মন পবনের নাও ০৩

নিবিড় এর ছবি
লিখেছেন নিবিড় (তারিখ: সোম, ০৮/০৬/২০০৯ - ৯:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

০।
ছুটি ছুটি ছুটি, ক্যাম্পাস আগামী একমাসের জন্য ছুটি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কয়েকটা এস্যাইনমেন্ট জমা দিতে পারলে ছুটিতে বাগড়া দেবার মত আপাতত কাওকে দেখা যাচ্ছে না। ক্যাম্পাস এই ছুটি গুলিতে কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যায়। সামনে পরীক্ষা আছে, এস্যাইনমেন্ট জমা দিতে হবে, টিউশনী বা কিছু প্রেম পাগল ছাড়া ক্যাম্পাসে আর কাওকে দেখা যাবে না। তবে থাকবে আরেকটা দল, আমার মত। যারা কিনা ছুটিতে আর কোথাও যাবার জায়াগা না পেয়ে ক্যাম্পাসের অলিগলিতে ঘুরাঘুরি করবে।

০১।
আরেকটু আগে, ধরেন প্রায় ৮/৯ বছর আগে যখন কিনা আর অনেক ছোট ছিলাম তখন ছুটির একটা অন্যরকম আমেজ ছিল। এইটা ঠিক লিখে বুঝান যাবে না। ছুটি মানেই তখন অনেকদিন পর বাড়ীতে যাবার সুযোগ। ছুটি মানেই তখন আর ভোর পাঁচটায় কেও বাঁশি বাজিয়ে ঘুমের তেরটা বাজাবে না, বাসাতে খালি ঘুম আর ঘুম, সারাদিন ঘুম। অনেকদিন পরে বাসায় আসি বলে একটা অন্যরকম খাতির, কেও কিছু বলে না। বাবা-মা ভাবে আহারে ছেলেটা কতদিন পর বাসায় আসল তাই সব কিছুতেই দারুন স্বাধীনতা যা কিনা বাসায় থাকা ছোট বোনটা পায় না।

কিন্তু এইসব স্বাধীনতার দিনগুলো কিভাবে কিভাবে যেন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেত। ছুটিতে যাবার আগে কত প্ল্যান থাকত কিন্তু এর মাত্র কয়েকটা বাস্তবায়ন করতে করতেই শেষ হয়ে আসত জিপসী বুড়োর ঝোলা থেকে চুরি করা সময় গুলো। হোস্টেলে ফিরে যাবার আগের রাতে শোবার পর অন্ধকারের ভিতর খালি মন হত- পড়াশুনার জন্য খালি বকাঝকা করলেও বাবা-মা'র সাথে আর কয়েকটা দিন থাকতে পারলে খুব একটা খারাপ হত না, খালি খামচি দিলেও ছোট বোনটা কিন্তু আমাকে দারুন ভালা পায়। এইসব চিন্তা করতে করতেই শেষ হয়ে যেত শেষ রাতটা।

০২।
আজকাল চিঠির চলটা উঠে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। শিমুল ভাই উনার কোন একটা লেখায় বা মন্তব্যে বলেছিলেন উনি চিঠি লিখতেন আর পেতেন পত্রমিতালীদের কাছ থেকে। আমিও চিঠি পেতাম আর আর লিখতাম প্রতি সাপ্তাহে তবে তা বাবা-মা'র কাছে। এমন কোন সাহিত্যিক মান সম্পন্ন নয় বরং আমার অনেক বানান ভুল হয় তাই হয়ত সেইসব চিঠিতে বানান ভুলের ছড়াছড়ি ছিল। বেশি বড় কোন চিঠি নয়, বড়জোর একপাতা। নিয়ম করে সব চিঠির শুরুতে সব সময় লিখতাম- আব্বু ও আম্মু আশা করি ভাল আছ। শেষে অবশ্যই থাকত দরকারী জিনিসের লিস্টি। এক সাপ্তাহের চিঠির সাথে অন্য সাপ্তাহের টার তেমন কোন পার্থক্য থাকত বলে মনে পরে না। কিন্তু এইটা নিশ্চিত ছিলাম এই চিঠির জন্য অপেক্ষায় থাকে দুইজন মানুষ।

০৩।
এইবার সরকার পরিবর্তনের পর ভেবেছিলাম দেশে রাজনীতির বুঝি গুণগত পরিবর্তনের সময় এসেছে। এই প্রথমবারের মত যখন প্রথম অধিবেশনেই সকল সাংসদীয় কমিটি গঠিত হল তখন সেই আশা আরেকটু দৃঢ হয়েছিল। কিন্তু আইলার পর বুঝলাম দিল্লী দূর অস্ত। সব গুলো প্রধান রাজনৈ্তিক দল গুলো এরপরে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে যেমন নির্লীপ্ততা দেখাল তাতে আর বুঝতে বাকি নেই এদের স্বভাব খুব একটা পরিবর্তন হয় নি, আমাদের রাজনীতি এখনো সাধারণ মানুষ কেন্দ্রিক নয়। আফসোস শুধুই আফসোস।

০৪।
আজকে লিখতে বসে কেন যেন খালি সব পুরান কথা মনে পড়ছে। তাইলে আরেকটা পুরান গল্প শুনাই, কিভাবে আমি বুঝলাম যে আমরা বড় হয়ে যাচ্ছি সেই গল্পটাই নাহয় আজকে বলে ফেলি। খুব সম্ভবত সেইটা ছিল ক্লাস নাইনের শুরুর সময়। ছুটি থেকে ফিরে আসলে আমাদের নিয়মিত কাজ ছিল এই ছুটি কে কি দারুন দারুন কাজ করেছে তা অন্যদের কাছে আর রসিয়ে রসিয়ে বলা। আমরা পড়তাম বালক বিদ্যালয়ে, এমন এক বালক বিদ্যালয়ে যার ৫০০ হাতের মধ্যে বালিকা অনুপ্রবেশ ছিল ঘোরতর নিষিদ্ধ কাজ। তাই ছুটি শেষে হোস্টেলে এইবার ঢাকার অনেকে যখন বালিকাদের গল্প করা করা শুরু করল তখন আমার মত মফস্বল পার্টির হা করে তা গিলা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।

আমরা শুনলাম ঢাকায় নাকি ম্যাবস নামে এক কোচিং আছে যেখানে আমাদের ঢাকা পার্টি কোচিং করে। তবে আসল ব্যাপার সেইটা না, আসল ব্যাপার হল সেইখানে তারা নাকি বালিকাদের সাথে একসাথে বসে একি ক্লাসে বসে কোচিং করে। আহা সেই ক্লাসের কত গল্প, শেষই হয় না সেই গল্প। সেইখান থেকে ঠিকানা নিয়ে গোপনে কত চিঠির আনাগোনা, কত উত্তেজনা। কত ঘুড্ডি উড়ানোর স্বপ্ন কত ঘুড্ডি ছিড়ে যাবার গল্প।

০০।
শহর জুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে, ঝুমঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির সময় কেমন জানি একটা মৃদু ঠান্ডা হাওয়া বয়, পুরান স্মৃতি গুলোকে নাড়া দিয়ে যায়। স্মৃতি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ঘুড্ডির কথা মনে পরে যায়, যেই ঘুড্ডি আর কখন উড়ানো হয় না। তবুও নাটাই ছেড়া সেই ঘুড্ডির পিছনে আমরা দৌড়াতে থাকি। ঘাস, মাঠ, ঝোপ পেরিয়ে আমরা প্রাণপনে দৌড়াই কিন্তু ঘুড্ডি সরে যায় দূরে, আর দূরে নাগালের অনেক বাইরে। থাক এত কথা না বলে সিসিবিতে মাসুম ভাইয়ের ব্লগে পড়া কয়েকটা লাইন বরং বলি-

একদিন এমন সময়
আবার আসিও তুমি–আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!–
পঁচিশ বছর পরে।’


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

কলেজে যখন নিয়ম হলো প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটা করে চিঠি লিখতে হবে। কী যে পেইন লাগতো আমার ... সবচেয়ে জটিল কাজ করছিল আমার কাজিন। সে দুই লাইনের একটা চিঠি (আম্মু- আব্বু কেমন আছ? আমি ভালো নাই) লিখে ফটোকপি করে রাখছিল। তারপর সেইটা প্রতি সপ্তাহে পাঠাইতো। একবার হাউস মাস্টার সেই চিঠি দেখে সে কী উত্থাল পাত্থাল খাইছে

আহ ম্যাবস। আহ স্মৃতি ... দেঁতো হাসি

নিবিড় এর ছবি

হুম ম্যাবস দেঁতো হাসি একজন নাকি ম্যাবস থেকেই তার জীবনের স্বার্থকতা খুজে পেয়েছে চোখ টিপি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

রায়হান আবীর এর ছবি

চৌধুরি সাব নাকি?

নিবিড় এর ছবি

হুম ইনিই হের চৌধুরি চোখ টিপি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

হ্যাঁরে দোস্ত- সব হারায়ে যাচ্ছে- ঘুড়ি- ছুটির আনন্দ- কিংবা ঐযে বললি খামচি।

খালি খামচি দিলেও ছোট বোনটা কিন্তু আমাকে দারুন ভালা পায়।

অদ্ভূত লাগলো এই লাইনটা।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

নিবিড় এর ছবি

অনেকদিন পরে সচলে দেখা গেল। হুম সব হারিয়ে যাচ্ছে।


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

পোলাপানদের পড়াশুনায় মন নাই, কিন্তু বালিকাশ্রমে ভর্তি হইতে একআঙুলে খাড়া।।।।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

নিবিড় এর ছবি

সব বয়সের দোষ টুটুল ভাই হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

তানবীরা এর ছবি

কত ঘুড্ডি উড়ানোর স্বপ্ন কত ঘুড্ডি ছিড়ে যাবার গল্প।

এটাই জীবন, কিন্তু নিবিড় তুমি কি বুড়ো হয়ে যাচ্ছো? তুমি ক্যানো এসব লিখছো? এসব লিখবতো আমরা স্মৃতিচারন আর তোমরা এখন স্মৃতি তৈরী করবে।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

কীর্তিনাশা এর ছবি

১০০ ভাগে ২০০ ভাগ সহমত

পোলাডা দেখি কুড়িতেই বুড়ি মানে বুড়া হয়া যাইতাছে........... খাইছে

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

নিবিড় এর ছবি

নাশুদা বয়স কমাইলেন কেন রেগে টং আমার বয়স কিন্তু কুড়ির থেকে পাক্কা দুই বছর বেশি হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

নিবিড় এর ছবি

তাতাপু লাইনটা কিন্তু আমারে নিয়ে না অন্যদের নিয়ে হাসি
আর গতকাল যে কি হইল বুঝলাম না হঠাৎ বুড়োদের মত পুরান কথা নিয়ে টান দিলাম, এই লেখাটা দেখে আমার নিজেরি এখন লজ্জা লজ্জা লাগছে ইয়ে, মানে...
আপনে তাইলে বুড়াদের দলে চিন্তিত


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

দীর্ঘশ্বাস বের করার মত লেখা। কষ্ট লাগে আবার না পড়লেও খারাপ লাগে। চলুক

নিবিড় এর ছবি

ব্যাপার কি আপ্নে দেখি প্রায়ই লগড অফ থেকে মন্তব্য করেন চিন্তিত


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চিঠি একসময় প্রচুর লিখতাম, পেতামও প্রচুর। এখন আর আমাকে কেউ চিঠি লেখে না। আমিও লিখি না কাউকে। জোর করে ডিজিটাল হওয়ার চেষ্টায় আছি অ্যানালগ এই আমি।

মন খারাপ নাকি তোমার? জানি না কেন মনে হলো এটা।

সিরিজটা চালিয়ে যাও। দারুণ হচ্ছে।

নিবিড় এর ছবি

থাকেন কই আজকাল, দেখা যায় না?
আপনে মানুষ টা দেখি ছোটকাল থেকেই খারাপ দেঁতো হাসি চিঠি লিখতে গিয়ে ধরা খাইছেন কতবার চোখ টিপি
মন একটু খারাপ ছিল কিন্তু ব্যাক করছে মন তার জায়গায় হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

বন্ধুর ঘুড্ডিরোগ তো তোমারেও ধরলো নিবিড়!
চোখ টিপি
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

নিবিড় এর ছবি

আরে নাহ দেঁতো হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

হাসি
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আবার আসিও তুমি–আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!
এই লাইনটা পড়ার পর থেকেই মাথায় ক্রমাগত ঘুরছে-
"তুমি আর একবার আসিয়া
যাও মোরে কান্দাইয়া
আমি মনের সুখে একবার কানতে চাই... "

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

নিবিড় এর ছবি

বেশি চিন্তা করা ঠিক না আফামণি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

মাহমুদ ফয়সাল [অতিথি] এর ছবি

রাশেদ, আজ ভোর ৫ টায় উঠে গেলাম কেন যেন। তোর ব্লগ পড়া শুরু করলাম... আবিষ্কার করলাম, কলেজ জীবনে পাওয়া চাপাবাজ নামটা তোর জন্য কতটা সত্য।
তুই এতো সুন্দর করে লিখিস! এতটা সুন্দর করে প্রকাশ করিস মনের কথাগুলোকে...... আর আমার লেখা পড়ে বলিস ভালো লাগে???
শালা তুই দারুণ খচ্চর। লজ্জা পেলাম আমার লেখাগুলার কথা মনে করে... কী রকম করে যে লিখি! আমার লেখা দিয়ে আগে যন্ত্রণা দিয়েছি, ক্ষমা করে দিস। মন খারাপ

আর সত্যিই ঘুড়ির পেছনে ছুটতেও পারলাম না। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সবার ঘুড়িগুলো আকাশে উড়তে দেখেছি আজীবন... কখনো যদি কোন ঘুড়ি কেটে যেত-- দেখেছি কতজন সেটার পেছনে ছুটছে প্রাণপন... অথচ ওই ঘুড়িটাকে আকাশ ওড়া থেকে হাতে যাওয়া পর্যন্ত কিন্তু আমি খুব ভালো করে দেখেছি... বোধ করি পথের মোড়ে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে একসময় ফিরে যাবো ঘরে... অধরাই থেকে যাবে সব-- জীবনের ইচ্ছেগুলো, স্বপ্নগুলো...

রায়হান ম্যাবস এর কথা মনে করিয়ে দিলো... খাইছে
আমি নাটাই হাতে ঘুড়ি উড়ানো দেখতাম, অনেককেই দেখতাম... শান্ত ধীর দীর্ঘ গভীর পর্যবেক্ষণ...

খালি খামচি দিলেও ছোট বোনটা কিন্তু আমাকে দারুন ভালা পায়।

অনেকবার মনে হতো এই কথা... এখনো হয়-- কিন্তু দিন অনেক বদলে যায়... সময় খুব নির্মম, আগের মত করে কিছু হয়না...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।