অপরিচিত রূপকথা

অন্যকেউ এর ছবি
লিখেছেন অন্যকেউ [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ৩০/০৮/২০১১ - ১০:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[এটি একটি রূপকথা। বাস্তব কোনও ঘটনা বা পারম্পর্যের সাথে এর কোনও মিল নাই।]

অনেককাল আগে, এক যে ছিলো রাজা-র আমলে, ব্যাঙের ছাতা নামে একটা দেশ ছিলো। ঐ দেশের বর্ষাকাল অনেক লম্বা ছিলো, অনেক বৃষ্টি হোত সংবৎসর। ব্যাঙের ছাতাও গজাতো অনেক। এইজন্য ঐদেশের নাম হয়েছিলো ব্যাঙের ছাতা। তবে নাম ছাড়াও, আরও অনেক সব বিষয়ে, সেই দেশটায় ব্যাঙের ছাতার মতো আরও অনেক কিছুই গজাতো। সে অনেক আবোল তাবোল কথা। সেদিকে না যাই। আমরা বরং ব্যাঙ জনগণের কথা শুনি। আমাদের এই কাহিনি ব্যাঙ জনগণ নিয়ে একটি কল্পকাহিনি।

ব্যাঙ জনগণ স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে। তারা শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা এবং ইত্যাদি সময়ে দিন-রাত স্বপ্ন দেখে। জনগণের পূর্বপুরুষেরাও কয়েকজন বেশ স্বপ্ন-টপ্ন দেখতেন বলে শোনা যায়। স্বপ্ন দেখা আর আশাবাদ ব্যক্ত করা ব্যাঙজাতির ন্যাশনাল মোটো। তবে আপামর ব্যাঙ জনতা মাঝে মাঝে ব্যাঙোছত্রের নিচে দাঁড়িয়ে ধুন্দুমার নিরাশাও ব্যক্ত করে সময়ে সময়ে। এইটা তাদের একরকম অবসর বিনোদন বলতে পারেন। ব্যাঙোছত্র চিনেছেন? এইগুলা এমন কিছু জায়গা যেখানে ঐদেশের সবচেয়ে জরুরি আর ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ জাতীয় স্বার্থসংস্লিষ্ট আলোচনাগুলো স্থান করে নেয়। এইগুলা ইতঃস্তত তাদের মেঠো খানাখন্দকী পথের আশেপাশে গজায়, আর জনগণ তলায় গিয়ে ভিড় জমায়।

যেটা বলছিলাম, ব্যাঙ জনগণ স্বপ্ন দেখতে অনেক পছন্দ করে। নো ম্যাটার হোয়াট হ্যাপেন্স, তারা নিশ্চিন্তে স্বপ্ন দেখতে থাকে। তারা মোটাসোটা শিশু ব্যাঙগুলা ভেজালবিহীন পোকা দিয়ে পেট ভরাতে পারবে এরকম স্বপ্ন দেখে; তারা যতটা আয়ু হবার কথা ততটা দিন বাঁচবে এরকম স্বপ্ন দেখে; আর সাথে স্বপ্ন দেখে যে ব্যাঙের ছাতা একদিন অনেক উন্নত একটা দেশ হবে, এদেশে একদিন শক্ত কাঠের দালান হবে।

দিন তো আর খালি শুকনা শুকনা স্বপ্ন দেখে কাটে না, একদিন স্বপ্ন বাস্তব করার রাস্তাও মিলে গেলো। বিদেশি বকপাখি এসে ব্যাঙের ছাতাতে সহজে পরিশোধ্য ঋণ হিসাবে কয়েক লাখ কাঠের লগ দিয়ে গেলো। ব্যাঙের ছাতায় তো কঠিন ফুর্তি! এইবার কাঠের দালানও হবে, দেশও তেমনি উন্নত রাষ্ট্র হয়ে যাবে। কাঠের দালানের খুশি সবাই একসাথে শেয়ার করতে শুরু করে দিলো। মাঠে-ঘাটে-ব্যাঙোছত্রের নিচে সবখানে তুমুল কথাবার্তা চলতে লাগলো। টপিক সবখানে একই। কাঠের দালান।

তবে বললেই তো আর পত্রপাঠ কাঠের দালান বানানো যায় না। ক্রিয়েটিভ মন চাই, ভালো কাঠকৌশলী চাই, বিশ্বস্ত ঠিকাদার চাই, আরও কত কিছু। ব্যাঙ সরকার উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করল এইজন্য। কমিটি ঠিকমতো কয়েক বছর বাদে রিপোর্টও দিলো। সব ওকে। এবার কাজে নেমে পড়া যায়।

এই যে কাঠের দালান, এটা কেমন হবে জানেন? বেশ মজার কনসেপ্ট। প্রতি বছর এটা একতলা করে উঁচু হবে। প্রথম বছরে হবে একটা কলাম। এর পরের বছর এই কলামের মাথায় দাঁড়াবে আরও তিনটা কলাম। এর পরে প্রতিটা কলামের মাথা থেকে আরও নতুন তিনটা করে কলাম বের হবে; এভাবে চলতেই থাকবে। একদিন পুরোটা দেখতে হবে একটা দানবীয় ব্যাঙের ছাতা। একটা মাত্র কলামের ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে বি-শা-ল একটা স্থাপনা। ব্যাঙের ছাতার আলটিমেট গৌরবের প্রতীক।

================

এবার বহু প্রজন্ম পরের কথা।

ব্যাঙদের সাথে ঘুণপোকাদের আগে বেশ রেষারেষি ছিলো। কয়েক প্রজন্ম আগেও অনেক পেটমোটা বীরপুরুষ ব্যাঙ প্রচুর ঘুণপোকা বিনাশ করেছিলো। ঘুণপোকাদের অনেক প্রশিক্ষণকেন্দ্র আর নিবাস তখন ধুলিস্যাত হয়ে যায়। সে তখনকার কথা যখন এমনকি ব্যাঙের ছাতা দেশ হিসেবে জন্মও নেয় নাই। কিন্তু তারপর পাশের ড্রেনে অনেক ময়লা পানি গড়িয়ে গিয়েছে। 'সময় বদলাইছে'। জাতীয় স্বপ্নের তোড়ে বাকি সব স্মৃতি হারিয়ে গিয়েছে। এখন ঘুণপোকা নিয়ে কেউ আলোচনা করে না। ব্যাঙের ছাতা স্থাপনাটা এখন চল্লিশ তলা উঁচু! সবার সব মনোযোগ কেবল এই জাতীয় গৌরবের প্রতীকের দিকে। কবে কোন ঘুণপোকা কী করেছিলো এই নিয়ে কারও এখন কোনও মাথাব্যথা নাই। ঘুণপোকারা ব্যাঙদের আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করে। তাদের সাথে বাতচিত করে। ঘুণপোকাদের সাথে কারও কোনও শত্রুতা নাই। কেনই বা থাকবে? ঘুণপোকারা অনেক 'বদলে' গিয়েছে। তারা এখন আর কারও ক্ষতি করে না। তারা বরঙ ব্যাঙদেরকে ভালো হতে উপদেশ দেয়, জাতীয় প্রতীকের ভালো-মন্দ নিয়ে পরামর্শ দেয়, আনুষ্ঠানিক অনেক দায়িত্বও এখন তারা পালন করে। তাদের এই 'আমূল' পরিবর্তনে অনেকে এখন রীতিমতো মুগ্ধ! আর রূপকথা যেহেতু, তাই অনেকে যে ব্যাঙ থেকে এখন ঘুণপোকা হয়ে যায়, এবিষয়ে কোনও প্রশ্ন তোলা বাতুলতা। সুকুমারের বেড়াল চশমা হতে পারে, রুমাল হতে পারে, কাফকার মানুষ তেলাপোকাও হতে পারে। অমনি করেই ঘুণপোকায় মুগ্ধ ব্যাঙ নিজেও ছোট হতে হতে ঘুণপোকা হয়ে যায়।

কিন্তু ভাই, জাতিস্বত্ত্বা আর আত্মাভিমানের একটা বিষয় আছে না? ঘুণপোকারা কেউই আসলে এটা থেকে কখনও বেরিয়ে আসতে পারে নাই। তাদের সবসময় নিজেদেরকে ব্যাঙ থেকে আলাদা মনে হয়েছে। হবেই তো। ব্যাঙ আর ঘুণপোকা কি কখনও এক হয়, না কি হওয়াটা সম্ভব?

কিন্তু কী করার আছে? ব্যাঙদের আকৃতি-প্রকৃতি সবই বিশাল। তারা মহানন্দে ব্যাঙের ছাতা বানাতে পারে। তাদেরকে গিয়ে তো আর বলা যায় না যে, ঘুণপোকাদের প্রতীক হিসাবে একটা ঘুণের ঢিপি বানিয়ে দাও। শুনলে ওরা কেবল হাসবে, অট্টহাসি। কাজের কাজ কিছুই হবে না। এই কথাটা, বহুকাল আগেই, প্রবীণ কয়েকজন ঘুণপোকা বুঝতে পেরেছিলেন। তারা এটাও বুঝেছিলেন, ব্যাঙদের মতোই, বিশাল কিছু তৈরি করতে হলে, ঘুণপোকাদেরও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পরিশ্রম করে যেতে হবে। সেই প্রবীণরা সেই পুরনো সময়টাতেই তৈরি করেছিলেন এক অসাধারণ মাস্টারপ্ল্যান। সেই থেকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ঘুণপোকারা খুব গোপনে তাদের ঘুণ প্রতীক বানানোর কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাঙেদের নজর এড়িয়ে আছে তারা অবশ্যই, ঘুণ প্রতীক তৈরির কাজ শেষ হবার আগে ব্যাঙেরা কোনভাবে জানতে পারলে সবই ভজঘট হয়ে যাবে।

একদিন, বিশাল ব্যাঙের ছাতাটার সব কাজ শেষ হল। তারপরেই উদ্বোধন। দেশের সবগুলো ব্যাঙের উৎসুক চোখের সামনে পর্দা উন্মোচিত হল। আর সাথে সাথেই, গা গুলানো একটা ক্যাঁচক্যাঁচে শব্দ নিয়ে ব্যাঙের ছাতাটা দেবে যেতে শুরু করল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঘুণপোকারা স্থাপনাটার ভেতরে কাজ করে গিয়েছে। সেই কাজের আল্টিমেট ফলাফলটা আজ সবার চোখের সামনে বেরিয়ে এলো। পঞ্চাশ তলা উঁচু থেকে বৃষ্টির ফোঁটার মতো ঝরে পড়তে শুরু করল গুঁড়ো গুঁড়ো ঘুণের কণা। প্রতিটা ব্যাঙের মাথার ওপরে নেমে এলো অঝোর ঘুণের বর্ষণ। ব্যাঙেদের পা ছাপিয়ে উঠে এলো ঘুণের স্তূপ। জমতে জমতে একসময় সবাইকে ঢেকে দিয়ে সুবিশাল একটা ঘুণের ঢিপি দাঁড়িয়ে পড়ল সগৌরবে। ঘুণের ঢিপি; ঘুণপোকাদের আলটিমেট গৌরবের প্রতীক।

ঘুণপোকাদের নতুন রাষ্ট্রের নাম ঘুণস্তান হবে কি না এই নিয়ে তেমন বিতর্ক হয়নি।

[অন্যকেউ]


মন্তব্য

কল্যাণF এর ছবি

ভয়ংকর!!

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

খারাপ হৈছে বুঝলাম। তাই বৈলা এতো! মন খারাপ

কল্যাণF এর ছবি

আরে ছিঃ কস্কি মমিন! । লেখার মান নিয়া কইতে গেলে নিজের গালে আগে চড় দেওন লাগে। দোষ আমার, লেখার মধ্যে যেই ইটা রাইখ্যা গেলাম... লুকাই রাখছেন সেইটা - ভয়ঙ্কর।

কল্যাণF এর ছবি

মন্তব্য করলাম একটুআগে, মডুদের নেক নজর পাইলে আর মডারেশন কিউ পার হইলে আমার পরথম কমেন্ট বিষয়ক আপনার ভুল ভাইঙ্গা যাইব আশা করি, আপাতত ঈদের শুভেচ্ছা লন, মেলা মেলা লেখা দেন। মহা বেকুবি হইছে, একটা কমেন্টে পুরাটাই লেখা উচিত আছিলো, সামনে আরো খিয়াল রাখুম।

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

আহা! নিশ্চিন্ত হৈলাম। হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আপনারেও ঈদ মুবারক। হাসি

পাঠক এর ছবি

ঘুনপোকা হইতে সাবধান। ঘুনস্তান হইতেও। মনে রাখবেন এই ঘুনপোকারা একদিন ব্যাঙ্গের চাইতেও মোটা ছিলো। এখন তারা ঘুন পোকাই। আরে ... এইটা ভাইবা আমার স্বস্তি লাগতেছে। ব্যাঙ্গেরা আশা করি ঘুন পোকা খাইয়া সাফ করতে পারবে।
আমিন

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ঘুণপোকারা যেইভাবে ট্যালেন্ট হান্ট কৈরা অ্যাডমিনিস্ট্রেশানে অনুচরদের অনুপ্রবেশ করাইতাছে, এই দেইখা আমি বড়ই শঙ্কিত। তাদের সাংগঠনিক শক্তিরে ছোট করে দেখা যাচ্ছে না।

গুল্লা সা এর ছবি

দারুণ রূপক!দেখি ঘুণপোকা খেয়ে শেষ করতে পরি কিনা!
লেখাতা রশাত্নক হলে আরও ভাল হতো!

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ঘুণপোকারা আশেপাশেই আছে। শিকার কর্তে থাকেন। শুভকামনা। হাসি
আপনার রেসপন্স কাজে লাগাইতে চেষ্টা করুম। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ভালো লাগে নাই গল্পটা...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

দুঃখিত, নজরুল ইসলাম। ভালো লেখার চেষ্টা করব।

দেবানন্দ ভূমিপুত্র এর ছবি

ভাবনাটা আমার বেশ পছন্দ হল। চরিত্র নির্মানে নজর কম বলে মন হল। সংলাপেও তাই। তবে, প্রতীকী প্রকাশ অবশ্‍্যই দারুণ। ভালো থাকুন। ঈদ মোবারক!!!!!

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ধন্যবাদ দেবানন্দ ভূমিপুত্র। সংলাপ তৈরি করতে পারি না বলে এড়াতে চেয়েছি যথাসম্ভব। চেষ্টা করব ভবিষ্যতে। আপনাকেও (দেরি করে) ঈদ মুবারক। হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভাই অন্যকেউ,
গল্প, দেশচিন্তা, চিন্তাভাবনা, রূপকথা একসঙ্গে এতকিছু আমার মতো অর্বাচীন পাঠকেরা নিতে পারবে কী! আপনার লেখনীতে শক্তি আছে নিঃসন্দেহে, কিন্তু সবটুকু শক্তিকে পাঠকের মনের অলিন্দে সুর হয়ে বাজতে হবে তো!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ভাই রোমেল, আসলে, সচলে নতুন বলে লেখা ট্যাগিঙের বিষয়টাতে একটু ভজঘট পাকিয়ে ফেলেছি। এরপর থেকে সতর্ক হবো। এবং, আপনার কমেন্টটা খুবই ভালো লাগলো। আশা করি নিজেকে আরো শুধরে নিতে পারবো। হাসি

ahasnat এর ছবি

ভালা লাইগছে

এ হাসনাত

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

ধন্যবাদ এ হাসনাত।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।