স্বপ্নবিজ্ঞান অথবা একটি আষাঢ়ে গল্পের খসড়া

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: বুধ, ০২/০১/২০০৮ - ৫:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পাড়াতুতো অনুজদের সামনেটায় সবচে' উঁচু আসনে বসে গাঁজারেট ফুঁকতে-ফুঁকতে বেশ আয়েস করে আলাপ জুড়ে অন্তু-- জানিস, স্বপ্নে যেদিন আমি প্রথম বিমানে চড়লাম, কখন, কোথায়, কীভাবে সেটা সম্ভব হলো, তা জানতেই পারি নি একেবারে, শুধু বুঝলাম যে বিমানে চড়েছি, যদিও বিমানটি যথেষ্ট আরামপ্রদ নয়, ভাঙাচোরা, খটরখটর শব্দ হয়, হেলেদুলে চলে, যেখানে-সেখানে থামে, যার ইচ্ছে ভেতরে বসে বিড়ি ফুঁকতে পারে, চালককে বলে প্রস্রাব করতে যাওয়া যায়, এমনকি...

আচ্ছা, এটা বিমান না কি ফুলবাইড়্যার বাস-- জিজ্ঞাসার বাণ ছুড়ে বুলেট--

তার দিকে বাঁহাত উচিয়ে না-বোধক একটা ইঙ্গিত করে বলতে থাকে অন্তু-- আরে শোন্ না আগে, স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করে যে ইন্দ্রিয়, সে আমার লোকাল বাসের অভিজ্ঞতাকে নিয়ে বিমানের ওপরে আরোপ করেছে, এ কথাটাই হয়ত তথ্য-উপাত্ত সহযোগে অন্যভাবে বলতে চাচ্ছিলি তুই, স্বপ্নেন্দ্রিয়ের এই স্বেচ্ছাচারিতাকে যাই বলিস, আমি দারুণ এনজয় করি

বিমানের প্রকৃত যাত্রী হবার কোনো সুযোগ এ-যাবৎ ঘটে নি অন্তুর, তাই বলে নিজেকে সে খুব অনাধুনিক মনে করে না, স্বপ্নের মধ্যে এরকম একটি কাঙ্ক্ষাবীজ অবশ্য সর্বদাই রয়ে গেছে তার, বিমানের অন্য অযাত্রীদেরও হয়ত তাই, বৃহৎ কোনো সময় পরিসর নিয়ে এ কাঙ্ক্ষাটি কাউকে ব্যস্ত না রাখলেও হয়ত তা নিয়মিতই বাঁচে মানুষের চিন্তার ভেতরে (স্বপ্নগুলো দানা বাঁধে কোথায়-- মস্তিষ্কে, মনে নাকি স্কন্ধে)-- আর চিন্তায় যা থাকে তাই-ই তো আসে স্বপ্নে, সবাই জানে স্বপ্নে যা সংঘটিত হয়, তার কোনো আগা-মাথা থাকে না প্রায়শই, পরম্পরাহীন এসব ঘটনা আনাড়ির হাতে বাজানো পিয়ানোর সুরের মতো প্রায়, স্বাভাবিকের চেয়ে সুপরিসর কোনো অস্বাভাবিকতা কি নিয়ন্ত্রণ করে সেই স্বপ্নক্রম, নাকি মানসিক কোনো ক্লান্তি-- এসব জিজ্ঞাসা আজ সকাল থেকে অন্তুকে ভাবাচ্ছে খুব

একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে সে-- তো হলো কী জানিস, অন্য অনেকের মতো আমিও প্রস্রাবের কথা বলে নেমে গেলাম বিমান থেকে, আসলে মোটেই আমার মধ্যে প্রস্রাবের চাপ তৈরি হয় নি, ওপর থেকে দেখছিলাম সবুজ ইউনিফর্ম পরা বালিকা-অধ্যুষিত একটি বিদ্যালয়, নেমেই টুক করে এসে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ঝাল-লবণ দিয়ে বাদাম খাচ্ছিলাম আর মেয়ে দেখছিলাম, জানিসই তো, টিন-এজ বালিকারা হয় ভয়ানকরকম কামকাতর আর দুষ্টু, একবার জিহ্বা দেখায় তো একবার মারে চোখ টিপ, এসব কাণ্ড-কারখানা দেখে একবার আমি গরম হই, একবার ঘামি, কখনো আবার ভ্যাংচানো দেখে আত্মায় পানিই থাকে না, তো হঠাৎ করল কী, কয়েকজন মিলে নাচতে-নাচতে গলা মেলাল ব্যান্ডের গানে

মারবে না, এরকম শাহরুখ খান মার্কা চেহারা নিয়ে গার্লস স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে হিরোগিরি করলে ঐশ্বরিয়া রাইদের জিহ্বায় তো পানি আসবেই-- ছোকরাদের মধ্যে সবচে’ বেপরোয়া রঞ্জু বলল

রঞ্জুর এই টিপ্পনীও অন্তুকে দমাতে পারল না, কোনো জবাবও করল না এর, সে-যে শাহরুখ খানের চেয়ে চেহারায় আসলেই কম নয়, হাসিতে এরকম একটা ভাব এনে আবার শুরু করল-- পরে কী হলো জানিস, শীতের সবজির মতো এসব বালিকাদের দেখে, আমি তো শালার ভুলেই গেছি যে বিমান দাঁড় করিয়ে রেখে আমি মুততে নেমেছি, খটখট শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখি বিমানটা পাখা মেলে দিয়েছে, বেশ দেরি করে ফেলেছিলাম আসলে, লোকাল বিমান হোক, ওদেরও তো একটা সময়জ্ঞান আছে নাকি, তো এখন আমি কী করব, দৌড়াব নাকি বিমানযাত্রার কথা ভুলে ইঙ্গিতে বালিকাদের ওইসব চুষব, এইমতো একটা লজ্জাচ্ছন্ন কিংকর্তব্যবিমূঢ়তায় আক্রান্ত হলাম আমি, শেষে সাত-পাঁচ ভেবে সটকে পড়ারই সিদ্ধান্ত নিলাম, দিলাম ভোঁ দৌড়

মেয়েরা হেসে উঠল না বস-- জিজ্ঞাসা করল লিটু

হাসল না মানে, ওদের ব্যঙ্গের হাসি আমাকে পেছন থেকে কষে চাবুক মারছিল যেন, তাছাড়া ধর ধর বলে একটা আওয়াজও ভেসে আসছিল পেছন দিক থেকে, একবার যখন দৌড়েছি, বিমান ধরবার জন্যে না হোক আÍরার জন্যে হলেও আমার দৌড়ানো দরকার, নইলে সবাই ধরে আচ্ছা করে পিটুনি দিয়ে ছাড়লে কী এমন করার থাকবে আমার, তো করলাম কী, চিৎকার করে চালকের নাম ধরে মোটা-সোটা ধুমসা একেকটা গালি ঝাড়ছি এবং বিমানের গতিপথের দিকে দৌড়াচ্ছি তো দৌড়াচ্ছিই। সামনে যত দালান-কোঠা, গাছপালা, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত পড়ছে, কিছুই আমাকে ঠেকাতে পারছে না

তার মানে-- সন্দেহ করে বসল রঞ্জু, পাহাড়-পর্বত ডিঙানোও সম্ভব নাকি, কীসব গাঁজাখুরি কথাবার্তা

অন্তু কথকের দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে বলল, অই, এজন্যেই তোদের সঙ্গে আমি বসতে চাই না, তুইও খাবি নাকি একটু, নে, দে দুটান, দেখবি একটুও গাঁজাখুরি মনে হবে না-- অন্তু গাঁজারেটটা বাড়িয়ে ধরে সামনে, কিন্তু এদের কেউই ওর সামনে নির্দোষ সিগারেটেও টান পর্যন্ত দেয় না, গাঁজা তো দূর অস্ত-- পাড়ার বড়োভাই, নিজেদের মান নিজেরা না রাখলে, বাজারে কি আর কিনতে পাওয়া যাবে, তাই আরেকজন, লিটু, রঞ্জুর মাথায় 'এই তুই থাম' বলে আলতো করে তর্জনি ঠুকে বলল, অন্তু ভাই আপনি বলেন...

অন্তু বলতে শুরু করে-- বিমান ছুটে যত দ্রুত, আমিও তত, চালক ব্যাটা আমার সাথে ঠাট্টা করছে মনে করে ওর ওপর বেশ খাপ্পা হয়ে উঠলাম, মনে-মনে ওকে শায়েস্তা করবার একটা ফিকির আমার মধ্যে কাজ করতে থাকল, হঠাৎ মনে পড়ল সামরিক প্রদর্শনীতে দেখা ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের কথা, কুড়িয়ে নিলাম একটা ইটের টুকরা, ভূপাতিত করার খেলো বাসনায় বিমানটি লক্ষ্য করে মারলাম ছুড়ে, রাগে ঢিল ছুড়ে মেরেছি, কিন্তু ওটার নিশানা এতটা অব্যর্থ হবে কে জানত

সত্যি সত্যি লেগে গেল

লাগল তো লাগলই, এমনকি কাজেও দিল, ইটটা গিয়ে আঘাত হানল চালকের আসনের ঠিক পাশে, যে ব্যাটা চালাচ্ছিল বিমানটা, সে আসলে পাইলট না, ঢাকা শহরের বাসের চালকগুলোর মতো লাইসেন্সবিহীন হেলপার, সুযোগে চড়ে বসেছে চালকের আসনে, ব্যাটা তাই অভিজ্ঞতার অভাবে একটুতেই তড়াস খেয়ে গেল, যেই না ব্যাটা স্টিয়ারিং ছেড়ে দিয়ে জানালায় তাকিয়েছে কোত্থেকে ঢিলটি এল দেখতে, আর অমনি বিমানটি কাৎ, তো কাৎ বিমান সোজা করবার কৌশল শিখতে হলে মাথায় একটু ঘিলু তো থাকতে হয়, তাছাড়া অতটা সে ভেবেই উঠতে পারে নি যে হঠাৎ করেই চলন্ত বিমান কাৎ হয়ে যেতে পারে, এজন্যেই লোকজন বলে, খেতে চাইলে শুধু চিবুনো আর গেলা শিখলে চলে না, দাঁতের ফাঁক থেকে হাড়-কাঁটা বের করাও শিখতে হয়, যাহোক, ঢিলটি সইতে না পেরে বিমানটি ধেয়ে আসতে থাকল নিচের দিকে

গোল হয়ে বসা দর্শক-শ্রোতাদের সবারই চোখ কপালে উঠে এল, লোকটা বলে কী, বানাচ্ছে না তো, নেপাল বলে, হতেই পারে-- ঘটনাটা তো স্বপ্নের, স্বপ্নে তো আমিও একবার চেলসির সঙ্গে হাঁটছিলাম, ধানমণ্ডি লেকের পাশ দিয়ে, স্বপ্ন তো স্বপ্নই

নেপাল শেষ করার আগেই লিটু বলল, জানিস আমার কাছে চেলসিকে একদম ভালো লাগে না, পরীবাগ বস্তিতে ওরচে’ সুন্দরী অনেক মেয়ে আছে, ভালো পোশাক পরতে পারে না বলে ওদের চেহারার ঝলকটা সহজে চোখে পড়ে না, অবশ্য হিলারী ক্লিনটন তার মেয়ের চেয়ে এখনো অনেক বেশি সুন্দরী, আমি এরকম ভাবি বলেই স্বপ্নে চেলসি না হিলারীরই দেখা পেয়েছিলাম, হিলারী নিজ উদ্যোগেই আমাকে শাহবাগের মোড় থেকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে অত্তটুকুন দূরের ঢাকা ক্লাবে যান এবং আমাকে নিয়ে নাচেন, প্রথম দিকে আমি লজ্জা পাচ্ছিলাম, কিন্তু অচিরেই আমি তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছি

তারপর কী হলো অন্তু ভাই-- বিমানে নিশ্চয়ই আগুন জ্বলে গেল, বলল নেপাল

বা রে, তোরাও তো মোটেই কম যাস না দেখি-- বিস্ময় মাখানো স্বরে বলল অন্তু, আমার সাথে পাল্লা দিচ্ছিস না তো, যাগকে, আমারটাই বলি, না রে নেপাইল্যা, মোটেই আগুন জ্বলল না, ধপাস করে আস্ত বিমানটাই এসে পড়ল দালানওয়ালা বাড়ির পুকুর পাড়ে, লাফ দিয়ে উঠে একটা ব্যাঙ যেভাবে পুনরায় ল্যান্ড করে, তেমনি করে ওটি বসে পড়ল মাটিতে, সঙ্গত কারণেই যাত্রী-সাধারণের মধ্যে একটা হৈ-হট্টগোল শুরু হয়ে গেল, কিন্তু আশ্চর্য যে, কেউই মারা গেল না, কেবল কারো কারো হাত-পা ছিলে গেল, কারো-বা মন গেল ভড়কে, কারো হড়কে, চালককে 'চুদির ভাই' বলে গালি ঝাড়তেই সে বলল, 'আমি তো ভাবলাম আপনে থাইক্যা যাবাইন স্যার, ওঠেন ওঠেন'-- কষে আরেকবার 'চুদির ভাই' জপে আমি উঠে বসলাম, হেলপার-কাম-চালক-কাম-চুদির ভাই ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে এক নজর দেখে ট্রাক্টরের মতো খটখট শব্দ করে আবার উড়াল দিল, আর আরাম করে পায়ের উপরে পা উঠিয়ে আমি টানতে থাকলাম সিগারেট-- কোনো অপারেশনে সাকসেসফুল হলে যেরকম হামবড়া ভাব জাগে চোখে মুখে, আমারও তখন তেমন

তারপর নিশ্চয়ই তোমার কাছে বিমানবালারা দৌড়ে এল, তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না তা জানতে-- খোঁচা মেরে বলল লিটু

ধ্যুত, লোকাল বিমানে আবার বিমানবালা থাকবে কীরে, ওটা তো পাঁচ টাকারও খেপ মারে, তবে হ্যাঁ, থাকলে থাকতেও পারত ফকিন্নির মতো ট্যাঁরা চোখা কোনো পথবালা ধরনের মেয়ে, কিন্তু জানিস, সিগারেটে টান দিয়েই আমার ঘুম ভেঙে গেল, জেগে দেখি কী, পা উঠে আছে খাটের হেড বোর্ডের উপর, লুঙ্গি নেমে গিয়ে হা হয়ে আছে আমার জগৎসংসার

হে হে করে হেসে উঠল সবাই, নিজে বেশ গম্ভীর হয়ে মুথাটা বাঁ'হাতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে, প্যান্টের সাইড পকেট থেকে পুরিয়া বের করে আরেকটা গাঁজারেট বানাতে মনোযোগী হলো অন্তু, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে শ্রোতাদের হাসি তেমন দীর্ঘজীবী হলো না, পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ওরা চারজনই উঠে দাঁড়াল, গাঁজা ভরতে-ভরতেই অন্তু খেঁকিয়ে ওঠল-- এই, যাস কই চুদির ভাইরা, বয়, গল্পের তো মাত্র মুখটা বললাম, পাছাটা শুনবি না, শোন, আলুগাছের শাক খেতে বেশ মজা, তবে কিনা আসল মজাটা, মানে আলুটা তো থাকে মাটির নিচেই, এইবার তোদের আলুটা খাওয়াব, বয়, বয়

অনিচ্ছায়ও বসে পড়ে সবাই, পাড়ার সেরা মাস্তানকে উপেক্ষা করে চলে যাবে এমন সাহস এখনো জন্মায় নি কারো, সবাই অন্তুর মুখের দিকে তাকায়, সে অন্যদিকে তাকিয়ে গাঁজারেটটা ধরায় ও নাক-মুখ খিঁচিয়ে তিন-তিনটা টান হেকে দশাসই কেশে ওঠে, জানিস, গাঁজাটা হলো আমার ক্যালরি, যত বেশি গ্রহণ করি, তত বেশি শক্তি পাই, তত গল্প বানানো যায়, তাই বলে কখনো ভাবিস না যে, এতক্ষণ যে গল্পটা বললাম, সেটাও বানানো, বানানো গল্প আমি বলি অন্য পাড়ার ছেলেদের সামনে, হাজার হলেও তো তোরা আমার পাড়ারই পোলাপান, ছোট ভাই, তোদের মধ্যে তো আর ভেজাল মাল চালানো যায় না, কী বলিস, এইটুকুন কাণ্ডজ্ঞান যদি বিএ পাস করেও আমার না হয়ে থাকে তো ওরকম সার্টিফিকেটের দরকারটা কী আছে বল, তোদের মতো নকল করে তো আর পাস করি নি, এখন তো তোরা বই খুলে লিখিস..., বাক্যটি শেষ করেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্তু, কী যে দিন এল, গরু-বাছুরও তাদের অধিকার চাইতে শুরু করেছে, শুধু কি চাওয়া, জোর করে আদায় করে নিচ্ছে, অবশ্য যার যা পাওনা, সহজে না এলে তা আদায় করে নেয়াই সঙ্গত আমার মতে

আচ্ছা রঞ্জু, নেপাল, লিটু, বুলেট তোরা সবাই তো মিন্টু কলেজেই আছিস, তাই না

সবাই সমস্বরে বলে ওঠে, হ, অন্তু ভাই

ঠিক আছে, পরীক্ষার কয়েকদিন আগে আমারে মনে করাইয়া দিস, স্যারদের কইয়া দিমু নে, যাতে নকল করতে দেয়, না দিলে প্যাদাইয়া ফেলমু, এটা কোনো ব্যাপার না, এবার গল্প শোন-- লম্বা করে একটা টান দিয়ে আকাশের দিকে ধোঁয়ার একটা রিঙ নিক্ষেপ করে সে বলতে শুরু করে-- ঘুম থেকে যখন জাগলাম, তখন মাত্র ভোর ছয়টা, ছয়টার সময় ঘুম থেকে উঠব অতটা সিনসিয়ার কিংবা স্বাস্থ্যসচেতন পোলা তো আমি না, পাছার লুঙ্গিটা ঠিক করে, পা সোজা করে আবার ঘুমাবার জন্যে চোখ বুঁজলাম, মাথার মধ্যে বিমান যাত্রা, কচি বালিকা এসব ঘুরঘুর করতে থাকল, মনে মনে আবার বিমানে গিয়ে চড়ে নিচে আরো বালিকা বিদ্যালয় খুঁজতে থাকলাম, মনের মধ্যে যেহেতু বালিকা-বালিকা একটা ঘোর, নিচে যত নারকেল গাছ দেখি, সেসবকেও সবুজ ইউনিফর্ম পরা বালিকা বলে ভ্রম হয়, ভালো করে তাকিয়ে পরে নিশ্চিত হই যে, এটা কাঠের নারী, মাংসের না, যাহোক, ততক্ষণে আবার আমি ঘুমিয়ে গিয়ে থাকব

কোনো স্বপ্ন দেখা শেষ করে জেগে উঠলে আবার সেই স্বপ্নে ঢোকা যায় বলে তো শুনি নাই কখনো-- তীর্যক মন্তব্য ছুড়ল নেপাল

আরে ভোদাই, আগে শুনিস নাই এখন তো শুনলি, আমি যা বলি তা হানড্রেড পারসেন্ট কারেক্ট, মনে রাখিস, ঈশ্বর আমাকে এক্সেপশনাল মেধা দিয়েছে, ইন্টারমিডিয়েটে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া পোলা আমি, তোরা তো জানিস না কিছুই, মাথা ভরা শুধু গোবর

ঠিক আছে বলেন অন্তু ভাই, এই নেপাইল্যা তুই চুপ কর-- ধমকে ওঠে রঞ্জু

হঠাৎ আবিষ্কার করি কী, আমি পড়ে যাচ্ছি, কীভাবে ফস্কে গেলাম বলা মুশকিল, নিচ দিকে উঁকি দিতে গিয়ে কোনো জানালা খুলে নিয়েছিলাম কিনা জানি না, ভাঙা বিমান তো, চালকের হস্তক্ষেপ ছাড়া নিজেও জানালা দরজা খোলা যায়, পড়ছি তো পড়ছিই, আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠল, ঘেমে একেবারে নেয়ে গেছি, মনে হলো, এই আমার শেষ, এত উঁচু থেকে নিচে পড়ে গেলে নিশ্চয়ই আমি আর বাঁচব না, তখনো শালার মেয়ের ঘোর কাটে নাই, একবার শখ হলো, পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে-- কোনো বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে যাতে পড়ি, পরক্ষণেই আমার জানা একটা প্রবাদ মনে হলো, লুচ্চা মাথায় টুপি দিলেও লুচ্চা, নিজের ওপর ঘেন্না ধরে গেল, এখন তো মরে যাব আমি, এখনই, একবার অন্তত আল্লারে ডাকি, যদি রহম করে, শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলাম-- ও আল্লা গো

সব চুপচাপ, বুলেটের মতোই কিছুক্ষণ পর শব্দ করে উঠল বুলেট, শেষ অন্তু ভাই

হ্যাঁ শেষ, তবে সব শেষ নয়, ততক্ষণে আমি খাট থেকে উপুড় হয়ে মেঝেতে পড়ে কাতরাচ্ছি, শরীর ঘেমে জবজবে, দরোজায় প্রচণ্ড টোকা দিচ্ছে কেউ, একবার-দুবার-কয়েকবার, ওদিকে আমার তলপেট ফেটে যাবার উপক্রম, উঠতে গেছি, হাঁটুতে ব্যথা, কিন্তু শব্দ আর থামে না, শেষে গড়িয়ে গড়িয়ে দরোজার ছিটকিনি খুলতেই পাশের ফ্ল্যাটের তিন-চারজন নারী-পুরুষ একযোগে বলে উঠল, কী হয়েছে, চিৎকার করল কে

প্রথমে আমি বুঝতে পারলাম না, কিন্তু মেধাবী মানুষ বলে অচিরেই ঘটনাটার একটা ব্যাখ্যা আন্দাজ করলাম আমি, বললাম, চাচা, আপনারা যান, আমি একটু পরে আসতেছি, বলব, শুনতে চাইলে সব খুলে বলব, ওরা সন্দেহের চোখে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে, রুমের ভেতর উঁকিঝুঁকি দিয়ে ধীরপদে চলে গেল, আমি প্রায় চোখবুঁজেই বাথরুমে ঢুকে তলপেটটা খালি করে আবারো গড়িয়ে পড়লাম বিছানায়

তারপর

তারপর কী, এগারটায় ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে চারটে খেয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম, এসেই তোদের পেলাম, গাঁজা আর তোদের মতো বাধ্যশ্রোতার কল্যাণে গল্পটা মোটামুটি একটা শেপ পেল, লাঞ্চের পরে যাব পাশের ফ্ল্যাটে 'কী হয়েছে' প্রশ্নের জবাবি গল্পটা শোনাতে, বুঝলি, চাচার একটা সুন্দরী মেয়ে আছে, ওরকম সুন্দরী মেয়ের সামনে গল্প বলতে গিয়ে যদি আটকে যাই, সেটা ভারি লজ্জার ব্যাপার হবে, এজন্যে তোদের কয়েকজনের সামনে একটা দশাসই রিহের্সাল দিয়ে নিলাম


মন্তব্য

মুজিব মেহদী এর ছবি

আশ্চর্য, আমি তো নির্দেশমতো সচলায়তন ছোটগল্প সংকলনে গল্পটি যুক্ত করলাম। ফ্রন্ট পেজেও পোস্ট হয়ে গেল যে!
..................................................................................
ছাগলের পৃথিবীতে কাঁঠালগাছ হয়ে পাতাহীন বেঁচে থাকা দারুণ শোকের, আমি বুঝে গেছি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

হিমু এর ছবি

তখনই বলেছিলাম পোস্ট দেয়ার সময় অত টানবেন না।

গল্প বেশ গুলগুল্লা হয়েছে। বালিকাবিদ্যালয়ের পাশে ঝালবাদামের মতোই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মুজিব মেহদী এর ছবি

খাইছেরে! পোস্ট দেয়ার আগে-পরে কোত্থাও কোনো টানাটানি ছিল না তো! ওসব প্রায় গতজন্মের কথা। নইলে কি আর ৩৮ বছর ঠিকঠাক বেঁচে থাকা যেত, আপনিও কন!
..................................................................................
ছাগলের পৃথিবীতে কাঁঠালগাছ হয়ে পাতাহীন বেঁচে থাকা দারুণ শোকের, আমি বুঝে গেছি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কোথাও কিছু একটা গোলমাল হয়ে গেছে বই করতে গিয়ে। আমার বইয়ের একটা পরিচ্ছেদের লিংক দেখতে পাচ্ছি এখানে। টেকি মাহবুব মুর্শেদকে ইমেলে টোকা দিন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুজিব মেহদী এর ছবি

ঠিক বলেছেন জুবায়ের ভাই, একটা কিছু গোলমাল যে হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। মেইল পাঠাচ্ছি।
..................................................................................
ছাগলের পৃথিবীতে কাঁঠালগাছ হয়ে পাতাহীন বেঁচে থাকা দারুণ শোকের, আমি বুঝে গেছি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আষাঢ়ে গল্প জিনিসটা খুবই ভালো।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।