সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে নির্যাতিতা নারীর পরিচয় প্রকাশে গণমাধ্যমের অধিকার বিষয়ক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: সোম, ১২/০১/২০১৫ - ২:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে জনৈক নারী মামলাটি দায়ের করেন। সেদিনই বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় এবং পরদিন সবগুলো দৈনিক পত্রিকায় খবরটি ফলাও করে ছাপা হয়। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও নিয়মিত সংবাদ পরিবেশিত হতে থাকে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতেও খবরটি ব্যাপক প্রচার পায়।
এবং তার পর থেকেই এই সংবাদটিকে ঘিরে অসংখ্য সুড়সুড়িমূলক সংবাদ ছড়াতে থাকে। অনলাইন সাইটগুলোর শেয়ার বাড়তে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে চলতে থাকে হাসি, ঠাট্টা, তামাশা, তর্ক-বিতর্ক। কেউ মেয়েটিকে প্রস্টিটিউটের স্তরে নামিয়ে আলোচনা শুরু করেন, কেউ তরুণটিকে দুশ্চরিত্র বলে চিহ্নিত করেন। বিভিন্ন মিডিয়াতে চলে বাদীর অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি, অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা নোংড়ামির স্তর অতিক্রম করে।
এই সুযোগটি তৈরি হয় একেবারে প্রথমদিন থেকেই বাদীর পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায়। প্রথম থেকেই গণমাধ্যমে মেয়েটির নাম, পরিচয়, ছবি, ক্যারিয়ার ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে প্রকাশ পেতে থাকে।

অথচ "নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০" এ স্পষ্ট করে বলা আছে 'এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হইয়াছেন এইরূপ নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা তৎসম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্যবিধ তথ্য কোন সংবাদ পত্রে বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাইবে যাহাতে উক্ত নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়৷"

আমরা অতীতেও দেখেছি নির্যাতিতা নারীর পরিচয় সবসময়ই গণমাধ্যমে গোপন করা হয়। তাহলে এই একটি ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম হলো?

এই পরিচয় প্রকাশে অপরাধের শিকার হওয়া নারী এখনো কোনো প্রতিবাদ করেননি, নিজে উদ্যোগী হয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এমনটাও দেখা গেছে। কিন্তু বাদী চাইলেই কি গণমাধ্যম আইন ভঙ্গ করে নারীর পরিচয় প্রকাশ করতে পারে?

অপরাধের শিকার নারীর পরিচয় প্রকাশে আইনে শুধু নিষেধাজ্ঞাই জারী করা হয়নি, এর শাস্তির বিধানও রাখা আছে। বলা হয়েছে "এর বিধান লংঘন করা হইলে উক্ত লংঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের প্রত্যেকে অনধিক দুই বৎসর কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷"

অপরাধের শিকার হওয়া নারী যদিওবা নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে আগ্রহী হন, তবুও আইন অনুসারে গণমাধ্যম তা প্রকাশের অধিকার রাখে না। সেক্ষেত্রে এই আইন লঙ্ঘনকারীর শাস্তি এবং জরিমানা আদায়ের দায়িত্ব কার?
রাষ্ট্রের?
রাষ্ট্র কি উদ্যোগী হবে?

রাষ্ট্র এক্ষেত্রে উদ্যোগী না হলে ভবিষ্যতে এই ঘটনাটি একটি ক্ষতিকর উদাহরণ হিসেবে রয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

কৃতজ্ঞতা: আলমগীর মোহাম্মদ, নাজমুল হক সুমন


মন্তব্য

রংতুলি এর ছবি

চলুক চলুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

এই ক্ষেত্রে বাদীকে প্রচার পাওয়ার জন্য অতি উৎসাহী মনে হয়েছে! তবে যথার্থই বলেছেন, 'অপরাধের শিকার হওয়া নারী যদিওবা নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে আগ্রহী হন, তবুও আইন অনুসারে গণমাধ্যম তা প্রকাশের অধিকার রাখে না।"

চলুক চলুক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গণমাধ্যম তো বাদীর কথায় বা চাওয়ামতো চলতে পারে না। নীতিমালা আছে, আইন আছে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শাব্দিক এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ধন্যবাদ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুবোধ অবোধ এর ছবি

যাক, 'ভঙ্গীকার' অঙ্গীকারে পরিণত হোক।
লেখায় উত্তম জাঝা!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মন মাঝি এর ছবি

আমি আইনজীবী না। কিন্তু মাথায় বারবার একটা প্রশ্ন খোঁচা দিচ্ছে। ভাবছি সাহস করে জিজ্ঞেস করেই ফেলি। অবশ্য প্রশ্নটা আমার অজ্ঞতাপ্রসূত বিজ্ঞতা বা সারল্যপ্রসূত তারল্যও হয়ে যেতে পারে। তেমন কিছু মনে হলে আশা করি আগেভাগেই নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন
---------------------------------------------------------------

মূল পোস্টে আপনার উদ্ধৃত আইনের ধারায় দেখতে পাচ্ছি বলা হচ্ছে --

এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হইয়াছেন এইরূপ....

আলোচিত নারীটি "শিকার হইয়াছেন", নাকি 'শিকার হইয়াছেন বলিয়া দাবি বা অভিযোগ' করিয়াছেন মাত্র? এই দুইয়ের মধ্যে, আমি যদ্দুর বুঝি - বিশাল পার্থক্য আছে। আমার সাদা চোখে তো মনে হচ্ছে প্রথমটা Fact-এর বর্ণনা, আর দ্বিতীয়টা Allegation মাত্র। আমার জানামতে 'ফ্যাক্ট' হচ্ছে যা বাস্তবে সত্যি সত্যি ঘটেছে - প্রমাণিত সত্য, আর 'এ্যালেগেশন' হচ্ছে অভিযোগমাত্র - যা সত্য-মিথ্যা দুটির যে কোনটিই হতে পারে - কোনটি এখনো জানা নেই এবং না জানা ও প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত একে "ফ্যাক্ট" বলা যাবে না। এটা মিথ্যাও হতে পারে। সরল বাংলায় এটা 'কথার কথা' মাত্র - প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত।

তো আপনার উদ্ধৃত আইনে দেখতে পাচ্ছি লেখা হয়েছে - "শিকার হইয়াছেন"। বাংলা ভাষায় আমি এই শব্দবন্ধকে 'ফ্যাক্ট'-এর বর্ণনা ছাড়া আর কোনভাবেই অনুবাদ করতে পারছি না। 'হইয়াছেন' - অর্থাৎ হইয়া গেছেন - ক্লিয়ার কাট! ফিনিশ্‌ড! ডান! পিরিয়ড! নো ইফ্‌স এ্যাণ্ড বাট্‌স! হইবেন, হইতে পারেন, হইলেও হইতে পারেন বা পারিতেন, এমনকি হইয়াছেন বলিয়া দাবি বা অভিযোগ করিয়াছেন বা হইয়াছেন বলিয়া অন্যরা মনে করিতেছে - উদ্ধৃত শব্দযুগল থেকে এই ধরণের কোন অর্থ নিষ্কাশন করারও কোন সুযোগই দেখছি না আমি। অন্যভাবে বললে, আমি কিছুতেই এই শব্দযুগলে Allegation-এর প্রমাণহীণ অনিশ্চয়তা খুঁজে পাচ্ছি না, কেবলই পাচ্ছি Fact-এর সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীণ সুনিশ্চিতির সদম্ভ বহিঃপ্রকাশ। শুধু তাই না, একই বাক্যে সমস্ত কণ্ডিশনালিটি-মুক্ত সিম্প্‌ল পাস্ট টেন্সে ব্যবহৃত "সংঘটিত অপরাধ" শব্দযুগল থেকেও এই অর্থের পক্ষে আরও বেশি করে সাপোর্ট ও কনফার্মেশন মেলে।

এই প্রেক্ষিতে, যদি বলি এই আইনে আসলে যা বলা হচ্ছে তার এ্যালেজ্‌ড নয়, বরং 'ফ্যাকচুয়াল' ও কার্যকর অর্থ হচ্ছে --

এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হইয়াছেন বলিয়া প্রমাণিত হইয়াছে এইরূপ নারী বা শিশুর ব্যাপারে.... ইত্যাদি ইত্যাদি...

তো প্রশ্ন হচ্ছে, চিত্রনায়িকাটি যা বলেছেন বা করেছেন সেটা কি - প্রমাণ না অভিযোগ, ফ্যাক্ট নাকি এ্যালিগেশন? আমি যদ্দুর জানি এটা এখনো পর্যন্ত অভিযোগ বা এ্যালিগেশন। আর তাই যদি হয়, তাহলে এই বিষয়ে বাদীর / নির্যাতনের শিকার বলে দাবিকৃত ব্যক্তির নাম-ঠিকানা-ছবি-পরিচয় সহ সংবাদ প্রকাশ করা আপনার উদ্ধৃত আইনের ধারার আওতায় পড়ে না - এই কথা কি বলা যায় না? কিম্বা অন্যভাবে বললে - এইক্ষেত্রে গণমাধ্যম বাদীর পরিচয় প্রকাশ করলে কোনই অপরাধ হয় না, আইনভঙ্গ হয় না, সুতরাং গণমাধ্যম তা প্রকাশের পূর্ণ অধিকার রাখে?

****************************************

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মামলা দায়ের করার পর অভিযোগ এখনো প্রমাণিত না বলে বাদীর নাম ধাম পরিচয় সব গণমাধ্যমে প্রকাশ করে দেওয়ার পরে আর বাকি থাকবে কী? তারপর যদি অপরাধ প্রমাণিত হয়, তখন সেই নাম পরিচয় গোপন করার বা অপ্রকাশিত রাখার উপায় কী?

নাই।

তাই যদি ভিক্টিমের নাম পরিচয় গোপন রাখতে হয়, তাহলে তা শুরু থেকেই গোপন রাখতে হবে।

এই আইন পত্রিকাগুলো জানে না, বোঝে না, কিংবা তাদের কাছে আইনটা পরিষ্কার না ব্যাপারটা কিন্তু সেরকম না। গত অনেক বছর ধরেই গণমাধ্যম এই আইন সুষ্ঠুভাবেই মেনে চলছে। আপনি গত কয়েক বছরের পত্রিকাগুলো ঘেঁটে দেখুন, কোথাও অভিযোগকারিনীর নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। শুধু এই একটা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মন মাঝি এর ছবি

অপরাধ প্রমাণিত হয়, তখন সেই নাম পরিচয় গোপন করার বা অপ্রকাশিত রাখার উপায় কী?

তখন সেই পরিচয় গোপন করার বা অপ্রকাশিত রাখার উপায় কী - তা দেখার দায়িত্ব গণমাধ্যমের নয় - আইনপ্রণেতাদের। আমার উপরের বিশ্লেষণ যদি ভুল না হয়, তা হলে তারা আইনটা সঠিকভাবে ও সঠিক ভাষায় প্রণয়ন করলেই তো পারেন! এটা তো এমন কোন হাতি-ঘোড়া ব্যাপার না। আমার মন্তব্যেই তো একটা উপায় উল্লেখ করেছি কিভাবে তা করা যেতে পারে -

এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হইয়াছেন বলিয়া অভিযোগ করিয়াছেন এইরূপ নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অভিযোগকৃত অপরাধ বা তৎসম্পর্কিত.... ইত্যাদি ইত্যাদি...

-- এইরকম স্রেফ কয়েকটা শব্দ বা আরো কিছু শর্ত জুড়ে দিলেই তো সংশয় দূর হয়ে যায়। তখন তো কেউ বলতে পারবে না যে - পরিচয় সহ সংবাদ প্রকাশ করলে তা এই আইনের আওতায় পড়বে না। কিন্তু, তা না করা পর্যন্ত বিদ্যমান আইন যেভাবে আছে সেটা তা-ই, এমনকি সেটা খারাপ বা আশানুরুপ না হলেও। তারচেয়ে অন্য কিছু না কোনমতেই - এবং এর আওতায় যা পড়ে না সেটা এর ভিতরে ঢুকানো যাবে না। এতে করে কেউ অনাকাংখিত সুবিধা পেয়ে গেলেও সেটা আপাতত মেনে নিতে হবে আইন ঠিক করা না পর্যন্ত। কারন এর অন্যথা মনে হয় আরও বড় বিপদ বয়ে আনবে, এবং বে-আইনিও হবে হয়তো। সুস্পষ্ট ভাবে লিখিত আইনের সুস্পষ্ট ভাবেই আওতা-বহির্ভূত অর্থ এর ভিতরে ফ্রিস্টাইল ঢুকাতে থাকলে, "আইন" শব্দটাই তখন অর্থহীণ হয়ে যাবে। তখন হয়তো দেখা যাবে অনেক ভয়ঙ্কর অপরাধীও নিজের স্বার্থে কৃত অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইনের মধ্যে মনগড়া অর্থ নানারকম যুক্তি দিয়ে প্রবেশ করানোর অধিকার দাবী করবে। যেমন এখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা চেষ্টা করছে। মোদ্দা কথায় আইন-আদালত বলে কোন কিছুরই আর দরকার থাকবে না তখন। অথচ সমাধানটা অতি সহজ।

এই আইন পত্রিকাগুলো জানে না, বোঝে না, কিংবা তাদের কাছে আইনটা পরিষ্কার না ব্যাপারটা কিন্তু সেরকম না। গত অনেক বছর ধরেই গণমাধ্যম এই আইন সুষ্ঠুভাবেই মেনে চলছে। আপনি গত কয়েক বছরের পত্রিকাগুলো ঘেঁটে দেখুন, কোথাও অভিযোগকারিনীর নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। শুধু এই একটা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে।

আপনি মনে হয় 'নৈতিকতা' আর 'আইন'-কে গুলিয়ে ফেলছেন। এই দুইটা পুরোপুরি এক জিনিষ না। এই আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট নৈতিক উদ্দেশ্য বা এর স্পিরিট পত্রিকাগুলি জানে বৈকি। অনেক মিডিয়া এই নৈতিকতার সাথে স্বেচ্ছায়ই সহমত পোষণ করে, এবং কিছু কিছু পত্রিকা যদ্দুর মনে পড়ে এই আইন প্রণীত হওয়ার আগে থেকেই স্বতোপ্রণোদিত ভাবেই নিজেদের পত্রিকায় ভিক্টিমের পরিচয় প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু মিডিয়া এই আইনের অলিখিত ও টেক্সটে অপ্রতিফলিত - কিন্তু অনেকের আকাংক্ষিত - নৈতিক উদ্দেশ্য বোঝে বা মানে বলে তার মানে এই না যে, সেই নৈতিক দায়িত্ব এই আইনের সংজ্ঞা বা পূর্ণ টেক্সটের আওতার ভিতরে না পড়লে তাদের না-মানাটা আইনভঙ্গ হবে বা তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। আসলে সেটা তখন "b]না[/b]-মানা"-ই হবে না।

শুধু এই একটা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে।

ব্যতিক্রমটা ঘটেছে হয়তো এই কারনেই যে, তারা আসলে জানে যে পরিচয় প্রকাশ না করাটা আসলে কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়। বরং স্রেফ নৈতিকতার প্রশ্ন বা সামাজিক দায়িত্বমাত্র। এবং এই বিশেষ ক্ষেত্রে তারা আরও বড় একটা প্রতিযোগী বা কম্পিটিং নৈতিকতা ও দায়িত্বের মুখোমুখি হয়েছে। সেটা হচ্ছে বাদিনীর "বাকস্বাধীনতা"। এটা কোন তুচ্ছ বিষয় নয়।

এই আইনটার অনুমিত কিন্তু অপ্রতিফলিত উদ্দেশ্যটা কি? আমি যদ্দুর বুঝি, এই উদ্দেশ্যটা হচ্ছে আমাদের দেশে এই দেশের বিশেষ সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে শিশু ও নারীকে অপ্রয়োজনীয় সামাজিক অসম্মান বা বে-ইজ্জতির হাত থেকে রক্ষা করা, প্রোটেকশান দেয়া। এই সামাজিক অসম্মান বা বে-ইজ্জতিটাই অনেক সময় ভিক্টিমের জন্য আরেক ধরণের নির্যাতনের রূপ পরিগ্রহ করে। যা ক্ষেত্র-বিশেষে খুব ভয়াবহ বা করুণ পরিণতিও ডেকে আনতে পারে। তাছাড়া এই অসম্মানের ভয় বহুক্ষেত্রেই নির্যাতনের শিকার নারী বা শিশুকে বিচারপ্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখে। এমনটা হয়, কারন আমাদের পশ্চাৎপদ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে শিশু ও নারীর অবস্থান সাধারণভাবে দুর্বল এবং তারা ঐ অসম্মান বা বে-ইজ্জতির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন থেকে আত্নরক্ষায় যথেষ্ট শক্তিশালী নন। তাই এই আইন দিয়ে এইরকম নারী ও শিশুকে প্রোটেকশন দেয়া হয়।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোন প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী (শিশু বাদে) যদি এই আইনের কথিত লক্ষ্য যারা - তাদের মত দুর্বল না হন? তিনি যদি কথিত সামাজিক অসম্মান বা বে-ইজ্জতির আগ্রাসন থেকে আত্নরক্ষায় পুরোপুরিই সক্ষম ও শক্তিশালী হন? এইরকম সামাজিক অসম্মান বা বে-ইজ্জতি যদি তার ক্ষেত্রে, তার বিবেচনায়, কোন বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে বা এই ধরণের অসম্মান বা পরিচয় প্রকাশের চেয়েও যদি তার কাছে বড় কোন প্রায়োরিটি থাকে? তিনি যদি এই ধরণের অসম্মানের হাত থেকে আদৌ কোন প্রোটেকশন না চান বা একে আদৌ অনৈতিক (পরিচয় প্রকাশকে) মনে না করেন? এমনকি এই ধরণের ঘটনা প্রকাশজনিত একধরণের 'নটোরাইটি'-ই যদি তার আকাংক্ষিত হয়ে থাকে? তিনি যদি মনে করেন পরিচয় ও ঘটনা সংক্রান্ত তার নিজের ভাষ্য পাব্লিকলি প্রকাশ করলেই বরং তার প্রাপ্য সুবিচার তিনি যথাযথভাবে পাবেন বা সেটা ত্বরান্বিত হবে? কিম্বা তিনি যদি স্রেফ তার সাংবিধানিক ও মৌলিক মানবাধিকার -- "বাকস্বাধীণতা"-র অধিকারটাই শুধু চর্চা করতে চান? তাহলে তার এই চিন্তার স্বাধীণতা, বিবেকের স্বাধীণতা, ব্যক্তিস্বাধীণতা এবং বাকস্বাধীণতা - রূপী এত-এতগুলি সিভিল লিবার্টি, মৌলিক সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার, এবং সর্বোপরি পরম নৈতিক অধিকারগুলি হরণ করে তারই উপকারার্থে, তারই জন্য, আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও জোর করে কি নৈতিক আর কি নৈতিক না - ঠিক করে দেয়ার নৈতিক দায়িত্ব বা অধিকার অন্যকে কে দিল? একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক নাগরিক কি দুধের বাচ্চা, নাকি রাষ্ট্র বা মহল বিশেষের জিম্মী?

এইরকম ক্ষেত্রে পত্রিকাগুলি যদি ঐ বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য, অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাংখিত সাংস্কৃতিক প্রোটেকশনের নৈতিকতার চেয়ে তার চিন্তা, বাক ও বিবেকের স্বাধীণতার অনেক অনেক বেশি গুরুতর ও গুরুত্বপূর্ণ নৈতিকতাকেই বেছে নেয়, তাহলে কি ভুল হবে??

---------------------------------------------------------
ডিসক্লেইমারঃ আমি আইন-বিশেষজ্ঞ বা আইনজীবী না।আমি আমার মন্তব্যে একজন আম নাগরিকের দৃষ্টিকোন থেকে আলোচিত আইনটার কেবলমাত্র একটা কাণ্ডজ্ঞান (কমন সেন্স)-ভিত্তিক ভাষিক বিশ্লেষণ দেয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র। কিন্তু আমি যদ্দুর জানি, আইনে আরও অনেক ধরণের বিশেষায়িত বিবেচনা থাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এখানেও সেরকম কিছু আছে বা থাকতে পারে কিনা আমি জানি না। আসলে নিজের মত জাহির করার চেয়ে সেটাই বরং জানতে চাইছি।

****************************************

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

আইনটি ধারাটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে এটা যথাযথভাবে মেনে চলতে গেলে মিডিয়াগুলোর ভাত মারা যাবে। রুবেলের ক্ষেত্রে সংবাদটি এইভাবে প্রকাশিত হওয়ার কথা- " জনৈকা নারী রুবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন"। সে ক্ষেত্রে সেই নারীর নাড়ি নক্ষত্রের খবর তখন পাওয়া যেত ইন্টারনেটে, মিডিয়াগুলোর মাথায় বাড়ি।
আচ্ছা, পাশ্চাত্যে কি আইনটি অন্যরকম? সেখানে তো এরকম ক্ষেত্রে সেই নারীর কোন কিছুই আর মিডিয়াতে অপ্রকাশিত থাকে না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সূত্র ইন্টারনেটে বহুত কিছু পাওয়া যায়। ট্যাবলয়েড বা অনলাইন পত্রিকাগুলো অনেক রংচঙে নিউজ ছাপে কাটতির জন্য। কিন্তু জাতীয় দৈনিকগুলোকে নিজের লাগাম টেনেই রাখতে হয় সবসময়। মাথায় বাড়ি পড়লেও কিছু করার নেই।

পাশ্চাত্যে এরকম কোনো আইন আছে কি না, থাকলে কীরকম সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক
রাষ্ট্র উদ্যোগী হোক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

রাষ্ট্রের কান্ধে এখন অনেক বড় বড় কাজ মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

দেখিয়াও দেখার কেহ নাই

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

মিডিয়া কি এখন সব নিয়মনীতি মেনে চলে?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

অনেক ক্ষেত্রে মানে না, কিন্তু মানা তো উচিত। আর এই ইস্যুটা ইন্টারেস্টিং। অন্য সব মামলায় একরকম ট্রিটমেন্ট, শুধু এই একটা মামলায় ভিন্ন ট্রিটমেন্ট কেন?
আজকের প্রথম আলোতেই নারী নির্যাতন মামলার দু'টো রিপোর্ট পড়লাম, কোথাও ভিক্টিমের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

কিঞ্চিত অফটপিকঃ রুবেলের বিরুদ্ধে মামলাটা কি আসলে নারী নির্যাতন আইনেই? অভিযোগ হয়তো সেই ধারাতেই করা হয়েছিল কিন্তু ডাক্তারী পরীক্ষায় কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তারপরে বলা হয়েছে "বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ... "। সেক্ষেত্রে দুজনেরই সম্মতি ছিল। এটা তো প্রতারণার মামলা হতে পারে, নারী নির্যাতন হওয়ার কথা না।

- ঘুমকুমার

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

মামলাটা নারী নির্যাতন আইনেই করা, রিপোর্টের ট্রিটমেন্ট সেভাবেই হওয়া উচিত। ডাক্তারী পরীক্ষা, বিয়ের প্রলোভন, প্রতারণা এগুলো তো পরবর্তী বিষয়। এই আইনে মামলা দায়ের করা হলেই তো ভিক্টিমের পরিচয় প্রকাশ করার কথা না। বিচারে যদি বাদী উল্টো দোষী সাব্যস্ত হয় সেটা তো অন্য হিসেব। মামলা করার পরে মিডিয়া যদি বিচারকার্যের আগেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় যে এটা একটা প্রতারণার মামলা, তাহলে আর আদালতের দরকার কী?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

ডাক্তারী পরীক্ষা, বিয়ের প্রলোভন, প্রতারণা এগুলো পরবর্তী বিষয় না-এই বিষয়গুলো মামলা আমলে নেওয়ার আগেই আসবে, কারণ এর উপরই নির্ভর করবে মামলা কোন ধারায় বা কোন আইনে বিচার হবে। মামলা দায়ের করা মানেই কিন্তু মামলার অভিযোগ সত্য তা নয়, আপাত সত্য। বিজ্ঞ আদালতের কাছে যদি তাৎক্ষণিকভাবে মনে হয় যে অভিযোগ আপাত সত্য বা তদন্তকারী অফিসার (পুলিশ) কর্তৃক তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র বা চার্জশীট দেয় তবে বিজ্ঞ আদালত মামলা আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠন করে মামলা সাক্ষীর জন্য ফেলবেন।
তবে ভাই এটা ঠিকই বলেছেন যে মিডিয়া যদি বিচারকার্যের আগেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় যে এটা একটা প্রতারণার বা কোনো বিশেষ অপরাধের মামলা বা যে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক পাল্লা ঝুলিয়ে দেয়, তাহলে আর আদালতের দরকার কী?

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মন্তব্য করছি।

নজরুল ভাইয়ের প্রশ্ন হচ্ছে,

অপরাধের শিকার হওয়া নারী যদিওবা নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে আগ্রহী হন, তবুও আইন অনুসারে গণমাধ্যম তা প্রকাশের অধিকার রাখে না। সেক্ষেত্রে এই আইন লঙ্ঘনকারীর শাস্তি এবং জরিমানা আদায়ের দায়িত্ব কার?

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ধারা ১৪ অনুযায়ী এক্ষেত্রে অভিযোগকারী (নালিশকারী বা ভিকটিমও বলা যায়) নিজে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালের কাছে জবানবন্দি প্রদান করে সরাসরি নালিশ দায়ের করবে বা সংশ্লিষ্ট থানায় সে নিজে অভিযোগের ভিত্তিতে এজাহার করবে বা থানাও জিআর মামলা হিসেবে এজাহার নিয়ে আদালতে পাঠাবে (সেটা এখতিয়ারাধীন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আসবে, মামলা তদন্ত শেষে বিচারের জন্য তৈরি হয়ে বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালে বদলি হবে)।
আর যেকোনো ফৌজদারি মামলার (জিআর যেটা থানায় এজাহার হিসেবে দায়েরকৃত) অভিযোগকারী কিন্তু রাষ্ট্রই থাকে যার ব্যয়ভার রাষ্ট্রই দিবে। সেক্ষেত্রে এই আইন লঙ্ঘনকারীর শাস্তি এবং জরিমানার রায় বা আদেশ নেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
পরের প্রশ্ন,

রাষ্ট্র কি উদ্যোগী হবে?

এর উত্তর জানা নেই!!!!!
মনমাঝির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে একটু ছোট করে বলি,

এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হইয়াছেন এইরূপ....

আসলে মজার ব্যাপার হচ্ছে ইংরেজিতে ধারাটি একটু পড়ে দেখুন আইনের কি উদ্ভট বাংলা অনুবাদ!

আইনে বলা, Any news, information or name &address or any other information regarding
any offence, under this Act, committed or any legal proceeding thereof,
অর্থাৎ- কোথায় offence committed under this Act আর কোথায় অপরাধের শিকার হইয়াছেন!

(Prohibition on publishing acquaintance of a woman or a child oppressed, in news media:
i.
Any news, information or name &address or any other information regarding
any offence, under this Act, committed or any legal proceeding thereof, of
which a woman or a child is the victim, shall be published or presented as
such that the acquaintance of the woman or the child shall be undisclosed.
ii.
In case, where the provision under sub-section (і) is infringed, the person or
persons liable for such infringement, each shall be punished with imprisonment for either description, which may extend to two years or with fine not exceeding one lac taka or both.
ঘুমকুমারের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলছি,
বাংলাদেশ পেনাল কোড(Penal Code) এর ৩৭৫ নং ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সঙগা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এ তেও প্রযোজ্য। যাতে প্রলুব্ধ করেও ধর্ষণ হতে পারে।
(Penal Code) এর ৩৭৫ নং ধারা অনুযায়ী A man is said to commit "rape" who except in the case hereinafter excepted, has sexual intercourse with a woman under circumstances falling under any of the five following descriptions:

Rape
Firstly.−Against her will.
Secondly.−Without her consent.
Thirdly.−With her consent, when her consent has been obtained by putting her in fear of death, or of hurt.
Fourthly.−With her consent, when the man knows that he is not her husband, and that her consent is given because she believes that he is another man to whom she is or believes herself to be lawfully married.
Fifthly.−With or without her consent, when she is under fourteen years of age.

আমি ইংরেজিতে ধারা পড়ে অপেক্ষাকৃত ভাল বুঝতে পারি তাই ইংরেজিতেই কোট করলাম। আইন কিন্তু ইংরেজিতেই সোজা!
ভাল আলোচনা। ভাল লাগলো। শুভকামনা সবার জন্য।
(সূত্র: http://bdlaws.minlaw.gov.bd/alp_index.php)

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আরে আপনি তো মনে হচ্ছে আইনের মানুষ!
পোস্টের চেয়ে মন্তব্য ভালো হইছে হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বাপরে, এরপর আইন-কানুন নিয়া পোস্টাইলে আগে প্রুফরিডিঙের লাইগ্যা পাঠায়া দিমু।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

সব্বোনেশ!

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

আয়নামতি এর ছবি

চলুক

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অতিথি লেখক এর ছবি

বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
সম্পুরক প্রশ্ন দেঁতো হাসি

her consent is given because she believes that he is another man to whom she is or believes herself to be lawfully married.

এটার মানে কি? আমার কাছে বাক্যটা স্ববিরোধী মনে হচ্ছে। এটা ১৮৬০ সালের পেনাল কোড। সেই সময় থেকেই কি এই সংজ্ঞা চলে আসছে? এটা কি সেই সময়ের কোনও সামাজিক প্রথা (জন্মের সময় বিয়ে দিয়ে দিলাম ধরনের কিছু) বন্ধ করার জন্য যুক্ত করা হয়েছিল?

পোষ্টের মূল বক্তব্য থেকে দূরে চলে আসার জন্য দুঃখিত।

- ঘুমকুমার

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

আমাদের দেশের বেশির ভাগ আইন তো বৃটিশদের সময়কারই। সময়ের প্রয়োজনে ১৮৬০ সালের আইনেই সংশোধনী আসে বা নতুন নতুন আইনও হয়। এই ধারার সাথে ব্যাখ্যাও আছে। আমি সংক্ষেপ করে দিয়েছি।
না ধারাটার এই অংশটা স্ববিরোধী না। ধরুন, একটা মেয়েকে (নাবালিকা বা সাবালিকা) তাকে কোনো পুরুষ বিয়ের কথা বলে নিয়ে গেল এবং মোল্লা-টোল্লা দেখিয়ে বিয়ে করেছে বললো এবং মেয়েটার সাথে Sexual intercourse করার পর বিয়েটা অস্বীকার করলো। (অর্থাৎ নারীর সম্মতিক্রমে, যে ক্ষেত্রে পুরুষটি জানে যে, সে তার স্বামী না এবং নারীটি এই বিশ্বাসে সম্মতি দেয় যে, পুরুষটি এমন ব্যক্তি যার সাথে সে আইনানুগভাবে বিবাহিত অথবা নারীটি নিজেকে পুরুষটির সাথে আইনগতভাবে বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে)। গর্হিত অপরাধ।
উদাহরণটি দেখে নিশ্চয়ই আপনার মনে হচ্ছে এই সময়েও এই অপরাধের ধরণটা এখনো আধুনিক। আসলে গ্রামে বা মফস্বলে প্রচুর এই ধরনের ঘটনা হচ্ছে।

ঘুমকুমার ভাইরে আর সম্পূরক প্রশ্ন কইরেন না, সারাদিন আইনের মধ্যে থাইক্যা জীবন শেষ! ব্লগে আসছি জুড়াইতে আর জিরাইতে, হাহাহাহ

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম। বুঝতে পারলাম। এভাবে চিন্তা করি নাই।
আর কোনও সম্পুরক প্রশ্ন নাই হাসি

- ঘুমকুমার

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আমার এই বোনটা ডাকসাইটে আইনজীবী। এবার আর আমার সাথে লাগতে এসো না যেন, হুহ!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার সাথে লাগতে আসবো? আমার ঘাড়ে তো একটাই মাত্র মাথা!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আরে আরে, তোমারে কই নাই! ভালো কইরা দেখ, কইছি সাদিয়াকে! তয় তোমার ঘাড়ে মাথা একটা থাকলেও ঘাড় কিন্তু বড় শক্ত!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

ওরে লিংকে খুশি মনে ঢুকেছি দেখি আমার সম্পর্কে নতুন কি জানা যায়! ধরা!

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

তিথীডোর এর ছবি

সুলতানা সাদিয়ার মন্তব্যে চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মন মাঝি এর ছবি

১।
ইয়ে, এটা ঠিক বুঝলাম না -

offence committed under this Act আর কোথায় অপরাধের শিকার হইয়াছেন

দুটো একই কথা হলো না? "committed"-টাও তো শর্তমুক্ত পাস্ট টেন্স, অর্থাৎ 'করা হইয়াছে' বা 'অপরাধ সঙ্ঘটিত হইয়া গিয়াছে' মর্মে একটা সুনিশ্চিত বক্তব্য, একটা ফ্যাক্ট-এরই বর্ণনা, এ্যালিগেশন না। নচেৎ বলা উচিত ছিল - "...alleged to have been committed..", তাই না? অর্থাৎ, এখানেও Allegation- পর্যায়ের তথ্য-প্রকাশ নিষেধাজ্ঞার আওতা-বহির্ভূতই রয়ে গেছে বলা যায় না কি?

২।
বাংলা "প্রলোভন", "প্রলুদ্ধ" বা "ফুসলাইয়া" - জাতীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকলে ঠিক আছে, কিন্তু under circumstances falling under any of the five following descriptions বলে যে ৫-টা শর্ত আপনি ইংরেজিতে উদ্ধৃত করেছেন, আমার জানামতে আলোচিত খেলোয়াড়টি সম্পর্কে চিত্রনায়িকাটির যে অভিযোগ মিডিয়াতে এসেছে - সেটি এই ৫ শর্তের কোনটির অধীনেই পড়ছে বলে তো দেখতে পাচ্ছি না। সেক্ষেত্রে, ইংরেজি ভাষ্যটা ধরলে একে কি "rape" বলা যাবে?

৩।
আইনের বাংলা ও ইংরেজি ভাষ্যের মধ্যে কোন কনফ্লিক্ট দেখা দিলে কোনটা অগ্রাধিকার পায়? সংবিধানের ক্ষেত্রে যদ্দুর জানি বাংলাটা পায়, কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে?

****************************************

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

১। আইনে কি বলা উচিত ছিল তা নিয়ে আমি বলতে পারবো না। আপনার এই প্রশ্নের উত্তর সুন্দরভাবে মূল পোস্টেই আছে। আর ১৪ নং ধারাটি থেকে তিনটি শব্দ আলাদা করে পড়লে হবে না, পুরো সেকশনটি একবারে পড়লে মূল বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে। নতুন করে .alleged to have been committed..", বা Allegation- বলারও কোনো সুযোগ নেই, কারণ আইনটিতে বলাই আছে কখন। মূল কথা হল মিডিয়া ভিকটিম নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ করবে না। আর আমি একারণে শব্দের ভিন্নতা নিয়ে বলেছি কারণ, ইংরেজি ভাষায় ধারাটি পড়ে সহজবোধ্য লেগেছে আমার কাছে।
২। দুঃখিত বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলার বিষয়ে আমি উত্তর দিবো না। এটা আমার জন্য অপরাধ। মিডিয়া অনেক কিছুই বলে, মূল মামলার নথি আসল কথা বলে। আর যদি মামলাটি তদন্তাধীন থাকে তবে তদন্ত শেষে বলা যাবে অপরাধটি কোন ধারার। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ধারা ৯ এবং পেনাল কোডের ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সঙগা পাবেন।
৩। আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫৩ (2) There shall be an authentic text of this Constitution in Bengali, and an authentic text of an authorised translation in English, both of which shall be certified as such by the Speaker of the Constituent Assembly. (3) A text certified in accordance which clause (2) shall be conclusive evidence of the provisions of this Constitution:
Provided that in the event of conflict between the Bengali and the English text, the Bengali text shall prevail.
অর্থাৎ দুটো ভাষাতেই সংবিধান থাকবে এবং বৈপরীত্য থাকলে বাংলা প্রিভেইল করবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী আইনসমূহ বাংলা ইংরেজি উভয় ভাষাতেই হয়েছে। আমরা যারা আইন চর্চা করি তারা আইনটি যে ভাষাতে গেজেট নোটিফিকেশন হয় সে ভাষাতেই পড়ার চেষ্টা করি। সিডা ও আইন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ কোড হয়েছে যাতে সব আইন সুন্দরভাবে সন্নিবেশিত আছে। আর আইনের ব্যাকরণটা জেনারেল ক্লজেস এ্যাক্ট এ পাবেন। (সঙ্গত কারণে ইংরেজিতে অনুচ্ছেদটি কোট করলাম। মডুরা কি বলে জানি না। আর আমার জ্ঞান সীমিত, সীমিত জ্ঞানে উত্তর দিচ্ছি, আইনের জগত বিশাল।)

(শেষ কথা-ভাইডি মাফ করেন, এত আইনের প্রশ্ন করলে গফ লিখমু কখন! নজরুল ভাই পোস্টখান দিয়া আমারে ব্যাপক কথা কওয়াইতেছে! এখন আমিই একখান পোস্ট দিমু কিন্তু! নজরুল ভাই কই গেলেন আমারে বাঁচান!)

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

মন মাঝি এর ছবি

শেষ কথা-ভাইডি মাফ করেন ... আমারে বাঁচান!

স্যরি! এই আমি চুপ করলাম! দেঁতো হাসি

****************************************

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

বাঁচলাম! এবার নতুন গপ ধরি।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

কিছু কথা ভাই থাক না গোপন, হিহিহি। আপনার দারুণ পোস্টের কারণে না আইন কপচানোর সুযোগ পেলাম!

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনার মন্তব্যটার জন্য স্পেশাল থ্যাঙ্কু হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আয়নামতি এর ছবি

ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা নাই। জানার আগ্রহও নাই।
মামলা চলছে এমন অবস্হায় মিডিয়ার বাদীর নাম প্রকাশ করা গর্হিত কাজ। পুস্টের সাথে সহ মত হাসি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হায় হায় কন কী! এই ঘটনা জানেন না!
এইটা তো জাতীয় নিউজ!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আয়নামতি এর ছবি

গতকাল্য ইহা
পাঠ পূর্বক জাতীয় ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞান প্রাপ্ত হইয়াছি দেঁতো হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

গুপন রাখতে হবে, এইটাই শেষ কথা, তাইতো?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

যেহেতু গণমাধ্যমের নীতিমালায় গোপন রাখার কথা বলা আছে, এবং গণমাধ্যম অন্য সবগুলো ইস্যুতে সেই নীতিমালা মেনে চলছে এবং চলেছে, সেক্ষেত্রে এই ক্ষেত্রেও গোপন রাখা উচিত ছিলো। নাম পরিচয় প্রকাশটা অন্যায় হইছে।
গণমাধ্যম যদি এই নীতিমালা না মানতে চায়, সংশোধন চায়, তাহলে ভিন্ন কথা। সেক্ষেত্রে আলাদা করে আন্দোলন করুক তারা। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানবে না এটা কেমন কথা?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।