুব সহজ ছিলো আমার কাছে।

আবৃত্তি থেকে সরে আসার পরে যেটা হলো, এরপর থেকে এইসব খুচরো দুষ্টুমিই করতে থাকলাম আমি। বন্ধুদের আড্ডায় বা কারো জন্মদিনে, এরকম হরবোলাগিরি করে অতি ক্ষুদ্র পরিমাণ আনন্দদান, এবং তার বেশি কিছু নয়। আর, আবৃত্তি তো একদমই নয়।

আবৃত্তি নিয়ে কোন দুঃখ নেই মনে, এরকম কথা বলার মতন শক্ত মিথ্যেবাদী আমি নই। তবে, আমি আর আবৃত্তি করছি না, এই নিদারুণ ব্যাপারটা দেখবার জন্যে বাবা আর বেঁচে নেই, এইটুকু ভেবে মনে খুব শান্তিই পাই বরং। কারণ, আমার চেয়েও বেশি আবৃত্তিপাগল ছিলেন আমার বাবা। তিনি বলতেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রচন্ড কষ্টের মাঝে কখনও কখনও অনেকের মনোবল টলে যেত। রাতদুপুরে সহযোদ্ধাদের কেউ কেউ হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠতো বাড়ির কথা ভেবে। সেসময় মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ফিরিয়ে আনতো স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে ভেসে আসা ভরাট গলার আবেগী সব গান আর সহযোদ্ধাদের গলায় এইসব বিদ্রোহে ভরপুর সব কবিতা। এটা ছিলো একটা টনিকের মত, যোদ্ধাদের কাছে, বাবা বলতো। সেই স্মৃতিময়তা থেকেই হয়তো তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলে আবৃত্তি করেই নাম করুক, অন্য কিছু নয়।

# বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে যাবার কিছুদিন পরে বেকারত্বের ছায়া যখন মাথায় প্রায় পাকাপাকি আসন গেড়ে নেবার পাঁয়তারা করছিলো, ঠিক তখুনি একদিন রেডিওতে পরীক্ষা দিয়ে সংবাদ পাঠক হিসেবে চাকরি পেয়ে গেলাম সেখানে। এটা খুব ভাল হলো আমার জন্যে, কাজ চলে যাবার মতন পয়সা আসে সেখান থেকে। মিডিয়া জগতে অল্পবিস্তর আরও কিছু চেনাজানা ছিলো, তাদের বদান্যতায় মাঝে সাঝেই নানা রকম বিজ্ঞাপনে কন্ঠ দিয়ে বেড়াই, সেখান থেকেও কিছু উপার্জন হয়। এবং সব মিলিয়ে মোটামুটি নির্ঝঞ্ঝাটেই মাস কাবার হয়ে যায় আমার।

জীবনটা মোটামুটি এ ভাবেই চলছিলো, নির্দিষ্ট গতিজড়তায়। নিউটনের প্রথম সূত্র মেনে হয়ত কেটেও যেত কোন বিশেষ পরিবর্তন ছাড়াই, যদি না কোন এক ঝড়-বৃষ্টির সন্ধ্যায়, কার্জন হলের মূল দালানের এক কোনে, মিলন ভাইয়ের ক্যান্টিনে আমাদের পুরনো আড্ডায় প্রায় হুট করেই আমার বন্ধু সজীবের সঙ্গে আমার দেখা না হয়ে যেত।

২।

সজীব আর আমি একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। পড়েছি কি আসলে? আমরা দু'জনেই ছাত্র ছিলাম, একথা সত্য। কিন্তু আমি সবসময়েই ব্যস্ত ছিলাম আমার আবৃত্তি সংগঠন নিয়ে, আর সজীব পড়ে থাকত থিয়েটার পাড়ায়। এতদিন বাদে দেখা হবার পরে সজীব জানতে পারল যে আমি আবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছি; আর আমি জানলাম, একটা লম্বা সময় অনেক ঠুকঠাকের পরে অবশেষে নিজেদের একটা দল গড়েছে ওরা, ছোট্ট পরিসরে বেশ নাম-ডাকও করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। শিল্পকলা একাডেমী অথবা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে প্রায়ই নাটক প্রদর্শনী হয় ওদের।

সেদিন আকাশে মেঘ ছিলো অনেক, এ মাথা থেকে ও মাথা কালো চাদরের মতো করে ঢেকে দেয়া মেঘদল। গুড় গুড় শব্দ কিছুক্ষণ পর পর, রাস্তায় একগাদা অন্ধকার আর পানি পাশাপাশি জমাট বেঁধে বেঁধে আছে। এবং, কাকতালীয়ভাবে আমার সেদিন কোথাও যাবার ছিলো না। বহুদিনের বাদে সজীবের সাথে ঘন্টা দুয়েক আড্ডার পরে তাই ও যখন আমাকে ওদের রিহার্সাল দেখাতে নিয়ে যেতে চাইলো, আমি বারণ করবার কোন কারণ খুঁজে পাই নি। তৎক্ষনাত মাথা নেড়ে রাজি হয়ে গেলাম আমি।

সজীবের সাথে ওদের নাটকপাড়ায় গিয়ে আমি গভীরভাবে মুগ্ধ হলাম। কমবয়েসী সব ছেলে মেয়ে, ভীষণ প্রাণোচ্ছল পরিবেশ।

আচ্ছা, নাটকের সাথে কি আবৃত্তির কোন আত্মিক যোগাযোগ আছে? আমার নিজের ধারণা, বর্তমান সময়ে শিল্পের এই দুই ধারাকে পরস্পরের আত্মীয় বলা চলে, হয়তো রক্তসম্পর্কের বললেও আমার কোন আপত্তি নেই। কারণ, দুটো ক্ষেত্রেই শব্দ বা সংলাপ বলার একটা আলাদা আবেদন আছে এদের, যেটার ওপর নির্ভর করে বদলে যেতে পারে আবৃত্তি বা নাটকের মান।
ঠিক এ কারণেই হয়ত আমার ভাল লাগছিলো ওদের রিহার্সাল দেখতে।

সেই ভালোলাগা থেকেই পরবর্তী কয়েকটা দিনেও আমি ওদের নাটকপাড়ায় গেলাম। অনেকের সাথে চেনাজানা হলো, একটা সময়ে ওদের আড্ডার সাথে এত বেশি মিশে গেলাম যে, প্রায় প্রতিদিনের অফিস শেষে ওখানে যাওয়াটা আমার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেলো। সবার সাথেই ভীষন খাতির হয়ে গেলো আমার। শুধু-নাম-জানা একটা উটকো লোকের পর্যায় পেরিয়ে আমি ওদের বন্ধু হয়ে গেলাম অল্প দিনেই। আর তারও কিছুদিন বাদে আমার কার্যকারিতাও প্রকাশ পেতে লাগলো। মাঝে মাঝে কেউ রিহার্সালে না এলে, নির্দ্ধিধায় আমাকে ডামি বানাতো ওরা। আমি সেই অনুপস্থিত অভিনেতার সংলাপ আউড়ে যেতাম, আর ওরা বাদ-বাকি অভিনয় করে যেত।

অবশ্য অভিনয় নয়, আমার সবচেয়ে বেশি মজা লাগতো প্রম্পটারের কাজ করতে। পুরো নাটকের স্ক্রিপ্ট হাতে ধরিয়ে দেয়া হতো আমার, সেটা নিয়ে ওদের পাশে বসে থাকতাম। এমনিতে ওরা প্রত্যেকেই নিজেদের সংলাপ মুখস্থ করে রাখতো আগে থেকে, কিন্তু হুট করে যদি কোথাও কখনো কেউ হিমশিম খাচ্ছে বলে মনে হয়, আমি চট করে সংলাপ ধরিয়ে দিতাম।

বেশ অনেকদিন ধরে রিহার্সালের পরিকল্পনা নিয়েছে এবারে সজীবরা। নাটকটা পড়ে আমিও চরম আগ্রহী হয়ে উঠলাম, নাটকের বিষয়বস্তু মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী বিহবল বাংলাদেশ, যেখানে চারপাশের ঘোলা আলোয় শত্রু-বন্ধুর পার্থক্য করতে পারছে না লোকে। যেখানে স্বাধীনতাকামীরা বিপদগ্রস্থ, এবং দেশবিরোধীদেরই পদচারণা চারিদিকে।

এ নাটকে কাজ করতে সজীবদের দলে একটা নতুন মেয়ে এসেছিলো। এমনিতে খুব ভালো অভিনয় করে সে, আর সেই গুণেই নাটকের মূল ভূমিকায় অভিনয় করছে। কিন্তু তার একটাই সমস্যা ছিলো সংলাপ ভুলে যাওয়া। এতে যতটুকু সমস্যা হবার কথা ছিলো, তারচেয়ে বেশি হওয়া শুরু হলো কারণ, সেই মেয়েটি ভুলে তো যেতই, মাঝে মাঝে সংলাপ ওলোট পালোট করে সহ-অভিনেতাদের বিপদেও ফেলে দিত।

ঠিক ঐ সময়ে আমি পাশ থেকে প্রম্পট করে ওদেরকে সংলাপ ধরিয়ে দিতাম, আমার কাজ বেড়ে গেল সে সময়ে।

ইদানিংকার মঞ্চ নাটকে, প্রদর্শনীর দিনে সাধারণত সবাইই প্রম্পটিং ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যেতে চায়। সজীবরাও তার ব্যতিক্রম নয়। আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম, এই নাটকের শো-টা কোনমতে উৎরে গেলেই এই সু-অভিনেত্রীকে তারা বিদায় জানিয়ে দিবে।
কিন্তু আসল কথা হলো, এই প্রদর্শনীটাও তো উৎরানো দরকার। অনেক ভেবে চিন্তে শেষমেষ আমাকে বলা হলো এই নাটকটা স্টেজে যাওয়া পর্যন্ত যেন আমি প্রম্পটিং চালিয়ে যাই। আমার নিজেরও খুব ভালো লাগছিলো কাজটা করতে। তাই সানন্দেই রাজী হয়ে গেলাম।

অনেকটাই হয়তো দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত ব্যাপার, এবং আর যাই হোক, প্রম্পটিং এর সাথে আবৃত্তির যোজন যোজন পার্থক্য, তবুও ঐ যে অবিরাম উচ্চারণ করে যাওয়া একটা কিছু, আমাকে এই আনন্দটাই খুব জম্পেশ করে পেয়ে বসলো। আমি ওদের ফুলটাইম প্রম্পটার হয়ে গেলাম। এবং নিজে থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে খুব গুরুত্ব দিয়ে ভাবা শুরু করলাম।

আবৃত্তি করে করে অভ্যাস, তাই প্রম্পটিং-এর সময়েও খুব জোরে বলে ফেলতাম শুরুতে। এ ব্যাপারটা কাটানোর জন্যে আমার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিলো। গলা নরম করে কেমন করে বলা যায়, এইসব নিয়ে প্রায়শই ভাবতাম আমি। মাঝে মাঝে দেখা যেতো, অভিনয়ের প্রয়োজনে হয়তো কুশীলবরা চলে গেছে মঞ্চের একদম অপর প্রান্তে, অথচ আমি মঞ্চের এ পাশের উইংসের পেছনে বসা, ঠিক এই সময় কেমন করে সামনের সারির দর্শকদের কান ফাঁকি দিয়ে অভিনেতাদের কানে সংলাপ পৌঁছানো যায়? এই ছোট্ট ব্যাপারটি আমার কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হলো। যদিও মঞ্চ-নাটকের দর্শকেরা এই সমস্ত ছোট-খাট ব্যাপার ক্ষমা ঘেন্না করে দেন, কিন্তু তবু আমাকে যেন কী এক নেশায় পেয়ে বসল, আমার মনে হলো, এর একটা সমাধান থাকা অবশ্যই দরকার।

ঠিক এই নেশার ঘোরেই আমি যে নতুন একটা জিনিসের সাথে পরিচিত হলাম, তার সহজ নাম- ভেন্ট্রিলোকুইজম!

৩।

বঙ্গদেশে জন্মেছি বলে মাঝে মাঝেই আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলে মনে হয়। এইরকম একটা পুরোদস্তুর আজিজ সুপার মার্কেট, অথবা এরকম দুর্দান্ত নীলক্ষেত আর কোন দেশে আছে?
এ দুটো জায়গায় সপ্তাখানেক ঘুরে ঘুরে আমি ভেন্ট্রিলোকুইজম নিয়ে বেশ কিছু দারুণ বই জোগাড় করে ফেললাম। পড়তে গিয়ে মনে হলো, এরকম ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় নিয়ে আগে কেন কখনো ভাবি নি? তবে, বেটার লেইট দেন নেভার। আমি বই পড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলাম।

দেখলাম যে, ঠোঁট না নেড়ে কথা বলাটা আসলে খুব কঠিন কিছু নয়। অল্প কদিনের অনুশীলনের পরেই এ জিনিসটা আয়ত্তে চলে আসে। উচ্চারণের সময় প- বর্গীয় অক্ষর পাঁচটির জায়গা বদল করে দিতে হয় ক-বর্গীয় অক্ষরগুলোর সাথে। মোটামুটি এটাই মূলনীতি। বাসায় ফিরে অবসর সময়টুকুতে বেশ কদিন এই নিয়ে কসরৎ করলাম। সময় লাগলো খানিকটা, কিন্তু কিছুদিন বাদেই মুখের ভঙ্গিতে খানিকটা হাসি হাসি ভাব এনে কাজ চালাবার মত করে কথা বলাটা শিখে গেলাম আমি।

আমার মূল আগ্রহ অবশ্য ঠোঁট না নাড়িয়ে কথা বলার চেয়েও শব্দের প্রক্ষেপণের ওপর ছিলো অনেক বেশি।
এবং এই ব্যাপারটা দেখলাম খুব সহজ কিছু নয়।

ভেন্ট্রিলোকুইস্টরা মঞ্চে যে খেলাটা বেশিরভাগ সময় দেখান, সেটা হলো একটা পাপেট কোলে নিয়ে কথা বলানো। এই খেলাটা দেখানোর সময় শব্দের উৎস হিসেবে দর্শক দেখে পাপেট ও তার মনিব অর্থ্যাৎ ভেন্ট্রিলোকুইস্টের মুখকেই। উৎস দু'টির অবস্থান একদম পাশাপাশি বলেই এ নিয়ে তেমন কোন কসরৎ করতে হয় না।

কিন্তু মাঝে মাঝে অনেক বেশি দক্ষ ভেন্ট্রিলোকুইস্টরা চমৎকার কিছু খেলা নিয়ে আসেন, যেখানে পাশে বসা পুতুলের মুখ থেকে নয়; বরং মঞ্চের ছাদ থেকে, অথবা দর্শকের সারি থেকে আওয়াজ ভেসে আসে। আমার জোগাড় করা বই-পত্তরগুলো বলছে এটা কোন সহজ খেলা নয়। ছাদ, দর্শক সারি আর মঞ্চ, শব্দের সম্ভাব্য এই তিনটি উৎসের মধ্যে বেশিরভাগেরই এক নম্বর পছন্দ হচ্ছে মঞ্চ। কারণ, এখানে শব্দের উৎসের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা সম্ভব হয়। তবে এই ব্যাপারটায় নিজস্ব কসরতের সাথে দর্শকদের ইল্যুশানকেও কাজে লাগাতে হয় ভালো ভাবে।

আমি বুঝলাম, এইবারে আর বই পড়া বিদ্যায় চলবে না, সরাসরি গুরু ধরতে হবে।

কোন কিছু মাথায় ঢুকলে তার পেছনে লেগে থাকার একটা শক্ত প্রবণতা কাজ করে আমার মধ্যে। মাসখানেকের চেষ্টায় আমি দু'তিনটে সার্কাস দলের সাথে দেখা করে অবশেষে একজন পেশাদার ভেন্ট্রিলোকুইস্টের সাক্ষাৎ পেলাম। সার্কাসের লোকজন বললো, ইনি বিশাল এলেমদার মানুষ। অন্য লোকে তো পুতুলকে কথা বলায়, আর উনি নাকি সার্কাসের সব পশু-পাখীর মুখ দিয়ে কথা বের করেন! আমি ভাবলাম, দেখাই যাক। যত গর্জে, তত বর্ষে কি না?

এক ছুটির দিনে পুরান ঢাকার অলিতে গলিতে খুঁজে খুঁজে এক ভাঙাচোরা দালানের সামনে গিয়ে হাজির হলাম। ঠিকানা মিলিয়ে নিশ্চিত হলাম, এটারই দোতলায় থাকেন ময়নাল হোসেন, ভেন্ট্রিলোকুইস্ট।

গ্রীষ্মের ভরদুপুরে আপাদমস্তক কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়েছিলেন ভদ্রলোক। এবং সাধারণত যেটা হয়, প্রথম দেখায় খুব আশাব্যাঞ্জক কোন অনুভূতি এলো না মনে। আমি অবশ্য তা নিয়ে খুব চিন্তিত নই, আমার কাজ হলেই হলো।

ঘরের চারিদিকে হতদরিদ্রের স্পষ্ট ছাপ। মাটিতে পাটি পেতে বিছানা বানানো, ঘরের এক কোণে একটা কেরোসিনের স্টোভ, দু'তিনটা ছোট ছোট হাঁড়ি পাতিল, আর অন্য কোণে একটা তিনঠ্যাঙে টেবিল রাখা।

কী অভিপ্রায়ে তার কাছে আসা, আমি সেটা বললাম তাকে। তিনি কিছুক্ষণ মাথা চুলকে নিয়ে বললেন, 'ঠিক আছে, কদ্দুর শিখছেন, একটা পরীক্ষা দেন দেখি?'

আমি আমার এই কদিনের বিদ্যা কাজে লাগালাম, ঠোঁট না নেড়ে প্রায় নিঁখুত ভাবে একটা কবিতার তিনটে লাইন গড়গড় করে আবৃত্তি করে ফেললাম। আশ্চর্য এই, ময়নাল হোসেন আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলেন। স্পষ্ট অবজ্ঞা ওনার চোখে, মুখ ফুটে বলেও ফেললেন, 'আপনে তো মিয়াভাই কিছুই পারেন না!'

আমি সেটা জানতাম, আমার খুব বেশি খারাপ লাগলো না এ কথা শুনে, শুধু চিন্তা করছিলাম, উনি আমাকে সেই 'কিছু'টা শেখাতে পারবেন তো?

প্রশ্ন শুনে উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন, তারপর ঠোঁট দুটো একটুও না নেড়ে স্পষ্ট করে আমাকে বললেন, 'শিখামু নে। কিন্তু কত টাকা দিবেন?'

আমি ভয়াবহ চমকে উঠলাম। এরকম কিছুর জন্যে শুরু থেকেই প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু এই ব্যাটা এমন করে কথাগুলো বললো যে আমার মনে হলো, আমার মাথার পেছন থেকে যেন কেউ কথা বলে উঠলো!
প্রাথমিক চমক কেটে যাবার পরে খানিকটা মজা পেলাম আমি ব্যাপারটায়।

ঠিক হলো, সপ্তাহে দুদিন করে আমি আসবো তার কাছে,আপাতত। মূলত ইচ্ছেমতন শব্দের উৎস বদলানোর কৌশলটাই শেখাবেন তিনি আমাকে।
কিছু টাকা অগ্রীম চাইলেন ময়নাল হোসেন, আমার আপত্তি করার কোন কারণ নেই। কিন্তু ততক্ষণে আমি উঠে দরজার কাছে চলে গিয়েছি। 'টাকা কোথায় রাখবো'- এ কথা জিজ্ঞেস করতেই টেবিলের উপরে রাখা কাঁচের গ্লাশটার আশপাশের কোথাও থেকে আওয়াজ এলো, 'এইখানে রাইখা দেন, গেলাশটার নীচে!'

থতমত ভাবটা কাটাতে কাটাতে টাকা রাখলাম বলে দেয়া জায়গাটায়। তারপর সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবলাম, নাহ, ভুল লোককে ওস্তাদ বানাইনি আমি। ঠিকই আছে।

৪।
প্রায় মাস দুয়েক যাবার পরে টের পেলাম, ময়নাল হোসেন শেখান দারুণ, কিন্তু মানুষ হিসেবে একেবারে পাক্কা দুই নম্বর। সপ্তাহে দু দিনের কথা বললেও, তার মধ্যে একদিন তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না। আর যেদিন দেখা মিলতো, সেটাও সম্ভব হতো ঝাড়া দু তিন ঘন্টা অপেক্ষার পরে। আর টাকা ছাড়া তার মুখে কোন কথাই নেই।

কিন্তু সত্যিই একেবারে ওস্তাদ মানুষ।

টানা ছ'মাসের পরিশ্রমের পরে যখন আমার মনে হলো, আমি শিখে গেছি; ময়নাল জানালেন, এতদিনে আসলে আমার অক্ষরজ্ঞান হয়েছে!

ধৈর্য্যের কমতি ছিলো না আমার। আমি লেগে রইলাম। অফিস থেকে কিছুদিন ছুটি পেয়েছিলাম। সেসময় সপ্তাহে চার-পাঁচদিন এসে পড়ে থাকতাম তার কাছে। বিনিময়ে টাকা পেতেন ভালোই, তাই ময়নাল হোসেন কোন আপত্তি করতেন না। তাছাড়াও, মুখে যাই বলুক, আমার ধারণা, শিষ্য হিসেবে মনে মনে তিনি আমাকে পছন্দই করতেন।

আমার পরিশ্রম অব্যাহত রইলো। কোথাও ভুল চুক হলেই ময়নাল ভীষন ভর্তসনা করতেন। আমি আরো ক্ষেপে উঠতাম তখন, শুধু ময়নাল হোসেনের আস্তানায়ই না, আমার নিজের বাসায়ও নাওয়া খাওয়া ভুলে সারাদিন প্র্যাকটিস করতাম।

আরও মাসতিনেক পরে একদিন, কোন এক দুপুরবেলা, ময়নাল হোসেনের ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম দেয়ালের কোণে যে চড়ুইয়ের বাসা আছে, সেখান থেকে অবিকল আমার গলার আওয়াজে ভেসে এলো, "আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে! "

এই প্রথম ময়নাল হোসেন উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন! আর আমি তখন নিজের কীর্তিতে নিজেই মুগ্ধ হয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছি।
ময়নাল খুশিতে বলে উঠলেন, 'মিয়াভাই, আপনেরে দিয়াই হইবো, খালি পেরাকটিস করতে থাকেন ঠিকঠাক। '

সে নিয়ে আমার নিজেরও কোন সন্দেহ নেই!

সজীবদের নাটক মঞ্চস্থ হলো তার কদিন বা'দেই।
কেমন করে যেন সেই সুন্দরী অভিনেত্রীর সংলাপ ভুল হতো না আর, তাই আমার কাজও কমে গিয়েছিলো সেখানে। যদিও প্রথম শো-এর দিন আমি প্রম্পটার হিসেবে প্রস্তুত ছিলাম সারাক্ষণ।

খানিকটা আলাপ সালাপ, কিছু গোপন চোখাচোখির কল্যাণে, এবং সম্ভবত রিহার্সালের এই লম্বা সময়ের অভ্যস্ততার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়, এই সুন্দরী অভিনেত্রীর সাথে আমার প্রণয় ঘটিত একটা ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যেত না হয়ত। আমাদের চারপাশের অনেকেই সেরকমটা আশা অথবা আশংকা করেছিলো, প্রকাশ্যে ও মনে মনে। আবার শুভাকাঙ্ক্ষী কেউ কেউ মেয়েটির নানা আচরণের প্রেমময় ব্যাখ্যা হাজির করতে লাগলো আমার কাছে, কিন্তু রেডিওর সংবাদ পাঠ করতে করতে আমার জীবনটাও সম্ভবত সংবাদের মতই একঘেয়ে হয়ে উঠেছিলো। নাটক বা সিনেমার স্থান নেই সেখানে কোনও। তাই, সেই প্রাণয়িক সম্ভাবনাও অচিরেই মাঠে মারা গেলো।

সজীবদের নাটক কিন্তু বেশ প্রশংসিত হলো। এই সময়ের এমন চমৎকার প্রতিফলন ছিলো নাটকে যে, সবাইকেই তা নাড়া দিতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে সংসদ ও দেশের রাজনীতিতে একাত্তরের স্বাধীনতা বিরোধীদের উপস্থিতির প্রতি সাহসী কটাক্ষ, সমালোচকরা সেসবের বিস্তর প্রশংসা করলেন। পত্রপত্রিকাগুলোও দেখলাম ওই অংশগুলোকেই ফোকাস করেছে বেশি।

কিন্তু কদিন বাদেই পরিস্থিতি খানিকটা পাল্টালো। একটু বেশিই কি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেলেছিলো ওরা? সম্ভবত তা-ই। কারণ, সপ্তাখানেক বাদে একেবারে আকস্মিকভাবে সরকারের ওপর মহল থেকে নির্দেশ এলো, এই নাটক আর মঞ্চস্থ করা যাবে না, প্রদর্শনী বন্ধ করতে হবে। কারণ হিসেবে বলা হলো, দেশের ভাবমূর্তির জন্যে ক্ষতিকর এই নাটক। দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে যে সামগ্রিক ঐক্য, তার প্রতি হুমকি আসতে পারে এই নাটক মঞ্চস্থ হলে।

স্বাধীনতার এত বছর পরে এই দেশে যে এইরকম কোন কিছুর সামনে পড়তে হবে, আমরা কেউই তা ভাবিনি আসলে।
পরবর্তীতে উঁচু মহলে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, সরকারের একজন মন্ত্রীমহোদয়, যে কিনা একাত্তরে রাজাকার বাহিনীর একজন হর্তাকর্তা ছিলো, সেই বেলায়েত হোসেন হাশেমী'র নির্দেশেই নাকি এই গোলমাল।

ভীষণ রাগ হলো আমার, দুঃখ পেলাম আমরা সবাই। সজীবরা তো পাগলের মত হয়ে গেলো প্রায়। কিছু পত্রিকা লিখলো আমাদের পক্ষে, সুশীল সমাজের অনেকেই এর নিন্দা জ্ঞাপন করলেন। কিন্তু আমরা স্পষ্ট টের পেলাম, এই অশুভ শক্তির ক্ষমতার শেকড় এখন অনেক গভীর পর্যন্ত চলে গেছে। আমাদের কিছু করার ছিলো না আসলে। নিরুপায় আমরা সবাই।

সজীবদের দলের রিহার্সাল অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ হয়ে গেলো। এবং একটা বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে আমিও অবসরকালীন সময়টায় আগেরমতন বেকার হয়ে গেলাম। ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ জমেছিলো অনেক, কিন্তু সেটা প্রকাশের উপায় জানা নেই।

আমি আবারও পুরনো আড্ডাগুলোয় ফিরে গেলাম। বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দেবার কাজ আরেকটু বেশি বেশি নিতে লাগলাম। আর সেই সাথে চলতে থাকলো আমার ভেন্ট্রিলোকুইজমের প্র্যাকটিস।
খানিকটা দক্ষ হবার পরে এটার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে গেলো। কিন্তু আমার নতুন এই ব্যাপারটার কথা কাউকে জানাই নি কখনো, তাই মজা বেড়ে গেলো আরো।

সেদিন যেমন, বন্ধুদের আড্ডায় বসে আছি। আসিফ আমার থেকে একটু দূরে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলো। আমি অল্প খানিকটা মাথা নীচু করে ওখানে বসেই ওর কানের পাশে কথা বলে উঠলাম, 'কি রে, কী খাস?'

আসিফ বাম দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো! ওপাশে কেউ নেই। খানিকটা চা ছলকে পড়লো ওর প্যান্টের ওপরে।
আমি ভালোমানুষের মতন মুখ করে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ' কী হইছে রে?'
ও বলল, 'কই না, কিছু না।' তারপরে খানিক পরে পরে ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। ভুত টুতই ভেবে বসেছে কি না কে জানে, আমার বেদম হাসি পেল তাতে।

অফিসে বা বাসে, অথবা রাস্তায় এরকম মজাটা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেলো আমার। একেবারেই নির্দোষ দুষ্টুমি, জানি, তবু নিজেকে চোখ রাঙাই মাঝে মাঝেই, খুব বেশি বেশি যেন হয়ে না যায়।

এরকম আরো কয়েকটা একরৈখিক মাসের পরে একদিন, পত্রিকায় একটা খবরের ওপরে চোখ পড়লো আমার। সেই খবরটা পড়তে পড়তেই মাথার ভেতরে একটা অদ্ভুত বুদ্ধি চিড়িক দিয়ে উঠলো।
আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়?

৫।

হিসেব করে দেখলাম, হাতে সময় আছে সাতদিন। এর মধ্যেই সবটুকু প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।
বেশ কিছুদিন দাঁড়ি কামালাম না ইচ্ছে করেই। মুখ জুড়ে বেশ অনেকটুকু চাপানো দাঁড়ি গজিয়ে গেল। দরজা জানালা আটকে এ কয়দিন আচ্ছা মতন প্র্যাকটিস করে গেলাম। গলার স্বর পালটে অন্য রকম করাটাই অভ্যাস করলাম বেশি বেশি। শব্দগুলোকে জায়গামতন থ্রো করাটা রপ্ত করলাম বেশ করে।

তারপর সেই নির্দিষ্ট দিনে একটা পুরনো পাঞ্জাবী আর মাথায় একটা সাদা রঙের টুপি চাপিয়ে বের হলাম বাসা থেকে। যাবার আগে সেই পত্রিকার পাতাটা আবার দেখে নিলাম ভালো করে। হুম, ঠিকই আছে। পল্টনের মাঠে আজ বেলা একটা থেকে বিশাল সমাবেশ হবে। ওইখানে বক্তৃতা রাখবে মন্ত্রী বেলায়েত হোসেন হাশেমী।

একটু আগেই পৌঁছে গেলাম আমি পল্টনের মাঠে। মঞ্চের যত কাছাকাছি থাকা যায় তত সুবিধে।
লোকে লোকারণ্য হতে বেশি সময় নিল না। এই রাজনৈতিক দলটির মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের তৎপরতা দেখে অবাক হতে হয় আসলে। পূর্বপুরুষদের খুনীরা কেমন করে ভোল পালটে আজ বন্ধুর ছদ্মবেশ নিয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, অথচ কেউ সেটা টেরও পাচ্ছে না!

প্রায় ঘন্টাখানেক রোদে পুড়ে অপেক্ষার পরে বক্তৃতা শুরু হলো। আঁতুড়ঘরেই যে বাংলাদেশকে হত্যা করতে চেয়েছিলো খুনীরা, সেই বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্যে তাদের মুখ থেকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে আসার আহবান শুনতে শুনতে বমি এসে যাচ্ছিলো আমার। গায়ে জ্বলন ধরে যাচ্ছিল!

অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটে। মঞ্চে উঠে দাঁড়ায় দলের প্রধান নেতা বেলায়েত হোসেন হাশেমী।
সাদা পাঞ্জাবী পায়জামা পরনে। সাথে নকশীদার কটি। মাথায় টুপিতেও ক্যালিগ্রাফী। সাদা দাঁড়িতে আবার মেহেদী লাগানো, একটা নূরাণী ভাব তার সারা চোখে মুখে।
দু' হাত উঁচিয়ে ধরে তিনি সমর্থকদের অভিবাদনের উত্তর দিলো অনেকক্ষণ। প্রসন্ন হাসি তার মুখে সার্বক্ষণিক ঝুলানো।
হাত দিয়ে সামনের মাইকটা ঠিক করলো হাশেমী, তার বক্তৃতা শুরু হবে এখুনি।

আমি আস্তে একটা কাশি দিয়ে নিজের গলা পরিষ্কার করে নিলাম।
সময় ঘনিয়ে এলো। বেলায়েত হোসেন হাশেমী মাইক্রোফোনের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে আনলো।

আমি খানিকটা মাথা নীচু করে, ঠোঁট না নেড়ে নিজের সর্বোচ্চ দক্ষতা প্রয়োগ করে প্রায় বারো গজ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ নরপিশাচটার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলাম, ' তুই রাজাকার'!

হাশেমী, প্রথমত, হতভম্ব হয়ে গেলো। মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বারবার। এখনো বুঝে উঠতে পারছে না আসলে কী হচ্ছে এখানে। ঘৃণায় আমার অন্তর বেঁকেচুরে গেলো।
সে আবার এগিয়ে এলো, মাইক্রোফোনের কাছে মুখ এগিয়ে আনতেই আমি তার অন্য কানে বলে উঠলাম, 'তুই একটা আস্ত রাজাকার! রাজাকার, রাজাকার, রাজাকার'।
হাশেমী পাগলের মত বন বন করে মাথা ঘোরাতে লাগলো চারপাশে। চিৎকার করে বলতে লাগলো, 'কে কে, কে কথা বলে? কে?? '

মঞ্চে উপস্থিত অন্যান্য নেতারা ততক্ষণে চট করে উঠে দাঁড়িয়েছে। এইবার আমার স্বর পৌছে গেলো মাইক্রোফোনের কাছে। আমি স্পষ্ট করে বলে উঠলাম, 'হাশেমী, তুই একটা নরপশু, তুই ঘৃণ্য রাজাকার, তোর মরণ হোক।" শক্তিশালী মাইকের কল্যাণে সেটা ছড়িয়ে পড়লো পুরো জনসমাবেশে।
হাশেমী বুকে হাত দিয়ে স্টেজে লুটিয়ে পড়লো। অন্য নেতারা বিহবলতা কাটিয়ে উঠে ধরতে গেলো তাকে। পুরো সমাবেশ জুড়ে তখন হৈ হৈ রব। ধর ধর করে চিৎকার করছে সবাই। কিন্তু কে ধরবে আর কাকেই বা ধরবে কেউই বুঝতে পারছে না সেটা! চারপাশে বিশৃংখলা। জনতা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না যা শুনেছে তারা ঠিক শুনেছে কি না। এই অবিশ্বাস্য কান্ড কেমন করে ঘটলো!

এই হট্টগোলের মাঝ দিয়েই ফাঁক ফোকর গলে আমি সমাবেশ ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। ফুরফুরে লাগছে মনটা খুব। কেমন যেন মুক্তির আনন্দ লাগছে বুকের ভেতর। আপন মনেই চটুল একটা বাংলা গানের সুর শিস দিয়ে উঠলাম।

৬।
পরদিন সকালে বাংলাদেশ বেতারের খবরে বলা হলো, কে বা কারা যেন স্যাবোটাজ করেছে মন্ত্রী বেলায়েত হোসেন হাশেমীর সমাবেশে। জোর তদন্তে নেমেছে সিআইডি, মাইক্রোফোনগুলোকে গোয়েন্দা বিভাগের কাছে পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে দেখার জন্যে। যাদের কাছ থেকে ভাড়া আনা হয়েছিলো মাইক, পুলিশ তাদেরকে দেশদ্রোহীতার অভিযোগে জেলে পুরেছে। অবশ্য গ্রেফতার করে এক প্রকার প্রাণে বাঁচিয়েছে তাদের। কারণ, তৌহিদী জনতা ইতিমধ্যেই সেই মাইকের দোকান আগুনে জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করে ফেলেছে।

মন্ত্রী মহোদয় এখন শারীরিকভাবে সুস্থ আছে। তবে একটা মাইনর স্ট্রোক হয়ে গেছে তার। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, মন্ত্রী হাশেমী নাকি হঠাৎ হঠাৎই পাগলের মত চারপাশে তাকিয়ে 'কে কে' বলে চিৎকার করে উঠছে!

রেডিওর সকালের অধিবেশনে নিজের মুখে এই খবর পড়তে পড়তে আমার পেট ফেটে হাসি পাচ্ছিলো। কিন্তু চাকরি বাঁচানোর তাগিদে বহুকষ্টে সে হাসি চাপতে বাধ্য হলাম।
বাড়ি ফিরে, বিকেলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফিনফিনে দাড়িতে হাত বুলোতে বুলোতে ময়নাল হোসেনের উদ্দেশ্যে মনে মনে সেলাম ঠুকলাম একটা। তারপরে হাত বাড়িয়ে আজকের পত্রিকার পাতাটা খুলে বসলাম। এই দলটির রাজাকার নেতাদের পরের সমাবেশটা কোথায় হবে, সেটা আগে থেকেই জানা থাকা দরকার আমার।

-------

মার্চ, ২০০৭


মন্তব্য

অমিত আহমেদ এর ছবি

এক টানে পড়া শেষ! এমন গল্প পড়লে মনে হয় কেন অহেতুক লেখার চেষ্টা করি! অসাধারণ হয়েছে, অসাধারণ! আরো চাই। হুট হাট আরো ৪/৫ টা নামিয়ে ফেলেন দেখি!


ব্লগস্পট | অর্কুট | ফেসবুক | ইমেইল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

একটানে পড়ে গেলাম। কনফুসিয়াসের লেখা গল্প; আর খুব বেশি বলার দরকার নেই।

কনফুসিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ।
গল্পের দুই মহারথীর মন্তব্যে ভরসা পেলাম।

যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

গল্পের পেছনের গল্পটা কি আগ্রহী পাঠককে জানানো যায়? মানে, এরকম একটা আইডিয়া লেখকের ভাবনায় আসলো কেনো,কিভাবে?

কনফুসিয়াসকে খুঁজে পাওয়া গেলো আবার । শর্তহীন ৫ তারা ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কনফুসিয়াস এর ছবি

হাসান ভাই,
বাস্তবতা হচ্ছে যে, আমরা সবাই বীরপুরুষ নই। মৌচাক ভাঙ্গতে গেলে তাই গামছা জড়িয়ে মুখ ঢেকে যাওয়াটাই মঙ্গল।
এই গল্পের পেছনের গল্প তাই একজন অ-বীরপুরুষের গল্প, তার অক্ষম ক্রোধের গল্প।
আর কিছু বলার নেই।

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নিঘাত তিথি এর ছবি

আসলেই অসাধারণ হয়েছে রে।
অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে এরকম সৃষ্টির সময় পাশে থাকার কথা মনে করে।
এইরকম ডাইমেনশনাল গল্প বোধহয় একটানা পড়ার পাঠক সচলে আছে। এরপর থেকে একটানাই দিস পুরোটা।

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ঝাক্কাস আইডিয়া!!
এমন যদি হতো! চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কনফুসিয়াস এর ছবি

সর্বনাশ! এই জিনিস জায়গা বদল করে সামনে চলে এলো কেমন করে?
আমি তো একটুখানি এডিট করে সংরক্ষণে ক্লিক করলাম শুধু! মন খারাপ
আমার কইলাম কুনো দোষ নাই!
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

স্যাটাস চেইঞ্জ করলে পাবলিশ ডেইট আপডেট হয়। অর্থাৎ খসড়া থেকে কিংবা নিজ ব্লগ থেকে প্রথম পাতায় সিলেক্ট করলে এটা হয়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

কঠিন হয়েছে! কঠিন!! ব্রাভো!!! এরকম আরো ফ্যান্টাসী গল্প চাই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

??? এর ছবি

বাহ্ সুন্দর!! আচ্ছা, এই ধরনের প্রযুক্তি কি আসলেই আছে?
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!

সৌরভ এর ছবি

আগের ভাগ ভাগ করে দেয়া পোস্টগুলো পড়তে পারি নি।
তাই এক সাথে পড়ে ফেললাম।

অন্যরকম ও কনফুসিয়াসিয়।
ভালো লাগলো। গল্প বলার এই ঢং টা আমি ভীষণ পছন্দ করি। চরিত্র কথা বলবেনা, কেউ একজন প্রথম পুরুষে বা তৃতীয় পুরুষে পুরো গল্পটা কবিতার ঢং এ বলে যাবে। তাতে, সহজে পাঠকের মস্তিষ্কে ঢুকে যাওয়া যায় আর পাঠকও খুব আপন ভাবতে থাকে চরিত্রগুলোকে। অনেকটা হৈমন্তী টাইপ।

আমি লিখতে জানিনা, মূর্খ পাঠক। সেই অবস্থান থেকেই এবার একটু অপ্রশংসাও করি।
কিছুটা নাটকীয় ঠেকেছে শেষটা। গল্পের প্রথম চার অংশে যে চমৎকার কাহিনীর জমিন বুনন হয়, তাতে অন্যরকম কিছু ফসলের প্রত্যাশা তৈরি হতে থাকে এই পাঠকের মনে, এই সমাপ্তিতে কিছুটা ভাটা পড়ে সে প্রত্যাশায়।


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

কনফুসিয়াস এর ছবি

সৌরভ,
থ্যাংকু তোমারে। মনোযোগ দিয়ে পড়ে লম্বা একটা কমেন্ট করেছ বলে। আমি এরকম কিছুই চাইছিলাম।
তোমার কথা ঠিক, অপ্রশংসা হয় নি সেটা। শেষের দিকটা পুরোপুরি নাটকীয়।
ঘটনা হচ্ছে, এই গল্পের শেষটুকুই আসলে আমার মূল প্লট। মাথায় এই অংশটুকু প্রথমে এসে বসেছিলো, ওটার কাছে পৌছানোর জন্যেই প্রথম চার অংশের অবতারণা।
গল্পটা এর পরিণতির কারণেই ফ্যান্টাসী-র তালিকাভুক্ত হয়ে গেলো, বাস্তবমুখীতা হারালো, কিন্তু এটার গন্তব্য আগেই ঠিক করা ছিলো, তাই আমার আর কিছু করার ছিলো না।
মানুষ বাস্তব জীবনে পঙ্খীরাজে চড়তে পারে না বলেই হয়তো রূপকথা লিখে, ডালিমকুমার হয়ে কল্পনার রাক্ষস-খোক্ষস মারে।
ধরে নাও, জেনে বুঝে আমিও একটা রূপকথাই লিখলাম!

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সৌরভ এর ছবি

কী করমু কও।
লোভী পাঠক! হাসি


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

কনফুসিয়াস এর ছবি

সুমন রহমান,
ভেন্ট্রিলোকুইজম অনেকদিনের পুরোনো প্রযুক্তি। আমি যেটা লিখেছি সেটা পুরোপুরিই ফ্যান্টাসি, তবে কাছাকাছি পর্যায়ের 'ভেলকি' আসলেই দেখানো সম্ভব।

বাকি সবাইরে ধন্যবাদ, কষ্ট করে এই সুদীর্ঘ লেখার ক্ষুদ্র পাঠকতালিকায় আসার জন্যে।
-
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ছায়ামূর্তি [অতিথি] এর ছবি

এই গল্প মাত্র ২৯৭ বার পঠিত ! ১৬টা মন্তব্য।
কোন মানে হয় !

বর্ষা এর ছবি

অসাধারণ।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।

নাশতারান এর ছবি

গুরু গুরু

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

রায়হান আবীর এর ছবি

এইটা আমার সবচেয়ে প্রিয়।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- গল্পটা আগে পড়েছিলাম কিনা মনে পড়ছে না! তবে ভেন্ট্রিলোকুইজম— এর প্রতি চরম আকর্ষণ অনুভব করছি।

গল্পের বুননে ভয়ানকভাবে বাক্যহারা। শিমুলের কথাই ঠিক। পড়ার পর মনে হয়েছে, "এটা ঠিক কনফুসিয়াসের গল্প!" চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ!!!

--শাহেদ সেলিম

মূলত পাঠক এর ছবি

এই চমৎকার গল্পটা আগে পড়ি নি কীভাবে, সেটাই ভাবছি।

বাউলিয়ানা এর ছবি

ভাইরে ভাই...কি একখান গল্প। অসাধারন কাহিনি।

আমিও আগে কেন পড়লামনা সেটা ভেবে আফসোস করছি। গল্পটা পড়ে মনে হলো জীবনে যে এখনও কত কিছু করার/জানার বাকি!

রিসালাত বারী এর ছবি

এই গল্পে একটা হাতের ছাপ রেখে গেলাম। হাসি

কালামিয়া এর ছবি

আহা ! কী সুন্দর গল্প।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।