জুতা

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি
লিখেছেন মানিক চন্দ্র দাস [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২১/০৮/২০১০ - ৫:৫৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


যেতেই হবে। হয়। না গেলে চলবেনা। অফিসটা যে কি! কি হয় একটা দিন অফিসে না গেলে? একটু ঘুমানো কি অপরাধ? বড় কষ্ট করে এই কেরানীর চাকরী জুটিয়েছি। এ জিনিষ ছাড়া যাবেনা। কষ্ট হলেও কিছু করার নেই।
বহুকষ্টে ঘুম ছাড়ালাম চোখ থেকে। শালার ঘুম।

উঠেই দেখি মতিন ঘুমায়। মতিন আর আমি একসাথে থাকি। মতিন ছাত্র। আমরা মেস করে থাকি। টিউশনি করে মতিন । বেশ কয়েকটা। নিজে ঢাকা কলেজে কিসে যেন অনার্স করছে। বেশ সৌখিন ছেলে। টিউশনির টাকায় কম্পিউটার কিনে ফেলেছে। তাতে প্রতি রাতে মতিনের অতি পছন্দের হিন্দি গান শুনতে হয়। মাঝে মাঝে সিনেমা দেখি। সে লোহার একটা খাটও কিনেছে। বেশ বাহারী খাট।

বাহারী খাটে মতিন চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। লুঙ্গী যথারীতি খাটের একপাশে । মতিন উদোম। সাতসকালে এইরকম ওপেন এয়ার কনসার্ট দেখতে কার ভালো লাগে? মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। দরজা খুলে বাইরে বের হলেই লোকজন ভেতরে উঁকি দেবে। মতিনের ইজ্জত দেখে ফেলবে। কি দরকার? মতিন কে ডাকলাম।

“মতিন...এই মতিন...।”
“উঁ...?”
“উঠো ভাই। কাপড় পড়ো। তোমার তো মিয়া সব শেষ।”

মতিন তড়িঘড়ি করে উঠে লুঙ্গী পড়ে নেয়। আমিও নিশ্চিন্ত মনে বের হই। সকালের যাবতীয় কাজটাজ সেরে অফিসে রওনা দিয়ে দিলাম। বাসে উঠলাম বাদুড়ঝোলা হয়ে। শাহবাগ গিয়ে বাসের ভেতরে নিজেকে চালান করা গেলো। ভেতরে ইয়া দশাসই এক লোক নামার জন্যে কসরত করছেন। এই কসরতের মাঝখানে আমি পড়ে গেলাম। শরীর ঠিকই আছে, ঝড় গেলো জুতার উপর দিয়ে। জুতা কেমন করে যেন নিচের সোল থেকে আলগা হয়ে গেলো। কিছুই বলার নেই। দোষ কারো না। আমার জুতার দোষ আর দোষ আমার কপালের। বাস থেকে নেমে অফিসে ঢুকতেই শয়তান রফিক সাহেবের সামনে পড়ে গেলাম।

“শামসু... ছিঁড়া জুতা লইয়া অফিস আইছস। হারামজাদা, লজ্জা করেনা?”

এই কথায় মাথা নিচু করে থাকি। কি বলবো? কথাটা বলেই রফিক সাহেব ছুটে কোথায় যেনো চলে গেলেন। জুতা ছিঁড়া তো আমার দোষ না। ছিঁড়ে গেছে। অবশ্য জুতাটা অনেক পুরানো। নতুন এক জোড়া কেনা দরকার। যা বেতন পাই তা থেকে আবার বাড়িতে পাঠাতে হয়। মাসের সব একেবারে টায়টায় হিসাব করা। এর মাঝ থেকে জুতার আলাদা টাকা বের করা কঠিন।

সারাদিন অফিসে গাধার খাঁটুনি গেলো। এদিক যাও, ওদিক যাও। চা বানাও। ফাইল আনো। কপি করো। হেন তেন...আরো কত কি। সন্ধ্যার পর বের হলাম অফিস থেকে।

বাসভাড়া পুরোটা পকেটে নেই। তাই শাহবাগেই নেমে গেলাম। মেস সেই রাজাবাজার। বাকীটা হেঁটে যাবো। টাকা ছাড়া বাসে যাতে কেমন ফকির ফকির লাগে। আর একবার যদি কন্ট্রাকটর ধরে ফেলে...তাহলেই ইজ্জতের দফারফা। তবে মানিব্যাগের চিপায় তিনশ টাকা রেখে দিয়েছি। কোন সময় কোন বিপদ-আপদ হয়, কে জানে? ঐ টাকায় খুব বেচাল না হলে হাত দেইনা।

শাহবাগের যে রাস্তাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে গেছে, সেই রাস্তাটা সুন্দর। আমার ভালোই লাগে। মোড়ের ঠিক পরেই রাস্তার পাশে মোটা একটা অশ্বথ গাছ আছে। গাছের পাশে বসে আছি। পায়ের দিকে চোখ গেলো। জুতো কি এগুলো রাখবো? পা থেকে জুতা খুললাম। পায়ে বাতাস লাগুক। পা গুলোকে একটু বিশ্রাম দেয়া দরকার। একটু পরেই হেঁটে অনেকটা পথ যেতে হবে।

শাহবাগ মোড়ে বিশাল একটা টিভির মতো লাগানো হয়েছে। তাতে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। এখনো হচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে বিজ্ঞাপন দেখা শুরু করলাম। বিজ্ঞাপনের শব্দ পাচ্ছিনা। গাড়ির যা আওয়াজ! কিছু তরুন তরুনীর নির্বাক হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি দেখছি। কিছুক্ষন পরে দেখলাম একটু দূরেই এক বুড়ো পলিথিন বিছিয়ে ফুটপাথে বসে পড়েছে। বহুকষ্টে সে একটা কুপি ধরালো। ধোঁয়া আর ধোঁয়া। আলো ভালই হয়েছে। ভাবছিলাম ব্যাটা বুঝি ভিক্ষার ধান্দায় আছে। আমাকে অবাক করে বুড়ো ব্যাটা ঝোলা থেকে এক জোড়া জুতা বের করলো। ফুঃ ফুঃ করে জুতা ঝারলো। কি এমন ছিলো কে জানে! তারপর পড়নের লুঙ্গি দিয়ে কিছুক্ষন ডলাডলি। বুড়ার লুঙ্গির সব ময়লা মনে হয় জুতায় লেগে গেছে।

আমি বুড়োকে দেখছি। সে এদিক ওদিক পিচিক পিচিক করে থু থু ফেললো। কোত্থেকে যেন একটা বিড়িও বের করলো। কুপি থেকে ধরালো আগুন। দে টান...। কি সুখটান... । কয়েকটানেই বিড়ি শেষ। ব্যাটার ফুসফুসে বিরাট জোর !
আমি বসা থেকে উঠে বুড়োর দিকে এগিয়ে গেলাম।

“কি চাচা, জুতা বেচবেন?”
“নাহ। সাজায়া রাখছি। খক খকর খক...খকর খক খক।”
“মস্করা করেন?”
“মস্করা তো বাজান আপনে করতাছেন। এইহানে কেউ বেচন ছাড়া আর কিল্লিগা বহে? খক খকর খক...খকর খক খক।”
“দাম কতো?” এক জোড়া জুতা দরকার। পায়ের জোড়া সারানোর জন্যে মুচির হাতে ধরিয়ে দিলে ঝাড়ি খাবার ভালো সম্ভাবনা আছে।
“নিবেন?”
“কত?”
“কত হইলে নিবেন?”

হিসেবমতো যে বেচবে তার আগে দাম চাইবার কথা। বুড়ো দেখি উল্টো। বুড়োর দিকে তাকালাম। প্রশ্ন করে সে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কুপি হাতে নিয়ে সে আরেকটা বিড়ি ধরাচ্ছে। এই আলোয় তার চেহারার বিচিত্র ভাঁজ দেখা গেলো। দুচোখের পাশে ভাঁজ বেশী। সারা মুখে দাড়ি। এলোমেলো । চোখ যেন কেমন। বুঝতে পারছিনা সমস্যা কোথায়। তবে সমস্যা আছে। কেন এরকম মনে হচ্ছে তাও বুঝতে পারছিনা। বুড়োর বিড়ির গন্ধ পাচ্ছি। উৎকট গন্ধ। এই গন্ধ তামাকের হবার কথা না। কিসের গন্ধ? হঠাৎ মনে পড়লো গন্ধটা কিসের। গাঁজার গন্ধ।

“দাম আপনেই বলেন। দামে বনলে নিবো। না বনলে নিবোনা।”
“বাজান দাম আপনিই বলেন। শুনি। আপনে দাম যেইটা বলবেন, সেইটাই দাম। ”

বুড়ো অমায়িক গলায় কথা বলছে। গাঁজার প্রতিক্রিয়া, বোঝাই যাচ্ছে। জুতা জোড়া হাতে নিলাম। জুতায় চামড়ার গন্ধ পাচ্ছি। নতুন জুতায় চামড়ার গন্ধ থাকে। এই চাচা কি নতুন জুতা বিক্রি করছে?

“চাচামিয়া, জুতা কি নতুন?”
“তাতো জানিনা।”
“কই পাইলেন?”
“তা দিয়া আপনের কি? জুতা নিলে নিয়া যান।”

আমি নিশ্চিত এই জুতা চুরি করা। হাতে বুড়োর কুপি নিয়ে জুতা দেখা শুরু করলাম। নতুন। যার চুরি হয়েছে সে সম্ভবত একবার কি দুবার পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ঘষা চামড়ার জুতা। চকলেট কালার মনে হচ্ছে। জুতার সুখতলি বেশ নরম। সোলটা রবারের । নরম রবার। এর আসল দাম কতো আমি জানিনা। তবে জুতা আমার পছন্দ হয়েছে।

“কুপিটা দেন।”

বুড়োর হাতে কুপি দিয়ে দিলাম। সে আবারো বিড়ি ধরালো। মানুষ বিড়ি বা সিগারেট ধরানোর সময় আগুনের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখার চেষ্টা করে আগুন ঠিকঠাক মতো ধরলো কিনা। এই বুড়ো সেটা করছেনা। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হলুদ নীলচে আলো তার চেহারায়। সেই আলোয় চেহারার ভাঁজ অপার্থিব এক রুপ ধারণ করেছে। বুড়োর এক চোখ পুরোপুরি কালো। কোন সাদা অংশ নেই। আরেক চোখ সাদা। হলদে ঘোলাটে সাদা। চোখের মনি বলতে কিছু নেই। প্রানহীন। ঠিক এই সময় তার বিড়িতে আগুন ধরলো। ধোঁয়া এসে চেহারার একটা অংশ ঢেকে দিলো। ভরা রাস্তায় আমার শরীর কেঁপে উঠলো। মনে হচ্ছে আশেপাশে কেউ নেই। নির্জন এক অরন্যে আমরা দুজন। আমার কানে কোন শব্দও ঢুকছেনা। বুড়োর চোখ থেকে আমি চোখ সরাতে পারছিনা। অমোঘ টান।

“কি বাজান, বলেন জুতা কত দিবেন?”

আমার সম্বিত ফিরলো। হাত কাঁপছে। জুতা হাতে ধরে রাখার শক্তি পাচ্ছিনা। আমি এত ভয় পেয়েছি কেন? পড়েই গেলো। পড়ে যেতে থাকা জুতা বুড়োটা ধরে ফেললো তার বয়সের তুলনায় অত্যধিক ক্ষিপ্রতায়।

“জুতা কতো দিবেন?”
ঘোর লাগা গলায় বললাম, “একশ দেবো।”
“দেন।”

মানিব্যাগের চিপা থেকে টাকা বের করে দিলাম। জুতা হাতে নিয়েই কখন হাঁটা শুরু করেছি টের পেলাম না। মেসে ফিরে টের পেলাম পুরোটা রাস্তা আমি খালি পায়ে হেঁটে এসেছি। যেখানে বসেছিলাম, সেখানে জুতো খুলেছিলাম। আর পড়া হয়নি। গোসল করতে গিয়ে টের পেলাম আমার বাম পায়ের তলা অনেকটা কেটে গেছে। কিসে কেটেছে আমি জানিনা। পা ব্যাথা করছে। কাটাটুকু দেখে ভাবনার মাঝে পড়ে গেলাম। এতে আবার সেলাই টেলাই লাগবে নাকি? গোসল সেরে এসে দেখি মতিন ফিরেছে।

“কি ভাই, জুতা কিনছেন ?”
“হুমম।”
“কতো নিলো?”
“একশো।”
“কি কন মিয়া? এই জুতা একশো? সেকেন্ড হ্যান্ড নাকি?”
“ফুটপাথ থিকা কিনছি ভাই। দেখোতো আমার জ্বর আসছে নাকি?”

মতিন আমার দিকে এগিয়ে এলো। কপালে হাত দিয়েই বললো, “আরে ভাই, অনেক জ্বর মনে হয়। ওষুধ খাইছেন?”
“নাহ। আমার পা কাটছে। পায়ের অবস্থা দেখোতো ভাই। আমি বুঝতাছিনা সেলাই লাগবো কিনা?”
মতিন পা দেখে বললো,”ভাই, আপনের হইছিলো কি? পা তো অনেকখানি কাটছে। সেলাই লাগবো মনে হয়। চলেন ডাক্তারের কাছে যাই।”
“আমার কাছে টাকা নাইরে ভাই। ওমনেই থাকুক।”
“টাকা নিয়া চিন্তা কইরেন না। আমার কাছে টাকা আছে। আপনে চলেন। নইলে কিসের থিকা কি হয় বলা যায়না।”

অবসন্ন শরীর নিয়ে উঠলাম। শরীর টানছেনা। বাটা চপ্পল পায়ে কোন মতে গলিয়ে মতিনের সাথে বের হলাম।
সেলাই লাগলো ছয়টা। ওষুধের দোকানের কম্পাউন্ডার সেলাই দিলেন। ব্যাটার কাজ আমার পছন্দ হয়নি। কি এক ক্যাপ্সুল খুলে তার ভেতরের সাদা গুড়ো পায়ের কাটার মাঝে দিয়ে দিলো। বললো এন্টিবায়োটিক। কাটাটুকু পরিষ্কার করার ধার দিয়েও গেলোনা। ব্যাথার একটা ইঞ্জেকশন দিলো। ব্যাথা কমেছে কিন্তু ভেতরের টনটনটা কমেনি। শরীর কেমন গোলাচ্ছে। এই অবস্থায় মেসে ফিরলাম। ফিরেই বুড়োর ঘটনা মতিনকে বললাম।

“শফিক ভাই, মানুষের চোখ পুরা কালো হয় এইটা কোন সময় দেখছেন?
“না।”
“আবার কইলেন বুড়া গাঁজা খাইতেছিলো। গাঁজা খাইলে চোখ লাল হয়। কুপির হলুদ আলোয় সেই লাল চোখরেই মনে হইছে কালো। আর বাকী চোখটা মনে হয় পাথরের। এইজন্য ঐটারে আপনের মনে হইছে পুরা সাদা। সহজ বিষয়। হুদাই ডরান কেন রে ভাই? ঘুমায়া পড়েন। আপনের শরীর বেশী ভালোনা।“

আমি আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। শরীর টানছেনা।



“Why did u steal my thing? Bloody fucker.”
“বাংলায় বলেন। আমি ইংরেজী বুঝিনা।“
“টুমি আমার বিষয় কেন চৌরি করিয়াছো?’
“আমি আপনের কিছু চুরি করি নাই।“
“টুমি মিথ্যা বলিতেছ।“
“ধুর মিয়া। আমি চাকরি করি। আপনের কোন বাল আমি চুরি করছি? এইরম অন্ধকারে বইসা কথা বলেন কেন? আপনের খোমা দেখান।“
“ক্ষোমা...ইহা কি?”
“বদন, চেহারা। আপনের চেহারা দেখান। হালার পো আমি চুরি করছি, না?”
“হামার চেহারা টুমি অসহ্য হইবে, বালক।“
“হুত্তোর ব্যাডা। চেহারা দেহা।“

এরপর কোত্থেকে যেনো শব্দের উৎসের দিকে আলো পড়লো। প্রথমে আমি বুঝতে পারলাম না সামনের দ্রব্যটি কি? এক সময় বুঝলাম। মানুষ। একতাল মাংস পড়ে আছে একটা স্টীলের টেবিলের উপর। মাংসের চারপাশে রক্ত। পুরো টেবিলে রক্ত থক থক করছে। মানুষের নাড়িভূড়ি। এক পাশে দুটো হাত দেখা যাচ্ছে। দুটো পা কোনমতে চেনা যাচ্ছে। যেন পুরো মানুষটিকে কিছু দিয়ে ঠান্ডা মাথায় ছেঁচা হয়েছে।

তাল মাংসের ঠিক মাঝখানে একটা মাথা বসানো। মাথার একপাশ নেই। সেই পাশটায় বড় বড় সাদা সাদা পোকা কিলবিল কিলবিল করছে। পোকারা এবারে মাথা ছেড়ে নামলো নিচে রক্তের তালে। পোকা এবার রক্ত খাচ্ছে। পোকার রঙ এবারে লাল। হঠাৎ করে পোকারা আমার দিকে আসা শুরু করলো। অর্ধেক মাথাটা কথা বলা শুরু করলো।

“হামার চেহারা দেখিয়াছো। এইবার বলেন, টুমি আমার বিষয় কেন চৌরি করিয়াছো?”

আমি একবার পোকা দেখছি আরেকবার মাথা দেখছি। পোকারা আরো এগিয়ে আসছে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সরে যাবার। পা যেন মেঝেতে গেঁথে গেছে। পোকা আমার পা বেয়ে উঠে আসছে...কামড়ে খাচ্ছে আমার পায়ের পাতা।

“বলেন, টুমি আমার বিষয় কেন চৌরি করিয়াছো?”

আমি ব্যাথায় চিৎকার করার চেষ্টা করছি। শব্দ নেই। আ...আ...আ...বাঁচাও।

চিৎকারের শব্দে আমার নিজেরই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ভাঙতেই দেখি মতিন আমার মশারী খোলার চেষ্টা করছে। আমার মশারী আবার নানা কায়দা কানুন করে লাগানো কিনা!

“কি হইছে শামসু ভাই?”
“কি জানি একটা স্বপ্ন দেখলাম। পাওটাতে ব্যাথা বাড়ছে রে ভাই।”
“ব্যাথার ওষুধ তো দিলো মনে হয়। একটা খাইয়া ফেলেন। পানি আনি, নাকি?”
“আনো ভাই। আমার ঠ্যাং লড়াইতে কষ্ট হইতেছে।”

মতিন পানি এনে দিলো। ওষুধ খেলাম। আস্তে আস্তে ব্যাথা কমছে। বাকী রাত আর ঘুম এলোনা। মনে হচ্ছে ঘুমের ওষুধও আনার দরকার ছিলো।

সকালে মতিন কে অফিসে ফোন করে দিতে বললাম। মতিন আমার সামনেই অফিসে ফোন করলো। ওর মোবাইল আছে। আমার নেই। যে বেতন পাই তাতে মোবাইলের মতো হাতি পোষা সম্ভব না।

মতিন মোবাইলে হাত চাপা দিয়ে বললো,”ভাই, আপনারে চাইতেছে।”
“দাও।”
“স্লামালিকুম স্যার। জ্বী স্যার। পায়ে ব্যাথা পাইছি। জ্বর ছিলো। এখন নাই। পা নাড়াইতে পারি স্যার। জ্বী স্যার। আসতেছি স্যার।”

ফোনের লাইন কেটে মতিনের হাতে দিয়ে দিলাম। ক্লান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে এক রাতের জ্বর কাবু করে ফেলেছে। রাতে ঘুমও হয়নি। তাও এই মড়ার অফিসে যেতে হবে। একটা দিন মানুষ অফিসে না গেলে কি হয়? আমি তো মিথ্যাও বলিনি।

“মতিন তোমার কাছে কিছু টাকা হইবো? আমি আইজ তো বাসে উঠতে পারুম না। মিশুক বা সিএনজি তে যাইতে হবে।”

মতিন প্রথমে কিছু বললো না। চুপচাপ দুটো পাঁচশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললো, “শফিক ভাই, আমি আপনারে বড় ভাইয়ের মতো দেখি। আপনে আমার কাছে টাকা চাইতে এতো লজ্জা করেন কেন? আমিতো আপনার অবস্থা জানি। এই টাকা আমি আপনারে ছোট ভাই হিসাবে দিলাম। ফেরতের কথা ভাই মুখে আইনেন না। কষ্ট পামু। ”

এরপর আর কিছু বলার থাকেনা। আমি আমার ফুলে উঠা পা কোনমতে রাবার চপ্পলে গলিয়ে নিয়ে অফিসে রওনা দিলাম।

কেরানীর চাকরী যে কি কঠিন যে করেনি সে বুঝবেনা। অবশ্য সরকারী কেরানীরা রাজার হালতে থাকে। ফাইল টানতে বখসিস দেয়া লাগে। তাদের আবার সমিতি থাকে। কেউ কিছু বললে একদম ডায়রেক্ট একশন। এদের কেউ ঘাটানোর দুঃসাহস করেনা। এরা অনেকটা হোটেলে ভাজা তিন দিনের বাসী পেঁয়াজুর মত। খেলেই পেটে ভুটভাট শুরু হয়ে যায়। আর বেসরকারী কেরানীরা খুবই সহজপাচ্য। কিছু হলেই খেয়ে হজম, সাথে তৃপ্তির ঘ্রাউ ঘ্রাউ ঢেকুর।

খোড়াতে খোড়াতে বেরিয়ে গেলাম তেঁজগাও কলেজের সামনে। একটাই মিশুক যেতে রাজী হয়েছে। ফার্মগেট থেকে মতিঝিল চায় দুইশ টাকা। মাথা গরম হয়ে গেলো। মাথা ঠান্ডা করে মিশুকে উঠলাম। কাওরান বাজার সিগনালে থামলো মিশুক ।

“বাবা দুইডা টেকা দিবেন? ভাত খামু।”

ঘাড় ঘোরাতেই চমকে গেলাম। শাহবাগের সেই বুড়োটা না? তাইতো। যার কাছ থেকে জুতা কিনলাম এই সেই বুড়ো । একটা চোখ লাল, কালো না। মতিনের কথাই ঠিক। একটা চোখ সাদা। প্রাণহীন। ঠোটের কোনায় শয়তানি টাইপের হাসি। এর থেকে মুক্তি পেতে তাড়াতাড়ি পকেটে হাত দিলাম। খুচরা পয়সা দিতে গিয়ে দেখি অন্য লোক। চোখে লোভ চিকচিক করছে। দুটো টাকা ব্যাটার হাতে গুঁজে দিয়ে মিশুক থেকে গলা বের করে এদিক ওদিক তাকালাম। আর কোন ভিক্ষুক দেখা যাচ্ছেনা। কি যন্ত্রনা ! আমি কি ভুল দেখা শুরু করলাম নাকি। ইয়া মাবুদ! গরিবের একি ঘোড়া রোগ ?
আতংকে আমার শরীর কাঁপছে। কাঁপুনি নিয়েই অফিসে ঢুকলাম। প্রথমে দেখা করলাম ম্যানেজারের সাথে। গোটা অফিসে এই লোকটাকেই আমার মানুষ মনে হয়। সবাইকে আপনি বলে সম্বোধন করেন। এই মানুষটা ছাড়া কেউ আমাকে আপনি বলে না।

“স্যার আসবো?”
“আরে শামসু সাহেব। আসেন। কেমন আছেন?”
“স্লামালাইকুম স্যার। ভালোনা স্যার। পাওটা কাইটা গেছে। সেলাই লাগছে স্যার। এখন মনে হয় জ্বর আসতেছে।”
“ছুটি নিয়ে নিন। দরখাস্ত রেখে যান। আমি সই করে দেবো। ঠিক আছে?”
“আইচ্ছা স্যার।”

চুপচাপ স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। একটা দরখাস্ত লিখতে হবে। পায়ের ব্যাথাটা বেড়েছে।


এতো তাড়াতাড়ি সাধারনত আমি মেসে ফিরিনা। আমাকে দেখে মতিন অবাক হলো।

“আরে ভাই, এতো তাড়াতাড়ি আইলেন কেমনে?”
“ছুটি নিলাম তিন দিনের। শরীরটা ভালো লাগতেছে না মতিন।”
“রেষ্ট নেন ভাই। আমি একটু পরেই বাইরে যামু। দরজা লাগাইয়া ঘুম দেন।”
“ঠিক আছে।”

বিছানায় শুয়ে নানারকম অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা মাথায় আসা শুরু করলো। লটারিতে দশ লাখ টাকা পাইলে কি করতাম? এখন কি বিয়ে করা উচিৎ? কেমন মেয়ে বিয়ে করবো? এইসব তাংফাং।

একটু পর মতিন বেরিয়ে গেলো। দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম। ঘুম এলোনা। খালি তন্দ্রা মতো লাগে। আবার ছুটে যায়।

তন্দ্রার মাঝে কেমন ছাড়া ছাড়া স্বপ্ন দেখলাম। হারামজাদা বুড়োটাকে দেখলাম একবার। ব্যাটা দাঁত কেলিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি বাজান, জুতা পড়ছেন? কয়ডা টেকা দিবেন? গাঞ্জা খাইতাম।”

চিনিনা জানিনা এমন একটা মেয়েকেও দেখলাম। আমাকে জিজ্ঞেস করছে, “আমাকে বিয়ে করবেন?”

একবার দেখি ট্রেনে করে কোথায় যেন যাচ্ছি। পেছনে মতিন ছুটে আসছে। চিৎকার করে বলছে, “শামসু ভাই, আমারে নিয়া যান। শামসু ভাই...।”

দরজার খটখটানিতে তন্দ্রা পুরোপুরি ছুটে গেলো। মতিন এসেছে। সাথে দুই প্যাকেট খাবার।

“দুপুরে কি খাইবেন ভাইবা নিয়া আসলাম। শরীর এখন কেমন?”
“মোটামুটি। তুমি খাওনাই?”
“নাহ। আসেন একসাথেই খাই। আর আপনার জন্য একটা জিনিষ আনছি।”
“কি জিনিষ?”
“মোবাইলের সীম আনছি। আমার একটা সেট এমনেই পইড়া আছে। ঐটা আপনে ইউজ করেন। আমার ফোনে আপনার কল আসে, কেমন যেন লাগে।”
“আইচ্ছা। ঠিক আছে। তুমিতো ভাই আমার কাছে অনেক টাকা পাইবা।”
“পরে দিয়া দিয়েন। খাওনের পর মোবাইলের সব আপনারে বুঝায়া দিমুনে।”

খাওয়া শেষ করে মতিন আমার হাতে মোবাইল দিলো। সব কি করে চালাতে হয় তাও শিখিয়ে দিলো। তার নিজের নাম্বার থেকে আমার নাম্বারে কল দিয়ে তার নাম্বারটা আমারটায় সেইভ করে দিলো।

“শামসু ভাই। এইটা আমার নাম্বার। এইবার আপনে আপনের দরকারী নাম্বার, পরিচিত সবার নাম্বার আপনের সীমে সেইভ কইরা ফেলেন।”
“পরে করুম ভাই। এখন একটা ঘুম দেই। কতো দিন দুপুরে ঘুমাই না।”

ঘুম দিলাম। ভালো ঘুম হল। রাতে মতিনের কম্পিউটারে সিনেমা দেখলাম। সিনেমার নাম ইশকিয়া। হিন্দি সিনেমা। আমি হিন্দি বুঝিনা। তাও সিনেমাটাও কেন যেন ভালো লাগলো। নায়িকাটা সুন্দর। সিনেমা দেখেই ঘুম।


খুব শীত লাগছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি একটা লম্বা ঘরের ভেতর। ঘরের একপাশের দেয়ালে সারিবদ্ধ ড্রয়ার। ঘরের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত। ঘরের মাঝখানে একটা ষ্টিলের লম্বা টেবিল। টেবিলের ঊপর আলো পড়েছে। সেই আলো সবখানে পৌঁছাতে পারেনি। কেমন ঘোলাটে আলো-অন্ধকার। আমি ছাড়া সে লম্বা ঘরে কেউ নেই। হঠাৎ ঘড়ঘড় শব্দে একটা ড্রয়ার খুলে গেলো। ড্রয়ার থেকে বেরিয়ে এলো লম্বা একজন সুপুরুষ। শ্বেতাংগ। বিদেশী মনে হচ্ছে। লোকটা প্রথমে আমার দিকে তাকালো ।

“ইদিকে আহসো।”

আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার দিকে এগিয়ে গেলাম। লোকটা সোজা ষ্টিলের লম্বা টেবিলে শুয়ে পড়লো। তারপরই কেমন একটা আলোড়ন শুরু হলো তার শরীরে। মুহুর্তেই সুদর্শন সুপুরুষ হয়ে গেলো একতাল মাংসপিন্ড। মাংসপিন্ডের ঠিক মাঝখানে লোকটার খন্ডিত মাথা বসানো। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। রক্ত গড়িয়ে টেবিল থেক নিচে। গড়িয়ে আসছে আমার পায়ের দিকে। তার খন্ডিত মাথার একপাশে কিলবিলে পোকা। পোকারা মাংস খাচ্ছে। খচরখচর শব্দ হচ্ছে। বমি পাচ্ছে আমার। তীব্র বমি। এই সময় দেখি সেই বুড়ো।

“বাজান বিড়ি খাইবেন? খুব টেশ।”

আমি বুড়োর গায়ে হড়হড় করে বমি করে ভাসিয়ে ফেললাম।
এর মাঝেই লোকটার কথা শুনলাম, “টুমি আমার বিষয় কেন চৌরি করিয়াছো?”

আমার ঘুম ভাঙলো। বমি করে বিছানা ভাসিয়ে ফেলেছি। মতিন বাতি জ্বালিয়ে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পায়ের দিকে তাকালাম। পায়ের ব্যান্ডেজে রক্ত। এই রক্ত আমার তো? নাকি...?

মতিন বিছানা থেকে নেমে এলো।

“আপনের পায়ে ব্যান্ডেজে তো রক্ত। সেলাই খুইলা গেলো নাকি? আপনে নামেন। আমি বিছানা পরিস্কার কইরা দিতেছি। আমার বিছানায় গিয়া বসেন একটু।”

আমি বিছানা থেকে নামলাম। পায়ের ব্যাথাটা বেড়েছে। মতিন আমার বিছানার সব একেবারে গুটিয়ে দরজার বাইরে ফেলে এলো।

“একটু দাঁড়াইতে পারবেন?” ভেতরে ঢুকে প্রশ্ন করলো মতিন।
আমি দাঁড়ালাম। মতিন তার বিছানার একটা তোষক নামিয়ে আমার বিছানায় নিয়ে গেলো। তার বিছানায় তোষক দুটা। এরপর ট্রাঙ্ক থেকে বের করলো একটা বেডকভার।

আমার বিছানা গুছিয়ে দিয়ে মতিন বললো,”ভাই এইবার একটু ঘুমান। কালকে আমার একটা ইন্টারভিউ আছে। সকালে উঠতে হইবো। আপনের জুতাগুলা একটু নিয়া যামু ভাই। আমার নতুন জুতা নাই। সমস্যা হইবো?”
“নিও। আমার তো এখন লাগতেছে না।”

এবার শুয়েই ঘুম। শান্তির ঘুম। এক ঘুমে রাত কাবার। সকালে উঠে দেখি মতিন বেরিয়ে গেছে। নাস্তা করে আবার দিলাম ঘুম।


“বাজানগো, আমারে একশ টেকা দিবেন?”
আবারো সেই হারামজাদা বুড়ো এসে হাজির।
“আমার কাছে টাকা নাই। ”
“দেননা বাজান।”
“কইলাম না, নাই।”
“আপনে এহনো জুতা পড়েন নাই? ”
“নাহ। পায়ে ব্যাথা পাইছি।”
“বাইচা গেলেন। খেক খেক খেক খেক খেক...।”

বিশ্রী হাসির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বেঁচে গেলাম, মানে কি? স্বপ্নের কথা আমার মাথায় ঘোরাঘুরি করা শুরু করলো। বিকেলের দিকে আমার ফোনে কল এলো। মতিনের নাম্বার। ফোন ধরলাম।

“হ্যালো মতিন...”
“আপনার নাম কি শামসু?”
“জ্বী। আমার নাম শামসু। আপনি কে? মতিন কই?”
“আমি ঢাকা মেডিক্যাল থেকে বলছি। মতিন আপনার কি হয়?”
“আমরা একসাথে থাকি, মেসে। মতিনের কি হইছে?”
“আপনার বন্ধু এক্সিডেন্ট করেছেন। হাসপাতালে এসে আপনার এই বন্ধুর নাম্বারে ফোন করবেন। তার মোবাইল আমার কাছেই আছে।”

ওপ্রান্ত থেকে ফোনের লাইন কেটে গেলো। খোদা, মতিনের একি হলো? এতো ভালো একটা ছেলে! হঠাৎ আমার স্বপ্নের কথা মনে পড়লো। বুড়ো হারামজাদার কথা এবার আমি বুঝতে পারছি। সর্বনাশ ! কষ্ট করেই রওনা দিলাম ঢাকা মেডিক্যালে। পৌছে ফোন দিলাম মতিনের নাম্বারে।

“ভাই সাহেব, আমি আসছি। কই যাইতে হবে?”
“মর্গে চলে আসেন।”

আমি এই খবরে কেন যেন ঠিক বিচলিত হলাম না। মনে হলো এইরকমই তো হবার কথা। লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে করে মর্গে পৌছে গেলাম। উৎকট গন্ধ চারপাশে।

এক লোক এসে বললো ,“আপনি কি শামসু?”
“হ্যাঁ।”
“আমার সাথে আসেন।”

নির্বিকার ভাবে লোকটার পেছন পেছন রওনা দিয়ে লম্বা মতো একটা ঘরে পৌছালাম। খুব ঠান্ডা। ঘরের একপাশের দেয়ালে সারি সারি ড্রয়ার। অল্প পাওয়ারের বাতি জ্বলছে। কেমন ঘোলাটে আলো। দৃশ্যটা আমার খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। খুব পরিচিত। কোথায় দেখেছি এই দৃশ্য?

লোকটা একটা লম্বা টেবিলের দিকে নিয়ে গেলো আমাকে। টেবিলে কি আছে আমি জানিনা। উপরে সাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। কাপড় সরাতেই আমার বমি পেয়ে গেলো। একপাশে হড় হড় করে বমি করলাম।

টেবিলে একতাল মাংসপিন্ড। হাত দুটো পরিস্কার বোঝা যায়। মাথাটা মাংসপিন্ডের উপর বসানো। মাথার অর্ধেকটা নেই। এক পাশ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওটা মতিন। ওটাই মতিনের মাথা। মাথার নিচেই সমস্ত নাড়িভূড়ি। সরে এলাম।

লোকটা বললো ,“চিনেছেন?”
“হুমম।”

আবার বমি করলাম। লোকটা আমাকে ধরে ফেললো। তার চেহারায় কোন বিকার নেই। মনে হয় সে এসব দেখে অভ্যস্ত।

“আপনার চিন্তা করার কিছু নেই। আমি লাশের বাড়িতে খবর দিয়ে দিয়েছি। আপনার বন্ধুর মোবাইল নিয়ে যান।”
“ওটা মতিনের আত্মীয়দের দিয়ে দেবেন।”

সোজা হাঁটা শুরু করলাম। এখানে আর এক মুহুর্তও থাকতে পারবোনা। বেরুবার আগে একবার পেছনে তাকালাম। মতিনের পা ফাঁকা। মোবাইল আছে অথচ জুতাগুলো নেই।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে দেখি রাত হয়ে গেছে। আটটা বাজে। রিক্সায় এলাম শাহবাগ মোড়ে। গেলাম সেই গাছের পাশে। দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছি বুড়োটা বসে আছে। সামনে এক জোড়া জুতা। আরেকটু এগিয়ে গেলাম। এই সেই জুতা। এই জুতাই আমি কিনেছিলাম।পরতে পারিনি। পরেছে মতিন। মরে গেলো সেদিনই।
আমি যেতে যেতেই দেখি আরেকজন কিনে ফেলেছে। আমার পায়ের অসম্ভব ব্যাথা নিয়েও জোরে হাটা শুরু করলাম। লোকটাকে থামাতে হবে। নইলে...


মন্তব্য

রানা মেহের এর ছবি

ঠিক এরকম একটা গল্প পড়েছিুলাম কোথাও। মনে করতে পারছিনা।
যাই হোক। ভালো লেগেছে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

প্রিয় রানা ভাই,
গল্প ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো। ভালো থাকবেন।

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

সুন্দর গল্প। শেষ দিকে সামান্য একঘেয়ামী লেগেছে, তারপরও সব মিলিয়ে গল্পটা ভালো লেগেছে। কিন্তু আপনার কাকা সিরিজের কি হলো?

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ধন্যবাদ শান্ত। কাক সিরিজের নতুন কিস্তি দেবো কয়েকদিনের মধ্যেই।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

গল্প ভালো লেগেছে। আপনার লেখা ভালো, তবে এডিট করতে পারলে বা আপনি যদি আরো যত্ন নিয়ে লেখেন তাহলে আরো ভালো করা সম্ভব। লিখতে থাকুন। চমৎকার হচ্ছে।

আপনার বয়স কত তা জানিনা, অলক্ষুণে জুতো গল্পটা পড়েছেন? কার লেখা ছিল জানেন? আমি ছোটবেলায় পড়েছিলাম, সম্ভবত বাংলা দ্রুতপঠন বইয়ে। গল্পটা আবার পড়তে ইচ্ছে করছে।

কাক উপন্যাসের কী হলো? ৫ পর্ব তো শেষ। এই গল্পে ৫ দিলাম।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

প্রিয় প্রকৃতিপ্রেমিক,
ধন্যবাদ গল্প পড়ার জন্য। আমি অলক্ষুনে জুতা গল্পটি পড়িনি। কোথায় আছে তা যদি মনে পড়ে অবশ্যই জানাবেন। আমি গল্পটি পড়তে চাচ্ছি। আর কাক এর পরবর্তী অংশ কম্পোজ হয়ে গেলে এবং প্রকাশের সুযোগ পেলেই দিয়ে দেবো। ভালো থাকবেন।

মুনতাসির অনীক আহমেদ এর ছবি

ভাল লাগলো দাদা। একটু ভয় ও পেলাম, কিন্তু আনেক ভাল হয়েছে আসলেই। আরও চাই।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

শয়তানী হাসি শয়তানী হাসি

বইখাতা এর ছবি

কী ভয়ংকর!

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

দেঁতো হাসি

মূলত পাঠক এর ছবি

চমৎকার গতিময় লেখা, ভালো লাগলো।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ধন্যবাদ মূলত পাঠক। ভালো থাকবেন।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

একটু এডিট করে লেখা পোষ্ট করবেন, অতিথি কালে এমন সমস্যা হয়।

চালিয়ে যান

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ধন্যবাদ দেবোত্তম দা। আপনার উপদেশ মনে রাখার চেষ্টা করবো। ভালো থাকবেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগল...আবার খারাপও লাগল...মতিন এর জন্য...
কাক সিরিজ এর জন্য অপেক্ষায় আছি আইজুদ্দিন খাইছে

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

ধন্যবাদ অতিথি লেখক। কাক কম্পোজ হয়ে গেলেই দিয়ে দেবো। ভালো থাকবেন।

পলাশ পলু এর ছবি

মানিক ভাই, আপনি আমার ঈদটাই মাটি করে দিলেন রে ভাই। ভাবসিলাম এইবার ফুটপাথ থেকে জুতা কিনব। কিন্তু আপনার গল্প তা পড়ে ভাল ভয় পাইছি। ঈদ টা জুতা ছাড়া ই কাটাতে হবে। কী আর করার। পকেটে ১০০ টাকার বেশী নাই।

গল্পো ভালো লেগেছে । চালিয়ে যান।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।