চরমপত্র

নিবিড় এর ছবি
লিখেছেন নিবিড় (তারিখ: সোম, ০৮/১২/২০০৮ - ১:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সচলে আজকাল সবাই কিছুটা হতাশ, কেও নিজেকে নিয়ে কেওবা দেশ নিয়ে। তাদের লেখায় সেই ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু আমি হতাশাবাদীদের দলে থাকতে চাই না। চাই না অন্যরাও থাকুক। তাই আশ্রয় নিই চরমপত্রের, পুরান সেই ক্লাসিকের। যুদ্ধ দিনের সেই অমরগাথার। আশা করি যুদ্ধের কালদিন গুলোতে মুক্তিযুদ্ধাদের আশার ভান্ডার এর কিছুটা আমরা অনুভব করতে পারব চরমপত্রের এই ক্লাসিক সংখ্যা থেকে। আর হ্যাটস অফ টু এম আর আকতার মুকুল, যুদ্ধ দিনের এই অমরগাথার রচিয়তা কে।
...........................................................................................................
চরমপত্র

......১৯৭১
মেজিক কারবার। ঢাকায় অখন মেজিক কারবার চলতাছে। চাইরমুড়ার থনে গাবুর বাড়ি আর কেচকা মাইর খাইয়া ভোমা ভোমা সাইজের মছুয়া সোলজারগুলা তেজগাঁও কুর্মিটোলায় আইসা- আ-আ-আ দম ফেলাইতেছে। আর সমানে হিসাবপত্র তৈ্রি হইতাছে। তোমরা কেডা? অ্যাঃ ৭২ জন। কেতাবের মধ্যে তো দেখতাছি লেখা রইছে বৈ্রবে দেড় হাজার পোষ্টিং আছিলো। ব্যাস ব্যাস, আর কইতে হইবে না- বুইজা ফালাইছি। বাকিগুলার বুঝি হেই কারবার হইয়া গেছে। এইডা কি ? তোমরা মাত্র ১১ জন কির লাইগ্যা ? তোমরা কতজন আছিলা ? খাড়াও খাড়াও এই যে পাইছি কালিয়াকইর - ১২৫ জন। তা হইলে ১১৪ জনের ইন্নাল্লিয়াহে ডট ডট ডট রাজেউন হইয়া গেছে। হউক, কোন ক্ষেতি নাই। কামানের খোরাকের লাইগ্যাই এইগুলারে বাঙ্গালমুলুকে আনা হইছিল। আরে এইগুলি কারা? যশুরা কই মাছের মত চেহারা হইছে কির লাইগ্যা। ও-অ-অ তোমরা বুঝি যশোর থাইক্যা ১৫৬ মাইল দৌড়াইয়া ভাগোয়াট হওনের গতিকে এই রকম লেড়লেড়ে হইয়া গেছ। অ্যাঁ- তুমি একা খাড়াইয়া আছো কির লাইগ্যা? কি কইলা- তুমি বুঝি মীরকাদিমের মাল? ও-অ-অ বাকি হগ্গলগুলারে বুঝি বিচ্ছুরা মেরামত করছে? গাং এর পারে পাইয়া আরামসে পানির মইদ্দে চুবানি মারছে।

কেইসডা কি? আমাগো বকসীবাজারের ছক্কু মিয়া কান্দে কির লাইগ্যা? ছক্কু-উ, ও ছক্কু ! কান্দিস না ছক্কু, কান্দিস না। কইছিলাম না, ‘বাঙ্গাল মুলকের কেদো আর প্যাকের মাইন্দে মছুয়াগো মউত তেরা পুকারতা হ্যায়’। নাঃ তখনই কি চোটপাট হ্যান করেগা, ত্যান করেগা; আর অখন। অখন তো মউলবী সাবরা কপিকলের মাইদ্দে পড়ছে। সামনে বিচ্ছু , পিছনে বিচ্ছু, ডাইনে বিচ্ছু , বাঁয়ে বিচ্ছু। অখন খালি মছুয়ারা চিল্লাইতেছে, ‘ইডা হ্যামি কি কুরছুনুরে , হামি ক্যা নানির বাড়িত আচ্ছিনুরে। হামি ইডা কি করনুরে’।

আতকা আমাগো ছক্কু মিয়া কইলো, ‘ভাইসাব , আমার বুকটা ফাইট্যা খালি কান্দন আইতাছে। ডাইনা মুরা চাইয়া দেহেন ওইগুলা কি খাড়াইয়া রইছে। কি লজ্জা, কি লজ্জা’! মাথাডা এ্যঙ্গেল কইরা তেরচি নজর মারতে দেহি কি! শও কয়েক মছুয়া অক্করে চাইউয়ার বাপ মানে কিনা দিগম্বর সাধু হইয়া খাড়াইয়া রইছে। বিগ্রেডিয়ার বশীর তগো জিগাইলো ‘তুম লোগকো কাপড়া কেধার গিয়া’? জবাব আইলো যশোরে শার্ট, মাগুরায় গেঞ্জি, গোয়ালন্দে ফুলপ্যান্ট আর আরিচায় আন্ডারওয়্যার থুইয়া বাকি রাস্তা খালি চিল্লাইতে চিল্লাইতে আইছি- ‘ হ্যায় ইয়াহিয়া ইয়ে তুমনে কেয়া কিয়া- হামলোগ তো অভি ন্যাঙ্গা মছুয়া বন গিয়া’?

আতকা ঠাস ঠাস কইরা আওয়াজ হইলো- ডরাইয়েন না ডরাইয়েন না। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী চুলে ভর্তি সিনা চাবড়াইতে শুরু করছে- ‘পদ্মা নদীর কুলে আমার নানা মরেছে, পদ্মা নদীর কুলে আমার দাদা মরেছে, গাবুর বাড়ির চোটে আমার কাম সেরেছে’। ব্যাস মওলবী রাও ফরমান আলী, ঠেটা মালেক্যা ভাগোয়াট হওনের গতিকে জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল উ থান্টের কাছে খবর পাডাইলো , ‘ হে প্রভু , তোমার দিলে যদি আমাগো লাইগ্যা কোনরকম মহব্বত থাক্যা থাকে , তা হইলে তুরনদ আমাগো ক্যইয়া দাও কিভাবে ক্যইয়া দাও কিভাবে বিচ্ছু আর হিন্দুস্তানী ফোর্সের পা ধরলে আমার লেড়লেড়া আর ধ্বজভংগ মার্কা সোলজারগো জানটা বাঁচানো সম্ভব হইবে’।

এই খবর না পাইয়া জেনারেল পিঁয়াজি আর সেনাপতি ইয়াহিয়া কি রাগ? ছদর ইয়াহিয়া লগে লগে উথান্টের কাছে টেলিগ্রাম করলেকা, ‘ভাই উ থান্ট, ফরমাইন্যার মাথা খারাপ হওয়নের গতিকেই এইরকম কারবার করছে। গের চিডিডারে চাপিস কইরা ফালাও। এই দিকে আমি আর শাহনেওয়াজ ভুট্টোর ডাউটগুল পোলা পোংটা সরদার জুলফিকার আলী ভুট্টোররে মিছা কথার ওয়াল্ড রেকর্ড করনের লাইগ্যা জাতিসংঘে পাডাইতেছি। একটুক নজরে রাইকখো’। বেডার আবার সাদা চামড়ার কসবীগো লগে এথি-ওথি কারবার করনের খুবই খায়েশ রইছে।

কইছে কিরে ভাই , আল্লাদের আর সময় নাই। সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের হবু ফরিন মিনিস্টার জুলফিকার আলী ভুট্টো ব্রাকেটে শপথ লওনের টাইম হয় নাইক্যা। ব্রাকেট শেষ জাতসংঘে যাইয়া পয়লা রিপার্টারগো লগে টু-উ-উ মারত মানে কিনা লুকোচুরি খেলা খেলতাছিল। তারপর জাতিসংঘে আতকা কান ধইরা উঠ-বস-উঠ-বস কইরা ভুট্টো সাবে চিল্লাইতে শুরু করলো, আর লাইফে এইরকম কাম করুম না। বাঙ্গাল মুলুকে আমরা গেঞ্জাম কইরা খুবই ভুল করছি। আমরা মাফ চাইতাছি, তোওবা করতাছি, কানডলা খাইতাছি- আমাগো এইবারের মত ক্ষমা কইরা দেন।

কিন্তু ভুট্টো সাব বহুত লেট কইরা ফালাইছেন। এইসব বোগাচ কথাবার্তায় আর কাম চলবো না। ঠাস ঠাস কি হইলো? কি হইলো? সোভিয়েট রাশিয়া জাতিসংঘে ভেটো মাইরা হগ্গল মিচকি শয়তানরে চিত কইরা ফালাইছে। কইছে, ফাইজলামির আর জায়গা পাও না? এইদিকে সেনাপতি ইয়াহিয়া খানের পরানের পরান জানের জান চাচা নিক্সন কড়া কিসিমের টিরিক্স করনের লাইগ্যা সপ্তম নৌবহররে সিঙ্গাপুরে আনছে। লগে লগে সোভিয়েট রাশিয়া হিসাব কইরা কাম করনের লাইগ্যা হোয়াইট হাউসের এ্যাডভাইসিং করছে। প্রেসিডেন্ট নিকলাই ক্রেম্লিন থাইক্যা কইছে পাক-ভারত উপমহাদেশের বাইরে কেউ নাক না গলাইলেই ভালো হয়। ব্যাস, আমেরিকার সপ্তম নৌবহররে সিঙ্গাপুরে আইসা নিল ডাউন হইয়া রইল।

এ্যাঃ এ্যাঃ এইদিকার কারবার হুনছেন নি? হারাধনের একটা ছেলে কাদে ভেউ ভেউ, হেইটা গেলো গাথার মইদ্দে রইলো না আর কেউ। জেনারেল পিঁয়াজি সরাবন তহুরা দিয়া গোসল কইরা ঢাকার হোটেল ইন্টারকণ্টিনেণ্টালের মাইদ্দে হান্দাইয়া এখনো চ্যাঁ চ্যাঁ করতাছে, আমার ফোর্স ছেরাবেরা হইলে কিহইবো, আমি পাইট করুম, পাইট করুম। আমাগো মেরহামত মিয়া আতকা চিল্লাইয়া উঠলো- এইডা কি। এইডা কি। জেনারেল পিঁয়াজির ফুলপ্যান্টে দুই রকম রং দেখতাছি কির লাইগ্যা? সামনের দিকে খাকি রং, পিছনের মুড়া বাসন্তী রং, কেইসডা কি? অনেক থিংক করলে বোঝন যায় এর মাজমাডা। হেইর লাইগ্যা কইছিলাম......

(রচনায়- এম,আর, আকতার মুকুল)


মন্তব্য

হিমু এর ছবি
নিবিড় এর ছবি
আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

(বিপ্লব)

নিবিড় এর ছবি
ধুসর গোধূলি এর ছবি

- চরমপত্রের একটা অডিও ফাইল আছে আমার কাছে। ঐটা "ঊর্ধেভরুম"নে (কৃতজ্ঞতা বাংলা খোমাখাতা) ঠিক হইয়া!

চরমপত্রের কালেকশনগুলা জড়ো করতে পারলে একটা জটিল কাজ হইতো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

নিবিড় এর ছবি

হুম...... ধূগোদা আপনার অডিও ফাইল টা সচলে দেন খুবি ভাল হয় তাইলে । আর চরমপত্রের কালেকশন গুলো নেটে থাকলে আসলেই খুব ভাল হইত ।

অভ্রনীল এর ছবি

গুরু, জলদি "ঊর্ধেভরুম" টা করেন।

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

রণদীপম বসু এর ছবি

আগে একটা মন্তব্য করেছিলাম। নাই দেখে বুঝতে পারছি না, 'মন্তব্য করুন'-এ ক্লিক না করেই নীড়পাতায় ফিরে গিয়েছিলাম কিনা। যাক্, তখনো বলেছিলাম যে
এম আর আকতার মুকুলের 'চরমপত্র'গুলোকে সিরিজ হিসেবে সচলে দেয়া যায় কিনা ভেবে দেখতে পারেন। একালের অন্তর্জালিক পাঠকরা ইতিহাস-সংশ্লিষ্ট ভাবনাগুলোকে নতুন করে ভাবতে পারবেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নিবিড় এর ছবি

হুম... এই কথাটা ভাল বলেছেন । চেষ্টা করব এই কাজটা করার ।

অভ্রনীল এর ছবি

ভালো লাগল। পছন্দের পোস্টে যুক্ত করলাম।
_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

পুতুল এর ছবি

রোজ একটা চরম পত্র চাই!
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আমি লেখায় রেটিং দিই না। আজ দিলাম।

আরও আসুক।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নিবিড় এর ছবি

সময়ের অভাবে আসলে ঠিক মত লেখা হয় না তবে চেষ্টা করব আস্তে আস্তে চরমপত্র এর বাকি অংশ গুলো সচলে নিয়ে আসার ।

দ্রোহী এর ছবি

চরমপত্রের অডিওগুলো কি অনলাইনে কোথাও আছে?


কী ব্লগার? ডরাইলা?

নিবিড় এর ছবি

হুম... সবগুলো একসাথে কোথাও আছে কিনা বলতে পারছি না তবে ধূগোদা মনে হয় আপনাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবে ।

দ্রোহী এর ছবি

সন্নাদার মত আমিও বলি, রেটিং করার ব্যাপারটা আমার মনে থাকে না। আপনার এই পোস্টে মনে করে রেটিং করলাম। দেঁতো হাসি


কী ব্লগার? ডরাইলা?

নিবিড় এর ছবি
রানা মেহের এর ছবি

খুব ভালো কাজ
সিরিজের ব্যাপারটা মাথায় রাখুন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নিবিড় এর ছবি

হুম... মাথায় রাখব আপু । আর পাড়ার জন্য ধন্যবাদ ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চলুক


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

নিবিড় এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।