গণশোকের সাধ্য কী মুছাবে এ বেদনাপ্রবাহ

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: শনি, ২৮/০২/২০০৯ - ২:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

টিভি খবর ইতোমধ্যে দু'দুটো গণকবর আবিষ্কারের ব্যাপার নিশ্চিত করেছে। প্রথম আলোর সর্বশেষ সংবাদ বলছে এর একটিতে বিডিআরের ডিজিসহ ৪০ জন এবং অন্যটিতে ৩২ জন সেনাকর্মকর্তার লাশ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ম্যানহোল ও সেনা কর্মকর্তাদের বাসা থেকেও লাশ পাওয়া যাচ্ছে। একাত্তরে রাজাকার-আলবদর-আলশামসের যোগসাজশে পাকবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার সাথে এর কী পার্থক্য আছে? তদুপরি, মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের বাসার ম্যাসাকার ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাসার নৃশংসতার কথাও মনে করিয়ে দেয়, যেখানে এক অতিথি দম্পতিকেও জীবন দিতে হয়েছে

একই রাষ্ট্রের দুই ভিন্ন বাহিনীর মধ্যে এরকম পাইকারি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রে কখনো ঘটেছে বলে শুনি নি। বাংলাদেশ অনেক মন্দ ব্যাপারেই পথপ্রদর্শক হয়, সম্ভবত ভ্রাতৃঘাতী আচরণেও এদেশ পথপ্রদর্শক হলো।

পিলখানায় একাত্তরের মতো অনেকগুলো অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পালিয়ে ধরা পড়া বিডিআর জওয়ানদের কারো কারো কাছে প্রচুর স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ পাওয়া ব্যাপক লুটতরাজেরও ইঙ্গিত বহন করছে। এটিও একাত্তরে ঘটেছে ব্যাপকভাবে। একাত্তরের সঙ্গে যেটি মিলছে না সেটি হলো ধর্ষণ ঘটনা। এখনো অবধি এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

এ ঘটনা নিছক দাবি আদায়জনিত হতেই পারে না, শুরুতে যেমনটি অনেকের মতো আমারও মনে হয়েছিল। এখন এটি অনেকটাই পরিষ্কার যে, গভীর কোনো ষড়যন্ত্রেরই ফসল এই হত্যাকাণ্ড, যার কার্যাবলির অনেকটাই মিলে যায় একাত্তরে বাংলাদেশ বিরোধীদের দ্বারা সংঘটিত ঘটনার সাথে। জাতীয় সংসদ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংঘটনে একমত, সে লক্ষ্যে যখন আয়োজনও চলছে, তখন এ ধরনের একটি ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

সরকার নিহতদের স্মরণে তিনদিনের জাতীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়ে জাতিকে এটা জানান দিয়েছে যে, দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে এনেছে এ ঘটনা। কিন্তু নিছক শোক এ বেদনা ঘুচাতে পারবে না। এজন্য দরকার হবে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। জঘন্য এ হত্যাকাণ্ডে যারা প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছে তারা ছাড়াও যারা ইন্ধন দিয়ে, অর্থ ও উপকরণ সরবরাহ করে, সহায়তা দিয়ে অংশ নিয়েছে, তাদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখন মানবতারই দাবি। কোনো যুক্তিতেই এরকম জঘন্য গণহত্যাকাণ্ড সমর্থন করা যায় না।

ছবি : শুক্রবার বিকেলে আমার নিজের তোলা বাংলাদেশ রাইফেলস হেডকোয়ার্টারের ৪ নম্বর গেটের দৃশ্য। ছবিতে উদ্বিগ্ন স্বজন, গণমাধ্যমকর্মী, সেনাসদস্য ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাধারণ দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে


মন্তব্য

ক্লান্ত পথিক [অতিথি] এর ছবি

আশা এটাই............ সত্য উন্মচিত হউক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

কোনো যুক্তিতেই এরকম জঘন্য গণহত্যাকাণ্ড সমর্থন করা যায় না।
মনের কথাটাই বলে দিলেন।

পিলখানা "হত্যাকান্ডে"র বিচার হোক।

ঝরাপাতা এর ছবি

কোনভাবেই এই হত্যা মেনে নেয়া যায় না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।


নিজের ফুলদানীতে যারা পৃথিবীর সব ফুলকে আঁটাতে চায় তারা মুদি; কবি নয়। কবির কাজ ফুল ফুটিয়ে যাওয়া তার চলার পথে পথে। সে ফুল কাকে গন্ধ দিলো, কার খোঁপায় বা ফুলদানীতে উঠলো তা দেখা তার কাজ নয়।
___________________________ [বুদ্ধদেব গুহ]


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

ধন্যবাদ মুজিব ভাই।
আপনার আগের পোস্ট-এ আগে দুঃখ ক'রে এসে এই পরের পোস্ট-টা পরেই পড়লাম। স্যরি।

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

মুজিব মেহদী এর ছবি

দুঃখটা ছুঁতে পেরেছি।
এরকম হয়, হতে পারে।
..................................................................................
যেন ধ্যানের চেয়ে কখনো বেশি মূল্য না-পায় কোনো দৃশ্যগান, আর মানুষই যেন হয় প্রকৃত আরাধ্য জন আগুনে-ফাগুনে পুড়ে

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

ইট'স ওকে বস। জ্বি।
বরং, আই অ্যাম স্যরি ওয়ান্স অ্যাগেইন।
ভালো থাকেন।

০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০-০
"আমার চতুর্পাশে সবকিছু যায় আসে-
আমি শুধু তুষারিত গতিহীন ধারা!"

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।