হবুচন্দ্রের প্রত্যাবর্তন

নির্বাক এর ছবি
লিখেছেন নির্বাক [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/০৯/২০০৮ - ১১:১৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হবুচন্দ্র রাজা এবং তার গবুচন্দ্র মন্ত্রী এখন নির্বাসনে। তাদের বাকি সভাসদরাও মোটামুটি সবাই লোহিত দালানের অভ্যন্তরে চৌদ্দশীকের অন্তরালে অবস্থান করছেন। সীমাহীন দূর্নীতি, অন্যায় ও অত্যাচারের কারনে কল্পতরু বৃক্ষের ফল ফলবার পূর্বেই তাদের এই ফলভোগ করতে হচ্ছে। সেনাধিপতি মউআ বেগ জাতিকে সকল অত্যাচার, অবিচার, অনিয়ম আর দূর্নীতি থেকে মুক্তিদানের মহান ব্রত নিয়ে জাতির এক মহাক্রান্তিলগ্নে স্বউদ্যোগে এই অসম্ভব কার্য সমাধা করেছেন এবং সঙ্গত কারনেই নিজেকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন। তবে পাছে হবুছন্দ্রের কলংকের কালিমা সিংহাসন থেকে তার জামায় লেগে যায় সেই ভয়ে তিনি সিংহাসনে না বসে পাশেই প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার এ আসন গ্রহণ করেছেন। প্রতিদিন তিনি এখান থেকেই তার শাসনকার্য পরিচালনা করছেন এবং প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে জাতিকে মুহূর্মুহূ দিকনির্দেশনা দান করে যাচ্ছেন। - এসকলই কিছুকাল পূর্বের কথা।

এখনের খবর হচ্ছে দুটি জাহাজ আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে রওনা হয়ে গিয়ে হবুচন্দ্র ও গবুচন্দ্র কে নিয়ে ফিরে আসবার পথে রয়েছে। পথিমধ্যে রাজপুত্র তারকাচন্দ্র ইয়ে সারতে গিয়ে বাথরুমের ফুটোগলে সাগরের জলে পড়েগেলে দেশে ব্যাপক হাঙ্গামা ও বিশৃংখলার সৃষ্টি হলে তারকাচন্দ্রকে জল থেকে তুলবার ব্যাবস্থা করা হয়। রাজপুত্রের নধর পাকস্থলী অধিক পরিমানে লবনজল গলধঃকরণ করায় তাকে চিকিৎসার জন্যে ভীনদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে চৌদ্দশীকের অন্তরালের ব্যক্তিদের বেশীরভাগেরই মুক্তির আনন্দে চৌদ্দপোয়া অবস্থা। এমতাবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতির প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবনের লক্ষ্যে রাত্রিক (প্রতিদিন নয় প্রতিরাতে প্রকাশিত হয়) “নিঃশব্দ” পত্রিকার অনিয়মিত সাংবাদিক জনাব গোপন বাবু সংগোপনে সেনাধিপতি মউআ বেগ এর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং এব্যাপারে জনগনের জ্ঞানতৃঞ্চা নিবারণের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎকারটি নিম্নে প্রদত্ত হলো –

গোপন বাবুঃ জাঁহাপনা, যে দূর্নীতির বিরুদ্ধে আপনি একদা খড়গহস্ত হয়েছিলেন, সেই দুর্নীতির নায়করা যেভাবে অচিরেই মুক্তি পেয়েযাচ্ছে তাতে জনগনের মনে বিশেষ সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। যে শহীদি জজবা নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনারা জিহাদ শুরু করেছিলেন সেই জোশ হঠাৎকরে নির্বাপিত হওয়ায় জনগনের আশার গুড়ে ছাইসহ বালি পড়েছে। আপনার কিছু বলবার আছে কি?
মউআ বেগঃ দেখুন আইন তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সুতরাং জনগনের এ বিষয়ে অহেতুক উৎকন্ঠিত হওয়ার কোন কারন আমি দেখছিনা। আর তা ছাড়া শহীদ হওয়াটাও সবসময় কোন কাজের কথা নয়। আপনিই চিন্তা করে দেখুন আমাদের মত গাজী’রা যদি বেঁচে না থাকে তবে সামনের দিনগুলোতে কারা সংগ্রাম করবে?
গোপন বাবুঃ (বিগলিত হয়ে) সে আর বলতে! তবে কিনা যে পরিমানে এবং ফ্রিকোয়েন্সিতে এরা ছাড়া পাচ্ছে তাতে জনমনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও কিছুটা ধন্দ লেগে গিয়েছে।
মউআ বেগঃ ধান্দাবাজ জনগনের মনে ধন্দ তো লাগবেই!! এই সেদিনও আমি প্রধান কাজী’কে ডেকে বলে দিয়েছি “আপনি একেবারেই স্বাধীনভাবে বিচারকাজ করবেন। স্বাধীনভাবে যদি তা করতে না পারেন তাহলে আপনার খবরই আছে।“ আমি আশাকরি জনমনে এরপর থেকে আর কোন সন্দেহই থাকবেনা।
গোপন বাবুঃ তা বটে তা বটে! কিন্তু মন্দলোকেরা বলছে যাদের কে এতদিন পাপী বলে গালাগাল করা হয়েছে প্রায়শ্চিত্তের আগেই তাদেরকে নাকি আবার কোনকোন পদ ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে?
মউআ বেগঃ কেন আপনি কি একথাটি জানেন না যে “পাপ কে ঘ্রীণা করো পাপীকে নয়”? এখন থেকে আমাদের সাথে পাপীরাও পাপ-দূর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে; এটি হবে একটি নতুন Dimension.
গোপন বাবুঃ ধন্য আপনার বুদ্ধিমত্তা।! কিন্তু তা বলে কি ডাকুচন্দ্র লকিয়ত খাঁ কে মুক্তি না দিলে চলত না?
মউআ বেগঃ এখানেই আমাদের দেশের জনগনের সমস্যা, তারা পুরোজিনিসটা কখনো দেখতে পায়না। দেশের সবকিছু যখন বেলাইনে চলে গিয়েছিল তখন আমারাই সেটাকে লাইনে নিয়ে এসেছি; যাকে বলে কিনা স্ট্রেইট লাইন। সুতরাং এখন লকিয়ত খাঁ কেন স্বয়ং ইবলিস শয়তান কেও যদি প্রকাশ্যে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলেও তার পক্ষে এদেশে এমুহূর্তে কোন খারাপ কাজ করা সম্ভব হবেনা।
গোপন বাবুঃ (ঢোক গিলে বিগলিত হাসি দিয়ে) যাক আমরা তবে এবার নিশ্চিন্ত হলাম।

---
নটে গাছটি মুড়োবার আগে দুইখান কথা –

১। উপরোক্ত ঘটনাটি কিছুটা ঐতিহাসিক মনে হলেও কাল্পনিক। সুতরাং এই ঘটনার সাথে অন্যকোন দেশের কোন মিল খুঁজে পাওয়া একেবারেই অসম্ভব আর নিতান্তই যদি পাওয়া যায় তবে তা কাকতালিয়। আর কোন আহাম্মক যদি বাংলাদেশের সাথে এই ঘটনার কোন মিল খুঁজে পায় তবে তার জেনে রাখা উচিত যে এদেশের জনগন কখনো কোন অন্যায় কে মেনে নেয় না, দুর্নীতিবাজদের কে তো নয়ই। তারা সবসময় বেছেবেছে ভাললোকদেরকেই ক্ষমতায় বসায়। আর এদেশের শাসকরাও অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকে।

২। কোন কারনে যদি উপরোক্ত ঘটনাটির কোন অংশ ঐতিহাসিকভাবে সত্য বলে কোন দূরাচারের নিকট প্রতিভাত হয়, তাহলে তাতেও আমাদের বিচলিত হওয়ার কোন কারন নাই। কারন, ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা গ্রহণ করেনা। সুতরাং ইতিহাসের সুযোগ্য ও যথার্থ ছাত্র হিসেবে আমাদেরও ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার কোন প্রশ্নই উঠেনা।

ইয়ামিন


মন্তব্য

ঝরাপাতা এর ছবি

পথিমধ্যে রাজপুত্র তারকাচন্দ্র ইয়ে সারতে গিয়ে বাথরুমের ফুটোগলে সাগরের জলে পড়েগেলে দেশে ব্যাপক হাঙ্গামা ও বিশৃংখলার সৃষ্টি হলে তারকাচন্দ্রকে জল থেকে তুলবার ব্যাবস্থা করা হয়। রাজপুত্রের নধর পাকস্থলী অধিক পরিমানে লবনজল গলধঃকরণ করায় তাকে চিকিৎসার জন্যে ভীনদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এই লাইনের জন্য আপনারে জাঝা।


যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

Shadhoo [অতিথি] এর ছবি

ভাল অনুভূতি গুলো ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে।
ধন্যবাদ

নির্বাক এর ছবি

“উত্তম” ও “ধন্যবাদ” এর জন্য ধন্যবাদ।

_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

তানবীরা এর ছবি

ইতিহাসের সুযোগ্য ও যথার্থ ছাত্র হিসেবে আমাদেরও ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার কোন প্রশ্নই উঠেনা।

এইটাই হলো গিয়ে আসল কথা।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।