ভোদাইচরিতমানস ০৫

মুখফোড় এর ছবি
লিখেছেন মুখফোড় (তারিখ: শনি, ০৫/০৪/২০০৮ - ১২:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

চালের দাম অগ্নিমূল্য হইবার পর হইতে আহারেবিহারে কিঞ্চিৎ সংবরণের পন্থা অবলম্বন করিয়াছি। প্রাতরাশে একটি কলা খাই এক টুকরা রুটি অবলম্বন করিয়া। পূর্বকালে দ্বিপ্রহরে থালে দ্বিতল ভাতের অট্টালিকা বানাইয়া মধ্যে একটি ঝোলের পুষ্করিণী বানাইয়া ভালোমতো মাখাইয়াজোকাইয়া আহার করিতাম, ঝোলের চিহ্ন কব্জি স্পর্শ করিতো, এখন ভাতের উচ্চতা অতিক্রম করিয়া ঝোল পাতের কিনারা স্পর্শ করে, উপর হইতে দেখিতে অনেকখানি জলোচ্ছ্বাসাক্রান্ত উড়ির চরের মতো লাগে দেখিতে। রাত্রিকালে দুইটি হাতে গড়া রুটি উত্তমরূপে শুঁকিয়া প্রাণপণে চর্বণপূর্বক গিলিয়া ফেলি। ঘ্রাণম অর্ধনম ভোজনম সূত্রানুসারে তিনটি রুটি আহার করা হয় তাহাতে।

ভোদাই একদিন এক টুকরা কেক খাইতে খাইতে আসিয়া কহিলো, "সে কী! ভাত খাইতেছ! তুমি কি মনুষ্য?"

আমি কোঁৎ করিয়া ভাতের লোকমাটি গিলিয়া কহিলাম, "ক্যানো হে, বাঙালির সন্তান হইয়া ভাত খাইবো না তো কী খাইবো?"

ভোদাই পকেট হইতে একটি নিউজপ্রিন্টের টুকরা বাহির করিয়া কহিলো, "আলু খাইতে হইবে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালিকে আলু খাইতে হইবে।"

আমি নিউজপ্রিন্টের টুকরাটি টানিয়া লইয়া পাঠ করিয়া দেখিলাম, কে এক কুলাঙ্গার কহিতেছে, ভাতের উপর হইতে চাপ কমাইবার উপলক্ষে সকলকে বেশি করিয়া আলু খাইতে হইবে।

এক গেলাস জলের সহিত যথাপরিমাণ থতমত খাইয়া কহিলাম, "বেশ। আজ হইতে আলুই খাইব।"

দেখিতে দেখিতে আলুর বাজারেও অগ্নিসংযোগ করিলো কে যেন। ধানু নিক্তিতে মাপিয়া দুইশো গ্রাম আলু সুসিদ্ধ করিয়া পাতে দিতে লাগিলো। শৈশব হইতে ভাত ভোজন করিয়া বড়টি হইয়াছি, আলু সিদ্ধ হইলে কী হইবে, রীতিমতো গলায় ঠেকিতে লাগিলো।

ভোদাই একদিন এক টুকরা তরমুজ চিবাইতে চিবাইতে আসিয়া আমাকে আলু ভক্ষণরত অবস্থায় দেখিয়া নভোমন্ডল হইতে ভূপাতিত হইলো। সে কহিলো, "তুমি তো আচ্ছা দুরাচার হে! আলু খাইতেছ!"

আমি ক্রোধ সংবরণ করিয়া কহিলাম, "ওহে লিঙ্গপুত্র, তুমিই তো কিয়দকাল পূর্বে আমার পাত হইতে ভাত হঠাইয়া আলু চালু করিয়া দিয়া গেলে! আজ তুমিই আলুর দোষ ধরিতেছ?"

ভোদাই পকেট হইতে পূর্বানুরূপ একটি নিউজপ্রিন্ট কাগজ বাহির করিয়া কহিলো, "ভূট্টা খাইতে হইবে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালিকে আজ ভুট্টা খাইতে হইবে।"

আমি বিরসবদনে কহিলাম, "ভুট্টা তো বায়োস্কোপদর্শনের পাশাপাশি পূর্বে বিলক্ষন খাইতাম। এখন তো বায়োস্কোপ দেখার পয়সা নাই।"

ভোদাই কহিলো, "বিনা বায়োস্কোপেই খাও। আমি শুনিয়াছি ধনী লোকে এখন বায়োস্কোপ দেখিবার পাশাপাশি ভাত খায়।"

আলু ছাড়িয়া ভুট্টার দানা ধরিলাম। ধারণা করিয়াছিলাম, মুরগীর খাবার, অতটা শক্ত হইবে না, কিন্তু কয়েকদিন খাইবার পর বুঝিলাম, মুরগীকে তাহার ক্ষুদ্র জীবনে কত অত্যাচার সহ্য করিতে হয়।

ভোদাই কিন্তু ছাড়িলো না। কখনো আমড়া, কখনো ডাবলি মটর চিবাইতে চিবাইতে আসিয়া একে একে আমাকে জোয়ার, বাজরা, সর্গুম ... সবই খাওয়াইয়া গেলো। দেশপ্রেমের চাপে পড়িয়া খাইলাম সকলই।

অতঃপর একদিন ভোদাই আইসক্রীম চাটিতে চাটিতে আসিয়া উপস্থিত। আমি সর্গুমসিদ্ধ ভক্ষণ ছাড়িয়া অগ্নিদৃষ্টিতে তাহার দিকে তাকাইয়া পিরানের আস্তিন গুটাইলাম।

"কচু।" ভোদাই আইসক্রীমের কাঠিটি চুষিতে চুষিতে কহিলো। "দেশপ্রেমিক বাঙালিকে আজ কচু খাইতে হইবে।"

নিউজপ্রিন্টটি কাড়িয়া লইয়া দুই টুকরা করিলাম। ধানুকে বলিলাম, তীক্ষ্ন দেখিয়া কোন অস্ত্র যোগাড় করিতে।

ভোদাই কহিলো, "শুনিয়াছি কচু কাটিতে কাটিতে লোকে ডাকাত বনিয়া যায়। সাবধানে কাটিও, কোনরূপ বদভ্যাস যেন আবার না জন্মায়!"


মন্তব্য

সৌরভ এর ছবি

মুখারে, এতোদিন পরে বনবাস শেষ হইলো?
শেষের প্যারা দুইটা সেইরকম।


আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারন হয়েছে লেখাটা!! এখনই শুরু না করলে একদিন ভোদাই আসিয়া বলিবে "নিউজ পিন্ট এ আসিয়াছে আমাদের আর এইসব কচু-ঘেচু ভক্ষন করিয়া কষ্ট করিয়া বাঁচিয়া থাকিতে হইবে না, তারা দয়া করিয়াছেন (!!) এখন আমাদের ইহধাম ত্যাগ করিতে হইবে"।

কল্পনা আক্তার
কল্পনাআক্তার@হটমেইল.কম

.....................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

জাহিদ হোসেন এর ছবি

অসাধারণ! একদম অসাধারণ!

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

উদাস এর ছবি

চমৎকার। বেশ ভালো লগলো।

অমিত এর ছবি

মুখারে

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

মজা পেলাম পড়ে। আসুন, আমরা সবাই আলুর দোষে দোষান্বিত হই চোখ টিপি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

স্বপ্নাহত এর ছবি

পুরা সেইরকম... দেঁতো হাসি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

মুখা, মার ডালারে....
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ভিনসেন্ট মুখফোড় ।
xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কাঁচকলা খাওয়াটা বাদ থেকে গেলো!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অতিথি লেখক এর ছবি

হা...হা......হাসিতে হাসিতে এখন গড়াগড়ি খাহিতেছি...।
যাহা বোধ হইতেছে তাহাতে অচিরেই কেবল গড়াগড়ি খাইয়াই দেশপ্রেম প্রদর্শনের উপদেশ আসিতেছে মনে হয়!!

কালবেলা

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

কালে কালে আরো কত কি যে দেখতে হবে !

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অনেকদিন পরে প্রিয় মুখফোড় ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।