অমর্ষণের আঙ্গুর - দ্যা গ্রেইপস অভ ড়্যাথ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: রবি, ১৫/০১/২০১২ - ১০:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জন স্টেইনবেকের দ্যা গ্রেইপস অভ ড়্যাথ উপন্যাসটির নামটি বাংলা সিনেমার মতো হলেও গল্পটা হৃদয়গ্রাহী। আমেরিকার গ্রেইট ডিপ্রেসনের সময়কার একটা করূন ছবি ফুটে ওঠে উপন্যাসটিতে।

গল্পটির প্রধাণ চরিত্র টম জোড। সে ঝগড়ার সময় ছুরি হাতে এক ছেলের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে মাথায় বাড়ি দিয়ে মেরে ফেলে তাকে। সাত বছর জেল হলেও সদাচরনের জন্য চার বছরের মাথায় ছাড়া পেয়ে যায় সে। বাড়ি ফিরে দেখে পুরো পরিবার ভিটে হারা হয়ে গেছে। এক হ্যান্ডবিলে লেখা নির্দেশনা পড়ে তার পরিবার ক্যালিফোর্নিয়া যাবার জন্য প্রস্তুতি নেয়। সঙ্গ নেয় টম।

বইটির অর্ধেক ক্যালিফোর্নিয়া যাত্রার বর্ণনা। ভাঙ্গা গাড়িতে যাত্রার সময় তাদের সহযাত্রী দক্ষিনের হাজার হাজার পরিবার। লোনে দায়ে ঘরছাড়া সবাই ছুটছে পশ্চিমে। পথে একে একে মারা যায় টমের দাদু, পালিয়ে যায় টমের বড় ভাই নোয়া, মারা যায় দাদী।

ক্যালিফোর্নিয়া পৌছে দেখতে পায় অতিরিক্ত অভিবাসীর কারণে কাজের খুব অভাব। আর সেই হ্যান্ডবিল যেটা দেখে তাদের ক‌্যালিফোর্নিয়া আসা সেটা আসলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাড়া হয়েছিলো। অতিরিক্ত লোক মানে স্বস্তা লেবার। ফলের বাগানে মাঠে, তুলার মাঠে তাই পাওয়া যাবে কম মূল্যের লোকবল।

নিদারুন কষ্ট তাদের। ক্যালিফোর্নিয়ার লোকেরা মূলতঃ ওকলাহোমা থেকে আসা এই অভিবাসীদের 'ওকিজ', 'রেড' বলে গালাগালি করে। সবরকমভাবে অবদমিত করে রাখে।

এর এক ফাঁকে একটা স্টাইকের সময় স্টাইকরত এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যায় টম। এই সময় ফার্মের মালিকের লোকজন প্রতিবাদী লোকদের মারধর করতে এলে টমের হাতে একজনের মৃত্যু হয়। পুরো পরিবার আবার পালায়। এক পর্যায়ে পরিবারের স্বার্থে টম আলাদা হয়ে যায়।

একের পর এক আঘাতে অভিবাসীরা পর্যদুস্ত হতে থাকে। একসময় টমের সন্তান সম্ভবা বোন রোজ অভ শ্যারন মৃত শিশু প্রসব করে। তবু তারা হাল ছাড়ে না।

শেষে প্রচন্ড বৃষ্টি আর বন্যায় আটকা পড়া ছয়দিনের না খাওয়া এক লোককে বুকের দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে তোলে রোজ অভ শ্যারন। আর পাঠক উপলব্ধি করে যে এই যাত্রায় এই গরীব লোকগুলোই একে অপরের ভরসা। অন‌্য কেউ নয়।

গল্পটার পুরোটায় এই টোনটাই ফুটে উঠে। গরীবরাই গরীবদের ভরসা। যতক্ষণ তারা এক থাকবে, ভালো থাকবে।

সমালোচকরা অবশ্য বলেছেন এই ফিকশনের কোনো বাস্তব ভিত্তি নাই। গ্রেইট ডিপ্রেসনের সময় এরকম ঘটনা ঘটেনি। আর ওকলাহোমার গড়পড়তা পরিবার ছিলো অনেক ছোটো, এই গল্পের মতো বিশাল নয়।

গল্পটা পড়তে ভালই লেগেছে। বেজোড় চ্যাপ্টারে গল্প। জোড় চ্যাপ্টারে থার্ড পার্সন ন্যারেটিভ। সেইসাথে লোকাল ভাষায় কথোপকথন, চমৎকার নিঁখুত বর্ণনা - সবিমিলিয়ে বেশ ভালো একটা পাঠ।


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্টেইনব্যাক পড়ার সুযোগ হয় না অনেক দিন। যে আমলে (আঠারো বছর আগে) স্টেইনব্যাক পড়া ধরেছিলাম সে আমলে তাঁর বেশির ভাগ রচনা মাথার ওপর দিয়ে যেত। অথচ এই বইটা তখনই আমাকে মুগ্ধ বিস্ময়ে হতবাক করেছিল। ইংরেজী ভাষায় লেখা (অন্য ভাষা থেকে ইংরেজীতে ভাষান্তরকৃত নয়) যত বই পড়ার সুযোগ এই জীবনে পেয়েছি তার মধ্যে স্টেইনব্যাকের এই বইটাকে প্রথম পাঁচটা বইয়ের মধ্যে রাখবো। কী ভাষা, কী কনটেন্ট! জ্যালোপি গাড়ি বিক্রি নিয়ে যে অধ্যায়টি আছে - মনে হয় মুখস্থ করে ফেলি। সমালোচকরা কাহিনীর বাস্তবতা নিয়ে যাই বলুন, যে কোন দেশের মন্দার সময়ের সাথে এই আখ্যান আশ্চর্যরকম ভাবে মিলে যায়। স্টেইনব্যাকের মুন্‌শীয়ানার অনেকগুলো দিকের মধ্যে এটা একটা। আর এ'জন্যই এটা ক্লাসিক। যারা পড়েননি তারা সত্যি একটা মহান রচনা মিস্‌ করছেন।

প্রচণ্ড ক্রোধ = অমর্ষণ? শব্দটার উৎপত্তিটা একটু বুঝিয়ে দেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ড়‌্যাথ শব্দটার যোগ্য বাংলা খুঁজতে গিয়ে পেলাম সামসাদ অভিধানে। 'রাগের আঙ্গুর', 'আক্রোশের আঙ্গুর' কিংবা 'ক্রোধের আঙ্গুর' এর চেয়ে এই নামটা যুৎসই মনে হয়েছে।

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

মনে আছে আমার, খুব মন খারাপ হয়েছিল বইটা পড়ে। অবশ্য আমি পড়েছিলাম সেবার অনুবাদ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

গল্পটি নিঃসন্দেহে কষ্ট উদ্রেক করে। অনুবাদটি পড়িনি। তাই বলতে পারছি না কতখানি সফল হয়েছে সেটি।

দ্যা রিডার এর ছবি

পড়েছিলাম আমি বইটা , অনুবাদ এবং অনেক আগে । সম্ভবত সেবা প্রকাশনীর করা অনুবাদ ছিল সেটা । পড়ে খুব বিষণ্ণ হয়েছিলাম মানব জীবনের সংগ্রাম এর একটি অকল্পনীয় ( ওই বয়সে) চিত্র উপলব্ধি করে । আবারো মনে করিয়ে দেয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ । চলুক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার এই লেখাটিতে 'গ্রেইট ডিপ্রেসন'এর সময়কার কিছু খন্ডিত চিত্র পাওয়া গেল। আর সুন্দর বর্ণনের মাধ্যমে আপনি কাহিনীটিকে হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছেন।
বইটি সম্পর্কে শুনেছি কিন্তু আজও পড়া হয়ে ওঠেনি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

তাপস শর্মা এর ছবি

উপন্যাস এর ভেতরের গল্পটার বর্ণনা খুবই হৃদয়স্পর্শী। পড়ার ইচ্ছে রইল। চলুক চলুক

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

তিথীডোর এর ছবি

স্টেইনব্যাক পড়েছি এই একটাই। অ্যাঁ
টম, এ্যাল জোড, শারনের গোলাপ ওরফে রোসার্শান, কনি, গ্রান্ডপা, গ্রান্ডমা, মা, বাবা, মুলি, পাদ্রি [নামটা মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে], রুথি....

পাণ্ডবদা যেটা বললেন, জ্যালোপি গাড়ি বিক্রি নিয়ে যে অধ্যায়টি আছে, নিঃসন্দেহে দারুণ।
তবে আমার সবচেয়ে প্রিয় অংশ সরকারী ক্যাম্পে থাকার সময় তাদের ঈষৎ স্বাচ্ছন্দ্যে কাটানোর সময়ের অংশটুকু।
পরে তুলো তুলতে গিয়ে বাক্সগাড়িতে বসবাসের দিনগুলো ছিল জোড পরিবারের শেষ একত্রিত জীবনযাপন। এরপরই তো কাজের অনটন, খাবার ফুরিয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে রোসার্শান, রুথি আর উইল (?) [এই নামটাও ভুলে গেছি মন খারাপ ] কে নিয়ে মা এক পরিত্যক্ত গোলাবাড়িতে আশ্রয় নেন।
অনেকদিন আগে পড়া, রিভাইজ দিতে হবে। হাসি

এত ছোট রিভিউ! কেনু কেনু?

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

উইনফিল্ড। তুমিই একটা রিভিউ লিখে ফ্যালো। খাইছে

তারেক অণু এর ছবি

চলচ্চিত্রটিও ভাল লেগেছিল, বিশেষ করে একেবারে শেষের সংলাপটি । রিভিউ বেশি ছোট হয়ে গেছে, পরের পর্ব হবে নাকি !

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

চলচ্চিত্রটির কথা জানা ছিলো না। পর্ব আর হবে না। রিভিউ লেখার সময় আগ্রহ জাগিয়ে রেখে লিখতে পছন্দ করি। পরের বার অন্য কোনো বই পাঠের গল্প বলব।

কাজি মামুন এর ছবি

শেষে প্রচন্ড বৃষ্টি আর বন্যায় আটকা পড়া ছয়দিনের না খাওয়া এক লোককে বুকের দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে তোলে রোজ অভ শ্যারন।

মনে আছে, শহীদুল্লাহ কায়সারের সারেং বউ সিনেমার শেষ দৃশ্য এভাবেই শেষ হয়েছিল; মৃতপ্রায় সারেংকে এভাবেই তার বউ বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করে! বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটিকে খুব বৈপ্লবিক মনে হয়েছিল; আজ মনে প্রশ্ন জাগছে, শহীদুল্লাহ কায়সার আবার স্টেইনবকের এই উপন্যাসটি দিয়ে প্রভাবিত হন নি তো?
সুন্দর একটি উপন্যাসের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। তবে উপন্যাসটির বাংলা নামটি সত্যি বিদঘুটে (এমনকি পাঠকদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে যথেষ্ট), এমনকি তা অভিধানগতভাবে সঠিক হলেও!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

উপন্যাসটি অনেক পুরোনো। এটা হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

তানিম এহসান এর ছবি

অনেক আগে পড়েছিলাম কিন্তুএই বইটিকে ঘিরে অদ্বুত একটা ভালোলাগা এখনও আছে। আবার পড়তে হবে।

আশালতা এর ছবি

এতদিন পরে লিখলেন তাও কিনা একখানা কাজের পোস্ট ! আজুবা একটা পোস্টের আশায় থাকলাম। হাসি

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।