খেলা

অবনীল এর ছবি
লিখেছেন অবনীল (তারিখ: শুক্র, ২৮/১২/২০১২ - ৩:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


মূল- অরসন স্কট কার্ড
[অনুবাদকের কথা- অরসন স্কট কার্ড আমেরিকান লেখক। মূলত বৈজ্ঞানিক কাহিনী লেখেন, তবে তার সৃষ্টি বহুমাত্রিক। তার গল্পসংকলন 'ম্যাপ্স ইন দ্য মিরর' হস্তগত হয়ে বেশ কয়েকমাস আগে। পড়তে গিয়ে লেখকের চুম্বকের মত পাঠক ধরে রাখার ক্ষমতা বুঝতে পারি। যা এর আগে পেয়েছিলাম মাইকেল ক্রাইটন, গ্রিশাম, ড্যান ব্রাউনের লেখার মধ্যে। গল্প সংকলনের একটা অনুবাদের চেষ্টা করলাম শুধু ওই মজাটা শেয়ার করার জন্য। পেরেছি কিনা পাঠকের হাতে তার বিচার ন্যস্ত করলাম। ধন্যবাদ। ]

ডরমার পাস ছাড়া, সান ফ্রান্সিস্কো আর সল্ট লেক সিটির মাঝখানে রাস্তার উপরের সবকিছুই একঘেয়ে। রাস্তাটাতে অনেক কষ্টস্বীকার করে বার বার করে গাড়ী চালিয়েছে স্ট্যানলি। যতক্ষন না নিশ্চিত হয়েছে নেভাদা তার মুখস্ত হয়েছে। সেজব্রাশ ঝোপে ঢাকা পাহাড়ের মধ্যে প্যাঁচ দিয়ে চলে যাওয়া এক অন্তহীন রাস্তা। “ঈশ্বর সব সুন্দর সুন্দর জায়গা বানানো শেষ করার পর”, প্রায়ই বলত স্ট্যানলি, “অনেক জায়গা বাকী রয়ে গেছিল নেভাদাতে। তখন ঈশ্বর বললো,’ধুর, জাহান্নামে যাক।’ নেভাদা তারপর থেকে সেভাবেই পড়ে আছে।”
আজকে স্ট্যানলির মনটা হালকা। সল্ট লেকে ফিরে যাবার তাড়া নেই। তাই একঘেয়েমি কমানোর জন্য, ফ্রিওয়ে গেমস খেলতে শুরু করলো সে।
প্রথমে খেললো ‘ব্লু এঞ্জেলস’। সিয়েরা নেভাদার উঁচু ঢালে রাস্তায় দুইটা গাড়ি। পাশা পাশি ঘন্টায় পঞ্চাশ মাইল বেগে চলছে। ওর ড্যাটসান ২৬০জেড-টা ওদের পাশে ফর্মেশনে নিয়ে আসলো সে। ঘন্টায় পঞ্চাশ মাইল বেগে চালিয়ে যেতে লাগলো তারা ফ্রীওয়ের সব লেন আটকে দিয়ে। ট্রাফিক জমতে শুরু করলো পিছনে।
খেলা সফল। অন্য দুই ড্রাইভারও ব্যাপারটার মজা বুঝে গেল। যখনি মাঝখানের গাড়িটা সামনে চলে যায়, স্ট্যানলি আস্তে পিছনে এসে ডানপাশের ড্রাইভারের সাথে সাথে চলতে থাকে যাতে একটা তীরের মাথার মত ফর্মেশন নিয়ে ফ্রীওয়েতে ড্রাইভ করে যেতে থাকে ওরা। ওরা কর্ণ বানালো। চোঙ বানালো। আধ ঘন্টা ধরে নাচলো এ ওর সাথে। যেই ওদের কোন একজন একটু সামনে এগিয়ে যায়, পিছনের রেগে পাগল হয়ে যাওয়া ড্রাইভারগুলো সেটার পেছনে যুদ্ধ করতে শুরু করে।
পিছনের ক্রমাগত হর্ণের আওয়াজ আর আলোর ঝলকানির মজা সত্ত্বেও অবশেষে এই খেলাতেও একঘেয়েমি চলে আসলো স্ট্যানলির। দুইবার হর্ণ দিল সে। ভাবের সাথে পাশের ড্রাইভারের দিকে হাত নেড়ে বিদায় জানালো। তারপর এক্সেলেটরের এক চাপে লাফ দিয়ে ঘন্টায় সত্তর মাইল বেগে সামনে চলে আসলো। তবে হারানো সময়ের ক্ষতিপূরন (অথবা অনেকক্ষন ধরে আটকে থাকার ক্ষতি পূরনের জন্য) ডজনে ডজনে গাড়ী আরো দ্রুত বেগে পাশ দিয়ে যেতে শুরু করলে শিগগিরী ষাটে ফিরে এল সে। অনেকে অবশ্য যাত্রা বিরতি দিয়ে তার পাশে এসে ড্রাইভ করলো। হর্ণ বাজিয়ে চোখ রাঙিয়ে অশালীন ভংগী করলো। সবাইকেই একটা দাঁতালো হাসি উপহার দিল স্ট্যানলী।
রেনোর পূর্বে এসে ওকে আবার একঘেয়েমিতে ধরলো।
এবার ‘ফলো’ খেলার সিদ্ধান্ত নিলো সে। একটা হলুদ এ এম হর্ণেট হাইওয়েতে ঠিক তার সামনে ঘন্টায় আটান্ন থেকে ষাট মাইল বেগে যাচ্ছে। ভালো স্পিড। প্রায় তিন গাড়ী পিছনে থেকে স্ট্যানলি গাড়িটার পেছনে থিতু হলো। পিছু নিতে লাগলো। ড্রাইভার মহিলা। খোলা জানালা দিয়ে তার গাঢ় বর্ণের চুল এলোমেলো বাতাসে নাচছে। স্ট্যানলি ভাবতে লাগলো তার যে পিছু নেয়া হচ্ছে এটা লক্ষ্য করতে মহিলার কতক্ষন লাগতে পারে।
রেডিওর দুই গান (ভ্রমনের সময় স্ট্যানলির সময়ের মাপ), আর একটা হেয়ার স্প্রের বিজ্ঞাপনের অর্ধেকটা হয়ে যাবার পর -মহিলা দূরে সরে যেতে শুরু করলো। দ্রুত রিফ্লেক্সের জন্য স্ট্যানলি নিজেকে নিয়ে গর্ব করতো। সত্তরে ওঠার পরও মহিলা এক গাড়ি পরিমান দূরে যেতে পারলো না। মহিলার পিছু পিছু আসতে থাকলো সে।
রেনো রেডিও স্টেশনের শব্দ ম্লান হয়ে শুরু করা সত্ত্বেও পুরোন একটা বিলি জোয়েলের গানের সাথে গুনগুন করে যেতে লাগলো সে। আরেকটা স্টেশন খোজাখুজি করলো। কিন্তু কান্ট্রি আর ওয়েস্টার্ণ ছাড়া কিছু পেল না। ওগুলো দূর্বিষহ লাগে তার। তাই নিস্তব্ধতার মধ্যে ফলো করতে থাকলো সে। হর্ণেটের মহিলা গতি কমালো।
ঘন্টায় ত্রিশ মাইলে যেতে লাগলো মহিলা। তারপরো সে পাশ দিয়ে চলে গেল না। মুখ টিপে হাসলো স্ট্যানলি। সে নিশ্চিত এই মুহুর্তে মহিলা সবচেয়ে খারাপ জিনিসটা ভাবছে। একটা ধর্ষক, চোর, অপহরনকারী, তাকে শেষ করবার জন্য মনস্থির করেছে। রিয়ারভিউ মিররের দিকে তাকাতে লাগলো মহিলা।
”চিন্তার কিছু নেই, ছোট্ট লেডি,” স্টানলি বললো, “আমি শুধু একটা সল্ট লেক সিটির ছেলে। মজা নিচ্ছি একটু ।“ মহিলা গতি কমিয়ে বিশে নেমে আসলো। সে পিছনে লেগে থাকলো। হঠাৎ করে গতি বাড়ালো মহিলা। পঞ্চাশ না হওয়া পর্যন্ত বাড়াতেই লাগলো। কিন্তু মহিলার হর্ণেটের পক্ষে তার জেড কে গতিতে হারানো সম্ভব না।
“আই মেড ফর্টি থাউজ্যান্ড ডলারস ফর দ্য কম্প্যানি,” গাড়ির নিস্তব্ধতার মধ্যে সে গাইতে লাগলো, “এন্ড দ্যাটস সিক্স থাউজ্যান্ড ডলারস ফর মি।“
একটা ট্রাকের পেছনে গিয়ে হাজির হলো হর্ণেটটা। পাহাড়ী ঢালে উঠতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে ট্রাকটা। একটা পাসিং লেন ছিল, কিন্তু হর্নেটটা প্রথমে সেটা ব্যবহার করলো না, মনে হয় এই আশায় যে, স্ট্যানলি পাশ দিয়ে চলে যাবে। স্ট্যানলি গেলো না। হর্ণেট বের হয়ে ট্রাকের নাক বরাবর চলে গেল। তারপর পাহাড়ী ঢালে ওঠার বাকী রাস্তার পুরোটুকু ট্রাকের সাথে সাথে পাশাপাশি যেতে লাগলো।
“আচ্ছা”, বললো স্ট্যানলি, “প্যাসিফিক ইন্টারমাউন্টেইন এক্সপ্রেসের সাথে ব্লু এঞ্জেলস খেলা।“ মহিলাকে কাছে থেকে ফলো করতে লাগলো সে।
পাহাড়ের মাথায় পাসিং লেনটা শেষ হয়ে গেল। একেবারে শেষ মূহুর্তে হর্ণেটটা ট্রাকের সামনে চলে গেল। ট্রাকের কয়েক গজ সামনে এগিয়ে থাকলো ওটা। স্ট্যানলির জন্য কোন জায়গা ছিল না। আর এখন দুই-লেন রাস্তায় একটা গাড়ি সরাসরি তার দিকে আসছে।
“কি রকম মাগী!” স্ট্যানলি বিড়বিড় করলো। রাগলে স্ট্যানলী হার স্বীকার পছন্দ করে না। মুহুর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিল সে। এই মহিলার কাছে বোকা বনবে না সে। হর্ণেট আর ট্রাকের মাঝখানের জায়গাটাতে কোনমতে নাক ঢুকালো সে।
জায়গা ছিলনা। ট্রাক ড্রাইভার হর্ণের উপর ঝুকে পড়ে ব্রেক কষলো। ভয় পেয়ে মহিলা সামনে এগিয়ে গেলো। এগিয়ে আসা গাড়িটা বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাবার প্রায় একই সময়ে স্ট্যানলি রাস্তা ছেড়ে দিল। ওটার ড্রাইভার একজন বাবা, সাথে স্ত্রী এবং কয়েকটা হৈচৈ করা বাচ্চা, প্রায় আসন্ন দূর্ঘটনার আশংকায় পাথর হয়ে গেছে।
“নিজেকে চালাক মনে কর , তাই না, মাগী? কিন্তু স্ট্যানলী হাওয়ার্ড ইজ ফিলিং রিচ।“ অর্থহীন, অর্থহীন, কিন্তু শুনতে ভালোই লাগলো। সে কয়েকটা স্কেলে গাইতে গাইতে দুই গাড়ি পিছনে থেকে ফলো করতে লাগলো। স্থিরভাবে পঁয়ষট্টিতে যাচ্ছে এখন মহিলা। হর্ণেটের উটাহ-এর নাম্বার প্লেট। অনেক সময় ধরে ওই রাস্তায় থাকতে হবে মহিলাকে।
উটাহ প্লেট থেকে এলিওটো-তে খাবার স্মৃতিতে স্ট্যানলীর মন ঘুরে বেড়াতে লাগলো। “গুরুত্বপূর্ণ” সিদ্ধান্ততে আসলো। এলিওটো-কে জাহাজ ঘাটার যত কাছেই রাখো না কেন, তাদের মাছ সল্ট লেকের ব্র্যাটেনের থেকে কোন অংশেই ভালো হবে না। ঠিক করল, শীঘ্রি ওখানে খেতে হবে, ওর চিন্তার সাথে মেলে কিনা নিশ্চিত হবে। লিজকে আবার বেড়াতে নেওয়া উচিত হবে কিনা ভাবতে লাগলো। লিজের একেবারেই কোন আগ্রহ ছিল না। মনে মনে গবেষনা করলো জেনেভিয়েভকে জিজ্ঞেস করলে রাজী হবে কিনা।
হর্ণেটটা আর তার সামনে নেই।
মাত্র পঁয়তল্লিশে যাচ্ছে সে। পিআইই ট্রাকটা রাস্তার একটা সোজা অংশে তাকে ধরে ফেলত শুরু করেছে। আঁকাবাকা রাস্তা চলে গেছে সামনের গীরিবর্ত্মের মাঝ দিয়ে। সে যখন খেয়াল করছিল না তখন মনে হয়ে মহিলা গতি বাড়িয়ে চলে গেছে। গতি বাড়ালো সে। আরো বাড়ালো। কিন্তু মহিলার দেখা নেই। মনে হয় থেমেছে কোন জায়গায়। হাঁপাতে হাঁপাতে আর ধড়ফড় করতে থাকা বুকে মহিলা স্ট্যানলিকে ড্রাইভ করে চলে যেতে দেখছে, কথাটা ভেবে স্ট্যানলি চাপা হাসি হাসলো। কতই না স্বস্তিদায়ক ছিল সেটা। স্ট্যানলি ভাবলো। বেচারা মহিলা। কি বাজে একটা খেলা। মজা পেয়ে ফিক ফিক করে হেসে উঠলো। নিঃশব্দে। বুক আর পেট কাপছে কিন্তু কোন শব্দ হচ্ছে না।
এলকো-তে তেল ভরার জন্য থামলো। গ্যাস স্টেশনের ভেন্ডিং মেশিন থেকে কাপকেক-এর একটা প্যাকেট নিল। হর্ণেটটাকে যখন চলে যেতে দেখলো, গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সে। । হাত নাড়লো ও। কিন্তু মহিলা ওকে দেখতে পায়নি। তবে খেয়াল করলো কিছু দূরের একটা এমোকো স্টেশনে গিয়ে থামলো মহিলা।
এটা শুধু একটা খেয়াল। ব্যাপারটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করছি আমি। গাড়িতে বসে মহিলাকে গ্যাস স্টেশন থেকে বের হবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে সে ভাবলো। মহিলা বের হলো। কিছুক্ষনের জন্য স্ট্যানলি ইতস্তত করলো। আর পিছু লাগবে না বলে সিদ্ধান্ত নিল। তারপর বের হলো সে। এলকোর মেইন স্ট্রিট ধরে চালাতে লাগলো। হর্ণেটটা থেকে কয়েক ব্লক পিছনে। একটা ট্রাফিক সিগনালে এসে মহিলা থামলো। যখন সেটা সবুজ হলো, স্ট্যানলি ঠিক তার পিছনে। রিয়ারভিউ মিররে সে আবার মহিলার চেহারা দেখলো। শক্ত। চোখদুটো ভীত।
“চিন্তা নেই, লেডি,” সে বললো। “আমি তোমাকে ফলো করছি না এবারে। নিজের বাসার সোজা রাস্তা ধরেছি।“
মহিলা হঠাৎ করে, সিগনাল না করেই, একটা পার্কিং প্লেসে গিয়ে থামলো। স্ট্যানলি শান্তভাবে চালিয়ে চলে গেল। “দেখলে?” সে বললো। “ফলো করছি না। ফলো করছি না।“
এলকোর কয়েকমাইল বাইরে এসে সে রাস্তার পাশে থামলো। সে জানতো সে কেন অপেক্ষা করছে। নিজের কাছে অস্বীকার করলো। বিশ্রাম নিচ্ছি, নিজেকে বললো। বসে আছি কারন সল্ট লেক সিটিতে ফিরে যাবার কোন তাড়া নেই আমার। গরম আর অস্বস্তিদায়ক পরিবেশ। আর গাড়ি থেমে থাকার কারনে জেড এর জানলা দিয়ে সামান্য বাতাসও আসছে না। বোকার মত কাজ করছি, নিজেকে বললো সে। বেচারা মহিলাকে আর কষ্ট দেব কেন? নিজেকে জিজ্ঞেস করলো। কিসের জন্য মরতে এখনো এখানে বসে আছি?
মহিলা যখন তাকে পার হয়ে গেল তখনও সে বসে ছিল সেখানে। মহিলা দেখলো তাকে। গতি বাড়িয়ে দিল। স্ট্যানলি গাড়িটাকে গিয়ার করলো। ধার থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে অল্প সময়ের মধ্যে মহিলাকে ধরে ফেলে পেছনে থিতু হলো। “আমি একটা হারামী,” নিজের কাছে ঘোষনা করলো সে। “রাজপথের সবচেয়ে ইতর বাঞ্চোত আমি। আমাকে গুলি করে মারা উচিত।“ অন্তর থেকে বললো। কিন্তু পিছনেই থাকলো। পুরো রাস্তা নিজেকে গালি দিতে দিতে।
গাড়ির ভিতরের নিস্তব্ধতায় ( বাতাসের শব্দকে আওয়াজ হিসেবে না ধরে; ইঞ্জিনের শব্দ তার অভ্যস্ত কানে নীরবতা), চালাতে চালাতে সে স্পিডগুলো বলে যেতে লাগলো। পঞ্চান্ন, ষাট, পয়ষট্টি একটা বাঁকের উপরে, আমাদের কি মাথা খারাপ হয়েছে, ইয়াং লেডি? সত্তর –ওহ-হো, এখন, খোঁজ, একজন নেভাডা স্টেট ট্রুপারকে আশেপাশে পাওয়া যায় কিনা। ক্ষ্যাপার গতিতে তারা মোড়গুলো পেরোল। মহিলা মাঝে মাঝে হঠাৎ করে থামে। প্রতিবারে স্ট্যানলির রিফ্লেক্স দ্রুত। কয়েক গাড়ি দূরত্ব রেখে পেছনে থাকে সে।
“আমি আসলে একজন ভদ্রলোক, ইয়াং লেডি,” গাড়ির মহিলাকে বললো সে। সুন্দরী মহিলা। এলকোতে মহিলা যখন তাকে পাস করে গিয়েছিল সে সময়ে মহিলার চেহারাটা মনে করে সে উপলব্ধি করলো। “আমাদের যদি সল্ট লেক সিটিতে পরিচয় হত, পছন্দ করতে আমাকে। হয়ত কখনো ডেটিংএ যাবার জন্য তোমাকে জিজ্ঞেসও করতাম। আর তুমি যদি কোন শক্তপাছাওয়ালা পিচ্চি মর্মন মেয়ে না হয়ে থাকো, আমরা হয়ত একসাথে শুতামও। জান? আমি একজন ভদ্রলোক।“
সুন্দরী সে। তার পিছনে গাড়ী চালাতে চালাতে (“কি? পঁচাশি? কখনো ভাবিনি একটা হর্ণেট পঁচাশি তুলতে পারে”) সে দিবাস্বপ্ন দেখতে শুরু করলো। কল্পনায় দেখলো মহিলার গ্যাস শেষ হয়ে এসেছে। আতংকিত। কারন এখন তাকে জনমানবহীন একটানা রাস্তায় পিছু লেগে থাকা এক পাগলের করুণার পাত্র হতে হবে। কিন্তু দিবাস্বপ্নের মধ্যে সে যখন থামলো তখন মহিলার হাতে বন্দুক। পরিস্থিতি মহিলার নিয়ন্ত্রনে। মহিলা বন্দুক বাগিয়ে ধরে তাকে গাড়ির চাবি দিতে বাধ্য করলো, দিগম্বর হওয়ালো, আর কাপড়গুলো জেড এর পিছনে ভরে সেটায় চড়ে ভাগলো। “তুমিই আসলে বিপদজনক, লেডি,” সে বললো। দিবাস্বপ্নটা কয়েকবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল। আর তাকে নগ্ন অবস্থায় একটা তেলশূন্য হর্ণেটের সাথে ফেলে যাবার আগে প্রত্যেকবার মহিলা তার সাথে আরো বেশী সময় ব্যয় করলো। প্রচন্ডভাবে কামোম্মত্ত করে দিয়ে ফেলে চলে গেল।
স্ট্যানলি বুঝতে পারলো তার দিবাস্বপ্ন তাকে কোনদিক নিয়ে যাচ্ছে। “অনেক অনেক দিন ধরে একা আমি”, বললো সে। “অনেকদিন ধরে অনেক একা, আর লিজ লাইসেন্স ছাড়া কোন কিছু খুলবে না।“ একা শব্দটা তাকে হাসালো। একটা সস্তা কবিতার কথা মনে পড়ে গেছে। গাইতে শুরু করলো সেঃ”বারি মে নট অন দ্য লোন প্রাইরি হোয়ার দ্য কাইওটিজ হাউল এন্ড উইন্ড ব্লোওজ ফ্রী।“
কয়েক ঘন্টা ধরে সে মহিলার পিছু নিল। এতক্ষনে সে নিশ্চিত মহিলা বুঝে গেছে এটা একটা খেলা। এতক্ষনে নিশ্চই বুঝে গেছে তার কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা নেই। মহিলাকে রাস্তার ধারে থামাবার জন্য কোন চেষ্টা সে করেনি। শুধু সাথে সাথে চলেছে। “একটা বন্ধু কুকুরের মত,” সে বললো। “ঘেউ। ঘাউ। গ্ররররর। আবার দিবাস্বপ্ন দেখতে লাগলো সে, যতক্ষন না হঠাৎ করে ওয়েন্ডোভারের আলো ঝলসে উঠলো। অন্ধকার হয়ে এসেছে, বুঝতে পারলো। লাইটগুলো জ্বালালো সে। আর হর্ণেটটা গতি বাড়িয়ে দিল। ওটার পেছনের লাইটগুলো মুহূর্তের জন্য উজ্জ্বল হয়ে উঠে ‘উটাহ যাবার আগে টাকা উড়াবার শেষ সুযোগ’ লেখা সাইনগুলোর আলোয় আবার নিস্প্রভ হয়ে গেল।
ওয়েন্ডোভারে ঢোকার ঠিক মুখে একটা পুলিশের গাড়ি রাস্তার পাশে রাখা। আলো ঝলকাছে ওটা। কোন নিরীহ বেচারা জোরে গাড়ী চালিয়ে ধরা পড়েছে। স্ট্যানলি আশা করলো মহিলা চালাক হবে। পুলিশের গাড়ীর পিছনে গাড়ী রাখবে যতক্ষন না স্ট্যানলি বর্ডার পার হচ্ছে। নেভাডার এক্তিয়ারের বাইরে যাচ্ছে। হর্ণেটটা, কিন্তু পুলিশের ঠিক পাশ দিয়ে চলে গেল। গতিও বাড়িয়ে দিল। এক মুহূর্তের জন্য ধাঁধায় পড়ে গেল স্ট্যানলি। মহিলা পাগল নাকি? মনে হয় ভয়ের চোটে বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে। স্বস্তি আর উদ্ধারের এরকম একটা সুযোগ, আর সে সেটা উপেক্ষা করলো। করবেই তো, হর্ণেটটাকে ফলো করে ওয়েন্ডোভার ছাড়িয়ে সল্ট ফ্ল্যাটের দীর্ঘ সোজা টানা রাজপথ যেতে যেতে স্ট্যানলি যুক্তি খাটালো, মহিলা তো থামবে না। বেচারা মহিলা জোরে চালিয়ে আইন ভাঙ্গার জন্য এতটাই উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়েছে যে তার মনে পুলিশের ভয় ঢুকে গেছে।
পাগলের কান্ড। চাপে পড়লে মানুষ পাগলের মত সব কাজ করে, স্ট্যানলী সিদ্ধান্ত নিল।
হাইওয়েটা একটানা চলে গেছে অন্ধকারের ভিতরে। আকাশে চাঁদ নেই। শুধু কিছু তারার আলো। রাস্তার কোন পাশে কোন ল্যান্ডমার্ক নেই। গাড়ীগুলো যেন সুরঙ্গের মধ্যে দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে চলছে। বামে শুধু একটা সম্মোহনী রেখা। পিছনে হেডলাইট। সামনে টেইললাইট। একটা হর্ণেটের ট্যাঙ্কে কতটুকু তেল ধরে? সল্ট ফ্ল্যাটস এলাকাটা অনেকদূর গেছে এর প্রথম গ্যাস স্টেশন আসার আগে। ডেলাইট সেভিংস সময় ধরে এখন মনে হয় দশটা ত্রিশ, এগারোটা, শুধু দশটাও হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু গ্যাস স্টেশন এর মধ্যেই বন্ধ হতে শুরু করেছে। এলকো-তে তেল ভরার পর স্ট্যানলির জেড এখন কিছু তেল ট্যাংকে বাকী রেখেই সল্ট লেকের বাসায় ফিরতে পারবে। কিন্তু হর্ণেটটার তেল শেষ হয়ে যেতে পারে।
বিকেলের দিবাস্বপ্নের কথা মনে পড়লো স্ট্যানলির। সেগুলো এখন রাতে অনুদিত হলো। মহিলার অন্ধকারে আতংক। হেডলাইটের আলোয় চকচক করে ওঠা বন্দুক। এই মহিলা সশস্ত্র এবং বিপদজনক। উটাহ-এ ড্রাগস বহন করে নিয়ে যাচ্ছে আর তাকে মাফিয়া-টাইপ কেউ মনে করেছে। মহিলা সম্ভবত ভাবছে, যেকোনখান থেকে বহুদূরে, এই জনমানবহীন সল্ট ফ্ল্যাটসে তাকে ধরার জন্য প্ল্যান করেছে স্ট্যানলি। সম্ভবত বন্দুকের ক্লিপ চেক করছে এখন।
পঁচাশি, স্পিডোমিটারটা বললো।
“ভালৈ দ্রুত যাচ্ছ, লেডি,” সে বললো।
নব্বই, স্পিডোমিটারটা বল্লো।
অবশ্যই, স্ট্যানলি উপলব্ধি করলো। মহিলার তেল শেষ হয়ে আসছে। যত দ্রুত যেতে পারে যেতে চাচ্ছে সে। আমাকে ছাড়িয়ে যেতে। কিন্তু যখন তেল ফুরিয়ে যাবে তখন রাস্তার পাশে ভিড়াবার জন্য যথেষ্ট ভরবেগ রাখতে চায় সে।
অর্থহীন, স্ট্যানলী ভাবলো। অন্ধকার হয়ে গেছে আর বেচারী মহিলার ভয়ে বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। আমাকে এটা বন্ধ করতেই হবে। এটা বিপদজনক। অন্ধকার হয়ে গেছে আর এটা বিপদজনক। চারশত মাইল ধরে এই নির্বোধ খেলা চলছে। আমি চাইনি এটা এতক্ষন ধরে চলুক।
যেহেতু এই রোডে সে অভ্যস্ত, তাই পার হতে থাকা কিছু রোড সাইন স্ট্যানলিকে বলে দিল প্রথম বড় বাঁক আসছে সামনে। সলট ফ্ল্যাটসের সাথে অপরিচিত অনেক মানুষ মনে করে পুরো রাস্তাটা তীরের মত সোজা চলে গেছে। কিন্তু একটা বাঁক আছে যেখানে বাঁক থাকার কোন কারন নেই। পর্বতমালার আগে। সবকিছুর আগে। আর চিরাচরিত উটাহ-হাইওয়ে ডিপার্টমেন্টের স্টাইলে, বাঁকের সাইনটা মোড়ের ঠিক মাঝখানে বসান। সহজাত প্রবৃত্তিতে, স্ট্যানলী গতি কমালো।
কিন্তু হর্ণেটে বসা মহিলা কমালো না।
হেডলাইটের আলোয় হর্ণেটটাকে পিছলে রাস্তার বাইরে চলে যেতে দেখলো স্ট্যানলি। কর্কশ শব্দে ব্রেক কষলো সে। পার হতে হতে দেখল হর্ণেটটা নাকের ওপর পড়ে ঠিকরে উঠলো, উলটে গিয়ে লেজের দিকে আবার ঠোকর খেলো। তারপর পেছন দিকে ডিগবাজী খেয়ে সোজা ছাদের উপর অবতরন করলো। কিছুক্ষনের জন্য পড়ে থাকলো ওখানে সেটা। স্ট্যানলী কোনমতে গাড়ী থামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। অগ্নিসহ বিস্ফোরিত হলো হর্ণেটটা।
এক মিনিট কি তার একটু বেশী সময় স্ট্যানলী ওখানে বসে থাকলো। হাঁপাচ্ছে। ঠকঠক করে কাঁপছে। ভয়াবহতায়। ভয়াবহতার ভিতরেও সে নিজের উপর জোর করার চেষ্টা করলো। বলে উঠলো, এ আমি কি করেছি! হা ঈশ্বর, এ আমি কি করেছি। কিন্তু সে জানে যদিও সে ভয় পাবার ভান করছে কামোত্তেজনার অন্তিম প্রান্তে পৌছেছে সে। তার দেহের কাঁপুনি তার জীবনের ঘটে যাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী বীজনির্গমন। সেই রেনো থেকে সে হর্নেটের পশ্চাতে উপনীত হতে চেষ্টা করে আসছিল আর অবশেষে, অবশেষে, চরম যৌনসুখ প্রাপ্তি।
গাড়ি চালাতে লাগলো সে। বিশ মিনিট ধরে গাড়ী চালিয়ে পেফোনওয়ালা একটা গ্যাস স্টেশনে পৌছাল। জড়তার সাথে গাড়ী থেকে বের হলো সে। ওর প্যান্ট আঠালো আর ভেজা। আঠালো পকেট হাতড়ে একটা আঠালো ডাইম খুঁযে বের করে ফোনে ঢুকালো। একটা এমারজেন্সি নাম্বার ডায়াল করলো।
“আমি-আমি সল্ট ফ্ল্যাটসে একটা গাড়ীর পার করে এসেছি। আগুনে পুড়ছে। এই শেভরন স্টেশন থেকে প্রায় পনের মাইল আগে। আগুন।“
ফোন রেখে দিল। গাড়ী চালাতে লাগলো সে। কয়েক মিনিট পরে একটা টহলকারী গাড়ী আসত দেখলো। আলো ঘুরছে। দ্রুত অতিক্রম করে উলটো দিকে চলে গেল। সল্ট লেক সিটি থেকে মরুভূমির দিকে। তারও পরে একটা এম্বুল্যান্স আর একটা দমকল গাড়ী চলে যেতে দখল। স্টিয়ারিঙটা শক্ত করে চেপে ধরলো স্ট্যানলী। ওরা জেনে যাবে। ওর স্কিড করার দাগগুলো ওদের চোখে পড়বে। কেউ বলে দিতে পারে একটা জেড হর্ণেটটাকে ফলো করছিল রেনো থেকে উটাহ-এ। হর্ণেটের মহিলা মারা না যাওয়া পর্যন্ত।
কিন্তু উদ্বীগ্ন হওয়া সত্ত্বেও, সে জানত যে কেউ জানবে না। সে তাকে ছোঁয়নি। তার গাড়ীতে কোন দাগ নেই।
হাইওয়েটা দুপাশে মোটেল আর জীর্ণ ভোজনালয় নিয়ে সিক্স-লেন রাস্তায় পরিনত হলো। ফ্রীওয়ে থেকে নেমে গেল সে। রেলরাস্তার উপর দিয়ে, আর নর্থ টেম্পল স্ট্রিট ধরে সেকন্ড এভিনিউ পর্যন্ত গেল। বামে স্কুল। ধীরে চলার সাইনগুলো। সবকিছু স্বাভাবিক। সবকিছু যেভাবে ছেড়ে গিয়েছিল সেভাবেই আছে। বরাবরের মত দীর্ঘযাত্রা শেষে যখন বাসায় ফিরে আসে, এল স্ট্রিটে, শ্যাটিউ লেম্যান্স এপার্টমেন্টসে। ভূগর্ভস্থ গ্যারাজে পার্ক করে বের হলো সে। সব দরজা ওর চাবিতে খোলে। ওর রুম নিরূপদ্রব।
কি নরক গুলজার আশা করছি? নিজেকে জিজ্ঞেস করলো সে। সাইরেনের শব্দ বাসার দিকে ধেয়ে আসবে? লিভিং রুমে পাঁচ ডিটেকটিভ আমাকে ভাজার জন্য বসে আছে?
মহিলাটা, মহিলাটা মারা গেছে। সে বিপর্যস্ত বোধ করার চেষ্টা করলো। কিন্তু ও শুধু যা মনে করতে পারলো, ওর মনে যেটা শুধু গুরুত্বপূর্ণ লাগলো, তা হলো ওর শরীরের কম্পন, অন্তহীন কামতৃপ্তির বোধ। কোন কিছুই। ওরকম আর কোন কিছুই নাই এ জগতে।
তাড়াতাড়ি ঘুমাতে গেল সে। ঘুমালো সহজেই। খুন? ঘুমের ঘোরে হারিয়ে যেতে যেতে নিজেকে জিজ্ঞেস করলো সে।
কিন্তু শব্দটা ওর মন ছিনিয়ে নিল। স্মৃতির এমন এক অংশে তাড়িয়ে দিল যেখান থেকে স্ট্যানলী ওটা উদ্ধার করতে পারলো না। ওটা নিয়ে বাঁচতে পারব না। ওটা নিয়ে বাঁচতে পারব না। তাই ওটাকে থাকতে দিলনা।

পরদিন সকালে স্ট্যানলী আবিস্কার করলো সে পেপারের দিকে তাকানো এড়িয়ে যাচ্ছে। তাই জোর করে তাকালো সে। প্রথম পাতার খবর ছিলনা ওটা। পেছনের স্থানীয় খবরের সেকশনে লুকিয়ে ছিল। মহিলার নাম এলিক্স হামফ্রেইজ। বয়স বাইশ এবং অবিবাহিত, কোন একটা ল’ফার্মে সেক্রেটারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ছবিতে অল্পবয়সী, আকর্ষনীয় মেয়ে বলে মনে হলো।
“পুলিশের তদন্তকারীদের মতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ড্রাইভার স্টিয়ারিংয়ের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দূর্ঘটনাটা ঘটার সময় গাড়ীটি ঘন্টায় আশি মাইলের বেশী বেগে যাচ্ছিল।“
দূর্ঘটনা।
অগ্নিকান্ডটার জন্য দারুন এক শব্দ।
তারপরো সবসময়ের মত স্ট্যানলি কাজে গেল। সবসময়ের মত সেক্রেটারীদের সাথে প্রেমালাপ চালালো। রাস্তায় গাড়িও চালালো সবসময়ের মত। সাবধানে। ভদ্রতা বজায় রেখে।
তবে আবার ফ্রীওয়ে গেমস খেলা শুরু করতে তার বেশী দিন সময় লাগলো না। লোগানে যেতে যেতে, সে ফলো খেললো। সারডিন গিরিখাতের একটা পাহাড়ের চুড়ায়, হোন্ডা সিভিক চালানো একজন মহিলা বোকার মত একটা সেমিট্রাককে অতিক্রম করতে গিয়ে একটা পিকাপ ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে গেল। পুলিশের রিপোর্টে আসলো না (আর কেউ জানতোও না) যে মহিলা একটা ড্যাটসান ২৬০জেড থেকে পালাবার চেষ্টা করছিল। আশি মাইল ধরে তাকে নির্দয়ভাবে ফলো করছিল ওটা। মহিলার নাম ছিল ডনা উইক্স। তার দুই সন্তান আর স্বামী লোগানে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিল সেই সন্ধ্যায়। ওর দেহ গাড়ী থেকে বের করতে পারেনি তারা।
ডেনভারে এক সতের বছর বয়সী স্কিয়ার বরফপূর্ণ রাস্তায় নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেললো। ওর ভিডাব্লিউ পর্বতে ধাক্কা খেয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে, ঠিকরে, খাদ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। অবিশ্বাস্যভাবে গাড়ীর পিছনে রাখা স্কিদুটোর একটা অক্ষত ছিল। অন্যটা আগুনের জ্বালানী হয়েছে। উইন্ডশিল্ড ভেদ করে চলে গিয়েছিল তার মাথা। দেহটা যায়নি।
ক্যামেরন ট্রেডিং পোস্ট আর পেজ, আরিজোনার মধ্যবর্তী রাস্তাগুলো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। কেউ অবাক হলো না যখন রাস্তার পাশে রাখা একটা ভ্যানের পেছনে ধাক্কা খেয়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে আঠারো বছর বয়সী ফিনিক্সের এক সোনালীচুলো মডেল মারা গেল। ঘন্টায় একশ মাইলের উপরে যাচ্ছিল সে। অবাক হবার কিছু নেই, তার বন্ধুরা বললো। সে সবসময়ে বেশী স্পিডে গাড়ী চালাতো, বিশেষকরে রাতে গাড়ী চালালে। একটা বাচ্চা ঘুমন্ত অবস্থায় মারা গেল। তার পরিবার হাসপাতালস্থ হলো। উটাহ প্লেটওয়ালা কোন ড্যাটসানের কোথাও কোন উল্লেখ ছিল না।
স্ট্যানলী এখন আরো বেশী মনে করতে পারে। তার মনের গোপনস্থানগুলোতে এসবকিছু ধরে রাখার মত যথেষ্ট জায়গা ছিল না। ওদের চেহারাগুলো পেপার থেকে কেটে রাখত সে। রাতে ওদেরকে স্বপ্নে দেখতে। ওর স্বপ্নে তারা সবসময় তাকে হুমকি দিত। তাদের পরিনতির জন্য তারাই দ্বায়ী হত সবসময়। প্রত্যেকটা স্বপ্ন শেষ হত অন্তীম যৌনতৃপ্তি দিয়ে। কিন্তু হাইওয়েতে সংঘর্ষ হবার সময়কার মত খিঁচুনি দিয়ে ওঠা পরমসুখের মত শক্তিশালী হত না।
কিস্তি। আর মাত।
তাক কর। আর গুলি ছোড়।
আঠারো, সাত, তেইশ, হাইক।
খেলা। সব খেলা। সত্যের মুহুর্ত।
“আমি অসুস্থ।“ বিক ফোরকালার কলমের পেছন দিকটা মুখে পুরে চুষছিল সে। “আমার সাহায্য দরকার।“
ফোনটা বেজে উঠলো।
“স্ট্যান? আমি লিজ।“
হাই, লিজ।
“সট্যান, তুমি আমার সাথে কথা বলবে না?”
জাহান্নামে যাও, লিজ।
“স্ট্যান, এটা কি ধরনের খেলা? তুমি আমাকে ন’মাস কোন ফোন করো না, আর এখন তোমার সাথে যখন আমি কথা বলার চেষ্টা করছি তখন তুমি কোন কথা বল না?”
বিছানায় আস, লিজ।
“এটা তুমিই ত, না?”
“হ্যা, আমি।“
“আচ্ছা, তুমি চুপ করে ছিলে কেনো? স্ট্যান, আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। আসলেই খুব ভয় পেয়েছিলাম।“
“সরি।“
“স্ট্যান। কি হয়েছে? আমাকে ফোন করনি কেন?”
“তোমাকে খুব বেশি দরকার ছিল আমার।“ নাটুকে, নাটুকে। কিন্তু সত্যি।
“স্ট্যান, আমি জানি। আমি একটা খারাপ মেয়ে।“
“না, না, আসলে তা না। আমি খুব বেশী দাবী করে ফেলেছিলাম।“
“স্ট্যান, তোমাকে মিস করি আমি। তোমার সাথে থাকতে চাই।“
“তোমাকেও মিস করি আমি, লিজ। গত কয়েকমাস ধরে তোমাকে সত্যি খুব দরকার ছিল আমার।
লিজ বকতে থাকল। নিঃশব্দে গাইতে লাগলো স্ট্যানলি, “ওহ, ব্যরি মি নট অন দ্য লোন প্রেইরি, হোয়ার দ্য কইওটিস হাউল-“
“আজ রাতে? আমার আপার্টমেন্টে?”
“মানে তুমি আমাকে তোমার পবিত্র চেইন লক পেরিয়ে ঢুকতে দেবে?”
“স্ট্যানলি। নিষ্ঠুর হয়ো না। তোমাকে মিস করি আমি।“
“আমি আসব।“
“ভালোবাসি তোমাকে।“
“আমিও।“
এত মাস বাদে, স্ট্যানলি নিশ্চিত না, একেবারেই নিশ্চিত না। কিন্তু লিজ আঁকড়ে ধরার মত একটা খড়কুটো।
“আমি ডুবছি”, বলে উঠলো স্ট্যানলি। “আমি মরি। মরিয়র। মরিয়ার। মর্টাস সাম।“ (ল্যাটিন -মৃত্যুমুখী। মম। মৃত্গামী মম)
আগে যখন লিজের সাথে ডেটিং করতো। যখন তারা একসাথে ছিল, স্ট্যানলি এসব ফ্রীওয়ে গেমস খেলত না। স্ট্যানলী এই মেয়েগুলোকে মরতে দেখেনি। স্ট্যানলিকে ঘুমের মধ্যে নিজের কাছ থেকে লুকাতে হয়নি। “সায়েডো। সায়েডাম। সেসিডি।“ (ল্যাটিন-নিধন। হত্যা। স্বীয়কৃত্য।)
ভুল, ভুল। প্রথমবারের মত সে লিজের সাথে ডেটিংয়ে যাচ্ছে সে। সে শুধু পরে থেমেছে। পরে। লিজের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। কোন কিছুই সাহায্যে আসবে না। ডেস্পেরো। ডেস্পেরাবো। ডেস্পেরাভি। (ল্যাটিন-নৈরাশ্য। আশাহত। ব্যর্থ।)
আর যেহেতু এটা তার করার কোনই ইচ্ছা ছিল না তাই, সে কাপড় পড়লো। বের হয় গাড়ীর কাছে গেল। আর চালিয়ে ফ্রীওয়েতে চলে আসলো। একটা রেড অডি চালাতে থাকা মহিলার পিছনে আসলো সে। ফলো করতে লাগলো।
মহিলা অল্পবয়স্ক। কিন্তু ভালো চালায়। সিক্সথ সাউথ থেকে ফলো করে যে জায়গায় ফ্রীওয়ে ভাগ হয়ে আই-১৫ দক্ষিনে আর আই-৮০ পূর্বে মোড় নিয়েছে সেখানে চলে এল। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মহিলা ডানদিকের লেনে চলছিল, তারপর গতি পরবর্তন করে দুই লেনের গাড়ীগুলোর মাঝ দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে কেটে আই-৮০ তে উঠে আসলো। স্ট্যালনী তাকে ছেড়ে দেবার কথা চিন্তাও করছিল না। ট্রাফিকের ভেতর দিয়ে মোড় নিল সেও। একটা বাস জোরে হর্ণ দিয়ে উঠল। কর্কশ শব্দে ব্রক করলো কেউ। দুই চাকায় উঠে এল স্ট্যানলীর গাড়ী। নিয়ন্ত্রণ হারালো সে। একটা লাইটপোস্টে লাগতে যাচ্ছিল, কিন্তু পাশ কাটিয়ে গেল।
আই-৮০ তে চলে আসলো স্ট্যানলী, অডিটাকে কয়েকশ গজ দূর থেকে ফলো করতে লাগলো। দ্রুত ফাঁকটা কমিয়ে আনলো সে। মহিলা চালাক, নিজেকে বললো স্ট্যানলি। তুমি চালাক, ম্যাডাম। তুমি আমাকে ছেড়ে কথা বলবে না। আজকে কেউ না। আজকে কেউ না। আজকে কেউ মারা যাবে না, সে বলতে চাচ্ছিল। আর সে জানত ও আসলে ওই কথাই বলছে (আশা করছে; অস্বীকার করছে) কিন্তু নিজেকে কথাটা বলতে দিলনা সে। এমনভাবে কথা বলছিল সে, যেন একটা মাইক ওর মাথার উপর থেকে ঝুলছে। ওর বংশধরদের জন্য কথা রেকর্ড করছে।
ট্রাফিকের উপর যেন ভেসে চলছিল অডিটা, গড়ে পঁচাত্তরে। কাছ থেকে ফলো করছিল স্ট্যানলি। মাঝে মাঝে ট্রাফিকের মধ্যে একটা ফাঁক ব্যবহার করার আগেই বুঁজে যাচ্ছিল। তখন আরকটা খুজে পাচ্ছিল সে। কিন্তু এক ডজন গাড়ী পেছনে থাকতে মহিলা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। পার্লস ক্যানিয়নে আই-৮০ দিয়ে নেমে যাবার আগের শেষ এক্সিটটা নিল মহিলা। আই-২১৫ দিয়ে দক্ষিনে চলেছে। স্ট্যানলি পিছু নিল। যদিও একটা ফ্রীওয়ে থেকে আরেকটাতে যাবার জন্য কঠিন বাঁকগুলো নিতে ওকে হিংস্রভাবে ব্র্যাক করতে হচ্ছিল।
আই-২১৫ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মহিলা দ্রুত চালিয়ে গেল। পর্বতের গোড়ায় চলে যাওয়া একটা সরু দুই-লেনের প্যাচান রাস্তায় মোড় নিল। যথারীতি একটা কঙ্করবাহী ট্রাক খুড়িয়ে খুড়িয়ে ঘন্টায় ত্রিশ মাইল বেগে যাচ্ছিল, মাথার খুশকি মত রাস্তায় নুড়ি ফেলতে ফেলতে। ট্রাকের পিছনে গিয়ে জায়গা নিল অডি। আর স্ট্যানলির জি জায়গা নিল অডির পিছনে।
মহিলা চালাক। পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করেনি। এই রাস্তায় না।
ওরা যখন বিগ কটনউড হয়ে স্কি রিসোর্টের যাবার রাস্তার মোড়ে পৌছাল (এখন গ্রীষ্মের বন্ধ, তাই কোন গাড়ী নেই) মহিলা মনে হলো ডানে মোড় নেবার প্ল্যান করছে। ফোর্ট ইউনিয়ন বুলোভার্ড হয়ে ফ্রীওয়েতে ফিরবে। কিন্তু, বামে মোড় নিল মহিলা। স্ট্যানলি আগেই আঁচ করতে পেরেছিল। সেও বামে মোড় নিল।
প্যাঁচালো ক্যানিওন রোড দিয়ে কিছু দূর যেতে না যেতে স্ট্যানলির মনে পড়লো এই রাস্তাটা কোথাও যায়নি। স্নোবার্ডে গিয়ে রাস্তা শেষ, একটা মোড় ঘুরে আবার ফিরে এসেছে। মহিলা চালাক মনে হলেও, একটা বোকার মত চাল দিয়েছে।
আর তারপর তার মনে হলো, সে তাকে ধরে ফেলতে পারে। “আমি তোমাকে ধরে ফেলতে পারি মেয়ে। সাবধান।“ সে বললো।
মহিলাকে ধরতে পারলে সে কি করবে সে ব্যাপারে ও নিশ্চিত না। মহিলার কাছে বন্দুক থাকতে পারে। মহিলা নিশ্চই সশস্ত্র। না হলে এভাবে তার সাথে সাহস দেখাত না।
মহিলা অসম্ভব গতিতে মোড় নিচ্ছে। মহিলার সাথে সাথে চলতে গিয়ে গাড়ী চালানোর দক্ষতার শেষবিন্দুটা ব্যবহার করতে হচ্ছিল স্ট্যানলিকে। তার খেলা সবচেয়ে কঠিন ফলো এটা। কিন্তু মনে হচ্ছে খেলা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে। যেকোন একটা বাকে ওদিক থেকে আরেকটা গাড়ীর সাথে সংঘর্ষে মহিলার গাড়ি চূর্ণ হয়ে যেতে পারে। সাবধান, সে ভাবলো। সাবধান, সাবধান। এটা শুধু একটা খেলা, ভয় পেও না। ঘাবড়ে যেও না।
ঘাবড়ানো? যে মূহুর্তে মহিলা বুঝতে পেরেছে তাকে ফলো করা হচ্ছে সে গতি বাড়িয়েছে আর ফাঁকি দিয়েছে। লক্ষ্যহীনভাবে তাকে দৌড় কাটাচ্ছে। ওই প্রান্তে কোনরকম বিভ্রান্তির চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না। এ কঠিন চিজ। সে যখন ওকে ধরবে, মহিলা জানে তখন তার কি করতে হবে।. মহিলার জানা উচিত। ভেনিয়েবাম। ভেনিয়াম। ভেনিয়েস। (ল্যাটিন – এসেছিলাম। ক্ষমা হলো। বীজনির্গমিত হলো।) নিজের কৌতুকে নিজেই হেসে উঠলো সে।
তারপর হঠাৎই হাসি বন্ধ করলো সে। ব্রেকটা পিষে ফেলে স্টিয়ারিংটা প্রচন্ডভাবে ডানে ঘুরালো। একটা লাল ঝলক পাশের রাস্তায় চলে যেতে দেখেছে এখনি সে। শুধু একটা ঝলক, কিন্তু সেটাই যথেষ্ট। লাল অডির মাগী মনে করেছে তাকে বোকা বানাবে। মহিলা মনে করেছে পাশের রাস্তায় পালাবে আর সে সোজা চলে যাবে।
মোড়ের মধ্যে নুড়িপাথরের উপর পিছলে এগোল সে। কিন্তু সরু ময়লা গলিটাতে আলোড়ন তুলে নিয়ন্ত্রন ফিরিয়ে আনলো। ঢোকার মুখের কয়েকশ গজ সামনে অডিটা ত্থেমে আছে।
থেমে।
অবশেষে।
ওর পিছনে চলে আসলো সে , দরজার হাতলেও ওর হাত চলে গিয়েছিল। কিন্তু আসলে মহিলা ত থামতে চায় নি। সে চলে যাওয়া না পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে চেয়েছিল। মহিলার জন্য খুব বেশী চালাক ছিল সে। সে ত দেখেছে। এখন মহিলা ভয়ংকরভাবে নিঃসঙ্গ একটা পাহাড়ী রাস্তায় আটকা পড়েছে। গলে যাওয়া বরফে এখনো ভেজা। শুধু গাছ ছাড়া আর কিছু নেই আশে পাশে। এমন এক আবহাওয়া-স্কিয়ারদের জন্য খুব গরম, হাইকারদের জন্য খুব ঠান্ডা। মহিলা ভেবেছিল তাকে বোকা বানাবে। এখন ওর ফাঁদে আটকেছে।
মহিলা চলতে শুরু করলো। পিছু নিল সে। উচু নিচু নোংরা রাস্তা, ঘন্টায় বিশ মাইলো অস্বস্তিকরভাবে দ্রুত। মহিলা ত্রিশে উঠলো। ওর শকগুলো উড়ে জাহান্নামে যাবার অবস্থা হলো, কিন্তু এটাকে পালাতে দেওয়া যায় না। স্ট্যানলীর কাছে থেকে মহিলা পালাতে পারবে না। তার অডি ইন্দ্রিয়সুখদায়ী এক প্রতিশ্রুতি।
পার্শ্ব গিরিখাত ধরে অনন্ত ঝাঁকুনির মধ্যে দিয়ে চলার পর পাহাড়্গুলো হঠাৎ একটা ছোট উপত্যকা মেলে ধরল। রাস্তাটা, কিছু সময়ের জন্য, সমান, কিন্তু সোজা না। আর অডি গতিবেগ অবিশ্বাস্যভাবে ঘন্টায় চল্লিশ মাইল বেগ তুলে ফেলল। মহিলা হার মেনে নেবে না। জঘন্যরকম ভালো ড্রাইভার এই মহিলা। কিন্তু স্ট্যানলীও একটা জঘন্যরকম ভালো ড্রাইভার। “খেলা ছেড়ে দেওয়া উচিত আমার।“ অদৃশ্য মাইক্রোফোনের উদ্দেশ্য বললো সে। কিন্তু খেলা ছাড়লো না সে। ছাড়লো না। ছাড়লো না।
রাস্তাটা খেলা ছেড়ে দিলো।
দু ধারে সারি সারি গাছওয়ালা একটা মোড় নিল সে। হঠাৎ আর রাস্তার নেই সেখানে। গাছের মধ্যে দিয়ে শুধু একটা ফাক, আর কয়েকশ গজ দূরে, গিরিখাতের অপর প্রান্ত। ডানে, চোখের কোন দিয়ে, চুলের কাঁটার মত রাস্তাটা যেখানে বাঁক নিয়েছে, দেখল অডিটা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। দেখল, ভাবলো, একটা ভয়ার্ত চেহারা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওরকম চেহারার জন্য মুখ ফিরালো সে, দেখার চেষ্টা করলো ঘাড়ে উপর দিয়ে। চেহারাটা দেখার জন্য মরিয়া। মরিয়া না দেখার জন্য যে তার দিকে শোভাময়তায় ঝুঁকে গেছে গাছগাছালী। পাথরগুলো উঠে দাঁড়িয়েছে, বড়, পেটমোটা হয়ে। উপরের দিকে মুখ করে থাকা একটা পাথরে নিজেকে শুলবিদ্ধ করলো সে। নিজেকে আর তার ড্যাটসান ২৬০জেডকে। ওটার ডগাটা গিলে নিল সে।

অডিতে বসে ছিল সে। ঠকঠক করে কাপছে। তার দেহ থেকে স্বস্তির অশ্রু নিঃসরন হচ্ছে। ঘটে যাওয়া ঘটনার ধাক্কা সংবরন করছে। স্বস্তি এবং ধাক্কা। হ্যা। কিন্তু এতক্ষনে সে যেনে গেছে এই কম্পন তার থেকেও বেশি কিছু। সেটা পরম যৌনানন্দেরও। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। নিঃশব্দে চিৎকার করলো সে নিজের কাছে। চার, চার, চার। চারটা যথেষ্ট, স্টিয়ারিং হুইলে আঘাত করতে করতে বললো সে।
তারপর ধাতস্থ হলো সে। কামোত্তেজনার চরম পর্যায় পার হলো। শুধু উরুর মাঝের কাঁপুনি আর থেকে থেকে ওঠা খিঁচুনি ছাড়া। গাড়ীটা ঘুরিয়ে উল্টোমুখ হয়ে গিরিখাত বেয়ে সল্ট লেক সিটির দিকে ফেরা শুরু করলো। যেখানে এরই মধ্যে আধা ঘন্টা দেরী হয়ে গেছে তার।


মন্তব্য

তারেক অণু এর ছবি

জব্বর সাসপেন্স হাততালি

অনেক দিন পর তোর লেখা পড়লাম, এমন অনুবাদ করবি তো কার কার গল্প আনব ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানা। আর লেখাটার কয়েক জায়গা ছেঁটে ফেললে বেশী ধারালো হয়ে উঠত বাঁক গুলো খাইছে

অবনীল এর ছবি

আচ্ছা জানাবো। লেখাটা পড়ার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

জোনাকি এর ছবি

লেখা ভালো হয়েছে। ভয় পেয়ে গেলাম! ফলো করার ব‌্যাপার টা আমি সবসময় করি, রাতে এবং অপরিচিত রাস্তায় ড্রাইভ করার সময়, আর কেউ ফলো করলে ভাবি একটা সঙ্গী পাওয়া গেল!

অবনীল এর ছবি

আপনি ত বিপদজনক। দাড়ান ফলো করছি খাইছে । পড়া জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

ভালোই গল্পটা। কিন্তু কয়েক জায়গায় থেকে থেকে গতি কমে গেছে। এটা মূল গল্পেরো হতে পারে অবশ্য, বুঝলাম না হাসি

অরসন স্কটের নাম আগে শুনিনি। গল্প সংকলনটা কি ই-বুক আকারে কোথাও থেকে নিয়েছেন ভাইয়া ?? সেই ক্ষেত্রে লিঙ্ক দেয়া যাবে ?? থ্রিলার পড়তে মজা পাই -তাই বললাম হাসি

অবনীল এর ছবি

কাহিনীর রাস্তায় বাঁক বেশী মনে হয়, এইজন্য গতির ওঠানামা হতে পারে। খাইছে ভালো লাগার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অরসন স্কট কার্ড এর একটা পরিচয় হল তিনি জেমস ক্যামেরোনের 'দ্য এবিস' এর চিত্রনাট্যকে উপন্যাসে রূপান্তর করেছেন। বইটা সার্চ করে পেতে পারেন। কাহিনীকার আর সংকলনের নাম ত দিয়েই দিয়েছি। চোখ টিপি

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

মুহিত হাসান এর ছবি

ঘষে মেজে রহস্য পত্রিকায় দিয়ে দেন

অবনীল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হেতেরা টিঁয়া হুইসা কিসু দিবনি ? খাইছে

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

দিগন্তু চৌধুরী এর ছবি

আমার এক বন্ধু নাকি রহস্য পত্রিকায় লেখা পাঠিয়ে বিল ঠিকই পেয়েছিল, মাত্র এক পাতার লেখা, বিল ছিল ২৫ টাকা। চিন্তিত

অবনীল এর ছবি

হা হা তাই নাকি! মজা তো! দেঁতো হাসি

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

শাব্দিক এর ছবি

বেশ ভাল লাগল অনুবাদ। এই গল্পটার ইংরেজি নামটা জানতে পারি? ওটা পড়তে ইচ্ছা করছে।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

অবনীল এর ছবি

ভালো লাগার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- । মূল গল্পের নাম 'ফ্রিওয়ে গেমস'

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

খেকশিয়াল এর ছবি

এরিইইইই কাগুউউ!!!! জব্বর অনুবাদ হইছে!! ফাটাফাটি গল্প!! দোস্ত আরো কয়েকটা এইরকম অনুবাদ কর, শিজ্ঞির!!

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অবনীল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- দোস্ত। এদ্দিন পরে মনে করে পড়ার জন্য। তোর উৎসাহ সবসময় আরো লিখতে অনুপ্রানিত করে। তাই সবসময় মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকি। আরো করব। হাসি

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

দারুণ জমাট বাঁধা সাস্পেন্স!
অনুবাদ ভালো হয়েছে, তবে ফরম্যাটিং-এ আর একটু নজর দিলে পড়ে আরাম হতো মনে হলো। কিছু প্যারা দিলে, কিছু ব্রেক। ল্যাটিনগুলো রোমান হরফে লিখলে বেশি ভালো হতো মনে হয়েছে, আর কিছু ডায়ালোগ বাংলা করলে ভালো লাগে না বুঝতেই পারছি, তাও, বাংলা হরফে ইংরেজী পড়াটা আসলে বাংলিশ পড়ার মতোই কঠিন লাগে আমার! যাই হোক, দারুণ! আরও কিছু আসুক! দেঁতো হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

অতিথি লেখক এর ছবি

"হাঁপাতে হাঁপাতে আর ধড়ফড় করতে থাকা বুকে মহিলা স্ট্যানলিকে ড্রাইভ করে চলে যেতে দেখছে," এই লাইনটা বুঝতে পারি নাই । গল্পটা অসাধারণ ! দারুণ সাসপেন্স স্টোরী ! আপনার অনুবাদটাও বেশ ভালো লেগেছে ।

তালেব মাষ্টার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।