শৈশবের ছোট খাটো কিছু দুর্ঘটনা - ১

কীর্তিনাশা এর ছবি
লিখেছেন কীর্তিনাশা (তারিখ: বুধ, ২০/০৮/২০০৮ - ৭:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বুড়ো হয়ে যাইনি এখনো, তা ঠিক। কিন্তু বয়স একেবারে কমও হয় নি। এখন মাঝে মাঝে পেছন ফিরে তাকানো যায়। মাঝে মাঝে শৈশব কৈশোরের স্মৃতি রোমন্থন করে সুখ-দুঃখের ঝিনুক থেকে মুক্তোও আহরন করা যায়। তাই করি মাঝে মাঝে। আর তাই করতে গিয়ে - নিজের ছেলেবেলার দিকে তাকিয়ে দেখি, এ ক্ষুদ্র জীবনে ছোট ছোট দুর্ঘটনা ঘটেছে বেশ কিছু। যে সব দুর্ঘটনা আরেকটু বড় হলেই আমার জীবন নিয়ে টানাটানি লেগে যেতো অথবা অনেক বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পাড়তো। তেমনি কিছু ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি।

দুর্ঘটনা - ১ : চুলোর সাথে পরিচয়

এ ঘটনা যখন ঘটে তখন আমার বয়স ছয় মাসের একটু বেশি। স্বভাবতই এ কাহিনীর লেশ মাত্র আমার মনে নেই। পুরোটাই আমার বড় বোনদের কাছ থেকে এবং আমার মা-এর কাছ থেকে শোনা।

আমরা তখন গ্রামে থাকি। শুধু বাবা একা শহরে থাকেন, চাকরী করেন। সেই সময়ে আমি কেবল হামা দেয়া শিখেছি। চার হাত পায়ে গুট গুট করে বাড়ির সারাটা উঠোন চষে বেড়াই বিপুল উল্লাসে। আর যা পাই তাই খাই। মাটি, পোকা-মাকড় কোন কিছুই বাদ যায় না। বিশেষ করে এক ধরনের পোকা নাকি আমার খুবই প্রিয় ছিল। সে পোকা এখন আর দেখতে পাইনা। নামও জানিনা। লাল এক ধরনের পোকা। দেখতে অনেকটা কেচোঁর মতো। কিন্তু সে পোকার ছিল অসংখ্য পা। সেই সব পায়ে নিবিড় ছন্দ তুলে সে ধির গতিতে হেটে যেত। আর মানুষের ছোঁয়া পেলে মুহুর্তে গুটিয়ে গোল হয়ে যেত। তো সেই পোকা আমি নাকি খুব মজা করেই খেতাম।

সেই সময়ের এক দিন দুপুরের ঘটনা। আমি বাড়ির রান্নাঘরে খেলছি একটি দুধের ছোট টিন নিয়ে। সে টিন আমি হাতের ধাক্কায় গড়িয়ে দিয়ে আবার হামা দিয়ে গিয়ে ধরি আর মুখে হুম! হাম! শব্দ করে বিজয় ঘোষনা করি। আমার পাশে মা বসে চুলোয় ভাত রান্না করছিলেন। আর আমার বড় আপা তরকারি কুটছিলেন আর একটু দূরে।

বড় আপার তরকারি কোটাকুটি শেষ হলে, তিনি পুকুর ঘাটে গেলেন সেগুলো ধোয়ধুয়ি করতে। আর মা ভাত হয়ে যাওয়ায় ভাতের পাতিল নিয়ে ভেতরের ঘরে গেলেন ভাতের মার ঝরাতে। যে মাটির চুলোতে রান্না হয়েছে তার আগুন তখন নেভানো থাকলেও, লাকড়ি পোড়া কয়লাগুলো লাল টুকটুকে হয়ে গন গন করে তাপ ছড়াচ্ছিল।

বড় আপা একটু পরে পুকুর ঘাট থেকে তরকারি ধুয়ে রান্না ঘরে ফিরলেন। ফিরেই দেখলেন আমার পুরো শরীর চুলোর ভেতরে। শুধু পা দুটো দেখা যাচ্ছে বাইরে থেকে। আসলে আমি যে দুধের টিনটা নিয়ে খেলছিলাম তা গড়িয়ে গিয়ে ঐ চুলোয় পড়েছিল আর তা উদ্ধার করতে গিয়ে আমার ঐ দশা ।

বড়ো আপা 'ও মাগো!' বলে এক গলা ফাটানো চিত্কার করে, তরকারির বাসন ছুড়ে ফেলে, ছুটে গিয়ে আমাকে তুললেন। ততক্ষনে আমার জ্ঞান নেই হয়ে গেছে। আমার মাথার চাঁদি থেকে শুরু করে চোখের একটু উপরে কপাল পর্যন্ত পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে দুই হাত। আমার মা ভেতর থেকে ছুটে এলেন ঝড়ের বেগে। ছুটে এলেন দাদী, ফুপু সহ আমার অন্যান্য বোনেরা।

আমার দাদা তখন আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান। আর আমি তার ছেলের ঘরের একমাত্র পুত্র সন্তান, অর্থাত্ কিনা বংশের বাত্তি। তাই বাজার থেকে দাদাও ছুটে এলেন খবর পেয়ে। মুহুর্তের মধ্যে মোটামুটি পুরো গ্রাম ভেঙে পড়লো আমাদের বাড়িতে। তার মাঝে মা আমাকে কোলে নিয়ে পাথরের মতো বসে রইলেন। আমার বোনেরা, দুই ফুপু আর দাদী কাঁদছিলেন তারস্বরে। আর দাদা বকে সবার গোষ্ঠি উদ্ধার করছিলেন - এত লোক থাকতে কি করে এত বড় দূর্ঘটনা ঘটলো এটাই তার প্রশ্ন।

তারপর ডাক্তার আসলো। গ্রামে যে ডাক্তার ছিল তাকে তো আনা হলোই সেই সাথে গঞ্জ থেকেও আনানো হলো সেখানকার বড় ডাক্তার। তাদের চিকিত্সায় আর মা, বোন এবং দাদা-দাদীর অসীম স্নেহে, যত্নে, শুশ্রুসায় সে যাত্রা বেঁচে গেলাম। ভালো হয়ে গিয়েছিলাম দু মাসের মাথায়। তবে সে দূর্ঘটনার চিহ্ন স্বরূপ আমার বা কনুইয়ে এখনো একটা ছোট পোড়া দাগ বহন করছি আমি।

দুর্ঘটনা - ২ : খালের পানিতে খাবি খাওয়া

আমার বয়স তখন আট কি নয়। অনেক আগেই দাদার বাড়ি ছেড়ে শহরে চলে এসেছি আমরা। গ্রামে যাই প্রতি বছর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে। গ্রাম থেকে দাদা আসেন আমাদের নিতে অথবা বড় মামা, ছোট মামার কেউ। আমার দাদাবাড়ি, নানাবাড়ি একই গ্রামে হওয়ায় এই এক সুবিধা ছিল। গ্রামে যাওয়া মানে দাদা আর নানা দুই বাড়িতেই যাওয়া। দুই বাড়িরই আদর, সমাদর উপভোগ করা।

তো যে সময়ের কথা বলছি তখনও এমনি বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে গ্রামে গিয়েছি। তখন শীতকাল। নানা বাড়ি, দাদা বাড়ি দাবড়ে বেড়াই প্রতিদিন। পিঠা পুলি খাই। দাদা-দাদী, নানা-নানী, খালা-ফুপু, মামা-চাচা সবার প্রচ্ছন্ন স্নেহ আর প্রশ্রয় পাই। খালাতো, চাচাতো, ফুপাতো, মামাতো ভাই বোনদের সাথে খেলা-ধূলা করি। ঝগড়া, মারামারিও করি। কিন্তু আবার মিটমাট হতে সময় লাগে না মোটেই।

সারাদিন এমন করে কাটালেও দুপুর বেলা গোসলটা ঠিকই বাড়ির পাশের খালে করতাম। এবং অন্তত এক ঘন্টা ডুবোডুবি না করলে আমার গোসল করে তৃপ্তি হতো না। তখনো সাতার শিখিনি। তাই বড়রা কেউ আমাকে খালে যেতে দিতে চাইতেন না। কিন্তু আমিও ছিলাম নাছোড়বান্দা, কান্নাকাটি করে এমন পরিস্থিতি করতাম যে তারা আমাকে খালে যেতে দিতে বাধ্য হতেন। তবে সাথে বড় কেউ থাকতেন আমার গার্ড হিসেবে। তার কাজ হতো খালের তীরে বসে আমার দিকে লক্ষ্য রাখা। বেশিরভাগ দিনই আমার সাথে আমার সমবয়সী অন্যান্য কাজিনরাও থাকতো। তখন সবাই মিলে ঝাঁপাঝাপি করতাম। কে কতক্ষন পানির নিচে ডুব দিয়ে থাকতে পারি তার প্রতিযোগীতা করতাম।

আমাদের গ্রামের সে খাল ছোট খাটো একটা নদীর মতো। সবসময় তাতে স্রোত থাকে। জোয়ারের সময় একটু মন্থর হলেও, ভাটার সময় সে স্রোত তিব্রতর হয়ে ওঠে। যে দিনের ঘটনা সেদিন আমি একটু আগে ভাগেই গোসল করতে গেছি। সাথে গার্ড হিসেবে আমার চার বছরের বড় মামাতো ভাই মিঠু। তিনি আমাকে খালে নামতে বলে গেলেন ছোট প্রকৃতির ডাক সারতে।

আমি সাথে সাথে সুরুত্ করে খালে নেমে পড়লাম। মনের ভেতর ভিষন আনন্দ। আসলে তখনকার দিনে গ্রামের বাড়িতে আমার এমন একটা মুহুর্ত কাটতো না যখন আমি আনন্দে থাকতাম না। খালের ঘাটে তখন আমি পুরোপুরি একা। খুশিতে একটু স্টাইল করে ডুব দিতে গিয়ে দিলাম এক লাফ। কিন্তু লাফটা হয়ে গেল বেমক্কা আর জোড়ে। মুহুর্তে ছিটকে গিয়ে পড়লাম গভীর পানিতে।

দু'চারটা খাবি খেয়ে স্রোতের টানে ভেসেও গেলাম কিছু দূর। বুকটা ধরাস করে উঠলো ডুবে যাচ্ছি ভেবে। কিন্তু সাহস হারালাম না। দুই হাতে উপরের দিকে পানি ঠেলে আর আস্তে আস্তে পা নাড়িয়ে ডুব দিলাম। পায়ের তলায় মাটি ঠেকতেই বসে পড়লাম উবু হয়ে। দুই হাতে আঁকড়ে ধরলাম কাঁদামাটি। তারপর চার হাত-পায়ে হামাগুরি দিয়ে খালের পাড় ধরে ওপরের দিকে ওঠা শুরু করলাম। মাথার ওপর তখন আমার থৈথৈ পানি। ডুবোডুবিতে পটু ছিলাম বলে দম ধরে রাখতে পারতাম তখন অনেক ক্ষন। তাই দমে কোন সমস্যা হলো না।

কিছুক্ষন এরকম ওঠার পর আর দম ধরে রাখতে না পেড়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। তারপর - আহ্ কি শান্তি! দেখি আমি কোমড় পানিতে দাঁড়িয়ে আছি। বুক ভরে লম্বা নিঃশ্বাস নিলাম। পাড়ে উঠে কাঁদার ওপর বসে পড়েই হাঁপাতে লাগলাম। তখন শুনি মিঠু ভাইয়া একটু দূরে ঘাটের ওপর দাঁড়িয়ে ধমকে উঠেছেন - 'তুই অত দূরে কি করস? ঘাটের কাছে আয়।' কি যে করি, আর কি যে করেছি তা আর তাকে বললাম না। পরেও কাউকে বলিনি। তাহলে আমার খালে গোসল করার ইতি হয়ে যেত ওখানেই। সেই ঝুঁকি তো আমি নিতে পারি না !

গ্রামে গেলে এখনো আমি খালে ঝাপাঝাপি করি। কাজিনদের সাথে নিয়ে হৈ-হল্লা করি। কিন্তু সেই দিনটার কথা মনে হলে বুকটা কেমন দুরু দুরু করে ওঠে। খুব বেশি হলে ত্রিশ থেকে চল্লিশ সেকেন্ডের ঘটনা ছিল সেটা। অথচ সে সময় মাথা যদি ঠিকমতো কাজ না করতো তবে এখন বসে বসে আর এ কাহিনী লিখতে হতো না। হয়তো কোন বট গাছে অথবা ছাতিম গাছে ভূত হয়ে নাচানাচি করতাম আর ভেংচি কাটতাম বসে বসে।

(শৈশবের আরো দু'তিনটা দুর্ঘটনার কথা বলা বাকি রয়ে গেল। সেগুলো নিয়ে আরেকবার লেখার ইচ্ছা পোষন করছি বলে, এটাকে সিরিজ করে ফেললাম।
মূল কথা হচ্ছে - আগামী পর্বে সমাপ্য)


মন্তব্য

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

"লাল এক ধরনের পোকা। দেখতে অনেকটা কেচোঁর মতো। কিন্তু সে পোকার ছিল অসংখ্য পা। সেই সব পায়ে নিবিড় ছন্দ তুলে সে ধির গতিতে হেটে যেত। আর মানুষের ছোঁয়া পেলে মুহুর্তে গুটিয়ে গোল হয়ে যেত। তো সেই পোকা আমি নাকি খুব মজা করেই খেতাম।"
আপনি পোকা খেতেন ?
ওয়াক !
লেখা মজা হয়েছে। হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

কীর্তিনাশা এর ছবি

ওয়াক! করার কিছু নেই শিমুল আপু। ছোট বেলায় শুধু পোকা কেন, অনেকে অনেক কিছুই খেয়েছে। আপনি কি কি খেয়েছেন মনে করে দেখেন। হা হা হা!
লেখা ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সৌরভ এর ছবি

তবে সে দূর্ঘটনার চিহ্ন স্বরূপ আমার বা কনুইয়ে এখনো একটা ছোট পোড়া দাগ বহন করছি আমি।

আপনি তো দেখি বোনাস লাইফে আছেন।
জটিল।



২৭. বেহেস্ত যাওনের খায়েশ হগ্গলের, আপত্তি শুধু মরনে


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

কীর্তিনাশা এর ছবি

সৌরভ ভাই ঠিক কইছেন, বোনাস লাইফেই আছি মনে হয় হাসি
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

খেকশিয়াল এর ছবি

কীর্তিনাশা ভাইডি, বান্দর তো কম আছিলেন না দেখা যায়, বান্দ্রামির লেইগা এই লন পাঁচ তারা, আরো লিখতে থাকেন দেঁতো হাসি

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

কীর্তিনাশা এর ছবি

ধন্যবাদ শিয়াল পন্ডিত ভাই! বাদরামিতে যে আপনিও কম যান না তা আপনার লেখা পড়লেই বোঝা যায়।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ছেলেবেলার স্মৃতি অমলিন!
লেখা দারুন হয়েছে।

কীর্তিনাশা এর ছবি

ধন্যবাদ প্রিয় কবি !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আয় ফিরে আয় ছেলেবেলা... দুরো মিয়া ছেলেবেলার কতোশতো স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়ে গেলেন।

কীর্তিনাশা এর ছবি

জলদি লিখা ফালান। তারপর সচলে পোস্টান। আর আমরা ঝটপট পড়ে ফেলি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

আবু রেজা এর ছবি

গল্প পড়ে আঁতকে উঠি! ফিরে যাই ছেলেবেলায়। জলদি ছাড়েন পরবর্তী পর্ব।

যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গ বাণী
সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

কীর্তিনাশা এর ছবি

ছাড়বো ভাই একটু অপেক্ষা করেন।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হায় হায় বলেন কি ইয়ে, মানে... আপনি তাইলে দুইবার মরতে মরতে বেচে গেলেন
টাইটেল দেখছি ১ লেখা তারমানে আরো আছে? অ্যাঁ
আমারও একটা ঘটনা আছে, আমি তখন খুবি ছোট কোলের বাচ্চা, ১বছর কি আরো কম হবে। ঘটনা শুনেছি আব্বু আম্মুর কাছে। তো আমার কিছুদিন বেশ জর হয় তাই আব্বু আম্মু বাসায় ডাক্তারকে ডেকে আনল। ডাক্তার করল কি আমাকে হাই-ডোসের ম্যালেরিয়া না কি জানি ইনজেনশন দিয়ে চলে গেল। তো আমার ফুপু আমাকে ঘুম পারানোর জন্য কোলে নিয়ে হাটছে, বেশ কিছুখ্খন পর ফুপু খেয়াল করল আমি একদম চোখের পাতা ফেলছিনা। একদৃষ্টিতে ওপরের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রথমে ভাবল আমি ওপর দিকে তাকিয়ে দেখছি কিন্তু যখন দেখল হাত-পা শক্ত হয়ে গেছে আর চোখের পাতা পড়ছেনা তখন ভয়ে ফুপু চিতকার চেচামেচি শুরু করল, আম্মু ছুটে আসলে আম্মু আমাকে কোলে নিয়ে সাথে সাথে টয়লেটে গিয়ে পানির ট্যাপের নিচে আমার মাথা রাখে আর কাদতে কাদতে যত সুরা আছে সব পড়তে থাকে। এরকম বেশ কিছুখন পর আমি চোখ বন্ধ করি, আবার নরমাল হই। পরে অন্য ডাক্তারের কাছে গেলে কি ইনজেকশন দিয়েছে শুনে ডাক্তার রেগে যায় ঐ ডাক্তারের ওপর, বলে এটাতো এত ছোট বাচ্চাকে কখনই দেয়ার কথা না এটা এডাল্টদের অনেক হাই ডোসের আর বাচ্চারতো ম্যালেরিয়া না কি অসুখ ভেবেছিল সেটাই হয়নি। এই হল অবস্থা। এখনও জানিনা আমি কিভাবে বেচে গেলাম তখন আর আম্মুও কেন যে আমাকে অন্যকিছু না করে মাথা পানির নিচে রেখেছিল বলতে পারেনা।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

কীর্তিনাশা এর ছবি

আরে মুমু! আপনিও দেখি আমার মতো মরতে মরতে বাঁচছেন। এরেই মনে হয় কয় - রাখে আল্লাহ্ মারে কে!!হাসি
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অমিত আহমেদ এর ছবি

প্রথম ঘটনাটির মতো আমার চাচাও উনুনে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম শুনেছি। চাচা এখনও সেই স্মৃতি বয়ে বেড়ান বাম হাতের দুই আঙ্গুল হারিয়ে। আমার আর আমার ছোট ভাইয়ের পানিতে ডোবার একাধিক ঘটনা আমার মা খুব আগ্রহ নিয়েই আপনাকে বলবেন হাসি

লেখা ভালৌছে।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

কীর্তিনাশা এর ছবি

ধন্যবাদ অমিত ভাই।
তা কবে আসবো আপনার বাড়ি - আপনার মা -এর কাছ থেকে কাহিনী শুনতে? হাসি
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

দৃশা এর ছবি

ছোটবেলার আকাম কুকামের ধারা কি এখনও চলমান আছে কি নাই?
----------------------------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

কীর্তিনাশা এর ছবি

এইটা টপ সিক্রেট, কওন যাইবো না খাইছে
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

"লাল এক ধরনের পোকা। দেখতে অনেকটা কেচোঁর মতো। কিন্তু সে পোকার ছিল অসংখ্য পা। সেই সব পায়ে নিবিড় ছন্দ তুলে সে ধির গতিতে হেটে যেত। আর মানুষের ছোঁয়া পেলে মুহুর্তে গুটিয়ে গোল হয়ে যেত। তো সেই পোকা আমি নাকি খুব মজা করেই খেতাম।"

এটাকে আমাদের ভাষায় বলে কেঁড়াপোকা, , মাথায় উঠলে নাকি মানুষ বাঁচে না !

------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

কীর্তিনাশা এর ছবি

ধন্যবাদ নামের জন্য।
এই জন্যই বোধহয় কথায় আছে - মাথায় কেঁড়া উঠছে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পোকা খাইতেন! দেঁতো হাসি
পুরো মৃত্যুর দুয়ার থেকে ঘুরে এসেছেন, এটাই আল্লাহর রহমত। আমি নিজেও একটা দূর্ঘটনার কবলে পড়েছিলাম শৈশবে যার স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি! বাম হাতের কনুই ভেঙেছিল। এখনো সেলাইয়ের দাগ আছে। ডিটেইলে গেলাম না, তবে ভয়াবহ একটা দূর্ঘটনা ছিল (হাড় কয়েক টুকরো হয়েছিল)। আফসোস একটাই, বিশ্রি এই দাগটা নিয়েই কাটাতে হবে বাকিটা জীবন। তবে শুকরিয়া, এর থেকেও খারাপ কিছু হতেও তো পারতো! আর আরেকবার, আমার চেয়ে দুই বছরের বড় বোন ছোট্টবেলায় গরম পানি (গোসলের সময়) পুরো ঢেলে দিয়েছিল আমার পিঠে!
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ...
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

কীর্তিনাশা এর ছবি

অ প্র ভাই, অপেক্ষায় বেশিদিন রাখবো না।
কিন্তু কথা হচ্ছে একটু ডিটেইলে গিয়ে না হয় আপনার দুর্ঘটনার কাহিনীও আমাদের জানাতেন। কাহিনীটা জানার আগ্রহ হচ্ছে খুব।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।