সত্তরের দশকের বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতা

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি
লিখেছেন কুঙ্গ থাঙ [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/০৬/২০০৯ - ৩:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ধনঞ্জয় রাজকুমার
আ মা র ক বি তা

এক.
নিজেদের নিষ্ঠুর যন্ত্রনার অস্তিত্ব আমরা অস্বীকার করতে পারিনা। এবার তো আমাদের হৃৎপিন্ড ফালি করা ফোটা ফোটা রক্ত দিয়ে কবিতা লেখবো। গভীর রাতে ঘুমের ভেতরে আমরা চিৎকার করে উঠি। কবিতা তুমি বিশুদ্ধ, তুমি পবিত্র, তুমি আমার ঘৃণা - মৃত্যু - পাপ - ঈশ্বর। ঈশ্বরের সাথে তুলনা করতে যেয়ে দেখি আমি কতখানি নিম্নজ, কতখানি অসহায়। আমাকে অংহকারী কর। আমি কবিতা লিখি, আমার জন্যে চাঁদের জোৎস্নার মতো সহস্র রমনী দরকার। তাদের নিয়ে থাকার বিলাসভুমি - প্রেম, পবিত্রতা, আমার নবতর পুনর্জন্ম। হ্যালো - হ্যালো - হ্যালো - লাইন আউট অব অর্ডার...

দুই.
ট্রেনের হুইশেল, মোটরের হর্ণ, প্লেনের শব্দ, ঘড়ির এলার্ম, তিনশ এগারো টাইপ রাইটারের খটখটখটখটখট, হাত থেকে পড়ে ভেঙে যাওয়া কাপ, রেডিওর ষ্টেশন খুঁজার শব্দ, আত্মহত্যার আগের নিঃশব্দতা, রক্তের কণায় অসহ্য চিৎকার মুক্তি মুক্তি, উত্তরন উত্তরন, হাজার হাজার বছরের কবিদের কবিতা পড়া আমার বুকে লাবডাব - লাবডাব - লাবডাব -

তিন.
ঈশ্বরের সাথে তুলনা করে দেখি আমি এখনো নিম্নজ। লাবডাব - লাবডাব - লাবডাব। সিস্টার দয়া করে আমার মুখে থার্মোমিটার দিন, আমার বুকে একবার কান পেতে শুনুন, হাতের নাড়ী দেখুন, কতখানি কষ্ট পেয়েছি আমি, কতখানি যন্ত্রনার মৃত্যুর হাতে ধরে আমি কবিতার কাছে আত্মসমর্পন করেছি - সব লিখে রাখুন। আম নিঃসঙ্গতার কবিতায় কার কঠিন নিয়তির মতোন স্থির নিস্তব্ধ মুখ, নিরুত্তাপ হাত? কি করলে - কি করলে আমার যন্ত্রনা এবং নারী এবং ইশ্বরের সাথে তাবৎ কথোপকথন কবিতায় বিকশিত হবে? হে ঘড়ির কাঁটা, তুমি তো টিকটিকটিকটিকটিক - একটু জিরোও - আমাকে একটু সময় দাও, আমি কবিতার সাথে একটু সময় ঘুমোবো...

চার.
হে আমার নিঃসঙ্গতা! আমার আত্মা! আমার পবিত্রতা! আমার পূণ্য! আমার পাপ! আমার ঈশ্বর! আমার কবিতা।

ধনঞ্জয় রাজকুমার আধুনিক বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার জনক। পঞ্চাশের দশক থেকে লেখালেখি করছেন। আশির দশক এবং তৎপরবর্তী কবিদের অধিকাংশ অনুসরন করেছেন তার পদাংক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : "হপনর বাবুয়ানি", "ডিগল হাতহানল মোরে", "ভিক্ষা দেনে এর আহিগিতৌ", "হমাজি গাটর পানি", "বিরহী যক্ষর এলা" ইত্যাদি। এই কবিতাটি ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত "ডিগল হাতহানল মোরে" কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া।



মদনমোহন মুখোপাধ্যায়
অ নু রো ধ

ফুলের বসন্ত এলে তোমার দুয়ারে
নিমন্ত্রন দিয়ো না আমাকে।

আজকের ভ্রমরটি সেদিন অবধি
সেদিনের গান করতে গিয়ে
তাল-ছন্দ চমৎকার কিছু গীতিকায়
যদি তার ভুল হয়ে যায়
ক্ষমা করে দিয়ো ভালবেসে
ভালবেসে তার গান শুদ্ধ করে দিয়ো

ফুলের বসন্ত এলে তোমার দুয়ারে
নিমন্ত্রন দিয়ো না আমাকে।
তোমার ঐ বসন্তের কালে
আমার সম্মানে রাখা আসনখানির কথা ভাবতেই
অন্য এক ভয় ঢুকে গোপনে শরীরে
তবুও তোমার কাছে আকুল প্রার্থনা
ঘৃণার ওডারে গিয়ে তবুও ভোলো না

ফুলের বসন্ত এলে তোমার দুয়ারে
নিমন্ত্রন দিয়ো না আমাকে।

কবি মদনমোহন মুখোপাধ্যায়ের জন্ম আসামের শিংলায়। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে লেখালেখি শুরু । উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: রঙ ফিরক, তেন্না ককক্ , ঠইগ। কবিতাটি অক্টোবর, ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত 'ঠইগ' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া।



সেনারূপ সিংহ
ফো টা র তৃ ষ্ণা য়

তোমার উদ্যানে আমি ফোটে উঠবো সখী
শেফালি ও বকুলের মতোন
আলো কিবা অন্ধকারে দেখো অন্তহীন
ডালি ভরে ঝরব অবিরত।

তোমারই আলোয় আমি আলোকিত মালা
গলায় শরীরে বেঁধে রেখে
তোমাকে মোহিত করে তুলবো ধীরে ধীরে
ঘ্রান মেখে হৃদয়পদ্মের।

সেনারূপ সিংহ বিষ্ণুপ্রিয়া ষাটের দশকে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কাব্য আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। জন্ম কাছাড়ের মোহনপুর। কবিতার পাশাপাশি গানও লিখেছেন প্রচুর। প্রকাশিত কাব্যগন্থ: চিরবিরি বৌ খা, শাতনির তৌরাঙ, আনৌপী। এই কবিতাটি জুন, ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত 'শাতনির খৌরাঙ' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া।



আরো বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার অনুবাদ পড়ুনঃ
সাতজন সমকালীন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবির কবিতা
তিনটি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার অনুবাদ
ধনঞ্জয় রাজকুমারের তিনটি বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার অনুবাদ
ধনঞ্জয় রাজকুমারের আরো দুইটি কবিতার অনুবাদ


মন্তব্য

উজানগাঁ এর ছবি

ধনঞ্জয় রাজকুমার-র কবিতা অসাধারণ লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার অনুবাদের কল্যাণে কিছুটা হলেও মণিপুরি কবিতার রসাস্বাদন সম্ভব হচ্ছে। উনার আরো কিছু কবিতা পড়ানোর ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো। হাসি

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। পোস্টের নীচে ধনঞ্জয়ের আরো কিছু কবিতার লিংক দিয়েছি, আশা করি দেখবেন।


প্রান্তিক জনগোষ্ঠিগুলোর ভাষা ও জাতিগত অস্তিত্বের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমমর্যাদা দাবী করছি

মূলত পাঠক এর ছবি

আরো লিখুন।

পলাশ দত্ত এর ছবি

ধনঞ্জয় রাজকুমারের কবিতা পড়ে পরের গুলোয় এক্ষুণি আর যেতে পারলাম না। একটু সয়ে নিই ধনঞ্জয়ের কবিতাগুলি।

লেখবো শব্দটাকে লিখবো করে দিলে ভালো হয়।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

আপনার কথাই ঠিক। 'লেখবো' না হয়ে 'লিখব' হবে। এছাড়া 'আমার নিঃসঙ্গতা' হয়ে গেছে 'আম নিঃসঙ্গতা'। অন্যান্য কবিতাগুলোতেও কিছু টাইপো রয়ে গেল।

মডারেটরদের বিনীত অনুরোধ করছি অতিথি লেখকদের জন্য অন্ততঃ বানান ঠিক করার সুযোগটা রাখা যায় কিনা বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য।

উত্তম সিংহ এর ছবি

বাংলা অনুবাদ পরে ভাল লাগল। যথার্থ অনুবাদের জন্য অনুবাদকে ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।