ইকো পার্ক

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/০১/২০০৮ - ৪:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এটা জবা ফুল গাছ আমি কনফার্ম। কিন্তু কাঁচি দিয়ে এর পাতাগুলো চিরল চিরল করে অপরিচিত বানিয়ে এর নিচে কী একটা বিদেশি নাম লিখে রাখা হয়েছে। আমি গাছটার দিকে হাত বাড়াতেই খপ করে আমার বাম হাতের কব্জি কামড়ে ধরলো একটা ঢোঁড়া সাপ। বিশাল সাইজ। আমি থতমত খেয়ে হাত ছাড়ানোর জন্য টান দিতেই সাপটা আমার হাত কামড়ে ধরে দুলতে দুলতে গান গাওয়া শুরু করল- আহা আজি এ বসন্তে/ কত পাখি গায়/ কত ফুল ফোটে

এই গানটা আমাদের দেশের বসন্তের জাতীয় সংগীত। বসন্ত নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান হলে যাদের তাল লয় সুর জানা নেই তারাও এই গানটা দুয়েকবার গায়। কিন্তু এটা বসন্ত কাল না। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এখন বর্ষাকাল। যদিও বহুদিন থেকে কোনো বৃষ্টি নেই। সাপটা বেশ মোটা এবং ওর গলাটা আবৃত্তিকারদের মতো আরও মোটা। বিশাল শক্তি। সে দুলে দুলে তালে তালে গানটা গাইছে আর আমার দিকে চোখ নেড়ে হাসছে। আমি হা করে ওর দিকে তাকাতে দেখি পাতা-কাটা বিদেশি নামের জবা ফুল গাছের ভেতর থেকে আরো অনেকগুলো ঢোঁড়া সাপ মাথা বের করে মোটা ঢোঁড়ার সাথে সুর মেলাচ্ছে। ওদের সুর আর তাল দুটোই চমৎকার

হাতটা যেখানে কামড়ে ধরেছে সেখান থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না ডান হাত দিয়ে সাপের মুখ থেকে বাম হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করব কি না। ঢোঁড়া সাপের বিষে মানুষ মরে না। কিন্তু এর বিষ টেংরা মাছের বিষ থেকে বিষাক্ত। ঘা শুকায় না সহজে। আর তাছাড়া বিষাক্ত সাপ কামড় মারে মাত্র একটা কিন্তু ঢোঁড়া সাপ কামড়ে ফালা ফালা করে ফেলে। এখন হাত ছাড়াতে গেলে যদি সবগুলো এসে আমাকে কামড়াতে শুরু করে তাহলে বিপদে পড়ে যাব। সাপটা দুলতে দুলতে আমার হাতকে যেদিকে নিচ্ছে আমিও সেদিকে যেতে দিচ্ছি। তাছাড়া গানটা খারাপ লাগছে না

গান শেষ করে মোটা ঢোঁড়া বাকি সবগুলোর সাথে একসঙ্গে হেসে উঠে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে টুপ করে গাছের ভেতরে লুকিয়ে গেলো। আমি তাকিয়ে দেখলাম আমার কব্জি থেকে ঝিরঝির করে রক্ত বেরোচ্ছে

এখন আমাকে পিশাচ লতা খুঁজতে হবে। অনেকে এই লতাকে জার্মানি লতাও বলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে নাকি এই লতা এই দেশে ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমান থেকে এই লতার বীজ ফেলা হয়েছিল এই দেশে। এটা একটা ভয়ানক লতা। বাড়ে পঙ্গপালের মতো। যে কোনো গাছ কিংবা ঝাড়ে উঠে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে পুরো ঢেকে ফেলে আর এক ডাল থেকে আরেক ডালে টানা দিয়ে গাছের বড়ো বড়ো ডাল পর্যন্ত ভেঙে ফেলে। এগুলো একবার যেখানে হয়েছে সেখানে আগুন দিয়ে পোড়ালেও মরে না। এর জন্যই এর নাম পিশাচ লতা। এগুলো নাকি ফেলেছিল মিলিটারিদের লুকানোর সুবিধার জন্য। এর পাতায় ভয়ানক একটা দুর্গন্ধ আছে। কিন্তু এর একটা গুণও আছে। এই লতাটা অ্যান্টিসেপ্টিক। কোথাও কেটে গেলে এর পাতা ডলে রস লাগিয়ে দিলে আর ঘা হয় না

পিশাচ লতা খুঁজে পাওয়া গেলো। পাতা ডলে রসও লাগিয়ে দিলাম। কিন্তু রক্ত বন্ধ করার জন্য আমার দরকার শুকনা বালি। কাটার মধ্যে শুকনা বালি ছিটিয়ে দিলে সাথে সাথে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এখন এখানে শুকনা বালি পাওয়া কঠিন। এই জায়গাটা এমনিতেই একটু আঠালো মাটির জায়গা তার উপর এই এখন বর্ষাকাল তাই বর্ষাকালের রিয়েল লুক আনতে এই মাঠটাতে ওয়াটার পাম্প দিয়ে পানি মেরে একেবারে কাদা করে ফেলা হয়েছে

একটা জায়গায় একটু ভেজা বালি পাওয়া গেলো। ভেজা বালি কাটা জায়গায় লাগনোর বিপদ আছে। ভেজা বালির সাথে কাদা থেকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আর কাদার মধ্যে প্রায়ই হাবিজাবি বিভিন্ন ময়লা লেগে থাকে। ফলে কাটা জায়গায় লাগলে উল্টা জ্বালাপোড়া করে। কিন্তু উপায়তো নেই। ভেজা বালিই লাগালাম

হাতে একটু একটু জ্বলছে। আমি মেলা ঘুরে দেখতে লাগলাম। এই মেলাটা আমার ছোটবোনের স্কুলের বৈশাখী মেলা। যদিও আয়োজন করা হয়েছে বর্ষাকালে। এই স্কুলটাতে আমিও পড়েছি। কিন্তু একজন পিওন ছাড়া আমাকে এখানকার কেউ চেনে না। এখানে যেসকল ছাত্রছাত্রীরা পড়ে তাদের সবার বাবা-মায়ের বদলির চাকরি। আর টিচাররাও দুয়েক বছরের বেশি থাকে না কেউ। শুধু একটা পিওন আছে অনেকদিন ধরে। সে আমাকে মামু ডাকে

স্কুল ছাড়ার পর আমি এখানে আর আসিনি। কিন্তু আজকে আসলাম অন্য কারণে। বর্ষাকালের এই বৈশাখী মেলাটা মূলত জীববিদ্যা মেলা। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা উদ্ভিদ বিদ্যা আর প্রাণিবিদ্যার বইয়ে যেসকল বিষয় শিখেছে সেগুলোর সাথে মিলিয়ে বিভিন্ন জিনিস দিয়ে স্টল দিয়েছে এই মেলায়। এই মেলার সবগুলো স্টলই হয় উদ্ভিদের নয় বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর। আমার ছোটবোনের একটা স্টল আছে এই মেলায়। তার স্টলটা কেঁচোর স্টল। কেঁচোগুলো আমার

অবশ্য এগুলো কেঁচোও না। এগুলোকে আমরা জির বলি। কেঁচো থাকে মাটির নিচে আর জির থাকে কলা গাছে। কেঁচোর শরীর একটু ইলাস্টিকের মতো হয়। আর জিরের শরীর ধরলেই ছিঁড়ে যায়। কেঁচোর ভেতরে থাকে মাটি আর জিরের ভেতরে আঠা আঠা কী সব থাকে। বঁড়শিতে কেঁচো গেঁথে আমরা মাছ ধরি। কিন্তু জির কোনো মাছই খায় না

এই জিরগুলো বেশ রংবেরংয়ের। লাল-নীল-হলুদ-বেগুনি আরো বিভিন্ন চক্রাবক্রা রংয়ের জির এগুলো। এগুলো আমি ধরে এনেছিলাম পাহাড়ের ভেতর বন-কলা গাছের ভেতর থেকে। তখন আমিও স্কুলে জীববিজ্ঞান পড়ি। তেলাপোকা কাটি। কেঁচো কাটি। ব্যাঙ কাটি। আর যেকোনো প্রাণীর ছবি দেখলেও এর পরিপাকতন্ত্র কেমন হবে সে বিষয়ে গবেষণা করি। সেই সময়ে এনে একেক রংয়ে কেঁচোকে একেকটা বোয়ামে রেখেছিলাম। নিচে একটু মাটি দিয়ে কিছু পানি দিয়ে রেখেছিলাম। সেখানেই আছে এগুলো। এরপর আর এগুলোর দিকে নজর দেয়া হয়নি। কিন্তু গতকাল আমার ছোটবোন বলল সে এই জিরগুলো নিয়ে যাবে প্রদর্শনীর জন্য। এই স্কুলে সেই সবচেয়ে গরিব ছাত্রী। সে একটা পোশাক পরেই স্কুলে যায়। প্রায় মাসেই তার স্কুলের বেতন বাকি থাকে আর তাকে ক্লাসে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। স্কুলের বাকিরা বিভিন্ন প্রাণী কিংবা উদ্ভিদ কিনে এনে স্টল দিচ্ছে কিন্তু তার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তাই সে আমার জিরগুলো নিয়ে যেতে চায়। এগুলোকে সে বিদেশি কেঁচো বলে চালিয়ে দিতে পারবে

আমার কোনো কাজে লাগুক বা না লাগুক। আমি কোনো সময়ই আমার কোনো জিনিস কাউকে দিতে চাই না। আমার জিনিস আমার কাছে থেকে নষ্ট হয়ে যাবে যাক। কিন্তু অন্যকে দেবো না। এটা প্রায় সবাই জানে তাই আমার কাছে কেউ কোনো কিছু চায়ও না। কিন্তু বোনটা কী মনে করে আমার জির কিংবা কেঁচোগুলো চাইল। আমার মাও বললেন- দিয়ে দে। মেয়েটা সব সময় স্কুলে মন মরা হয়ে থাকে। এই জিরগুলো দিয়ে সে স্টল করতে পারলে সবার মধ্যে সে নিশ্চয়ই একটা পুরস্কার পেয়ে যাবে

কী মনে করে দিয়ে দিলাম। সঙ্গে বলে দিলাম একটাও যেন নষ্ট না হয়। আর আমার সবগুলো ঠিকঠাকমতো ফেরত দিতে হবে। বাড়িতে থেকে বোয়ামের ভেতর সবগুলো কেঁচোই বাচ্চা দিয়েছে। কেঁচোর ডিম থেকে বাচ্চা হয় নাকি পেট থেকে বাচ্চা হয় এখন আর আমার মনে নেই। কিন্তু এগুলো সংখ্যায় বেড়েছে। তার মানে এদের বাচ্চা হয়েছে

আমি মূলত মেলায় এসছি আমার কেঁচোগুলোকে দেখতে। এটাও আমার আরেকটা স্বভাব। যখন কোনো কিছু আমার কাছে থাকে তখন তার কথা আমার একবারের জন্যও মনে থাকে না। কিন্তু যখনই সেটা অন্য কারো হাতে যায় তখনই এটার জন্য টান বেড়ে যায়

কেঁচো দেখতে যখন এলাম ভাবলাম পুরো মেলাটা একটু ঘুরে যাই। অবশ্য সেটা মূল উদ্দেশ্য না। মূল উদ্দেশ্য হলো স্টলে যারা থাকবে তাদেরকে বিভিন্ন কঠিন কঠিন প্রশ্ন করে একটু নাস্তা-নাবুদ করা। এই জিনিসটা বেশ ভালোই লাগে। সাধারণত যারা স্টল দেয় তারা একটু ভাব নিয়েই কথা বলে। কিন্তু তাদের দৌড় বেশিদূর থাকে না। এদেরকে খামাখা দুয়েকটা প্রশ্ন করলেই তারা ঘাবড়ে যায়। এদেরকে ঘাবড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো- যে কোনো একটা বিদেশি ম্যাগাজিন বা পত্রিকার নাম বলে জিজ্ঞেস করতে হয়- গত মাসের অমুক ম্যাগাজিনটা পড়েছেন? অমুক দেশের?

যেহেতু ওই নামের কোনো ম্যাগাজিন থাকে না সেহেতু কেউই ওই ম্যাগাজিনটা পড়ার কথা না। কিন্তু যারা অতি চালাক তারা উত্তর দেয়- না গত মাসেরটা এখনও আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। ডাকে আসেতো। তাই আসতে আসতে মাসের শেষের দিকে আসে। তাছাড়া তারাতো ম্যাগাজিনটা প্রথমে তাদের দেশের বাজারে ছাড়ে। এর পরে বিভিন্ন দেশে ডাকে পাঠায়। আর আমাদের পোস্টাল সার্ভিসের যা অবস্থা; কোনো কোনো ডাক দেশের ভেতরেও দুই তিন মাসে এসে পৌঁছায় না। অবশ্য সময় হয়ে গেছে আমি আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যে পেয়ে যাব। যারা সরল তারা সরাসরি বলে ওই নামে কোনো ম্যাগাজিন সে কোনোদিন পড়েনি। আর বোকারা নামটা শুনে হা করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু চালাক-সরল এবং বোকা তিন দলই ম্যাগাজিনের কথা শুনে একটু ভয়ার্ত চোখে তাকায়। মানে একটু সমীহ করে। তখন পরের কথাটা বলতে হয়। কথাটা হলো- আপনার এই বিষয়টা নিয়ে ওই ম্যাগাজিনের গত সংখ্যায় একটা আর্টিক্যাল আছে। ওটা মূলত একটা গবেষণা প্রবন্ধ। ওমুক দেশের অতজন বৈজ্ঞানিক এই বিষয়টা নিয়ে অত বছর গবেষণা করে দেখেছেন যে আমরা বিষয়টা সম্পর্কে অতদিন যা জেনে এসছি তা আসোলে ভুল। মূল বিষয়টা হচ্ছে ডট ডট ডট

একটা কিছু বলে দিলেই হয়। কাঁচুমাচু হয়ে সব শালাই কথাগুলো শুনতে থাকে। এবং আসার সময় বলে- ভাইয়া মাঝে মাঝে আসবেন। কিংবা আমরা আপনার বাসায় যাব এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করতে। আসোলে আপনার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তাছাড়া আমাদের দেশেতো ভালো কিছু শেখার সুযোগ খুব কম...

তখন ভাব ধরে চলে আসতে হয়

কিন্তু আমি চান্সই পাইনি। ঢুকেই দেখলাম জবা ফুলের গাছ। জবা ফুলের গাছের প্রতি আমার টান মধুর জন্য। ফুলটা যখন মাত্র ফোটে তখন এর গোড়ায় মধু থাকে। ফুলটাকে তার পুষ্পাধার থেকে টান দিয়ে বের করে গোড়ায় মুখ লাগলেই চমৎকার একটা মধু পাওয়া যায়। এই পুষ্পাধার শব্দটাও আমার উদ্ভিদবিদ্যা বইয়ে পড়া। এটাকে সাধারণ বাংলায় কী বলে আমি জানি না। কাউকে কোনোদিন বলতেও শুনিনি। এটা হলো ফুলের গোড়ায় যে সবুজ খোপটা থাকে। কাপের মতো। যেটার উপর ফুলটা আটকে তাকে। সেটা

দূর থেকে দেখলাম গাছের মধ্যে অনেকগুলো ফুল। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি ওগুলো অরিজিন্যাল ফুল না। কাগজ কেটে গাছের ডালের সাথে ফুল লাগানো হয়েছে। তাও জবা ফুল না। অন্য আরো কী না কী ফুল। আর পাতাগুলোও কাচি দিয়ে চিরল চিরল করে কাটা। তো সেই পাতার দিকে হাত বাড়াতেই তো এই কাণ্ড। ঢোঁড়া সাপ খপ করে কামড়ে ধরলো আমাকে

হাতে বালু লাগিয়ে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো। ভাবলাম এই মেলার আর কিছুই দেখব না। শুধু আমার কেঁচোগুলোর খোঁজ নিয়ে চলে যাব

কেঁচোর স্টলের জায়গাটা কাদায় একেবারে জবজবে। যারা হাঁটাচলা করছে তাদের প্রত্যেকের পোশাক কাদায় সয়লাব। এতে মনে হলো আমার বোনের একটু সুবিধাই হয়েছে। সে ইচ্ছা করেই বোধহয় একটু বেশি দৌড়ঝাঁপ করেছে কাদার মধ্যে কিংবা নিজের হাত দিয়ে তুলে পোশাকের বিভিন্ন জায়গায় কাদা মাখিয়েছে। তাতে তার পুরোনো পোশাকটা আর পুরোনো বলে চেনার কোনো উপায় নেই। এবং সে যে মুখে কোনো ধরনের মেকাপ দেয়নি তাও দেখা যাচেছ না। কারণ তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাদা। আমার বোনকে দেখলাম খুব ব্যস্ত। তার স্টলের সামনেই সব চেয়ে বেশি ভিড়। এরকম জিনিস এই মেলায় আর কোনোটা নেই

এগারো ধরনের জীবন্ত কেঁচো তার স্টলে। সে আমার কেঁচোগুলোকে রং অনুযায়ী এগারো ভাগে ভাগ করে বড়ো বড়ো এগারোটা কাচের অ্যাকুরিয়ামে রেখেছে। প্রতিটা অ্যাকুরিয়ামের গায়ে কেঁচোগুলোর একেকটা নাম দেয়া। সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নাম। সবগুলোকেই সে বিদেশি কেঁচো বলে চালাচ্ছে

ভিড়ের জন্য আমি কাছেই যেতে পারছি না। দেখলাম বিভিন্ন জন কেঁচোগুলো দেখছে আর ওগুলো সম্পর্কে আমার বোনকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। সেও কনফিডেন্টলি বিভিন্ন বিদেশি জায়গা কিংবা বিদেশি বৈজ্ঞানিকের নাম যুক্ত করে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। লোকগুলোকে দেখলাম হা করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। কেউ কেউ জানতে চাইছে যদি তারা সেগুলো কিনে নিতে চায় কিংবা সংগ্রহ করতে চায় তাহলে কী করতে হবে। আমার বোনও দেখলাম বেশ স্মার্টলি সরাসরি উত্তর দিচ্ছে- এই বিষয়ে এখনও কিছু ভাবা হয়নি। তাছাড়া এই কেঁচোগুলো আনা হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চিড়িয়াখানা থেকে ফেরত দেবার শর্তে। আপনাদের অনুরোধ সম্পর্কে আমি তাদেরকে ইমইেলে জানাবো। যদি তারা প্রতিটা প্রজাতি থেকে কিছু কিছু আমাদের জন্য দিতে রাজি হয় তখন বলতে পারব যে আপনারা এগুলো সংগ্রহ করতে কত খরচ পড়বে আপনাদের

বাহ আমার বোন অত স্মার্ট আমার জানা ছিল না। বুদ্ধিটা খারাপ না। রাজধানীর অভিজাত এলাকার অনেকগুলো সেলুনে দেখেছি দেশীয় মোঙ্গলয়েড আদিবাসী মেয়েদেরকে সিঙ্গাপুরি-বার্মিজ- থাই মেয়ে বলে চালিয়ে দেয়া হয়। আর পাবলিক মোটা অংকের টাকা গুণে তাদের হাতে চুল কেটে কিংবা তাদের হাতে ম্যাসেজ করিয়ে এসে লোকজনকে গপ্প ছাড়ে- জানিস অমুক সেলুন কিংবা ওমুক পার্লারটা খুব ভালো। সবগুলো মেয়ে বিদেশি

আর সেলুনের মালিকরাও মেয়েদেরকে মোঙ্গলয়েড উচ্চারণে দুয়েকটা ইংরেজি শিখিয়ে দেয়। অথবা তাদেরকে তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলতে বলে। তারাও মাঝে মাঝে দুয়েকটা ইংরেজি বলে আর বাকিটা অংবং ভাষায় কথা বলে। এতে পাবলিক মনে করে হয়তো মেয়েগুলো থাই-বার্মিজ কিংবা সিঙ্গাপুরি ভাষায় কথা বলছে

কেঁচোরা অবশ্য কথা বলে না। সুতরাং ওগুলো নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। আমি ভিড় ঠেলে স্টলের কাছে গিয়ে দেখি বড়ো অ্যাকুরিয়ামে রাখায় রাতারাতি কেঁচোগুলোর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। আমি আমার বোনের কানে কানে গিয়ে বললাম- পাবলিক যদি কিনতে চায় তাহলে বিক্রি করে দে। বলবি একজনকে এক প্রজাতির এক জোড়ার বেশি দেয়া যাবে না। একটা পুরুষ একটা নারী। যেগুলো দেখতে বড়ো সেগুলো নারী আর যেগুলো চিকন আর ছোট সেগুলো নর। কেঁচোদের মধ্যে নারীরা আকারে বড়ো হয়

আমার কথা শোনার সাথে সাথে আমার বোন লাফ দিয়ে একটা অ্যাকুরিয়ামের উপর উঠে গেলো- অ্যাটেনশন প্লিজ। এই কেঁচোগুলো সংগ্রহ করার ব্যাপারে আপনাদের আগ্রহ জানিয়ে আমার ভাই সবগুলো চিড়িয়াখানার কিউরেটরকে আমার পক্ষে মেইল করেছিল। সেই মেইলের উত্তর এসেছে। তারা বলেছে কেউ যদি সখের বশে এগুলো সংগ্রহ করতে চান তাতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে এর প্রতি জোড়া কেঁচোর জন্য তাদেরকে একশো ডলার পে করতে হবে। এখন আপনারা যারা আগ্রহী তারা একটা করে কাচের বোয়াম নিয়ে আসুন একেক প্রজাতির একেক জোড়ার জন্য। যারা ডলার দিতে পারবেন না তারা দেশি টাকাও দিতে পারেন। আমরা সেটা ডলার করে তাদেরকে পাঠিয়ে দেবো। আর যারা আজকে নিতে পারবেন না তারা অ্যাডভান্স বুকিং করতে পারেন

কয়েকজন এগিয়ে এলো বুকিং দেবার জন্য। কিন্তু আমি জিজ্ঞেস করলাম বুকিং লিখবি কোথায়? খাতাতো নেই। সে উল্টো জিজ্ঞেস করল- তোর কাছে কলম আছে?
আছে
- দে কলমটা দে। খাতা লাগবে না

সে আবার লাফ দিয়ে উঠল- আপনারা যারা বুকিং দিতে চান তারা নিজের নাম আর যে অ্যাকুরিয়ামের কেঁচো নিতে চান সেই অ্যাকুরিয়ামের নম্বর আমার জামার মধ্যে লিখুন। এটাই বুকিং ডকুমেন্ট

এইবার দেখলাম লোকজনের মধ্যে হুটোপুটি শুরু হয়ে গেলো বুকিং দেবার জন্য। অনেকের সাথেই কলম ছিল। তারা সরাসরি দৌড়ে এলো আমার বোনের বুকের দিকে। সবাই বুকে লিখতে চায়। কেউ কেউ দু-তিনবারও লিখল। আমি দুয়েকবার লাইন ঠিক করতে গিয়ে সরে আসলাম ধাক্কা খেয়ে। চোখের পলকে ওর সমস্ত বুক ভরে গেলো লোকজনের নামে। তারপরও অনেকে আরো ফাঁক খুঁজতে লাগল নাম লেখার। আস্তে আস্তে ওর পিঠ- হিপ। সামনা- পেছন সব ভরে গেলো লোকজনের নামে। ও হাসছে। আমাকে কানে কানে বলল- সবগুলো তোর কেঁচোর কৃতিত্ব না। তোর কেঁচো এখন বিক্রি হচ্ছে আমার আকর্ষণে। ইটস কল মডেলিং
- তুই কি তোর পাজামাতেও লোকজনকে লিখতে দিবি?
- না। একটু পরে জামাটা উল্টো করে পরব। দেখবি একই লোক আবারও বুকিং দেবে। প্রকাশ্য লোকালয়ে লোকজন পাজামা থেকে জামা টাচ করায় বেশি মজা পায়। দিনের বেলা মেয়েদের বুকের মার্কেট ভ্যালু অন্য জায়গা থেকে বেশি

লোকজন হৈচৈ করছে- আমরা কিনতে চাই। কোথায় লিখব? আপনি শাড়ি পরে আসেননি কেন? তাহলে অনেক জায়গা পাওয়া যেত
- দাঁড়ান। সবাই লিখবে। দুইটা মিনিট

আমার বোনটি আড়ালে চলে গেলো। একটু পরে দেখি সে জামাটি উল্টো করে পরে এসেছে। সাথে সাথে লোকজন আবার হুমড়ি খেয়ে পড়ল তার উপর। লিখে লিখে ভরিয়ে ফেলল তার জামা। এমন সময় তার হেড মাস্টার এসে হাজির- মা আমি তো আমার নামটা লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জায়গাতো আর নেই
- স্যার আপনার লিখতে হবে না। আপনার কথা আমার মনে থাকবে
- না। লিখে রাখাটাই ভালো। না হলে অন্যদের উপর অবিচার করা হবে
- আমার পিঠের দিকে জায়গা আছে স্যার। আপনি যদি
- না মা। পিঠে লিখলে যদি তুমি ভুলে যাও
- তাহলে স্যার আপনি আমার বুকে লিখেন
- জায়গা তো নেই মা
- জামায় জায়গা নেই। কিন্তু জামার বাইরে চামড়ার উপরতো জায়গা আছে স্যার
- এটা ভালো কথা বলেছ

হেড মাস্টার বেছে নিলেন জামার উপরে বের হওয়া খাদের অংশটা। তিনি প্রথমে বাম হাত দিয়ে আমার বোনের ডান বুক ধরে আস্তে আস্তে ডান হাত দিয়ে নাম লিখতে লাগলেন। দু-তিন বার কাটলেন। কিন্তু আমি দেখছিলাম তার চোখটা আমার বোনের জামার ফাঁক দিয়ে। এক সময় তিনি আমার বোনের বাম বুকটা ছেড়ে তার কোমর পেঁচিয়ে ধরলেন- আসলে নড়াচড়ার মধ্যে তো লেখা যায় না
- ঠিক আছে স্যার লিখেন

আমার বোনকে দেখলাম ডান পায়ের হাঁটু দিয়ে হেডস্যারের দুই পায়ের ফাঁকে একটা গুঁতা মারল। তিনি তাকে আরো ঘনিষ্ঠ করে জড়িয়ে ধরে লিখতে লাগলেন। আমার বোন তার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল- স্যার এখানে তো অনেক ভিড়। যদি পিওনদেরকে একটু বলেন
- আমি সবগুলোকে এখানে পাঠিয়ে দিচ্ছি
আমার বোন পা দিয়ে এবার স্যারের উরুতে একটা গুঁতা মারল। তিনি তাকে আরো টাইট করে ধরে চোখ একেবারে বুকের কাছে নিয়ে লিখতে লাগলেন। নাম- পদবি- স্কুলের নাম। সম্পূর্ণ ঠিকানা- ফোন নম্বর। এমনকি নিজের বাবার নাম পর্যন্ত লিখলেন অনেক্ষণ ধরে। আমার বোন বলল- স্যার এখন আর থাক। কালকে প্রত্যেকে কেঁচো নিয়ে যাবার সময় নিজের নাম নিজের হাতে কেটে দিয়ে যাবে। তখন আপনি সময় পাবেন
- আমি তাহলে কাল সন্ধ্যার দিকে আসব। যখন ভিড় কম থাকবে
- দেরি করলে কেঁচো শেষ হয়ে যেতে পারে স্যার
- কোনো সমস্যা নেই। শেষ হয়ে গেলে কোনো দাবি নেই। আমি আমার নামাটি কেটে দিয়ে চলে যাব
আমার বোন আরেকটা গুঁতো মারল তার উরুতে- ওকে স্যার?
- ওকে মা। ওকে

হেডস্যার চলে গেলে আমাকে বলল- উইদাউট পাওয়ার ইউ ক্যান নট রান ইউর বিজনেস। ইটস কল পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট

একটু পরেই দেখলাম হেডস্যার সবগুলো পিওন নিয়ে এসে আমার বোনের জায়গাটার নিরাপত্তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আমার বোন হাত তুলে ইশারা করতেই হেডস্যার দৌড়ে তার কাছে চলে এলেন- বলো মা। কোনো প্রব্লেম?
- স্যার মানে আমার ভাই যদি আমাকে একটু হেল্প করে... যদিও এখানে বাইরের লোকের স্টলে থাকার কোনো নিয়ম নেই...
- না না কোনো প্রব্লেম নেই। তবে তোমার ভাইকে বলো স্টলের বাইরে থেকে যেন তোমাকে হেল্প করে। যাতে তাকে দেখলে দর্শকদের একজন বলে মনে হয়। আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে যেন সে চট করে দর্শকদের মধ্যে লুকিয়ে যেতে পারে
- ও কে স্যার। থ্যাঙ্ক ইউ
- না না থ্যাংকস দেবার কোনো দরকার নেই। তোমার যাতে সুবিধা হয় সেটা দেখা আমার দায়িত্ব
আমাকে দেখে সেই পুরোনো পিওন এগিয়ে এলো- মামু তুই আছিস?
তারপর হেডস্যারের দিকে এগিয়ে গেলো- স্যার এ কিন্তু আমাদের স্কুলের পুরোনো ছাত্র
- তাই নাকি। তাহলেতো কথাই নেই। তুমি থাকো। কিছু হলে আমাকে বলবে

কিছু লোক বিকেলের দিকেই বোয়াম নিয়ে এসে হাজির হলো। তারা টাকা নিয়ে এসেছে। আমার বোনও কাঠি দিয়ে জোড়ায় জোড়ায় কেঁচো তুলে দিলো তাদের বোয়ামে আর তারা কেঁচো নিয়ে নিজের হাতে আমার বোনের বুক থেকে তাদের নাম কাটতে গিয়ে অনেকেই অনেক সময় নিলো আর অনেকে বলল- এই সবগুলো টাকাইতো তুমি বিদেশি চিড়িয়াখানাতে দিয়ে দেবে। তোমারতো থাকবে না কিছুই। এই নাও এটা খুশি হয়ে তোমাকে দিলাম

আমার বোন একটা পলিথিনের ব্যাগে টাকাগুলো ভরে রাখতে লাগল। আর প্রতিবার টাকা নেবার সময় আমার দিকে তাকিয়ে হাসল

মেলার শেষ বেলা আবার এসে হাজির হলেন হেডস্যার- দেখিতো মা কারা কারা বুকিং দিলো

তিনি চোখে কম দেখেন। হাত দিয়ে ধরে ধরে তিনি আমার বোনের শরীরের সবগুলো নাম পড়লেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে- সবাইকে কি মাল সাপ্লাই দিতে পারবে তুমি?
- যারা আগে আসবে তারা পাবে। যারা পাবে না তারা নিজের হাতে আমার বুক থেকে তাদের নাম কেটে দিয়ে যাবে
- এই জিনিসটা ঠিক হয়নি। একটা খাতায় নামগুলো লেখা উচিত ছিল। সবাই কিন্তু তোমার জামায় নাম লিখতে আসছে না। অনেকেই তোমাকে টাচ করতে আসছে। সবার উদ্দেশ্য তো আর এক না
- সমস্যা নেই স্যার। বাণিজ্য জিনিসটা যুদ্ধের মতো। কী করে জয় করা হলো সেটা যেমন যুদ্ধে কোনো বিষয় না। ঠিক তেমনি বাণিজ্যেও কী করে বিক্রি বাড়ানো হলো সেটা কোনো বিষয় না। বিষয় হলো বিক্রি বাড়ানো গেলো কি না। বিক্রি না বাড়াতে পারলে সেটাকে ব্যবসা বলে না
- তুমি কী এর জন্য আরোও কিছু করতে চাও
- ইফ ইউ ওয়ান্ট। বাট জাস্ট ওনলি ফর ইউ স্যার। আপনিতো সবার থেকে আলাদা। তাই না স্যার?

আমার বোন হেডসারের উরুতে আরেকটা গুঁতো মারল। হেডসার তাকে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ালেন
- অবশ্যই অবশ্যই আমিতো আর সাধারণ ক্রেতা না। আমি তোমার অভিভাবক। আর তাছাড়া...
- আপনার সঙ্গে স্যার মেলার মধ্যে কথা না বলে মেলার পরেই কথা বলি। তাই না স্যার? আমিতো আছিই। আর আপনিওতো আছেন
- শিওর শিওর। সেটাই ভালো

মেলা থেকে বের হতে হতে আমার বোন বলল- আচ্ছা বলতো এই টাকাগুলোর মধ্যে কতো পারসেন্ট টাকার মালিক তুই?
-ফিফটি পারসেন্ট
- ফিফটি পারসেন্ট মানে এক জোড়া কেঁচো থেকে তুই পাবি পঞ্চাশ ডলার?
- হ্যাঁ
- ইমপসিবল। তোর সবগুলো কেঁচোর দাম এক ডলারও হবে না
- কিন্তু বিক্রি হচ্ছে জোড়া একশো ডলারে
- বিক্রি হচ্ছে না। বিক্রি করছি। প্রথমত এগুলোকে বিদেশি বানিয়েছি বুদ্ধি করে। আর দ্বিতীয়ত এগুলোকে প্রমোট করেছি আমার শরীর দিয়ে

সে হেসে ফেলল- তোদের জন্য সত্যি দুঃখ হয়
- কেন?
- বিক্রি করার মতো কিছুই ছেলেদেরকে দেয়নি প্রকৃতি। এজন্য এদের শরীরে একটু বেশি শক্তি দিয়েছে কামলা খেটে বেঁচে থাকার জন্য... অবশ্য প্রকৃতি এদেরকে একটা অভিশাপও দিয়েছে
- সেটা কী রকম?
- ছেলেদেরকে প্রকৃতি জন্মসূত্রে ক্রেতা বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। ছেলেদের মূল্যায়ন হয় ক্রয় ক্ষমতার সামর্থ্যরে উপর
- আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না তোর কথা
- দেখলি না। আমার গায়ে যারা নাম লিখল তাদের মধ্যে একটাও মেয়ে নেই। আর যাদের পয়সা নেই সেই ছেলেরা বের হয়ে আসার সময় আমার দিকে কেমন অসহায় চোখে তাকাল?
- তাতে কী?
- তাতেই সব কিছু। যাদের পয়সা আছে তারা একেকজন কয়েকবার আমার শরীরে তাদের নাম লিখেছে
- কিন্তু তোর হেড মাস্টারতো বিনা পয়সায়ই তোকে ঘাঁটাঘাঁটি করল সব চেয়ে বেশি
- ওনলি পাওয়ার ক্যান রিপ্লেস দ্যা মানি ব্রাদার। ইফ ইউ হেভ পাওয়ার ইই উইল হেভ মানি এনিহাও এলং উইথ আদার অপরচুনিটি হুইচ কেন নট বি বট বাই দ্য মানি। পাওয়ারটা টাকা থেকেও বড়ো। কিন্তু পাওয়ার হুট করে চলে যায় বাট টাকা অত সহজে যায় না
- তোর হেডমাস্টার কিন্তু ফাও খেতে চায়
- ফাও না। এটা ওর পাওয়ার দিয়ে আমাকে শেল্টার দেয়ার বিনিময়
- কিন্তু তোর কি মনে হয় এই লোকটা আরোও আগ বাড়বে না?
- বাড়ছেইতো। হয়তো এর পরে ওর বাসায় যেতে বলবে
- যাবি?
- দরকার পড়লে যাব
- তার আগে আমার টাকাগুলো আমাকে দিয়ে দিস
- তুই পাবি ওয়ান পারসেন্ট। মানে প্রতি জোড়া কেঁচোতে তুই পাবি এক ডলার
- অসম্ভব
- আচ্ছা যা। তোকে আমি দুই ডলার করে দেবো। এক ডলার কেঁচোগুলো সংগ্রহ করার জন্য আর এক ডলার কেঁচোগুলো আমাকে প্রদর্শন করতে দেয়ার জন্য
- আমি কিন্তু আমার কেঁচোগুলো নিয়ে চলে যাব
- চেষ্টা করে দেখতে পারিস
- মানে?
- আমি যদি শুধু একটা আওয়াজ দেই তাহলে তোর অবস্থা কী হবে বুঝতে পারছিস?
- তুই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস?
- মাঝেমাঝে ভয় দেখানোটাও বাণিজ্যবিদ্যার অংশ
- কিন্তু কেঁচোগুলো আমার
- প্রমাণ করতে পারবি না। সমস্ত মেলার লোক এবং পত্রিকাওয়ালারা জানে যে কেঁচোগুলো আমি সংগ্রহ করেছি
- আমি তাহলে গুমর ফাঁস করে দেবো। বলে দেবো যে এগুলো পাহাড়ের ভেতর বনকলার গাছ থেকে আনা হয়েছে। বিদেশি নয়
- তোর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না
- আমি করিয়ে ছাড়ব। আমি তাদেরকে নিয়ে যাব পাহাড়ে
- লাভ নেই। ব্যবসা সত্য-মিথ্যার উপর চলে না। চলে পলিসির উপর। আর লোকজন তোর সাথে গিয়ে কেঁচোর জন্মস্থান দেখার চেয়ে আমার শরীরে হাত দিয়ে আমাকে দেখতে বেশি পছন্দ করবে
- কিন্তু তারা যখন বুঝবে তুই তাদের ঠকাচ্ছিস?
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ ঠকেও আনন্দ পায়। হয়তো দেখবি যারা কেঁচোর জন্য বুকিং দিয়েছে তারা অনেকেই কেঁচো বাড়ি পর্যন্তও নিয়ে যাবে না। রাস্তায় আরো কাউকে দিয়ে দেবে। কিন্তু তারা কেঁচো কিনবে। কারণ তারা আমাকে বোকা আর নিজেদেরকে চালাক মনে করছে এখন। তারা মনে করছে বোকা মেয়েটা একটা খাতার খরচ বাঁচানোর জন্য নিজের শরীরে নাম লিখতে দিচ্ছে। ... তুই খেয়াল করে দেখেছি প্রতিটা মানুষ নিজের নাম লিখতে গিয়ে অনেক বেশি সময় নিচ্ছে?
- এটা ঠিক হচ্ছে না। তুই তোর সৌন্দর্যকে এভাবে পাবলিক প্রপার্টি বানিয়ে ফেলতে পারিস না
- অবশ্যই পারি। সৌন্দর্য ইটসেলফ এ কোয়ালিটি প্রোডাক্ট। অ্যান্ড এভরি কোয়ালিটি প্রোডাক্ট মাস্ট বি সোল্ড অর ইউটিলাইজড প্রপারলি। আদারওয়াইজ ইট ইজ মিনিংলেস
- সৌন্দর্য তোর অর্জন নয়। এটা প্রকৃতির দান। এটাকে তুই বিক্রি করতে পারিস না
- প্রকৃতির দেয়া জমি- পানি- গাছ যদি মানুষ বিক্রি করতে পারে তবে সৌন্দর্য কেন বিক্রি করা যাবে না?
- সে যাই হোক। কিন্তু সৌন্দর্য কোনো কোয়ালিটি হতে পারে না। এটা কেউ অর্জন করে না। এটা এমনি এমনি পেয়ে যায়
- এমনি এমনি পেয়ে গেলে যে সেটাকে কোয়ালিটি বলা যাবে না সেটা তোকে কে বলল? তোর হাত পা সবগুলোই তোর কোয়ালিটি। অনেক চাকরি আছে যেখানে তুই অ্যাপ্লাই করতে পারবি তোর হাত পা আছে বলে। যার হাত পা নেই তার অনেক বুদ্ধি থাকলেও সে মিলিটারিতে যেতে পারবে না। তাহলে?
- তাহলে জানি না। কিন্তু আমি জানি মানুষ পড়াশোনা করে যে যোগ্যতা অর্জন করে সেটাকে সে কাজে লাগায়। হাত পা কিংবা সৌন্দর্যকে কাজে লাগানো ঠিক না
- যাদের অন্য কোনো কোয়ালিটি নেই তারাই নিজেরে প্রোডাক্ট ভেল্যু বাড়ানোর জন্য পড়াশোনা করে। আর যাদের ন্যাচারাল কোয়ালিটি কিংবা অটোমেটিক কোয়ালিটি আছে টিকে থাকার জন্য তাদের পড়াশোনা করার দরকারটাই বা কিসে?
- মানে?
- মানে কিছু না। আমি কেঁচো বিক্রি করে যে টাকা পাবো সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করব। ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আমার সৌন্দর্য
- সবাইকে কি আর তোর এই বিদেশি কেঁচো খাওয়াতে পারবি?
- বিদেশি কেঁচো না খেলেও আমার ইউনিভার্সেল সৌন্দর্যকে মূল্য দেবে সবাই। আমার আর পড়াশোনা করার দরকার নেই। কারণ এই সৌন্দর্যকে আমি ইউটিলাইজ করি বা না করি এটা এক সময় চলে যাবে। তার আগেই আমাকে সব গুছিয়ে নিতে হবে
- কিন্তু আমার পার্সেন্টেজ আরো একটু বাড়াতে হবে
- আচ্ছা তোকে প্রতি জোড়া কেঁচোতে পাঁচ ডলার কের দেবো। কিন্তু একটা শর্তে
- কী শর্ত?
- লোকজনের কাছে তোকে আমি আমার মায়ের পেটের ভাই বলে পরিচয় দেবো না। বলব কাজিন
- কেন?
- মায়ের পেটের ভাই বললে অনেকে হেসিটেট করবে তোর সামনে আমার সাথে ফ্রি হতে। কিন্তু কাজিন বললে আর কোনো সমস্যা থাকবে না
- আচ্ছা ঠিক আছে
- তুই কিন্তু ওখানে আমাকে কোনো ধমক ধামক দিতে পারবি না। থাকবি আমার অ্যাসিস্ট্যান্টের মতো
- আচ্ছা ঠিক আছে
- আর মাকে এসব কিছুই বলবি না। মা এসব বিষয় বুঝবে না। আর তাকে বলব আমি কিছু টাকা পেয়েছি। এই ধর সব মিলিয়ে পঞ্চাশ ডলার
- আচ্ছা ঠিক আছে

আমরা হেঁটে হেঁটে বাসায় এলাম। এভাবেই প্রতিদিন আমার বোন যাতায়াত করে দুই কিলোমিটার। যদিও যে রাস্তা দিয়ে সে যায় সে রাস্তায় প্রচুর গাড়ি- রিকশা আছে। কিন্তু তার যাতায়াতের জন্য কোনো ভাড়া বরাদ্দ নেই। তাই হেঁটেই যাওয়া আসা করতে হয়। আমিও এইভাবেই স্কুলে যাওয়া আসা করেছি। আজকে হাতে টাকা থাকলেও হাঁটতে ভালো লাগছে। বাড়ির কাছে এসে বললাম আমাকে কিছু টাকা দে আমি তোর জন্য একটা নতুন জামা কিনে নিয়ে আসি
- না থাক। এই দুইদিন এই জামাটা পরেই আমি মেলায় যাব
- কেন?
- নতুন জামা পরলে লোকজন তাদের নাম খুঁজে পাবে না
- তুই এক কাজ করবি। নতুন জামাটা গায়ে দিবি আর এই জামাটা দেয়ালের সাথে টানিয়ে রেখে দিবি
- তুই আস্ত একটা ছাগল। জামাটা দেয়ালে টানিয়ে রাখলে আর কেউই কাল কেঁচো কিনবে না
- কেন?
- আরে বোকা দেয়ালে টানানো একটা মেয়ের জামার বুকে নিজের নাম দেখা আর একটা মেয়ের পরনের জামার বুকে নিজের নাম দেখার মধ্যে পার্থক্য আছে না?
- ও আচ্ছা
- তুই খেয়াল করেছিস যাদের নাম আমার পিঠে লেখা তারাও বিভিন্ন লোকজনকে ডেকে ডেকে আমার বুকের দিকে দেখাচেছ- ওই যে ওখানে আমার নাম?
- হ্যাঁ। কিন্তু জামায়তো আর নাম লেখার কোনো জায়গা নেই
- অন্য রংয়ের কালি দিয়ে লেখাবো। তুই আমার জন্য অন্য দুই রংয়ের দুটো কলম কিনে আনবি

পরের দিন সে তার পুরোনো জামাটিই পরে গেলো মেলায়। আজ আর কাদা মাখাতে হয়নি। লোকজনের নামে নামে এমনিতেই পোশাকটার কোনো রং দেখা যাচ্ছে না। আমি তার সঙ্গে সকালেই গিয়ে হাজির হলাম স্টলে। লোকজন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে আগে থেকেই। আর মামু পিওন পাহারা দিচ্ছে তার তিনজন সহকারী নিয়ে। আমাকে দেখে বলল- মামু তোর বোনকে বলিস ছেলেগুলোর দিকে যেন খেয়াল রাখে। সারারাত পাহারা দিয়েছে

স্টল খোলার আগেই হেডস্যার এসে হাজির- মা কোনো সমস্যা হয়নি তো? আমার নাম কি লেখা আছে নাকি উঠে গেছে?

হেডস্যার তার নামটি ঘষে ঘষে দেখলেন- ঠিক আছে। তবে আমি সকাল বেলা নিতে পারব না। বিকেলে নেবো অথবা কালতো শেষ দিন। কালকেই না হয় নেবো
- কোনো সমস্যা নেই স্যার। আপনার যখন ইচ্ছা তখন নেবেন। আপনার নামতো আমার বুকে লেখাই থাকল

লোকজন লাইন ধরেই নিচ্ছিল কেঁচো। বিকেলের দিকে হঠাৎ করে সমস্বরে চারপাশ থেকে কোরাস গান ভেসে আসলো- আহা আজি এ বসন্তে/ কত ফুল ফোটে/ কত পাখি গায়

লোকজনের কাছ থেকে টাকা গুণে রাখার দায়িত্ব ছিল আমার। যারা যে রংয়ের কেঁচো নিতে চায় তারা সেই একুইরিয়ামের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। লাইনে দাঁড়ানোর আগে সবাই আমার কাছে টাকা দিয়ে স্লিপ নিয়ে যাচ্ছে। গান শুনে আমি উঁকি দিয়ে লোকজনের মাথার উপর দিয়ে তাকিয়ে দেখি সেই চিরল পাতার জবা ফুলের গাছটার দিক থেকে সেই মোটা ঢোঁড়াটি দলবল নিয়ে গান গাইতে গাইতে এদিকেই এগিয়ে আসছে। যারা দাঁড়িয়ে ছিল তারা যেমন কেঁচো চেনে না তেমনি সাপও না। তারা সাপ বলতে একটা প্রাণীকেই বোঝে। ঢোঁড়া সাপের যে বিষ নেই সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই তাদের। সাপগুলোকে আসতে দেখেই দিগি¦দিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করল লোকজন। আর সাপগুলো গান গাইতে গাইতে সামনে যাকে পেলো তাদের কাউকে লেজ দিয়ে বাড়ি মারল কাউকে দিলো দুয়েকটা কামড়। আমি স্টল থেকে একটা বাঁশ খুলে নিয়ে বাগিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে লোকজনকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম এগুলো ঢোঁড়া সাপ। বিষ নেই। কামড়ালে কিচ্ছু হবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। লোকজন পালাতে গিয়ে সবগুলো অ্যাকুরিয়ামই উল্টে ফেলে দিলো। স্যাঁতসেঁতে মাটিতে পড়তেই কেঁচোগুলো বের হয়ে যে যেদিকে পারল ছোটাছুটি করতে শুরু করল। মুহূর্তের মধ্যে পুরো মাটি রঙিন হয়ে উঠল কেঁচোগুলোর চলাচলে। আর মোটা ঢোঁড়া তার দলবল নিয়ে ধরে ধরে খেতে থাকল কেঁচোগুলো। আমার বোন চিৎকার করে বলল- ভাইয়া লাঠি রেখে টাকা সামলা। আমার অতক্ষণ খেয়াল হয়নি। একটা চটের ব্যাগের মধ্যে আমি টাকাগুলো রাখছিলাম। আমি লাঠি না ফেলে এক হাতে টাকার ব্যাগটা তুলে নিলাম। অন্য হাতে লাঠি বাগিয়ে এগিয়ে যাবার আগেই লাফ দিয়ে আমার লাঠি ধরা হাতের কবজি কামড়ে ধরলো সেই মোটা ঢোঁড়া। দুলে দুলে একবার গানের প্রথম লাইনগুলো গাইল। তার পর বলল- মামু আমরাও এই ইস্কুলের পুরানা ছাত্র। তুমি আমাদেরকে চিনতে না পারলেও আমরা ঠিকই চিনেছি। এইজন্যই প্রথমদিন গান শোনালাম। এই গানটা আমরা স্কুলে থাকতে বসন্তের সময় গাইতাম। তোমার মনে আছে? ইস্কুলে ঢুকেছিলাম কালকেউটে হবার জন্য। কিন্তু ইস্কুল থেকে বের হয়ে গিয়ে দেখি হয়ে গেছি ঢোঁড়া সাপ। না আছে বিশ না আছে ঝাল। তাই আর তোমার মতো ভেতরে ঢোঁড়া হয়ে বাইরে কালউেটের ফুটানির দিকে যাইনি। কাপড়চোপড় খুলে বুকে হাঁটা অভ্যাস করে ফেলেছি। এতে সুবিধা অনেক। সভ্যতার ওজনও বইতে হয় না। ইনকাম ট্যাক্সও দিতে হয় না। কারো সঙ্গে সংগম করার ইচ্ছে হলে তার খোঁপা কিংবা চুলের প্রশংসা করতে হয় না। যা হয় ডাইরেক্ট অ্যাকশন। মরো কিংবা মারো। খাও কিংবা খাদ্য হও। নো আদালত নো অবসেশন

আমার হাতের কব্জি কামড়ে ধরলেও আমি লাঠি ছাড়িনি। মোটা ঢোঁড়া আমার লাঠির দিকে তাকিয়ে বলল- লাঠিটা ফেলে দাও মামু। নাহলে একটু পরে এই লাঠি দিয়ে পাবলিক তোমাকেই পিটাবে। পালাও
আমি লাঠি ছেড়ে দিতেই মোটা ঢোঁড়া গপাগপ কয়েকটা কেঁচো গিলে ফেলল- বিদেশি ফুডের মজাই আলাদা। যদিও খাঁটি কি না কে জানে। তোমরা যারা ভেতরে ঢোঁড়া বাইরে কেউটে তারাতো আবার মিথ্যে বলায় উস্তাদ

ঢোঁড়াটি কেঁচো খেতে খেতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- মামু সময় থাকতে খাওয়ার অভ্যাস করো। পরে দেখবে এটাও পাবে না। পাথর খাওয়ার পরীক্ষা দিতে হবে

আমি তার কথা শুনছি না। আমি আমার বোনকে খুঁজছি। খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে দেখি একটা আড়ালে দাঁড়িয়ে সে পাগলের মতো জামা থেকে লোকজনের নামগুলো কাটা শুরু করেছে। আমাকে দেখে বলল- চল পালাই

কিন্তু পা বাড়াবার আগেই হেডস্যার এসে সামনে দাঁড়ালেন- আমার নামটা কিন্তু কাটা হয়নি মা। আমার কেঁচোও পাইনি

আমার বোন দাঁড়িয়ে গেলো
- তোমরা টাকা নিয়েছ কিন্তু লোকজন কেঁচো পায়নি। এটা আমাদের প্রতিষ্ঠানের মান ইজ্জতের বিষয়।
- স্যার একটু সামলান
- আমার বাসায় চলো। এখানে তোমার থাকা ঠিক হবে না

আমার বোন কী চিন্তা করল। আমাকে বলল- চল
- তোমার সাথে এই ছেলেটা কে?
- আমার কাজিন
- আচ্ছা ঠিক আছে

স্যারের বাসায় কেউ নেই। তিনি যা বললেন তাতে টাকাগুলো সবই তার কাছে রেখে আসতে হয়। প্রতিষ্ঠানের মান ইজ্জতের বিনিময়ে তিনি লোকজনকে টাকাগুলো ফেরত দেবেন। কিন্তু আমার বোন তার বুকে স্যারের নাম দেখালো- স্যার আপনার নামটি আপনি মুছবেন না?
- কিন্তু লোকজনতো আমাকে ধরবে
- আপনি বলবেন আমি অন্য স্কুলের ছাত্রী
- মিথ্যে কথা বলতে বলছো আমাকে?
- আপনার বাসায় আর কোনো রুম নেই স্যার?
- রুমতো আছেই কিন্তু...
- আসেন স্যার আপনার রুমগুলো দেখি আর আপনিওতো আপনার নামটা কাটেননি এখনও

বোনটা যখন বের হয়ে এলো তখনও দেখি ওর বুকে হেডস্যারে নাম লেখা আছে। কিন্তু ওর ঠোঁটের কোনে একটু ফুলে আছে। আমাকে বলল- চল

অন্ধকার হয়ে এসেছে। আমরা হাঁটছি। বোন খুব আস্তে আর গভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল- পৃথিবীর সবচে প্রাচীন প্রোডাক্টের নাম জানিস?
- না
- যৌনতা। আর এর মূল ক্রেতা ছেলেরা। যৌনতা ইজ এ ক্যাপিটাল অ্যান্ড সিকিউরিটি

আমরা এমনভাবে হাঁটছি যেন দুজন একা একাই হাঁটছি। কারো পাশে কেউ নেই। বহু দূর থেকে বোনের গলা শুনলাম- প্রতিদিনই রাত হয় কেন জানিস? রাত হয় দিনের দাগ ঢেকে দেবার জন্য। রাতের অন্ধকারে গোসল করে যারা দিনের দাগ ধুয়ে ফেলতে পারে না তারাই সকালে ঢোঁড়া সাপ হয়ে রাস্তায় গড়ায় আর তাদের বিষ টেনে নিয়ে অন্যরা নিজেদের দোকান সাজায়। কিন্তু আমি ঢোঁড়া সাপ হতে চাই না। আমার সব কিছু শুধু আমার দোকানেই উঠবে। এমনকি এই অন্ধকারকেও দরকার হলে আমি দাঁড়ি পাল্লায় তুলে বিক্রি করে দেবো
২০০৭.০৯.১৪ শুক্রবার


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ইকো পার্ক নামে এই ব্লগেই আমার একটি কবিতা দিয়েছিলাম
এটা গল্প
দুটোকে মিলানোর কোনো দরকার নেই

অনিন্দিতা এর ছবি

আপনার গল্পের বিষয়বস্তু নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে তবে লেখাটা একদম আটকে রেখেছিল । শেষ না করে উঠতে পারলাম না।
সত্যি ই অসাধারণ।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

গল্প কেনো? এতো সত্যের অনুবাদমাত্র । মানুষের ও চিড়িয়াখানা
----------------------------------------
সঙ্গ প্রিয় করি,সংঘে অবিশ্বাস

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শেখ জলিল এর ছবি

আহারে! এমন গদ্য যদি লিখতে পারতাম!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

তাপস শর্মা এর ছবি

ভয়ানক! প্রতিটি লাইনে আঁতকে উঠেছি। ...... বিধ্বস্ত হলাম আবারও...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।