রোজার কথা - ১

জ্বিনের বাদশা এর ছবি
লিখেছেন জ্বিনের বাদশা (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/০৯/২০০৮ - ৪:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রোজা

আবারও রোজা শুরু হয়ে গেলো, শুরু হয়ে গেলো কি, অলরেডী চতুর্থ রোজা পার করে ফেললাম। ক'দিন পর গুনতে হবে বাকী আছে কয়টা! গতবার সম্ভবতঃ ব্লগার শ্যাজা লিখেছিলেন রোজার মাসের স্মৃতি নিয়ে, তখনই ভাবছিলাম কিছু লিখি। লেখা হয়ে ওঠেনা, কতকিছু নিয়ে লিখব লিখব ভাবি, কিছুই লেখা হয়ে ওঠেনা। আলসেমী, সময়ের অভাব, আরো কত কত কারণ! এবার ভাবছি লিখেই ফিলি। জানিনা কি লিখব, রোজার উপোসে যা মাথায় আসে তাইতো লিখতে হবে।

আমাদের সেসময়ে ছোটবয়েসে রোজা রাখলে পেপারে "অমুক সোনামণি মাত্র অত বছর বয়সে রোজা রেখেছে" টাইপের খবর আসার সুযোগ ছিলোনা, তাও বাচ্চাদের রোজা রাখতে চাওয়ার হিড়িক সেযুগেও কিছু কম ছিলোনা। সবারই মনে হয় ছোটবেলায় বাবা-মা বা বাসার অন্যদের দেখাদেখি "রোজা রাখতে চাই, রাখতে চাই দিতে হবে" টাইপের আন্দোলন করার অভিজ্ঞতা আছে। সবার গল্পই মোটামুটি একই রকম, তাও আমরা সবাই অন্যদের কাছে সেই গল্প করি। অন্যেরটা শুনি বা না শুনি, নিজেরটা বলে ছাড়ি। কারণ, ছোটবেলার খুব এ্যাডভেঞ্চারাস কিছু অভিজ্ঞতার একটি হলো মনে হয় সেই প্রথম রোজা রাখা; খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে, গ্লাসের ভেতর টলটল করা পানি দেখা যাচ্ছে, রান্নাঘর থেকে ঘ্রাণ বের হয়ে আসছে, বড়মামা জিলিপি বা দই নিয়ে এসেছে, সন্ধ্যার আগে আগে বাবা বরফ নিয়ে এসেছে -- এতসব বাঁধা অতিক্রম করে শেষমেষ সন্ধ্যের সাইরেণ বাজার পর বিজয়ীর হাসি হেসে খাবার মুখে দেয়া -- এটা বেশ বড় রকমের এ্যাডভেঞ্চারই!

আমি প্রথম রোজা রেখেছিলাম পাঁচ বছর বয়েসে। এমনিতে খুব দূর্বল ছিলাম, ছোটখাটো আর কাঠির মতো শুকনো (আমার বর্তমান চেহারা দেখে যে কারো পক্ষে এটা মেনে নেয়া অবশ্য বেশ কঠিন হতে পারে)। তারওপর জন্মানোর পর অলরেডী বেশ কয়েকটা ফাঁড়া কাটিয়ে মানে বেশ কবার অজ্ঞান-ট্যান হয়ে "ও রোজা রাখবে কি!" এর তকমাটা খুব ভালোভাবেই গায়ে লাগিয়ে ফেলেছিলাম। তারপরও রোজা কিভাবে রাখতে পারলাম সেটা ভাবলে আজো অজান্তেই মুচকি হেসে ফেলি।

১৯৮২ সালের কথা, সেদিন সন্ধ্যায় মেজোমামার বিদেশ যাবার কথা। এখন আর সেই কালচার আছে কিনা জানিনা, সেই আশির শুরুতে কারো বিদেশ যাওয়া ছিলো বিরাট ব্যাপার, বিশেষ করে আমাদের নোয়াখালীর লোকদের জন্য। বিদেশে যেতে পারাটা যতোনা বড় ব্যাপার, তার চেয়ে এলাহী ব্যাপার হয়ে যেতো তাকে বিদায় জানানোর আয়োজনটা। বিদেশগামী লোকটার সাথে জীবনে দেখাও হয়নি এমন লোকদেরও দেখা যেতো বিদায় দিতে এসে জড়ো হয়েছে, কান্নাকাটি করছে (এটা অবশ্য একটু বেশী বলে ফেললাম মনে হয়)। তো, মামাকে বিদায় জানানোর জন্যও যথারীতি ঢাকা শহরে আমাদের যত আত্মীয়স্বজন আছে সবাই যেন বাসায় এসে হামলে পড়লো। সারা বাসা জুড়ে একটা উৎসব উৎসব ভাব। রাত দশটায় ফ্লাইট বলে সন্ধ্যার পরপরই আমরা সবাই মিলে বের হয়ে গেলাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।

এয়ারপোর্টে গিয়ে কি কি ঘটলো ভালো মনে নেই, তবে এটুকু মনে আছে যে কোন এক ঘাপলার কারণে মামাদের ফ্লাইটটা কয়েকদিন পিছিয়ে গেলো। পেছালো তো পেছালোই, সেটা জানা গেলো অনেক পরে, রাত দশটা এগারোটার দিকে। মানে আবার বিশালবাহিনী নিয়ে বাসায় প্রত্যাবর্তন! বাসায় মনে হয় সেদিন বিশ-পঁচিশজন মানুষ ছিলেন, সারা বাসাজুড়ে হট্টগোল! আমাকে আর পায় কে? এমন দিনে ঘুমটুম সব বাদ দিয়ে আমি একবার এদের দলে গিয়ে কিছুক্ষণ গল্পসল্প শুনি, আবার ওদের দলে যাই। রোজা শেষ হবার আগেই যেন ঈদ চলে আসল। শুধু আমি না, আমাদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে মনে হয় শুধু পিচ্চিটা ছাড়া আর সবাই জেগে ছিলাম। এভাবে ফুর্তির মধ্যেই কোনফাঁকে রাত তিনটা বেজে গেলো টেরও পেলামনা।

তিনটার দিকে বড়আপা হঠাৎ রেডিওটা ছাড়ল। সম্ভবতঃ মুরুব্বীরা কেউ বলেছিলেন ছাড়তে। রেডিও ছাড়ার সাথেসাথেই যে সুরটা কানে আসল, তাতে আমি পুরোপুরি মুগ্ধ হয়ে গেলাম! অসম্ভব সুন্দর সুরের একটা গান, সম্ভবতঃ হামদ, গানটা আমি পরেও অনেক শুনেছি, এবং আমার ধারনা যে লোকটি গেয়েছেন তাঁর মনপ্রাণ সঁপে দিয়ে গাওয়ার কারণেই গানটা এমন শুনিয়েছে। গানের কলির কিছুই মনে নেই, শুধু মনে আছে প্রথম দুলাইনে সুর করে "আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহু, আল্লাহ" বলে গায়। মুগ্ধ হয়ে গান তো শুনলামই, গান শেষ হলে বড় আপাকে "আবার ছাড়ো, ঐ গানটা" বলে বেশ জালালামও। সেদিনই রেডিওতে আরেকটা গান শুনেছিলাম, এটা অত ভালো লাগেনি, কিন্তু কেন জানি এখনও মনে আছে। গানটা ছিলো এরকম, "আল্লাহু, আল্লাহু, তুমি জাল্লে জালালু, শেষ করাতো যায়না কেন তোমার গুণগান"। এ গানটার "জাল্লেজালালু"র মানে কি এটা নিয়ে অনেকদিন মনে খচখচ করত, অবশ্য এখনও জানিনা।

সেরাতের মুগ্ধতা সেখানেই শেষ না। কিছুক্ষণ পর শুনি বাইরের থেকে আওয়াজ আসছে, গমগমে ভরাট গলায় একদল ছেলে গাইছে, "তোমরা ওঠো মমিন সকলে, ঘুমিয়ে থেকোনারে, সেহেরীর সম চলে যায়, এই রাত খোদাকে ডাকার"। পাঠক বলুনতো দেখি এটা কোন গানের সুর নকল করে গাওয়া হয়েছে? হিন্টস, সাবিনা ইয়াসমিনের হিট একটা গান। তো, রেডিওর গানের চেয়ে আরো কয়েকগুন বেশী মুগ্ধ হলাম আমি রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ভেসে আসা এই গান শুনে। সেই মুগ্ধতা অনেকদিন কাটেনি, অনেক বড় হয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমি শুধু ভোররাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে বের হয়ে আসা সেই গান শোনার জন্যই সময়মতো জেগে যেতাম, অনেকদিন এমনও হয়েছে, গান শুনে আবার ঘুমিয়ে পড়েছি। হয়ত নিজের চোখে দেখা একটা হত্যাকান্ড না হলে সে মুগ্ধতা আরো অনেকদিন ধরে রাখার সুযোগ হতো, তবে সে গল্প আজ করবনা। আজ আবার ফিরি সেই প্রথম গান শোনার রাতে।

ভোররাতে সম্ভবতঃ একটু টেনশনে ছিলাম, সেহরী খেতে দেয় কিনা সেটা নিয়ে। কিন্তু আমার সব ভয় দূর হয়ে গেল যখন মা নিজেই আমাকে জাপতে ধরে বেশ কয়েক ন্যালা ভাত খাইয়ে দিলো, আবার খানিক পরে বাবাও দেখলাম মিষ্টিআমের মোরব্বার সাথে দুধমাখা ভাত সাধছে। পেটপুরে খেয়ে দেয়ে লাফাতে লাগলাম, "কালকে রোজা রাখবো, কালকে রোজা রাখবো।" কেউ পাত্তা দেয়নি অথবা অন্য যেকোন কারণেই হোক, খুব একটা বাঁধা আসেনি সেসময়। এমনও হতে পারে যে, যথাযথ কর্তৃপক্ষ মানে মা তখন ভেবেছে যে "সকালে উঠে খিদে পেলেই তো রোজার কথা ভুলে যাবে।"

কিন্তু মায়ের যাবতীয় প্রেডিকশনকে মিথ্যা করে দিয়ে রপদিন সকালে আমাকে আর বাগে পাওয়া গেলনা। এখনও মনে আছে, সামনের রুমে অনেক লোকজন ছিলো, সেই সুযোগে সেরুমের খাটের নীচে অনেকক্ষণ লুকিয়ে ছিলাম, যাতে মা খুঁজে না পায়। এরমধ্যে সম্ভবতঃ মেঝোখালা খেজুর নিয়ে আসলেন, সেই খেজুর দেখে যা লোভ লাগলো! আজো যে আমি খেজুর এত পছন্দ করি তার পেছনে সম্ভবতঃ সেই দিনের সেই না পাবার কষ্টটা কাজ করে। দুপুরে গোসল টোসল করে হৈ হৈ রৈ রৈ করে নামাজ পড়ে আসলাম। সেই ফিরে আসার পর টের পেলাম খিদে কাহাকে বলে। বেশ কয়েকবার মনে হচ্ছিলো মাকে গিয়ে চুপিচুপি খাবার দিতে বলি, আবার আত্মসম্মানবোধেও লাগল। কারণ, আপারাও সবাই তখন পিচ্চি পিচ্চি আর আমি যেহেতু সেদিনই জীবনে প্রথম রোজা রাখছি তাই সবার আগ্রহের একটা কেন্দ্রতেও পরিণত হয়ে গেছি। এমন অবস্থায় তো হাল ছেড়ে দেয়া যায়না। দুপুরে মার দেখানো অনেক রকম খাবারদাবারের লোভ এড়িয়ে কোনভাবে পার করে দিলাম।

বিকেলে বাবা অফিস থেকে এলে বেশ খানিকক্ষণ আহ্লাদও করলাম, আমার দাবী অনুযায়ী সেদিন বেশী করে বরফ আনা হলো, স্পেশাল জিলিপী আনা হলো। বিকেলের ইফতারীর আয়োজন দেখতে দেখতে এতই ব্যস্ত হয়ে গেলাম যে রোজার কষ্টের কথাও ভুলে গেলাম মনে হয়। তবে বেশ কাহিল হয়ে পড়েছিলাম, কারণ এটা মনে আছে সন্ধ্যার কিছু আগে সেই যে খাটের উপর গিয়ে গেঁড়ে বসলাম, আর নামিনি। মনে তখন ভীষন রোমাঞ্চ, আর খানিক পরেই তো খেতে পারবো; তবে তখন খেতে পারার চেয়েও বড় আনন্দ হলো আর খানিক পরেই তো আমার রোজা রাখা হয়ে যাবে! কি সাংঘাতিক কথা!!

দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে এলো, আর পাঁচ দশ মিনিট আছে। একগ্লাস লেবুর শরবত, একটা প্লেটে শসা, ছোলাভাজা, পিয়াজু আর মুড়ি (এটা আমাদের বাসার চিরন্তন ইফতার) নিয়ে বাবার সামনাসামনি খাটে বসে আছি আমি। ঠিক তখনই অঘটনটা ঘটলো! কি অঘটন সেটা আমার আর মনে নেই, কারণ ইফতারের কয়েকমিনিট আগেই আমি যথারীতি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম (যথারীতি বলছি কারণ ছোটবেলায় এই কাজটার জন্য আমি বিখ্যাত ছিলাম, অন্ততঃ দশবার জ্ঞান হারিয়েছি, একবার হারিয়েছি মোড়ার ওপর লাউ তুলতে গিয়ে লাউসহ ধপাস করে পড়ে)।

তারপরের কথা আর আমার মনে নাই, শুধু মনে আছে পাঁচ দশ মিনিট পর যখন জাগলাম, তখন খালি জিজ্ঞেস করছিলাম সাইরেন দিয়ে ফেলেছে কিনা। যখন জানলাম সাইরেন দিয়ে ফেলেছে, মনটা এতো খারাপ হলো! তবে তারচেয়েও আরো চমকে গেলাম যখনজানলাম আমার মুখে পানি দিয়ে রোজা ভাঙানো হয়েছে। রোজাটা কি পুরো করতে পারলাম? জিজ্ঞেস করতেই বাবা-মা সমস্বরে (সম্ভবতঃ) বললেন, "অবশ্যই, অবশ্যই"।

তারপর অনেকদিন মাকে জালিয়েছি শুধু এটা জানার জন্য যে আসলেই সেদিন রোজাটা পুরো রাখতে পেরেছিলাম কিনা। ছোটবেলায় মা সবসময় ঐ প্রশ্নের জবাবে বলত, "কতবার বলবো? রেখেছিস তো!!"

তবে এখন জিজ্ঞেস করলে কিছু বলেনা, খালি মুখ টিপে হাসে।

(চলবে?)


মন্তব্য

রাফি এর ছবি

খালি খিদা লাগে.... আর বাকি ১০০ মিনিট।
লেখা খাইলাম... রোজার ক্ষতি হইল কিনা আল্লাহই জানে।

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমি ইফতার শেষে গাঁট হয়ে লিখতে বসছি চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

গৌতম এর ছবি

রোজায় জ্ঞানের ক্ষুধা বাড়লেও কোনো ক্ষতি নেই। বরং লাভ আছে। আক্ষরিক অর্থে সামলাতে হবে শুধু পেট আর মুখটাকে।

ভাই ও বোনেরা, আমি কি ঠিক বললাম?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ব্লগস্পট ব্লগ ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

বেড়ে বলেছেন চলুক
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

মুশফিকা মুমু এর ছবি

এত্ত সুইট লাগল, খুব সুন্দর লিখেছেন হাসি
হামদ নাথে এ আমার বেশ কয়েকটা প্রিয় আছে কারণ ছোটবেলায় অনেক হামদনাথের কম্পিটিশন করেছি, গানগুল হল "আল্লাহ আমার প্রভু আমার নাহি নাহি ভয়", "আমি যদি আরবে হতাম মদিনারই পথ", "হে খোদা দয়াময় রাহমানিররাহিম", "ইয়া মোহাম্মাদ বেহেশত হতে খোদায় পাওয়ার পথ দেখাও" হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আপনার কমেন্ট পড়ে অনেক পুরোনো কথা মনে পড়ে গেলো ,,, বিশেষ করে "ইয়া মোহাম্মাদ বেহেশত হতে খোদায় পাওয়ার পথ দেখাও" -- এই গানটা রেডিওতে এত বেশী শুনতাম !!খুব ভালো লাগত

সেই তুলনায় বিটিভি'র চয়েস ভালোনা, "দে পানাহ" গানটা এরা ইফতারের সময় জোর করে শোনাবেই চোখ টিপি ,,,আমরা যখন নাইন-টেনে পড়তাম, মানে যখনএকটু সেয়ানা হয়ে উঠেছিলাম চোখ টিপি, তখন ইফতারের আগে আগে এই গানটাকে প্যারোডি করে গাইতাম, "দে খানা ...." চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হাহাহা প্যারোডিটা ভালই চোখ টিপি
আমার রোজার কথা বলতে তখন ভুলে গেসিলাম, আমারটাও অনেকটা এরকম পরিবর্তনশিলের মত টুইস্ট ছারা, তবে একটা কথা আমার খুব মনেপরে, আমার ছোটমামা তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ত, রোজার সময় আমাদের বাসায় বেড়াতে আসত, প্রচন্ড আদর করত আবার সব সময় আমার পিছনে লেগেও থাকত, আমি টয়লেটে গেলেই বলত ঐযে টয়লেটে লুকায়ে পানি খেয়ে আসছে, আমি যত বলতাম না আমি খাইনি শুধু মুখ ধুয়েছি উনি তত বলত না না খাইস তোমার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে .... যতখন না আমি কান্নাকাটি শুরু করতাম খাইছে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

হা হা হা হাসি
আমাকে আপারা চান্স পাইলেই এটা নিয়ে খেপাতো ,,, আর একবার রান্নাঘরে ঢুকে খেয়েও ফেলেছিলাম চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

পরিবর্তনশীল এর ছবি

মুমু আপার বাসায় বলতে গেলে খুবই সুইট করে লিখেছেন। আমার অভিজ্ঞতাও বলতে গেলে একই রকম। তবে আপনার ফার্স্ট রোজার মত লাস্টে এত দারুণ একটা টুইস্ট ছিলনা। হাসি
--------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

পরিবর্তনশীল এর ছবি

ভাষায় লিখতে গিয়া বাসায় লিইখা ফেলছি। খিদায় পাগল হইয়া গেলাম নাকি?
আরেকটা কথা কইতে ভুলে গেছি।

লেখা চলবে- অবশ্যই।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আমিও বলতে ভুলে গেলাম, লেখা চলবে।
আর তানভীর ভাইয়ের লেখা পড়ে মনেপড়ল, আমিও অনেক কষ্টে চিল্লাচিল্লি করে ৩টা রোজা রাখার পার্মিশন পেতাম প্রথম, সাতাশ রোজা আর শেষ রোজা। আর বান্ধবিদের মাঝে কম্পিটিশনও চলত কে কত বেশি রাখল খাইছে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ
ইফতার খেয়ে কি একটু দিল ঠান্ডা হলো? চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

তানভীর এর ছবি

একটু আগে সেহরি খেয়ে লেখাটা পড়লাম। হাসি

ছোটবেলায় রোজার স্পেশাল কিছু তেমন মনে পড়ছে না। তবে 'রোজা রাখতে চাই, দিতে হবে' টাইপ আন্দোলন বাসায় আমিও করেছি। সেটা সামলানোর জন্য আব্বা-আম্মা নানা তরিকা আবিষ্কার করত। একবার বলল- বাচ্চাদের নাকি তিনটা রোজা রাখলে সব রোজার সওয়াব পাওয়া যায়- শুরতে, মাঝে আর শেষে তিনটা রোজা রেখে সব রোজা বন্ধ করে ফেলা যায়! ছোটবেলায় এ তরিকা অনুসরণ করে তাই তিনটা রোজা রাখতাম দেঁতো হাসি আরেকটু পরে বিশেষ বিশেষ দিনে যেমন শুক্রবার, শবে কদর ইত্যাদিতে রোজা রাখার পারমিশন ছিল। তবে রোজা রাখার জন্য অনেক ঘ্যান ঘ্যান করা লাগত। না হয় সবাই চুপিচুপি সেহরি খেয়ে বলত -'তোমাকে অনেক ডেকেছিলাম, তুমি ওঠো নি'। যাই হোক আর যেটা মনে পড়ছে ছোটবেলায় রোজা খুব গরমকালে হত। আমি একটু পরপর ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা হাওয়া খেয়ে নিতাম আর একটা ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে গায়ে ঘষাঘষি করতাম খাইছে তাতে গরম এবং তৃষন একটু কম লাগত। কিন্তু আম্মা বলত- আমার রোজা নাকি হাল্কা হয়ে গেছে হাসি

লেখা চলুক।

= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমি তো এখনও ফ্রিজ খুলে দাঁড়াই চোখ টিপি
আর বউয়ের ঝাড়ি খাই মন খারাপ

আপনার কমেন্ট আরো অনেক পুরোনো কথা মনে করিয়ে দিলো দেখি!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বউ?
কার বউ?
কোন বউ?
কীসের বউ?
কেনো বউ?
আমার কেনো বউ নাই?
বউ চাই দেতে হবে। রোযা রাখার অধিকারও দেতে হবে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

এক কমেন্টেই ছয়বার "বউ"!!
নাহ্, এই পুলাটার ব্যাপারে আর দেরী করা ঠিক হইবনা...
শালীওয়ালারা,"তোমাদের দিল কি দয়া হয়না?"
চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক পুরানো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো লেখা ও মন্তব্য পড়ে। আমার ভালো লাগতো "এই সুন্দর ফুল সুন্দর ফল মিঠা নদীর পানি খোদা তোমার মেহেরবানী" গানটা।"ইয়া মোহাম্মাদ বেহেশত হতে খোদায় পাওয়ার পথ দেখাও" এটাও টিভিতে অনেক দেখাত। পরে বিটিভি ছাড়া অন্য চ্যানেল আসায় বেশ আশান্বিত হয়েছিলাম ইফতারের আগে যদি কার্টুন জাতীয় কিছু দেখায়। সে আশা অবশ্য পূর্ন হয়েছিলো কেকা ফেরদৌসীর ইফতারী বানানো দেখে।:)) হো হো হো

তানিয়া

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

কেকা ফেরদৌসী কি চ্যানেল আইতে যিনি ইফতার বানানোর প্রোগ্রাম করেন সেই মহিলা?

যেরকম তেল-মসলা-মাংসসমৃদ্ধ খাবার উনি দেখান শুধু ইফতারের জন্যই, বেগম রোকেয়ার রসনা-বিলাস হাড়ে হাড়ে টের পাই
অবশ্য এসব অনুষ্ঠান দেখে হার্টের ডাক্তাররা নিশ্চয়ই বগল বাজান চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

স্বপ্নাহত এর ছবি

ছোটবেলায় আমি রোজা রাখতে চাইলেই আম্মা খালি বলতো ছোটদের জন্য রোজার নিয়ম ভিন্ন। পাঁচবার আযানের সময় খাইলে দিনে পাঁচটা রোজা রাখা হয়ে যায়!!

শুনে আমিও মহাখুশি। দেঁতো হাসি

সবাই যখন কষ্ট করে তিরিশদিনে তিরিশটা রোজা রাখতো আমার তখন অলরেডী দেড়শটা রাখা হয়ে গ্যাসে। দেঁতো হাসি

লেখাটা খুব ভাল্লাগসে। চলুক।

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

সর্বনাশ!! তাইলে তো পরের পাঁচবছর রোজা না রাখলেও চলতো ...নিজের কথা মনে নেই, তবে আমার ভাগ্নিগুলোকে এসব বলে অনেকবারই দিনে তিনচারটা রোজা রাখা হয়েছে ...এমনও হয়েছে যে দেখা গেলো ওদের খাওয়ার ফ্রিকোয়েন্সী বেড়ে গেছে, কারণ যতবার খাবে ততগুলো রোজা চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অতিথি লেখক এর ছবি

জ্বিনের বাদশা লিখেছেন:
কেকা ফেরদৌসী কি চ্যানেল আইতে যিনি ইফতার বানানোর প্রোগ্রাম করেন সেই মহিলা?

যেরকম তেল-মসলা-মাংসসমৃদ্ধ খাবার উনি দেখান শুধু ইফতারের জন্যই, বেগম রোকেয়ার রসনা-বিলাস হাড়ে হাড়ে টের পাই
অবশ্য এসব অনুষ্ঠান দেখে হার্টের ডাক্তাররা নিশ্চয়ই বগল বাজান চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

কেকা ফেরদৌসী চ্যানেল আইতে "মনোহর ইফতার" নামে রান্নার অনুষ্ঠান করেন।ফরিদুর রেজা সাগরের বড়বোন হবার সুবাদে রমজানে ইফতারী, সারা বছর ধরে বিদেশ ভ্রমনের ফাকে প্রবাসী "মিসেস অমুক ভাবী" দের বাসায় ধারন করে " দেশ বিদেশের রান্না" এবং মাঝেমাঝে বিশেষ দিবস উপলক্ষে (যেমন রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম এর জন্মবার্ষিকী, প্রয়ানদিবস) কবিগুরুর প্রিয় রান্না জাতীয় অনুষ্ঠান করে থাকেন।

এবার আমি টেনশান এ আছি এই ভেবে যে আসন্ন ঈদ এ মিলাদুন্নবী তে ঝলমলে শাড়ী অলংকার ও তিনমন মেকআপে সজ্জিত হয়ে শুকনা খেজুর আর খোরমা পরিবেশন করে তিনি আবার না বলে বসেন নবীজীর প্রিয় খাবার হো হো হো

পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি

তানিয়া

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

হা হা হা গড়াগড়ি দিয়া হাসি

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

রোজা নিয়ে একটা বই খুললে কেমন হয়? সবাই যার যার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারতাম। সাথে একটা বইও হয়ে যেত।

লেখা বরাবরের মতই সু-ও-সহজপাঠ্য।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ প্রকৃতিপ্রেমিক
আপনার প্রস্তাবটা ভালো, কিন্তু আমি যে ডিজাইন-টিজাইনে একেবারেই কাঁচা ,,, ছোটবেলায় সবসময় ড্রইং পরীক্ষায় ফেল করতাম মন খারাপ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ভাগ্যিস-রোজার সময়ে দেশে নাই, থাকলে হালুয়া টাইট হয়ে যেতো আমার। বিদেশেও মাঝেসাঝে প্রশ্ন শুনতে হয়,"রোজা আছেনতো?' উত্তর দেই,"নাহ-আজকে নেই।" যে যা বোঝে বুঝে নিক।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

হা হা হা ,,, হেভী ডিপলোম্যাটিক উত্তর তো!
আমি ভাবি, "রোজা আছেনতো?" প্রশ্নটা করে প্রশ্নকারীর লাভ কি? চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে ,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অমি এর ছবি

ছোটবেলায় মনে আছে রোজা রাখতাম দুবার খেয়ে। একবার শেষরাতে সেহেরী খেয়ে আরেকবার দুপুরে খেয়ে, আম্মা বলতো রোজা হয় নাকি ওভাবে। কিন্তু সন্ধায় অত সব ইফতার এর মাঝে সনযম করা আসলেই ।কঠিন ছিল.........

তারেক এর ছবি

ছোটবেলায় রোজা রাখার থ্রিল আসলেই মারাত্মক। আমি বোধহয় ৭/৮বছর বয়সে প্রথম পুরো একটা রোজা রাখি। এর আগে প্রতিদিন ৩/৪টা রোজা ছিল।
আমাদের পাড়ার বড় ভাইয়েরা ভোররাতে হামদ, নাত, গজল এসব গেয়ে ঘুম ভাঙাত। রাতে জাগলে আমি গান শুনে ওদের কন্ঠ চেনার চেষ্টা করতাম। ওদের দল বাসার সামনে এলে জানালা ধরে ভাইয়াদের ডাকাডাকি করতাম খুব, ঐটাও খুব মজার স্মৃতি। যেতেও চাইতাম ওদের সাথে... যদিও কখনোই যাওয়া হয় নি।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

"এর আগে প্রতিদিন ৩/৪টা রোজা ছিল।" -- সবার অভিজ্ঞতাই একই দেখি!!
আচ্ছা এই কমন আইডিয়াটা বাপ-মাদের মধ্যে ছড়াইলো কিভাবে? চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।