তোমার জন্য লেখা এলোমেলো শব্দের ঝাঁক-৩

রোমেল চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন রোমেল চৌধুরী [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০৫/১২/২০১৪ - ১:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তোমার জন্য লেখা এলোমেলো শব্দের ঝাঁক-১
তোমার জন্য লেখা এলোমেলো শব্দের ঝাঁক-২

প্রিয় মা'মণি
পিঠ ভরে রোদের উম নিচ্ছি আর চিঠি লিখতে লিখতে তোমার কথা ভাবছি। তোমার কথা ভাবছি আর কেমন ম্লান হয়ে যাচ্ছে আমার জীবনের অপূর্ণতাগুলো। জীবনের নিয়মই বুঝি এমনই! পূর্ণতা খুঁজে ফেরা—প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তুমি যখন বড় হবে, মা হবে, ফুটফুটে সন্তান আসবে তোমার কোল আলো করে, তখন তুমি বুঝবে—কি করে বাৎসল্যের প্রবল টানের কাছে পৃথিবীর সব ভালোবাসা ম্লান হয়ে যায়। তখন যে আমিও বুড়ো হব—তোমার বুড়ো খোকা! তখন কিন্তু আমি আর তোমায় ছেড়ে থাকবো না, এই বলে দিলাম!

ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে অক্টোবর আসতে না আসতেই আলো যেমন মুমূর্ষু রোগীর মতো বিছানা নেয়, তেমনটি এখানে ঘটে না, মাগো। সূর্য এখানে বড়ই অকৃপণ। ইউরোপে যখন শীতের ঝিমিয়ে পড়া বিষণ্ণ দিনের মন খারাপ করে দেয়া ক্ষয়িষ্ণু আলো, তখনও এখানে পুরোদমে সামার। সাইপ্রাসের উজ্জ্বল আকাশে ঝকঝকে সাদা আলো তখনও দোর্দণ্ড প্রতাপ ফ্লাডলাইটের মতো বিরতিহীন দীপ্তি ছড়ায়। এই যে আজ নভেম্বরের শেষদিনটিতে এসেও রোদের কি দারুণ তেজ! এখানে বুড়িয়ে যাওয়া স্তিমিত জরাগ্রস্ত সূর্যের গুহাবাসের সুযোগ নিয়ে শীতের বুড়ি গুটি গুটি পায়ে চুপি চুপি বেরিয়ে আসে না। বরং আকাশ জুড়ে মেঘের ভেলাগুলো ভাসতে ভাসতে যদি বা কখনও একযোগে বসে আড্ডা দিতে চাইলো, যদি বা বহুদিন পর প্রিয় মেঘ-বন্ধুর দেখা পেতে সজল হলো তাদের চোখ, আর বৃষ্টি নামলো আকাশ কালো করে, তবেই সূর্য হয়তো একটু লুকিয়ে থেকে শীত নামবার সুযোগ করে দিল। তাই বলে সূর্য কিন্তু দিনভর ছাড় দিলো না। এই বৃষ্টি—এই রোদ্দুর। বৃষ্টি পেয়ে গাছেদের শেকড়ের, তৃণ-পল্লবের যেমন তৃষ্ণা মিটল, রোদের আশীর্বাদটুকু পেয়ে ক্লোরোফিলে সতেজ হলো তাদের সবুজ পাতাগুলো। তাই এমন মোহন আনন্দ উৎসব ছেড়ে পাতা ঝরার গান গাইতে তাদের আর মনই চাইল না!

ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ঢুকিয়ে দিয়ে এসে আবার তোমায় লিখতে বসলাম। এবারেই প্রথম নিজ হাতে ওয়াশিং মেশিন যে ব্যবহার করতে হলো, তা নয়। আফ্রিকার দেশগুলিতে ব্লু হেলমেট পড়ে কাজ করবার দিনগুলিতে কদাচিৎ ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করতে হতো। তবে তখনও তোমার একমাত্র ছেলেটি এসবে তেমন অভ্যস্তও হয়ে উঠেনি। আর ছুটির দিনে এমন অফুরন্ত সময়ও ছিল না তাঁর। যুদ্ধ ও শান্তির মাঝে এই আরেক পার্থক্য। যুদ্ধ মানুষকে এগুতে এগুতে ভাববার অবসর দেয় না এতটুকুও। কিন্তু শান্তি বলে, এগোও, তবে মাঝে মধ্যে থেমে নিয়ে একটু ভেবো, এগুনোটা কাজের হচ্ছে কি না।

স্টীমারের গোল জানালার মতো পাল্লাটা খুলে অজস্র ফুটো চালনির মতো স্টীলের চেম্বারটিতে কাপড় ঢুকিয়ে দিয়ে ডিটারজেন্ট দিতে হবে প্রি-ওয়াশ আর পোস্ট-ওয়াশ চেম্বারে। তারপর কাপড়ের প্রকৃতি আর ময়লা-মলিনতা মেপে নিয়ে বিভিন্ন ফাংশন সেট করে বোতাম টিপে দাও। ব্যস, চালু হয়ে গেল। স্ট্রবেরি ফ্লেভারের কোণ আইসক্রিম হাতে পেলে তোমার পানি ঝরতে থাকা জিব যেমন বেরিয়ে এসে মশালের আলোর মতো উড়তে থাকা আইসক্রিমের উপরে হাপুস ঝাঁপিয়ে পড়ে—তেমনি পানির লোলুপ জিব এসে টেনে নিয়ে যাবে ডিটারজেন্টকে। একবারে নয়, ধাপে ধাপে। তারপর কাপড়গুলোকে নিয়ে মেশিনটার সে কি মোচড় দেয়া, একবার এপাশে তো আরেকবার অন্যপাশে। দীর্ঘ শীতের রাতে শুয়ে শুয়ে বেগম আখতার শুনতে শুনতে যখন পুরনো দিনের নানান কথা ভাবতে থাকি—তোমাদের দু'ভাই বোনের কচি-মুখ দুটো ভেসে ওঠে মনের পর্দায়—একপাশ ব্যথা হলে এলে আমিও মোচড় দিই অমন করে। তবে অনেক স্থবিরতা-জড়তা নিয়ে, নিভু নিভু আলোর প্রহরে তোমাদের মমতাটুকুকে আঁকড়ে ধরে।

গতকাল লেদ্রার গলিতে গলিতে উদ্দেশ্যবিহীন হেঁটে বেরুলাম। আমি একা নই, অনেক টুরিস্টই হাঁটতে আসেন এই বাহান্ন-বাজার তেপ্পান্ন-গলিতে। আমার এই উদ্দেশ্যহীন হেঁটে বেড়ানোকে ভ্রমণ তো আর বলা যায় না। ভ্রমণকাহিনী লিখবার মতো রসদও থাকে না ওতে। ভ্রমণ হলো তেমনই পথ হাঁটা—যে হাঁটায় পদে পদে অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হলো পুরনো-নতুন। তবেই না ভ্রমণ-কাহিনী লিখবার আয়োজন! তবে চিঠি লিখতে তো আর কোন বাধা নেই। আর সে চিঠি যখন মামনিকে লিখছে বাবা, তখন তাতে তো আমি মনে আনন্দের বান ছুটিয়ে আপন মনে মাঠে বনে উজাড় হয়ে যাই। সেই বন্ধনহীন ছুটে চলাকে অভিজ্ঞতার ভারে ভারাক্রান্ত করতে চাই নে বাপু! মন পবনের টানেই এই ভেলা ভেসে যাক না স্বচ্ছন্দে—অভিজ্ঞতার লগি ঠেলবার কি আর এমন দরকার?

ইউনিভার্সিটিতে এসে প্রথম দিনই যে টুরিস্ট গাইডটা সংগ্রহ করেছিলাম সেখানে সাইপ্রাসের ১০, ০০০ বছরের ইতিহাস ও সভ্যতার কথা লিখে দেয়া আছে। সংক্ষেপে তবে বেশ গুছিয়ে। আর বাহুল্য ছেঁটে ফেলে। তুমি এলে বুঝবে, পুরো ইউরোপ জুড়ে সবখানেই বাহুল্য ছাঁটবার যেন মহোৎসব। তুমি পড়বে বলে বইটি আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি। সেই সাথে কিনে রেখেছি—Glimpses of World History। তোমাকে উপহার দেয়া 'মা-মনিকে বাবা'-র পণ্ডিত জহরলাল নেহেরুর কথা নিশ্চয়ই মনে রেখেছ। তারই লেখা বই—কলেবরে ১১৯২ পৃষ্ঠা—কিন্তু কোন ঘটনার জন্যেই বরাদ্দ নেই পৃষ্ঠা চারেকের বেশি।বাহুল্য ছেঁটে ফেলবার আরেক উদাহরণ।

সেদিন আমাদের স্টুডেন্ট কো-অর্ডিনেটর মারিয়ানা বলেছিলো, ''গবেষণার কাজ শুরু করবার আগে আরো যখন হাতে দু-চারদিন সময় পাচ্ছো, নিজেকে গুছিয়ে নাও। তবে এই অবসরে ঘুরে ঘুরে ভেনেটিয়ান ওয়াল দেখবার কথা ভুলো না কিন্তু! তোমার স্টুডিও থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ''। তারপর একদিন সকালে প্রাতঃভ্রমণের অবিন্যস্ত বৈরাগী পাতে এক চামচ সালুনের মতো যেন অযাচিত সম্প্রদান টুপ করে এসে পড়লো। রাস্তা পার হবার জন্য সমস্ত মনোযোগ নিবদ্ধ ছিল ট্রাফিক সংকেতের দিকে। পার হয়ে দৃষ্টি তুলতেই দেখি ভেনেটিয়ান ওয়াল। যতটা না মুগ্ধ হলাম, বিস্ময়াভিভূত হলাম তার থেকে আরো বেশি। লেদ্রার চারদিক ঘিরে থাকা সেই ভেনেটিয়ান ওয়াল ধরে আমি গতকালও হেঁটেছি। হেঁটেছি আর ভেবেছি যুদ্ধ-যুদ্ধ রবের কথা, কামান দাগবার কথা, দুর্গ-রক্ষার উদাত্ত আহবানের কথা, পাশাদের বীরত্ব ও নৃশংসতার কথা।

১৪৮৯ সালে সাইপ্রাসের শেষ রাণী ক্যাটরিনা করনারো যখন ভেনিসের কাছে সাইপ্রাসকে বিকিয়ে দিল তখন থেকেই সাইপ্রাস রিপাবলিক অব ভেনিসের অংশ হয়েছে। অংশ হলে হবে কি, বর্তমানে যেদিকে তুরস্ক, সেদিক থেকে অটোম্যানরা তখন ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। বিপত্তি বাধল তখনই, ১৫২২ সালে যখন অটোম্যানরা এসে রোডস দ্বীপ দখল করে নিলো। সাইপ্রাসকে হারানোর ভয়ে ভেনেটিয়ানা শঙ্কিত হলো। তাই তো গড়ে তোলা এই ভেনেটিয়ান ওয়াল। দুজন ইতালিয়ান ইঞ্জিনিয়ার এসে শুরু করলেন নগরীর চারদিক ঘিরে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দেয়াল গড়ার কাজ। দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়বার রসদ যোগাতে কত প্রাসাদ— কত উপাসনালয় ভেঙে ফেলতে হলো। প্রাণরক্ষার প্রয়োজনের কাছে তুচ্ছ হলো জীবন আহ্বান। ভাবতে পারা যায়, এটা কিনা সেই ইউরোপে—যেখানে জীবনের মূল্য ছিল প্রাণের মূল্যের চাইতে ঢের বেশি! সর্বদাই।

অন্যদিকে লালা মুস্তাফা পাশাও তো তখন শান দিচ্ছেন তাঁর তরবারি আর কূট-কৌশলে। সেই থেকেই তো শুরু এই দেয়াল ঘেরা দুর্গ-নগরী নির্মাণের কাজ। শুরু হলো বটে কিন্তু শেষ হতে পারলো না, শেষরক্ষাও হলো না। সে গল্প তোমাকে আরেকদিন বলবো। মোড়ের ধারের দোকানটা বন্ধ হয়ে যাবার আগেই কিছু আনাজ-পাতি নিয়ে আসি আগে। জানো, গত দিন ওই দোকানটায় দুধ কিনতে গিয়েছিলাম। বোতলে ভরা এক লিটার দুধ কিনে দাম দিতে গেলে গম্ভীর স্বরে দোকানী বলল, ''১ ইউরো ২৪ সেন্ট''। ওয়ালেট খুলে পাঁচ ইউরোর একটা নোট হাতে গুঁজে দিতেই সে একগাদা খুচরো পয়সা হাতে ধরিয়ে দিল। পয়সাগুলো আমার হাতে এসে পড়তেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল, মা। তোমার তো না, তোমার মায়েরও তখন জন্ম হয়নি। দেশ তখন সবে স্বাধীন হয়েছে। সেই ১৯৭৩ সালের কথা। সে সময় আমাদের বড়ই অভাব ছিল রে মা'মণি। কতই না পরিশ্রম আর কষ্ট করতে হয়েছে তোমার দাদু-দিদুকে। চারিদিকে শুধু অভাব আর অভাব। সেই সব দিনগুলিতে আমরা হঠাৎ করে হাতে এসে পড়া এমন রুপোলী চাঁদের মতো এক-পাঁচ–দশ পয়সা গুনতাম! ক্যারমের ঘুঁটির মতো একটির উপর আরেকটি পয়সা সাজিয়ে সাজিয়ে কলাগাছ বানাতাম! আর দীর্ঘ সময় ধরে নিজের সঞ্চিত সম্পদ দেখে দেখে মোহিত হতাম। থাক, অভাবের গল্প শুনিয়ে তোমার মন ভিজিয়ে দেব না। কিন্তু তুমি জেনো, হেমন্তের বিশীর্ণ দিনে ঘাসের বুকে ফোটা নীল ফুলের মতো অভাবের মাঝেও যে টুকরো টুকরো আনন্দের দেখা মেলে! সন্ধ্যের মায়াঢাকা প্রহরে এলোকেশি আঁধারে মিটি মিটি জোনাকির মত জ্বলে সেই আনন্দের আলো। তুমি ভালো থেকো, মাগো...সবসময়...


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বাহ্ , চমৎকার লাগলো।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

অসম্ভব সুন্দর। এলোমেলো শব্দের ঝাঁকে খুব সুন্দর গোছানো শব্দমালা। যেখানে সাহিত্য আছে, দেশের টানাপোড়েন আছে, আকুতি আছে, আছে ভাষার মুগ্ধতায় অবগাহন। আপনি খুব যত্ন নিয়ে আমাদের লেখা পড়েন। তাই বলছি,
মা'মনি-মা'মণি
ষ্টীমারের, ষ্টীলের, পোষ্ট-বিদেশি শব্দে স এর ব্যবহার হবে।
আমার বলায় ভুল আছে কিনা জানাবেন। ভাল থাকুন।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সোনালি ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখবার মত হীরে ঝরানো মন্তব্য!

হ্যাঁ, আমি খুব কম পড়ি, তবে যেটুকু পড়ি, যত্নভরে পড়ি। সবচেয়ে যত্ন নিয়ে পড়ি নিজের লেখা—একধরণের নার্সিসাস সিন্ড্রোমে ভুগি—কবুল করতে দ্বিধা নেই, একধরণের আত্মম্ভরী প্রগলভতা!

শিখবার ক্ষেত্রে বয়স কোন বাধা নয়, তবুও সঠিক বয়সে সঠিক শিক্ষার মূল্যই আলাদা। আমাদের সময়ে প্রমিত বানান রীতি তেমন সমৃদ্ধ হয় নি। তাই এই অবেলায় পিছু ফিরে দেখি—কত কালি মেখেছি দু'হাতে, কত রাশি রাশি ভুলের পাহাড়! তাই বলে 'মা'মণি' বানান ভুল করবার অপরাধ নিশ্চয়ই মার্জনীয় হতে পারে না।ধন্যবাদান্তে শুধরে নিলাম।

আমি কি আশা করতে পারি, ভবিষ্যতেও আমার লেখা আপনার কাছে এমনটি মনোযোগ পাবে? অবশ্য যদি তা নিজ যোগ্যতা বলে আদায় করে নিতে পারে!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

Sohel Lehos এর ছবি

ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধোঁয়া নিয়ে যে এত সুন্দর বর্ণনা দেয়া যায় আপনার লেখা না পড়লে জানা হত না। আরো জানলাম যে কাপড় ধোঁয়ার মত অতি সামন্য জিনিসকেও বর্ণনার গুণে অসাধারণ করা যায়।

আপনিও বানান ভুল করেন?? দেঁতো হাসি

সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

হ্যাঁ, আমিও বানান ভুল করি। কারন, ম্যান ইজ মর্টাল। হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

এমন একটা বাপ থাকলে মেয়ের আর কি চাই!

চলুক

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

উঁহু, আবেগের প্রাবল্যে সত্যের অপলাপ হলো রাতঃস্মরণীয়। সন্তানের জন্য শুধু বাবার ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি প্রয়োজন মায়ের ভালোবাসারও। সেইসাথে নানা-নানী-চাচা-মামা-খালা-ফুপু-বন্ধু সবার ভালোবাসা যেন মনের জন্য এক মনোরম সুষম খাদ্য। একেক জনের ভালোবাসার স্বাদ একেক ধরণের।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আসলে লেখার সময় অন্যদের বিষয়টা ভাবিনি। আপনি ঠিকই বলেছেন।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

এ যেন আরেকটি গ্লিম্পসেস অফ ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি! ভুগোল, ইতিহাস, জীবন, দর্শন মিলেমিশে একাকার! এ ধরনের গদ্য পড়তে ভাল লাগে! ভীষন ভাল লাগে!
চলুক, রোমেল ভাই!

(অতিথী)

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আপনার ভালোলাগায় ভালোবাসার পরিমাণ অনেক বেশি। আমি বুক পেতে গ্রহণ করলাম।

তবে কোথায় আগরতলা আর কোথায় জুতোর তলা ভাই! আমি পণ্ডিত নই, হতেও চাই নে। আমার কাছে বুদ্ধির চাইতে হৃদয়ের মূল্য অনেক অনেক বেশি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

সাদিয়ার মতো হীরে ঝরানো মন্তব্য করতে পারছি না, কিন্তু সত্যি বলছি, পড়তে পড়তে কি এক অনুভূতির তীব্রতায় চোখ ভিজে আসছিল। আমার বাবার কথা মনে পড়ছিল। বাবা-মেয়ের সম্পর্কের তুলনা নেই, আপনার লেখার মতো। শুভকামনা রইল।
অপর্ণা মিতু

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এই মন্তব্যে হীরে ঝরছে না, ঝরছে ভালোবাসার অশ্রুবিন্দু! হীরের চাইতেও তা অনেক অনেক দামী। ভালো থেক, বোন!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

মন মাঝি এর ছবি

দারুন! চলুক

****************************************

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ, পুরনো বন্ধু!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রিয়দর্শিনীকে লেখা পণ্ডিতজীর চিঠির সাথে তুলনা করাটা এখানে প্রয়োজনীয় নয়, তবে সেই ইতিহাসটা মনে রাখাটা দরকার আছে। ১৯৩৪ থেকে ২০১৪ এই ৮০ বছরে দুনিয়া পাল্টেছে বিস্তর। ৮০ বছর আগে পণ্ডিতজী তাঁর অধীত বিদ্যা, অর্জিত জ্ঞান আর সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে চার চার পৃষ্ঠা করে সাজিয়ে কন্যার কাছে তুলে ধরেছিলেন। যাতে কন্যা হিমশৈলের অগ্রভাগটা দেখতে পান এবং বাকিটা জানার জন্য যেন জ্ঞানের সমুদ্রের গভীরে ডুব দেন। আর এই ৮০ বছরে প্রযুক্তি জ্ঞানের সমুদ্রকে রোদেলা'র আঙুলের ডগায় এনে দিয়েছে। তাই কবিকে এখন আর চার চার পৃষ্ঠা করে জ্ঞানের হিমশৈলকে তার সামনে তুলে ধরার দরকার নেই। যা দরকার তা হচ্ছে, যা কিছু দেখতে পেলাম তার সাথে পূর্বলব্ধ জ্ঞানকে মিলিয়ে টিকে থাকা সত্যটাকে তুলে ধরা। ঐতিহাসিক স্থাপনার ইতিহাস যা-ই হোক, এখন তার উপস্থিতির মানে সাধারণের কাছে কী সেটা জানা। আর সবচে' বেশি দরকার ঐ স্থানের সাধারণ মানুষের গল্প। মানুষের গল্পই যদি না থাকে তাহলে নিষ্প্রাণ ইট-কাঠ-পাথরের গল্প দিয়ে কী হবে! বাবা তো ঐ সাধারণ মানুষের দলেই। সুতরাং তাঁর গল্পটা যদি এর ফাঁকে ফাঁকে চলে আসে তো মন্দ কী! ধমনীতে যার রক্ত বইছে নিউরনে নিউরনে তাঁর ইতিহাস তো থাকতেই হবে।

একটা নতুন শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাঁটলে, তার মানুষদের জীবনযাত্রা লক্ষ করলে, তার দোকানে দোকানে সাজানো পসরা লক্ষ করলে, তার খাবারের স্বাদ নিলে, তার তরুলতাপুষ্পপাখিকে পর্যবেক্ষণ করলে আর তার সন্তানদের সাথে কথা বললে এক সময় ঐ শহরই আগন্তুকের সাথে কথা বলা শুরু করে। নতুন শহরের গল্প আরো আসুক। প্রতি সপ্তাহান্তেই আসুক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

একেই বলে অন্ধজনে পুঞ্জাক্ষী দান! গুরুদক্ষিণা নেবে নাকি পাণ্ডব?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

এত সুন্দর সুন্দর মন্তব্যের পরে এরচে সুন্দর করে কিছু বলার মত ভাষা/সাহিত্য আমার জানা নেই। আমার মত করেই বলি। বাহ্, দারুণ! হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

পড়বার জন্যে ও উৎসাহ জাগানিয়া মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ, মুরুব্বী! ছেলে কেমন আছে?

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তাহসিন রেজা এর ছবি

মুগ্ধপাঠ!!! আপনার লেখা পড়ে বারবার এই কথা বলতে হয়!! হাসি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ, তাহসিন! আমার এসব "ইউজলেস রোমান্টিক ফুলিজম"-র জন্য অনেকটুকু সময় নষ্ট হলো নিশ্চয়!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তাহসিন রেজা এর ছবি

মোটেও "ইউজলেস রোমান্টিক ফুলিজম" না। রেগে টং

আপনি জানেন আপনি কতটা ভালো লেখেন????

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

অতিথি লেখক এর ছবি

সবকিছুতেই সবার পেছনে পড়ে থাকি-সময়জ্ঞানটা নিতান্তই খারাপ বলে। তবে ভাগ্য এই যে, পড়ার ব্যাপারটা দেরিতে হলেও তার রস পাওয়া যায় ঠিক ষোলআনাই। চমৎকার লেখা! বিদেশ-বিভুঁইয়ে থেকেও দেশের প্রতি কেবল নয়, নিজের শেকড়ের প্রতিও কী ভালোবাসা! লেখাটা ভালোবেসে ফেললাম বড় বেশি।

দেবদ্যুতি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।