যুদ্ধ প্রতিদিন, কর্মজীবি মা’র গল্প (৩)

দিহান এর ছবি
লিখেছেন দিহান [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৩/১০/২০১১ - ৯:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গল্প উপন্যাসে আর সিনেমায় কিছু মেয়ের দেখা মিলে যারা একসাথে দুই নায়ককে ভালোবাসে, দুইজনকেই তীব্রভাবে চায়। তাদের হৃদয় থাকে দ্বিখন্ডিত। আমার অবস্থা ঐ নায়িকাদের মতো, আমার নায়ক দুজন! আমি সংসার আর ক্যারিয়ার দুটোই ভালোবাসি, দুটাই চাই।

তো দুই নৌকায় পা রাখতে গিয়ে ভয়ংকর অবস্থা হলো। পারুল যাবার পরে আমি রাস্তা থেকে ছোট একটা মেয়ে নিয়ে আসি। (আসলেই!মেয়েটা রাস্তার পাশে বসে ছিলো। আমাকে দেখে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলো বাসায় কাজের জন্য রাখবো কিনা। কোনো অভিভাবক নেই, আমি দ্বিধা বোধ করেছি তবু নিয়ে এসেছি কারন আমার লোক দরকার ছিলো। কয়েকদিন পর মেয়েটার বড়বোন আসে।) ভাগ্যক্রমে আমার হাজব্যান্ডের বড়বোন তখন দেশে ফিরেছেন। উনিও কর্মজীবি মা কিন্তু উনার বাসায় শাশুড়ি আছেন। আমরা প্রতিদিন আমাদের মেয়েকেও আপার শশুরবাড়িতে রাখতে শুরু করলাম। সকালে সবাই রেডি হয়ে আপার বাসায় যাই। সেখানে বাচ্চা আর কাজের মেয়েকে রেখে অফিসে যাই। সন্ধ্যায় ফিরে ওদের পিক করি। তখন শুরু করি রান্নাবান্না আরো রাজ্যের কাজ। সন্ধ্যায় কাজ করার জন্য কোনো ছুটা বুয়া ও পাওয়া যায়না। সকালের মশারি তোলাই হয়না কোনো কোনো দিন।বাচ্চাকে গোসল করাই রাত দশটায়। দিন শুরু করি ভোরে আর শেষ করি মধ্যরাতে। টোস্ট বিস্কিট আর চা দিয়ে সকালের নাস্তা করি, দুপুরে একটা কিছু খাই, রাতেও খেয়ে না খেয়ে ঘুম। ছয়বছর কলেজের হোস্টেল আর ভার্সিটির হলে থেকেও আলসার হয়নি, তখনকার দৌড়াদৌড়িতে সেটা হয়।

কিন্তু সেগুলো সমস্যা না। আসল সমস্যা হচ্ছে চোরের মতো লুকিয়ে বের হওয়া আবার লুকিয়ে ঘরে ফেরা। দুজন মানুষের ভয়ে আমি লুকাতাম-আমার নেক্সট ডোর নেইভার আর বাড়িওয়ালি খালাম্মা! আমার প্রতিবেশি বাংলাদেশের সেরা হাউজওয়াইফ। তার বাসা চকচকে, বাচ্চা চকচকে। ঘরে তৈরি পিজা দিয়ে বিকালে চা খায়। উনার সামনে পড়লেই কোনোদিন বলেন ‘আপনার বাচ্চার নখ লম্বা হয়েছে দেখলাম খামচি দিয়ে গাল কেটে ফেলেছে’! কোনোদিন বলেন ‘আপনাকে দেখলে আমার অবাক লাগে, নিজের বাচ্চাকে এভাবে ফেলে রেখে কীভাবে অফিস করেন’। আর অবশ্যই সবদিন বলেন ‘আমারও একটা মাস্টার্স ডিগ্রি আছে কিন্তু বাচ্চা ফেলে ঘর-সংসার ফেলে আপনার মতো চাকরি করার কথা আমি ভাবতেই পারিনা’।

বাড়িওয়ালি খালাম্মা এতো প্যাঁচানো কথার মধ্যে নাই। উনি সরাসরি বলেন এতোই যদি চাকরি করার ইচ্ছা মা হয়েছো কেনো? (উনার ভাষায় ‘বাচ্চা হওয়াইছো কেনো’) তোমাদের টাকার জন্য লোভ বড় বেশি! তোমার হাজব্যান্ড একটা লোভী লোক বউকে দিয়ে টাকা কামানোর জন্য বাচ্চাকে কষ্ট দেয়!

এদিকে অফিসে আমার এক ক্লায়েন্ট অন্য কথা বলে! সে বলে ‘ম্যাডাম, আপনার হাজব্যন্ড অনেক ভালোমানুষ’।
আমার খুব গর্ব হয় ‘আপনি আমার হাজব্যান্ড কে চেনেন নাকি?
‘না না চিনিনা। কিন্তু আপনাকে চাকরি করতে দিচ্ছে!’
‘ভাই আমার হাজব্যান্ড ভালোমানুষ কারণ আমি কাজ করতে চাই এই ব্যাপারটা ও সমর্থন করে, আমাকে সহযোগিতা করে। কিন্তু আমি কাজ করবো কীনা সেটা হাজব্যান্ড নির্ধারণ করার কেউ না!’

আমি খালাম্মাকে বলতে পারিনা আমি চাকরি করি আমার ইচ্ছায়, আমার হাজব্যান্ড লোভী না। ক্লায়েন্ট কে বলতে পারিনা একজন মানুষ ভালোমানুষ কিনা তা মাপার অনেক একক আছে-সততা,ভদ্রতা, মনাবিকতা,সহনশীলতা ইত্যাদি। বউকে বাইরে যেতে দেয়া, চাকরি করতে দেয়া ভালোমানুষ মাপার মাপকাঠি না!

আমি ছুটতে থাকি ঘোড়ার মতো। কাজ করতে থাকি গাধার মতো। তবু কোনোকিছু ঠিকঠাকমতো হয়না। অফিসে লেট হয়ে যাই, বাসায় রান্না হয়না, বাচ্চার স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে... আমার লোভী অথবা ভালোমানুষ স্বামী একসময় বিরক্ত হয়ে যায়। মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী আর তার ভাই বেরাদরদের নাটকে দেখি প্রেমিক প্রেমিকা খালি ঝগড়া করে। আমরা প্রেমিক প্রেমিকা থাকার সময় ভাবতেও পারতাম না আমাদের কোনোদিন ঝগড়া হবে। বিয়ের পাঁচ বছর পর একদিন টোনাটুনির সংসারে ঝড় উঠলো। আমাদের বিরাট ঝগড়া হয়ে যায়।

আমার অফিসে সেদিন জরুরী মিটিং। সেজন্য সবকিছু তড়িঘড়ি করে গুছিয়ে নিয়েছি। কপাল খারাপ থাকলে যা হয়, বের হবার মূহুর্তে মেয়ের পটি পেয়ে গেলো। অবস্থাটা এমন তাকে এই অবস্থায় গাড়িতে নেয়া যায়না। আমার বর বললো দিহান আমি যাই। তোমারা পরে বের হও।
-পরে যাও মানে? আমার আজকে মিটিং। তুমি ওদের ড্রপ করে পরে দিও, আমি যাচ্ছি।
-অসম্ভব আমি লেট করতে পারবো না।
-তুমি একদিন লেট করে পারবে না। আমাকে কি এমনি এমনি বেতন দেয়? আজ মিটিং এ না থাকলে আমার চাকরি চলে যাবে।
-গেলে যাবে। দিনের পর দিন এইভাবে কি সম্ভব? তুমি চাকরি ছেড়েই দাও বরং!
-আমাকেই ছাড়তে হবে কেনো? তুমি ছাড়ো?
-দেখো আমি তোমার চারবছর আগে থেকে চাকরি করি। আমার পজিশন, বেতন সবই বেশি। একজনের বেতনে সংসার চালাতে হলে বেশি বেতনের চাকরিটা ধরে রাখা ভালো হবে তাইনা?
-তোমার সব যুক্তি সঠিক। সব কথাই সত্যি। কিন্তু সবচে সত্যি কথাটাই বললে না! তুমি বাংলাদেশের সমাজে ‘ছেলে’। ছেলেমানুষ সংসারের জন্য চাকরি ছাড়েনা। আমার বেতন তোমার চেয়ে কম কিন্তু এই টাকায় বাংলাদেশের অনেক সংসার চলে।
-ঠিক আছে শান্ত হও, আমি ছাড়ছি চাকরি।

সেযাত্রা আমাদের কাউকে চাকরি ছাড়তে হয়নি। আমার শাশুড়ি কিছুদিনের জন্য এসে সংসারের হাল ধরেন। কিন্তু আমি বুঝে যাই কোনো মেয়ের দুই ছেলেকে ভালোবেসে দুজনকেই চাওয়া যতোটা অসম্ভব আমাদের সমাজে চাকরি করে সংসার করা প্রায় ততোটাই অসম্ভব!


মন্তব্য

রিশাদ_ময়ূখ এর ছবি

নির্মম বাস্তব! কিন্তু অবস্থা কী এখন পরিবর্তন হচ্ছে না? কিছুটা হলেও মনে হয় হচ্ছে

দিহান এর ছবি

পরিবর্তন হচ্ছে একটু একটু করে।

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

উচ্ছলা এর ছবি

আহারে...অনেক খারাপ লাগে আপনার জন্য মন খারাপ

কিন্তু সবকিছু এত সুন্দর করে লেখেন যে বেয়াদবের মত গোগ্রাসে আপনার পোস্ট গিলি দেঁতো হাসি

দিহান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ উচ্ছলা।

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

অতিথি অন্যকেউ এর ছবি

প্রেম করাটা তো দেশি বিদেশি নাটক মুভি সবখানেই দেখি। কিন্তু পরিণয়ের পরে জীবনযাপনটা দেখা আরও বেশি প্রয়োজন। প্রেমের মতো রঙিন চশমা না পড়েও সংসার ব্যাপারটা বোধহয় টুকরো টুকরো অনেক রঙ ছড়িয়ে যায়। আপনার লেখাটা যত হতাশা আর যুদ্ধের গল্পই শোনাক, সেই যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে সাঁতার কেটে চলার রঙটা নিয়ে নিতে পারছি অবশ্যই।

মুগ্ধতা। চলুক

দিহান এর ছবি

কৃতজ্ঞতা।

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

বন্দনা কবীর এর ছবি

কিছু বল্লুম নাহ। দেঁতো হাসি

চলুক যুদ্ধ দেখি কতদূর যায় আর কি কি উপায়ে হাসি

দিহান এর ছবি

উপায় একটাই 'যুদ্ধ চালিয়ে যাবার মতো মনের জোর'!
আপনি যখন কিছু বললেন না, আমিও কিছু বললাম না!!

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

নজমুল আলবাব এর ছবি

মিলে গেলতো... অনেক কিছুই মিলে যায়

দিহান এর ছবি

ঝগড়ার ব্যাপারটা যে মিলবে আমি নিশ্চিত জানতাম!!

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

তাসনীম এর ছবি

আমি নিজেও কর্মজীবি মায়ের সন্তান। তবে আম্মা সরকারী চাকরি করতেন, প্রাইভেট চাকরিতে চাপ অনেক বেশি এটা বুঝতে পারি। আর পরিবারের সাপোর্টটাও মনে হয় আস্তে আস্তে কমে আসছে। আম্মা শহর বা দেশের বাইরে গেলে আমরা নানাবাড়িতে থাকতাম, ওটা খুব বেশি দূরে ছিল না। বাংলাদেশে ভালো ডে-কেয়ার চালু করলে সেটাতো চলা উচিত। এখন তো বহু পরিবারেই মা-বাবা দু'জন চাকরি করে।

সংসার ও ক্যারিয়ার একসঙ্গে ম্যানেজ করার মতো অসম্ভব কাজ আপনি সম্ভব করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা মুগ্ধ হয়ে শুনছি।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

দিহান এর ছবি

এখনকার বাস্তবতা অনেক রূঢ়।

ডে-কেয়ার এর প্রসংগে বলি-আমার এক আত্নীয় সিদ্ধান্ত নিলেন ডে-কেয়ার করবেন। এস এস সি/এইচ এস সি পাশ মেয়েদের নিয়োগ দিলেন। কিন্তু দেখা গেলো শিক্ষিত হলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে তারা খুবই উদাসীন। আমাদের দেশের আবহাওয়ার সারাক্ষন ডায়াপার পরিয়ে রাখা যায়না।র‍্যাশ হয়, জীবানু সংক্রমন হয়। বাচ্চাদের পিপি/পটি এক বিরাট ঝামেলার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এসবের জন্য নিয়োগ দেয়া হলো আয়াদের। একসময় দেখা গেলো আয়ারা যেনোতেনো ভাবে বাচ্চাদের দেখাশুনা করে আর কর্মচারী মেয়েরা নিজেরা গল্পগুজব করে।

আরেকটা আশ্চর্য বিষয় দেখে উনি রীতিমতো মনঃক্ষুন্ন হয়ে ডে-কেয়ার বন্ধ করে দেন। কর্মচারী মেয়েরা এবং আয়ারা দেখতে সুন্দর, ফর্সা, নাদুসনুদুস বাচ্চাদের আদর করতো। অন্য বাচ্চারা যারা হয়তো কালো বা শুকনা পটকা তারা থাকতো নিতান্তই অবহেলিত।
আমার প্রথম শুনে এইকথা বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু পরে দেখেছি এরকম হওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক না আমাদের দেশে!

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

riti nirobodhi এর ছবি

দিহান আপু খুব সুন্দর আর সাবলীল ভাবে বাস্তব সত্যটা তুলে ধরেছেন।। হাততালি

দিহান এর ছবি

ধন্যবাদ রীতি।

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

guest_writter এর ছবি

আমার বড় খালার মেয়ে মানে আমার খালাত বোন আপনার প্রতিবেশি বাংলাদেশের সেরা হাউজওয়াইফ প্রজাতির একজন। তার বাসা ঝকঝকে, বাচ্চা চকচকে......
আমার বোনের অসীম ধৈর্য্য(!)...... উনার ছেলে ভাত এক গ্রাস মুখে নিবে বেসিনে দাঁড়িয়ে তো আরেক গ্রাস বারান্দার গ্রীলে......আপু তার স্বভাবসুলভ ধৈর্য্য(!) নিয়ে তাকে বেসিন-বারান্দায় ঘুরে বেড়াবে আর চটাস চটাস চড় লাগাবে।আমার ধারণা তার অতিরিক্ত যত্নশীল এসব ব্যাপার তার ছেলে মেয়েগুলোকে পরনির্ভরশীল করে তুলছে এটা উনাকে বোঝানো যায় না। এইসব আদিখ্যাতাকে তিনি প্রশয় দিচ্ছেন যত্নশীলতা বলে। কিন্তু এইগুলোর কারনে আপুর বাচ্চাগুলো আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠছে না।
আমি প্রায় আপুকে বলি---আপনি যদি চাকরি করতেন তা হলে এইগুলো করা আপনার পক্ষে সম্ভব হতো না। কিন্তু কে শোনে কার কথা।
দিহান আপু আমি মনে করি আমার সন্তানদের দ্বায়িত্বশীল এবং আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলা আমার কর্তব্য। তাদের প্রতি যত্নবান হওয়ার মানে তো এই না যে আমি তাদের মোমের পুতুল বানিয়ে ফেলব.........
বাংলাদেশের কটা আধুনিক মাকে এটা বোঝানো যায়??????????????

দিহান এর ছবি

আমার ব্যক্তিগত অভিমত শিক্ষিত হাউজওয়াইফ যারা সংসারকে চকচকে রাখার কাজে আত্ন নিবেদিত তারা বাংলাদেশের মেয়েদের অনেক পিছিয়ে দিচ্ছেন। অনেক স্বামী বা শ্বাশুড়ি এরকম নিবেদিত হাউজওয়াইফদের দেখে নিজের স্ত্রী/ছেলের বউকে ধিক্কার দেন, আমি দেখেছি।

আমি চেষ্টা করছি বাচ্চাদের দায়িত্বশীল করে তুলতে। অন্তত খুব অহংকারের সাথে একটা কথা বলতে পারি আমার পাঁচবছর বয়সী মেয়ের কাছে একবছর বয়সীটাকে রেখে যদি বলি 'বোনকে দেখে রেখো, মা রান্না করে আসি', বড়টা এই দায়িত্ব ভালোমতোই পালন করে। আর আমার বাচ্চাদের আমি হুতুতু করে খাওয়াই না, কম খাও বেশি খাও-খাবার টেবিলে বসে খাও। তবে এটাও সত্যি হাউজওয়াইফদের ঝকঝকে বাসা, স্বাস্থ্যবান শিশু দেখে মাঝে মাঝে হীনমন্ন্যতা আসে!!

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

এলোমেলো এর ছবি

এই " বাসা আর বাচ্চা" নিয়ে কিছু কিছু হাউস ওয়াইফের অহংকার এত নগ্ন হয় যে বুকে এসে লাগে, যখন তারা কোনো কর্মজীবী মায়ের কর্মজীবী মেয়েকে খোটা দেন| আমার মনে হয় মনের কোনো কোণে এরা হীনমন্যতায় ভোগে, তাই কর্মজীবী মাকে আঘাত করে কথা বলে নিজে যে কোনো অংশেই কম না, বরং উচ্চ-শিক্ষিত হয়ে বাচ্চার জন্যে স্যাক্রিফাইস করে সে কতটা মহান তা প্রমান করার জন্যে উঠে-পড়ে লাগে| আপনার এই সিরিজের প্রথম পোস্টে আমি একটা কমেন্ট করেছিলাম, দেখেন নাই বোধ হয়|

পাগল মন(অফ্লাইন) এর ছবি

কিছু বললাম না। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

দিহান এর ছবি

আমিও কিছু বললাম না, শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম পড়ার জন্য।

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

কল্যাণF এর ছবি

এই যুদ্ধটা খুব কাছে থেকে দেখেছি, আমার বড় বোনের। হুবুহু একি চিত্র। পরে অবশ্য বাবা-মা ওদের সাথে এসে থাকতে রাজি হওয়ায় এবং শুরু করায় যুদ্ধের অবসান হয়। ছবিটা খুব সুন্দর এঁকেছেন দিহান। মনের জোরটা ধরে রাখুন। আশা করি শিজ্ঞির কোন একটা সুস্থ সুরাহা এসে যাক আপনার হাতের নাগালে। ভাল থাকবেন।

দিহান এর ছবি

আপনার বোন বড় ভাগ্যবান।
অনেক ধন্যবাদ আপনার শুভকামনার জন্য।

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

দিহান কোন জীবনেরই স্থায়ী কোন সুখের রাস্তা নেই। আপনার বা আপনার উল্টো পথে যেই আছে.......কেউ এদিকে কেউ ওই দিকে কিন্তু যন্ত্রনা, ঝামেলা সবই ভিন্ন ভিন্না চেহারা ধারন করে আসেই -
কেবল এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে যতটা নিজের ভিতর গহ্ববরে পুরে হজমের চেষ্টাই মনে হয় সত্যি। যে পারে সে পারে আরে যে পারেনা তাকেও পারতেই হয়.....

শুভ কামনা আগামীর জন্য /

পৃথ্বী এর ছবি

সংসার আর চাকুরী একসাথে টিকিয়ে রাখা আমাদের সমাজে অসম্ভব- এর সাথে আমি একমত না। প্রায় অসম্ভব, কিন্তু পুরোপুরি অসম্ভব না। আমার বিশ্বাস, এখন যেসব কর্মজীবি মা'রা এত কষ্ট ও অপমান স্বীকার করেও চাকুরী চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরাই ভবিষ্যতে সমাজের পরিবার সম্পর্কিত ধারণা পরিবর্তনের পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করবেন।

আমার মা আমার জন্মের সময় চাকুরী ছেড়ে দেয়(পরে অবশ্য শুনেছি যে বাবা চাকুরী ছাড়তে বাধ্য করেছিল)। বছরের পর বছর সংসারের কাজ করতে করতে একসময় চিন্তার পরিসরও ঘরের চারটি কোণের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। তার চেয়েও বড় সমস্যা হল- পরিবারের কর্তার স্বৈরাচারী ও প্রচন্ডরকম আপত্তিকর কীর্তিকলাপও মুখ বুজে সহ্য করতে হয়, দিন শেষে ওই একই লোকের কাছে যে টাকার জন্য হাত পাততে হয়! ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- এরকম ফ্রাস্ট্রেটিং পরিবেশে একটা বাচ্চা শারীরিকভাবে নাদুস-নুদুস হয়ে বড় হবে ঠিকই, কিন্তু তার মানস একজন অভুক্ত শিশুর মতই নাজুক রয়ে যাবে।

বাচ্চা ছোট থাকলে অফিস আর বাচ্চাকে একসাথে সামলানো খুব কঠিন(বিশেষ করে স্বামী যদি বিন্দুমাত্র সাহায্য না করে), তবে বাচ্চা সারা জীবন ছোট থাকবে না। যতদিনে সন্তান নিজের যত্ন নিজে নেওয়ার মত বড় হবে, ততদিনে তার জননীর জীবনে সন্ধ্যা নেমে আসবে। এই জন্যই আমি মনে করি শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও একজন নারীর ক্যারিয়ারের দিকে সমান মনযোগ দেওয়া উচিত- আপাতঃদৃষ্টিতে এটা সন্তানের জন্য কষ্টকর মনে হলেও ইন দ্যা লং রান, এই ক্যারিয়ারই পরিবারে ক্ষমতার ভারসাম্য মজবুত রেখে সন্তানের স্বাভাবিক মানসগঠন নিশ্চিত করবে।

তিথীডোর এর ছবি

শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও একজন নারীর ক্যারিয়ারের দিকে সমান মনোযোগ দেওয়া উচিত- আপাতঃদৃষ্টিতে এটা সন্তানের জন্য কষ্টকর মনে হলেও ইন দ্যা লং রান, এই ক্যারিয়ারই পরিবারে ক্ষমতার ভারসাম্য মজবুত রেখে সন্তানের স্বাভাবিক মানসগঠন নিশ্চিত করবে।

চলুক

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

যুমার এর ছবি

সংসার আর ক্যারিয়ার দু'টোকেই ভালবাসার মুসিবত হাড়ে হাড়ে টের পাই মাঝে মধ্যেই।
কখনো কখনো মনে হয় -বিজন বনের দিকে হাঁটা দেই।
খানিক পরেই মনে হয়-আমি একলা থাকতে পারব না।
লেখার কথা আর কী বলব-এ যেন চেনা আয়নার মুখ দেখা!
ভালো থাকবেন।

সুলতান এর ছবি

দিহান,
আপনার লেখা পড়তে পড়তে আপনার ফ্যান হয়ে গিয়াছি। আপনার মত মানুষিক শক্তি দেশের সব মেয়েদের থাকতো তাহলে হয়ত মেয়েরা আরও এগিয়ে যেতে পারতো। আমার মনে হয় অনেকেই আপনার লেখা পড়ে অনুপ্রাণিত হবে। শুভ কামনা আপনার জন্য এবং আপনার পরিবারের জন্য।
ভাল থাকবেন।

সুলতান

guest_writer এর ছবি

আপনার সংসারযুদ্ধের কাহিনী পড়ছি। আমাদের সময় বাসার কাজের লোক সহজলভ্য ছিল। দীর্ঘদিন থাকার কারনে তারা একসময় পরিবারের অংশও হয়ে যায়। আমাদের বাসার ঠিকা কাজের মহিলাটি ২১ বছর ধরে কাজ করছে। আর সার্বক্ষণিক কাজের মহিলাটি আছে ১৩ বছর ধরে। ছোট একটি মেয়ে আছে তারও প্রায় পাঁচ বছর হল। সংসারে তাদের এক ধরনের অধিকারও জন্মে গেছে। সত্যিই সংসারে ভাল একটি কাজের মেয়ে জীবনটাকেই বদলে দেয়। আনন্দময় করে দেয়। কিন্তু আমরা সেভাবে তাদের মূল্যায়ন করিনা।

সমবেদনা জানাবোনা, বরং চাইব শীগগীরই যেন একজন ভাল এবং বিশ্বাসী কাজের মহিলা জুটে যায়।

ভাল থাকুন।

প্রৌঢ়ভাবনা

তাপস শর্মা এর ছবি

বলে যান, পড়তেই থাকি

রুমঝুম ১ এর ছবি

মনে হচ্ছে আমার জীবনের ঘটনা আপনি লিখছেন। আমি ত এইটা পর্যন্ত শুনেছি; " তোমার বাচ্চা তোমাকে দেখতে পারেনা জানো? এইরকম ফেলে ফেলে গেলে একদিন পুরোই ভুলে যাবে তোমাকে"...।"

আমার মনে আছে আমার একমাত্র রেষ্টের জায়গা ছিল আমার অফিস আর গাড়ি বা রিক্সা যেটি করে অফিস যেতাম সেটি।

পাঠক এর ছবি

মাস্টার্স ডিগ্রিধারী অনেক হাউসওয়াইফ হীনম্মন্যতায় ভোগে। তাই সুযোগ পেলেই কর্মজীবী মেয়েদের দুকথা শুনিয়ে দিতে চায়।

দিহান, শুধু আপনার লেখার নয়, পুরোপুরি আপনারই ভক্ত হয়ে গেলাম।

সুমিমা ইয়াসমিন

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আপনার সিরিজটা উপভোগ করছি। চলুক আরো। চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সারস  এর ছবি

চকচকে বাসার কথা শুনে অনেক মজা পেলাম।
সকালে ১০টাতে বাসা থেকে বের হই, আর যখন ফিরি তখন রাত ১০টা। উইক এন্ডে রান্না করা না হলে বাইরে থেকে খেয়ে আসি.....আসার পর ও প্রতি দিনই কোনো না কোনো কাজ করতে বসতে হয়। বাসার অবস্থা দেখলে নিজেরো মাঝে মাঝে খারাপ লাগে..বাচ্চা কাচ্চা নেবার কথা তো চিন্তাও করতে পারি না।

কিন্তু স্বান্তনা যে প্রবাসে কথা শুনানোর কেউ নাই।

সিরিজটা চলুক। চলুক

পাঠক এর ছবি

উফ....দিহান আপু........আমি তো আপনার ভক্ত ছিলামই..........এখন আমার মাও আপনার দারুন ভক্ত......কয়েকদিন আগে আমার ছোট বোন আপনার আ ম্যাজিকাল জার্নির পুরোটা মা'কে পড়িয়েছে....তারপর থেকে তিনি আপনার দারুন ভক্ত.........এবং ওইটা পড়ার পর থেকে তিনি আমাদের জানালেন তার মা হতে যাওয়ার নানান অভিজ্ঞতা....আমরা তাকে কত কষ্ট দিয়ে পৃথিবীতে এসেছি সেটাও জানলাম... মন খারাপ

ভালো থাকুন আপু.........পুরো পরিবার নিয়ে ভালো থাকুন..........

পাঠক এর ছবি

উফ....দিহান আপু........আমি তো আপনার ভক্ত ছিলামই..........এখন আমার মাও আপনার দারুন ভক্ত......কয়েকদিন আগে আমার ছোট বোন আপনার আ ম্যাজিকাল জার্নির পুরোটা মা'কে পড়িয়েছে....তারপর থেকে তিনি আপনার দারুন ভক্ত.........এবং ওইটা পড়ার পর থেকে তিনি আমাদের জানালেন তার মা হতে যাওয়ার নানান অভিজ্ঞতা....আমরা তাকে কত কষ্ট দিয়ে পৃথিবীতে এসেছি সেটাও জানলাম... মন খারাপ

ভালো থাকুন আপু.........পুরো পরিবার নিয়ে ভালো থাকুন..........

নীরা

আমি কেবলি স্বপনও করেছি বপনও এর ছবি

আপু, আপনার লেখা গুলো অসাধারণ। কিন্তু লেখা গুলো পড়ে তো আমার এখন বিয়ে করতে ভয়ই লাগছে!!!!!!!
কারন আমি এবং আমার হবু স্বামী , আমরা দুজনাই ডাক্তার.....আমাদের জীবনটা তো আরও complicated হবে.......চিন্তা করলে তো আতঙ্ক লাগছে।

আফরিন এর ছবি

ভয় পাচ্ছি আপু...... আপনাদের তো মাথা ঠাণ্ডা আমার মাথা তো চরম গরম আমি যে এই সব কিভাবে সামলাব ............ ইয়ে, মানে... চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।