মুহম্মদ জুবায়েরের অপ্রকাশিত গল্প

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২৫/০৯/২০১০ - ১:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অন্তর্বর্তী অথবা অন্তরবর্তী
মুহম্মদ জুবায়ের

১.
বাবা অনেকদিন আসো না, একবার এসে ঘুরে যাও। কবে আসবে?

দুই পুত্রকন্যা দূরদেশ থেকে নিয়মিত ফোন করে, তাদের মা চলে যাওয়ার পর আজকাল আরো বেশি করে। তখন অন্য যা কিছু বিষয় নিয়ে কথা হোক, অবধারিতভাবে আবদুর রবের কাছে এই অনুরোধ আসে, বাবা অনেকদিন আসো না, একবার এসে ঘুরে যাও।

অনেকদিন দেখা নেই। ঠিক কতোদিন হলে অনেকদিন হয়? শেষবার দেখা যখন মিতা আর মিথুন এসেছিলো তাদের মায়ের হঠাৎ চলে যাওয়ার খবর পেয়ে। মিতা বার্লিন থেকে, মিথুন টরন্টো থেকে। একবছর পুরো হয়নি এখনো। মিনু চলে যাওয়ার পর বাবা খুব একলা হয়ে পড়েছে ভেবে সম্ভবত নয় মাসই দীর্ঘ সময় বলে বোধ করছে তারা। মিনু থাকতে দু’তিন বছরে একবার ছেলেমেয়েদের দেখা পাওয়া যেতো। হয় তারা এলো, অথবা তাঁরা নিজেরা গেলেন। ছেলেমেয়ের দেখা পেতে, কাছাকাছি থাকতে কোন বাবা-মা না চায়! তাঁর কাছে অদেখার এই সময়টিকে তখন দীর্ঘ মনে হতো। মিনুরও তাই। অথচ ছেলেমেয়ের কাছে সেই সময় তা দীর্ঘ বলে গণ্য হয়নি। আবদুর রব ভাবেন, ওরা অনেকদিনের কথা যে বলছে, তা হয়তো কিছু করুণাবশতই। খুবই অপছন্দের জিনিস। প্রয়োজন নেই।

ভোরে ওঠার অভ্যাস তাঁর বাল্যকাল থেকে। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর দুই বছর হয় হয়, মিনু চলে গেলো। তবু অভ্যাসটি ঠিক আছে। আজ প্রাতঃভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করতে হয়। কাল রাত থেকে আকাশে মেঘ ছিলো, সকালে তা আরো ঘন কালো চেহারা নেয়। বাইরে বেরিয়ে টের পেলেন ঠাণ্ডা বাতাস দিচ্ছে, বৃষ্টির বার্তা। ঘরে ফিরতেই বৃষ্টি নামলো। এই সময়ে মিথুনের ফোন। মামুলি কিছু কথাবার্তা সেরে সে ফোন তুলে দেয় বউয়ের হাতে। এসে ঘুরে যাও – এই নিয়মমাফিক অনুরোধ আজ অবশ্য উল্লিখিত হয়নি। অনেকদিন অদেখার চেয়ে গুরুতর সংকট ছিলো আজকের বিষয়। শিখুর মুখে জানা গেলো, মিথুন এখন ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপের রোগী। রুটিন ডাক্তারি চেক আপের সময় আবিষ্কৃত হয়েছে। এই বয়সেই! বত্রিশ বছর বয়সী যুবক পুত্রের রোগাক্রান্ত হওয়ার খবরে স্বস্তি চলে যাওয়ার কথা। উপসর্গগুলি রাতারাতি প্রাণসংহার করে না বটে, কিন্তু সম্পূর্ণ উপশম কোনোকালে হবে না এবং তা কেবল আক্রান্তের জীবনীশক্তি ও আয়ু ক্রমাগত ক্ষয় করে যাবে। মিথুনের ক্ষেত্রে অবয়সোচিতও। তার সামনের জীবনকাল, তা দীর্ঘ বা হ্রস্ব যা-ই হোক, অতিবাহিত হবে সার্বক্ষণিক সতর্কতায়।

খুব ছোটোবেলায় নানারকমের রোগবালাই মিথুনকে ভুগিয়েছে, তবে বারো-তেরো বছর বয়সের পরে তেমন কোনো সমস্যা ছিলো না। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পার হলো সে সুস্থ-সবল শরীর নিয়ে। বছর চারেক আগে অবশ্য তার আরেকটি মারাত্মক শারীরিক ত্রুটি আবিষ্কৃত হয়। তা-ও উপশমযোগ্য নয়।

২.
আকাশ থেকে পড়ার অভিজ্ঞতা কেমন, জানার উপায় নেই। কিন্তু ঘটনায় আবদুর রবের প্রতিক্রিয়া ওই আকাশ থেকে পড়ার মতো। ভাবেন, এতো মানুষ থাকতে তাঁকে কেন? দেশের নাগরিক হিসেবে জানেন, সামনে নির্বাচন। তার হাঁকডাক, বাকবিতণ্ডা শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। এ দেশে আবার এক উদ্ভট রীতি চালু হয়েছে - নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল দেশ পরিচালনা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভার তুলে দেবে একটি অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে। একটি উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে গঠিত হবে সেই অস্থায়ী সরকার। পদ্ধতিটি অভিনব বটে। পৃথিবীতে আর কোথায় আছে এমন ব্যবস্থা?

কিন্তু এ ছাড়া আর উপায়ও কিছু ছিলো না। সামরিক শাসকের পতনের পর দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্মত হয়েছিলো। তখন নির্বাচনের আগে পর্যন্ত কাজ চালানোর জন্যে তত্ত্বাবধায়ক একটি সরকারের দরকার হয়ে পড়ে। সেই প্রয়োজনটি বোধগম্য হলেও পরবর্তীকালের সব নির্বাচনেই এই রীতি চালু থাকার কথা ছিলো না। অথচ ক্ষমতাপ্রত্যাশী দুই বড়ো রাজনৈতিক দল, অন্যগুলি আকার ও প্রভাবের বিচারে অনুল্লেখ্য, কেউ কাউকে এতোটুকু বিশ্বাস করতে পারে না। সন্দেহ এরকম, প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের মতো করে নেবে। এরা এমনকি নিজেদের ওপরেও আস্থা রাখে বলে মনে হয় না, সেই বিশ্বাসই নেই তাদের। থাকলে আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরিচ্ছন্ন নির্বাচন ব্যবস্থার প্রচলন করা অসম্ভব ছিলো না। পাঁচ বছর পর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ঝামেলা না করে স্থায়ী সমাধান করা যেতো। ব্যবস্থাটিকে অন্ধ মানুষকে হাত ধরে ভিড়ের রাস্তা পার করিয়ে দেওয়ার মতো মনে হয় আবদুর রবের। বিদেশে এই ধরনের টোটকা ব্যবস্থাকে বলে ব্যান্ড-এইড সলিউশন - যেখানে অস্ত্রোপচার দরকার সেখানে ব্যান্ড-এইড লাগিয়ে আপাতত ক্ষত ঢাকার ব্যবস্থা।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের একজন হওয়ার প্রস্তাব এসেছে আবদুর রবের কাছে। এখনকার নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে, এখন অন্তর্বর্তীরা নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করবেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত মাসতিনেকের জন্যে দেশের সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। অবসর ও স্ত্রী বিয়োগের পর নিজেকে তিনি কী কর্মে ব্যস্ত রাখবেন স্থির করতে পারছিলেন না, তখন প্রস্তাবটি স্রেফ আকাশ থেকে এসে পড়লে এইরকম বোধ হয়।

বিস্ময়ের প্রধান কারণ তিনি নিজে। জীবনে কখনো কোথাও উচ্চকণ্ঠ ছিলেন না, নিভৃতে নিজের কর্তব্য করে গেছেন সাধ্যমতো দক্ষতায়। ফলে, এ দেশের নিয়ামক-নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে কর্মোপলক্ষে কখনো পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটলেও তা ঘনিষ্ঠতা হয়ে ওঠেনি। নিজের দিক থেকেই আগ্রহের অভাব ছিলো আবদুর রবের। ক্ষমতা, তা যে কোনো প্রকারের হোক, অতি পিচ্ছিল ও অস্থায়ী বলে জেনে এসেছেন। আজকের ক্ষমতাবান কালই অতি দীনহীন, এমনকি ঘৃণ্য কেউ হয়ে যেতে পারে। তা ঘটতে দেখেছেনও চোখের সামনেই কতোবার। তিনি ক্ষমতাবানদের নিকটবর্তী হওয়ার সম্ভাবনা বরাবর এড়াতে সক্ষম হয়েছেন। অনেক সহকর্মীকে দেখেছেন এইসব সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে, সুদূরতম সুযোগ মিলে গেলে ক্ষমতাবানদের কণ্ঠলগ্ন হওয়ার জন্যে প্রাণপাত করতে। পরে সময় ও শাসকের বদল ঘটামাত্র সেই সহকর্মীরা কখনো সাময়িকভাবে বিপদগ্রস্ত, কিন্তু অবিলম্বে আনুগত্য বদলে ফেলে নবাগত ক্ষমতাবানদের সুনজরে আসার জন্যে সচেষ্ট হয়েছেন। অভিজ্ঞতায় জানেন এইসব আনুগত্য বিশুদ্ধ জাগতিক সুবিধার সন্ধানী ও অনুগামী, তাতে বিশ্বাস বা নৈতিকতার কোনো শাসন নেই।

কর্মদক্ষতার কারণে একবার এক সামরিক শাসকের নজরে পড়ে গিয়েছিলেন আবদুর রব। শাসক তাঁকে উচ্চতর দায়িত্বে, এমনকি মন্ত্রিসভায় স্থান দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে আবদুর রব প্রকৃত বিপদের সম্মুখীন হন। মুখের ওপর না বলা যুক্তিযুক্ত হতো না, তা তাঁর স্বভাবও নয়। ভেবে দেখবেন বলে সময় নিয়ে চলে এসেছিলেন সেদিন। আশংকা-উদ্বেগে মাসখানেক অতিক্রান্ত হয়, এই সময়ে একটি রাজনৈতিক সংকটের ফলে সামরিক শাসকের প্রস্তাব ও পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায়। অবিলম্বে দেশের শাসক বদল ঘটলে সংকট থেকে পরিত্রাণ পেয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনাটিকে তিনি কর্মজীবনের সবচেয়ে বড়ো সংকট বলে অনায়াসে চিহ্নিত করতে পারেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার আচমকা প্রস্তাব নিয়েও প্রথমে কিঞ্চিৎ দ্বিধান্বিত ছিলেন। এর আগে তিনবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়েছে। আগের দু’টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ কিছু বিতর্ক ও জটিলতার ভেতরে পড়েছিলেন বলে জানেন। নিজেকে সেরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন দেখতে তিনি প্রবলভাবে অনিচ্ছুক। সারাজীবনে তাঁর সুখ্যাতি কী বা কতোটা ছিলো তার হিসেব জানা নেই, কিন্তু অখ্যাতির কারণ কিছু তিনি সজ্ঞানে ঘটাননি, কোনো অগৌরবকে তিনি নিকটবর্তী হতে দেননি। স্ত্রীকে মাঝেমধ্যে হাসতে হাসতে বলতেন, আবদুর রবের আর কিছু না থাক, অহেতুক কলরব নেই, মানুষ হিসেবে কিছু গৌরব আছে!

বস্তুত এখন দেশের রাজনীতির যে পচন-ধরা অবস্থা তাতে নিজেকে এসবের মধ্যে জড়াতে কে চায়? রাজনীতি আর রাজনীতি নেই, পঁচিশ-তিরিশ বছর আগেও এই অবস্থা ছিলো না। এখন রাজনীতি শুধুই রাজ প্রতিষ্ঠার নীতি, আর কিছু নয়। দেশ বা জনগণের কল্যাণ-অকল্যাণ বলে কিছু নেই সেখানে। যে কোনোপ্রকারে ক্ষমতায় যেতে পারলেই হয়, তার জন্যে কোনোকিছুতেই কেউ আর কুণ্ঠিত নয়, লজ্জিত নয়। দু’টিমাত্র দলকেন্দ্রিক হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন হওয়ার খেলাটি। অথচ রীতিপদ্ধতি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিচারে দুই দলে পার্থক্য বিশেষ নেই - একটি প্রবলভাবে ডানঘেঁষা, অন্যটি কিছু কম। ছোটো দলগুলি ভয়াবহ রকমের অপুষ্ট, তারা শক্তি ও প্রতিপত্তিহীন। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনই হয়তো সারা পৃথিবীকে এককেন্দ্রিক করে দিয়েছে। অথচ রাজনীতি, তা দেশীয় হোক বা আন্তর্জাতিক, এমনই জিনিস যার ঝাপটা সব মানুষের গায়েই লাগবে। আবদুর রব তা জানেন। কোথায় যেন পড়েছিলেন, অনেক দূরে কোথাও যুদ্ধ হলে আমাদের চায়ে চিনি কম পড়ে!

তাঁর দ্বিধা-সংশয় অগ্রাহ্য করলেন এক প্রাক্তন শিক্ষক, বস্তুত তিনিই আবদুর রবকে একজন উপদেষ্টা হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করেছিলেন বলে জানা গেলো। বললেন, এতো সাতপাঁচ তোমাকে ভাবতে হবে না। কাউকে না কাউকে কাজটা করতে হবে। আর আমি তো আছি।

সম্মত তাঁকে অতএব হতে হয়। এক হিসেবে আবদুর রব খুশিও হলেন। অন্তত কিছুদিনের জন্যে তাঁর দিনরাত্রির বিপুল ব্যবহারযোগ্য সময় কীভাবে ব্যয় করা যাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছে না। নিঃসঙ্গ দিনরাত্রিগুলি তো সত্যিই বড়ো দীর্ঘ হয়ে উঠছিলো ক্রমে। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটি অভিজ্ঞতাও মন্দ নয়। এতোকাল যা করে এসেছেন, তার সঙ্গে কিছু মিল থাকলেও অন্যরকম।

দায়িত্ব অনেক বড়ো, সুতরাং চ্যালেঞ্জ হিসেবেও নেওয়া চলে। আকাশ থেকে এসে পড়া অভাবনীয় প্রস্তাবটি ক্রমে আনন্দে রূপান্তরিত হয়। কখনো কখনো আশ্চর্যজনকভাবে এইসব আনন্দ কোথা থেকে যেন এসে জীবনে উপস্থিত হয়। সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে।

৩.
কিছুকাল আগে একদিন এক পুরনো ছাত্র ফোন করেছিলো। এককালে, কর্মজীবনের শুরুতে, শিক্ষকতা করেছিলেন কিছুদিন। তার কিছু সুবিধা এখনো পাওয়া যায়। বিচিত্র সব সময়ে ও পরিস্থিতিতে আচমকা পুরনো ছাত্রদের সাক্ষাৎ পেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন আবদুর রব, সারাজীবন ধরেই তা কমবেশি পাওয়া সম্ভব। এক অনন্ত মধুভাণ্ড। ছেলেবেলায় গ্রামে দেখেছেন চাকভাঙা মধু প্রথমে হাঁড়ি উপচে পড়তে চায়। অসতর্ক হলে গড়িয়ে পড়ে, অপচয়িত হয়। মধু উপচে পড়ার সময়কে মনুষ্যজীবনের যৌবনকাল ভেবে নেওয়া চলে। সেই পর্ব, যা অবারিত মধু নিঃসরণের শ্রেষ্ঠ সময়,অতিক্রান্ত হলে কেবল চুঁইয়ে পড়া একটি-দুটি ফোঁটার জন্যে অপেক্ষা। তিনি এখন সেই বয়সে উপনীত হয়েছেন। ক্কচিৎ-কদাচিৎ পাওয়া যায়, তবু তা অমূল্য ধন! কুড়িয়ে পাওয়া রত্নবিশেষ যেন, আনন্দদায়ক ও দুর্লভ।

পুরনো ছাত্রটির সঙ্গে কথা বলার পর তাঁর এরকম বোধ হয়। নাম শুনে তিনি ছেলেটিকে - এখন কি আর ছেলে আছে, লোকই হবে - স্মরণ করতে পারলেন না। সেই কতোকাল আগের কথা। সে নিজেই বলছিলো, আমাকে স্যার আপনার হয়তো মনে নেই, আমি সত্তর সালের ইন্টারমিডিয়েট, তখন আপনি আমাদের কলেজে প্রিন্সিপ্যাল।

দেখা হলে পুরনো অনেক ছাত্র ধরেই নেয় ওদের কথা তাঁর মনে থাকার কথা। নেই জানলে তাদের চোখেমুখে ঠিক হতাশা না হলেও কিছু নৈরাশ্যের ছায়া পড়ে। তিনি জানেন, কোনো মানুষই নিজেকে এরকম অবস্থায় দেখতে পছন্দ করে না। কিন্তু কী করা! সবাইকে মনে রাখা সম্ভব নয়। মিথ্যে করে বানিয়ে তো আর বলতে পারেন না, তোমাকে বাবা আমার খুব মনে আছে! এই ছেলেটি এরকম আশা করেনি দেখে ভালো লাগে। মনে মনে কৃতজ্ঞ বোধ করেন, সাক্ষাৎ ঘটলে অস্বস্তিতে পড়তে হবে না।

তাঁর সন্ধান সে কোথা থেকে পেলো জিজ্ঞেস করেছিলেন আবদুর রব। উত্তরে ছেলেটির হাসির শব্দ শোনা যায় ফোনে। তারপর সে বলে সম্পূর্ণ অন্য কথা, স্যার, আমার মনে আছে একবার কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করার সময় আপনি বলেছিলেন, উৎকৃষ্ট মানুষ হয়ে উঠতে চাইলে নিজের ভালোমন্দের বিচার নিজে করতে শিখতে হবে। কীভাবে? রাতে ঘুমিয়ে পড়ার আগে বিছানায় শুয়ে এক মিনিট সময় নিয়ে ভাববে সারাদিনে কী কী কাজ তুমি করলে এবং তার মধ্যে কোন কাজটি করা ঠিক হয়েছে আর কোনটি হয়নি। অন্য কারো কাছে যাচাই করিয়ে নিতে হবে না, সেসবের ভালোমন্দ কিন্তু তোমার জানা আছে। এইভাবেই ন্যায়-অন্যায়ের বোধ মানুষের ভেতরে শিকড় ছড়ায়, বিশ্বাসের ভিত শক্ত হয়।

বলেছিলেন নিশ্চয়ই। এইসব তাঁর বিশ্বাসের কথা। এইটুকুতেই জীবনে যে কতো অঘটন এড়ানো সম্ভব হয়! প্রাক্তন ছাত্রটি তখনো বলছে, বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, আমি স্যার আপনার ওই কথাগুলো মেনে চলেছি সারাজীবন। সেদিন আপনি আর কী বলেছিলেন মনে নেই, কিন্তু ওই একটি ছোট্টো কথা আমার জীবনে অনেক বড়ো জায়গা নিয়ে থেকে গেছে। আমার ছেলেমেয়েদেরও কথাটা সবসময় বলি।

বিশুদ্ধ মধু। আবদুর রব ভাবেন, হোক ক্ষুদ্র একটি ফোঁটা, তবু মধুই। এইসব মধুর বিন্দু ভাগাভাগি করতে অভ্যস্ত ছিলেন যে নারীর সঙ্গে, তিনি গত হয়েছেন এক বছরের কাছাকাছি। প্রিয় নারীর এই অভাব ও অনুপস্থিতিতে তাঁর অভ্যস্ত হয়ে ওঠা হয়নি এখনো। চুয়াল্লিশ বছর বড়ো কম সময় নয়, অথচ সংসারের নিত্যদিনের অভ্যস্ততা ছাড়াও যৌথভাবে সুখে ও সংকটে, আনন্দ ও বিপর্যয়ে প্রায় একটি জীবন অতিক্রান্ত করে ভদ্রমহিলা তাঁকে বড়ো একা করে দিয়ে গেছেন। উপায় থাকলে চিঠি লিখে বলতেন, কাজটা কি ভালো হলো, মিনু! এরকম তো কথা ছিলো না।

কথা যে কী ছিলো, তা সঠিক নির্ণয় করা অবশ্য সম্ভব নয়। একটা বয়সে পৌঁছে কে আগে যাবে, কার আগে যাওয়া উচিত - এইসব কথা প্রায়ই হতো। কথা উঠলে দু’জনেই আগে প্রস্থান করার পক্ষে যুক্তি উপস্থিত করতেন এবং অন্যজনের কাছে তখন তা অতিশয় স্বার্থপর চিন্তা বলে প্রতীয়মান হতো। মীমাংসা কখনো হয়নি, হওয়া সম্ভবও ছিলো না। কিন্তু মিনু বড়ো নিষ্ঠুর ও স্বার্থপরের মতো তাঁকে একা অসহায় করে দিয়ে গেলেন। একা এই বাড়িতে তাঁর আর কাজের লোকটির জন্যে মাসে কতোটা চাল লাগবে, তার তিনি কী জানেন? বাড়ির ঘর-দুয়ার-মেঝে ফিনাইল দিয়ে ধৌত করার কাজ মাসে একবার করতে হয়, নাকি সপ্তাহে - তারও উত্তর তাঁর জানা নেই। কাজের লোকের বেতন কতো তা-ও জানা ছিলো না। সংসারের এইসব খুঁটিনাটি মিনু সুচারুভাবে সামলাতেন, এসব জানার কোনো দরকার আবদুর রবের কখনো হয়ইনি। তাঁর ধারণা ছিলো, জীবনের সবকিছু জানা হয়ে গেছে, অথচ মিনু চলে যাওয়ার পর এখন নতুন করে এইসব শিখতে হচ্ছে। প্রিয় মানুষকে এরকম বিপদগ্রস্ত করা কি উচিত?

স্ত্রীকে নিয়ে এই ধরনের কিছু অভিমান থাকলেও সুবিবেচক মানুষ হিসেবে আবদুর রবের খ্যাতি আছে। নেহাৎ আচমকা চলে যেতে না হলে মিনু ঠিকই এইসব তাঁকে শিখিয়ে-পড়িয়ে দিয়ে যেতেন। সময় হলো কোথায়? গভীর রাতে হঠাৎ বুকে ব্যথা নিয়ে অচেতন হয়ে হাসপাতাল, ভোর না হতেই গত হলেন মিনু।

আবদুর রব বোঝেন, তিনি নিজে আগে চলে গেলেও মিনু কিছু বিপদগ্রস্ত হতেন। তাঁর পেনশনের টাকা তোলা হয় কীভাবে, কোন ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট কবে ম্যাচিওর করবে, আর সহায়-সম্বল কোথায় কী আছে মিনু তার খবর তো কোনোদিনই রাখতে চাননি। বলতেন, কী হবে জেনে? তুমি তো আছো।

আসলে অনেকবার কথা হলেও হয়তো দু’জনের কেউই বিশ্বাস করেননি কারো চলে যাওয়ার সময় এতো দ্রুত নিকটবর্তী হয়ে এসেছে। জীবন বড়ো অনিশ্চিত, বয়সের অভিজ্ঞতা ও পরিপক্কতায় আবদুর রব জানতেন, তবু প্রস্ততি ছিলো না। হয়তো তা সম্ভবও নয়। সারাজীবনের সঙ্গী আচমকা চলে যাবেন, এ কথা কে আর ভাবতে চায়, বিশ্বাস করে? করলেও কীভাবে তার জন্যে প্রস্তত হওয়া যায়?

সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ মিনু যখন তাঁর ঘরে আসে, সেই সময়ের কথা খুব মনে পড়ে আজকাল। মনে আছে, তাঁর নাম মিনু কিছুতেই উচ্চারণ করতে চাইতেন না। গ্রামের মেয়ে, মা-খালা-চাচী-মামীদের দেখে শিখেছেন স্বামীর নাম মুখে আনতে নেই। আবদুর রব একবার দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করেছিলেন, পাখিসব করে রব আবৃত্তি করতে পারো?

সরল মুখে মিনু জানিয়েছিলেন, হ্যাঁ, পারি।

তাহলে শোনাও দেখি।

মিনু গড়গড় করে বলতে শুরু করেন, পাখিসব করে ...

এই পর্যন্ত বলে থেমে গিয়েছিলেন। আবদুর রবের চাতুরি টের পেয়ে নিজের মতো করে পংক্তিটি সম্পূর্ণ করেছিলেন, পাখিসব করে মিতার বাবা, রাতি পোহাইল। তারপর কী হাসি, সে হাসি আর থামে না। ততোদিনে মেয়ে তাঁদের সংসারে এসে গিয়েছিলো। আবদুর রব ক্রমশ মিনুর এই জড়তা ও সংস্কারগুলি ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তখন মিনু অনায়াসে গুনগুন করে গাইতেন, তুমি রবে নীরবে...।

তবু সরাসরি নাম ধরে কখনো ডাকেননি, সারাজীবন এই যে ওগো করে গেছেন। মিনু চলে যাওয়ার পর আবদুর রবের এই ছোটোখাটো রঙ্গ-রসিকতা করার আর কোনো উপায় অবশিষ্ট থাকে না। কার সঙ্গে করবেন? বাইরে তাঁর যা পরিচয় - প্রথম জীবনে শিক্ষক এবং পরবর্তীতে উঁচুপদের দক্ষ সরকারি আমলা - তা থাকলে চরিত্রের হাস্য-কৌতুকের বিষয়গুলিকে প্রকাশ্য করা চলে না। প্রচলন নেই। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে এক ধরনের বন্ধুসুলভ সম্পর্ক তাঁর বরাবর আছে, তাদের সঙ্গে কিঞ্চিৎ ঠাট্টা-কৌতুকও চলে। কিন্তু তাদের তিনি পাবেন কোথায়? সর্বশেষ তারা দেখা দিয়েছিলো তাদের মায়ের মৃত্যু উপলক্ষে, যখন লঘু আলাপ ও রসিকতা অবান্তর, অপ্রাসঙ্গিক।

৪.
ছেলেমেয়েরা একাকী বাবাকে নিয়ে চিন্তিত বোঝা যায়। তাদের চিন্তার কোনো কারণ বোঝা মুশকিল। এই বয়সেও তাঁর শরীর-স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ অটুট। রক্তচাপ অস্বাভাবিক কখনো হয়নি, রক্তে শর্করার পরিমাণ ঔচিত্যের সীমা ছাড়ায়নি, দাঁতগুলি অক্ষত ও মজবুত, বয়সজনিত বাত-ব্যথা এইসব উপসর্গ থেকেও সম্পূর্ণ মুক্ত তিনি। এখন পর্যন্ত। জানেন, এসবের গড়বড় হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।  আশেপাশের পরিচিত ও সমবয়সীদের দেখে জানেন, এখন অবধি যে তাঁর শরীর রোগবালাইমুক্ত, তা সৌভাগ্যই। কিন্তু মিনু চলে যাওয়ার পর তাঁর সবচেয়ে বড়ো সমস্যা, এই সুস্থ শরীর ও কর্মক্ষমতা এবং খরচ করার মতো অফুরান সময় নিয়ে কী করা যায়? কর্মক্ষম থাকা সত্বেও শুধু বয়সের কারণে তাঁকে অবসরে পাঠিয়ে দেওয়াটা সরকারের অনুচিত কাজ হয়েছে। তাঁকে এক্সটেনশন নিতে অবশ্য অনুরোধ করা হয়েছিলো, মিনুর প্রবল আপত্তির মুখে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়। মিনু বলেছিলেন, কাজ তো সারাজীবনই করলে, আর কেন? ছেলেমেয়েরা মানুষ হয়েছে, যা আছে আমাদের দুই বুড়োবুড়ির দিব্যি চলে যাবে। যতোদিন আছি, না হয় আমাকেই একটু সময় দিলে!

আবদুর রব এখন ভাবেন, ওই যতোদিন আছি ব্যাপারটি আসলে কী ছিলো? কথার কথা, নাকি মানুষ আগে থেকে কিছু টের পায়? মিনু বুঝে বলেছিলেন? তার এই যতোদিন আছি-র সময় তো বড়ো হ্রস্ব থেকে গেলো। মিনু থাকতে অবশ্য সময় কাটানো কোনো সমস্যা ছিলো না। গল্পগুজব করে, মিনুর বাগানের পরিচর্যা নিয়ে বেশ দিন কেটে যেতো। মাঝে মাঝে শহরের বাইরে দূরে কোথাও শখের বাজার করতে যেতেন। উঠলো বাই তো কলিকাতা যাই- এর মতো হয়তো আরিচাঘাটে চলে গেলেন নদীর ধারের ঝুপড়িতে বসে টাটকা পাঙাশের ঝোল দিয়ে ভাত খেতে। কোনোদিন গাড়িতে চলে গেলেন মেঘনাঘাটে, তাজা রুই মাছ কিনে এনে কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে হয়তো ডাকা হলো। রান্নার সময় আবদুর রবকে চেয়ার টেনে বসতে হতো মিনুকে সঙ্গ দেওয়ার জন্যে।

মিনু কথা বলতে ভালোবাসতেন। প্রগলভতা নয়, বাইরের মানুষ তাঁর এই দিকটি কখনো দেখতেও পেতো না, যতো কথা সব আবদুর রবের সঙ্গে। মিনু বলতেন তাঁর নিজের সব কথা, বহু বছর আগে ফেলে আসা কৈশোরের কোনো গল্প। আবদুর রব ভাবতেন মিনুর সব গল্পই তাঁর জানা। এতো বছর একসঙ্গে বসবাস করে আর জানতে বাকি থাকে কিছু? অথচ প্রতিবারই বিস্মিত হয়ে দেখতেন, এই
গল্পটি অজানা ছিলো! আসলে মিনু নিজেকে কখনো পুরনো হতে দেননি। কী কৌশলে, কে জানে! অথবা মানুষের জীবনের গল্প হয়তো কোনোদিনই শেষ হয় না। তিনি নিজের সমস্ত গল্প কি মিনুকে বলতে পেরেছিলেন? হয়ে ওঠেনি।

সব মানুষের জীবনেই কিছু অন্ধকার ও গোপন লজ্জা-অপমানের গল্প থাকে যা প্রকাশ্য করা যায় না, তা শুধু নিজের কাছে রাখতে হয়। তাতে পৃথিবীর কারো কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয়তো ঘটে না, কিন্তু কোনো মানুষকে সম্পূর্ণ চেনার দাবি নাকচ হয়ে যায়। আর এই দূরত্ব? মিনু যে এখন যে কোথাও নেই, তার কী হবে? এখন মাথা কুটে মরলেও মিনুকে আর কোনো কথা জানানোর, কোনো পরামর্শ করার উপায় নেই।

আচ্ছা, মিনু থাকলে তাঁর নতুন সরকারি দায়িত্বের প্রস্তাব সম্পর্কে কী বলতেন? অবসরের পরে তাঁদের নিভৃত জীবনযাপনের মধ্যে একটি উপদ্রব বলে মনে হতে পারতো। মিনু হয়তো বিপক্ষেই মত দিতেন। তিনি নিজেও ইচ্ছুক হতেন, এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। মিনু থাকলে নিঃসঙ্গতার কথা উঠতো না। এই দায়িত্ব নেওয়ার পেছনে সঙ্গীহীন অফুরন্ত সময়ের ভূমিকা খুব ছোটো নয়।

সহসা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব চলে আসার আগে এই বোধ তাঁকে পীড়িত করছিলো যে, অবসরজীবনের এই অযাচিত অবসর তাঁর এখন কী কাজে লাগবে? নিজের সক্ষমতাকে কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে ভেবে পান না। বাল্যকাল থেকে নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন, খাদ্যাভ্যাসে বরাবর তিনি মিতাচারী – এইসবই হয়তো তাঁর এখনো সুস্থ থাকার কাজে লেগেছে। স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলো, তখন তিনি মধ্য-তিরিশে এবং তখনো সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ। যুদ্ধে যাওয়ার জন্যে বেশি বয়স না হলেও শিক্ষকতার পেশা এবং সামাজিক ও পেশাঘটিত অবস্থান খুব সহায়ক ছিলো না। মিনুও তখন সন্তানসম্ভবা, মিতা তিন বছরের। সমর্থ শরীরে যুদ্ধে না গেলে সেই অপরাধবোধ তাঁকে সারাজীবন ভোগাবে, তিনি অনুভব করতে পারছিলেন। প্রাথমিক প্রতিরোধের সময় তাঁর কয়েকজন ছাত্র, এমনকি স্কুলে পড়া ছেলেরাও স্রেফ গাদা বন্দুক নিয়ে লড়াই করে প্রাণ দেয়, তা-ও তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে থাকবে। তখন জয়-পরাজয় ভাবার সময় নয়, অংশগ্রহণ করা জরুরি বিবেচনা করেছিলেন তিনি। ওই অবস্থায় মিতাসহ মিনুকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে যুদ্ধে যান আবদুর রব। যুদ্ধকালেই পুত্রের জন্মের সংবাদ পেয়েছিলেন, মুখ দেখলেন যুদ্ধজয়ের পরে। বালুরঘাট ক্যাম্পে ট্রেনিং হয়, তাঁর অনেক ছাত্রের সঙ্গে। আশ্চর্য হয়ে দেখেছিলেন, তাঁর উপস্থিতি ছাত্র ও অছাত্র কমবয়সীদের কীরকম উদ্দীপ্ত করেছিলো! যারা ছাত্র নয় তারাও তাঁকে স্যার বলে ডাকতে শুরু করে। সেই স্বল্পকালের ট্রেনিং এবং কয়েকমাসের যুদ্ধ - এইসবও তাঁর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতাকে আরো টেকসই করে দিয়েছিলো বলে তাঁর বিশ্বাস।

তবু শরীর বিষয়ে কিছুতেই নিশ্চিত হওয়া চলে না। বেশ কয়েক বছর আগে একবার সরকারি কাজে আমেরিকায় যেতে হয়েছিলো।  একদিন খবরের কাগজে পড়লেন, চব্বিশ বছর বয়সী এক পেশাদার বাস্কেটবল খেলোয়াড় সকালে প্র্যাকটিসের সময় হৃদযন্ত্রের গোলমালে তৎক্ষণাৎ মারা গেলো তার সতীর্থ খেলোয়াড় ও কোচের চোখের সামনে, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই। হৃদযন্ত্রে আকস্মিক
আক্রমণে কতো মানুষ মারা যায়, অথচ ছেলেটির বয়স ও পেশার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে গেলে কিছুতেই হিসেবে ফেলা যায় না। এইসব ঘটনা মনুষ্যজীবনের ভয়াবহ অনিশ্চয়তার বোধটিকে শুধু ঘনীভূত করে।

কিছু রোগ তো বংশপরম্পরায় জিনবাহিত হয়ে মানুষের শরীরে থেকে যায়, যদিও তার কিছুই এখনো তাঁর শরীরে আবিষ্কৃত হয়নি। এই বয়সে সেসব প্রকাশ্য হয়ে যাওয়ার কথা। হয়নি বলে অনুযোগ অবশ্য করা চলে না, তবু সার্বক্ষণিক একটি শংকা থেকে যায় বটে। আবদুর রবের পিতা আবদুল কাদের ছিলেন গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। শিক্ষকোচিত শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন করার চেষ্টা করতেন। তবু তাঁর স্বাস্থ্য বরাবর ছিলো ভঙ্গুর ও অসুস্থতাপ্রবণ। উচ্চ রক্তচাপ ছিলো, সঙ্গী ডায়াবেটিস। তাঁর সময়কালে চিকিৎসার বন্দোবস্ত তেমন ভালো কিছু ছিলো না, যা ছিলো তা-ও গ্রামের স্কুলশিক্ষকের সাধ্যের মধ্যে নয়। তিনি দীর্ঘজীবী হননি, মারা গিয়েছিলেন পঞ্চাশ হওয়ার আগেই। শেষের কয়েকটি বছর তিনি আদৌ কর্মক্ষম ছিলেন না, বেশিরভাগ সময় থাকতেন শয্যাশায়ী, সুস্থ ও সক্ষম মা সার্বক্ষণিক সহায় ছিলেন বলে অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে হয়নি। পিতার শেষের মুহূর্তটি উপস্থিত হলে তা আর ততো অপ্রত্যাশিত ছিলো না তখন। তবু নিকটজনের মৃত্যুর জন্যে সম্পূর্ণ প্রস্থত থাকা সম্ভব হয় না কখনো এবং সব মৃত্যুই শেষ বিচারে দুঃখ-শোকের আধার হয়ে থাকে। মিনুর চলে যাওয়াও কোনো ব্যতিক্রম নয়। আবদুর রব জানেন, মিনুর প্রস্থান এমনিতেই একটি অবশ অবোধ শূন্যতা তৈরি করে ফেলেছে, আর এইরকম নিষ্কর্মা দিন কাটালে তাঁর শরীর জরাগ্রস্ত হয়ে পড়বে অচিরে, ডাক্তারখানায় তীর্থদর্শনের মতো তখন বারবার যেতে হবে।

৫.
তীর্থদর্শনের প্রসঙ্গে আবদুর রব ভেবেছিলেন, মাস দুই-তিনেক ছেলেমেয়েদের কাছে থেকে এলে কেমন হয়? সেগুলি তীর্থের চেয়ে কম কীসে? পরকালের পূণ্য অর্জন তাতে হয় না, কিন্তু হৃদয় ও আত্মা পরিপূর্ণ হয় স্নেহে-মোহে-ভালোবাসায়। মিনু চলে যাওয়ার পর মিতা-মিথুন অনেকটা মুখস্থ নামতা পড়ার মতো বলে যাচ্ছে, কবে আসবে? ইচ্ছে করলেই যাওয়া যায়, আগেও গেছেন। কিন্তু সে যাওয়া আর এখনকার যাওয়া এক কথা নয়। সেসব বারে সঙ্গে মিনু ছিলো, আর এখন যেতে হবে একেবারে একা।

একা ভ্রমণ তিনি করেছেন সরকারি কাজে, তখন স্ত্রীকে সঙ্গী করার উপায় থাকে না। উপায় একেবারে ছিলো না, তা অবশ্য নয়। পদমর্যাদার কারণে আশেপাশে অনেক উমেদারের আনোগোনা, তারা তাঁকে কোনোভাবে সাহায্য করার জন্যে উদগ্রীব হয়ে থাকতো। মুখ ফুটে বলার প্রয়োজন ছিলো না, দূরতম ইঙ্গিতেই কাজ হয়ে যেতে পারতো। আবদুর রবের রুচি ও অহং তা অনুমোদন করেনি কোনোদিন। মুক্তিযোদ্ধার অহংকারে কোনো অন্যায় সুবিধা নেওয়া তাঁর সাজে না। আশেপাশের অনেকে, তারা যে এককালে যুদ্ধ করেছে, তা ভুলেও গেছে, কেউ কেউ ধরে নিয়েছে যোদ্ধা হিসেবে ওইসব তাদের প্রাপ্য - নিয়মনীতির বিচার আর কে করে। কাউকে দোষী করে আঙুল তোলা তাঁর চরিত্রে নেই, শুধু নিজের কাছে পরিচ্ছন্ন থাকতে চেয়েছেন। শিক্ষক পিতার পুত্র তিনি, কর্মজীবনের শুরুতে নিজেও কয়েক বছর শিক্ষকতা করেছেন। এইসব হয়তো তাঁকে গড়ে তুলেছিলো। তিনি বিশ্বাস করেছেন এবং অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, তাঁর খুব সচ্ছল হওয়া কোনোদিনই সম্ভব হয়ে না উঠলেও আশেপাশের মানুষদের কাছে থেকে এক ধরনের সমীহ এবং ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা তিনি অর্জন করতে পেরেছিলেন অভঙ্গুর একাগ্র সততার কারণে। নিজের কাছে সৎ ও পরিচ্ছন্ন থেকে অন্যায্যকে প্রশ্রয় না দেওয়া মানুষ আজও অন্যদের সমীহ আদায় করতে সক্ষম, এ-ও কম কোনো অর্জন নয়।

তবে ছেলেমেয়েদের কাছে যে তিনি যাবেন, কী করে তা সংঘটিত হবে? যাত্রার জন্যে প্রথম কাজ একখানা টিকেট করা, তা ট্র্যাভেল এজেন্টই করতে পারবে। কিন্তু আর সব প্রস্তুতি, ব্যাগপত্র গোছানো, সব দরকারি জিনিস মনে করে সঙ্গে নেওয়া - এইসবের তিনি কিছুই জানেন না। মিনু তো নেই যে গুছিয়ে দেবেন! অভিমানভরে তিনি ভাবেন, তুমি যে কতোভাবে আমাকে পঙ্গু করে রেখে গেলে, মিনু!

সব হিসেব এখনো করা হয়ে ওঠেনি, দিনে দিনে আরো বোঝা যাবে। আর ছেলেমেয়ের কাছে যাওয়া বললেই তো যাওয়া হয় না। খুব ভাবপ্রবণ মানুষ নন তিনি, তবু কোনো সঙ্গত ব্যাখ্যা ছাড়াই মনে হয়েছিলো এই বাড়িতে থাকলে মিনুর কাছাকাছি থাকা হবে। না থেকেও কতো বিচিত্রভাবে মিনু এখনো আছেন, আবদুর রব ছাড়া আর কেউ তা জানবে না, বুঝতে পারবে না।

ভাবনার কথা আরো আছে। বার্লিনে মিতার কাছে স্বস্তিতে থাকা যায়, মিথুনের সংসারে তা সম্ভব হয় না। মিতার স্বামী শাহাদত বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত রাশভারি ও গম্ভীর ধরনের, নিজের কর্মজীবন এবং স্ত্রীপুত্র নিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট একটি জীবন নির্বাহ করা তার জীবনের ব্রত। ফলে কিছু আত্মকেন্দ্রিক তাকে মনে হতে পারে। কিন্তু বড়ো এবং কোমল হৃদয়ের মানুষ সে, অনেকবারই তার পরিচয় পাওয়া গেছে। মিনুসহ তিনবার বার্লিনে গেছেন আবদুর রব, প্রতিদিন কাজের পরে এসে কাছে কাছে ঘুরঘুর করবে, কী লাগবে, কোনো অসুবিধে হচ্ছে কি না, ছেলেরা কি খুব বিরক্ত করছে, কোথায় কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায় - এইসবই তার কথা বলার বিষয়। মিনুর মৃত্যুর পরে এসে আবার মা হারালাম বলে অঝোরে কেঁদেছিলো, মিতা-মিথুনের চেয়ে কম কিছু নয়।

এখন সপ্তাহে অন্তত একবার নিজে ফোন করে। আগে মিতাই করতো, শাহাদত আশেপাশে থাকলে মাঝেমধ্যে মামুলি কথাবার্তা হতো। এখন শাহাদত নিজে তো করেই, মিতাকেও তাগাদা দেয় বাবার খোঁজ নিতে। ভালো লাগে তা অস্বীকার করা যাবে না, কিন্তু স্ত্রীবিয়োগের কারণে বাড়তি মনোযোগ কিছু অস্বস্তিও দেয়। ওদের বারো ও দশ বছর বয়সী ছেলে দুটির কাছে নানা-নানী বড়ো প্রিয় ছিলো।

মিথুনের সংসারে অস্বস্তি-র কারণ মিথুন বা তার স্ত্রী শিখু নয়। কিন্তু হয়তো ওরাই কারণ। ভালো পরিবারের চমৎকার মেয়ে শিখু - সুন্দরী, চটপটে, হাসিখুশি। আট বছর আগে পরস্পরের পছন্দে বিয়ে। বছর তিন-চারেক আজকাল অনায়াসেই ছাড় দেওয়া হয়, এরপরে মেয়েমহলে ফিসফাস, ওরা বাচ্চাকাচ্চা নিচ্ছে না কেন, আর দেরি করা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না! ফিসফিস একসময় সশব্দ হয়ে গলাখাঁকারিসহ নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন আকারে উত্থিত হতে থাকে, যেন তা আকাশ-বাতাস বা অনির্দিষ্ট কাউকে করা হচ্ছে। উদ্দিষ্ট পক্ষ যথারীতি না শোনার ভান করে অথবা মৌন থাকে কিছুকাল। কৌতূহলীরা নিবৃত্ত হয় না, তখন সরাসরি প্রশ্ন করে - তোরা আর দেরি করছিস কেন? তখন মৃদু হাসিসহ জবাব আসে, সময় তো আছে!

ক্রমশ কানকথায় প্রকাশিত হয়ে যায় যে সময় আছে ঠিকই, কিন্তু তা সম্ভাবনারহিত। তাঁকে আর কে বলবে! আবদুর রব জেনেছিলেন মিনুর কাছে, ওদের বাচ্চা হবে না। সম্ভবমতো সব রকমের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে এবং ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ত্রুটি পুত্রের শরীরে, যা জন্মবীজ উৎপাদনে অক্ষম। প্রতিকারের উপায় এখনো চিকিৎসাবিজ্ঞানে নেই। যতোদিন ঘটনা অপ্রকাশিত ছিলো, শিখু খুবই ধৈর্যের সঙ্গে অবিচলিত মুখ অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছিলো। কিন্তু জানাজানি হওয়ার পর সে ভেঙে পড়ে - নিজের মুখে স্বীকার করা বাস্তবতা তাকে ছিঁড়ে ফেলতে থাকে। উপরন্তু এইসব সময়ে ভালোমন্দ নানা পরামর্শ দেওয়ার মানুষ জগতে কম নেই। শিখু একসময় সংসার ত্যাগ করার সিদ্ধান্তও নাকি নিয়ে ফেলেছিলো শুনেছেন। এসব মিনুর চলে যাওয়ার কিছু আগের কথা। শেষ পর্যন্ত যায়নি, কিন্তু যেতে চাইলেও তাকে কী করে দোষী করা যাবে? সন্তানবতী হতে কোন মেয়ে না চায়! শিখু যদি সত্যি সত্যি কোনোদিন মিথুনকে ছেড়ে যায়, পুত্রের জন্যে আবদুর রব দুঃখিত হবেন সন্দেহ নেই, তবু শিখুর জন্যেও সব শুভকামনা অটুট থাকবে তাঁর।

সেই থেকে পুত্র ফোন করলে শিখুমা কেমন আছে জিজ্ঞেস করতে ভয় হয়। মিথুন নিজে থেকে শিখুর প্রসঙ্গ না তুললে আবদুর রব তোলেন না, নিজে থেকে শিখুর সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন না। যদি শুনতে হয় সে নেই, চলে গেছে! মিথুনের শরীরে প্রাণসংহারী দুই রোগের যৌথ আক্রমণের সংবাদে এইসব আবার নতুন করে মনে আসে। আবদুর রবের অবধারিতভাবে তাঁর পিতার কথা মনে পড়ে। তাঁরও ছিলো এই একই উপসর্গ, যা অন্তিমে তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছিলো। এই বয়সেই ছেলেটির এতোসব হলো কী করে? কিছু রোগ বংশপরম্পরায় প্রবাহিত হয়ে আসে বলে জানেন। কিন্তু তাঁর নিজের এসব কিছু নেই, কোনো লক্ষণও পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। তাহলে তিনি বংশপরম্পরা থেকে বিচ্ছিন্ন হলেন কী উপায়ে? তাঁকে ডিঙিয়ে ছেলের শরীরে অসুখগুলো ভর
করলো কীভাবে?

তাঁর আসন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের কথা ভাবতে ভাবতে আবদুর রব আচমকা তাঁর বংশপরম্পরাবাহিত পরিস্থিতির একটি সমান্তরাল আবিষ্কার করেন। তিনি হয়তো এই পরম্পরায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতো। আগের শাসন যেমন রুগ্ন ছিলো, পরেরটিও তাই হবে। সবাই জানে, ব্যতিক্রম কিছু হবে না। ভবিষ্যৎ হয়তো তাঁর পুত্রের মতোই নিষ্ফলা। অতীত ছিলো পিতার মতো ভগ্নস্বাস্থ্য ও ভঙ্গুর, আগামী ধোঁয়াচ্ছন্ন, অনিশ্চিত এবং সম্ভাবনাবিহীন। মধ্যবর্তী সময়টিই কেবল নীরোগ, নিষ্কলুষ! কিন্তু তারও আছে প্রবল নিঃসঙ্গতা – সে বড়ো সহায়হীন, নিরালম্ব ও স্বল্পস্থায়ী।

আবদুর রবের বড়ো ক্লান্ত লাগে। আবিষ্কারটি তাঁর আনন্দের কারণ ঘটায় না, তা হয় অনতিক্রম্য এক বিষাদের।


মন্তব্য

তাসনীম এর ছবি

এক অদ্ভুত ভালো লাগা নিয়ে পড়লাম লেখাটা...এর রেশ থেকে যাবে বহুদিন।

ভালো থাকুন জুবায়ের ভাই।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

খুব ভালো লাগলো...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

রণদীপম বসু এর ছবি

কী অদ্ভুতভাবে প্রাণহীন রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে মানবজীবনের এক সমান্তরাল চিত্র এঁকে দিলেন তিনি ! এখানেই জুবায়ের ভাই !

তবে সত্যি কথা বলতে কি, দীর্ঘ গল্পটি পড়তে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছি যখন মন থেকে কিছুতেই মুছতে পারছিলাম না যে এটা জুবায়ের ভাইয়ের লেখা ! তাঁকে সামনাসামনি দেখিনি, শুধু পোট্রেটের মানুষটার ছবি বারবার ভেসে উঠছিলো ! কে জানে, হয়তো তা আমারই সীমাবদ্ধতা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রানা মেহের এর ছবি

ভালো থাকুন জুবায়ের ভাই
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মূলত পাঠক এর ছবি

এমন পরিণত ও ধীমান লেখা, অনেক অনেক কাল পরে পড়ার সৌভাগ্য হলো। খেদ, পাঠকের এ মুগ্ধতার কথাটুকু লেখককে জানাতে পারলাম না।

অমিত আহমেদ এর ছবি

একমাত্র জুবায়ের ভাইই পারেন এভাবে লিখতে!

মর্ম এর ছবি

ক্লাসিক বাংলা ছোটগল্পের স্বাদ পেলাম বেশ অনেকদিন পর। ভাল লাগল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, আমলা আর ব্যক্তিজীবনে এক নিঃসঙ্গ মানুষের গল্প। ছুঁয়ে গেল তার চিন্তা, মানসিক টানাপোড়েন। ছোট্ট সহজ কথায় দেশের সংক্ষিপ্ত গল্প মিশে যাওয়ায় গল্পটি জীবন্ত লাগল আরো, হয়ত আরো 'অন্তরবর্তী' হল।

লেখক নিয়ে বলতে হয়, তাঁকে পাইনি। চিনি না তাঁকে। যতটুকু চিনি তাঁর লেখা থেকেই। শ্রদ্ধা তাঁর স্মৃতির প্রতি।

বাড়তি কিছু বলার নেই, অনুরোধ রইল চলে যাওয়া আমার খুব প্রিয় এক মানুষের লেখা একটা লাইন পড়ে নেয়ার জন্য, এখানেই লাল হরফে লেখা থাকার কথা, ....
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

তারানা_শব্দ এর ছবি

এতো সুন্দর লেখা শেষ কবে পড়েছি মনে পড়ছে না!

মন খারাপ

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

সাফি এর ছবি

অসাধারন।

বইখাতা এর ছবি

গল্পটা পড়লাম, কিছু বলার নেই, কারণ মনে হচ্ছে যাই বলি না কেন এখন আর কোনোকিছুই যথার্থ হবেনা। শান্তিতে থাকুন জুবায়ের ভাই।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এমন শান্ত নদীর মতো টলটলে গদ্য... কেবল জুবায়ের ভাই-ই লিখতেন...

শরতশিশির এর ছবি

আরও কতকিছু পাওয়ার ছিল আমাদের, জুবায়ের ভাই-এর কলম থেকে। কারও কারও চলে যাওয়া কখনও পূরণ হবার নয়।

অফটপিকঃ ভাল আছেন তো ভাবী? দেশে এলে খবর দিয়েন। চলে এসেছি ঢাকায় এখন - সরি, একদম সময় করে উঠতে পারি নি আসার আগে। ভাল থেকেন। কথা হবে। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন,আর কিছু বললে কম বলা হবে।।

[বিষণ্ণ বাউন্ডুলে]

মিলু এর ছবি

শ্রদ্ধা

তিথীডোর এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

প্রিয়তে নিন অপশনটা থাকলে ভাল হতো।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।