আজকের ভুমিকম্প বৃত্তান্ত

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৯/০৯/২০১১ - ২:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সন্ধ্যা সাড়ে ছটার কিছু পর। ল্যাপটপ বন্ধ করে সব গুছিয়ে নিচ্ছি। অদুরেই বসা একজন স্ক্যান্ডেনেভিয়ান কলিগ। হঠাৎ দেখলাম তার চেয়ারটা কেমন যেন দুল খাচ্ছে, বললাম ইউ আর শেকিং, প্রবাবলি আর্থ কোয়েক। এরপর দুজনেই কিয়ৎক্ষন অপেক্ষা করলাম ভেবে যে আর সব বারের মত দরজা পর্যন্ত যেতে যেতে থেমে যাবে। কিন্তু না এ যে দুলেই যাচ্ছে। অতএব আর অপেক্ষা না করে ল্যাপটপ টেবিলে রেখেই মোবাইলখানি নিয়ে সিড়ি ভেঙ্গে নেমে এলাম গ্রাউন্ডে। আধঘন্টা বাইরে অপেক্ষা করে আবার উপরে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বাসায় আসতে আসতে দেখলাম আজকের এই দোল দোল দুলনি মোটামুটি টক অব দ্য কান্ট্রি। বাসায় এসে ল্যাপি নিয়ে বসলাম অল্প বিস্তর বৃত্তান্ত জানার জন্য। বন ও পরিবেশ বিজ্ঞানের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে অল্প বিস্তর আগ্রহ আছে এইসব ন্যাচারাল ইভেন্টের দিকে।

বাংলাদেশ, ভারতের উত্তর পুর্বাঞ্চল, নেপাল আর ভুটান কাপিয়ে দেয়া আজকের ভুমিকম্পটির উৎপত্তি হচ্ছে ভারতের সিকিম রাজ্য সংলগ্ন নেপাল বর্ডারের পার্বত্য এলাকায় ইন্ডিয়ান আর ইউরেশিয়া প্লেটের মধ্যে। প্রাথমিক বিশ্লেষনে বলা হচ্ছে এই ভুমিকম্পটি উৎপত্তিগতভবে একটি জটিল ধরনের, যার কারন হতে পারে ভু-পৃষ্ঠের অন্তত ২০ কিলোমিটার গভীরে প্রায় একই সময়ে দুটি ঘটনার সংগঠনের ফলে। ধারনা করা হচ্ছে এই ভুমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের ল্যাটিচ্যুডে ইন্ডিয়া প্লেট ৪৬ মিলিমিটার/বৎসর গতিতে স্পর্শ করে ইউরেশিয়া প্লেটকে। সুপ্রাচীন কালে এই প্লেট দুটির বিপরীতমুখী বৃহদাকার কনভার্জেন্সের কারনে ভু-পৃষ্ঠ ফুলে উঠে জন্ম দেয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেনী হিমালয়ের। প্রাথমিকভাবে ভুমিকম্পটির প্রধান মেকানিজম হিসাবে বলা হচ্ছে স্ট্রাইক স্লিপ ফল্টিং (Strike slip faulting)। ফল্ট হচ্ছে ভু-গর্ভস্থ শিলাস্তরের ফাটল বা ডিসকন্টিনিউয়িটি আর স্লিপ হচ্ছে কোন ফল্টের আপেক্ষিক গতি। এই ক্ষেত্রে স্ট্রাইক স্লিপ ফল্টিং বলে বোঝানো হচ্ছে ইউরেশিয়া আর ইন্ডিয়ান প্লেটের অনভুমিক দিকে আপেক্ষিক গতিকে। আনুভুমিক দিকে বিপরীতমুখী আপেক্ষিক গতির কারনে ঘর্ষনের সৃষ্টি হয়ে আজকের নিজ নিজ প্লেটে (উপরে ইউরেশিয়া প্লেট আর নিচে ইন্ডিয়ান প্লেট) কম্পনের সৃষ্টি হয়।

সিকিমের এই উৎপত্তিস্থান অঞ্চলটি মাঝারি ধরনের ভুমিকম্প প্রবন এলাকা। আজকের ভুমিকপম্পের এপিসেন্টারের (ভমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের উপরিভাগ বরাবর ভু-পৃষ্ঠের স্পর্শ স্থান) ১০০ কিমি রেডিয়াসের মধ্যে গত ৩৫ বছরে ১৮টি এম-৫ বা তার বেশি মাত্রার ভুমিকম্প হয়েছে।

এবার আমরা আজকের ভুকম্পনের কিছু বেসিক ডাটা দেখে নেইঃ

ম্যাগনিচ্যুড- ৬.৯

লোকেশান- ২৭.৭ ডিগ্রী উত্তর, ৮৮.০৬৪ ডিগ্রী পুর্ব

গভীরতা- ১৯.৭ কিলোমিটার (১২.২ মাইল)

রিজিয়ন- সিকিম, ইন্ডিয়া

আপেক্ষিক দুরত্ব- গ্যাংটকের ৬৮ কিমি (৪২ মাইল) উত্তর পশ্চিম
শিলিগুড়ির ১১৯ কিমি (৭৩ মাইল) উত্তর-উত্তর পশ্চিম
কাঠমন্ডু থেকে ২৭২ কিমি (১৬৯ মাইল) পুর্বে
কলকাতা থেকে ৫৭২ কিমি (৩৫৫ মাইল) উত্তরে

স্থানিক অনিশ্চয়তা- আনুভুমিকভাবে +- ১৩.৫ কিমি (৮.২ মাইল), উলম্বভাবে ৩.৫ কিমি (২.২ মাইল)

স্বল্প সময়ে এতটুকুই বলা গেল বিভিন্ন উৎস থেকে। ধন্যবাদ।

উৎসঃ ইন্টারনেট

neic_c0005wg6_cy

intensity

neic_c0005wg6_w

Strike_slip_fault


মন্তব্য

তাপস শর্মা এর ছবি

আমি তখন অফিসে। প্রথমে টের পাইনি। হঠাত টের পেলাম চেয়ারটা নড়ছে। তারপরই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে গেলো। আমি কিছু ভেবে উঠার আগেই আমার এক কলিগ আমার হাতটা ধরে টান দিল। তারপর সবাই মিলে একেবারে দোতলা থেকে তাড়াতাড়ি নেমে খোলা রাস্তায়। আমাদের এখানে তীব্রতা বেশি ছিলনা, স্থায়িত্বও কম ছিল।

টিভিতে তারপর দেখলাম সব। আপনার ডাটাগুলো দেখে স্থির ভাবে আরেকবার দেখে নেওয়ার সুযোগ হল। যদিও ভয়েই আছে আমার রাজ্যের মানুষ। দেশে ভূমিকম্পের হাইলি সিলেক্টেড এরিয়ার প্রথম পাঁচে আছি আমরা।

অচিন পাখি এর ছবি

ত্রিপুরার দিকে মনে হয় খুব বেশি আলোড়ন হয়নি। আমাদের ঢাকাবাসীর জন্য এটাই এযাবত কালের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র অভিজ্ঞতা।

কল্যাণF এর ছবি

অ্যাঁ

শিশিরকণা এর ছবি

ঢাকায় অনুভূত ভূমিকম্পের মাত্রা আসলে কত ছিল? সবখানে দেখছি ৬,৯ বলছে। কিন্তু দূরত্বের সাথে ম্যাগনিচ্যুড কমে আসার কথা। এটা হিসেব করার সূত্র কি?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

দ্রোহী এর ছবি

সূত্র অনেক প্যাঁচাইল্লা! আপাতত এই গ্রাফটা দেখেন:

শিশিরকণা এর ছবি

গুগল ম্যাপ মতে ৬০০ কি,মি, দূরত্ব ধরে নিলে তীব্রতা কমে আসছে, ৩,৯- ৫ এর মধ্যে। অথচ টিভি নিউজ আর পত্রিকার খবর গুলা দেখলে মনে হচ্ছে ঢাকা ৬,৯ তীব্রতার ঝাকুনি দিব্যি হজম করে ফেলেছে, আর চিন্তার কিছু নাই, খাও দাও, ফূর্তি কর। মানুষও বিশ্বাস করছে এসব কথা। সত্যি ৬,৯ এর কাপুনি হলে তো এর চে ১০০ গুন শক্তিশালী হবে প্রায়, ঠিক বললাম? (লগ স্কেলে বাড়ে না?)

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অচিন পাখি এর ছবি

সুত্র প্যাঁচাইল্লা ছিলনা আমার লেখনীর গুনে প্যাঁচাইল্লা হয়ে গেছে। হাসি আমার মুল উদ্দেশ্য ছিলো অবশ্য ভুমিকম্পের কারনটা জানানো। দুরত্ব আর তীব্রতার গ্রাফটির জন্য ধন্যবাদ।

অচিন পাখি এর ছবি

এতক্ষনে জেনে গেছেন নিশ্চয় ঢাকায় এর মাত্রা ছিলো মোটামুটি ভাবে ৪। এপিসেন্টার থেকে p-wave যতই দুরে ছড়াতে থাকে তীব্রতা ও কমতে থাকে। শুধু p-wave এর কথাই বললাম এই কারনে যে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী।

দময়ন্তী এর ছবি

আমি আরাম করে খাটের ধারে বসে শারদীয়া সংখ্যা পড়ছিলাম হঠাৎ পড় পড় পড়বি মামা ------ কলকাতায় কোনও কোনও পুরানো বাড়ীতে মস্ত মস্ত ফাটল ধরেছে, কিন্তু তেমন সিরিয়াস কিছু নয়| যারা বিশ্ব্কর্মা পুজোর ঢাকের সাথে নাচছিল, তারা তো কিছু টেরই পায় নি| ভয়ানক হয়েছে গ্যাংটক , তার আশেপাশে আর শিলিগুড়ি অঞ্চলে|

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

শাব্দিক এর ছবি

ঢাকায় ৬.৯ কম্পন হলে বোধ হয় আজকে আর সচলে মন্তব্য করা লাগত না।
আমাদের প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট এর কল্যানে চিরবিদায় স্টোর গুলি সেরকম ব্যবসা করতে পারত।

অচিন পাখি এর ছবি

জ্বি। পুরো ঢাকা বিশেষ করে পুরান ঢাকা কবর খানা হয়ে যেত। রেসকিউ করার ও কোন উপায় থাকতোনা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।