মিডিয়াভিজ্ঞতাঃ ০২- Have we met before?

মির্জা এর ছবি
লিখেছেন মির্জা (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৪/০৫/২০১২ - ৫:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যদি কেউ ভুল করেও মিডিয়াভিজ্ঞতা ০১ পড়তে চান তবে এখানে তা পাবেন

মুহুর্তের মধ্যে চিন্তা করছি ব্যাপারটা কোন কৌতুক না সত্যি; কৌতুক হলে ঘটনাটা কে ঘটাচ্ছে আর সত্যি হলে যাকে ফোনে অপেক্ষায় রেখেছি তার কাছে চরম বেইজ্জত হতে হবে। আমি বললাম ঠিক আছে লাইন ট্রান্সফার কর। হ্যালোর উত্তর পেতেই বুঝতে আর আসুবিধা হল না ফোনে যে ভদ্রমহিলা আছেন তিনি রুনা লায়লা। খুব বিনয়ের সাথে তিনি জানতে চাইলেন আমি ওনার সাথে একটু দেখা করতে পারব কি-না।

বিশাল ইতিহাস লিখতে চাইছি না, সংক্ষেপে বলি। তখন সাবিনা ইয়ায়সমিন হাসপাতালে; টাকার বেশ টানাটানি চলছে, কবির শুয়োর পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে সে এখন কিছু করতে পারবে না, সে ব্যাস্ত!

রুনা লায়লার বিনীত অনুরোধ ছিল নিজের পাবলিসিটি না করে এবং সাবিনা ইয়াসমিনের সম্পূর্ন সন্মান বজায় রেখে একটা অনুষ্ঠান করা সম্ভব কি-না। চ্যানেল এস-এ আমাদের সহকর্মিরা জানেন রুনা লায়লা কি পরিমান সচেতন ছিলেন যাতে করে কোথাও কোনভাবে সাবিনা ইয়াসমিনের চিকিতসার জন্যে টাকা তোলাটা যেন অসন্মানজনক না হয়। রুনা লায়লা নিজে উদ্যোগ নিয়েছেন, অনুষ্ঠানের এসে গান গেয়ে দিয়েছেন কিন্তু কোথাও বলেননি “এটা আমার উদ্যোগ” কিংবা “আমি সাবিনাকে সাহায্য করতে চাই”।

দেশে যাওয়ার আগে নিজের মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন, “দেশে আসলে অবশ্যই দেখা কোরো।“

দেশে গিয়ে আর ওনাকে ফোন করিনি। প্রথম কারনটা ছিল বিরক্ত না করা আর দ্বিতীয় কারনটা (যদিও আমি ধরেই নিয়েছি রুনা লায়লা এরক্ম মানুষ নন তার পরও…) বিদেশে এসে যে সব স্টার-সুপার স্টার চরম বন্ধুত্ব দেখান, বিনে পয়সায় এক গ্লাস রেড ওয়ায়াইনের জন্যে পারলে পরের নাটকে হিরো বানিয়ে দেন, এরাই পরে দেশে গেলে আর কাউকে চিন্তেই পারেন না!!!

যাহোক, আমাদের এক কমন ফ্রেন্ড-এর কাছে রুনা লায়লা জানতে পেরেছিলেন আমি ঢাকায় ছিলাম কিছুদিন, উনি আমার কলিগ/বন্ধুকে বলেছিলেন, ও বোধহয় আমার নাম্বার হারিয়ে ফেলছে না হলে আমাকেত অন্তত একটা ফোন দেয়ার কথা ছিল ওর!

আমি জানি আপনি আমার ব্লগ পড়বেন না তাও ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে সাধারণ মিডিয়া পাল্লায় আপনাকে মাপার জন্যে!
-------------------
“পাঞ্জাবীওয়ালা” নামের গানটা না বাজানোর অনেক অনুরোধ এবং মোলায়েম থ্রেট আমি পেয়েছি। মুল কমপ্লেইন পাঞ্জাবীওয়ালী তার ব্যাক্তিগত জীবনে কি-কি আজে-বাজে করে বেড়ায় সেই সংক্রান্ত! কোন ক্লাবে সে আর তার বোন কি করেছে, কি খেয়েছে সে এক বিরাট নোংরা ঘ্যান-ঘ্যান! মিডিয়ায় এইসব নোংরামি খুবই কমন একটা ব্যাপার আর এগুলো ছড়ায় কাছের মানুষেরাই। আমার বক্তব্য একটাই, রাজাকার ছাড়া আর সব শিল্পী, বিশেষ করে কেউ যদি বাংলা গান প্রোমোট করে, আমিও তাকে প্রোমোট করব। সুতরাং অফিসিয়াল (!) আর সামাজিক (?) অনুরোধ এবং কমপ্লেইনের ফালতু থ্রেট নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমি পাঞ্জাবীওয়ালীকে আমার শো-তে নিয়ে আসি, এবং পুরো ১৫ মিনিট সময় তাকে দেই। (একটা স্পন্সরড প্রোগ্রামে ১৫ মিনিট অনেক সময়)। এই শিল্পীর দ্বিতীয় এ্যালবাম বের হয়েছে কিন্তু বাংলা কোন রেডিও বা টিভি তখনো তাকে প্রোমোট করছে না। আবারো আমার আর আমাদের প্রয়াত বন্ধু রাজিবের ডাক পরল। রাজিব তখন চ্যানেল-এস এর হেড অব প্রোডাকশন। আমাকে বলল, ঐ, ও যে আসতে চাইছে চিনবেতো আমাদের? আমি বলি কি যা-তা বলিস, চিনবে না মানে? এ্যাটলিস্ট ২০টা রিকোয়েষ্ট পেয়েছি ও আর ওর বন্ধুদের কাছ থেকে একটা সুযোগ দেয়ার জন্যে, ওর দ্বিতীয় এ্যালবামটা নাকি ভাল চলছে না! রাজিব বলল, লাষ্ট প্রোগ্রামের মাস ছয়েক পর ও আমাকে চিনতে পারেনি” আমি বলেছিলাম ধুর, এটা হতেই পারে না, দেখিস! রাজিব বলল চিনলেতো ভালই!

অনুষ্ঠানের কিছুদিন পর ছিল ঈদ। ঈদে আমি আমার অনুষ্ঠানের সব পার্টিসিপেন্টদের নাম ধরে-ধরে টেক্সট পাঠিয়েছিলাম। পাঞ্জাবীওয়ালির উত্তর ছিলঃ Who is this? আমি জানালাম আমি কে এবং আমি কোন প্রতিষ্ঠানে কি কাজ করি। উত্তর ছিলঃ “Can’t remember, have we met before?”

পাদটীকাঃ আমার নাম্বার এই শিল্পীর (???) কাছে বেশ ভাল ভাবেই পরিচিত ছিল; আর আমার প্রোগ্রামের নামে বিলাতে আও কোন প্রোগ্রাম হয়েছে সেটাও শুনিনি!

মিডিয়াভিজ্ঞতাঃ ০১ http://www.sachalayatan.com/mirzaair/39804


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

মিডিয়ার লোকজনের সস্তা ভড়ং খুব কাছে থেকে দেখেছি, এইসবের দুই পয়সা বেইলও নাই। এখানে কি 'মনে বড় জ্বালা রে পাঞ্জাবীওয়ালা'- এই গানের শিল্পীর কথা বললেন?

লেখার সম্পর্কে বলি, আরেকটু গুছিয়ে লিখলে পড়তে সুবিধা হত, অনেক জায়গায় এ-কার উ-কার জায়গামতন বসেনাই, এত তাড়াহুড়া করেছেন কেন? এক লাইন ২-৩ বার পড়তে হয়েছে বুঝার জন্য।

প্রথম লিংক কাজ করছেনা।

মরুদ্যান

মির্জা এর ছবি

এই তাড়াহুড়াই আমারে ডুবাইলো রে ভাই! ভুলগুলো ঠিক করার চেষ্টা করব কম্পিউটার পেলেই।

জ্বী আমি 'মনে বড় জ্বালার'র কথাই লিখেছি।
লীন্কটা কেন কাজ করছে না বুঝ্তে পারছিনা, কম্পিউটার পেলেই চেক করব।

মরুদ্যান এর ছবি

হাসি আপনার প্রোফাইল থেকে আগের পর্ব পড়ে নিলাম।

মির্জা এর ছবি

ধন্যবাদ এত ঝামেলা করেও পড়ার জন‌্যে।

বুনোফুল এর ছবি

বেশ ভালো লাগলো।

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

দুটো পর্বই ভাল লেগেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

অমি_বন্যা এর ছবি

এরা এমনই এদের প্রয়োজনে আপনাকে ব্যবহার করবে আর যখন তা শেষ আপনাকে ভুলেও চিনবে না। মিডিয়ায় যাবার আগে এদেরকে এসব ব্যপারে কেউ স্পেশাল ক্লাশ নেয় কিনা জানিনা তবে এসব ব্যপারে কখনও যেন মন খারাপ করবেন না।

এরা হয় এমনই
হোক না সে ছোট বড়
যখন আর যেমনই চোখ টিপি

মির্জা এর ছবি

মিডিয়ায় যাবার আগে এদেরকে এসব ব্যপারে কেউ স্পেশাল ক্লাশ নেয় কিনা জানিনা; ক্লাশ নেয় পত্রিকায় প্রথম ইন্টারভিওটা ছাপা হওয়ার পরের দিন।

রুনা লায়লা যে ভালবাসা আর সন্মান দেখিয়েছেন দুই-চারটা পাঞ্জাবীওয়ালি বা কাথাওয়ালি না চিনলেও মন খারাপের প্রশ্নই আসে না!

মন মাঝি এর ছবি

এককালে তাঁর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী (বাহ্যিকভাবে অন্তত আদায়-কাঁচকলায়) সাবিনাকে তাঁর সবচেয়ে বিপদের দিনে রুনা যেভাবে সবকিছু ভুলে অসাধারণ সাপোর্ট দিয়েছেন, তা সত্যি অননুকরণীয়! রুনা লায়লা সম্পর্কে নিন্দুকেরা অনেক কিছুই বলে, কিন্তু তার সবকিছুই ম্লান হয়ে যায় তাঁর এই মহত্বের কাছে। যাদের কখনো একে অপরের সাথে হেসে হেসে কথা বলার কোন চিত্র তো দূরের কথা, পাশাপাশি দাঁড়ানোর চিত্রও কখনো কল্পনা করিনি - তাঁদেরকেই আবার প্রায় দু'বোনের মত একই সঙ্গীত প্রতিযোগিতার বিচারক হতে দেখাটা, একে অপরের প্রতি অসাধারণ কন্সিডারেট আচরন করতে দেখাটা - এই হাসিনা-খালেদার নরকের মধ্যেও এক টুকরো স্বর্গোদ্যান মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল এই কুৎসিত, অশ্লীল, নীচ আর হীণ হিংসাপরায়নতা আর অসূয়ার নির্লজ্জ, অবাধ, বিকট গণপ্রদর্শনীর দেশে মানবিক বিবেচনাবোধ, সংবেদনশীলতা আর রুচিশীলতা একেবারে মরে যায়নি। রুনা লায়লাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

****************************************

নজমুল আলবাব এর ছবি

নিয়মিত লিখ না কেনো?

মির্জা এর ছবি

বড়ভাই এইটা কি কইলি? আমিত নি‌য়মিত প্রতি সাত-আট মাসেই একবার আজান দেই!
চোখ টিপি

এবিএম এর ছবি

ভালো লাগল আপনার মিডিয়া অভিজ্ঞতার গল্প। হাসি

সৌরভ কবীর  এর ছবি

০১ ও ০২ পর্ব একবারে পড়লাম। অনেক ভালো লাগলো।
তবে কেন যেন তথাকথিত তারকাদের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করতে পারিনা অনেকদিন থেকেই।

শান্ত এর ছবি

দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এসে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বুঝলাম প্রথম পর্ব এতো আগে লিখেছো যে ওটা আবার পড়তে হলো নতুন করে।

রাজীব দার নাম এক জায়গায় রাজিন হয়েছে। একটু ঠিক করে দিও।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

মির্জা এর ছবি

সৌরভ,এবি এম, বুনোফুলঃ ভাল লাগলো? বলবেন না দুঃখ পেয়েছেন? মন খারাপ

পড়ার জন্যে ধন্যবাদ। এটুকু বলি তথাকথিত স্টারদের মধ্যেও অনেকে আছেন যারা শুধু ভাল নন, অসম্ভব ভাল। আইয়ূব বাচ্চু থেকে শুরু করে মিথুন চক্রবর্তী এদের সাথে খুব কাছ থেকে কাজ করে দেখেছি ভাল শিল্পী এবং ভাল মনের শিল্পীও আছেন আমাদের মধ্যে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।