সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীদের চরম দুর্দিনঃ কিছু জাতীয় ভ্রান্তির অনিবার্য্য পরিণাম

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৬/১০/২০১১ - ১১:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ভদ্রলোকের বাসাটা নীচ তলায়। মহল্লার রাস্তার সাথে লাগোয়া এ বাসাতে তিনি থাকেন সপরিবারে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে। চার তলা বিল্ডিংটার বাইরের গেইটটা খোলাই থাকে সাধারনত। সকাল তখন সাড়ে আটটা। অফিসের উদ্দেশে বের হচ্ছেন। বাসার মেইন দরজা খুলে বাইরে পা দিতেই ৩ জন লোক তাকে ঘিরে ধরল। ছোরা হাতে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক তাকে বাসার ভেতরে নিয়ে গিয়ে দরজাটা লক করে দিল। তাদের সাথে ধস্তাধস্তির কারনে ভদ্রলোক কিছুটা আহত ও হয়েছিলেন। তিনি দেখলেন ৩ জন’ই বাংলাদেশী। ভেতরে ঢুকেই তারা তাকে বেঁধে ফেলে তার কাছ থেকে মোবাইল, চাবি সব কিছু নিয়ে তার স্ত্রীকে ও ছোরা উঁচিয়ে চুপচাপ থাকতে বলল, না হয় জানে মেরে ফেলার ভয় দেখাল এবং তার মোবাইলটাও নিয়ে ফেলল।পরে দেখা গেছে বাসার ল্যান্ড লাইনের ক্যাবলটাও তারা বাইরে থেকে আগেই কেটে দিয়েছিল। তারপর শুরু করে লুটপাট। ২০/২৫ মিনিটের মধ্যে ৩ জনের ডাকাত দলটি এ পরিবারের স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ বাংলাদেশী টাকায় আনুমানিক ৪০ লাখ টাকার জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
এটা কোন নাটক বা সিনেমার গল্প নয়। আবার ঢাকা শহরের নিত্যনৈমিত্তিক কোন ঘটনা ও এটি নয়। সৌদীআরবের রাজধানী রিয়াদের জনবহুল এলাকা ‘হারা’ তে বিগত দিনে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি ডাকাতি ঘটনার একটি বাস্তব ঘটনা এটি। শুধু গত রমজান মাসেই মোট ৭/৮ জনের এ ডাকাত দলটি আরো দু’টি বাংলাদেশী পরিবার এবং এক ব্যবসায়ীর বাসায় হানা দিয়ে তাদের সর্বশ্ব লুট করে নেয়। এর আগেও আরো কয়েকটি এ রকম ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল, যাতে ডাকাত কর্তৃক ঘরের লোক খুন হওয়ার খবরও পাওয়া গিয়েছিল। অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যপার হচ্ছে এ ডাকাতদলের সবাই’ই বাংলাদেশী; বাংলাদেশী নামের কলঙ্ক। স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগের সক্রীয় তৎপরতা ও দীর্ঘ প্রচেষ্টায় তাদের ৩ জন ইতিমধ্যে ধরা পড়ে এখন জেলে আছে। বাকীদের কেও ধরার জোর প্রচেষ্টা চলছে।
গত শুক্রবার রিয়াদে আট বাংলাদেশীর শিরচ্ছেদের ঘটনায় দেশব্যপী ভীষন হৈ চৈ পড়ে গেছে। বিবৃতির পর বিবৃতি। কিন্তু বাছবিচারহীন এ রকম বিবৃতি আবার নতুন কোন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে কিনা সেটাও আমাদের একটু ভেবে দেখা দরকার। ২০০৭ সালে এ বিচার কার্য্যটি শুরু হয়ে দীর্ঘ প্রায় চার বছর পরে এটার রায় কার্য্যকর করা হল। এ শাস্তিটা যদি আরো আগে হতো তাহলে বিগত মাস গুলোতে ডাকাতির যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা নাও ঘটতে পারতো। প্রাণহানী ও লুটপাটের হাত থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার বা ব্যক্তিগুলো যেমন রক্ষা পেত, তেমনি যারা অপরাধী হিসেবে ধরা পড়েছে বা ধরা পড়ার আশংকায় তারাও হয়তো এ জঘন্য পথে পা বাড়ানো থেকে বিরত থাকতো। আসলে যে কোন অপরাধের শাস্তি বিধানের স্বার্থকতা তো এখানেই।
যে কোন মৃত্যুই বেদনাদায়ক, নিঃসন্দেহে তা জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্যই। আমাদের চিন্তা করা উচিৎ আজ থেকে চার বছর আগে যখন ঐ ডাকাত দল কর্তৃক মিশরী দারোওয়ান খুন হলো, তা তার পরিবারের কাছেও সমান বেদনাদায়ক ছিল। তার পিতামাতা স্ত্রী পরিজনও এই ভাবে আহাজারী করেছিল সেদিন। সে দিকটা কিন্তু কেউ একবার ও ভেবে দেখছিনা। বাংলাদেশী বলে খুনী হলেও তার পক্ষ নেব আর ভিন্ দেশী বলে আরেকজনের খুন হওয়ার নির্মমতাকে পাত্তাই দেব না, এটা মানবাধিকার এবং ন্যায় বিচার দুটোর’ই সম্পুর্ণ পরিপন্থী একটি দ্বীমুখী নীতি বৈকি। জাতীয় পর্যায়েও আমরা এরুপ দ্বীমুখী নীতির অনেক নমুনা দেখতে পাই, যে নিজের দলের এবং মতের লোক হলে সে যত জঘন্য অন্যায়’ই করুক না কেন তাকে কিভাবে কোন্ কৌশলে সবধরনের অভিযোগ এবং শাস্তি থেকে বাঁচানো যায় তার জন্য আরো কোন জঘন্য অন্যায় যদি করা লাগে তা করতেও অনেকে পিছ পা হন্ না। নিজের স্বজন খুন হলে খুনিকে ফাঁসিতে চড়ানোর জন্য সব শক্তি নিয়োগ করি, পক্ষান্তরে নিজেদের লোক কর্তৃক অন্য মত বা দলের লোক খুন হলে তা নিয়ে একটুও মর্মবেদনা অনুভব করি না, বরং আদালত কর্তৃক শাস্তি ঘোষিত হয়ে যাওয়ার পরে অবলীলায় তাকে ক্ষমা করে দিয়ে মহানভূবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। অন্যদিকে আমার সুদীর্ঘ প্রায় ১৯ বছরের প্রবাস জীবনে দেখে আসছি - অনেকেই আছে যারা মনে করে – এত টাকা খরচ করে বিদেশে এসেছি, টাকা রোজগার করার জন্য। সুতরাং যে কোন উপায়ে টাকা নিজের পকেটে আসলেই হলো। তা কার টাকা, কিভাবে কোথ্থেকে আসল, বৈধ না অবৈধ, এটার জন্য কোন জবাদিহি করা লাগবে কি না – এসব যেণ কোন দেখার’ই বিষয় না। অবশ্য এটা আমাদের একটি প্রধানতম জাতীয় ব্যাধিও বটে, যা সংক্রমনের মাধ্যমে কম বেশী সবার মধ্যেই দিন দিন বেড়ে চলেছে। যার নাম দুর্নীতি। দেশে জাতীয় পর্যায়ে যেমন লুটেপুটে খাওয়ার একটা মহোৎসব চলে আসছে, প্রবাসে এসেও তাদের বংশবদরা যেন সেই এক’ই ধারা বজায় রাখার মহড়ায় নেমেছে। স্বৈরাচারী এরশাদ এর আমলের একটা মজার ঘটনা আমার মনে পড়ছে। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কৃত একদল পরীক্ষার্থী একবার রাস্তায় মিছিল বের করেছিল আর তাদের স্লোগান ছিল এই রকম “নির্বাচন হইছে যে ভাবে, পরীক্ষাও হবে সে ভাবে”। জাতীর কলঙ্ক কিছু দুবৃ্ত্ত এ প্রবাসেও সেই এক’ই ধারা বাস্তবায়নে নেমেছে আর যেণ তাদের স্লোগান হচ্ছে – ”লুটপাট আর সন্ত্রাসের মহোৎসব দেশে চলছে যে ভাবে প্রবাসেও চলবে সে ভাবে”। সেই আট জন বাংলাদেশী তো নিছক অর্থ লোভেই ডাকাতি করতে গিয়ে একজন মানুষ পর্যন্ত খুন করতে এতটুকু পিছপা হয় নাই। আর আমাদের সুশীল সমাজ তাদের সেই ঘৃণ্য অপরাধের কথা বেমালুম ভূলে গিয়ে নিন্দার ঝড় তুলে চলেছেন। কারন তো একটাই, যে তারা আমার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার কে সমৃদ্ধ করার জন্য সেই সুদূর প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিল, আর সেই অর্থ কামাই করতে গিয়েই আজকে সেই বিদেশ বিভুঁইয়ে তাদের প্রাণ বিসর্জন দিল। পারলে যেণ জাতীয় বীর খেতাব দিয়ে বসে আর কি!
কিন্তু আমরা একবারও কি ভেবে দেখেছি এ সৌদিআরবেই কর্মরত আরো প্রায় ২০ লক্ষ বাংলাদেশী’র কথা! যারা দীর্ঘ দিন নানা প্রকার সমস্যার ঘুর্ণাবর্তে নিষ্পেষিত হচ্ছে অনেকটা লাওয়ারিশ এর মত। অনেক লেখালেখি আবেদন নিবেদন সত্ত্বেও সেই সব সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কার্য্যকরী কিছুই আজ পর্য্যন্ত তো করা হয়’ই নাই, উপরন্তু ঐসব ডাকাতির ঘটনা সহ, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটা অনেক মারামারি কাটাকাটি আর সন্ত্রাসী ঘটনার কারনে সার্বিক পরিস্থিতি বাংলাদেশীদের জন্য আরো চরম প্রতিকূলে যাচ্ছে দিন দিন। আর আমাদের সুধী সমাজ সেই সব কলঙ্কজনক ঘটনার নায়কদের জন্য মায়াকান্না করে প্রকারান্তরে তাদের অপকর্মের প্রতি নিরব সমর্থন প্রদর্শন করে – বাকী বিশ লক্ষ লোকের ভাগ্যকে আরো অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
বর্তমানে সৌদিআরবে বাংলাদেশীদের সবচেয়ে প্রধান সমস্যার ব্যপারে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। অনেক সমস্যার মধ্যে প্রধানতম সমস্যা হচ্ছে ‘কফিল পরিবর্তন’ বন্ধ হওয়া। প্রধানতমঃ বললাম কারন এটি আরো অনেক সমস্যার উৎসও বটে। ‘কফিল পরিবর্তন’ করা কে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় “নক্বল কাফালা” বা “Transfer of sponsorship”। অর্থাৎ যদি কারো বর্তমান কফিলের কাছে কাজ না থাকে কিংবা কাজ আছে কিন্তু বেতন বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কম। অন্য কোম্পানীতে আরো ভাল সুযোগ সুবিধাসহ চাকুরীর অফার পাওয়ার পর বর্তমান কফিল বা নিয়োগর্তার সাথে একটা সমঝোতার মাধ্যমে তার সম্মতি নিয়ে অন্য কোম্পানী বা কফিলের কাছে স্থায়ী ভাবে transfer বা স্থানান্তর হয়ে যাওয়াকে বলা হয় “নক্বল কাফালা” বা “Transfer of sponsorship”। এ সুযোগ বর্তমানে সৌদিআরবে কর্মরত অন্যান্য সব দেশের নাগরিকদের জন্য বহাল আছে। বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের জন্য এ সুযোগ সৌদি সরকার বন্ধ করে দিয়েছে – আলোচ্য সেই শিরোচ্ছেদকৃত ৮ জন সহ আরো কতিপয় বাংলাদেশী দুবৃত্তের কিছু সন্ত্রাসী এবং আইনশৃংখলা বিরোধি কর্মকান্ডের কারনে, যা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে কর্মরত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ সমুহের নাগরিক কিছু সাংবাদিক কর্তৃক অতিরঞ্জিত রুপে ফলাও করে প্রচারীত হওয়ার কারনে। এর মধ্যে উক্ত ৮ জন কর্তৃক সংঘটিত ডাকাতি এবং মিশরী দারোয়ানকে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ছিল খুব’ই মারাত্মক এবং জঘন্য, যা সৌদিআরবের নীতিনির্ধারনী মহল কে বাংলাদেশীদের ব্যপারে কঠোর অবস্থান নিতে প্রত্যক্ষ ভাবে প্ররোচিত করেছিল এবং তার’ই ফলশ্রুতিতে অনেকটা অঘোষিত ভাবে বাংলাদেশীদের “নক্বল কাফালা” বন্ধ করে দেয়া হয়। সবাই আশায় বুক বেঁধেছিলাম নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে যথাযথ কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে, কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি। বরং এখন সমস্যার আরো নতুন নতুন জট তৈরী হচ্ছে, যা থেকে মুক্তি পাওয়া কি ভাবে সম্ভব, আদৌ সম্ভব হবে কি না এসব ভেবে আমরা চরম ভাবে হতাশ এবং উদ্বিগ্ন।
এই “নক্বল কাফালা” বন্ধ হওয়ার ফলে বাংলাদেশী নাগরিকরা কি সব মারাত্মক সমস্যার মধ্যে প্রতিনিয়ত হাবুডুবু খাচ্ছে আর কি চরম পরিস্থিতির সাথে রাতদিন যু্দ্ধ করে টিকে আছে তার কিছুটা বর্ণনা এখানে না দিলেই নয়ঃ
যাদের বর্তমান কফিল এর কাছে কাজ নেই তাদের সামনে সাধারণতঃ চার টা পথ খোলা থাকে – এক, অন্য কফিলের অধীনে ট্রান্সফার হয়ে যাওয়া। দুই, বর্তমান কফিলকে মাসিক বা বাৎসরিক একটা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রদান করা হবে মর্মে রাজি করিয়ে তার বিনিময়ে ট্রান্সফার হওয়া ছাড়াই অন্য কফিলের অধীনে কাজ করা। তিন, Final Exit বা চুড়ান্ত ভাবে দেশে চলে যাওয়া। চার, কফিলকে না জানিয়ে তার কাছে পাসপোর্ট ফেলে রেখেই অন্যত্র চলে যাওয়া বা পালিয়ে যাওয়া।
এক নম্বর পথটা বাংলাদেশীদের জন্য সম্পুর্ণরুপে বন্ধ এবং অনেক কফিল তাদের নিজস্ব কিছু জটিলতার কারনে দুই নম্বর উপায় অবলম্বনের ব্যপারে কখনো সম্মত হয় না। তাছাড়া ট্রান্সফার না হয়ে অন্য কফিলের অধীনে কাজ করাও কিন্তু এখানে আইন সম্মত নয়। সেই ক্ষেত্রে কফিল তিন নম্বর পথ অর্থাৎ Final Exit এ তার বাংলাদেশী শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাভাবিকতঃই চুড়ান্ত ভাবে দেশে চলে যাওয়াটা খুব’ই দুর্ভাগ্যজনক। কারন অনেকে অনেক টাকা খরচ করে ভিসা কিনে সৌদিতে আসে, হয়তো তখনো তার খরচ তো দূরে থাক ঋন ও শোধ হয় নাই। এ অবস্থায় Final Exit এ দেশে যাওয়াটা অনেকে মেনে নিতে পারে না। সেই ক্ষেত্রে এ সকল শ্রমিকেরা চার নম্বর পথটি বেছে নেয়, অর্থাৎ কফিলের কাছ থেকে পালিয়ে যায়, চুড়ান্ত ভাবে অবৈধ হয়ে যায়। আবার যে সকল কফিল তার শ্রমিকদেরকে দ্বিতীয় পথটি গ্রহণ করার সুযোগ দেয়, তারাও এ সুযোগের অসৎ ব্যবহার করে অতি মাত্রায় অর্থ্ দাবী করে। বিশেষ করে প্রতি বছর আকামা বা work permit নবায়নের সময় তারা মাত্রাতিরিক্ত অর্থ্ দাবী করে বসে। তখন অতিরিক্ত অর্থ দেয়ার মত সামর্থ্য যাদের থাকে না, তারা আকামা নবায়ন না করার কারনে অবৈধ হয়ে যায়। অনেকে আবার কফিলের দাবী অনুযায়ী মাত্রাতিরিক্ত অর্থ্ দেয়ার পরে ও মাসের পর মাস চলে যায়, কিন্তু ঐ অর্থ লোভী কফিল তার আকামা নবায়ন করে দেয় না। হয়তো বা সেই কফিল নিজের’ই লাইসেন্সগত কোন সমস্যা বা মামলা থাকার কারনে তার শ্রমিকদেরকে এমন সমস্যায় পড়তে হয়। তখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও এ লোকগুলোকে অবৈধ হয়ে যেতে হয়। এসব ক্ষেত্রে কফিলরা সাধারনতঃ নিজেদেরকে যে কোন অনাহুত ঝামেলা থেকে মুক্ত রাখার জন্য পালিয়ে যাওয়া বা অবৈধ হয়ে যাওয়া শ্রমিকের বিরুদ্ধে থানায় তার শ্রমিক পালিয়ে গেছে মর্মে জিডি করে দেয়। এর পর ঐ সকল শ্রমিক কে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যে পর্য্যন্ত সম্ভব একেক দিন বা মাস একেক জায়গায় সাময়িক ভাবে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে নিজে চলতে হয় এবং দেশে পরিবারের জন্যও অর্থের যোগান দিতে হয়ে। এরকম অবৈধ অবস্থায় প্রতি মুহুর্তে অনেকটা সাজাপ্রাপ্ত আসামীর মত লোকদের কে তটস্থ থাকতে হয়, কখন জানি পুলিশের চেক আসে এবং ধরা পড়ে ২-৩ মাসের জন্য জেলে মানবেতর জীবন পার করে দেশে চলে যেতে হয়। এই যে কষ্টের জীবন কেবলমাত্র ভুক্তভোগি ছাড়া কারোর পক্ষেই অনুধাবন করা সম্ভব না। কিন্তু “নক্বল কাফালা” চালু থাকলে এ রকম অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখিন বাংলাদেশীদের হতে হতো না।
অন্যদিকে যারা বর্তমান কফিল এর অধীনে বৈধ ভাবে কাজ করছে, তাদের জন্য আগে সুযোগ ছিল, যদি অন্যত্র ভাল অফার পাওয়া যায়, তাহলে “নক্বল কাফালা”র মাধ্যমে ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ার এবং অধিক বেতনের চাকুরী করার, উপার্জন বাড়ানোর, প্রকারান্তরে নিজের পরিবার এবং দেশের আয় বাড়ানোর। কিন্তু “নক্বল কাফালা” বন্ধ থাকার কারনে যে সে সুযোগ বন্ধ হয়েছে শুধু তা নয়, বরং আজকে অনেকে তাদের বর্তমান নিয়োগকর্তার কাছে এক ধরনের জিম্মি হয়ে গেছে এবং নানারুপ বৈরী আচরনের স্বীকার হচ্ছে।
সর্বশেষ, এখানে গত মাস থেকে চালু হওয়া একটা নতুন সিষ্টেম বাংলাদেশীদের জন্য এখন মড়ার উপর খড়ার মত হয়ে দেখা দিয়েছে। সৌদি সরকার তাদের বিশাল বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের জন্য একটি দীর্ঘ্ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখানকার ছোট বড় সব গুলো কোম্পানীকে চারটি ক্যাটাগরীতে ভাগ করে নিয়েছে। ক্যাটাগরীগুলো হচ্ছে – Blue, Green, Yellow and Red. যে সব কোম্পানীতে মোট কর্মচারীর ৮০% বা তার উপরে সৌদী নাগরিক রয়েছে, তারা Blue, যাদের ৩০% এর উপরে সৌদী নাগরিক রয়েছে তারা Green, যাদের ৩০% এর কম কিন্তু ১০% এর বেশী সৌদী নাগরিক রয়েছে তারা Yellow, এবং যে সব কোম্পানীতে ১০% এর কম সৌদী নাগরিক রয়েছে তার Red ক্যাটাগরীর অন্তর্ভুক্ত হিসেবে পরিগনিত হচ্ছে। Blue and Green ক্যাটাগরীর কোম্পানীগুলোর বিদেশী কর্মচারীদের ব্যপারে তেমন কোন সমস্যা আপাততঃ নাই। কিন্তু এই দুই ক্যাটাগরীর কোম্পানীর সংখ্যা হাতে গোনা ১০% এর বেশি হবে না। আর Yellow ক্যাটাগরীর কোম্পানীগুলোতে যে সকল বিদেশী কর্মচারীর চাকুরীর মেয়াদ ইতিমধ্যে ৬ বছর পূর্ণ্ হয়েছে, তাদের আকামা নবায়ন করা হবে না। আর Red ক্যাটাগরীর কোম্পানীগুলোর বিদেশী কর্মচারীদের চাকুরীর মেয়াদ যাই হোক না কেন, তাদের আর আক্বামা নবায়ন করার কোন সুযোগ দেয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে Yellow and Red ক্যাটাগরী কোম্পানীগুলোর বিদেশী কর্মচারীদের জন্য একটা সুযোগ রয়েছে। তা হচ্ছে এদের কেউ যদি Blue and Green ক্যাটাগরীর কোন কোম্পানীতে চাকুরী নিশ্চিত করতে পারে, অর্থাৎ Job offer arrange করতে পারে তাহলে ঐ সকল বিদেশী নাগরিকরা যে কোন সময় তার বর্তমান Yellow or Red ক্যাটাগরীর কোম্পানী ত্যাগ করে উক্ত Blue and Green ক্যাটাগরীর কোম্পানীতে Parmenently Transfer হয়ে যেতে পারবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে শুধুমাত্র বাংলাদেশীদের জন্য এ সুযোগ গ্রহনের কোন অবকাশ নেই, যেহেতু বাংলাদেশীদের নকল কাফালা বন্ধ।
মোটকথা বর্তমানে সৌদিআরবে “নক্বল কাফালা”গত এ সমস্যার কারনে একদিকে যেমণ প্রতি সাপ্তাহেই কেউ না কেউ এখানে অবৈধ হচ্ছে এবং সৌদিতে অবৈধ বাংলাদেশীদের সংখ্যা এবং অবস্থা প্রকট আকার ধারন করছে। অন্যদিকে কর্মরত বাংলাদেশীরা চরম অনিশ্চয়তা, উৎকন্ঠা আর ঝুঁকির মধ্যে দিনাতিপাত করছে, শতকরা ৪০ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রার এ গুরুত্বপূর্ণ উৎসটি দিন দিন সংকুচিত শুধু নয়, হাত ছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কারন বাংলাদেশীদের ট্রান্সফার বন্ধ হওয়ার সুবাদে অন্য দেশীরা; বিশেষ করে ভারতীয়রা অধিক হারে চাকুরীতে ঢোকার সুয়োগ পাচ্ছে। এই ভাবে দেখা যাবে এক সময় বাংলাদেশীরা সব জায়গাতে অবাঞ্চিত এবং সংখ্যায় নগন্য হয়ে পড়েছে শ্রমবাজারের এ বিশাল ক্ষেত্রটিতে।
আর দুঃখজনক হলেও সত্য হচ্ছে – সৌদীআরবে বাংলাদেশীদের এ অস্তিত্ত্ব টিকে থাকা না থাকার বিষয় নিয়ে কারোর’ই কোন মাথা ব্যথা নেই। সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার বা দূতাবাস কারো কাছ থেকেই কোন প্রকারের কোন তৎপরতা তো নাই’ই, বরং কয়েকজন খুনিকে শাস্তি দেয়ার কারনে লজ্জিত বা অনুত্প্ত না হয়ে বরং উল্টো এরুপ শাস্তি বিধানের জন্য সমালোচনার ঝড় তুলে চলেছে। যার প্রতিক্রিয়া জানাতে বাংলাদেশস্থ সৌদি দূতাবাসকে সাংবাদিক সম্মেলন পর্যন্ত করতে হয়েছে।
এবার আমি যে শাস্তি তথা শিরচ্ছেদ নিয়ে এত হৈচৈ তার ব্যপারে কিছু কথা পেশ করতে চাই। প্রত্যেক দেশেই অপরাধী মাত্রই প্রচলিত আইনে বিচারের রায় অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে, এটি একটি প্রথাসিদ্ধ ব্যপার। আমাদের দেশেও হত্যাকান্ডের জন্য মৃত্যুদন্ড দেয়ার বিধান রয়েছে এবং যথারীতি মৃত্যুদন্ড কার্য্যকর ও হচ্ছে। কই সেটা নিয়ে তো কোন উচ্চবাচ্য করে না কেউ। কেন করে না? কারন এটা আইনসিদ্ধ পন্থায় যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া অনুসরন করে করা হয়। এর ব্যতিক্রম হলে প্রতিবাদ প্রতিরোধ আসতেই পারে, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর সৌদিআরবেও এটা কোন নতুন ঘটনা নয়, নতুন আইনও নয় এটি, কিংবা শুধু যে বাংলাদেশী হওয়ার কারনে এ শাস্তি প্রয়োগ করা হয়েছে তাও নয়। বরং এক’ই দিন এক’ই স্থানে এক সৌদি নাগরিকেরও এক’ই কায়দায় মৃত্যুদন্ড কার্য্যকর করা হয়েছে। সৌদিআরবে রাষ্ট্রিয় ভাবে কোআনের আইন অনুসরন করা হয় এটা আমরা জেনে বুঝে সেই আইন সম্পুর্ণ রুপে মেনে চলার অঙ্গিকার করেই এখানে এসেছি। আর নির্দোষ কাউকে তো শাস্তি দেয়া হয় নাই। তারা যে খুন করেছে তার স্বাক্ষ্য প্রমান এবং স্বীকারোক্তি সব কিছু পাওয়ার পরে দীর্ঘ্ চার বছরাধিককাল ধরে বিচার কাজ চলার পরে আল্লাহর আইন অনুযায়ী’ই শাস্তি কার্য্যকর করা হয়েছে। আল্লাহর আইনের ব্যপারে কেউ কেউ চরম ঐদ্ধৈত্যপূর্ণ্ মন্তব্য করেছেন, যাদের নাম দেখে মুসলিম’ই মনে হয়। কিন্তু এ নাম পরিচিতি যে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া, তা বুঝা যায় মুসলিম হয়েও আল্লাহ, তার রাসূল (সাঃ), কোরআন এবং সর্বোপরী ইসলাম এর ব্যপারে তাদের চরম অজ্ঞতা আর ঔদ্ধৈত্য দেখেই। প্রকৃত অর্থে মুসলিম মানে তো হচ্ছে আত্মসমর্পণকারী, আল্লাহর আইন বা হুকুমের কাছে এবং কোন দ্বিধাহীন চিত্তে। সাধারনতঃ একজন মানুষ যখন অন্য মানুষ কর্তৃক অত্যাচারের স্বীকার হয়, তখন এটা তার ন্যায্য দাবী বা হক হয়ে যায় যে তাকে যে ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে এবং এর কারনে সে যে রকম কষ্ট পেয়েছে, সেই অত্যাচারকারীও যেণ ঠিক তেমনি শাস্তি পায়, যাতে সে তেমনি কষ্ট পায়। মানুষের প্রতি মানুষের এ দাবী বা অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তো দেশে দেশে এত আইন আদালত, কোর্ট্ কাচারী, জর্জ্ ব্যারিষ্টার। মানুষের তৈরী করা আইনে অসম্পুর্ণতা ও অসংগতি থাকাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহ্ পাকের প্রিয় এবং শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানুষের জন্য কোন্ ধরনের আইনে সুবিচার নিশ্চিত হবে, কি শাস্তি প্রযোজ্য হবে, সর্বোপরী সমাজে বির্শৃংখলা ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী দুষ্ট ক্ষতগুলোকে কি ধরনের শাস্তির মাধ্যমে নির্মুল করে সমাজে শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা যাবে তা স্বাভাবিকতঃই সৃষ্টিকর্তা হিসেবে একমাত্র আল্লাহ্ই যে সর্বাপেক্ষা নির্ভুল ও সন্দেহাতীত ভাবে বলতে পারবেন, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আল্লাহ্ পাক এ কথাটাই সূরা ত্বীন এর মধ্যে কি ‍সুন্দর ভাবেই না ব্যক্ত করেছেন – “আমি মানুষকে পয়দা করেছি সর্বোত্তম কাঠামোয়। তারপর তাকে উল্টো ফিরিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তাদেরকে ছাড়া, যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করতে থাকে। কেননা তাদের রয়েছে এমন পুরস্কার যা কোনদিন শেষ হবে না। কাজেই ( হে নবী !) এরপর পুরস্কার ও শাস্তির ব্যাপারে কে তোমাকে মিথ্যাবাদী বলতে পারে? আল্লাহ কি সব বিচারকের চাইতে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন ?” মানুষ হত্যার মত জঘন্য অপরাধের ব্যপারে আলকোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে - “নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোন কারণে যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলো সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কারো জীবন রক্ষা করলো সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষের জীবন রক্ষা করলো।" সূরা মায়েদা ৩২
আর যেহেতু মানুষের সাধারণ প্রবণতা তথা চাহিদাই হচ্ছে একজন অত্যাচারী বা অন্যায়কারীর শাস্তি তাই’ই হোক, যে কষ্ট তার অত্যাচার বা নিপীড়নের কারনে অন্য একজনকে ভোগ করতে হয়েছে, সেই হিসেবে ‘প্রাণের পরিবর্তে প্রাণ’ নেয়ার জন্য আল্লাহর যে নির্দেশ তা অবশ্যই যথার্থ। এর আর কোন বিকল্প হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে একজন অপরাধী বা খুনী ক্ষমা পেতে পারে কেবল সেই নিপীড়িত বা নিহত ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকেই। কোন বিচারক বা রাষ্ট্রপ্রধান কে এ ক্ষেত্রে ইসলাম কোন এখতিয়ার দেয়নি। কারন এ দাবী বা অধিকার নিপীড়িত বা নিহত ব্যক্তির হওয়াই যুক্তিযুক্ত যা মানুষের হক্ব হিসেবে ইসলাম গণ্য করে। আর শেষ বিচারের দিনেও কোন মানুষের হক বা অধিকার স্বয়ং আল্লাহ ও ক্ষমা করবেননা যতক্ষণ না তার হক্বদার বা দাবীদার ক্ষমা না করবে। এ হিসেবে ‍উক্ত আট ব্যক্তির মৃত্যুদন্ড ক্ষমা করার এখতিয়ার ছিল সম্পুর্ণরুপে সেই নিহত মিশরী ব্যক্তির পরিবারের’ই। দীর্ঘ চার বছরে এ ক্ষমা আদায় করার ব্যপারে আসামীদের পক্ষ থেকে সরকার বা স্থানীয় দূতাবাস প্রয়োজনে মিশরস্থ বাংলাদেশী দূতাবাসের মাধ্যমে ঐ পরিবারের কাছ থেকে ক্ষমা আদায়ের ব্যপারে আরো জোরালো তৎপরতা চালাতে পারতো। প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্য্যকর করার যৌক্তিকতাও অনেক। এখানে এর একটা মাত্র প্রত্যক্ষ এবং তাৎক্ষনিক সুফল আমি উল্লেখ করতে চাই। বিগত কয়েক মাসে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনা গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশী পরিবার ও ব্যবসায়ীরা তো বটেই, অবাংলাদেশী পরিবার গুলো পর্যন্ত একটা আশংকা আর আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করছিল। অনেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছিল বাইরের গেইটে তালা লাগানো, ঘরের দরজায় অতিরিক্ত লক লাগানো, গেইটে সিসিটিভি ক্যামরা লাগানো ইত্যাদির মাধ্যমে। গত শুক্রবারের শিরচ্ছেদের মাধ্যমে ঐ ডাকাত দলের মৃত্যুদন্ড কার্য্যকরের সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর সবার মধ্যে একটা স্বস্তি এবং হাঁফ ছেড়ে বাঁচার একটা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারন আগামী কয়েক বছর এ শাস্তির ঘটনা যারা নিজ কানে শুনেছে বা মিডিয়াতে প্রচার হতে দেখেছে তাদের কেউ’ই একান্ত মস্তিষ্ক বিকৃতি না ঘটলে কিংবা নিতান্ত আত্মাহুতি দেয়ার সিদ্ধান্ত না নিলে এ ধরনের ঘটনায় জড়িত হওয়ার সাহস পাবেনা। এখানেই আল্লাহর আইনের ব্যাপকতা, কার্য্যকারীতা, কল্যাণ এবং স্বার্থকতা।
সুতরাং এসব ব্যপার নিয়ে অনভিপ্রেত কোন মন্তব্য বা বক্তব্য দেয়ার পূর্বে এর সুদূর প্রসারী প্রভাব মাথায় রাখা উচিৎ। সর্বোপরী এ রকম সমস্যার মূল উৎস যেখানে সে জাতীয় জীবনে আমাদের সঠিক শিক্ষা এবং তার চর্চার ব্যপারে আরো সিরিয়াস হতে হবে, বিশেষ করে জাতীর কর্ণধারদের। তাহলেই কেবল এ ধরনের জীবন বিধ্বংসি ঘটনার পূনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব। সাথে সাথে জাতীয় স্বার্থে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীদের চলমান সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের ব্যপারে কার্য্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা ও পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

রিয়াদস্থ কিছু বাংলাদেশী দুবৃত্তের সন্ত্রাসী কার্য্যকলাপের নমুনা হিসেবে সবার জ্ঞাতার্থে এখানে একটা ভিডিও ফুটেজ সংযুক্ত করা হলো। এ রকম ঘটনা আমাদের কাছে খুব’ই মা’মুলী হতে পারে, কারন আমরা জাতীয়ভাবে এসবে অভ্যস্থ। কিন্তু বিদেশে বিশেষ করে সৌদিআরবের মত জায়গায় এ রকম ঘটনা বাংলাদেশীদের ভাবমূর্তি এবং অবস্থানকে যে কত নীচে নামিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার যোগ্য না। এখানে বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিক রয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশীরা ৫ম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে একমাত্র বাংলাদেশীদের মধ্যেই এই রকম সন্ত্রাস, মারামারি, কাটাকাটি’র (তাও আবার প্রকাশ্য দিবালোকে, অন্যান্য সব দেশীয়দের চোখের সামনে) সংস্কৃতি বিরাজমান, যা অন্য দেশীরা দেখে আর মন্তব্য করে, ‘ছিঃ বাঙ্গালি এত খারাপ’!!!! তখন রিপরাধ বাংলাদেশীর লজ্জায় এবং আতংকে ঘরের বাইরে আসতে পর্যন্ত কুন্ঠাবোধ করে। আমাদের হুঁশ আসা দরকার। অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর আগে নিজেদের শুধরানোর জন্য আরো বাস্তববাদী হওয়া দরকার।রিয়াদে বাংলাদেশী দুবৃত্তদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড


মন্তব্য

 তাপস শর্মা (অফ লাইন)  এর ছবি

অনেক নতুন তথ্য পেলাম। এটা তো ঘটনাটাকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিল। যদি তা সত্য হয়ে থাকে তাহলে তা কিন্তু বিকল্প চিন্তার কথা ভাবাবে।
লেখকের নাম কোথায় ?
----------------------------------------------------------------------------------------
চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির

অনাহুত বা রবাহুত এর ছবি

আপনি যেহেতু সৌদী আরবে আছেন তাই আপনার কাছ থেকে ঘটনাটির একটি পুর্ণাঙ্গ বিবরণ চাচ্ছি। কি করে আটজন শ্রমিক(আপনার ভাষায় ডাকাত) মিশরীয়কে হত্যা করলো? তাদের মোটিভ কি ছিলো? এ সংক্রান্ত সৌদী পত্র-পত্রিকার লিঙ্ক দিতে পারবেন? বিচার ব্যবস্থা কি স্বচ্ছ ছিলো? আসামীদের জন্য কি দোভাষী এবং উকিলের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো? সৌদী/শরীয়া আইনে আসামীর জবানবন্দি কীভাবে নেওয়া হয়? সে কি তা পরে ফোর্সড টর্চারের অজুহাতে উইথড্র করতে পারে? কারা কারা সাক্ষী ছিলো এই হত্যাকাণ্ডের? এই ডাকাতদলের আর যারা বাকি আছে(যদি থাকে) তারা এখন কোথায়?

আপাতত এগুলোর উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। তারপরে বাদবাকী আলোচনা হবে।

ধন্যবাদ।

দিগন্ত বাহার * এর ছবি

লেখকের নাম কী?

আজাদ মাষ্টার( রিডার/কমেণ্ট)  এর ছবি

এই একই পোষ্ট তো সচলায়তনে দেখার আগে গতকাল সোনা ব্লগেও ষ্টিকি পোষ্ট হিসেবে দেখলাম

সচলায়তনের নীতিমালা অনুযায়ী কোন পোষ্ট সচলায়তনে আগে দিতে হয় এরপর অন্য ব্লগে ২৪ঘণ্টা পরে এই নীতিমালা কি পরিবর্তন হয়ে গেছে নাকি ?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপনার লেখায় আপনি অনেকগুলো ব্যপারে কথা বলেছেন। সেগুলো পরস্পর সম্পর্কিত। লেখাটা আসলে ভালো হয়েছে। প্রশংসা প্রাপ্য আপনার।

কিন্তু আপনার দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে পুরোপুরি একমত নই।

প্রথমত, আপনি বলতে চান, ৮ বাংলাদেশীর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এতো সোরগোল কেন! এটা তো বিচার। অন্যায়কারী শাস্তি পেয়েছে...

>>> বিচার এবং শাস্তি নিয়ে আসলে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে বিচার প্রকৃয়ার স্বচ্ছতা এবং বিচার কার্যকর করার পদ্ধতিতে। ভীনদেশি এই লোকগুলো কি যথেষ্ট আইনি সহায়তা পেয়েছিল? দেশী এবং সৌদি সরকার কী তাদেরকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল? যদি বিচার প্রকৃয়ায় স্বচ্ছত থাকার পরেও তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে থাকে তাহলেও, দিনদুপুরে মানুষের সামনে মাথা কেটে ফেলা তো মধ্যযুগীয় বিচার ব্যবস্থার চাইতেও নৃশংস। সেটা তো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না। (মৃত্যুদণ্ড ব্যপারটাই তো পশুবৃত্তি। তবে সে বিষয়ে দ্বিমত থাকতে পার। থাকুক।) এইরকম শাস্তি প্রদানের যদি ভালো দিক থেকে থাকে তাহলে এর চাইতেও ভালো পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে,

১. এক ইঞ্চি ইঞ্চি করে চামড়া ছিলে ফেলে বিভিন্ন মশলা মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে মারা।
২. একটু একটু করে পুড়িয়ে মারা। ধরেন একটা একটা করে আঙুল পুড়িয়ে ফেলা হলো।
৩. শকুন জাতিয় পাখি বা অন্য কোনো পশু দিয়ে আস্তে আস্তে খাইয়ে দেয়া।
৪. প্রমাণ সাইজের ব্লেন্ডার বানিয়ে ব্লেন্ড করে ফেলা।
৫. ... (আর মনে করতে পারছিনা। এই ব্যপারে আমার কল্পনা শক্তি দুর্বল)

আপনি কী বলেন? আরো বেশি আফটার ইফেক্ট রেখে তো মানুষ মারা যায়, নাকি? তাতে অপরাধ আরো কমে।

আপনি বলতে চান, সুধী সমাজ কেন এদের নিয়ে কথা বলছে! আপনাদের দূর্দশা নিয়ে কেন বলছে না...

সুধী সমাজ বলে আসলে আগে থেকে নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী নেই। আপনিও সুধী সমাজের একজন যে আপনার সমস্যাগুলো আজকে বললেন। আপনি এতদিন কেন বলেননি? আমার মতো ব্লগার কীভাবে জানবে বিদেশে আপনি কী কী সমস্যায় ভুগছেন? বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজের সামনে আপনাদের দুঃখের কথা কীভাবে আসবে? আপনার অভিযোগ আছে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে, সেই অভিযোগ সবার। সেটা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু কথা বলার দায়টা আপনি কেন অন্যের উপর চাপাচ্ছেন? আপনারা কেন কথা বলছেন না? আপনারা ২০ লক্ষ বাঙালি যেখানে থাকেন সেখান থেকে আমার দীর্ঘ ব্লগজীবনে আমি এই একটিমাত্র ভালো লেখা পড়লাম। কেন? এই দায়টা কার? মানুষ আপনাদের কথা কী আপনাদেরকে ফোন করে জানবে?

আপনি বলেছেন, পরের দুঃখে কাঁদছি না, কেন নিজের দুঃখে কাঁদছি!

এই দায়টা আপনার এবং আমার দুজনেরই। সোমালিয়ায় হাজারে হাজার শিশু মরে গেল না খেয়ে। আপনি তো সে বিষয়ে কিছু লিখলেন না! আপনি লিখলেন তখন যখন আপনার নিজের গায়ে কিছু লেগেছে। কেন? এটা দ্বিমুখীতা নয়? আপনি তো কুয়েতে, আরব আমিরাতে, কাতারে থাকা বাঙালিদের দুর্দশা নিয়ে কিছু বললেন না! কেন? জবাবটা সহজ এবং স্বাভাবিক। আপনজনের ব্যপারে আমরা বেশি স্পর্শকাতর। নিজের ব্যপারে সবচে বেশি।

আপনি ধর্ম বিষয়ে কিছু কথা বলেছেন যেটা নিয়ে তর্কের অবকাশ আছে। সেদিকে না যাই। সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যপারেই আজকে কথা হোক। কেবল বলে যাই, কার নাম শুনে মুসলমান মনে হয় এবং তিনি কী মন্তব্য করছেন সেটা সে বিষয়ে আপনার কোনো মতামতের প্রয়োজন নেই। আপনার মতামতে কারো কিছু যায় আসেনা। কে মুসলমান আর কে নয় সে বিষয়েও আপনার কোনো বিচারের ধার ধারেনা কেউ। আপনার ধর্মবিশ্বাস আপনার থাকুক। সেটা নিজের কাছেই রাখুন। এখানে সবাই যার যার মতামত দেন। এবং একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবেই তাঁর মত গ্রহন করা হয়। তিনি কোন ধর্মের, বর্ণের, জাতির, গোষ্ঠীর তাতে কারো বিশেষ কিছু যায় আসে না।

কোনো ব্যপার নজর এড়িয়ে না গেলে আপনার আর সব মতে সহমত প্রকাশ করলাম।

আপনার লেখাও বেশ লাগল। কেবল "প্রধানতম" কথাটা খুব আটকেছে। প্রধান মানেই সবার উপরে। তম জুেড় দিয়ে প্রধানকে আরো উপরে তোলার প্রয়োজন নেই দেঁতো হাসি প্রধানতম কথাটা ব্যকরণগত ভাবে সঠিক নয় বলেই জানি।

আপনার কিছু মতের সঙ্গে যদিও একমত নই। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। আরো লিখুন আপনাদের কথা। সচলে স্বাগতম।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কর্ণজয় এর ছবি

সৌদি আরবে সম্প্রতি আট বাংলাদেশীর শিরোচ্ছেদ নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে আপনার এই লেখাটি একটি অন্যমাত্রা তৈরী করেছে । আপনার লেখার কিছু অংশের যৌক্তিকতা আমার কাছে বাস্তব মনে হয়েছে। আমাদের দেশের অপরাধপ্রবণ মানুষের কিছু অপরাধের ফলে আমাদের দেশের যারা সৎ প্রবাসী আছেন - তারাও যে নানা সমস্যার মধ্যে পড়েন এটিও একটি পুরনো বাস্তবতা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদেও প্রিয় মাতৃভূমির সন্মান এবং মর্যাদা ক্ষুন্ন যে আমরাই করেছি - সে বিষয়টিও অজানা নয়। কেউ কোন অপরাধ করলে তার বিচার এবং বিচারে যদি সে দোষী শাব্যস্ত হয় তবে দার অপরাধের জন্য তাকে শাস্তি প্রদানের বিধান - সেটিও মানব সভ্যতার একটি প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে অপরাধী বাংলাদেশীদের বিচার এবং বিচারের শাস্তি নিয়ে বলবার কিছু নেই। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে অবশ্য ভাববার অবকাশ আছে। কারন বিচার এবং শাস্তির ধারণাটি কোন যুগে এক ছিল না। কোন দেশেও নয়। সৌদি আরবে হত্যার দায়ে আট বাংলাদেশীর অপরাধ এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় যদি তারা দোষীও প্রমাণিত হন তবুও এই বিষয়টি সবার মধ্যে যে আলোড়ন তুলেছে সেটি এটা নয় যে তারা কেন শাস্তি পেল- বরঞ্চ এর কারণটি যে প্রক্রিয়ার মধ্যে তাদের শাস্তি কার্যকর হলো সেটির অমানবিক রূপ। আপনার লেখায় এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান আপনি স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। আপনি মুলত এ বিচারিক প্রক্রিয়ায় ইসলামী আইনের যে আদি রূপ সেটিকে অপরিবর্তনীয় বলে মনে করেন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার কাছে এ বিচার ন্যায্য এবং যথার্থ।
কিন্তু ধর্ম থেকে সরে না গিয়ে আপনি যদি ধর্মের মূল বাণীকে আত্মস্থ করেন তাহলে দেখবেন এই ব্যাপারটিকে আরেকটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়।
পবিত্র হাদীস শরিফের একটি বাণী - আমাদের সবারই কম বেশি জানা। “ বিদ্বানের কলমের কালি- শহীদেও রক্তের চেয়েও পবিত্র।” - তারই সাথে সম্পূরক আর একটি আয়াতের কতাও আপনার আশা করি অজানা নয়। “একরাতের জ্ঞানার্জনের যে নেকী তার পরিমাণ ৮০ রাত্রি ইবাদতের চেয়েও বেশি।
এক শ্রেণীর ধর্মবেত্তা বিদ্যা এবং জ্ঞান বলতে কোরাণ এবং ইসলামী শিক্ষার কথাই বুঝিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে এই হাদিসটি প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
“জ্ঞান অর্জনের জন্য চীন পর্যন্ত যাও।”
আমরা জানি চীনদেশ কখনই মুসলমান বা ইসলামের অনুসারী ছিল না। তাহলে একটি অমুসলিম জাতির কাছ থেকে জ্ঞান আহরণের জন্য যে নির্দেশনা তার কি অর্থ - এটি আমরা অনেক সময়ই ভেবে উঠতে পারি না।
সুরা বাকারার ১৪৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে - “ আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থি জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি যাতে তোমরা মানবজাতির জন্য সাক্ষী হতে পারো।”
আপনি যদি কোরাণকে ভালভাবে বুঝতে চেষ্টা করেন তাহলে দেখবেন - এটি অনড় কোন বিধান নয়। এটি একটি দর্শন। কোরণের ছত্রে ছত্রে আপনি এর নমুণা খুজে পাবেন। আপনি খুজে পাবেন - সুরা আনআমের ১০৮ আয়াতে বর্ণিত আছে -আর তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকে তাদেরকে তোমরা গাল দেবে না, তা হলে- তারা অজ্ঞানতাবশত আল্লাহকেও গাল দেবে। এভাবে প্রত্যেক জাতির চোখে তাদের কার্যকলাপ শোভন করেছি। তারপর তারা তাদেও প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাবে। তখন তিনি তাদেও কৃতকার্য সন্মন্ধ্যে জানিয়ে দেবেন।
সুরা মায়িদায় বলা হয়েছে (৭৭ নং আয়াত) “ বলো - হে কিতাবীগণ! তোমরা তোমাদেও ধর্ম সম্পর্কে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না।”
আপনি পবিত্র কোরাণের এই আয়াতটিও হয়তো শুনে থাকবেন - যেখানে বলা হয়েছে পৃথিবীতে আমি অসংখ্য জাতি তৈরী করেছি যেন তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে দাড়ায়। তা না হলে - সমস্ত মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা কিংবা মসজিদ তারা ধ্বংস করে ফেলতো- যেখানে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হয়।
আমার এই কথাগুলি তুলবার মুল কারণ হচ্ছে - ইসলাম বা কোরাণ একটি মধ্যবর্তী বা মধ্যপন্থার ব্যবস্থা। আর মধ্যপন্থা বলতে কি বোঝায়। যা আসলে দুটি বিপরীত মতের মধ্যে একটি সমঝোতামূলক অবস্থান। অর্থাৎ এটি অনড় কোন বিষয় নয়। এর আর একটি নিদর্শন আমরা ইসলামের ইতিহাসেই পেয়েছি।
আপনি নিশ্চয় একজন মুসলমান হিসেবে কোরাণ পাঠ করেছেন। অর্থ বুঝেছেন। এবং আপনি নিশ্চয় তাহলে দেখবেন দাস এবং দাসীদেও সাথে কিরূপ আচরণ করতে হবে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া আছে। আর আপনি আল্লাহর অনুসারী হিসেবে মুসলমানদের প্রিয় নবীর বিদায় ভাষণটিও পড়েছেন। তাহলে আপনি নিশ্চয় এটিও জানেন যে - হযরত মুহাম্মদ দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করে গিয়েছিলেন। কোরাণে কিন্তু কোথাও দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ করা হয় নি। হযরতের বিদায় ভাষণকে ইসলামের অনুসঙ্গ বিবেচনা করলে বলা যায় - সময়ের অভিজ্ঞানের প্রয়োগ ইসলামে সিদ্ধ।
ইসলামের এই সচলতাকে ধরলে আমরা সৌদি আরবে যে ইসলামের প্রচলন দেখি সেটি ইসলামে যে মধ্যপন্থার কথা বলা হয়েছে সেটির বিরোধী। কারণ সৌদি আরব এবং তার ইসলাম - মানুষের জ্ঞানকে এবং প্রগতিটাকে আত্মস্থ করার ব্যাপারে কঠোরভাবে বিরুদ্ধবাদী যা ইসলামের আদর্শেরই বিরোধিতাস্বরুপ। সৌদি আরব সেই ইসলামের অনুসারী যা অন্ধ সংস্কারাচ্ছন্ন - যে সংস্কারে আবদ্ধ হওয়ার বিপদ সম্পর্কে ইসলামে বারবার বলা হয়েছে।
এই আলোচনাটি আপনার কাছে অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি একটু খোলামনে বিবেচনা করেন - - এই প্রকাশ্য শিরোচ্ছেদ প্রথা আসলে কি এই সময়ে গ্রহণযোগ্য কিনা তবে দেখতে পাবেন যে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি অমানবিক রূপ রয়েছে যা মানুষের আত্মাকে বিপর্যস্ত করতে পারে। প্রথমত আমরা মানুষেরা সময়ের পরিক্রমায় জেনেছি – মানুষের মন কতভাবে প্রভাবিত হতে পারে। এই প্রকাশ্য শিরোচ্ছেদ হয়তো অপরাধীর শাস্তি বিধান করলো, কিন্তু আরও হাজারো নিষ্পাপ মানুষের মধ্যে মানুষ হত্যার একটি চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দিল যার কারণেন তার মধ্যে হত্যা করার মানসিকতা জন্ম দিতে পারে। কারণ আমরা ইতিহাসের আলোকে দেখেছি - শাস্তি দিয়ে অপরাধ কমানো যায় না। মৃত্যুও ভয় বুকে ধরেই মানুষ অপরাধে ঝাপিয়ে পড়ে এটিও আমরা দেখেছি। বরঞ্চ মানুষের মধ্যে শূভ নিদর্শন বেশি করে তুলে ধরলেই তার মধ্যে শূভ প্রবণতা জন্ম নেবে যা তাকে অপরাধ থেকে দুরে রাখবে। এই চিন্তার বাস্তবতা এখন হয়তো নেই- কিন্তু আগামী দিনে অপরাধীর শাস্তির বদলে মানসিক চিকিৎসা ব্যবস্থাই হয়তো বিচারিক প্রথা হয়ে দাড়াবে।
মূলত এটা সমাজের সেই সচলতা যা মানুষ অনুভব করেছে জ্ঞানের স্বাভাবিক বিকাশের ভেতর দিয়ে। এই কারণে সৌদি আরবের এই প্রথার বিরুদ্ধে মানুষের যে ক্ষোভ- তা শুধু এই আটজনের মৃত্যু শিরোচ্ছেদের ঘটনার কারণেই বিস্ফোরিত হয় নি বরং এটা সৌদি আরব এবং তার মত যারা সংস্কারচ্ছন্ন ধর্মীয় বলয়ের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ঘৃণার প্রকাশ।
কারণ সমস্ত পৃথিবীকেই এই নিশ্চল অনড় সংস্কারাবদ্ধ ধর্মীয় গোড়ামী এক বিষবাষ্পের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
[বাংলাদেশীদের এই অপরাধ প্রবণতার যে ব্যাপারটি আপনি বললেন তার সাথে আমি খানিকটা একমত। আমার ব্যক্তিগত ধারণা এই অঞ্চলে আমাদের মধ্যে অল্পতে বড়লোক হওয়া, অন্যের সম্পত্তি গ্রাস করে নেয়ার প্রবণতা জন্ম নিয়েছিল ৪৭ এর দেশভাগের সময়- হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখলের প্রবণতার ভেতর দিয়ে। এমনকি যে দুর্বল মুসলমান- জমি দখলের সামর্থ্যটা যার ছিল না- সেও হাত বাড়িয়েছিল হিন্দু প্রতিবেশীর মুরগীটার দিকে। এই লোলুপ ভক্ষক সংস্কৃতির জের এখনও আমরা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি- রাজনীতিতে এবং ব্যক্তিগত চরিত্রের মধ্যে। একটা উদার অসাম্প্রদায়িক মানবিক ধর্মবোধই হয়তো আমাদের এর থেকে রক্ষা করতে পারবে, অন্যকিছু নয়...]

ফেরদৌস আহমেদ এর ছবি

ভাই সৌদি-প্রেমী,
আল্লাহ্‌র এই কল্লা কাটার আইন ব্রিটিশ, আমেরিকানদের বা ভারতীয়দের উপর প্রযুক্ত করার সাহস সৌদিদের নেই কেন? আপনার ভাষ্যমতে এই আটজনকে কতল করার কারণে সৌদি আরবে ভবিষ্যতে খুন-খারাবী বন্ধ হয়ে যাবে, মানুষ অপরাধ করতে ভয় পাবে। ভাইজান মনে হয় মাথা গরম করে লেখাটা লিখতে গিয়ে কিছু পরিসংখ্যানের উপর চোখ বুলাতে ভুলে গেছেন। চোদি আরবে প্রতিবছর মানুষের কল্লা, হাত, পা কাটা যাচ্ছে। তার মানে এই কাটাকাটি আপনার পেয়ারের মরুভূমি থেকে অপরাধকে তাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। কল্লা এবং হাত-পা কাটাকাটি চোদি আরবে কিন্তু কয়েক হাজার বছর ধরে বিদ্যমান।

ভাই ছোট বেলা থেকে সবচেয়ে বেশি পড়া বইটা হল গিয়ে আপনার ঐ পবিত্র গ্রন্থখানি। আপনি সুবিধামত একটি সুরা উল্লেখ করেছেন। ইসলামে অবিশ্বাসীদের হত্যা করার ব্যাপারটা জায়েজ করার জন্য কতগুলো পংক্তি আছে এই মহাগ্রন্থে তা আপনিও যেমন জানেন, আমিও জানি। পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশের ও বেশী মানুষতো ভাইজান অবিশ্বাসী, আই মিন কাফের। অবিশ্বাসীরা তো মানুষ, নাকি? তাদের হত্যা করাটা কি ভাইজান নরহত্যা নয়? তাদের মধ্যে অনেক ভাল মানুষও ছিলেন, এবং আছেন। মাদার তেরেসা নিশ্চয়ই খারাপ ছিলেননা, হোকনা নাসারা।

অপরাধীর গা বাঁচানোর জন্য কেউ কান্নাকাটি করেছেন বলে মনে হয়না, আপনি ওরকমটাই বুঝবেন কারণ আপনি অন্ধ চোদি ভক্ত। সমালোচনা করা হয়েছে প্রকাশ্যে বর্বর ভাবে মানুষ জবাই করার এই পদ্ধতিটাকে। ফাঁসী ও শাস্তি হিসেবে এখন সারা বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ, আপনার চোখকান খোলা থাকলে নিশ্চয় এ ব্যাপারে জানার কথা। সমালোচনা করা হয়েছে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে। ২০০৭ থেকে চলছে বিচার, কই আমরা কেউ জানলাম না কেন? এটার জন্য আমাদের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতিকে সমালোচনা করা হয়েছে। তারা যে আত্ম-পক্ষ সমর্থণের সমস্ত সুযোগ পেয়েছেন এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত হলেন কীকরে, আপনি কি সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির ছিলেন ঐ সময়ে? ঐ আটজনের সবাই যে এই হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল, তাদের কে যে ফাসানো হয়নি ( যেহেতু তারা বিশ্বের দরিদ্র এবং চোদিপ্রেমী একটা দেশের অভিভাবকহীন নাগরিক ) তার ব্যাপারে আপনি কতটুকু নিশ্চিত?

আপনি ভাই চোদি আরবেই থাকুন, কোন সমস্যা নেই, তবে আপনার কল্লাটাও যদি কোনদিন চোদিরা নামিয়ে দেয়, সেই বর্বরতার জন্য প্রতিবাদ এবং সমালোচনা করবে কিছু মানুষ ( যারা আপনার মতন কল্লা কাটার আল্লার বিধানকে বর্বরতা বলে জানবে।)

সন্দেশ এর ছবি

এই পোস্টটি অন্যত্র প্রকাশিত লেখা সচলায়তনে পূনঃপ্রকাশিত হয়েছে বিধায়, নীতিমালা অনুসারে মন্তব্য বন্ধ করে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। অনুগ্রহ করে ভবিষ্যতে এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখবার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।