য়ংচাক

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি
লিখেছেন কুঙ্গ থাঙ [অতিথি] (তারিখ: শনি, ১৩/০৩/২০১০ - ৪:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিয় খাবারের কথা এলে বাঙালীরা সবার আগে যেমন ইলিশের কথা বলে,তেমনি মণিপুরীদের প্রিয় খাবারের তালিকায় যে নামটি সর্বাগ্রে আসবে তা হলো য়ংচাক বা লনচাক। পার্থক্যটি হলো ইলিশ থাকে নদীতে আর য়ংচাক ধরে গাছে! মণিপুরী মুসলিমদের কথা বাদ দিলে মণিপুরীদের অধিকাংশই ভেজিটেরিয়ান এবং সেমি ভেজিটেরিয়ান (মাছ খায়, কিন্তু মাংস খায়না)। অষ্টাদশ শতকে মণিপুরীরা গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের বলয়ে আসার পর খাবার দাবারের ক্ষেত্রে অনেকখানি রক্ষনশীল হয়ে যায়। কিন্তু সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে য়ংচাক রয়ে গেছে প্রাচীন আমলের মতোই।

য়ংচাক হলো একটি বিশেষ প্রজাতির বৃহাদাকার ডাল। ডালবৃক্ষটি লম্বায় ৯০ থেকে ১০০ ফুট হয়ে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Parkia speciosa। থাইল্যান্ড, বার্মা, ইন্দোনেশিয়া, উত্তর-পুর্ব ভারতের মণিপুর এবং বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মণিপুরী গ্রামগুলোটি এই গাছটি পাওয়া যায়। থাইল্যান্ডে এক বলা হয় "স্যাটর" আর ইন্দোনেশিয়ায় এটি "পেটাই" নামে পরিচিত। শীতের প্রারম্ভেই ফুল আসে, ফুলটি দেখতে কদম ফুলের মতো দীর্ঘ ডাটাযুক্ত। একমাসের মধ্যেই ফুল থেতে য়ংচাক ধরা শুরু হয়। চমৎকার স্বাদযুক্ত য়ংচাকের ফুল নানান সালাড ও শব্জিতে ব্যবহার করা হয়। কচি য়ংচাকের ছাল ছিলে মাছ বা অন্যান্য শাকশব্জির সাথে রান্না করা হয়। আর পাকা য়ংচাকের ছাল পুড়িয়ে মুলত ভিতরের বীজটিই খাওয়া হয়ে থাকে। পাকা য়ংচাকের কড়া গন্ধ ও নির্যাস যা কোন মণিপুরীকেই কাছে টানে।

য়ংচাক দিয়ে তৈরী সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারটি হলো য়ংচাকের "ইরলপা" এবং য়ংচাকের ফুলের "সিঞ্চৌ"। ইরলপা বা ইরম্বা হলো ভর্তার মণিপুরী রূপ। আর সিঞ্চৌ বা সিঙজু হলো সালাড টাইপের খাবার। এখানে য়ংচাকের ইরমবার একটি সহজতর রেসিপি দেয়া হলো।

য়ংচাকের ইরলপা

উপকরন:
* ৩টি পাকা য়ংচাক
* ২টি আলু (মধ্যম আকৃতির)
* চাপা শুটকি (যারা নিরামিষ খান তার বাদ দিতে পারেন)
* তকপা-নিকম ( স্থানীয় ইনগ্রান্ট; বিকল্প হিসাবে তাজা ধনেপাতা ব্যবহার করতে পারেন)
* কাঁচা বা শুকনো মরিচ ৬টি
* সামান্য তেল
* লবন (পরিমানমতো)

প্রণালী:
চুলার আগুনে য়ংচাক ৩ মিনিট পুড়িয়ে ভেতরে বীচিগুলো আবরনসহ বের করে আনুন। আলু সিদ্ধ করে ঠান্ডা করুন এবং খোসা ছাড়িয়ে নিন। চাপা শুটকি চামচে গেঁথে আগুনে ঝলসিয়ে নিন। এরপর মরিচ কেটে তেলে ভেজে নিন। ঠান্ডা হলে ভাজা মরিচের সাথে সামান্য পানি দিয়ে য়ংচাকের বীচি, আলু, শুটকি ও লবন একসাথে চটকে নিন। তারপর তকপা-নিকম কুচি করে কেটে ছড়িয়ে দিন। হয়ে গেল য়ংচাকের ইরলপা।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চলুক

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিক, আপনাকে ধন্যবাদ। এই বছর য়ংচাকের ফলন খুব কম হয়েছে বললেই চলে। সারা বছরে অনেক কস্টে ৫/৬টা সংগ্রহ করতে পেরেছি। আর গাছগুলির বেশীরভাগই শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। আর যেগুলো বেচে আছে সগুলোতে ফল আসার আগেই ফুল ঝড়ে পড়ছে। এটা কি জলবায়ূগত বা পরিবেশ বিপর্যয়ের সাথে জড়িত কোন বিষয়? কার সাথে কথা বলা যায় একটু বলতে পারেন?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

নীচে বন্যরানা'র মন্তব্যটি দেখুন। উনি ভালো বলতে পারবেন।

মাহবুব রানা এর ছবি

আহহা! আগের মন্তব্যটা নতুন থ্রেডে চলে গেসে।

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

আপনি এবং বন্যরানা দুজনকেই অসংখ্য ধন্যবাদ।

হাসিব এর ছবি

এইটা খায় কিভাবে ? মানে ভর্তা জিনিসটা কি ভাত দিয়ে খায় নাকি রুটি দিয়ে খায় ? নাকি এমনি এমনি খায় ?

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

তরল ভর্তা (ইরলপা) দিয়ে ভাত খাওয়া যায়; শুকনো (পানি ছাড়া) ভর্তা যেকোন ডাল/ শাকের সাথে ভাল লাগে। আর কচি অবস্থায় য়ংচাকের পুরোটাই মাছ দিয়ে বা শাকসব্জির সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। আপনাকে ধন্যবাদ, হাসিব।

অতিথি লেখক এর ছবি

নিচেরটা কি ফল? দেখতে অনেকটা বিলম্ব/ বিলম্বির মতো। স্বাদের কথা বললেন না, টক অথবা তেতো কি?

ভাল লাগলো!

- শরতশিশির -

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

মাঝেরটা হলো য়ংচাকের ফুল, আর নীচেরটা বের করে নেয়া য়ংচাকের বীচি। ...স্বাদটা সামান্য তেতো + মিস্টি + (এই স্বাদটাকে আসলে কি বলে আমি নিজেই জানিনা... ) ।

ধন্যবাদ।

নাশতারান এর ছবি

আমার খালা থাকেন শ্রীমঙ্গলে। একবার একটা শুকনো য়ংচাক নিয়ে এসেছিলেন আমাদের দেখাতে। সেটার বীচিগুলো বের করে সাজিয়ে রেখেছি।

এগুলোই তো?

y

পরে ওখানে বেড়াতে গিয়ে মণিপুরী পল্লীতে য়ংচাক শুকোতে দেখেছি উঠোনে।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

না এগুলো য়ংচাক নয়, সেন্টাংখই নামে পরিচিত সীমজাতীয় লতাগুল্ম। য়ংচাক একটি বহুবর্ষজীবি বৃক্ষ, য়ংচাকের গাছগুলো কড়ই গাছের মতোই লম্বা চওরা। য়ংচাকের বীচি কাঁচা অবস্থায় সবুজ (শেষ ছবিটি দেখুন) এবং পাকা অবস্থায় ঘোর কালো রঙের হয়ে থাকে, সেগুলো কোন রাসায়নিক ছাড়াই সংরক্ষন করা যায় এবং এর আবরনটি এতোই শক্ত যে সারা বছর ভেতরের অংশটি কাঁচা থাকে।

মাহবুব রানা এর ছবি

যে সমস্যার কথা বললেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের সাথে এর সংস্লিষ্টতা আপাতত উড়িয়ে দিচ্ছি। কোনো ধরনের মড়কের সম্ভাবনাই বেশি । পর্যবেক্ষন ও বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষন না করে আসলে সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব না।

সমস্যা ও তার প্রভাব যদি ব্যাপক হয়ে থাকে, তাহলে কাছাকাছি বনবিভাগের অফিসে বলুন। আমাকে একটা মেইল দিন, অন্য উপায় নিয়েও কথা বলা যাবে।

rana_forএট ইয়াহু ডট কম

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

আপনার অনুমানটি সঠিক হবার সম্ভাবনাই বেশী। গুগোলে গুতাগুতি করে একটি রিপোর্ট পেলাম সেখানেও দেখলাম মড়কের কথা...

Talking to The Sangai Express, Assistant Professor of the Department of Entomology, College of Agriculture, CAU Dr Kh Ibohal said that the withering and subsequent death of Yongchak plants were caused by such pests/insects as common stem borer, Asian Long Horn Beetle locally known as (Kangchek Manbi Til), bark eating caterpillar (maku chabi til) and almond moth which bores and eats up Yongchak flower (Kakshi).

Another factor is the presence of nitrogen in Yongchak plants in relatively large quantity which enables insects to bore through their bark and survive inside the trees.

http://www.e-pao.net/GP.asp?src=1..290908.sep08

পরামর্শের জন্য এবং মেইল ঠিকানার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। যোগাযোগ রাখবো।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি একবার এর ভর্তা খেয়েছিলাম
চমৎকার

মূলত পাঠক এর ছবি

লেখা খুব ভালো লাগলো। বিষয়টি চমৎকার। কখনো খাই নি বলেই আরো কৌতূহল নিয়ে পড়লাম। আরো লিখুন মণিপুরের খাওয়াদাওয়া নিয়ে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।