আলোয় ফেরা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ৩০/০৯/২০১১ - ১২:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জগতের যে সব বোকা ছেলে-মেয়ে গুলোই ভালোবাসা না পাওয়ার বেদনায় কাঁদে, তাদের কষ্টগুলোর চেহারা মোটামুটি একই রকম হয়। কারণ কোন একদিন এরা খুব ভালোবেসে, শেষ-মেষ খুব কষ্ট পেয়ে, বুকের গভীরে এক গোপন কষ্টের রুপোর কৌটার ঝাঁপি বন্ধ করে-একটা জীবন পার করে দেয়। এদের এক একটা জীবন জুড়ে নিজেদের যত না, না পাওয়ার বেদনার গল্প থাকে, তার চেয়ে অনেক বেশী থাকে ভুল ভালোবাসার গল্প অথবা ভালোবেসে ভুল করার গল্প। এদের কেউ কেউ বেদনার ভার বহন করতে না পেরে, একটু একটু করে অন্ধকারে তলিয়ে যায়। আবার কেউ বা তাদের নষ্ট জীবনটা/নষ্ট সময়টাকে পেছনে ফেলে, আলোয় ফিরে আসে। এরকম রোজ রোজ কত গল্প তৈরী হয়, একদিন তা ফিকেও হয়ে আসে।

আজকে আপনাদের আকাশলীনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব। শোনাব, আকাশলীনার গল্প। গল্পটা শুনে নিশ্চিত আজকের আপনারা বলবেন মেয়েটি ভিষন বোকা। কি ভুলই না সে জীবনে করেছে?!!! এরকমও হয়?

তবে লোকে যে এও বলে, যারা নাকি সত্যিকারের ভালোবাসে, তারাই নাকি আসলে জানে, ভালবাসার কোন রকম থাকেনা। ভালোবাসায় কোন ভুল থাকে না।
-

আকাশলীনাকে জন্মান্ধই বলতে হবে। কেন জন্মান্ধ বলছি, তা পুরো গল্পটা পড়লেই বোঝ যাবে।
মেয়েটা মানে আকাশলীনা তার এই বয়সে কখনো বাহিরের পৃথিবী দেখেনি, আকাশের কি রং দেখেনি, ফুলেরা কেমন দেখেনি, দেখেনি ওলিদের ওড়াউড়ি। তখন বয়স তেইশ কি চব্বিশ হবে। তবুও মেয়েটা একদিন ভালোবেসে ফেলল। তাও কি হয়? যে কিছুই দেখেনি, কাউকে দেখেনি, সে কেমন করে ভালোবাসল? আকাশলীনা ভালোবাসল, ছেলেটার কণ্ঠস্বর, কণ্ঠস্বরের যাদু। ভালোবাসল, ছেলেটার গায়ের কেয়া ফুলের গন্ধ। ভালোবাসল, ছেলেটার দেয়া সমস্ত স্পর্শ।

আকাশলীনাঃ আমি তোমাকে ভিষন ভালবাসি, সমুদ্র।

সমুদ্রঃ আমি সমুদ্রের মতই অতল, কাছে এসেছ এতটুকুই যথেষ্ট, শুধু শুধু ভালোবাসতে যেও না। আর আমার কষ্টগুলোও আমার মত গভীর, নিতে পারবে? সমুদ্র, এরপর কোন একদিন কলকল বলতে থাকে, আকাশলীনাকে; তার গভীর বেদনার কথা। সেই বেদনাগুচ্ছ, তার রঙ, সেই কান্নার সুর বেহাগের মত বাজতে থাকে আকাশলীনার সমস্ত শরীরে, হৃদয়ে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে।

আকাশলীনাঃ কারো বেদনাও যে অন্য কারো কাছে এত মধুর হয়, এমন করে আরেক জনকে স্পর্শ করে, তোমাকে ভালো না বাসলে জানতেই পারতাম না। আমি তোমাকে না, তোমার কষ্টগুলোকেই ভিষন ভালোবাসি সমুদ্র। কত হবে; সমুদ্রের বয়স, পঁচিশ বা ছাব্বিশ।

সমুদ্রঃ আমি ভিষন অশান্ত, আকাশ। আমাকে তোমার জীবনের সাথে জড়িও না। বলতে পার, তোমরা এত ভালো কেন?

আকাশলীনাঃ আমি তলিয়ে গেছি, সমুদ্র। আমার আর ফেরার পথ নেই। আমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে কিছুতেই যেতে পারবে না।

সমুদ্রঃ তোমার ভালোবাসার এত জোর? বাঁধ দেখি আমায়?

আকাশলীনাঃ হ্যাঁ, আমি তোমাকে জগত সংসার থেকে ছিনিয়ে নেব। কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আকাশলীনা, এক এক করে তুলে দিল সমুদ্রের হাতে, তার প্রথম অদেখা প্রেম, তার সমস্ত স্বত্ত্বা, তার স্বপ্ন-বাস্তব। তার অনাঘ্রাতা শরীরের কুসুম গন্ধ। তবুও সমুদ্র অশান্ত। তার সমগ্র জগতজুড়ে, আকাশ লীনা ১ আকাশলীনা ২ আকাশলীনা ৩ এর ভিড়। এত ভিড় ঠেলে অন্ধ আকাশলীনা কিছুতেই সমুদ্রের কাছে পৌঁছতে পারলনা। আকাশলীনা, সমুদ্রকে দু চোখ দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে দেখেছিল বলে, বুঝতেই পারল না- অশান্ত সমুদ্রে তার কোথাও কোন জায়গা নেই। তার সমগ্র অস্তিত্ব কুলহীন, সমুদ্রে ভিষন বিপন্ন।
আকাশলীনা, সমুদ্রের পায়ের কাছে বজ্রাহতের মত বসে থাকে, ভেতরের মানুষটাকে দেখবার আশায়-
সমুদ্রঃ নিজেকে কেন এত ছোট কর? কেন এত পদদলিত হবার শখ?

আকাশলীনাঃ আমাকে একটু আশ্রয় দাও, তোমার পায়ের কাছে, আমার ফেরার পথ নেই। আকাশলীনা অন্ধ, তাই রূপবান যুবকের হাসির আড়ালে ক্রূরতা দেখতে পায় না। দেখতে পায় না যুবকের অস্থিরতা। অন্ধ আকাশলীনা বরং, সেই হাসির শব্দকে স্পর্শ করে, আস্বস্ত হতে শেখে। আকাশনলীনা, সমুদ্রের পায়ের কাছে টুপ টাপ করে, ক্ষণস্থায়ী বৃষ্টির মত ঝরে ঝরে পড়ে – ভেবেছিল,খুব অল্প সময়ে ভালোবাসার দামে সমুদ্রকে কিনে ফেলেছে।
সমুদ্র বড় অশান্ত। সে ঝড় হয়ে ভেসে যায়। আকাশলীনা তার কোন থৈ পায় না।

আকাশলীনাঃ হ্যালো এটা কি ৮৬১...। একটু সমুদ্রের সাথে কথা বলা যাবে? সমুদ্রকে ঘিরে থাকা সুখী মানুষেরা চোখ রাঙ্গিয়ে বলে, “না, সমুদ্রের অনুমতি নেই।“ অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে মেয়েটা সমস্ত শহর তন্ন করে সমুদ্রকে খুঁজে ফেরে, একটু কথা বলবে বলে।
সমুদ্রঃ হঠাত হঠাত দু/এক দিন দয়া হয়, সমুদ্রের। তোমাকে দেখলে খুব মায়া হয়, এত ভালোবাস আমাকে। ছেলেটা কথার জাল বিছায়। তুমি আকাশের মতই। এতটা কষ্ট সহ্য করতে পার?

আকাশলীনাঃ আমি তোমার জন্য সব পারি সমুদ্র।

সমুদ্রঃ তুমি না আমার কষ্টগুলোকে খুব ভালোবেসেছিলে, তোমাকে আমার এ জন্মের কষ্টগুলো বেচে দিতে চাই। নেবে? আমি আকাশলীনা ৩ কে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। ওই তো আমার সব। ওর জন্য আমি সব পারি। পারবে না আমাকে ওর হাতে তুলে দিতে?

আকাশলীনাঃ আর আমি? আমার কি হবে সমুদ্র?

সমুদ্রঃ আকাশলীনা ৩ একদম তোমার মত নয়, ও এতটা কষ্ট মেনে নিতে পারবে না। কিন্তু তুমি তো পারবে। পারবে না, আমার জন্য এটুকু করতে? সমুদ্র তার সমস্ত কষ্টের দামে আশ্বাস খোঁজে।

আকাশলীনাঃ আমাকে ছেড়ে যেও না, সমুদ্র। তোমাকে ছাড়া আমি হারিয়ে যাব গহীন অন্ধকারে।

সমুদ্রঃ তোমার জন্য আমার অনেক মায়া। তোমাকে হারাতে দেব না, আকাশলীনা। তোমাকে আলোয় ফিরিয়ে দিতে আমি যোগ্য কাউকে খুঁজছি, যে তোমাকে আলোর পথ দেখাবে। সমুদ্র ১ সমুদ্র ২ সমুদ্র ৩ আকাশলীনার কাছে আসে। সমুদ্র আকাশ লীনাকে সস্তা পণ্যের মত বেঁচতে চায় কি না, সেটা না বুঝে আকাশলীনা, পড়ে থাকে বোধের বাইরে।

আকাশলীনার প্রথম পাঠ, কাউকে ভালোবাসলে, তার অপরাধে অন্যের কাছে বিক্রী হয়ে যাওয়ায় কোন মনস্তাপ নেই, কোন সংকোচ নেই। কারো কারো কাছে আকাশলীনার মত একটা জীবনের কোন মূল্য থাকে না। প্রতিটা মানুষই যে যার নিজস্ব আয়নায়, নিজস্ব জীবন বোধের কাছে, কখনো কখনো জমা রাখে অন্য আরেকটা বিপন্ন জীবন।

আকাশলীনাঃ আমাকে ছেড়ে যেওনা সমুদ্র। এই দেখ তোমার জন্য এনেছি, রক্ত জবার মত লাল শার্ট। এ আমার বুকের আগুন। তুমি পরলে, জানবে আমার বুকের উত্তাপ তোমাকে জড়িয়ে আছে। পরবে সমুদ্র?

সমুদ্রঃ এ সব তোমার কল্পনা, আকাশ। তুমি তো চোখে দেখ না। তোমার কাছে জীবনের সব রঙই অন্ধকারের মত। তবে কেন মিছে আগুনের ভয় দেখাচ্ছ? কিন্তু বিশ্বাস কর, তোমার দেয়া শার্টটা আমি পরেছি, আকাশলীনা। এটা পরেই আমি যাচ্ছি আমার প্রিয় মানুষটার কাছে। প্রখর সূর্যস্নাত দুপুরের অন্ধকারে আকাশলীনা হারিয়ে ফেলে, আকাশলীনার কান্নার আগুনে পুড়ে যাওয়া সমুদ্রকে।

সমুদ্রঃ তুমি কেন বুঝতে চাইছ না, আমার কোথাও তোমার কোন জায়গা নেই। তোমার কোন কিছুই আমাকে স্পর্শ করেনা।

আকাশলীনাঃ তাহলে তোমার ভালোবাসার সকল স্পর্শ নিয়ে, আমি কি করে বেঁচে থাকব? তুমি কেন আমাকে এমন করে ছুঁলে? কেন আমাকে বললে, তুমি ফিরে আসবে? কিছু কি কম ভালোবেসেছি তোমায়? চেয়েছ পাওনি, এমন কিছু কি ছিল আমার কাছে- সমুদ্র? আজ আমি তোমার কাছে থেকে কিছুতেই ফিরে যাব না, সমুদ্র। অন্ধদের একটা দারুণ সুবিধা আছে জানো তো! তারা অন্যকে যেমন দেখে না, তেমনি ভাবে সে ভাবে, অন্যরাও বুঝি তাকে দেখছে না। অন্ধ মেয়েটা সমাজ সংসার সব উপেক্ষা করে, যেন কেউ তাকে দেখতে পারছে না, এমনি ভাবে- কোন এক রাতে সমুদ্রের কাছে চলে যায়। সারারাত আচ্ছন্নের মত ভাবে, নিশ্চই সমুদ্র তাকে ফেরাতে পারবে না। নিশ্চই ও বুঝতে পারবে, সে সব ছেড়ে তার সমুদ্রের কাছে ফিরে এসেছে। অন্ধ মেয়েটা বুঝতে পারে না, রাতের নিরেট অন্ধকারে-ছেলেটার ঊষ্ণ উত্তাপের আড়ালে জমাট বেধে আছে ভিষন তাচ্ছিল্য। মেয়েটার জন্য ঊষ্ণতাটুকু ছিল, একটা রাতের বিভ্রম মাত্র।
ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই আকাশলীনাকে চলে আস্তে হয়েছিল, একা। সমুদ্রের নীরবতা, তাকে চাবুকের মত মেরেছিল, যেন বলেছিল- থেকে বুঝে নাও তুমি কতটা ছোট করেছ, নিজেকে। মনে রেখ, তোমার মত অনেক আকাশলীনাই, আমি চাইলে সব দিয়ে দিতে পারে আমাকে। আকাশলীনার মনে হচ্ছিল, কেবল জমাট বাঁধা চাপ চাপ অন্ধকারের সিঁড়ি বেয়ে সে নেমে যাচ্ছে জীবনের গভীর খাদে, সমুদ্র একবার ফিরে তাকাবার প্রয়োজনও বোধ করেনা।

আকাশলীনাঃ বাতাসে দুজন মানুষের গন্ধ শুনে, আমি বুঝতে পারি, সমুদ্র যেমন করে আমাকে ছুঁয়েছিল, ঠিক তেমনি করেই চুম্বন এঁকে দিচ্ছে তার দয়িতার অধরে। আকাশলীনা দৌড়ে পালায়। নিজেকে নষ্ট করলেও, চায়না অন্য কারো ভালোবাসায় কাঁটা হয়ে থাকতে। অনেকবার তার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখেছে ওদের দুজনকে, যতবারই দেখেছে, ততবারই আকাশলীনা লুকিয়ে পড়েছে, লজ্জায়, অপমানে, বিপন্নতায়। যেন তার অন্ধকার ওরা কেউ দেখে না ফেলে। আর কেউ না দেখে।

তারপরও কোন একদিন বিপন্ন আকাশলীনা সমুদ্রের দারস্থ হয়, "শেষবারের মত বলছি, তুমি যেও না সমুদ্র!! তোমাকে ছাড়া, এ জীবন আমি কিছুতেই চাইব না।"

সমুদ্রঃ তা হয়না আকাশলীনা। আজ আমার বিয়ে। আজ আমি স্বসম্মানে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে ঘরে তুলছি। সব কিছু ভুলে যাও। তোমাকে আমি নতুন জীবন দেব।
হঠাতই গল্পটা শেষ হয়ে যায়।


তারপর শুরু হয় খুব সাধারণ একটা গল্প.....।......
স মুদ্র ১ অথবা স মুদ্র ২ কিম্বা স মুদ্র ৩ কে জানেনা আকাশলীনা, কেউ একজন এসে আকাশ লীনার হাত দুটো ধরে। আকাশ লীনাকে অল্প অল্প ক রে, একদিন আলোয় ফিরিয়ে আনে। আকাশলীনার অন্ধত্বকে ঘুচিয়ে তাকে চক্ষুদান করে। আলোয় ফিরে আসার পর, আকাশলীনা খুব সন্তর্পণে তার মৃত আত্মাটাকে একটা রূপোর কৌটায় করে লুকিয়ে রাখে বুকের ভেতর গহীন সমুদ্রের অতলে। কেউ যেন তার কোন খোঁজ পায় না।
এমনি করে কেউ কেউ আলোয় ফেরে আবার কেউ কেউ হয়তো ফিরে যায় গহীন অন্ধকারে। কোথাও কোথাও প্রতিস্থাপিত হয়, আবার ন তুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন।
আলোয় ফিরে আকাশলীনা বুঝতে পারে, কোনটা স্বপ্ন, আর কোনটা বাস্তব। আকাশ লীনার জীবন ভর্তি আর গুচ্ছ গুচ্ছ অন্ধকার নেই। সেখানে বাসা বেঁধেছে অনেক সবুজ আলোর জোনাকি আর ঘাসফুল। খুব সাধারণ, তবুও আকাশলীনার জন্য, তা তার সমগ্র জীবন আর বিশ্বাসের দামে কেনা।
আকাশলীনা আজ আর জীবনের গতটা নিয়ে ভাবেনা, “ তার যে দিন গেছে ভেসে”-সেদিন আর কোনভআবেই ফিরিয়ে আনতে চায় না।
কেবল সৃষ্টি কর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা সে করে, তার কোন উত্তরপুরুষকেই যেন আর তার মত ছোট হতে না হয়। বিপন্ন হতে না হয়। সে যেন ভুল ভালোবাসার কাছে কোন সস্তা আকাশলীনা না হয়। সে যেন জন্মান্ধ না হয়।

সমুদ্রকে পেলে, আকাশলীনা একবার বলতো, “আমার অন্ধত্বকে তুমি ক্ষমা করে দিও।“ ভালোবেসে ভালো থাক জগতের সব মানুষেরা। আকাশলীনা রোজ প্রার্থনা করে, “ আমার অন্ধত্বের ছায়া যেন, আমার অস্তিত্বের কোন অংশে আর কখনই না পড়ে।“ আমার উত্তর পুরুষেরা যেন শুদ্ধ ভালোবাসা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে শেখে।


আচ্ছা, কোন দিন যদি সমুদ্রের সাথে আকাশলীনার দেখা হয়, তাহলে আকাশলীনার কি করা উচিত?


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

'আকাশলীনা' আমার ভিষন ভীষণ পছন্দের একটা কবিতা।

আবারো নামহীন লেখা... ইয়ে, মানে...

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

guest_writer  এর ছবি

ধন্যবাদ তিথী। লেখাটা লিখবার সময়, অন‌্য কিছু কাজ করছিল, বোধ হয়- কি সেটা জানিনা। নইলে "ভীষন" এর মত সাধারণ এবং এই গল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বানান ভুল হবে কেন?

কি আর করা? হয়তো গল্পের আকাশলীনার ভুল ভালোবাসার সাথে ভুল বানানটাও ঝুলে থাকবে অনির্দিষ্ট কালের জন‌্য- তাই না হয় থাকুক।

দ্বিতীয় সুবর্ণরেখা এর ছবি

আমার জন্যই ছিল লেখাটা?

guest_writer  এর ছবি

আপনার মত যারা অনেক যন্ত্রণা বুকে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের জন্যই আমার এই লেখাটা। থাক না লেখাটা আপনার মনের কথা হয়ে।

উচ্ছলা এর ছবি

ঐ দুজনের আবার যদি কোনদিন দেখা হয়ে যায়, তখন আকাশলীনার কি করা উচিত?...সমুদ্রকে পাশ কাটিয়ে সামনে, নিজের গন্তব্যের দিকে দৃঢ় পদক্ষেপে চলে যাওয়া উচিত। এবং মনে মনে এই মন্ত্র জপ করা উচিত, "He doesn't matter at all" হাসি

তারেক অণু এর ছবি

ঠিক, ১০০ % খাঁটি কথা। আমি আর নতুন করে লিখলাম না--

guest_writer এর ছবি

ধ ন্যবাদ তারেক, সবাই যেন এমন করেই ভাবতে শেখে।

ভালো থাকুন নিরন্তর।

guest_writer  এর ছবি

ঠিকই বলেছেন, আপনি। ধন্যবাদ উচ্ছলা আপনাকে।

আমার চারপাশে অনেককেই এমন বেদনায় কাঁদতে দেখেছি। তখন খুব খারাপ লাগে। শোককে কখনো কখনো শক্তিতে পরিণত করে, ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের মত করে প্রতিটা মানুষের বাঁচা উচিত।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ভালোবাসায় যন্ত্রণা যে কত রকম, তাই ভাবছি!

বহুদিন আগে আমি করেছি কি ভুল
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

guest_writer এর ছবি

ধন‌্যবাদ রোমেল। গাঢ় বেদনাকে কি চমতকার করে আঁকলেন আপনি!!!!

ভালোবেসে আর কেউ না কাঁদুক। ভালো থাকুন নিরন্তর।।

উচ্ছলা এর ছবি

ভালোবাসলে একটু আধটু কাঁদতে হয়ই সবাইকে। কিন্তু কান্নার স্থায়িত্ব যেন ২৪ ঘন্টার বেশি না হয় হাসি কান্নাকাটি ছাড়াও শত শত গুরুত্বপূর্ণ কাজ পেন্ডিং অবস্থায় আছে যা মৃত্যুর আগেই সারতে হবে; যেমন: চন্দ্রনাথ পাহাড়ে পূর্ণীমা রাত যাপন...অন্তত একজন এতিম শিশুর লেখাপড়ার খরচ প্রদান...ছোটবেলার সব বন্ধুদের নিয়ে একটা বনভোজন...ইত্যাদি।

প্রেমজনিত কারনে কান্নাকাটি?...ধূস!!!!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

আহা,
বোকা কবি কেন যে বলেন, "জনম জনম তব তরে কাঁদিব"

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

guest_writer এর ছবি

জগতে বোধ হয় কিছু বিষয় আছে যা চাইলেই উপেক্ষা করা যায়না, রোমেল। কোন বোকা কবি ব লেছেন, "জনম জনম তব তরে কাঁদিব"

আবার আধুনিক কোন কোন কবি উচ্ছলার মত ধুশ! ব লে উড়িয়ে দিয়েও খানিকটা বাকি রেখেছেন... বলেছেন,

"কিছু কিছু কষ্ট আছে, ক্ষতে কোন মলম লাগেনা।
কারো শুশ্রুষা নয়, গাঢ় মমতায় জেগে থাকা রাত নয়
হাওয়া পরিবর্তন তাও নয়, সেরে যায়।
কিছু কষ্ট নিয়ত পোড়ায়।
ক্ষুদ্র তুচ্ছ কিছু, ফুঁ মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মত কিছু ক ষ্টের
ক্ষীনাঙ্গী শরীরেও আগুনের আঁচ থাকে।
সেই সব ক ষ্ট গুলো ব র্শা বেঁধায় না, দুই চক্ষু অন্ধ করেনা
কেব ল কোথায় কী সব যেন পোড়াতে পোড়াতে
করে নিভৃত অঙ্গার।
কিছু কিছু ক ষ্ট আছে, রাত পোহাবার আগেই বাতাসে মেলায়
কিছু ক ষ্ট বাসা বাঁধে- ভালোবেসে থেকে যায়, পুরোটা জীবন।

ভালো থাকুন নিরন্তর।

তানিম এহসান এর ছবি

বাহ! স্পিরিট ইনডিড! ২৪ ঘন্টা কোন হিসেবে, একটানা ২৪ ঘন্টা নাকি কয়েকদিন ধরে ভেঙে ভেঙে ২৪ ঘন্টা? হো হো হো

guest_writer এর ছবি

হাসি হাসি হাসি

guest_writer এর ছবি

দূর্দান্ত বলেছেন, উচ্ছলা। এমনি করেই এগিয়ে যাক সবাই।

ভালোবেসে আর কেউ না কাঁদুক। ভালো থাকুন নিরন্তর।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

নারে ভাই/বোন,
আমার কি এমন সাধ্যি, ওটা তো জীবন গুরুর লেখা, এই নিন পুরো কবিতাটি,

(এই সব ভালো লাগে) : জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালি রোদ এসে
আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়,—আমার কাতর চোখ, আমার বিমর্ষ ম্লান চুল –
এই নিয়ে খেলা করে: জানে সে যে বহুদিন আগে আমি করেছি কি ভুল
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে,
পউষের শেষ রাতে আজো আমি দেখি চেয়ে আবার সে আমাদের দেশে
ফিরে এল; রং তার কেমন তা জানে অই টসটসে ভিজে জামরুল,
নরম জামের মতো চুল তার, ঘুঘুর বুকের মতো অস্ফুট আঙুল; –
পউষের শেষ রাতে নিমপেঁচাটির সাথে আসে সে যে ভেসে

কবেকার মৃত কাক: পৃথিবীর পথে আজ নাই সে তো আর;
তবুও সে ম্লান জানালার পাশে উড়ে আসে নীরব সোহাগে
মলিন পাখনা তার খড়ের চালের হিম শিশিরে মাখায়;
তখন এ পৃথিবীতে কোনো পাখি জেগে এসে বসেনি শাখায়;
পৃথিবীও নাই আর; দাঁড়কাক একা — একা সারারাত জাগে;
কি বা হায়, আসে যায়, তারে যদি কোনোদিন না পাই আবার।
নিমপেঁচা তবু হাঁকে : ‘পাবে নাকো কোনোদিন, পাবে নাকো
কোনোদিন, পাবে নাকো কোনোদিন আর।’
(জীবনানন্দ দাশ, "এই সব ভালো লাগে", রূপসী বাংলা)

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তারেক অণু এর ছবি

পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে -- আহা, কি একটা বাক্য, মহাকাব্যের সমান।

guest_writer এর ছবি

পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে -- আহা, কি একটা বাক্য, মহাকাব্যের সমান।

সম্পূর্ণ সহমত তারেক।

ভালো থাকুন নিরন্তর।

তানিম এহসান এর ছবি

এ যে শেষ হয়ে তবু তার রেশ থেকে গেছে ধরনের আলেখ্য! মিলন পর্ব বাকি থেকে গেছে বলে চারপাশে হাহাকার অথচ তার মাঝে আঁধারের কোষ ঘেষে জেগে উঠে অপার্থিব আলো! চলুক চলুক

guest_writer এর ছবি

চলুক চলুক চলুক আপনাকেও তানিম। অনেক ভালো বলেছেন।

ভালো থাকুন নিরন্তর।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মন খারাপ মন খারাপ

শুদ্ধ প্রেম বলে কিছু নেই জগতে। ভুলের জোরেই প্রেমের শেকড় গভীরতর হয়।
তবু বিশুদ্ধ এক কবির কখানা লাইন ধার নিয়ে বলি-

তবু মোর মন
চাহে নাই মোহের আশ্রয় |
জানি তুমি মরীচিকা ; তোমা সনে প্রাণ বিনিময়
কোনোদিন হবে না আমার |
আমার পাতালমুখী বসুধার ভার,
জানি, কেহ পারিবে না ভাগ ক'রে নিতে ;
আমারে নিঃশেষে পিষে, মিশে যাবে নিশ্চিহ্ন নাস্তিতে
এক দিন স্বরচিত এ পৃথিবী মম ||
(সুধীন দত্ত)

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

guest_writer এর ছবি

কি জানি, হবে হয়তো নীড়। তবে সচলের ভাষায় বলি, ভুল ভালোবাসার শেকড় কতটা গভীরতা যাচাই করা হয়নি।

তিথীডোর এর ছবি

আরেকটা পছন্দের কবিতা দিলাম---

আমরা মিশিনি ভালোবেসে সব মানুষ যেভাবে মেশে,

আমরা গিয়েছি প্রাজ্ঞ আঁধারে না জানার টানে ভেসে।

আমরা দুজনে রচনা করেছি একে অপরের ক্ষতি।

প্রবাসী প্রেমের পাথরে গড়েছি অন্ধ অমরাবতী।

আমরা মিশিনি বিহ্বলতায় শুক্রে শোণিতে স্বেদে........

আমাদের প্রেম পূর্ণ হয়েছে, বেদনায়, বিচ্ছেদে।

ভালো থাকুন। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

কল্যাণF এর ছবি

ও আপা

প্রবাসী

?? খাইছে

তিথীডোর এর ছবি

জ্বী ভাই,
এটা নির্মলেন্দু গুণের কবিতা।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ তিথী, আপনাকে।

কবিতাটা আগে পড়া হয়নি, পড়ে অনেক ভালো লাগল।

কর্ণজয় এর ছবি

শেষের কবিতা অনেকবার পড়বার চেষ্টা করেছি...
পারি নি...
শেষে শিক্ষক বললেন - উপন্যাস হিসেবে না পড়ে ... কবিতা হিসেবে পড়ে দেখ...
আমি কবিতা ভেব শেষের কবিতা পড়লাম...
অদ্ভুৎ...
ভাল লাগলো...
আপনার লেখাটা কবিতা হিসেবে পড়তে গিয়ে
ভাল লাগলো...

কল্যাণF এর ছবি

দারুণ চলুক

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ কল‌্যান। ভালো থাকুন নিরন্তর।

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ কর্ণজয়, এত সুন্দর করে বললেন, ভালো লাগলো।

ভালো থাকুন নিরন্তর।

মৌনকুহর এর ছবি

বেশ লাগলো! চলুক

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

guest_writer এর ছবি

ধন্যবাদ মৌন কুহর।

ভাল থাকুন সব সময়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।