সব ফেলে ছুটে যাবো

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৯/১২/২০১০ - ৬:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কোনদিন পথ খুঁজে যদি
ফিরি আমি তোমাদের পিঁড়িপাতা নিকানো উঠোনে
তুমি বেড়ে দিও এক থালি নুন মাখা ভাত
একটু সালুন দিও, আর দিও এক ঘড়া জলের আস্বাদ।
তুমি তো জানোই আমি কি ভীষণ তিয়াস নিয়ে
এই মাঠ, এই প্রান্তর, এইসব বাতাসের ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে
বেভুল ফিরেছি ঘুরে-
চৈতন্যের খরাদাহে সম্পন্ন বর্ষণের স্বপ্নিল অন্বেষণে
এক বুক কাদাভেজা আশার জমিনে।

আমিতো গায়ের ছেলে-
চিলমারীর বন্দরে আমার গাড়িয়াল প্রপিতামহ
হাঁকিয়ে গরুর গাড়ী জীবনের কতকথা,
কত ছেঁড়া স্বপ্ন গাঁথা, দুঃখের নিযুত কাহন
এন্তার গেছেন লিখে পথের ধুলায়
মনের বিজন কোণে যক্ষ্মার বীজের মতো
মঙ্গার সর্বগ্রাসী শঙ্কা পুষে রেখে উঁচুনিচু কর্দমাক্ত পথে,
গরুর গাড়ীর চাকার ঘূর্ণাবর্তে মেপেছিলেন জীবনকে কতদিন।
বুক জুড়ে নিঠুর তুষের আগুন অহর্নিশ খেলে গেছে তবু
তার ম্লান দুটি চোখ ঘুমে ভরে জেগে ছিল পন্থের দিকে
সেখানে প্রতীক্ষায় কোন এক সোনাবউ
নরম নারীর মন, পলিমাটি, উনুনের উম,
মায়ের শাড়ির ঘ্রাণ, সিদ্ধ ধানের নেশা, মুষ্টিচাল,
আবাদী জমির ঢেউ, বাস্তুভিটা, দাদার কবর,
আরো এক মুহূর্ত বাঁচাবার করেনি কি আয়োজন?

এখনও কি কেঁদে ফেরে উত্তরের সেই দীর্ঘ দগ্ধ জনপদ?
এখনও কি প্রতীক্ষায় নেই সেই নাড়ার আগুন?
মানি, দূরে-বহুদূরে সরে গিয়ে আমি
বুনেছি ক্ষয়ের জাল অনিবার্য আয়োজনে
বিভ্রান্ত ছেনালি প্রয়োজনে-
তবু যদি একবার ভালোবাসা পাই
আমিও ধুলোমাখা পথে সাঁঝের আঁচল ধরে
বিষণ্ণ গাড়িয়াল এক; পৌঁছে যেতে চাই তোমাদের বাঁশি বাজা মাঠে
তবু যদি একবার বুঝি সেইসব সম্ভাব্য লেন দেন
শিকড়ের সুখ, জীবনের নিগূঢ় প্রয়োজন
আমায় ডাকুক এসে নয়ানী বাগডোকরার ভাওয়াইয়া দিন
সব ফেলে ছুটে যাবো, মুছে দিব সেইসব ধূলিময় ঋণ।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কবিতা ভালো লাগে।
নিয়মিত মন্তব্য করা হয় না, এই যা

---আশফাক আহমেদ

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আশফাক ভাই,
মৌনতা কখনো কখনো কী ভীষণ বাঙময় হয়ে উঠে হৃদয়ের গহন কোণে, আপনার মন্তব্য সেই উপলব্ধির অভিজ্ঞান শেখালো আমায়!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ইশতিয়াক এর ছবি

অসাধারন রোমেল ভাই। সব হারিয়েও শিকড়ের টানে ফিরে আসতে হয় অবারিত মাঠে, শান্তির নীড়ে। থাকুক না মঙ্গা, থাকুক না তপ্ত মেঠোপথ। কারন এখানে

প্রতীক্ষায় কোন এক সোনাবউ
নরম নারীর মন, পলিমাটি, উনুনের উম,
মায়ের শাড়ির ঘ্রাণ, সিদ্ধ ধানের নেশা, মুষ্টিচাল,
আবাদী জমির ঢেউ, বাস্তুভিটা, দাদার কবর

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ইশতিয়াক ভাই,
গরুর গাড়ীর চাকার ভেতর থেকে আমার প্রপ্রপ্রপিতামহী ক্যাচ ক্যাচ শব্দ তুলে আমায় বলে, "হারে বাউ, তুই হবিব গাড়িয়ালের নাতি না, এদ্দিন কোনঠে ছিলু বাপ? সাহেব হছিস, আরে চায়া দেখ, বুড়া আঙ্গুলোত এ্যালাও দ্যাশের মাটি নাগি আছে যে!"
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তাসনীম এর ছবি

দারুণ।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ তাসনীম ভাই!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মর্ম এর ছবি

কবিতা তেমন বুঝি না, তবে এরকম সহজ হলে ঠিক বুঝতে পারি হাসি

পড়তে ভাল লেগেছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

মর্ম ভাই,
গতরাতে কাজ ছিল না তেমন। লেখালেখিতেও মন বসছিল না। তাই যুগান্তরের ঈদসংখ্যা ২০১০ নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। স্বপ্নময় চক্রবর্ত্তীর 'কবি' উপন্যাসে থিতু হলাম। এই 'সহজতা' ও 'দুর্বোধ্যতা'র টানাপোড়ন দারুণ ফুটিয়েছেন তিনি। প্রশ্ন উঠে এসেছে, কোনটি দূর্বলতা, ভাষার সহজতা নাকি কল্পনার দৈনতা? উত্তরও মিলেছে, বোধকরি সব ছাপিয়ে কল্পনার পর কল্পনা সাজিয়ে সত্য দর্শন ও সত্য প্রকাশেই পরমার্থ!

আমি মনে করি ভাষা, ছন্দ, শব্দনির্মাণ এগুলো একজন কবির সহজাত প্রতিভালব্ধ বৈশিষ্ট্য, সেগুলো অবাধ্য বুনো বৃক্ষের মতো আপনা আপনি পত্রপল্লবে বিকশিত হবে। কবিকে মূলত শক্তিশালী করে তাঁর কল্পনাশক্তি, তাঁকে সর্বদাই খুঁজে ফিরতে হয় 'আরো নীল আকাশের তল'। সেখানে দৈনতা ঘটে গেলে সে ফুরিয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে চিরদিন। উত্তরাধুনিক নোতুন নির্মাণ দেখে মনে চাঁদের মতো আশা জাগে বটে, তবে শঙ্কিত হই এই ভেবে যে শব্দ-আঙ্গিক-ভাব নির্মাণের এই জটিল জাল কল্পনার গলায় আবার ফাঁস না পরায়!

শুভপ্রীতি।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কৌস্তুভ এর ছবি

জীবনানন্দ-ধাঁচের কবিতা সুন্দর লাগল। তবে আমাগো বস্টনের বাসায় এলে না পাবেন উঠোন, না পাবেন পিঁড়ি, সালুন কি জিনিস জানিই না তাই তার প্রতিশ্রুতিও দিতে পারছি না - তবে যথাসাধ্য করব, আমার পোস্টে দেখতে পারেন, বস্টনে এলে কি কি খাওয়াবার আশা দিয়েছি। হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

কৌস্তুভ ভাই,
আপনি কলকাতার পোলা কিন্তু দ্যাশ তো বরিশাল। জীবনানন্দের সাথে নাড়ীর সংযোগ ক্যামনে অস্বীকার করবেন? উনার আঙ্গিনায় পিড়ি পাততে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম। বোস্টন মন্দ কিসে? আপনার সমাদরের তালিকায় রবার্ট ফ্রষ্টকেও স্থান দিতে পারেন। ওই কবির বোস্টনকে নিয়ে লেখা কবিতাটি অনুবাদের চেষ্টা করছি দীর্ঘদিন ধরে, অধরা মাধুরী ছন্দবন্ধনে ধরা দেয় না।
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

কৌস্তুভ এর ছবি

আরে, ছিছি, অস্বীকার করব কেন? তবে সালুন অর্থটা তো বললেন না এখনও?

কমল [অতিথি] এর ছবি

সালুন মানে তরকারি। তরকারি মানে কি জানেন তো ?

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

কমল ভাই,
সালুন মানে তো শুধু 'তরকারি' নয় রে ভাই, দিল ঠান্ডা করা তরকারি!
-----------------------------------
যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে
চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে;

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অপছন্দনীয় এর ছবি

ভাতের সাথে খাওয়ার যোগ্য যে কোন রান্না করা বস্তু বোঝাতে ব্যবহৃত হয় বোধহয় (খাঁটি বরিশাইল্যা ভাষায় দেঁতো হাসি)।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।