মুখোমুখিঃ সোলস- পার্থ বড়ুয়া ও নাসিম আলীর অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার

নির্ঝর অলয় এর ছবি
লিখেছেন নির্ঝর অলয় [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০১/০৮/২০১২ - ১২:০০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২০০৫ এর শেষ দিকে সন্ধানীর একটি অনুষ্ঠানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পারফর্ম করে সোলস। অনুষ্ঠানের শেষে আমি হোটেলে সোলসের দলনেতাদের সাথে প্রায় দুঘণ্টার সাংগীতিক আড্ডায় যোগ দিই। আমার সাথে ছিল আমার বন্ধু তাওহীদ। সন্ধানীর কর্মী হিসেবে ওই ইন্টারভিউ এর ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। আজ এখানে সেই আড্ডার একটা সারমর্ম প্রকাশ করছি। এখানে বক্তাদের বাচনভঙ্গি ও ভাষা হুবহু রাখা হয়েছে এবং এই মতামত একান্তই তাদের ব্যক্তিগত।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে রক মিউজিকের সূচনা ও প্রসার সম্পর্কে কিছু বলুন।

নাসিমঃ বাংলাদেশের জন্ম থেকে। ইস্ট পাকিস্তানে রক মিউজিক ছিল, Lightning, Ugly fazes ইত্যাদি কিছু ব্যান্ডও ছিল। ৭০ এর দশকের শুরু থেকেই পৃথিবী জুড়ে রক মিউজিক রেভোল্যুশন শুরু হয়। আমরা জর্জ হ্যারিসনের গান শুনে খুবই অনুপ্রাণিত হই। এসময় গড়ে ওঠে আজম খানের ব্যান্ড উচ্চারণ, ফেরদৌস ওয়াহিদের “স্পন্দন।” ১৯৭২ এ গড়ে ওঠে সোলসের পূর্বসূরি ব্যান্ড “সুরেলা”, ১৯৭৩ এ সুরেলা এর নাম চেঞ্জ করে “সোলস” রাখা হয়। ১৯৭৭ এ All Bengal Rock Concert এ সোলস ফার্স্ট হল। ১৯৮০ সাল থেকে ন্যাশনাল মিডিয়াতে সোলস পরিচিত নাম। ১৯৮০-র শেষদিকে বের হল সোলসের ফার্স্ট এলবাম “সুপার সোলস।” এটা বাংলাদেশের প্রথম রক অ্যালবাম। যথারীতি আঁতেলদের তীব্র বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের।

প্রশ্নঃ বাংলা রক ব্যান্ড প্রথমে কোথায় শুরু হয়- পশ্চিম বঙ্গে না বাংলাদেশে?

নাসিমঃ অবশ্যই বাংলাদেশে, কারণ “মহীনের ঘোড়াগুলি” ব্যান্ড ছিল না।

প্রশ্নঃ সোলসের প্রথম কম্পোজ করা গান কোনটা?

নাসিমঃ (সম্ভবত) দরগায় মন জ্বলে।
পার্থঃ মন শুধু মন ছুঁয়েছে।

প্রশ্নঃ সোলস নামটির তাৎপর্য কী?
নাসিমঃ আত্মার সমন্বয়।

প্রশ্নঃ সোলসের সেকাল ও একালের লাইন আপ কী?
নাসিমঃ প্রথমে ছিলেন তপন চৌধুরী, আইউব বাচ্চু, নকীব খান- এঁরা। ৮২ তে ব্যক্তিগত কারণে নকীব খান বের হয়ে যান ব্যান্ড থেকে।
বর্তমান লাইন আপঃ লিড গিটার ও ভোকালঃ পার্থ , ভোকালঃ নাসিম আলী, Bass- তানিম, কিবোর্ড-মাসুম, ড্রামস- আশিক।

প্রশ্নঃ সোলস মূলত কোন genre এর মিউজিক কম্পোজ করে থাকে?
পার্থঃ মূলত মেলোডি-বেজড আর আমাদের চেষ্টা থাকে যাই হোক না কেন গানটা যেন বাংলা গান থাকে।

প্রশ্নঃ এখন অনেকেই বাংলা শব্দকে বিকৃত করে উচ্চারণ করে গান গাইছে- এ প্রসঙ্গে আপনার কী মত?
পার্থঃ এর কারণ অপরিপক্কতা, অজ্ঞতা, বাঙালি হিসেবে নিজেকে যথার্থ মূল্যায়ণের অভাব, বয়স। তবে এরা টিঁকবে না। বাঁকা জিনিসের বাঁকা পরিণতি। একটা দুটো Fluke হলেও এসব সুস্থ সঙ্গীত নয়। বিকৃত উচ্চারণ সহনীয় নয়, এরা ঝরে যাবে। (এ প্রসঙ্গে আমি তাহসানের উচ্চারণ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে, পার্থ বলেন তাহসানের উচ্চারণে তো কোন সমস্যা আমি লক্ষ্য করিনি। সে একজন ভাল গায়ক।)

প্রশ্নঃ বর্তমান মিউজিক ট্রেন্ড এবং অলটারনেটিভ রক প্রসঙ্গে কিছু বলুন।
পার্থঃ Good music, Alternative means অপ্রচলিত।

প্রশ্নঃ চলতি কথায় অনেকেই এই ধারাটিকে আন্ডারগ্রাউও মিউজিক বলছে- এই অভিধাটি সঠিক মনে করেন কি?

নাসিমঃ না। Underground music মানে অপ্রকাশিত মিউজিক। যেমন এক সময় বব ডিলান আন্ডারগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন। নেচেকুঁদে মাথা ঝাঁকিয়ে চিৎকার করলেই আন্ডারগ্রাউন্ড হয় না, তার একটা সামাজিক প্রেক্ষাপট থাকতে হবে।
পার্থঃ(উত্তেজিত ভাবে) Headbanging music is not underground. Music is not a joke! They are disturbing and they are not musicians!

প্রশ্নঃ আপনাদের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ক্ল্যাসিকেল সঙ্গীতের ভিত্তি প্রসঙ্গে কিছু বলুন।
পার্থঃ কিছুটা। আমি প্রপারলি শিখেছি চিটাগং এ- উস্তাদ নীরদবরণ বড়ুয়া আমার গুরু। ক্লাস ফোর থেকে শুরু করে ৩ বছর শিখেছি, Grammar for application. তবে গ্রামার আর মিউজিক এক নয়। সবারই শেখা উচিত, না শিখলে very difficult!
নাসিমঃ গাইতে গাইতে গায়েন!

প্রশ্নঃ ক্ল্যাসিকেল এর সাথে রক ফিউসন করার কোন পরিকল্পনা আছে কি?

পার্থঃ ক্ল্যাসিকেল ফিউসন apply করার মত প্রজ্ঞা আমার নেই।

প্রশ্নঃ আপনাদের প্রিয় শিল্পী ও ব্যান্ড প্রসঙ্গে কিছু বলুন।

পার্থঃ সামিনা চৌধুরী(ভীষণ!), প্রিয় ব্যান্ড রেনেসাঁ- এখনো বাংলা গানের ঝাণ্ডা ধরে রেখেছে। নকীব ভাই অসাধারণ কম্পোজার। রবীন্দ্রসঙ্গীতে দেববরত এবং হেমন্ত- অসাধারণ এবং শেষ কথা, ওর চেয়ে ভালো সম্ভব না!
নাসিমঃ মিতালি মুখার্জি, রেনেসাঁ, ঈগলস, টম জোন্স।
পার্থঃ আমার অনুপ্রেরণা সোলস, এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত মাইলসের ফার্স্ট শো আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল। ফিডব্যাকের কনসার্টও ভীষণ ভালো লাগত। আমি সোলসে বাংলা গান গাইতাম না। গান করতে চাইনি কখনো। I’ve always wanted to be a musician. তপনদা, বাচ্চু ভাই বের হয়ে যাওয়াতে গানে এসেছি। তপনদা থাকলে আমি গান গাইতাম না। আমার গিটারের গুরু বাচ্চু ভাই, ৮৭ সাল থেকে শিখেছি।

প্রশ্নঃ ব্যান্ডসঙ্গীত কথাটা কি ঠিক, এটা রকসঙ্গীত হওয়া উচিত নয় কি?
নাসিমঃ বিদেশে ব্যান্ড মিউজিক বলে কোন টার্ম নেই। ব্যান্ড মানে A band of people, যেমন A band of warriors মানে সমষ্টিযোদ্ধা। রক প্রচণ্ডভাবে রেভোল্যুশন নিয়ে এসেছিল। রক মানে নাড়া দেয়া, পাথর মেরে নাড়া দেবার মতোই! প্রথমে দাসত্বের আর্তি থেকে ব্লুজ ও জ্যাজ এসেছিল। ব্লুজ ছিল দাসদের কান্নার গান। Band is a cultural revolution. আর পপ বলতে বোঝায় জনপ্রিয় গান, Pop is only for entertainment. অনেকে ভাবে রক মিউজিক ক্ল্যাসিকেল থেকে এসেছে। এটা ঠিক নয়। রক এর সাথে ক্ল্যাসিকেলের ডাইরেক্ট সম্পর্ক নেই।

প্রশ্নঃ ফিউসন সম্পর্কে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
নাসিমঃ যেকোন কিছু ক্রিয়েশন ফিউসন থেকে হয়েছে। তবে সেটা গুড ফিউসন হতে হবে। ব্যাড ফিউসনের নজিরও প্রচুর আছে।

প্রশ্নঃ গানের কথা আর সুরের মধ্যে কোনটার মাহাত্ম্য বেশি?
পার্থঃ প্রথম কথা তারপর সুর।
নাসিমঃ কথা থেকে সুর আসে, সুর থেকে কথা আসে না।

প্রশ্নঃ আপনাদের অনেকেই অন্যরকম গান করে থাকেন, যেমন রবীন্দ্রসঙ্গীত- রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্পর্কে আপনাদের মূল্যায়ণ কী?
নাসিমঃ অসাধারণ, একটা জিনিস খেয়াল করবে- রবীন্দ্রসঙ্গীতের এক্সেন্টটা কিন্তু বাংলা না, ইংলিশ। (গান ধরলেন- মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে)- দেখো আকারগুলো ঠিক আ নয়, ইংরেজী উচ্চারণের মত অনেকটা অ এর কাছাকাছি। আমার গানের শুরু রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে, আমার বাবা গাইতেন। শুনে শুনে আমিও গাইতাম।
পার্থঃ রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, ফিউসন প্রসঙ্গে আমি পার্থ মারলে শুওরের বাচ্চা, আর উনি করলে এডাপটেশন –এটা কোন ধরণের মানসিকতা? আর তার গান নিয়ে এত কড়াকড়ি কেন? নজরুল তো ইন্সটিটিউট করে যান নি। আমি কি পাঁচ হাজার বছর ধরে একই রকম ভাবে গাইবো? এটা ঠিক যে রবীন্দ্রনাথের মত হয়তো আর কেউ জন্মাবেন না, কিন্তু তাই বলে আমার গান থাকবে না?

প্রশ্নঃ মাকসুদের “না চাহিলে যারে পাওয়া যায়” গানটি গাওয়া নিয়ে যে বিতর্ক হল, সে প্রসঙ্গে কী মনে করেন?

পার্থঃ আরেকজনের গান অন্যভাবে গাওয়ার কোন রাইট নেই। আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলাম ২০০০ সালে ইটিভিতে- “সখী ভাবনা কাহারে বলে” –খালি গলায়। গান সঠিকভাবে শেখার জন্য সাদী ভাইকে ফোন করেছি। নকীব ভাইও গেয়েছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। কই তাঁর নামে তো কথা ওঠেনি। মাকসুদ ভাই তো সুরে গাননি!

প্রশ্নঃ মিউজিক কতটা প্রফেশন, কতোটা প্যাশন?

পার্থঃ প্রথমে প্যাশন তারপর প্রফেশন। যখন উল্টোটা হয় তখন বিরক্তি আসে। মিউজিক তো আর আলুর ব্যবসা না।

প্রশ্নঃ দেশের অন্যন্য নতুন ব্যান্ড ও তরুণ শিল্পীদের গান প্রসঙ্গে কিছু বলুন।
পার্থঃ কিছু ভালো সিঙ্গার আছে। রাজীব। মেটাল বয়জ- এদের গান ভালো। বাপ্পার সিঙ্গিং এক্সেলেন্ট! আরেকজন আমার খুব প্রিয়- হাসান- বিউটিফুল গায়। এছাড়া ভালো গায় আনুশে, কানিজ সুবর্ণা। অর্ণবের গান আমি তেমন শুনিনি। তাহসান- গুড সিঙ্গার, আমি ওর উচ্চারণে ভুল পাইনি।
হাবীব- As a musician, he is excellent.
নাসিমঃ বাপ্পা খুব ভালো গায়। গলাও খুব ভালো। তবে ওকে ঠিক তরুণ শিল্পী বলা যায় না!

প্রশ্নঃ নতুন কোন রিমেক বা রিমিক্স এলবাম বের করার ইচ্ছে আছে?

পার্থঃ পরিকল্পনা নেই।

প্রশ্নঃ আপনাদের শিক্ষা কোন বিষয়ে?
পার্থঃ গ্রাজুয়েশন, ইংলিশ, চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি।
নাসিমঃ মাস্টার্স, ম্যানেজমেন্ট, চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি।
মাসুমঃ অনার্স, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন।
আশিকঃ এম,বি,এ
তানিমঃ গ্র্যাজুয়েশন।

প্রশ্নঃ প্রিয় খাবার?
নাসিমঃ ভাত, রুই, গরু।
পার্থঃ ভাত, পাঙাস মাছ।
আশিকঃ সব খেতে ভালো লাগে।
তানিমঃ চা,পুরি।

প্রশ্নঃ পরিবার ও বিয়ে প্রসঙ্গে, প্রেম করে না এরেঞ্জড?
নাসিমঃ আমার দুটো মেয়ে - ৮ বছরের শামামা আর ৭মাসের Zailo. আমার ওয়াইফ সামিয়া খান ,বোথ লভ এন্ড এরেঞ্জড।
পার্থঃ মেয়ে রূপা বড়ুয়া, ১১ বছরের, স্ত্রী রুনু( রঞ্জনা বড়ুয়া), আগে লভ পরে এরেঞ্জড!

প্রশ্নঃ রাজশাহীতে প্রথমবার এসে কেমন লাগছে?
পার্থঃ দারুণ। অডিয়েন্স ইস ফ্যানটাসটিক!
নাসিমঃ আমি ভীষণ এনজয় করেছি!

প্রশ্নঃ একজন ভালো গায়কের কী কী গূণ থাকা উচিত?
পার্থঃ সুরে গাইতে হবে, উচ্চারণ ভালো হতে হবে। টেইল ড্রপ করলে চলবে না। ব্রেদিং ভালো হতে হবে।

প্রশ্নঃ সোলসের নেক্সট এলবাম কবে আসছে?
পার্থঃ বর্ষাকালে।

প্রশ্নঃ আপনাদের প্রিয় লেখক কারা?

পার্থঃ শীর্ষেন্দু, সমরেশ, হুমায়ুন।
নাসিমঃ হুমায়ুন আহমেদ, ফ্রেডরিক ফরেস্ট, সমারসেট মম।

প্রশ্নঃ মিউজিকের বাইরে আপনাদের অন্য প্রফেশন আছে?
পার্থঃ আমার একটা মিডিয়া হাউজ আছে।
নাসিমঃ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

প্রশ্নঃ ধর্ম ও ঈশ্বর বিশ্বাস প্রসঙ্গে?
পার্থঃ আমি পৈতৃক সূত্রে যেটা পেয়েছি, সেটা ফাইন। বেশি কিছু বলতে চাই না। লিভ ইট, বিশ্বাস করি।
নাসিমঃ ধর্ম হচ্ছে কর্ম, কর্ম হচ্ছে ধর্ম। বিশ্বাস করি সৃষ্টিকর্তায়। আমি বিশ্বাস করি যত ধর্ম এসেছে, যতটা ডিসিপ্লিন এসেছে, সবই ঈশ্বরের থেকে এসেছে। সো, প্রতিটি ধর্মই ঈশ্বরের।

প্রশ্নঃ স্টার হবার আগের ও পরের জীবনের তফাত কী?

পার্থঃ আগে আমার গান লোকে শুনত না, এখন শোনে।

অলয়


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং! এতদিন পরে হলেও এটা প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ। থলেতে আরও কিছু থাকলে বের করুন শিঘ্রী। হাসি

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এইটার ট্যাগে সোলস, পার্থ বড়ুয়া, নাসিম আলী এই তিনটা থাকতে পারত। দুষ্প্রাপ্য জিনিস। পোস্টদাতাকে ধন্যবাদ।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ক্রেসিডা এর ছবি

চলুক

ভালো লাগলো ।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

সজল এর ছবি

দারুণ অলয়! সোলসের গান ভালো লাগে।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সুমন চৌধুরী এর ছবি

একটু অন‌্য প্রশ্ন করি। এই পোস্টের সাক্ষাতকারটা যে অথেন্টিক তার কোন প্রমাণ আছে কি? ভুল প্রশ্ন করলাম বোধ হয়। বিশেষ করে সবাই যখন বাহবা দিচ্ছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

না! প্রমাণ দিতে পারব না! তবে আমি এতটা রকবাজ নই যে এদের সম্বন্ধে এতটা জানবো!
অলয়

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

দারুন একটা সাক্ষাতকার দিলেন, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। প্রিয় শিল্পীদের কথা শুনতে খুবই উপভোগ্য। আমাদের কিশোরবেলায় তো সোলস দিয়েই ব্যান্ডের গান শোনার সুচনা। লম্বা চুল, বেল-বটম ট্রাউজার্স পরা বাচ্চু, ওহ্ ভুলতে পারিনা।

এখানে নাসিম-পার্থ ভাইরা সরাসরি সোলসকে রক বলেননি কিন্তু আমি ব্যাক্তিগতভাবে সোলসকে পিউরলি রক মনে করিনা। সোলস অত্যন্ত উঁচুমানের একটা পপ ব্যান্ড তবে কিছু মেলোরক তারা করেছে দু'একটা ভালো রেগেও তারা করেছে।

দরগায় মন জ্বলে।

এটা হবে দরগায় মোম জ্বেলে কি হবে, মিথ্যে ফকির সেজে কি হবে।

মাকসুদ ভাই তো সুরে গাননি!

আমার বন্ধু বাংলাদেশের বিশিষ্ঠ গিটারবাদক রুবায়েত চৌধুরী তখন মাকসুদের সাথে বাজায়। এই রবীন্দ্রসংগীত গায়কী নিয়ে মাকসুদের সাথে তার দ্বিমতের জেরে সে আস্তে আস্তে মাকসুদের সঙ্গ ছেড়ে চলে যায়।

আমি এখনও সোলস শুনি, ভালোবেসে শুনি। তানিম চলে যাওয়ার পর থেকে রানা বেস বাজাচ্ছে। রানা আমার ছাত্র। আশিক আমার খুবই স্নেহাষ্পদ একজন ছোটভাই এবং আমাদের সাথে অনেক বাজিয়েছে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তাসনীম এর ছবি

এটা হবে দরগায় মোম জ্বেলে কি হবে, মিথ্যে ফকির সেজে কি হবে।

রাইট।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি যে মিউজিশিয়ান সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে! আচ্ছা, পপ বলে ঠিক আলাদা কোন ধারাকে বোঝানো উচিত? ভুলভুলাইয়া ছবির " আমি যে তোমার" -ঠুমরী আঙ্গিকের এই গানটিও কি পপ নয়? সাধারণত মেলোরক গানগুলোকেই কি আমরা পপ গান হিসেবে চিনি না? আর মেলোরক কি আসলে রক নয়? রেগিতে আমার মনে হয় ফুয়াদ নাসের বাবু এবং ম্যাক ভাই সবচেয়ে ভালো কাজ করেছেন, যদিও মাইলস এবং সোলসেরও কিছু ভালো কাজ আছে। আমি অতি নিম্নাঙ্গের মার্গসঙ্গীতের অগায়ক, রক নিয়েও যদিও এককালে কিঞ্চিত গলাবাজি করেছি। কাজেই রক সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারলে উপকৃত হব। কোন মিউজিক নিয়েই আমার ছুঁৎমার্গ নেই, কিন্তু মেলোডির প্রতি ভীষণ দুর্বলতা আছে! ধন্যবাদ সুন্দর আলোচনার জন্যে।
অলয়

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আপনি ভুল ধারনা করেছেন, আমি মিউজিশিয়ান তো নইই, কখোনো ছিলামও না। মিজিশিয়ান হওয়ার ব্যার্থ চেষ্টা চালিয়েছিলাম মাত্র একদা। ডিফাইন করা আমার জন্যে বেশ কঠিন- আমার ধারনায় রক গতিশীল আর পপ ছন্দময় ও কাব্যিক। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, রক কি তবে ছন্দময় বা কাব্যিক নয়? মোটাদাগে বলি, ওয়ারফেজের ধরনটাকে মনে হয় রক বলা যেতে পারে। ব্যাকারণগত ভাবে এটা ভুল হতে পারে তবে আমার ফিলিংস বললাম।

রেগেতে বাবু ও ম্যাক ভাইয়েরা অনেক ভালো কাজ করেছেন। বিশেষ করে ম্যাকের গাওয়া 'মনে পড়ে তোমায়' বা রোমেলের গাওয়া কেনো খুলেছো তোমার জানালা তো অসাধারন। সোলসের 'চায়ের কাপে' তো আমার অসম্ভব প্রিয় একটি রেগে। তবে রেগেতে আমার সবথেকে প্রিয় হচ্ছে রেনেসাঁ। ভালো লাগে জ্যোৎস্না রাতে, বেঁচে থাকা নিয়ে যাদের যুদ্ধ- আমাকে পাগল করে দেয়। মাইলসের কোনও রেগে মনে পড়ছে না। আমি এক সর্বভূক মিউজক প্রেমী, আমার কাছে তেমন বাছবিচার নেই।

আপনি যেহেত নিজেই মিউজিক করতেন এবং ম্যাকের সাথে চেনা জানা আছে, আমি আপনাকে অনুরোধ করবো বিভিন্ন genre গুলোর সম্পর্কে আরও ক্লিয়ার জানতে, ওরা আপনাকে হেল্প করতে পারবেন।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

কড়িকাঠুরে এর ছবি

মাইলস্ এর "গুঞ্জন শুনি" টা তো রেগে ধাঁচের । তবে "চায়ের কাপে" কী রেগে? খটকা লাগছে... আর সোলস্ কে মেলো রক বা সফট রক বলি আমি । পপ ঝোনর্ কে কীভাবে সঙ্গায়িত করা হয় আমি ঠিক পুরোপুরি অবগত না । অনেক কে বলতে শুনি "পপ" কোন ঝোনর্ না আসলে । "পপুলার" থেকেই পপ ।

আর অলয় আপনাকে বলবো, রক সম্পর্কে জানতে অনেক বেশি রক গান শুনুন । রক ঝোনর্ এর ভেতরেও বিভিন্ন ধরণের ভাগ আছে । কেউ বললে হয়তো সহজ হবে বুঝতে আবার অনেকে বলেন যে এটা কান এর ব্যাপার । শুনতে শুনতে অভস্ত্য হবার ব্যাপার । ডেথ মেটাল আর ব্ল্যাক মেটাল বা কেন হার্ড রক- কেন হেভি মেটাল নয় এখানে পার্থক্য খুব সীমিত(আমাদের মত শ্রোতাদের জন্য) ।
তো ঝোনর্ ধরে ধরে গান শোনা শুরু করতে পারেন । আর নিজেই যেখানে গান করেন সেখানে আমি আর কিছু না বলি । শুভ গুনগুন...

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ কড়িকাঠুরে মাইলসের প্রিয় একটা রেগে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যে। চায়ের কাপে তো ১০০% রেগে। তবে এটি রেগের স্বাভাবিক বা গতানুগতিক টেম্পো থেকে একটু হাই। আপনার জানাই সঠিক, সোলস মেলো বা সফট রক ব্যান্ড এবং পপ আসলে পপুলার থেকে উদ্ভুত। সমস্যা হয়েছে যে বাংলাদেশে ব্যান্ড সঙ্গীতের সুচনা থেকে "পপ সঙ্গীত" কথাটা এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে সাধারন উপলব্ধিতে মেটাল-রক-রেগে-ফোক বাদে অন্যগুলো গড়পড়তায় পপ সঙ্গীত হিসেবে ধরা হয়।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ। হ্যাঁ! পপ আসলেই কোন ধারা নয়। ফৈয়াজ খাঁ সাহেবের নটবেহাগ আর আবদুল করীম খাঁ সাহেবের ভৈরবী ঠুমরীও আসলে পপ। হেমন্ত-মান্না-কিশোর-রফি পপ। কারণ ফিল্মি গানাও কোন ধারা নয়।
হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন। সচেতনভাবে শোনার মধ্যেই রসগ্রাহীতা গড়ে ওঠে। তবে, মনের দুঃখটা এখানে যে, আমি মূলত ধুরপদ-খ্যাল-ঠুমরী-টপ্পার শ্রোতা হয়েও রক ও তার ধারাগুলোর বিকাশ নিয়ে আগ্রহ রাখি। কিন্তু আমার বন্ধু ও ছোটভাইরা যারা দিনরাত রক নিয়ে মাতামাতি করত, তারা এসবের কিছুই জানত না। রক যে একটা ফ্যাশন নয়, একটা আবেগ ও আন্দোলনের নাম- এই কথাটাই আমি আমার ক্যাম্পাসে প্রচার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জানি, পারিনি। আজো এরা ডিলানের নাম শোনেনি। স্করপিয়ন-মেটালিকা, আর্টসেল ছাড়া আর কিছু শোনেনি!
অলয়

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সোলসের সেকাল একালের লাইনআপে রনি ভাইয়ের নাম কোথাও না দেখে অবাক হলাম।
ইন্টারভিউটা কি রেকর্ড করেছিলেন?

সোলসের একাল সেকাল মিলিয়ে প্রায় ফুল লাইনআপ জীবনে একবারই একত্রিত হয়েছিলো। তখন তাঁদের চারটা গ্রুপ ছবি তুলেছিলাম। তখনো ডিজিটাল ক্যামেরা পাইনি হাতে। ফিল্মে তুলেছিলাম। ফিল্ম রোলটা হারিয়ে গিয়েছিলো। কদিন আগে খুঁজে পেয়েছি। প্রিন্ট করার সময় পাচ্ছি না। ছবিটা রেয়ার

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কড়িকাঠুরে এর ছবি

পোস্ট এর অপেক্ষায় ।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

মনে আছে, সে দারুন এক ইভেন্ট হয়েছিলো। স্মৃতি থেকে বলি-

গিটার-
১) আইয়ুব বাচ্চু,
২) র‍্যালী,
৩) পার্থ বড়ুয়া,
৪) ইফতিখার সোহেল,

কিবোর্ডস-
১) নকীব খান,
২) জেরার্ল্ড,
৩) সুহাস হাসনাইন,
৪) পার্থ বড়ুয়া,
৫) আজাদ,
৬) মাসুম

ড্রামস-
১) পিলূ খান
২) রনি বড়ুয়া,
৩) পান্থ কানাই জুয়েল,
৪) আশিক

বেইজ-
১) জেরার্ল্ড,
২) মোহাম্মাদ আলী,
৩) সুহাস হাসনাই্ন,
৪) তানিম,
৫) রানা

পার্কাশান্স-
১) নেওয়াজ (ম্যানেজার)

আপাতত এদের নামগুলোই মনে পড়ছে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

হুম হাসি

কড়িকাঠুরে এর ছবি

দারুণ জিনিস- সোলস্ সবসময়ের পছন্দের...
ধন্যবাদ ভাই...

মন মাঝি এর ছবি

চলুক
দারুন!

"মন শুধু মন ছুঁয়েছে" গানটার লিরিক্স/কথা কার লেখা কেউ জানেন?

****************************************

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

সুরটা নকীব খানের। কথা যতদুর মনে পড়ছে লিখেছিলেন শহীদ মোহাম্মদ জঙ্গী চৌধুরী।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

ঠিক আছে। কিন্তু উনি কি চৌধুরী ব্যবহার করতেন? যতদূর মনে পড়ে না মনে হয়। শহীদ মো: জঙ্গী লিখতেন। দারুণ সব গান আছে উনার।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

উনার পুরো নামের সাথে চৌধুরী আছে বলেই মনে পড়ছে তবে ক্যাসেট কভারে লিখতেন না। ভুলও হতে পারে আমার। চিন্তিত

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

স্যাম এর ছবি

পার্থ দা আর নাসিম ভাই কে যতটা চিনি - ইন্টারভিউটা অথেন্টিক ই লাগছে!

পথিক পরাণ এর ছবি

দারুণ!!
একটা জায়গায় একটু কথা আছে--

রবীন্দ্রসঙ্গীতের এক্সেন্টটা কিন্তু বাংলা না, ইংলিশ।

রবীন্দ্রনাথের কিছু গানের মূল সুর ব্যালে বা পাশ্চাত্য সঙ্গীতের থেকে নেয়া। যেমন ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে গানটি। এই গানের সুরে ইংরেজি টানটি চলে আসে। আবার তাঁর অনেক গান এদেশের পুরনো লোকগীতির থেকে ধার করা। যেমন- যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে (মূল গানটি ছিল - হরি নামে জগত মাতালে আমার একলা নিতাই) এই গানগুলোতে মনে হয় না ইংরেজি উচ্চারণের টান আছে।

রবীন্দ্রসঙ্গীত কিন্তু শুরু থেকে একই উচ্চারণে নেই। রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রথম দিকের রেকর্ডে বিনোদিনী বালা দাসীর গলায় সুরের ধারা ভিন্ন ছিল। তাঁর কণ্ঠে যদি বার...ণঅঅ করো তবে... গাহিবঅ অ না য়... গানে অনেকটা ক্ষেমটার মতো সুর পাওয়া যায়। আজকের যুগে তাঁর গলায় পরিচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে কেউ সুর বিকৃতির অভিযোগ তুলে বসতে পারে। গানের মূল সুরগুলো অনেক সময় ধরে ধরে গায়কীর ভঙ্গীতে বিস্তর বদলে গেছে।

পঙ্কজ মল্লিকের সময় মাইক্রোফোন এলে পরে গানের শেষের বিবৃত উচ্চারণটি, যেটি কিনা ১৯১০-২০ এর দিকে খুব পরিচিত ছিল, তা অনেক সঙ্কুচিত হয়ে এলো। এরপর ৫০এর দশকে একই রবীন্দ্রসঙ্গীত হেমন্তের গলায় খুব আধুনিক হয়ে উঠল- যেমনটি এখন আমরা শুনে ও গেয়ে থাকি। এই পরিবর্তনটি কিন্তু ইংরেজি উচ্চারণের সাথে মিলিয়ে বা রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছেয় ঘটেছে বলে মনে হয় না। বরং সামগ্রিকভাবে ভাষার উচ্চারণ মানুষের মুখে সহজতায় কর্নের শ্রুতিমধুরতায় বদলে আজকের রূপটি পেয়েছে। কাজেই বলা যায় উচ্চারণ বদলাবে।

মেঘা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এটা যদি সাক্ষাৎকার হয়ে থাকে তাহলে আসলে কথা বলে লাভ নাই হাসি এটা তো আর লেখকের মতামত না!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

হুম! ঠিক ধরেছেন! অনেক কিছু নিয়ে আমার ভীষণ দ্বিমত এবং আপত্তি আছে! যেমন তাহসানের কোন "র" এর উচ্চারণ সঠিক হয় না, সব "ড়" হয়ে যায়, অথচ পার্থদা কোন ভুল খুঁজে পান না!
অলয়

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ এবং জটিল একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন, যেটা নিয়ে পাতার পর পাতা লেখা যায়। ঠিকই বলেছেন, গানের আঙ্গিক অনুযায়ী রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়কী বদলে যাবে। তাহলে উচ্চারণ কেমন হওয়া উচিত? খুব সোজা প্রশ্ন, কিন্তু উত্তর সোজা না। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, উচ্চারণ হবে প্রমিত বাংলা উচ্চারণ। কিন্তু ভাষাতত্ত্ব ও ধ্বনিতত্ত্বের ইতিহাস বলে যে, প্রমিত উচ্চারণও যুগে যুগে পালটায়। রবীন্দ্রনাথের গানের দিনেন্দ্রনাথ-পরবর্তী ভাণ্ডারী শৈলজারঞ্জন মজুমদার তাঁর " রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়কী" প্রবন্ধে মত দিয়েছেন যে শব্দের শেষের "অ" কারগুলো কে আমরা "ও"কার করে কথা বললেও গানে "অ" কারই রাখা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ উনি লিখেছেন "এসো শ্যামল সুন্দর" কে "এসো শ্যামলো সুন্দরো" গাওয়া উচিত নয়। অথচ শৈলজার নিজের গানের রেকর্ডে আমরা "মোনে কী দ্বিধা রেখে গেলে পাই," "মনে কী দ্বিধা" উচ্চারণ পাই না। অর্থাৎ শৈলজার নিজের লেখা ও নিজের গানে উচ্চারণ নিয়ে স্পষ্ট স্ববিরোধিতা আছে। আমি একথা জোর দিয়ে বলতে চাই যদিও এটা গোঁড়াদের পছন্দ হবে না। শৈলজার বাংলাদেশী হোস্ট ড, আ,বা,ম নুরুল আনোয়ার মামাকে এক মজলিসে জিজ্ঞেস করেছিলাম " লিখন তোমার ধূলায় হয়েছে ধূলি" - এটার উচ্চারণ কিন্তু "লিখনো তোমার" -করাটা শৈলজার মত অনুযায়ী অনুচিত। উনি বললেন যে আমার নাকি প্রশ্ন হয় না এবং আমার প্রশ্ন নাকি ক- এ আকার কা কেন হয়- এই জাতের। আসলে উনি নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর জানতেন না। রবীন্দ্রসঙ্গীতকে যারা একটা বদ্ধ নালায় পরিণত করেছে তারা এমনি অনেক প্রশ্নের উত্তর জানেন না, কিন্তু মোড়লি করার বেলায় আছেন!

আমার স্বল্প জ্ঞান অনুযায়ী নাসিম ভাইয়ের ধারণাটা ভুল এবং এই ভুলের পেছনে দায়ী অত্যন্ত জনপ্রিয় কিছু শিল্পীর ভুল উচ্চারণের গায়কী। নাসিম ভাই যেটাকে ইংলিশ একসেন্ট বলেছিলেন এবং গেয়ে শুনিয়েছিলেন, সেটা আসলে "আ"কারের এমন উচ্চারণ যা "অ" এবং "আ" এর মাঝামাঝি। এতে করে গলাটা একটু ভারী শোনায়, আর অনেকেরই ভুল ধারণা আছে যে রবীন্দ্রসঙ্গীত ভারী গলার গান। অত্যন্ত সুকণ্ঠের অধিকারী এবং আমার অতি প্রিয় সাগর সেন এই ত্রুটির অন্যতম প্রচারক!

দেবব্রত এবং হেমন্তবাবুর উচ্চারণ ছিল সত্যিকারের প্রমিত উচ্চারণ এবং কিশোরকুমারেরও রেকর্ডে উচ্চারণ খুবই ভালো ছিল। কণিকা,সুচিত্রা,নীলিমা এবং সুবিনয় রায়ের উচ্চারণও ছিল প্রমিত বাংলা উচ্চারণ। কিন্তু একথা শান্তিনিকেতন-ফেরত সবার গান সম্পর্কে বলা যায় না।

পরে এ নিয়ে দীর্ঘ একটি লেখার পরিকল্পনা আছে। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য।

রিয়েল ডেমোন এর ছবি

ভালো হাততালি

শাব্দিক এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

ইকরাম উল্যাহ এর ছবি

সুন্দর পোস্ট চলুক

অমি_বন্যা এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো। নতুন নতুন বেশ কিছু তথ্য জানলাম এই প্রিয় শিল্পীদের সম্পর্কে। এরকম আরও কিছু লুকানো থাকলে তড়িৎ বের করে ফেলেন। লইজ্জা লাগে

স্বপ্নহীন এর ছবি

চলুক হাততালি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

গৌতম এর ছবি

সোলস, রেনেসাঁদের গান শুনে শুনে বড় হওয়া। সেই দিনগুলো মিস করি খুব!

...সুমন চৌধুরীর প্রশ্নটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শোয়েব মাহমুদ সোহাগ এর ছবি

সাথে নজরুল ভাই’র ও।

আশরাফুল কবীর এর ছবি

#ওয়াও, দারুনস! বাঘের বাচ্চা

তানিম এহসান এর ছবি

সোলসের আরেকটা বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গীতিকার উপহার দেওয়া। শহীদ মোঃ: জঙ্গী, কাওসার আহমেদ চৌধুরী এদের শুরু খুব সম্ভবত সোলস দিয়েই। সোলস একটা বটবৃক্ষ, এই এক সোলস থেকে আমরা তপন চৌধুরী পেয়েছি, পেয়েছি রেনেসা, এলআরবি... বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক চট্টগ্রামের যে সবিশেষ অবদান তা বলার মত নয়, আর সোলস তাতে সূর্য। বাচ্চু ভাইয়ের প্রথম এলবাম ময়না কিংবা নাসিম ভাইয়ের প্রথম এলবামের ’যতিন স্যারের ক্লাসে’ একসময় মুখে মুখে ফিরত, আমি এখনও শুনি।

আপনাকে ধন্যবাদ ভাই। স্টকে আরো কিছু আছে নাকি চিন্তিত

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

লতিফুল ইসলাম শিবলীর নাম বাদ গেছে। কারেকশান- বাচ্চু ভাইয়ের প্রথম এ্যালবাম রক্ত গোলাপ। ময়না দ্বিতীয়।

আপনার কি যতীন স্যারের ক্লাসে এ্যালবামে লাবু রহমান এবং শেষ ইশতিয়াকের বাজানো গিটারের কাজগুলো মনে পড়ছে তানিম? অসাধারন পিসেস অব ওয়ার্ক!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

মেনে না পড়ার সাধ্য কি! রক্ত গোলাপ এর নাম এই প্রথম শুনলাম, আজবতো। লতিফুল ইসলাম শিবলী আমার খুবই পছন্দের গীতিকার (প্রিয় আকাশী বলে যে কবিতাটিকে জেমস গান করেছিলেন তা আমার নিদারুণ পছন্দের একটা গান), কিন্তু তিনি কি সোলসের জন্য গান লিখেছিলেন, জানতে চাইছি।

কতবার যে গিটার শেখার চেষ্টা করলাম, কিছুদূর যেয়েই আবার বাদ, ইদানীং আবার আকাঙ্খা প্রবল হচ্ছে ... আপনি কি এখনো ছাত্র পড়ান নাকি তাজ ভাই চিন্তিত

মাহবুব রানা এর ছবি

ভালো লাগলো। এতদিন অপ্রকাশিত রাখলেন যে!

আজ এখানে সেই আড্ডার একটা সারমর্ম প্রকাশ করছি।

পুরোটা পড়তে চাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই এখানে পুরোটাই আছে! সারমর্ম বলতে আমি বুঝিয়েছি, গানে-গল্পে মুখর আড্ডার লিখিত রূপটাকে। গানকে তো আর শব্দে প্রকাশের কোন উপায় নেই, নোটেশন করেও!
অলয়

অতিথি লেখক এর ছবি

এবারে এই সাক্ষাৎকারের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কিছু বলি। আমি রা,মে,ক তে ভর্তি হবার পরপরই দেখি যে ছাত্র-ছাত্রীদের সাংস্কৃতিক রুচি অতি ভয়াবহ। এরা রবীন্দ্র,নজরুল, মায় হেমন্ত-কিশোরের গানকেও "ক্লাসিকেল গান" বলত। যারা দিনরাত ব্যান্ডের গান এবং অলটারনেটিভ ও আন্ডারগ্রাউন্ড রক নিয়ে গলা ফাটাতো, তাদের কেউই বব ডিলানের গান তো দূরে থাক, নামও শোনেনি। তাই সোলস যখন রাজশাহী মেডিকেলে এলো, আমি ভাবলাম ওদের একটা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে রকের মানে এবং বাংলাদেশে রক আন্দোলনের একটা ধারা তুলে ধরার চেষ্টা করা যাক। ব্যান্ডসঙ্গীত বলে যে কোন প্রকার গানের অস্তিত্ব নেই, সেটাও নাসিম ভাইয়ের মুখ থেকে বের করলাম। এই সাক্ষাৎকারের একটা বাজার-চলতি সংক্ষিপ্ত ভার্সন রা,মে,ক এর ম্যাগাজিন "অর্পণ" ছেপেছিল। স্বভাবতই "পাবলিক খাবে না " বলে নাসিম ভাইয়ের আলোকিত অংশটুকু বাদ দিয়ে! গানটা ছিল খাবার জিনিস, শোনার নয়!

এই আড্ডা ছিল খুবই উপভোগ্য। পার্থদা, নাসিম ভাই, তানিম ভাই - সবাই ছিলেন খুবই আন্তরিক। মোবাইল নাম্বারও আদান-প্রদান হয়েছিল, যদিও পরে স্বভাবতই তাদের নাগাল আর কখনো পাইনি। ম্যাক ভাই(মাকসুদ) কিন্তু ভীষণই আন্তরিক, তবে উনি আমার পারিবারিক বন্ধু। ব্যক্তিগতভাবে নাসিম ভাইএর চিন্তাধারা আমার কাছে খুব স্বচ্ছ মনে হয়েছে।

অলয়

কড়িকাঠুরে এর ছবি

ব্যান্ডসঙ্গীত বলে আলাদা কোন ঝোনর্ নেই সত্যি কথা এবং সম্ভবত আমাদের দেশেই এ শব্দটা প্রচলিত । ব্যান্ড মানে তো দল তাই না? সে মতে আমাদের বাউল-ফকিরদের গানও তো ব্যান্ডসঙ্গীত । দেখবেন গ্রামে বা শহরেও বিভিন্ন উৎসবে বাউল গানের আয়োজন থাকলে বলা হয় "কুদ্দুস বয়াতি ও তাঁর দল", এ কে তো "কুদ্দুস বয়াতি ও তাঁর ব্যান্ড" ও বলা যেতে পারে, নয় কী?

আর "চিলড্রেন অব বোডম" বা "বুলেট ফর মাই ভ্যালেন্টাইন" শোনা অনেকেই "কুইন" বা " দ্য ডোরস্" শোনেনি । আবার এদের ভক্ত অনেকেই ওদের কে ভাল ভাবে নেয় না । এ ব্যাপার শুধু আজকে না, প্রথম যখন "ক্লাসিকাল" থেকে বের হয়ে আধুনিক গান এর সূত্রপাত তখনও ছিল, হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে । যাই হোক আমরা যারা শ্রোতা রয়েছি তাঁরা তো অনেক ধরণের গান শুনতে পারছি, গান এর ভূবনও তো এতে সমৃদ্ধ হচ্ছে । ধন্যবাদ ।

তানিম এহসান এর ছবি

হু, তানিম নামের সবাই খুব আন্তরিক হয়ে থাকে খাইছে

উচ্ছলা এর ছবি

দারুন জিনিস শেয়ার করেছেন তো !
অনেক ধন্যবাদ এই পোস্টের জন্য। চলুক

মণিকা রশিদ এর ছবি

চলুক । দারুণ পোস্ট।

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো ! তবে সোলস এটা আপনাকে প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছিল কিনা জানতে খুব ইচ্ছে করছে । কিছু একান্ত আড্ডার বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে প্রশ্নটা মনে জাগলো । ভালো থাকবেন ,,,

suvra_ete

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।