জেনজীবন ও জেনদীপ্তি : বাহানা

মুজিব মেহদী এর ছবি
লিখেছেন মুজিব মেহদী (তারিখ: মঙ্গল, ২৯/০৪/২০০৮ - ১১:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৮৮ সালের এপ্রিলে কবি-প্রাবন্ধিক-অধ্যাপক বীতশোক ভট্টাচার্যের জেনগল্প বইটি প্রকাশিত হয় কলকাতার বাণীশিল্প থেকে। ১১ পৃষ্ঠার একটি টানটান ভূমিকাসহ প্রায় শ'খানেক গল্প এবং দেখলেই ভালো লাগে হিরণ মিত্রের এরকম কিছু সাদাকালো আঁকিবুকিসহ প্রকাশিত এই বইটি দেখতে গড়পরতা বই যেমন হয় তার চেয়ে খানিকটা ছোট ও আদুরে আদুরে। ওই বছর আমি মাত্র উচ্চ-মাধ্যমিক পাস করি, অর্থাৎ তখনো পর্যন্ত আমি প্রায় নাবালক ও মফস্বলবাসী। বইটা ঢাকায় আসতে কতটা দেরি হয়েছিল জানা নেই। এলেও সঙ্গে সঙ্গে ওটা আমার চোখে পড়বার কোনো সুযোগ ছিল না। কেউ কখনো এর কথা বলেও নি আমাকে। খুব সম্ভব ১৯৯৫-এ প্রথম আজিজ সুপার মার্কেটের তক্ষশিলায় বইটির সাক্ষাৎ পাই এবং দোকানে বসেই আধাপৃষ্ঠা, পৌণে এক পৃষ্ঠা বা এক পৃষ্ঠা আয়তনের কিছু গল্প পড়ে রুদ্ধশ্বাস একটা আবেগে বইটি কিনেই ডেরায় ফিরি ও শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে ফেলি। পুরো বইটা পড়ে আমার মধ্যে এমন একটা ভালো লাগা তৈরি হয়, যার প্রভাবে আমি একেবারেই নীরব হয়ে যাই। যেন জেনই ভর করে এসে আমার উপরে। জেন সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওই বইয়ের ভূমিকায় যেমন, তেমনি কোনো কোনো গল্পের মধ্যেও একথা বলা বা বোঝানো হয়েছে যে, 'নীরবতাই জেন'। কিন্তু যতই নীরব হই না কেন অনুভূতিটা তো কোনো না কোনোভাবে শেয়ার করা দরকার বন্ধুদের সাথে। তাই বলতে থাকলাম বইটা কিনে নাও ও পড়। যে কিনতে চাইল না বা পারল না, তাকে আমার কপিটা ধার দিলাম। মুগ্ধতার প্রকাশসহ কেউ ফেরত দিল, কেউ দিল না। আবার কিনলাম, আবার ধার দিলাম। আবার খোয়া গেল। এখন আমার কাছে বইটার যে কপিটা আছে সেটা সেপ্টেম্বর ২০০২-এ তৃতীয়বারের কেনা।

খুব সম্ভব এ পর্যন্ত পড়ে পাঠকদের মনে এ প্রশ্নটা জোরালোভাবেই জাগছে যে, জেন ব্যাপারটা আসলে কী? এর জবাবে বইটির ফ্ল্যাপ থেকে ধার করে বলি : জেন কি বলা কঠিন। জেন কি নয় বলা সহজ। জেন বুদ্ধবাদের একটি শাখা। জেন ধর্ম নয়, দর্শন নয়, মনস্তত্ব নয়, বিজ্ঞান নয়। এ মুক্তির উপায়, বিশ্ববীক্ষার একটি ধরন। ভারতের ধ্যানযোগ থেকে প্রাচীনকালেই এ ধারণা চীনে জাপানে ছড়িয়ে পড়ে। একসময় এ ছিল দীক্ষিতের সাধন, এখন পৃথিবী জোড়া এর প্রসার। জীবনে এবং সংস্কৃতিতে জেনের সাংগঠনিক প্রভাব এই মুহূর্তে লক্ষ করার মতো। জেনের আবেদন সরল, জীবনের সত্যকে তা সহজে গ্রহণ করতে শেখায়, বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হবার পথ করে দেয়। জেনের অভিজ্ঞতা অনির্বচনীয়, বাক্যে তার প্রকাশ নিরর্থক। তবু প্রাচ্যের এবং পাশ্চাত্যের শিল্পে সাহিত্যে জেনের স্মৃতিধার্য প্রভাব পড়েছে। এই গল্পগুচ্ছ জেনবাদীদের অভিজ্ঞতার সমাহার, জেনগুরু শিষ্যদের সচেতন ও সাহসী প্রশ্ন ও উত্তর, সমস্যা ও সমাধানের সমষ্টি। বাইবেলের গল্পের মতো, রামকৃষ্ণের কথামৃতের মতো এসব গল্প মানুষকে তার প্রাত্যহিকতার গভীরে, তার অস্তিত্বের গহনে নিয়ে যায়।

২.
কখনো এমনও মনে হয়েছে, যদি বীতশোক ভট্টাচার্য না হয়ে আমিই হতাম সেই ব্যক্তি যে জেনগল্পগুলো বাংলাভাষায় অনুবাদ করেছে, কতই না ভালো হতো। আমার জন্ম কেন বীতশোক ভট্টাচার্যের আগে হলো না! কিন্তু না, আমার আফসোসের কোনোই কারণ নেই দেখলাম। খুঁজেখেটে এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত গল্পগুলোর বাইরেও প্রচুর জেনগল্প, জেনকোয়ান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেখা গেল, যেগুলো বাংলাভাষাভাষীদের নজরে আনা সম্ভব। এক ধরনের উত্তেজনা নিয়েই ২০০৭-এ শুরু করে দিলাম বাংলায় রূপান্তরের কাজ। ততদিনে সচলায়তন-এর নামটিও শুনিনি। সামহ্যোয়ার-এর সন্ধানও পেয়েছি মাত্রই। যেহেতু সচলায়তনের মতো কোনো ধরনের পরীক্ষায় অবতীর্ণ না হয়েই ওখানে অ্যাকাউন্ট করা সম্ভব, কাজেই 'জেন সাধু' নামে নতুন একটা অ্যাকাউন্ট করে পর পর পোস্ট করা হলো ২৫টি জেনগল্প। কিন্তু গল্পগুলো প্রত্যাশানুগ পাঠক পেল না, বলাই বাহুল্য।

কমপক্ষে ৫০টি জেনগল্প বাংলায় রূপান্তরের ইচ্ছে আছে আমার। সুতরাং থামলে হবে না, এগোতে হবে। আমার এ জেনযাত্রায় প্রিয় সচলদেরকেও সঙ্গে না-পেলে যেন স্বস্তিই পাব না মনে হচ্ছে। অন্য একটা বিবেচনায়ও সচলদেরকে কাছে পাবার এটাই উৎকৃষ্ট সময় বলে মনে হচ্ছে, কারণ আয়তনে ছোট অণুগল্প, পরমাণুগল্প ও গল্পাণুর এক জোয়ার বয়ে যাচ্ছে এখন সচলায়তনে।

এরকম একটি পটভূমিতে ওরকম একটি আকাঙ্ক্ষা থেকেই আমার আজকের এই দীর্ঘ বাহানা।

বাহানাসূচক আজকের পোস্টটি বীতশোক ভট্টাচার্য অনূদিত জেনগল্প বইয়ের শেষ গল্প তোরণ পাঠ দিয়ে শেষ করা যাক।

নোবুশিগে নামে এক সেপাই হাকুউনের কাছে এলেন। তিনি জানতে চাইলেন : ‘স্বর্গ নরক ব’লে সত্যই কী আছে ?’
হাকুউন জিজ্ঞাসা করলেন : ‘আপনি কে ?’
সেপাইটি জবাব দিলেন : ‘আমি একজন সামুরাই।’
হাকুউন বললেন : আপনি সেপাই! আপনি রাজাকে কীভাবে পাহারা দেবেন ? আপনার মুখখানা তো ভিখারির মতো।’
একথা শুনে নোবুশিগে খুব রেগে গিয়ে তাঁর তলোয়ার বার করতে যাবেন এমন সময় হাকুউন বললেন : আপনার আবার তলোয়ারও আছে। তবে আপনার তলোয়ারটা বোধহয় ভোঁতা, ওতে আমার মাথা কাটা যাবে না।’
নোবুশিগে যখন তলোয়ার বার করে ফেলেছেন তখন হাকুউন বললেন : ‘এই নরকের তোরণ খুলে গেল।’
একথা শুনে সামুরাই জেনগুরু হাকুউনের জোর বুঝতে পারলেন, খোলা তলোয়ার খাপে ভরে ফেলে তাঁকে বিনতি করলেন।
হাকুউন বললেন : ‘এই স্বর্গের তোরণ খুলে গেল।’


মন্তব্য

তানভীর এর ছবি

ও...আপ্নেই তাইলে ওই বাড়ির জেন সাধু!! চিচিং ফাঁক দেঁতো হাসি

=============
"আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম"

জাহিদ হোসেন এর ছবি

ওপাড়ায় এগুলো পড়িনি। এবার পড়বো। চলুক জেন!

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

শাহীন হাসান এর ছবি

এই স্বর্গের তোরণ খুলে গেল।’
এই নরকের তোরণ খুলে গেল।’

বাহ্! ভাল-লাগছে....।

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

বগুড়ায় তখন একটাই জাতের বইয়ের দোকান। পড়ুয়া। সেখানে একদিন এল জেনগল্প_ তা সেটা তিরানব্বই/চুরানব্বই হবে। সে এক রোমাঞ্চকর রাত ছিল যখন ওটা পড়ি। এখন গল্প আছে বটে কিন্তু মনে সেই রোমাঞ্চ কই? কিন্তু আপনি কবি রোমাঞ্চের রাখাল। চালিয়ে যান ভাই।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তারেক এর ছবি

দারুন! নতুন অপেক্ষায় থাকলাম।

জেন/ জৈনবাদ নিয়ে চমৎকার একটা গল্প পড়েছিলাম 'শিরদাঁড়া' র ফেব্রুয়ারী'২০০৮ সংখ্যায়। ম্যাগাজিনটা হারিয়ে ফেলেছি মন খারাপ

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

শিরদাঁড়া ফেব্রুয়ারি '০৮-এ ব্রেসোঁ আর গদার এর আলাপচারিতাটা পড়ে রেখে দিয়েছিলাম... জৈনবাদের উপর জুবায়ের হোসেনের গল্পটা (পূর্বাহ্নের আগুন) পড়বো বলে রেখে দিয়েছিলাম... এখনও পড়া হয়নি... সময় যে হয় না! আপনার মন্তব্য পড়ে কাগজটা আবার খুঁজে বের করলাম... পড়ার সময় এবারও হবে কি না জানি না...
তবে ওবাড়িতে জেন সাধুর কয়েকখানা গল্প পড়েছিলাম... তিনিই যে মুজিব মেহেদী তা জানতাম না অবশ্য...
এইখানে সবগুলো একত্রে পড়ার খায়েশ রইলো। পুস্তকও হইতে পারে একটা।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তারেক এর ছবি

ব্রেসোর সাক্ষাৎকারটা অসাধারণ! অনুবাদও ভীষণ ভালো লেগেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমার এখনও দেখা হয়নি - দ্য হ্যাজার্ড ব্যালথাজার !
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

মুজিব মেহদী এর ছবি

দুঃখিত, গল্পটা আমার এখনো পড়া হয় নি। পড়ব অচিরেই।

কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার থাকা দরকার যে, জেনবাদ আর জৈনবাদ এক জিনিস নয়। জৈন আলাদা একটা ধর্মদর্শন, মহাবীর যার প্রবর্তক। অবশ্য জেন-জৈন দুটো মতই ভারতোদ্ভূত।
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

তারেক এর ছবি

আলাদা জিনিস বুঝি? আমি ভেবেছিলাম একই। ধন্যবাদ আপনাকে। ঐ গল্পটা জৈন ধর্মদর্শন নিয়ে হাসি
___________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মন্তব্যটা করে ঘুমাতে চলে গেছিলাম... শুয়ে শুয়েই পত্রিকাটায় চোখ বুলালাম... আর তখন দেখলাম আদতেই বিষয়টা এক নয়... জেনগল্প সম্পর্কে তেমন ধারনা নাই... আমার মনে হইছিলো এটা বুঝি জৈনধর্মেরই কোনও ব্যাপার... খোলাসা করার জন্য ধন্যবাদ।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তীরন্দাজ এর ছবি

জেনে গেলাম, কি করে স্বর্গের তোরণ খোলাতে হয়। আহা! সবাই যদি জানতো!

আসাধারণ!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

এই বীতশোক কি জীবনানন্দ নিয়েও বই লিখেছেন কিছু?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মুজিব মেহদী এর ছবি

হ্যাঁ, জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে তাঁর কাজ আছে। ইনিই তিনি।
................................................................

আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

হাসান মোরশেদ এর ছবি

জেনগল্প গুলো মুলতঃ কোনভাষায় লিখিত?
আপনার দেয়া গল্পের চরিত্রগুলোর নামকরনে মনে হচ্ছে জাপানী । আবার শুলুকে দেখা যাচ্ছে-ভারতীয় ধ্যানযোগ চীন ও জাপানে বিস্তৃত হয়ে 'জেন' (দর্শন/মতবাদ) এর জন্ম,যা মুলতঃ বৌদ্ধ দর্শনের শাখারূপ ।
ধর্ম বা দর্শন নিয়ে আপাততঃ ভাবছিনা । কৌতুহল হচ্ছে গল্পগুলোর আদি নিয়ে । 'জেন' এর আদি যদি ভারতীয় ধ্যানযোগ হয় তাহলে গল্পগুলোর আদি কোথায়? নাকি স্থানীয়ভাবে 'মেইড ইন জাপান'?
----x----
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

মুজিব মেহদী এর ছবি

বৌদ্ধ দর্শন ভারতোদ্ভূত, আমরা জানি। কিন্তু ভারতেই এটা স্থির থাকে নি। ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে এবং রূপ বদলেছে। ধ্যান থেকে যেহেতু জেন, ফলে এর মূলটা খুঁজলে ভারতেই খুঁজতে হবে, কারণ এ ভূমি ধ্যানখ্যাত, বৌদ্ধদর্শন উদ্ভূত হবারও আগে থেকে।

জেন বৌদ্ধদর্শন সমতলস্থ নয়, বৌদ্ধদর্শন থেকে উদ্ভূত। এই জেনের সর্বোচ্চ বিকাশ জাপানেই। ফলে জেনগল্পগুলো জাপানে ও জাপানি ভাষায়ই পাওয়া গেছে। তবে এটা বলতে হলে একটু খোঁজ নিয়েই বলতে হবে যে, সব গল্পেরই প্রথম রচনা জাপানি ভাষায় কি না। সেটা না হবার সম্ভাবনাই প্রকট। তবে বুদ্ধের ধারণা অবশ্যই ভারত থেকে যাওয়া, সঙ্গে কিছু কাহিনিও, যেসব ধারণা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জাতকের গল্পে। আর এটা জানাই যে, জাতকের গল্পগুলোতে বৌদ্ধের জীবনকথার রূপে অনেক কল্পকাহিনিও অন্তর্ভুক্ত হয়ে সাহিত্যে রূপ পরিগ্রহ করেছে, যার মধ্যে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হবারও আগে ভারতবর্ষে মুখে মুখে প্রচলিত গল্পও ঢুকে গেছে বলে জানা যায়।

একটা বিষয় এখানে উল্লেখ্য যে, জেনগল্পগুলোরও একটা ওরাল ট্র্যাডিশন আছে, আমাদের লোকসাহিত্যের মতো। সব গল্পই লিখিত রূপে নেই অথবা থাকলেও পরে লিখিত, দীর্ঘদিন মানুষের মুখে মুখে ফেরার পর সংগৃহীত ও গ্রন্থিত। যে কারণে গল্পগুলোর পাঠভেদও দুর্লক্ষ্য নয়। এ ব্যাপারটাও, সব গল্পই জাপানি ভাষার নাও হতে পারে, তার সম্ভাবনা উসকে দেয়।

শ্রদ্ধেয় বীতশোক ভট্টাচার্য এবং আমার রূপান্তরকর্ম, বলার অপেক্ষা রাখে না, ইংরেজি থেকে।

................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

মুজিব মেহদী এর ছবি

হাসান মোরশেদের মন্তব্যের জবাবে আমি যা লিখেছিলাম, ওর কিছু সংশোধনী দরকার মনে করে পুনর্জবাবের চেষ্টা করছি। জবাবটির যেখানে যেখানে আমি শুধু জাপানকে সিদ্ধ মেনেছি সেই সেই জায়গায় চীন ও জাপান পড়তে হবে। কারণ 'জেনবাদ একান্তভাবে চীনের সংস্কৃতির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে'; এবং 'জেন জাপানেরও জাতীয় জীবনে মিশে গিয়েছে। জাপানি জীবনের যা সুরভি তার অনেকটাই জেনের নির্যাস।' অর্থাৎ দু'দেশেই জেনচর্চা ব্যাপক। আর যেখানেই জেনবাদের চর্চা আছে, সেখানেই আছে জেনগল্প, জেনকবিতা, জেনছবি, জেনভাস্কর্য প্রভৃতি।

................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।