ডিউন ব্যাশিং :: বালিয়াড়িতে খেলোয়াড়ি

মন মাঝি এর ছবি
লিখেছেন মন মাঝি [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২৮/০৭/২০১২ - ৩:০৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কৈফিয়তঃ পূণর্পাঠে বুঝতে পারছি লেখাটা খানিক শুষ্কং-কাষ্ঠং হয়ে গেছে। পড়তে পড়তে আর ভাল না লাগলে একলাফে নীচের স্লাইডশোটা-তে চলে যেতে পারেন। এটা ভাল লাগবে আশা করি।


মিশরের শ্বেতমরুতে যাওয়ার পথে আমার বালিয়াড়ি আর বালিয়াড়িতে খেলোয়াড়ি অর্থাৎ ডিউন-ব্যাশিং এর সাথে পরিচয়। ফোর-হুইলারে চেপে বুনো বাইসনের মত বালিয়াড়িগুলিকে চার্জ করা - আবার তার মাথায় চড়ে প্রায় শুন্যে ঝাপ দেয়ার মত দুরন্ত গতিতে নীচে নেমে আসার মধ্যে যে এ্যাড্রিনালিনের তুফান আর অনির্বচনীয় ইউফোরিয়া সঞ্চিত থাকে, তা লিখে বোঝানো কঠিন।একমাত্র সরাসরি অভিজ্ঞতাতেই সেটা বোঝা যায়। সাথে অপরিহার্য বোনাস, কিম্বা অনেকক্ষেত্রে সেটাই হয়তো আসল -এক্সটিক ল্যান্ডস্কেপের অনন্য সৌন্দর্য।

নামিব মরুর সোসুস্‌ভ্লেইতে গাঢ় কমলা বা গোলাপি রঙের, পাটকিলে বা হলদে রঙের অভূতপূর্ব, দুনিয়ার সেক্সিয়েস্ট সব কার্ভের জটিলতম সমন্বয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা, প্রায় পর্বতসম বালিয়াড়িগুলি ঝকঝকে নীল আকাশ বা পুর্ণিমার চাঁদের পটভূমিতে যে রহস্যময় অলৌকিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে - তা না দেখলে হয়তো কল্পনাতেও আনা কঠিন। কিম্বা মরক্কোর ছবির মত শায়িত এর্গ ছেবি, বা লিবিয়ার এর্গ আওবারি, বা মিশরের গ্রেট স্যান্ড সী, বা... নাঃ এসব কিছুই দেখা হয়নি আমার ঘর হইতে দু'খানা ভাঙা পা ফেলিয়া। শুধু একটুখানি সুদুরতম আভাসমাত্র পেয়েছিলাম মিশরের বাহারিয়ার কাছে। তবু ঘ্রাণং অর্ধভোজনং-এর মত কল্পনায় গমনং করিলেই বা দোষ কি। সেই কল্পভ্রমণের চেষ্টাতেই এই লেখা - ডিউন কত প্রকার ও কি কি সেই বেগার আলোচনা করতে করতেও যদি যাওয়ার খানিকটা আনন্দ পাওয়া যায়!

ডিউন-ব্যাশিং এর সাথে যার প্রথমবারের মত পরিচয়, এরপর থেকে সে শিরা শিরায় গিরায় গিরায় ঐ ইউফোরিক তুফান আর তুফানের আনন্দের স্বাদ পেতে চায় বারে বারেই। নেশা লেগে যায়। তবে আমার ভাগ্যে ডিউন-ব্যাশিং বা ডিউন-ওয়াচিং-এর সুযোগটা আর দ্বিতীয়বার আসেনি। প্রথমবারেরটাও আসলে ঠিকমত হয়নি - বাহারিয়া থেকে শ্বেতমরুতে যাওয়ার পথে যদ্দুর মনে পড়ে খুব বেশি ডিউন বা বড় বালিয়াড়ি ছিল না। কিম্বা আমাদের 4WD-র বেদুঈন ড্রাইভার এড়িয়ে গেছে। ব্যাপারটা শুরু হওয়ার পর আমি সেটা বুঝে ঊঠতে ঊঠতে আর তাতে মজতে মজতেই হঠাৎ করেই উঁচু ডিউনের পালা শেষ। অনেকটা যেন মাড় দেয়া খরখরে ঠোঁটে অমৃতভাণ্ড ছোয়াঁনোর মত- ঠোঁট বেচারা সময়মত সাড়া দিয়ে চুমুক দেয়ার আগেই ভাণ্ড নিয়েছে কেউ কেড়ে। কিন্তু মরা ঠোঁটে ততক্ষণে সিসিফাসের মত পিপাসার ঝড়। কি পেলামের চেয়ে কি হারালাম সেটাই বড় হয়ে গেছে ততক্ষণে বহুগুণে...

আমার নিজের ডিউন-ব্যাশিং-এর অভিজ্ঞতা এটুকুই। এরপর অনেকবার ভেবেছি আবারও যাওয়ার, এবং এবারে কোন বড় ডিউন-ফিল্ড বা এর্গের ভিতর দিয়ে লম্বা ডেজার্ট সাফারিতে। কিন্তু অর্থের সংস্থান হয়নি। তারপর দেশে চলে এসেছি। সুতরাং এই লেখাটা নেট থেকে সংগৃহীত কিছু ছবি ও তথ্যের (সব ছবি ও তথ্যই নেটপ্রাপ্ত) উপর ভর করে সেই অনাস্বাদিত অপূর্ণ অভিযান আর সম্ভাব্য রোমাঞ্চ নিয়ে কিছুটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর একটা করুন প্রয়াস। এটা ভ্রমণ কাহিনি না, বরং কত প্রকার ও কি কি মার্কা একটা স্কুলপাঠ্য গরুর রচনা। তবু আশা করি বিজ্ঞজনেরা একদম হয়ত হতাশ বা বিরক্ত হবেন না।


ডিউন কি ?

বালিয়াড়ি বা ডিউনকে বাতাস বা জলপ্রবাহের ফলে সৃষ্টি হওয়া একরকম বালুর টিলা বা খুদে পাহাড় বলা যেতে পারে। মরুভূমিতে শক্তিশালী বাতাসের কল্যানে উড়ে এসে জুড়ে বসা ক্ষুদ্র বালুকনা স্তুপীকৃত হয়ে এই বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয়। ভিত্তি হিসেবে স্রেফ একটুখানি 'বাধা'ই তার জন্য যথেষ্ট। একটা ঝোপ বা এক খণ্ড পাথর - যে কোন কিছু। আর রসদ হিসেবে অবশ্যই প্রচুর পরিমানে বায়ুবাহিত বালুকনা। বাতাস যখন ঐ 'বাধা'-তে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন প্রবহমান বাতাসের কিছু অংশ ঐ 'বাঁধার' উপর দিয়ে তার উলটো পিঠে বায়ুবিমুখী পাশে চলে আসে - এবং এখানে পৌঁছে ঐ বাঁধার আড়ালে একটা জায়গায় বাতাসের প্রবাহ শুন্যে নেমে আসে। এই স্থিরতাপ্রাপ্ত অবস্থায় তখন ঐটুকু বালুবাহী বায়ু তার বাহিত বালু যা ছিল তা ঐ বাঁধার বায়ুবিমুখী পাশে ঝেড়ে দেয়।

এইভাবে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে একটা পর্যায়ে ঐ 'বাঁধা'টা বালুতে পুরোপুরি ঢেকে যায় এবং তাকে ঘিরে একটা সুন্দর পিচ্চি ডিউন গড়ে উঠে। এরপর এই পিচ্চি ডিউনটাই একটা 'বাঁধা' হয়ে উঠে এবং আগের নিয়মে বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে অবশেষে একসময় সত্যি সত্যি তার বয়ঃপ্রাপ্তি ঘটে এবং সে ডিউনের পরিচিত যে কোন একটা আকৃতি ধারণ করে (উপরের এনিমেশন দ্রঃ)।

বায়ুপ্রবাহের (জলমগ্ন ডিউনের ক্ষেত্রে জলপ্রবাহের) সাথে মিথস্ক্রিয়ার কারনে বালিয়াড়ির আয়তন ও আকৃতি অনেক রকমই হতে পারে। বেশির ভাগ ডিউন বায়ুপ্রবাহের মুখোমুখি দিকে লম্বা হয়ে থাকে আর বালু ঠেলা খেয়ে খেয়ে উপরে উঠে যায় আর তার বায়ুবিমুখী উলটো পিঠ (লিওয়ার্ড) হয় অপেক্ষাকৃত খাটো। একে 'স্লিপ ফেস' বলে। অজস্র ডিউন আচ্ছাদিত বিশাল একটা এলাকাকে 'ডিউন-ফিল্ড' আর তাবড় তাবড় ডিউন-ফিল্ডগুলিকে বলা হয় 'এর্গ'। এর্গ আরবি থেকে ইংরেজিতে ঢুকে পড়া শব্দ।

সাধারনত সাগরতীরবর্তী অঞ্চল বা মরুভূমিতে বালিয়াড়ি দেখা যায়। কোন কোন সাগরতীরবর্তী অঞ্চলে তীরের সমান্তরালে এক বা একাধিক বালিয়াড়ি-শ্রেণী দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই বালিয়াড়িগুলি ঝড়ঝঞ্ঝার সময় সাগর থেকে ধেয়ে আসা ঢেউয়ের ধ্বংসাত্নক আঘাত থেকে ভূভাগকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সাগরতীরের বালিয়াড়িগুলির বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি থাকলেও, বালিয়াড়ির বৃহত্তম সমাহারগুলি সাগরতীর থেকে দূরে শুষ্ক অঞ্চল বা মরুভূমিতেই বেশি দেখা যায়।


বায়ুপ্রবাহজাত ডিউনের আকার-আকৃতি

বায়ুসৃষ্ট বালিয়াড়ি নানা আকৃতির হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেসিক আকৃতিগুলি হচ্ছে - ক্রিসেন্টিক, লিনিয়ার, স্টার, ডোম, প্যারাবোলিক, সেঈফ, রিভার্সিং, ইত্যাদি।

ক্রিসেন্টিক , অর্থাৎ চাঁদের বাঁকা ফালির আকৃতির বালিয়াড়িগুলি সাধারণত লম্বার চেয়ে চওড়া হয়ে থাকে বেশি। এগুলির স্লিপ-ফেস বা স্খলনপৃষ্ঠ সাধারণত বালিয়াড়িগুলির অবতল পার্শ্বে হয়। এগুলির সৃষ্টি মূলত অপরিবর্তিতভাবে একদিক থেকে প্রবাহিত বাতাসের কারনে। কিছু কিছু ক্রিসেন্টিক বালিয়াড়ি মরুভূমির বুকের উপর দিয়ে অন্য যে কোন ধরণের বালিয়াড়ি থেকে দ্রুততর গতিতে স্থান-পরিবর্তন করতে পারে। বছরে ৩০০ ফুট করে সরে যাওয়ারও রেকর্ড আছে চীনের নিংক্সিয়া আর আমি যেখানে গিয়েছিলাম সেই মিশরের পশ্চিম মরুভূমিতে। পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রিসেন্টিক বালিয়াড়ি চীনের টাক্‌লামাকান মরুভূমিতে দেখা যায়, যেগুলির গড় শীর্ষবিস্তার (crest-to-crest widths) ৩ কিলোমিটারেরও বেশি।

সোজা বা সামান্য সর্পিল শীর্ষশিরাওলা আর প্রস্থের চেয়ে দৈর্ঘ্যে অনেক বেশি এমন বালিয়াড়িগুলিকে সাধারণত লিনিয়ার বালিয়াড়ি বলা হয়। এগুলি ১০০ মাইলের চেয়েও বেশি লম্বা হতে পারে। কখনো কখনো এমন একাধিক লিনিয়ার বালিয়াড়ি মিলে ইংরেজি Y-আকৃতির যৌগিক বালিয়াড়ি সৃষ্টি করে।

স্টার ডিউন অরীয় প্রতিসাম্যবিশিষ্ট (রেডিয়ালি সিমেট্রিকাল) পিরামিড আকৃতির বালুর স্তুপ যার শীর্ষকেন্দ্র থেকে প্রসারিত তিন বা ততোধিক বাহু এর স্খলনপৃষ্ঠের রূপ নেয়। এই বালিয়াড়িগুলি সাধারণত বহুমুখী বায়ুপ্রবাহপ্রবণ এলাকাতে দেখা যায় আর এর বিস্তৃতি পাশাপাশি হওয়ার চেয়ে উর্ধ্বমুখী হয়ে থাকে। সাহারার 'গ্র্যাণ্ড এর্গ ওরিয়েন্টাল' এই স্টার ডিউন অধ্যুষিত এলাকা। চীনের 'বাদাইন জারান' মরুভূমির দক্ষিন-পূর্ব অঞ্চলের স্টার ডিউনগুলি ১৬০০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে এবং মতান্তরে এগুলি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু নিশ্চল ডিউনের অন্যতম।

ডোম বা গম্বুজ ডিউন দেখতে ডিম্বাকার বা গোলাকার হয়ে থাকে। এদের সাধারনত স্খলনপৃষ্ঠ থাকে না।

কনভেক্স নাক আর প্রলম্বিত দুই বাহুযুক্ত U-আকৃতির ডিউনগুলিকে প্যারাবোলিক বা অধিবৃত্তাকার বালিয়াড়ি বলা হয়। এই বালিয়াড়িগুলির এই আকৃতি এর মধ্যাংশ ইংরেজি U-আকৃতির কাছাকাছি আকৃতিতে ক্ষয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। এর বাহুগুলি ঝোপঝাড়-গাছপালার কারনে জায়াগামত আটকে থাকে।

লংগিচ্যুডিনাল অর্থাৎ অনুদৈর্ঘ্যিক ডিউন সাধারণত প্রিভেইলিং বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে প্রলম্বিত হয় - সম্ভবত একটা বড় ডিউনের পাশগুলি বাতাসে উড়ে গিয়ে। এগুলিকে সেঈফ ডিউনও বলা হয়, আরবি শব্দ 'সেঈফ' অনুসারে, যার অর্থ তরবারি। এই ডিউনগুলি বিশেষ করে সাহারায় দেখা যায়। সেঈফ ডিউন প্রায় হাজার ফুট উঁচু আর প্রায় দুই শ' মাইল পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে।

রিভার্সিং ডিউন সেসব জায়গায় গড়ে উঠে যেখানে বায়ুপ্রবাহের গতিমুখ নির্দিষ্ট সময় পরপর উলটে যায়। এদের আকৃতি উপরের আকৃতিগুলিরই নানান রকমফের। এদের বিপরীতমুখী মূখ্য আর গৌণ স্খলনপৃষ্ঠ থাকে।

উপরিল্লিখিত ডিউনের সবগুলি আকৃতিই তিনটা রূপধারণ করতে পারেঃ সরল, যৌগ, আর মিশ্র। সরল ডিউনগুলি তাদের নিজস্ব আকৃতির মূল জ্যামিতিক রূপটা ধারণ করে আর এদের ন্যূনতম সংখ্যক স্খলনপৃষ্ঠ থাকে। যৌগিক ডিউনগুলি বিশাকাকৃতির ডিউন যার উপর একই আকৃতি আর একই দিকমুখী স্খলনপৃষ্ঠওলা ছোট ছোট আরও ডিউন গড়ে উঠে। মিশ্র ডিউনগুলি উপরিল্লিখিত একাধিক আকৃতির ডিউনের একটা মিশ্রন। একটা ক্রিসেন্টিক ডিউনের ক্রেস্টের উপরে স্থাপিত একটা স্টার ডিউন হচ্ছে মিশ্র ডিউনের সবচেয়ে পরিচিত উদাহরণ। উপরের তিনটি ডিউন টাইপের পার্থক্যের সহজ কারনটা হচ্ছে - বায়ুপ্রবাহের পার্থক্য। সরল ডিউনগুলি থেকে বোঝা যায় এদের ক্ষেত্রে এদের গড়ে উঠার পর থেকে বায়ুপ্রবাহের (wind regime) গতিমুখ আর তীব্রতা বিশেষ পাল্টায়নি, অন্যদিকে যৌগিক আর মিশ্র টাইপের ক্ষেত্রে সেটা পাল্টিয়েছে।

উপরের ডিউনগুলি ছাড়াও আরেক ধরণের ডিউন আছে যাকে সবাই ডিউন বলে গণ্য করেন না। এরা 'তিমির পিঠ' (হোয়েলব্যাক) বা 'জিবার' নামে পরিচিত। জিবারে সাধারণ ডিউনের মত সরু শীর্ষশিরা (ক্রেস্ট) বা খাঁড়া স্খলনপৃষ্ঠ (স্লিপ ফেস) নেই। এগুলি গড়পড়তায় অন্যান্য ডিউন থেকে কম উঁচু, প্রায় অর্ধ-ডিম্বাকৃতি (অনেকটা সাগরে ভাসমান তিমির পিঠের মত) মসৃন পিঠবিশিষ্ট এবং ধীরলয়ে উত্থানপতনযুক্ত দৈত্যাকৃতির বালুর তরঙ্গমালা। 4WD করে চড়ে বেড়ানোর জন্য দারুন মজার জায়গা।

বায়ুপ্রবাহজাত ডিউন ছাড়াও গঠনপ্রক্রিয়ার ভিত্তিতে আরও কয়েক রকম ডিউন রয়েছে। যেমন - জলমগ্ন ডিউন যা নদী ও নদীর মোহনায় পানির তলায় জলপ্রবাহের ফলে সৃষ্টি হতে পারে। বায়ুপ্রবাহজাত বা জলমগ্ন ডিউন জমে (কম্প্যাকশন) শক্ত হয়ে গিয়ে একধরণের বেলেপাথরের ডিউন সৃষ্টি হয় যাকে লিথিফাইড, অর্থাৎ প্রস্তরীভূত ডিউন বলে। এছাড়া সমুদ্রের ঢেউ আর ভূভাগের বায়ুপ্রবাহ মিলে কোস্টাল ডিউনও সৃষ্টি করে।

তো সংক্ষেপে এই হল ডিউন কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি।

এর্গ

স্যান্ড সী, ডিউন সী, এর্গ, ঘুরুদ, নিফুদ, কৌম, শামো -- বিভিন্ন নামে বিভিন্ন অঞ্চলে ডিউনের এক বিশেষ ধরণের বিশাল সমাহার পরিচিত। প্রথম দু'টি ইউরপিয়ানরা ব্যবহার করে থাকেন, কিন্তু সাহারার স্থানীয়রা ততটা নয়। 'ঘুরুদ' মিশরীয় আরবিতে প্রচলিত, কিন্তু পশ্চিমা ভাষায় বা এমনকি অন্যদেশের আরবিতেও নয়। এর্গ-ও আরবি-উৎসজাত শব্দ, তবে ইউরোপিয় ভাষায়, অন্তত ইংরেজি ও ফরাসীতে এটা গৃহীত হয়েছে এবং ভূতিত্ত্ববিদরাও ব্যবহার করে থাকেন। কৌম তুর্কি আর শামো চীনা ভাষার শব্দ। এই টার্মগুলির মধ্যে কোন সুক্ষ পার্থক্য আছে কিনা জানি না, তবে আমি যদ্দুর বুঝেছি তা হল এর সবই কমবেশি সমার্থক এবং এগুলির অর্থ হল -মরুভূমিতে বালিয়াড়ি-বহুল বিশাল একটা এলাকা। উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞা মতে এর্গ হচ্ছে 'ডিউন ফিল্ড' থেকে বড় মরুভূমিতে বায়ুবাহিত বালুতে ঢাকা বিশাল একটা জায়গা - কমপক্ষে ১২৫ বর্গকিলোমিটার। এর কম হলে সেটা 'ডিউন ফিল্ড'। তবে সাহারায় এর্গ উপাধিধারী নামকরা এলাকাগুলি এর চেয়ে আসলে অনেক অনেক বড়, যেমন - আলজিরিয়ার ইসাওয়ে (Issaouane) এর্গ ৩৮,০০০ বর্গকিলোমিটার, এর্গ চেচ ৩,১৯,০০০ বঃকিমিঃ, গ্রান্ড এর্গ ওরিয়ান্টাল ১,২০,০০০ বঃকিমিঃ, মিশরের গ্রেট স্যাণ্ড সী ৭২,০০০ বঃকিমিঃ, বা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এর্গ (এটাকে অবশ্য উইকিপিডিয়া এর্গ হিসেবে শ্রেণীভূক্ত না করে 'স্যাণ্ড ডেজার্ট' বলছে) মধ্যপ্রাচ্যের রুব'আল খালি সাড়ে ছয় লক্ষ বঃকিমিঃ, ইত্যাদি।

ডিউন ফিল্ড বা এর্গ ইত্যাদি সাধারণত অঢেল শুকনো ঝরঝরে বালুর উৎস, যেমন শুষ্ক নদীতল, বদ্বীপ, প্লাবনভূমি, হিমান্ত সমতলভূমি, শুষ্ক লেক, সৈকত ইত্যাদির বায়ুপ্রবাহমুখী নিম্নাঞ্চলে (downwind) গড়ে উঠে। প্রায় সব প্রধান এর্গই উলেখযোগ্য পরিমানে উদ্ভিদ জন্মানোর জন্য অনুপযোগী শুষ্কতার কারনে দীর্ঘকালব্যাপী বায়ুজনিত ভূমিক্ষয়প্রবণ এলাকায় অবস্থিত শুকনো রিভারবেড থেকে বায়ুপ্রবাহমুখী নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত। এইসব অঢেল উৎস থেকে বালু বায়ুবাহিত হয়ে প্রবাহমুখী কোন অঞ্চলে এই প্রবাহের প্রতি কোন টোপোগ্রাফিক বাঁধা বা বায়ুপ্রবাহের অভিসরণের কারনে যদি এটা থেমে যায় বা মন্দীভূত হয়, তখন এই বায়ুপরিবাহিত বালু ঐখানে জমা হয়ে বিশালাকৃতির ডিউন গড়ে উঠে। আস্ত এর্গ বা ডিউন-ফিল্ড তাদের বালুর উৎস থেকে বায়ুপ্রবাহমুখে কয়েক শ' কিলোমিটার পর্যন্ত চলে যেতে পারে। এধরণের জমা হওয়ার প্রক্রিয়া অর্থাৎ পরিসঞ্চায়ন হতে অবশ্য অনেক সময় লাগে। আরবীয় উপদ্বীপ, উত্তর আফ্রিকা আর মধ্য এশিয়ার বিশালাকৃতির ডিউন সমৃদ্ধ এর্গগুলি গড়ে উঠার জন্য অন্তত ১০ লক্ষ বছর লেগেছে। নামিবিয়ার সোসুস্‌ভ্লেইর অনেক ডিউন নাকি ৫০ লক্ষ বছর পুরনো।

এর্গের মধ্যে একটা একক ডিউনের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, বা উভয় মাত্রাই সাধারণত ১৬০০ ফুটের বেশি হয়ে থাকে। এর্গের বালুর বিরাট আঞ্চলিক বিস্তৃতি আর এর মধ্যকার ডিউনগুলির বিশাল ও জটিল আকার একে সাধারণ 'ডিউন ফিল্ড' থেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।

বড় বড় এর্গগুলি ২০0 থেকে ৪০0 উত্তর আর ২০0 থেকে ৪০0 দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে দুইটা প্রশস্ত বেল্টের মধ্যে অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে আয়ন বায়ুর শুষ্ক, অধোগামী প্রবাহতাড়িত অঞ্চল। ১৫০ মিমি-র চেয়ে বেশি গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয়না, এমন অঞ্চলগুলির মধ্যেই সক্রিয় এর্গগুলি সীমাবদ্ধ।

পৃথিবীর বৃহত্তম এর্গগুলি (বা এর্গওলা মরুভূমি) উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া আর মধ্য অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত। এর মধ্যে আছে আলজিরিয়ার গ্র্যান্ড এর্গ ওরিয়েন্টাল ও গ্র্যান্ড এর্গ অক্সিডেন্টাল, মিশরের রামলা আল-কবির ও গ্রেট স্যান্ড সী, লিবিয়ার এর্গ আওবারি ও এর্গ ইদেহান মার্জুক, মরক্কোর এর্গ ছেব্বি ও এর্গ চেগাগা, নামিবিয়ার নামিব মরুভূমি, চীনের টাকলামাকান ও ড্‌যুনগারিয়া, ইরানের দাশ্‌ত-ই লুত, কাজাকাস্থানের কিজিল কুম, মঙ্গোলিয়ার নোমিন মিঙ্গান গোবি, সৌদি আরবের রুব আল খালি ও গ্রেট নিফুদ, তুর্কমেনিস্তানের কারাকোরাম, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট স্যান্ডি ডেজার্ট ও সিম্পসন ডেজার্ট, ইত্যাদি সহ আরও অজস্র এর্গ। উত্তর আমেরিকার একমাত্র সক্রিয় এর্গ হচ্ছে মেক্সিকোর গ্র্যান ডেজিয়ের্টো ডি অল্টার। দক্ষিণ আমেরিকার এর্গগুলি আন্দেজ পর্বতমালার কারনে সীমাবদ্ধ, তবে এর মধ্যে পেরুর সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে আর আর্জেন্টিনার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে অত্যন্ত বিশালাকৃতির ডিউনগুলি (এর্গ হিসেবে না) উল্লেখযোগ্য - যার মধ্যে পেরুর সেচুরা মরুভূমিতে পাদদেশ থেকে ৩৮৬০ ফুট উঁচু (এলিভেশনঃ ৬৭৯১ ফুট) চেরো ব্ল্যাঙ্কো পৃথিবীর সর্বোচ্চ ডিউন বলে পরিচিত।

পৃথিবীব্যাপী এর্গগুলির একটা তালিকা এখানে আর একটা এখানে পাবেন।

লেখাটা অনেক লম্বা হয়ে গেছে। আপাতত এখানেই থাক। বালিয়াড়িতে খেলোয়াড়ি, অর্থাৎ ডিউন-ব্যাশিং, ডিউন-বোর্ডিং আর ডিউন-স্লেজিং নিয়ে আর লেখা হল না এ দফায়। আরেকটা পর্বে হয়তো সেটা লেখা যেতে পারে।

প্রকৃতির এক আশ্চর্য ফেনোমেনা এই ডিউন নামের বর্ণিল মরুভাষ্কর্য। নানা আকার-আয়তন, রঙ-ঢঙ আর দেহভঙ্গিমায় পৃথিবীর বুককে সাজিয়ে রেখেছে তারা। আমরা সাধারণত শ্যামলিমার সৌন্দর্যেই আকৃষ্ট হই বেশি, হয়তো নদীমাত্রিক সবুজ দেশের মানুষ বলেই। 'সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি' দিয়ে শুরু করা রচনা মুখস্থ করতে করতেই বড় হয়েছি অনেকে। মরুভূমি অনেক সময়ই আমাদের এই সৌন্দর্যবোধের একটা চরম বিপরীতার্থক শব্দ। অনেকের কল্পনাতেই হয়তো এটা ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যবিহীণ, একঘেয়ে আর অসহনীয় একটা জায়গা। অন্তত আমার কাছে তাই ছিল। এসবের ফল হচ্ছে, দুনিয়াটা আমার মতই যাদের দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হইতে দু পা ফেলিয়া, তাদের কাছে সৌন্দর্যের আরও বহুবিচিত্র রূপ আর সংজ্ঞাই চির অধরা আর অজানা থেকে যায়। কল্পনাতেও আসে না যে অমন প্রচণ্ড শুষ্ক, রুক্ষ, উষর, ধূসর, দূর্গম, নিষ্পত্রপ, কঠিন বিরান ভূমিতেও অকল্পনীয় সব সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকতে পারে। আমিও এই সৌন্দর্যটা আসলে ঠিকমত দেখতে পাইনি - সামান্য একটুখানি আভাসমাত্র পেয়েছিলাম। সেই আভাসের সূত্র ধরেই ঐ অদেখা সৌন্দর্যের পিছনে কল্পনায় আর সাইবারস্পেসে পশ্চাদ্ধাবনের ফসল এই লেখা। আর হ্যাঁ, সেই সূত্র ধরেই ইন্টারনেট নামের আধুনিক প্রযুক্তির কল্যানে বাস্তবে অদেখা সেসব পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অপরূপ সৌন্দর্য ঘেঁটে তৈরি করেছি - পৃথিবীর সুন্দরতম কিছু ডিউন আর এর্গের একটা নির্বাচিত ধারাপ্রদর্শণী। নিজের জন্যই, নিজের আনন্দেই। তবে সেটা এখানে শেয়ার করাটা হয়ত অপ্রাসঙ্গিক হবে না :--

[বিঃদ্রঃ (১) এই পোস্টে উল্লেখিত বিভিন্ন ধরণের ডিউনের উদাহরণ আছে স্লাইডশো-টার একদম শেষ ৮টি ছবিতে; (২) প্লে-মোডে প্রতিটি স্লাইড ১৫ সেকেণ্ড স্থায়ী - এটা বেশি ধীরগতির মনে হলে নেক্সট বাটন চিবি দিয়ে দ্রুত দেখা যেতে পারে; (৩) স্লাইডশোটা ভার্টিকালি স্ক্রীনের ঠিক মাঝামাঝি আনুন। তবে নিচের চৌকো-বাটনটা চিপে ফুল-স্ক্রীন মোডে দেখাটা সবচেয়ে সুবিধাজনক - সবকটা কন্ট্রোল-বাটন আর ক্যাপশন সহজে দৃশ্যমান ও এক্সেসিবল হবে। ]

মরুভাষ্কর্য : দি গ্র্যাণ্ড ডিউন শো

পৃথিবীর সুন্দরতম ডিউনের ধারাপ্রদর্শণী








স্লাইডশোর সব ছবিসূত্রঃ সাইবারস্পেস। আলাদাভাবে প্রতিটি ছবির মূল ইউআরএল এমবেড করা সম্ভব হলনা।

সংযোজনঃ আলাদাভাবে প্রতিটি ছবির মূল ইউআরএল/সূত্র দেয়া হল - এখানে



মন্তব্য

ক্রেসিডা এর ছবি

এর্গ এর আগ পর্যন্ত পড়লাম আর নিচের স্লাইড শো টা দেখলাম। পিকচার, এনিমেশন ও বর্ননা এর মিশ্রনে দারুন লেখা। আনেক কিছু ই জানতে পারছি। বাকিটা পরে পড়বো।

চলুক

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

মন মাঝি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

হেভি তো!

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

****************************************

দ্রোহী এর ছবি

ভিডিও কৈ? বুদ্ধ মূর্তি পিছে রেখে ছবি তুলছেন?

মন মাঝি এর ছবি

ভিডিও / বুদ্ধমূর্তি কৈ পামু? ছবি তুলা তো দূরের কথা, যাইই তো নাই ঐ সব জায়াগায়! এইডা পরের তুলা ছবি দিয়া একটা স্বপ্নের পোস্ট। বা বলা যায় পরের মুখে ঝাল চাখার একটা করুন প্রয়াস। বা সোজা বাংলায় - যাইও নাই, ছবিও আমার তুলা না।

স্বপ্ন দেখলেও যে সেই স্বপ্ন সত্যি সত্যি আমিই দেখছি, অন্যের স্বপ্ন চুরি / বাটপারি করতাছি না - সেটা প্রমাণের জন্যেও যে 'বুদ্ধমূর্তি' লাগে আগে জানতাম না! কি ঝামেলারে বাবা! ঠিকাছে এরপরে আগে থাকতে মোজেসদারে জিগায়া লমু নে স্বপ্নের ফ্রেমে কেম্নে 'বুদ্ধমূর্তি' পজিশন করতে হয়, কিভাবে সেটা ঢাকতে হয়। ঠিকাছে? চোখ টিপি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

গুল্লি উত্তম জাঝা!

দারুণ অভিজ্ঞতা।

চলেন, পরের বার নামিবিয়া!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

সুন্দর লেখা। কিন্তু আমার খারাপ লাগল এরকম দুর্ধর্ষ সব ছবির কৃতিত্ব সাইবারস্পেস পেল বলে। কিছু মনে করবেন না, আমি যতদিন পারি এভাবে জ্বালাতন করেই যাবো।

প্রথম ছবিটা-- ডিউন ৪৫, সম্ভবত আফতাব ভাইয়ের তোলা। নামিবিয়া নিয়ে তার আরো কিছু ভালো ছবি আছে। তাঁর ছবির প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং তাঁর কর্মের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্যই আমি লিংকটি দিয়ে গেলাম। একজন মানুষ এরকম একটি ছবি তোলার জন্য কত সময়, অর্থ আর শ্রম দেন সেটা নিয়ে একটু ভাবলেই তার/তাদের ছবির কোন ক্রেডিট না দিয়ে কোন লেখাই প্রকাশ করতে চাইতাম না।

মন মাঝি এর ছবি

আগেই চোখে পড়লেও আকস্মিক অসুস্থতাহেতু এই মন্তব্যটার জবাব দিতে দেরি হয়ে গেল বলে দুঃখিত।

কিছু মনে করবেন না, আমি যতদিন পারি এভাবে জ্বালাতন করেই যাবো।

ওয়েল্কাম ব্যাক! দেঁতো হাসি

উচিত মনে করলে 'জ্বালাতন' করবেন নিশ্চয়ই। সমালোচনা আপনার অধিকার। পাঠকের ভূমিকায় এটা আপনার প্রেরোগেটিভ, এ ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা/সংশয় বা আপত্তি নেই। যথোপযুক্ত মনে করলে আপনি নির্দ্বিধায় আরও কঠোর সমালোচনা করতে পারেন। তবে লেখক হিসেবে আমি আপনার কাছ থেকে সমদৃষ্টির-সুবিচার প্রত্যাশা করতেই পারি, তাই না? এটাকে কি আমার অধিকার বলা যেতে পারে, বিশেষ করে একজন অগ্রসর সচলের (এবং হয়তো অন্যতম মডুও) কাছ থেকে? সচলে তো ইন্ডিভিজুয়াল ক্রেডিট না দিয়ে সকল প্রশংসা মহান ইন্টারনেট'তায়লার ঘাড়ে চাপিয়ে আরও ছবি প্রকাশ পাচ্ছে বলেই যদ্দুর মনে পড়ে (আমার কোন নির্দিষ্ট পোস্টের প্রতি নির্দেশ করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই), তখন তো যদ্দুর মনে (সবক্ষেত্রে না হলেও, অন্তত বহুক্ষেত্রেই) পড়ে আপনাকে এত সক্রিয় ভাবে আপত্তি জানাতে দেখি না। এটাকেই আমি বলছিলাম সুবিচার ও সমদৃষ্টি। এই সমদৃষ্টি বা সমব্যবহার না পেলে অনেক জ্বলজ্যান্ত সত্যও গলধকরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে মানুষে পক্ষে, আবার পেলে অনেক কঠিন সমালোচনাও (এমনকি কঠিনতার মাত্রা কিছুটা আনডিউও হলেও) হাসিমুখে প্রসন্নচিত্তে হজম করে ফেলা যায় - 'জ্বালাতন' বা stalking এর মত অনুভূতি হয় না। আপনি সচলের প্রেক্ষিতে সিনিয়র সদস্য, আপনার কাছে এটুকু সহৃদয় সুবিচার কি প্রত্যাশা করতে পারিনা?

যাইহোক, নীতিগত ভাবে আমার ভুল হয়েছে নিশ্চয়ই ইররেসপেক্টিভ অফ কে কি করল না করল। তবে জাস্টিফাই করার জন্য না হলেও, এর একটা ব্যাখ্যা দরকার।

আপনি আফতাব ভাইয়ের ছবিটির কথা বলেছেন। বলছেন আমি এই ছবির ক্রেডিট দেইনি। আপনি আসলে ভাল করে না দেখেই আমার উপর এভাবে ঝাপিয়ে পড়লেন। একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই দেখতে পেতেন নীচে ক্যাপশনের পাশে তিনটি ডট আছে যাতে ক্লিক করলেই আফতাব ভাইয়ের নামটা চলে আসত। হ্যাঁ, url-টা এখানে দেয়া যায়নি অবশ্য, সে কারনটা পরে বলছি, কিন্তু নাম ঠিকই দিয়েছিলাম - শুধু মূল ফ্রেমের বাইরে চলে গেছে স্বয়ংক্রিয় ভাবে, কিন্তু তারপরও ঐ ক্লিকেবল ডটের সঙ্কেতের মাধ্যমে তা এভেলেবল। আর হ্যাঁ, তার নামই যে শুধু দিয়েছি তাই নয় - যথেষ্ট আগেই তার ছবি প্রকাশের জন্য পূর্বানুমতি পর্যন্ত নিয়ে নিয়েছি তাঁর কাছ থেকেই! আপনি চাইলে সেই জবাবী ইমেলের স্ক্রীন শটও সরবরাহ করতে পারি। কিম্বা আপনি উনার কাছ থেকেও ভেরিফাই করে নিতে পারেন।

দোষারোপ করার আগে আরেকটু ভাল ভাবে দেখে নিলে, ধৈর্য ধরলে, বা একটু 'বেনিফিট অফ ডাউট' অন্তত দিলে বোধহয় এতটা খারাপ লাগত না!

প্রতিটি ছবিতেই ক্লিকেবল লিঙ্ক এমবেড করেই আমি স্লাইডশো-টা বানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওয়েবান্ধ লাইফে এই প্রথম একটা অনলাইন এমবেডেবল স্লাইডশো বানাচ্ছি বলে এটা বানাতে গিয়ে আমাকে ভুল করতে করতে, শিখতে শিখতে, কি পরিমান ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তা এখানে বলা অপ্রয়োজনীয়। এই ইন্ডিভিজুয়াল লিঙ্কেবিলিটির ফিচারের কথা চিন্তা করেই Visualslideshow.com থেকে ভিসুয়ালস্লাইডশো প্রোগ্রামটা ডাউনলোড করে এটা নিয়ে কয়েকটা দিন একটানা গুঁতাগুতি করেছি। কিন্তু এর আউটপুটটাকে কিছুতেই মাল্টিপল-ব্রাউজার কম্প্যাটিবল বানাতে পারিনি, অন্তত আমার ফায়ারফক্সের ভার্শন ১৪ তে কখনো এর নেভিগেশন / কন্ট্রোল বার দেখা যায়, কখনো যায় না, আবার গেলেও তখন ব্যাক আর লাস্ট বাটন কাজ করে না। এটা অফলাইনে। আবার আপ্লোড করার পর দেখি সর্বশেষ ছবিতে আটকে আছে, নেভিগেশন কন্ট্রোল উধাও, শো অটো বা ম্যানুয়্যাল কোনভাবেই আগায় না। এখানে আর এখানে (অশ্রুত অডিও সহ) এর একটা আমার করা সংক্ষিপ্ত ট্রায়াল/টেস্ট/ডেমো ভার্শন দেখতে পারেন। আপনি এই প্রোগ্রামটা দিয়ে যদি মাল্টিপল-ব্রাউজার কম্প্যাটিবল (অন্তত ফাফ, আইই, আর ক্রোম) এবং অনলাইনে পুরোপুরি চলেবল একটা স্লাইডশো বানানোর পথ বাতলে দিতে পারেন তাহলে খুব উপকার হয়, কারন অন্যান্য দিক থেকে এই প্রোগ্রামটাকে আমার কাছে দারুন ব্যবহারবান্ধব মনে হয়েছে, সচলে আমি আরও স্লাইডশো পোস্ট করতে চাই, এবং সর্বোপরি এই প্রোগ্রামটা প্রতিটি ছবি বা স্লাইডে আলাদাভাবে সোর্স-ইউয়ারেল-এর ক্লিকেবল-লিঙ্ক এমবেড করার সুযোগ দেয় ভিসুয়াল / স্লাইড ক্লাটার না করেই

যাইহোক, কয়েকদিন এটা নিয়ে গুঁতাগুতি করে তিক্তবিরক্ত আর হয়রান হয়ে শেষে অনলাইন ফ্রি স্লাইডশো প্রোভাইডারদের দিকে নজর দেই। এটা আগে করতে চাইনি কারন বাংলাদেশ থেকে গ্রামীণের কোটাসীমায়িত অতিস্লো কানেকশনের প্যাকেজ দিয়ে অনলাইনে কাজ করা কি দূরুহ, তা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। তারপরও কয়েকটা প্রোভাইডার ঘেঁটে Photosnack বেছে নিয়েছি কিছু সুবিধা/ফিচারের কারনে। এখানে সবকিছু করার পর দেখা গেল ইউয়ারেল 'এমবেড' করা যাচ্ছে না। এই পর্যায়ে আমি পুরোপুরি হয়রান। শেষে দেখলাম ছবি এডিট অংশে ক্যাপশন (এরা মনে হয় 'টাইটেল' বলে) ঢুকানোর যে জায়গা সেখানে ঢুকানো যেতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র টেক্সট ফরম্যাটে, লিঙ্ক কোড দিলে সেটাও টেক্সট হয়ে যায়। তাই সই। কিন্তু ঢুকানোর পর প্লে করতে গিয়ে দেখি সব হাওয়া। শুধু ডট ডট...। তারপর মাথার চুল ছিঁড়তে ছঁড়তে আবিষ্কার করলাম ইয়া লম্বা লম্বা ইউয়ারেল-গুলি মূল ক্যাপশন / টাইটেল অংশে না আঁটার ফলে পরবর্তী সম্ভবত 'ডেস্ক্রিপশন' অংশে চলে গেছে, যে অংশটা আবার মূল ফ্রেইমে / স্লাইডে দৃশ্যমান হয় না - শুধুমাত্র ঐ 'ডটে' ক্লিক করলেই নতুন একটা কালো স্লাইডে তা দেখা যায়। এমনকি ছবির টাইটেলও একটু বড় হলেই একই অবস্থা (টাইটেলসহ আফতাব ভাইয়ের নামের ক্ষেত্রেও এটাই হয়েছিল)। উপরন্ত এই নতুন 'প্রোপার্টিজ' টাইপের স্লাইড/ফ্রেইমে ঢুকে তখন আমি চলন্ত স্লাইডশোটা-তে ফেরা পথ পাচ্ছিলাম না (উপরের ক্রস চিহ্ণটা নজরে পড়েনি তখন)। পেজ রিফ্রেশ করে স্লাইডশোটা আবার শুরু থেকে রিপ্লে করা লেগেছে। ভেবে দেখলাম কে আর এই ডট ক্লিক করে করে বার বার এতগুলি ছবির, ৬৪ টার, প্রোপার্টিজ দেখতে যাবে ইউয়ারলের জন্য (আপনি তো একবারও দেখেননি!), তারপর ৬৪ বার পেজ রিফ্রেশ করে স্লাইডশোটা আবার ৬৪ বার রিপ্লে করবে - বা অন্তত ডট-প্রোপারার্টিজ ডিস্প্লে-ক্লোজ-ব্যাক টু স্লাইডশো এভাবে করবে! ডটটাই চোখে পড়বে না কারো (আপনারও পড়েনি)! তাছাড়া তাহলে তো স্লাইডশোরই মানে হয় না, এজন্যে মানুষ স্লাইডশো দেখে না। এর চেয়ে ৬৪টি ছবিই মূল পোস্টে সূত্রসহ দেখা হাজার গুনে বেশি সুবিধাজনক।

ক্লান্তির চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছে যে সর্বশেষ সমাধানটা আমার মাথায় এসেছিল, তা হল ছবিপ্রতি-ইউয়ারেল ছাড়াই স্লাইডশোটা সচলে পোস্ট করে তারপর অন্য একটা ফ্রি ওয়েব-পেইজে (সচলে না) স্লাইডশোটার স্লাইডের ক্রমানুযায়ী সবগুলি ছবির মূল ইউয়ারেলের একটা সমক্রমানুসারী বা করেসপণ্ডিং তালিকা পাবলিশ করে ঐ তালিকার একটা লিঙ্ক আমার পোস্টের ফুটনোটে বা স্লাইডশোটার উইন্ডোর নীচে দিয়ে দেয়া।

কিন্তু সচলে পোস্টটা দেয়ার পরপরই হঠাৎ করে অসুস্থ বোধ করায় বাকি কাজটুকু শেষ না করেই "
স্লাইডশোর সব ছবিসূত্রঃ সাইবারস্পেস। আলাদাভাবে প্রতিটি ছবির মূল ইউআরএল এমবেড করা সম্ভব হলনা।"
- এই কথাটুকু ফুটনোটে ঢুকিয়ে দিয়েই তাড়াতাড়ি চলে যেতে হয়েছিল। ইচ্ছে ছিল পরে এসে ঐ তালিকাটা করে ঐখানেই তার লিঙ্কটা ঢুকিয়ে দিয়ে যাব যথাশীঘ্র সম্ভব। এখন সেটা দিয়েছিও। উপ্রে মূল পোস্টের ফুটনোটেও তার আপডেট / প্রতিফলন দেখতে পাবেন। ঠিক এটা করার জন্যই সবগুলি (এবং আরও) ছবির ইউআরএল একাধিক নোটপ্যাড ফাইলে আগে থেকেই স্ক্রুপুলাসলি সংরক্ষণ করা ছিল। আপনি চাইলে এই ফাইলগুলিও আপনাকে সরবরাহ করা যেতে পারে (ভাবছি পরিবর্তিনশীল টাইটেল/ক্যাপশনসহ ফাইলগুলির একাধিক ভার্শনের সব কন্টেন্ট এই মন্তব্যে পেস্ট করে দিব কিনা - যাতে আপনাকে একটা দানবাকৃতির প্রতিমন্তব্য পড়িয়ে একটু পাল্টা-'জ্বালাতন' করা যায় চোখ টিপি )। আর ক্রেডিট তালিকার পেইজের যে লিঙ্কটা দিয়েছি সেখানে ইউআরএলগুলি টেক্সট আকারে নয় - স্লাইডশোতে ছবির ক্রম অনুযায়ী এমবেড করেই দিয়েছি, স্রেফ চিবি দিলেই স্লাইডশোতে করেসপণ্ডিং ছবির মূল ছবি বা আলোচিত্রীর প্রোফাইলে চলে যেতে পারবেন। আশা করি ভেরিফাই করে দেখবেন যে আমি আবারও আপনাকে 'প্রজ্জ্বলিত' করার মত কিছু করলাম কিনা বা আবারও "অকৃতজ্ঞ"অপমানজনক কোন আচরণ করে আমার অপরাধের আঠারোকলা পূর্ণ করলাম কিনা।

একজন মানুষ এরকম একটি ছবি তোলার জন্য কত সময়, অর্থ আর শ্রম দেন সেটা নিয়ে একটু ভাবলেই তার/তাদের ছবির কোন ক্রেডিট না দিয়ে

প্রথম দিকে ততটা না হলেও, এ বিষয়টা সম্পর্কে আমি অনেকখানিই সচেতন এখন। আমার শেষের দিকের পোস্টগুলি লক্ষ্য করলেই মনে হয় এর যথার্থতা পাবেন। আপনার এবং অন্যান্য কিছু প্রশ্নশীল সচলের কাছ থেকেই এ বিষয়ে শিখেছি। শিখছি এখনও। তবে তাদের অধিকাংশই স্রেফ প্রশ্ন তুলেই - এত সুন্দর ছবিগুলি সবই কি আপনার তোলা, হলে তো দারুন ছবি তুলেন আপনি! (কিন্তু আপনার যে তোলা না তা আমি ভাল করেই জানি, সুতরাং...! ) - এজাতীয় আপাত নিরীহ ও সংক্ষিপ্ত ধৈর্যশীল প্রশ্নের মাধ্যমেই দায়িত্ব সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেয়া ও লজ্জা দেয়ার কাজটি একই সাথে সেরে ফেলেন। উপযুক্ত জবাব না আসলে তখন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা তো থাকেই। এতটা বকাঝকার দরকার হয় না। এই স্লাইডশোর ব্যত্যয়টা নিতান্তই একটা মিসহ্যাপ, আশা করি সেটা এখন বুঝতে পারছেন । এই জন্যেই একটু ধৈর্যের প্রয়োজন ছিল। একজন পুরনো সচলের কাছ থেকে এটুকু কি প্রত্যাশা করতে পারি না?

কিছুটা ইচ্ছা করেই সুবিশাল একটা প্রতিমন্তব্য করে ফেললাম। এটাকেই কি ইংরেজিতে ফিলিবাস্টারিং বলে? আরও টানার ইচ্ছা ছিল!! আপনার কথিত "জ্বালাতনের" জবাবে একটু পালটা-'জ্বালাতন' করার অপচেষ্টা আরকি! দেঁতো হাসি চোখ টিপি
আপনাকে আরও আনন্দ দেয়ার আর সেই সাথে আপনার ধৈর্যশক্তির পরীক্ষা নেয়ার জন্য ঐ নোটপ্যাড ফাইলগুলির সব কন্টেন্টও এখানে পেস্ট করে দেয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে মনে করে, আর উপ্রে আমার বক্তব্যের সততা আর আন্তরিকতাটা হাল্কা হয়ে যাবে বলে আপাতত তাতে ক্ষ্যামা দিলাম।

যাইহোক, পোস্টে ও মন্তব্যে সব ভুলভালের জন্যেই এবং যে কারো যেকোন অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকলে তার জন্যেও আবারও ক্ষমাপ্রার্থী। এবং অল "জ্বালাতন"স আর স্টিল মোস্ট ওয়েল্ক্যাম! দেঁতো হাসি

****************************************

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পোস্টের শিরোনামের মর্মকথা এবার বুঝতে পারলাম। বিশেষ করে ব্যাশিং কাকে বলে! যাই হোক, সুন্দর বক্তব্যৈর মধ্যে ভালই হুল ফোটালেন। আমি কথায় পটু হলে হয়তো সময় নিয়ে পাল্টা জবাব দিতাম কিন্তু আপনি যেহেতু বুঝেছেন আমার ধৈর্য কম তাই একটা কথা বলে বিদায় নেই-- মাফ করে দিন।

সচলায়তনে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আর কাউকে কিছু বলবো না।

মন মাঝি এর ছবি

ছি ছি, একি বলছেন! নিশ্চয়ই বলবেন! ভুল করলে আমাকেও বলবেন বৈকি। হাজার বার বলবেন!

হয়তো অত্যন্ত ক্লান্ত আর কিছুটা স্বাস্থ্যগত ভাবে বিব্রত অবস্থায় আপনার কমেন্টের কিছু পার্সিভড আনফেয়ারনেসের কারনে আমি হয়তো একটু বেশি মাত্রায়ই সেন্সিটিভ হয়ে আহত বোধ করে ফেলেছি (আশা করি এদিকটাও বিবেচনা করবেন)। ফলে দুয়েক জায়গায় সেই উস্মা বা অসহিষ্ণুতা হয়তো অনাকাঙ্খিত ভাবে কিবোর্ড ফস্কে বেরিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। এজন্যে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। কিন্তু বক্তব্যের বাকিটুকুর (নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠ অংশের) সারবত্তা, যৌক্তিকতা বা আন্তরিকতায় কি আপনি সন্দিহান? সেসবকেও আপনার কাছে 'ব্যাশিং' আর 'হুল' মনে হয়েছে?! তাহলে অবশ্য আমার আর কিছুই বলার নেই!

আর শেষের প্যারার (বোল্ড করা অংশ থেকে পরের সবটুকু) কথাগুলি যদি ধরেন - এগুলি পুরোপুরি ফান / দুষ্টুমি করে বলা, "হুল" তো নয়ই বরং উলটে এর উপ্রের ডিফেন্সিভ কথাবার্তায় কোন পোটেনশিয়াল হার্শনেস থাকলে তাকে হাল্কা করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই বরং বলা। আমার আশা ছিল আপনি এটা বুঝতে পারবেন। এগুলি আপনি 'হুল' মনে করে সিরিয়াসলি নিয়ে থাকলে আমার রসবোধেই সিরিয়াস ঘাটতি আছে বলে স্বীকার করতেই হবে! সেক্ষেত্রে আমিই বরং বলি - মাফ করে দিন প্লিজ।

আমার উপ্রের মন্তব্যটার শুরুর দিকের কটা লাইন আবারও রিপিট করি --

সমালোচনা আপনার অধিকার। পাঠকের ভূমিকায় এটা আপনার প্রেরোগেটিভ, এ ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা/সংশয় বা আপত্তি নেই। যথোপযুক্ত মনে করলে আপনি নির্দ্বিধায় আরও কঠোর সমালোচনা করতে পারেন।

এটা আমি আন্তরিক ভাবেই মিন করেছি। এখনও করি। সবসময়ই করব। তারপরও, আপনার সর্বশেষ অভিমানাহত লাইনের প্রেক্ষিতে আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি - সমালোচনার কিছু পেলে আপনি যতখুশি সমালোচনা করুন আমার লেখার, আমিই বরং তার আর কোন জবাব দিব না এখন থেকে। ভুল / সঠিক, আহত / অনাহত, ফেয়ার / আনফেয়ার যাইই অনুভব করি না কোন - সবকিছু একদম বেমালুম, স্পিকটি-নট মেনে নেব। নিজেকে কোন ভাবেই ডিফেণ্ড করার চেষ্টা করব না আর। চলবে?

****************************************

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার প্রথম মন্তব্যে করা একটি অভিযোগ দিয়েই শুরু করি। বাকীগুলো (যার কিছুটা অবান্তর, যেমন বকাঝকা) নিয়ে বলার ইচ্ছে করছে না।

আপনি বলেছেন আমি সমদৃষ্টি দেইনি। যেটি ঠিক নয়। এর আগেও আমি সম্ভবত আপনার পোস্টেও কপিরাইট উল্লেখ করার কথা বলেছি। এই মূর্হূর্তে মনে পড়ছে তারেক অণুর পোস্টেও আমি এটা উল্লেখ করেছি। তাছাড়া আরো কমপক্ষে দুই জন অতিথির লেখায় আমি একই মন্তব্য করেছি। হিমুর লেখা চুরি করে একটা পোস্টও দিয়েছিলাম কপিরাইট নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য (যেটি অনেকে পছন্দ করেনি)।

আপনি এমন ভাবে সূত্র উল্লেখ করেছেন যে সহজে কেউ দেখতে পারেনা। আমি জানিনা কতজন এটা দেখেছে। স্বীকার করছি আমার আরো খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা দরকার ছিলো কিন্তু যেখানে আপনার দায়ই বেশী সেখানে লঘু অপরাধে (!) আপনি আমাকে এত কিছু বললেন যে আমি বিস্মিত হয়েছি। উপরন্ত কোড প্রকাশ করা নিয়ে যা বললেন তার কোন দরকার ছিলনা।

আমি মডারেটর হলে সূত্র বিহীন লেখা প্রকাশই করতাম না। কিংবা প্রকাশ করলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সূত্র প্রদানের নিয়ম করে দিতাম। আমার সমালোচনায় স্পিকটি নট থাকতে হবে না, আপনি যা ইচ্ছে বলতে পারেন। আপনাকে কখনোই আমার মুখোমুখি হতে হবে না। সে সুযোগ নাই। আর তেমন সুযোগ থাকলেও আপনার মূল্যায়ন হবে আপনার লেখার মাধ্যমেই।

তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন সেই প্রত্যাশা করি। ধন্যবাদ।

জুন এর ছবি

পুরোটুকু পড়া হয়নি এখনো। ইটা দিয়ে গেলাম। কিন্তু একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুর ঘুর করছে। বরফে মাঝে মাঝে যেমন ধ্বস নেমে স্কিরত মানব সন্তান্দের নিজের করে নেয় তেমনটা কী এখানেও হয়? যদি লেখার বাকী অংশে এই ব্যাপারে বলা থাকে তবে আগেই ক্ষমাপ্রার্থী। দেঁতো হাসি ইটা রাইখ্যা গেলাম...

যদি ভাব কিনছ আমায় ভুল ভেবেছ...

মন মাঝি এর ছবি

হ্যাঁ, এক্সিডেন্ট হয়। সক্রিয় ডিউন বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে তার 'স্লিপ ফেস' ধ্বসের পর্যায়ে চলে আসে অনেক সময়। এই সময় এতে গাড়িতে ব্যাশিং করতে গেলে এক্সিডেন্ট হতে পারে হয়তো। তবে আমি ঠিক নিশ্চিত না এভাবেই সেটা হয় কিনা। তাছাড়া অনেকে খেলাচ্ছলে এর ভেতর দিয়ে টানেলিং-ও করার চেষ্টা করে। আনস্টেবল ডিউনের ক্ষেত্রে তখন ধ্বসে পড়ে চাপা দেয়ার সম্ভাবনা আছে। এভাবে একটা বাচ্চার মৃত্যুর ঘটনা কোথায় যেন পড়েছি। তাছাড়া 4WD-তে ডিউন-ব্যাশিং করতে গিয়ে বেশি স্টান্ট মারতে গেলে বা অদক্ষ ড্রাইভার হলে গাড়ি উলটে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ডিউন-বোর্ডিং বা স্লেজিং (নাকি স্লেডিং?)-এর ক্ষেত্রে উল্টে-টুল্টে গেলেও নরম বালু হলে মৃত্যু-টিত্যুর তেমন সম্ভাবনা নেই মনে হয়। জানি না ঠিক। তাছাড়া চোরাবালু থাকলেও হয়তো দুর্ঘটিনা ঘটতে পারে, তবে ডিউনের ক্ষেত্রে চোরাবালু মনে হয় খুবই বিরল ঘটনা। এর জন্যে ডিউনের নীচে পানি থাকা লাগবে। নিশ্চিত না। "মামি" ছবিটাতে এরকম একটা দৃশ্য আছে, তবে সিনেমার ঐ দৃশ্য কতটা বাস্তবসম্মত জানি না।

****************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।