এটি একটি গল্প হতে পারে

নাজনীন খলিল এর ছবি
লিখেছেন নাজনীন খলিল [অতিথি] (তারিখ: সোম, ২৭/০৯/২০১০ - ১১:০২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ক্রমশঃ মিশে যাচ্ছি পাহাড়ের অশ্রুধারার ভিতরে।এই জলধারার অন্তে জন্ম নিয়েছে যে নদী আমি তার নাম দিয়েছি--'নিঃসঙ্গতা'।
দূর থেকে দেখলে------সে কেবল দূর থেকেই দেখা----মনে হয় দিগন্তে আকাশ আর পাহাড় একসাথে মিশে আছে- খুব ঘনিষ্ঠ
বন্ধুর মতো- জড়াজড়ি করে আছে।দৃষ্টিভ্রম।এক বন্ধু বলেছিল,-'পাহাড়ের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়।কেমন একাকী-নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকে'।মানি।চোখের বিভ্রমে যাই মনে হোক --পাহাড়তো সত্যি সত্যি কি ভীষণ নিঃসঙ্গ আর বিষন্ন!
চোখের সামনে স্পষ্টতঃই দেখতে পাচ্ছি নিবিড় বনানী-ছাওয়া একটি সবুজ পাহাড়।কি তীব্র লাল পারিজাত আর পলাশ ফুটেছে!
থোকা থোকা জারুল-শিরীষের ফুলের জলসায় পাখী-প্রজাপতি আর ফড়িংয়ের ভোর থেকে সায়াহ্ন পর্যন্ত লুকোচুরি-হুটোপুটি দুরন্তপনা।তবু তার বিষাদ ঘুচেনা।
আসলে এভাবে পাহাড়ের দুঃখের কথা বলতে চাইনি।আমি বলতে চেয়েছি একটি প্রজাপতির কথা।যার ডানায় মেখে দিয়েছিলাম আমার হাতের আবীর।এবং সেই প্রিয় নদীটির কথা।যার দুই পারের হরিৎ ঘাসের বুকে নীল-হলুদ-গোলাপি হরেক বর্ণের ফুলের মেলা।ক্ষণে ক্ষণে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে পালিয়ে যাওয়া আকাশের ভিতরে হারিয়ে যাবার গল্প।
অথবা একটি লাল ফড়িংয়ের রূপকথা-উপাখ্যান।

* * * * * *

স্মৃতি কেবল আনন্দ নয়।সে বিস্মরণের অন্য প্রান্ত থেকে তুলে আনে বিদ্রোহ এবং যুদ্ধের কথা।জয় এবং পরাজয়ের গল্প।
চিলেকোঠায় পরিত্যক্ত নাটাইয়ের বিবর্ণ সুতো।রংচটা লাল-নীল ঘুড়ির কংকাল। অপটু হাতের চিত্রশৈলি--
গ্রামের দৃশ্য, ডোনাল্ড ডাক।ইয়ো ইয়ো।মার্বেলের বাক্স।
" জীবনের ধন কিছুই যাবেনা ফেলা
ধুলোয় তাদের হোক যত অবহেলা।"

কিছুই ফেলা হয়নি।ফেলা হয়না।স্মৃতির সিন্দুক খুলে মাঝে মাঝেই উঁকি দিতে হয়।কখনো উঠে আসে বহুমূল্য হীরে-জহরৎ।কখনোবা উথাল-পাথাল এক যন্ত্রণা।
কাগজ পুড়ানোর সাথে সাথে স্মৃতিও পুড়ানো হয়ে গেছে ----এমন নির্বোধ ভাবনাকে কি বলা যায়?'করুণা' শব্দটি শুধুমাত্র নির্বোধদের জন্য সংরক্ষিত করে ফেলি।

এইসব পিছুটানা স্মারক থেকে গড়ে নেই এক আগুনের পাখী ।যে তার উড়ার পথে পথে ছড়িয়ে দেবে অগ্নি-পালক।সেই পথ দিয়ে যাবে যেসব পথিকেরা---তাদের দগ্ধ পায়ের ছাপে আঁকা ছবিগুলো কেমন হতে পারে?পাখীর কন্ঠে কেমন বাজবে ---আগুনের গান--আগুনের সুর?

* * * * * *
নির্বাসনের কত না আয়োজন!
আলোকসজ্জা।ফুল।ঝলমলে জেল্লাদার বেশ-বিন্যাস।গয়না-গাটি।সানাই।ধুপ।পানাহার।হৈ চৈ।আনন্দ।
ফুল-ছড়ানো পথে শোভাযাত্রা।রাস্তার দুই পাশে মাঙ্গলিকধ্বণি। শুভেচ্ছার পুষ্পবৃষ্টি ঝরে ঝরে পড়ে।এসব উচ্ছাসের মাঝখানে উহ্য থাকে----মাকড়শার জালে আটকে যাওয়া প্রজাপতির কথা। ছল-চাতুরি এবং নিঃশর্তে বিকিয়ে যাবার গল্প।
'সোনার খাটে ঘুমাও কন্যা,মায়াবাণ- দৈত্য তোমার পাহারায় আছে।'

ঘুম ভাঙ্গলেই অন্য পৃথিবী।একে একে খুলবে মুখোশ।ছিন্ন হবে মায়াজাল।জানালাবিহীন ঘর।আলোহীন-বায়ুহীন।
নেই আকাশ দেখার কোন ঘুলঘুলি।একটি মাত্র দরোজা নেমে গেছে এক অন্তহীন অন্ধকারের দিকে।সিঁড়ির পর সিঁড়ি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে কোন পাতালের দিকে এই অগস্ত্য যাত্রা?


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগল। শুভকামনা।

সুবীর কর

নাজনীন খলিল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

স্মৃতি কেবল আনন্দ নয়।সে বিস্মরণের অন্য প্রান্ত থেকে তুলে আনে বিদ্রোহ এবং যুদ্ধের কথা।

একটাদুটো লাইন এভাবে জ্বলে উঠল।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নাজনীন খলিল এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

শুভেচ্ছা।

বইখাতা এর ছবি

সুন্দর।

বিরাম চিহ্নের পরে স্পেস দিলে পড়তে আরাম লাগে।

নাজনীন খলিল এর ছবি

ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

"স্মৃতি কেবল আনন্দ নয়।
সে বিস্মরণের অন্য প্রান্ত
থেকে তুলে আনে বিদ্রোহ
এবং যুদ্ধের কথা।জয় এবং পরাজয়ের
গল্প।
চিলেকোঠায় পরিত্যক্ত নাটাইয়ের
বিবর্ণ সুতো।রংচটা লাল-নীল
ঘুড়ির কংকাল। অপটু হাতের
চিত্রশৈলি --
গ্রামের দৃশ্য, ডোনাল্ড ডাক।
ইয়ো ইয়ো।মার্বেলের বাক্স।"

এক কথায় অসাধারন

-সমুদ্র সন্তান

নাজনীন খলিল এর ছবি

ধন্যবাদ।

শুভেচ্ছা রইল।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।