জয়তু ভুট্টা, ভুট্টা চাষের ক্রাশ প্রোগ্রাম কি নেয়া যায়?

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: বুধ, ২৬/১২/২০০৭ - ১০:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(আকস্মিক চিন্তাপ্রসূত পোস্ট, একেবারেই অমূলক হবারও সম্ভাবনা আছে। কাজই, সাবধানে পইড়েন হো হো হো

দুপুরের খাবারটা খেতে গিয়ে হোঁচট খেলাম, সালাদ বারের চেহারা দেখে। সাধারণত সেদ্ধ করা ভুট্টা একটা আইটেম থকে, কিন্তু আজ দেখলাম ভুট্টা শেষ! তলায় পড়ে থাকা অল্প যেটুকু ছিল, কেঁচেকুঁচে সেটাই নিয়ে কোনমতে ভুট্টা খাওয়ার সাধ মিটল।
কি হয়েছে ভুট্টার হঠাৎ?
কয়েকদিন আগে পত্রিকায় পড়া খবরটা মনে পড়ে গেল।

অনেকেই হয়ত জানেন ইথানল জ্বালানীর কথা, যার মূল উপাদান ভুট্টা। খনিজ তেলের একচেটিয়া দামবাড়ার এবং মজুত ফুরিয়ে আসার সাথেসাথে মানুষকে এখন খুঁজে বের করতে হচ্ছে নতুন ধরনের জ্বালানীর কথা, যেখানে ইথানল জ্বালানী একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠছে দিনকে দিক। যুক্তরাজ্যে অলরেডি ইথানল ইন্ডাস্ট্রি খুব ভাল বাজার করে নিচ্ছে, আমেরিকাতেও। এই ইথানল জ্বালানীর একটি মূল উপাদান হলো ভুট্টা। আমি জ্বালানী সম্পর্কে ততটা জানিনা, তবে খবর পড়ে যা মনে হলো, ইথানল জ্বালানী তৈরীকারীদের এখন মূল ফোকাসটা ভুট্টার উপরেই। হ্যাঁ, আমেরিকার কয়েকটি জায়গায় ভুট্টাচালিত স্টোভের ব্যবহারও শুরু হয়ে গেছে, যাকে বলা হয় "কর্ণ স্টোভ"। দাম নাকি হাজার ডলারের উপরে!

হুমম, ভুট্টা বূম শুরু হয়ে গেছে পৃথিবীতে, জয়তু ভুট্টা। সাথে সাথে যেটা হয়েছে, সালাদের পাত্রে পড়ে থাকা ভুট্টা এখন জাতে উঠেছে। কারণ, আপনার গাড়ী চালাবে, ভাবতে পারেন? তার কদর এখন দ্বিমুখী, খাবার টেবিলে এবং গাড়ীর ট্যাংকে। স্বভাবতই টানাটানি শুরু, আর ফলাফল হলো খাবার টেবিলে ভুট্টার পরিমাণ কমে গেছে। আমাকেও কেঁচেকুঁচে খেতে হচ্ছে।

তো যেটা আশা করা যাচ্ছে, তা হলো, আগামী সিজনে ভুট্টার চাষ বেড়ে যাবে। এখন কথাটা হলো, কারা চাষ করবে? সম্ভবত পৃথিবীজুড়ে সচেতন চাষীরা, যাদের জমিতে ভাল ভুট্টাভবার সম্ভাবনা আছে। কারণ, আর্লি বার্ড ক্যাচেস ফ্লাই।

কথা হলো, এই খুব প্রাথমিক স্টেজে আমরা কি একটা "আর্লি ঈগল" হতে পারি কিনা? সরকারীভাবে সারাদেশে ভুট্টাচাষের ব্যাপক ক্রাশ প্রোগ্রাম নেয়া যায় কিনা? যারা কৃষিসম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখেন, অথবা যাদের পরিচিত কৃষি বিশেষজ্ঞ আছেন, তারা জানান, বাংলাদেশের মাটি-জল-হাওয়া ভুট্টা চাষে কতটা উপযোগী।

যদি ভালমতো উপযোগী হয়, তাহলে সরকারকে আহবান জানান ভুট্টাচাষের ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিতে। সারাদেশ ভুট্টায় ভরে ফেলি, জয়তু ভুট্টা।


মন্তব্য

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

এই সমস্যাটা অলরেডি কিছুটা দেখা দিয়েছে ... কিন্তু মজার কথা হলো সবাই ভুট্টা চাষ শুরু করলে ভুট্টার দাম কমে যাবে, কাজেই সবাই হয়ত শুরু করবেনা ... তবে পৃথিবীজুড়ে কৃষকরা হিসেব করা শুরু করে দিয়েছেন কোথায় কতটুকু হচ্ছে, কি করা দরকার এসব নিয়ে ,,,আমি জানিনা রাস্ট্রীয় পর্যায়ে কেউ পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা ,,, তবে আগামী কয়েকবছর ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা হবে এটা কনফার্ম ,,,সেখানেই ভাবছি, বাংলাদেশ রাস্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে আর্লি বার্ড হবে কিনা ,,,,
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আপনার প্রস্তাব ভালো । তবে অরূপের কথার সাথেও একমত ।
গরীব দেশে এখনই জ্বালানির জন্য ভুট্টা চাষ হয়তো ঠিক হবে না । কারন ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত করে জ্বালানি করার যে টেকনলজি সেটা কতোটুকু সহজলভ্য হবে সেটাও ভাবতে হবে ।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

হুমম, বাংলাদেশে ভুট্টা থেকে জ্বালানী তৈরি এখনও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ,,,, তবে যারা তৈরি করা শুরু করে দিয়েছে, তাদের ভুট্টার চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ স্পেশাল কোন ক্রাশ প্রোগ্রাম নিলে পৃথিবীর আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে ...
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

শামীম এর ছবি

রান্নাঘরের বর্জ্য তেল দিয়ে ডিজেল গাড়ী চলছে বেশ কিছু জায়গায়। এ ব্যাপারে কি কেউ বিস্তারিত জানেন?

এটা আমার কাছে ভালোতর মনে হয়। কারণ: প্রথমত... এই বর্জ্য তেল সুয়্যারে যাচ্ছে না .... দ্বিতীয়ত এগুলো গাড়ী চালাচ্ছে মোটামুটি বিনাখরচে... আর তৃতীয়ত এটা দিয়ে চালানো গাড়ীর ধোঁয়া পরিবেশ দূষণ করে না বললেই চলে, ধোঁয়ার ঘ্রান বরঞ্চ ডিজেলের ধোঁয়ার চেয়ে অনেক ভালো।

সর্বোপরি... এটাতে ভুট্টা বা অন্য কোন খাদ্যশষ্যের উপরে হামলা করতে হবে না দেঁতো হাসি

এ বিষয়ে অনলাইনে অনেক খবর এবং ভিডিও পাবেন। এ প্রসঙ্গে বিবিসিতে প্রকাশিত একটা মজার খবর
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

বস্, খবর কি আপনার?
ঠিক, ভুট্টা আলটিমেইট সমাধান না ,,, কিন্তু এখন যখন বুমে চলে এসেছে, আমরা কাঁচামাল সাপ্লাইয়ের বিশাল ব্যাবস্থা নিতে পারি ,,, কয়েকবছর ভাল রপ্তানী করা যাবে ,,, তবে খুব বড়সড়ভাবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দরকার
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

শামীম এর ছবি

খবর খারাপ নয়।

এই উত্তরটা অন্ততপক্ষে ৬ ঘন্টা আগে পোস্ট করতে গিয়ে নেটওয়র্ক ডাউন পেয়েছিলাম। ইতিমধ্যেই অর্থবহ দুইটি মতামত এসেছে।
-----
রপ্তানীর চেয়ে ভালো হয় যদি তা দেশেই ব্যবহৃত হয়ে জ্বালানী তেল আমদানীর খরচ কমিয়ে দিতে পারে। তাহলে আর কয়েক বছর না ... এটা অনেকদিন যাবৎই চালানো যাবে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে .. এগুলো পূণর্ব্যবহারযোগ্য (renewable) শক্তি। তাছাড়া কার্বন নির্গমণ কমাতে পারলে UNEP কার্বন ফান্ড থেকে ভর্তূকীও পাওয়া যাবে।

ইন্দোনেশিয়াতে এমন বায়োফুয়েল প্রকল্প রয়েছে। এ বিষয়ে ইত্তেফাকের রিপোর্ট (ইউনিকোড বাংলাতে রূপান্তরিত)

জাপানও ব্রাজিল থেকে বায়োফুয়েল আমদানী করবে/করছে। ইত্তেফাকের রিপোর্ট।

ওমানে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ইত্তেফাক রিপোর্ট

সম্প্রতি বাংলাদেশেও এ ব্যাপারে সীমিত আকারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইত্তেফাক রিপোর্ট
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

দুর্দান্ত এর ছবি

ভুট্টা, গম, চাল, আখ এইসবে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্নতা যতটা না জ্বালানির জন্য দরকার, তার চাইতেও বেশী দরকার আগামীতে অনিবার্য খাদ্যসশ্যের ঘাটতি মেটাতে।
ভুট্টা, গম, চাল, আখ এর চিনি/স্টার্চ নির্ভর জ্বালানি যাকে 1st generation এর জৈবজ্বালানী বলা হচ্ছে, তার দৌড় কিন্তু ৩-৫ বছর, এর পর এই সব সামগ্রীর উচ্চমুল্য আর পরিবেশের উপর বিরূপ চাপ (কার্বন ফূটপ্রিন্ট) ইত্যাদির লাভ ক্ষতির হিসাবে আবার ফসিল জ্বালানির কাছে এরা হের যাবে।
বাংলাদেশের যেখানে লাভ, তা হল 2ndgeneration এর জৈবজ্বালানীতে 'আর্লি ঈগল' হওয়ার পাঁয়তারা করা। এই ধরনের জৈবজ্বালানী তৈরি হয় অখাদ্য জৈবদ্রব্যাদি (non-food biomass) থেকে, মানে ঘাস-বিচালী, গোবর, মানুষের গু, তুলাবিজের তেল, ভেরেন্ডা, জ্যন্ত্রোপা ইত্যাদি থেকে।
ব্যবহৃত ভোজ্যতেল পরিশোধনের পর ইঞ্জিন ব্যবহারোপযোগি করতে এর মধে কিছু মাল মশলা (additive) ঢালতে হয়। আর ওখানেই যত গোল। বাংলাদেশের মত গরিব দেশে সস্তার মাল মশলার মধ্যে MTBE থাকবেই, ভুগর্ভস্থ পানি দুষনে এই বস্তুর নাম আরসেনিকের পর পরই আসে। এই additive এর ঝামেলাটা বাগে রাখতে পারলে, এইটা কিন্তু ঢাকা চট্টগ্রামের মত বড় শহরের জন্য একটা বেশ ভাল উদ্যোগ হতে পারে।

হিমু এর ছবি

ম্যাকডোনাল্ডস বা বার্গার কিঙের মতো চেইন ফুড বিক্রেতারা তাদের রান্নাঘরের বাতিল তেল জৈবজ্বালানির কাজে লাগাচ্ছে। তবে আমি যতদূর জানতাম এই তেলের কার্বন রেসিডিউ একটু বেশি, ফলে গাড়ির এঞ্জিন আরেকটু ঘন ঘন মেইনটেন্যান্সে পাঠাতে হবে। মোটের ওপর খরচ খুব একটা কমবে না।

আর বিশ্বব্যাপী বায়োপেট্রলের বুম কিন্তু মোটেও আশাব্যঞ্জক না। ভূট্টার পাশাপাশি ইথানলের আরেক কাঁচামাল হচ্ছে আখ, ব্রাজিলে এই আখ থেকে উৎপন্ন ইথানল ফসিল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভবিষ্যতে চিনির দাম বাড়বে। ভূট্টার ইথানলের ব্যাপক চাহিদা হলে তার ব্যাপক সরবরাহের দিকেও ঝোঁক বাড়বে, তখন কিন্তু সীমিত চাষের জমিতে লোকজন ধান আর গম না ফলিয়ে ভূট্টা ফলাবে (যে কারণে রংপুরের দরিদ্র চাষীরা তামাক চাষে আগ্রহী, কারণ তামাক চাষে লাভ বেশি)। খাবার তখন আসবে কোত্থেকে?

আমাদের দেশে খুব টায়ে টায়ে খাদ্য ভারসাম্য রক্ষা করা হয় বলেই জানি। যে হারে পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ছে, ভবিষ্যতে চীন আর ভিয়েতনাম যদি কোন কারণে চালের রপ্তানি একটু কমিয়ে দেয়, তাহলেই আমরা একটা খাদ্য ঘাটতির মুখোমুখি হয়ে পড়তে পারি। বাংলাদেশের সীমিত আবাদী জমিকে রীতিমতো চাবুক মেরে খাদ্য জোটানো হচ্ছে বলেই জানি, সেখানে যদি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পাশাপাশি শস্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়, অর্থাৎ খাদ্যশস্যের জায়গা দখল করে নেয় কোন অর্থকরী শস্য, তাহলে খাদ্যশস্যের দাম পলকে বেড়ে যাবে।

ভুলে যাবেন না, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের দক্ষিণাংশে পানির লবণাক্ততা বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমরা প্রচুর আবাদী জমি হারাবো, মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে সরে আসবে উত্তরে, সেখানেও চাষের জমি কমবে।

এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমিয়ে ইথানলের খোরাক যোগানোর চর্চা বাংলাদেশের জন্য সঠিক হবে না। তবে সীমিত আকারে যমুনার চরাঞ্চলে কিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে, সেখানে ভূট্টা চাষ হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হুম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।