নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচন

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর (তারিখ: সোম, ৩১/১০/২০১১ - ২:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন শেষ। বেসরকারীভাবে নির্বাচিত আইভীকে অভিনন্দন।

দু'একদিনের মধ্যে প্রচার মাধ্যমগুলোর মাতম থামবে আশাকরি। পত্রিকাগুলো যথাযোগ্য গুরুত্ব দিয়ে সারাদেশের অন্য অন্য খবর ছাপবে, এটাও আশাকরি।

প্রথম আলোর নেতৃত্বে প্রচার মাধ্যম এবার স্পষ্টভাবেই আইভীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছে। শামীমের প্রতি ছিলো বিপক্ষপাতিত্ব। মন্দ প্রার্থীর বিপরীতে সাধু প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে ভোটারকে প্রভাবিত করার এই প্রচেষ্ঠা আপাত দৃষ্টিতে সাধু হলেও প্রক্রিয়াটা বিপজ্জনক। ভবিষ্যতে অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়। এবারও যে হয়নি তা নয়। আইভীকে মহান করতে শামীমকে যতোটা সন্ত্রাসী এবং গডফাদার হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে, বিপরীতে তৈমুরের দূর্ণীতিকে ততোটা প্রকাশ্যে আনা হয়নি।

আইভীর সততাটুকুই ছিলো ট্রাম্পকার্ড। অসৎ রাজনীতিকদের ভীড়ে শুধু এটুকু সম্বল করেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করা সম্ভব, তা দেখা গেলো। যোগ্যতার প্রশ্ন উঠলোই না। একটা টিভি চ্যানেলের নির্বাচনী বিতর্কে আইভীকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো গত আট বছর মেয়র থাকার সময় নারায়ণগঞ্জের কী উন্নয়ণ তিনি করতে পেরেছেন? বিস্ময়কর হলেও সত্য যে এর জবাবে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়নের কথা তিনি নিজেই বলতে পারেননি। দোহাই দিয়েছেন নিজের দল ক্ষমতায় না থাকার।
আট বছরে যিনি কিছু করতে পারেননি তেমন, আগামী মেয়াদে তিনি নারায়ণগঞ্জকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিন, এটাই প্রত্যাশা। গতটার্মে আইভীর কাঁধে সারাদেশের জনগনের প্রত্যাশার বোঝা না থাকলেও, এবার কিন্তু রইলো। সঙ্গে শুভকামনা।

এই নির্বাচনে আরো তিনজন প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু তারা এতোটাই অনালোচিত যে বেশিরভাগ মানুষ জানতেই পারেনি নির্বাচনে তাদের প্রার্থীতার ব্যাপারে। জানতে পারেনি তারা সৎ নাকি অসৎ? সন্ত্রাসী নাকি ভালো? সাদা নাকি কালো? যোগ্য নাকি অযোগ্য! তারা প্রচার মাধ্যমের নাগাল পাননি।

নিশ্চিত পরাজয় জেনে সেনাবাহিনীর অজুহাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে বিএনপির তৈমুর। সুষ্ঠু এই নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার চেয়ে পিছিয়ে যাওয়াই ভালো। সেই অর্থে বিএনপিকে সফলই বলা যায়।
সফল আওয়ামী লীগও। রাজনীতি বিবেচনায় শামীম ওসমানকে মনোনয়ন না দিলে ব্যাপারটা ঘোলাটে হয়ে যেতো। এখন আর শামীমের বলার কিছু থাকলো না, কিন্তু আসনটা আওয়ামী লীগের ঘরেই থাকলো। আইভী শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগেরই।
তবে আওয়ামী লীগ হয়তো এ থেকে শিক্ষা নেবে যে ভোটের রাজনীতির রেসিপি এখন পাল্টে গেছে। ভোটার এখন সচেতন। টাকা আর শক্তিকে উপেক্ষা করে সৎ প্রার্থীকে বেছে নিতে শিখেছে জনগন। রাজনৈতিক দলগুলোর একটা বিষয় শেখার সময় এসেছে, এখন ভোটারদেরও নির্বাচনে নিজস্ব এজেন্ডা থাকে। একে মূল্যায়ন করতে না পারলে ভরাডুবি নিশ্চিত।

তবে এই নির্বাচনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় সেনাবাহিনী। প্রত্যাশার পাতে পানি ঢেলে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়নি। তাতে যথারীতি নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলো সবাই, ভোটাররা নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে তো? শামীম দেশসেরা গুণ্ডা, গডফাদার। সে তো সব কেন্দ্র দখল করে এরশাদের মতো 'সিল মারো ভাই সিল মারো' করবে!
সেই আশঙ্কায় নির্বাচন কমিশন আগেই দায় না নেওয়ার ঘোষণা দিলো। বিএনপির তৈমুর ভয়ে ল্যাজ গুটালো।

কিন্তু জনগন পিছু হটলো না। দায় নিলো এবং ভোট দিলো। সেনাবাহিনীর পাহারা ছাড়াই তারা দেশের অন্যতম ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এবং গডফাদার বলে চিহ্নিত প্রার্থীকে পরাজিত করে ছাড়লো। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই।

যদিও সেনাবাহিনী চেয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠির ব্যাপারে সরকারের সম্পূর্ণ নীরব থাকাটা সমর্থনযোগ্য নয়। সেনা মোতায়েন না করার সিদ্ধান্তটি উভয় পক্ষের মিলিত হতে পারতো। অথবা সরকার আগেই জানিয়ে দিতে পারতো। নির্বাচন কমিশনের প্রতি এই উপেক্ষা ভিন্ন অর্থ তৈরি করতে পারে। যাহোক, এটা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। আমরা নাহয় জনতার বিজয়ের কথাই বলি।

এই নির্বাচনে জনগনের বিজয়কে তাই শুধু আইভীর জয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, জনগনের জয় সেনাবাহিনী ছাড়াই দেশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর লোকটিকে ব্যালটের মাধ্যমে হারিয়ে দেওয়াতেও।

বাংলাদেশে এই এক ব্যারাম হয়েছে। সবকিছুতেই সেনাবাহিনীর ডাক পড়ে। দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষপদ থেকে শুরু করে ট্রাফিক পুলিশ যখন জানজট সামলাতে পারে না, তখনও সেনাবাহিনীকে রাস্তায় নামতে হয়। সেনাবাহিনী ছাড়া আমরা আস্থা পাই না। আমরা ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংষ্কার না করে, ব্যর্থতার কারণগুলো না শুধরে সেনাবাহিনীর মলম লাগিয়ে দেশটিকে টিকিয়ে রাখি। এতে যেমন সেই প্রতিষ্ঠাগুলো দিনে দিনে অকার্যকর এবং অথর্ব হয়ে পড়ছে, তেমনি সেনাবাহিনীকেও নিজের কাজ বাদ দিয়ে অন্য অন্য কাজ করতে হচ্ছে! এমনকী প্রায়ই তাদেরকে অংশ নিতে হচ্ছে রাষ্ট্রপরিচালনাতেও!

নারায়ণগঞ্জের মানুষ দেখিয়ে দিলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সেনাবাহিনী ছাড়াই সন্ত্রাসী গডফাদারের বিরুদ্ধে লড়তে পারে ঐক্যবদ্ধ আমজনতা!

অভিনন্দন নারায়ণগঞ্জবাসীদের। আমজনতার জয় হোক


মন্তব্য

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

নজরুল ভাই,
আরো তথ্যমূলক পোষ্ট আশা করছিলাম। আপনার

যদিও সেনাবাহিনী চেয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠির ব্যাপারে সরকারের সম্পূর্ণ নীরব থাকাটা সমর্থনযোগ্য নয়। সেনা মোতায়েন না করার সিদ্ধান্তটি উভয় পক্ষের মিলিত হতে পারতো। অথবা সরকার আগেই জানিয়ে দিতে পারতো। নির্বাচন কমিশনের প্রতি এই উপেক্ষা ভিন্ন অর্থ তৈরি করতে পারে

কথাটা অসাধারন লেগেছে। ভালো থাকবেন ভাই।

কর্ণজয় এর ছবি

সেনাবাহিনী চেয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠির ব্যাপারে সরকারের এই নিরবতা আমার কাছে সরকারের একটি কৌশলগত অবস্থান হিসেবে আমার কাছে ধরা দিয়েছে। ব্যাপারটা এমন-যে,

১. সরকার সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করছে - এই বিশ্বাসটা প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল । সেনাবাহিনী নামলে যে যে বেআইনী কাজ করা যাবে না, সেগুলোর প্রস্তুতি যেন কেউ না নিতে পারে- এই চিন্তা থেকে সরকার এটা করেছে।

২. আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে স্থানীয় নির্বাচনে মোতায়েন করবে না- এই সিদ্ধান্ত আগে থেকেই ছিল।

নিরবতা - দুই সিদ্ধান্তের মিলিত এক সিদ্ধান্তের নাম।

অঅসাধারন এর ছবি

@কর্ণজয়, আমার ভুল হতে পারে, কিন্তু মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে সরকারের সিদ্ধান্তের ইতিবাচক দিক খোঁজার চেষ্টা করছেন আপনি। আমি নিজে যা বুঝেছি তা বলি।

১। সেনাবাহিনী নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল সন্ত্রাসী গডফাদার শামীম ওসমানের সম্ভাব্য বলপ্রয়োগ প্রতিহত করতে। কিন্তু সেনাবাহিনী নামছে না, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে। শীর্ষ নেতাদের সাথে ওসমানের অপ্রয়োজনীয় মাথায় খাতির দেখে আমরা বুঝতে পারি, এই তথ্য তার অজানা থাকার কথা নয়। যারা বে-আইনি কাজ করে বা করার প্রস্তুতি নেয়, তারা গনমাধ্যম থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে, এটা নিশ্চয়ই আপনি বিশ্বাস করেন না?

২। মন্তব্য পরিষ্কার হয় নি। আপনি কি বলতে চেয়েছেন সরকার জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করবে বলে স্থানীয় নির্বাচনে তাদেরকে বিশ্রামে রেখেছে? নাকি সেনাবাহিনী ছাড়া নির্বাচন সফল হলে জাতীয় নির্বাচনে তাদের আর প্রয়োজন পড়বে না?

ভালো থাকবেন

কর্ণজয় এর ছবি

ধণ্যবাদ অঅসাধারন.
আমি সরকারের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার চেষ্টা করিনি। আমি সরকারের একটি সম্ভাব্য চিন্তাভাবনার কথা বলতে চেয়েছি।
প্রথমত নির্বাচনে অনিয়ম ঠেকানোর জন্য সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয় না। সরকারের ইচ্ছা থাকলে সেনাবাহিনী ছাড়াই কারচুপি বা অনিয়ম প্রচলিত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই সম্ভব- এটা এই নির্বাচন শুধু নয়, আগেও আমরা দেখেছি। এখানে সরকারী দলের সমর্থিত একজন প্রার্থীকে কারচুপি ঠেকানোর জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন সরকারী ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতি হতো। জাতীয় নির্বাচনের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যঅপার। এরপরও সেনাবাহিনী যে মোতায়েন করা হবে না এটি গোপন করার উদ্দেশ্য হলো - আইভীকে চাঙ্গা রাখা। যেই কৌশল ফলপ্রসু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এবং সরকার নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সেনাবাহিনী ছাড়াই করতে সমর্থ হয়েছে এটি জনগণের সামনে তুলে ধরতে পেরেছে।
আমাদের দেশের বর্তমান রাজনীতির এই সময়ের বাকটিতে এসে আমার কাছে মনে হচ্ছে - আওয়ামী লীগের চিন্তাভাবনার একটি বড় খাত হচ্ছে আগামী দিনের রাজনীতির রূপটি কিভাবে হবে।
আর একটি কথা বলা যেতে পারে, আইভী কিন্তু আওয়ামী লীগেরই মানুষ। কেন্দ্র শামীম ওসমানকে সমর্থন দিলেও এটা নিয়ে একটা ধোয়াশা সে ইচ্ছে করেই তৈরী করেছিল। বি এন পি নির্বাচনে প্রার্থী সরিয়ে নিতে পারে- এই সম্ভাবনা সবসময়ই তীব্র ছিল। তারই বিকল্প হিসেবে আওয়ামী লীগেরই একজন প্রতিদ্বন্দ্বী তারা তৈরী করে রেখেছিলো- আর আইভীই হচ্ছেন সেইজন। এরফলে বি এন পি ছাড়াও একটি নির্বাচন যে জমতে পারে এমন একটি বাস্তবতা আওয়ামী লীগ তৈরী করতে সমর্থ হলো।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা- বি এন পিকে যুদ্ধপরাধ এবং একুশে গ্রেনেড হামলার বিচারের বাস্তবতায় যৌক্তিকভাবে একটি অকার্যকর বিরোধীদলের অনুপস্থিতিতে একটি কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক নির্বাচনে মানুষকে সম্পৃক্ত রাখার কৌশল হিসেবে সম্ভবত আওয়ামী লীগ নিজেদেরই দুটি পক্ষ তৈরী করবে - যাদের একদল শামীম ওসমানের মত আওয়ামী লীগার- যারা আবুল হোসেন বা দুর্বত্ত আওয়ামী লীগারদরে মুখোমুখি হবে আইভীর মত সৎ আওয়ামী লীগাররা।
আওয়ামী লীগের এটি একটি ভাবনা হতে পারে - আবার বলছি আমার মনে হয়-
আগামী নির্বাচন হচ্ছে আওয়ামী লীগের শুদ্ধি নির্বাচন, বি এন পির সাথে আওয়ামী লীগের নয়।
মঙ্গল হোক।

সাফি এর ছবি

প্রচার মাধ্যমের পক্ষপাত দেখানোয় আমি সাধারণত দোষের কিছু দেখিনা, তবে নিরপেক্ষতার লেবাস পরে পক্ষালম্বন করাটা বিপজ্জ্বনক। আজ্কের প্রথম আলোতে ইতিমধ্যেই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা নির্বাচন নিয়ে কী প্রতিবেদন করেছে। আইভীর জেতার কৃতিত্ব বিক্রি করে নিজেদের কিংমেকার হিসেবে আবির্ভাব হতে চাইছে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

নির্বাচন নিয়ে প্রথ্ম থেকেই আগ্রহী ছিলাম, এই আগ্রহ সৃষ্টির পেছনে মিডিয়ার ভূমিকা স্বীকার করি। লেখাটা ভাল লেগেছে, সেই সাথে নির্বাচন যে আরেকটা ভোলা বা মাগুরা হয়নি, এই ব্যাপারটাকে সাধুবাদ জানাই। ভবিষ্যতে প্রার্থী নির্বাচনে দল গুলো গডফাদারদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে আপাতত এইটাই কাম্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই নির্বাচনে আরো দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলো, হাঁস প্রতীক নিয়ে শরীফ মোহাম্মদ আর তালা প্রতীক নিয়ে আতিকুল ইসলাম। তাদের সততা, নির্ভরযোগ্যতা, যোগ্যতা কেমন সে ব্যাপারে আমার কিছু জানা নাই। জানা নাই তারা সন্ত্রাসী কি না, দূর্ণীতিবাজ কি না।
মিডিয়া আমাদের সামনে আইভীকে সৎ বলে প্রচার করেছে বলে আমরা আইভীকেই কেবল সৎ প্রার্থী ভেবেছি। মিডিয়া যদি আওয়ামী লীগ বিএনপির বাইরে শরীফ বা আতিকরে সৎ বলে সমর্থন দিতো, আমরাও তাদের পেছনেই ঝাণ্ডা ধরতাম।
এইটাই মিডিয়ার মনোপোলি... যেখানে আমরা আমজনতা অসহায় মাঝে মধ্যে।

আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও তাই এর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পৃথিবীর অন্যতম সরকার ব্যবস্থা বলে সারাবিশ্বের মডেল হবে বলে নব্বইয়ের পরে জিকির উঠছিলো। সেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কুফল তো আমরা গত টার্মেই দেখলাম!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

নির্বাচন কমিশন যে বিতর্কের আয়োজন করেছিলো তাতে ‌ছয়জন প্রার্থীর যে সংক্ষিপ্ত আমলনামা নির্বাচন কমিশনের বরাত দিয়ে প্রচারিত হয়েছিলো তাতে আইভি ছাড়া বাকি ৫ জনের বিরুদ্ধেই এক বা একাধিক ফৌজদারী মকদ্দমা থাকার কথা বলেছিলো। তাদের উল্লিখিত আয়ের পরিমান এবং উৎস যাইহোক, তাতে যে দুর্নীতির সুযোগ ছিলো বা আছে, এবং সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার তারা করে থাকবেন, সেটাও মোটামুটি স্পষ্ট ছিলো। ছয় প্রার্থীর মধ্যে আইভি'কে বেছে নিতে তাই পাবলিকের সমস্যা হয়নি।

তবে, আলু পেপারকে নিয়ে আমার ভয়টা অন্য জায়গায়। একটা অক্টোপাস পলকে হয়তো বিশ্বাস করা যায়, এই ব্যাটা কখনো সুযোগ পেয়ে মানুষের গলায় ছুরি বসাবে না। কিন্তু একটা বাঁদরের হাতে ক্ষুর চলে গেলে তাতে স্বস্তির কোনো কারণ নেই। সুযোগ পেলেই সে সেটা মানুষের গলায় বসিয়ে দিবে!

মধ্য প্রজন্ম এর ছবি

পৌরসভা আর সিটি কর্পোরেশন দুটোর মাঝে তফাত অনেক। তেমনি কোন কিছু চাইতে চাইতে পাওয়া আর আদায় করে নেয়ার পার্থক্যও অনেক। আজকালকার দিনে ভালো মানুষের পক্ষে নিজের পাওনা টাকা আদায় করাই কঠিন, এলাকার জন্য সরকারের কাছ থেকে কিছু আদায় তো অনেক দূরের ব্যাপার। আজকাল কি আর হাসিমুখে মাথায় হাত বুলালে লোকে কথা শোনে? এ যে ঘোর কলিকাল। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র চাই জাঁদরেল লোক। যে হাসিমুখে বলবে, কাজ না হলে কলার ধরবে, তাতেও যদি না হয় দু'ঘা লাগাবে, প্রয়োজনে দুনিয়া থেকে খালাসের হুমকি দেবে এবং লোকে জানবে যে হ্যাঁ এর পক্ষে সম্ভব। সরকারও এদের ঘাঁটাতে চায় না, কথা শোনে।

আমার কেন জানি মনে হয়, এই ভয়ঙ্কর গডফাদার, দেশসেরা সন্ত্রাসী, জনমানুষের আতঙ্ক শামীম ওসমান মেয়র হলেই ভালো হতো। যে লোক খালেদা জিয়াসহ বিএনপি'র গাড়িবহর ১১ ঘন্টা আটকে রাখার মত সামর্থ্য রাখে, তার সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষমতা অবশ্যই জনগনের প্রিয়মুখ ডাঃ আইভি'র চাইতে অনেক বেশি। টাকা নিজের ট্যাঁকে কিছু ঢুকালেও, নাসিকের জন্য হয়তো বা এই লোকই কিছু করতে পারতো। তবুও দেখা যাক, আইভি কতদূর কি করেতে পারেন। প্রত্যাশার চাপে আবার না বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং-এর মত হাল হয়।

সাফি এর ছবি

হাসুম না কান্দুম? অ্যাঁ

মধ্য প্রজন্ম এর ছবি

যে দেশের যে ধারা ভাই। জনতা তো আইভিকে জিতিয়েই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে কিন্তু এরপর?

হাসেন আর কাঁদেন, ডাঃ আইভির সামনে তাঁর নিজের দলই অনেক ফ্যাঁকড়া নিয়ে দাঁড়াবে। সেই সাথে তাদের আদরের ধন ওসমান পরিবার তো আছেই। কবরীর সাথে গত আড়াই বছরে কি করা হয়েছে আপ্নারা জানেন, তাঁর দল এর কি সমাধান দিয়েছে? আইভি তো আর বাহিনী পোষেন না যে পাল্টা মার দেবেন। দল বলবে এ তোমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিছু নেতা বলবে, দলের কথা তো শোনোনি এখন বোঝো। এবং বারবার আইভিকে চাওয়া পাওয়া নিয়ে দলীয় সরকারের কাছ থেকে ধাক্কা খেতে হবে।

আমি নারায়ণগঞ্জবাসীর কথা ভাবছিলাম। আওয়ামী আমলে শামীমের হাত যে অনেক লম্বা।

অঅসাধারন এর ছবি

ভাই আপনি কি খোকন সাহা?

রু (অতিথি) এর ছবি

বেশ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম ফলাফল দেখার জন্য (উপরে সাফির মতো মিডিয়ার ভূমিকা স্বীকার করি)। শামীম ওসমানের প্রতি দলীয় সমর্থনের কারণ আমি বুঝি নাই।

'ভালো লেগেছে', 'ভালো লিখেছেন' এই জাতীয় মন্তব্য করার প্রয়োজন বোধ করছি না।

স্বাধীন এর ছবি

তবে আওয়ামী লীগ হয়তো এ থেকে শিক্ষা নেবে যে ভোটের রাজনীতির রেসিপি এখন পাল্টে গেছে। ভোটার এখন সচেতন। টাকা আর শক্তিকে উপেক্ষা করে সৎ প্রার্থীকে বেছে নিতে শিখেছে জনগন। রাজনৈতিক দলগুলোর একটা বিষয় শেখার সময় এসেছে, এখন ভোটারদেরও নির্বাচনে নিজস্ব এজেন্ডা থাকে। একে মূল্যায়ন করতে না পারলে ভরাডুবি নিশ্চিত।

সহমত (বাম হস্ত)। স্মাইলি দিতে পারছি না। এরর দেখায়। দেখি মামুরে জানাই।

সচল জাহিদ এর ছবি

চলুক


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অরিত্র অরিত্র এর ছবি

সাবাস, ফ্রুটো জনতা।

পাঠক এর ছবি

এই একটা স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে অলরেডী আওয়ামী মৌলবাদীদের ঢেকুর উঠছে তত্বাবধায়ক আর সেনাবাহিনীর দরকার নেই। ২ টাকা ছাড় দিয়েছি বলে ২ কোটি টাকা বিশ্বাস করে আমানত রাখা ‌যেতে পারে। বিএনপি'র আমলেও তো ঢাকায় হানিফ, চট্রগ্রামে মহিউদ্দীন জিতে গিয়েছিলো অনায়াসে। তাহলে আওয়ামী লীগ কেনো জাতীয় নির্বাচনে ভরসা করতে পারে নি?

এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড়ো লেসন ‌যে নির্বাচন কমিশন আর্মীকে ডাকার পরও সরকার ‌যেতে দেয়নি। বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে স্বাধীন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন সোনার পাথর বাটির চেয়েও অবাস্তব বস্তু। পুরো একটা দেশের মধুভান্ড ৫ বছরের জন্যে মনোপলাইজ করার সু্যোগ কোনো দলই ছেড়ে দেবে না। এখন পর্যন্ত তত্বাবধায়কের কোনো বিকল্প নেই।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সংখ্যাগরিষ্ট ভোট পেয়ে নির্বাচিত সরকারের উপর আস্থা রাখতে না পারলে, অনির্বাচিত অজানা অচেনা কারো প্রতি আস্থা আমি কীভাবে রাখবো?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পাঠক এর ছবি

আমেরিকা, বৃটেনের পত্রিকাগুলো বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের সরাসরি সমর্থন দেয় এবং প্রচারনা করে। আমাদের পত্রিকাগুলো নিরপেক্ষতা আর বস্তুনিষ্ঠতায় অবিচল।একারনেই গনতন্ত্রের পথে আমরা এতো এগিয়ে আছি আর ঐসব দেশে গনতন্ত্রের এতো ঘাটতি।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বাংলাদেশে এই এক ব্যারাম হয়েছে। সবকিছুতেই সেনাবাহিনীর ডাক পড়ে। দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষপদ থেকে শুরু করে ট্রাফিক পুলিশ যখন জানজট সামলাতে পারে না, তখনও সেনাবাহিনীকে রাস্তায় নামতে হয়। সেনাবাহিনী ছাড়া আমরা আস্থা পাই না। আমরা ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংষ্কার না করে, ব্যর্থতার কারণগুলো না শুধরে সেনাবাহিনীর মলম লাগিয়ে দেশটিকে টিকিয়ে রাখি। এতে যেমন সেই প্রতিষ্ঠাগুলো দিনে দিনে অকার্যকর এবং অথর্ব হয়ে পড়ছে, তেমনি সেনাবাহিনীকেও নিজের কাজ বাদ দিয়ে অন্য অন্য কাজ করতে হচ্ছে! এমনকী প্রায়ই তাদেরকে অংশ নিতে হচ্ছে রাষ্ট্রপরিচালনাতেও!

অত্যন্ত যৌক্তিক কথা। সেনাবাহিনীর উপর দেশরক্ষার যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত আছে, তা সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকার কাজটি মোটেই খেলো কাজ নয়। অন্য দায়িত্বে নিয়োগ করা হলে তার পেশাদারিত্বে ছেদ পড়াটাই যে স্বাভাবিক। রাষ্ট্রপরিচালনা তো নয়ই, বরং নিয়মিত প্রশিক্ষনের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এমন কোন কাজেই সেনা নিয়োগ কিছুতেই বিবেচনাপ্রসূত হতে পারে না। এমন নিয়োগ কমে আসলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য সরকারযন্ত্রে ও জনসচেতনতায় ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চারিত হবে। আমার তো এটিকেই সভ্যতার ক্রমমুক্তির পথ বলে মনে হচ্ছে।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

তানজিম এর ছবি

আমার ব্যাক্তিগত মতামত হোল এই খেলায় আসলে শুভবুদ্ধির জয় হয়েছে, সেই সাথে আওয়ামীলীগের দূরদর্শিতারও। শামিমকে দলীয় সমর্থন না দিলে সে তার বাহিনী আর ভাইবেরাদর নিয়ে সংগঠনে তাণ্ডব চালাত। কিন্তু জনমত জরিপে ডাঃ আইভি এগিয়ে ছিল সবসময়। তাই জয়ের ব্যাপারে লিগের উচ্চপর্যায়ে কোন রিস্ক ছিল না। এখন কোন মুখে শামিম নেত্রীর সামনে গিয়ে হম্বি-তম্বি করবে? নির্বাচনে হেরে গিয়ে তার বলার আর কিছুই থাকল না।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ধারনা করছি আমজনতা বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে মুখ ফেরানো শুরু করেছে। বাংলাদেশের সব নির্বাচনি এলাকায় ডা: আইভীর মত পরীক্ষিত জনপ্রিয় নেতা পাওয়া গেলে জনগণ ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলতেও পারে।

নেতা তৈরির ক্ষেত্রে মিডিয়ার ভুমিকা অনস্বীকার্য। ঐতিহাসিক কাল থেকেই সেটা আমরা দেখে আসছি। সে ক্ষেত্রে মিডিয়াকে অবশ্যই দ্বায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে।

এরকম একটা লেখা প্রয়োজন ছিল। আপনাকে ধন্যবাদ।

ছাইপাঁশ এর ছবি

নারায়গঞ্জবাসী তাদের দায়িত্ব পালন করেছে সুন্দর ভাবে। এখন আইভী তার দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে পালন করে দেখাবে এই প্রত্যাশায়।

সুন্দর একটি লেখার জন্য নজরুল ভাই কে ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

নারায়ণগঞ্জের হাত থেকে পাকপরওয়ারদিগার আমাদের হেফাজত করুন। গ্রামেগঞ্জে বাচ্চাদের যখন ঘুম আসে না, তাদের মায়েরা বলে, ঘুমিয়ে পড় বাছা, নইলে নারায়ণগঞ্জ আসবে, নারায়ণগঞ্জ!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আইভীকে মহান করতে শামীমকে যতোটা সন্ত্রাসী এবং গডফাদার হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে, বিপরীতে তৈমুরের দূর্ণীতিকে ততোটা প্রকাশ্যে আনা হয়নি।

আইভীকে যে তৈমুরের সাথে নয় শামীমের সাথে লড়তে হবে সেটা ভোটাররা জানতেন। প্রথম আলো সেখান থেকে বুঝে নিজের উপস্থাপনাকৌশল অমন দাঁড় করালে ভুলটা কোথায় হলো? নাকি শামীমকে এভাবে দেখানোটাকে আপনি ঠিক মনে করছেন না? আর শামীমের এই পরিচয়গুলো তো আজকে নতুন করে বলা কথা নয়। তৈমুরের পরিচয়ও ভোটাররা বহু বছর ধরে জানেন।

আইভীর সততাটুকুই ছিলো ট্রাম্পকার্ড।

বাকী দুই প্রধান প্রার্থীর তুলনায় আইভীর জন্য এটা একটা প্লাসপয়েন্ট ছিল, তবে আইভীর এটাই একমাত্র যোগ্যতা নয়। আইভীর যোগ্যতা কী কী সেটা নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা জানেন, সেটা প্রথম আলোর কাছ থেকে বা অন্য কোন মিডিয়া থেকে তাদের জানতে হবে না।

একটা টিভি চ্যানেলের নির্বাচনী বিতর্কে আইভীকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো গত আট বছর মেয়র থাকার সময় নারায়ণগঞ্জের কী উন্নয়ণ তিনি করতে পেরেছেন? বিস্ময়কর হলেও সত্য যে এর জবাবে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়নের কথা তিনি নিজেই বলতে পারেননি। দোহাই দিয়েছেন নিজের দল ক্ষমতায় না থাকার।

টিভি বিতর্কে কে কত ভালোভাবে কথা বলতে পারেন মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হবার জন্য সেটা আবশ্যিক কোন গুণ নয়। আইভী গত আট বছরে "নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা"র কী করেছেন সেটা নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা দেখেছেন, জানেন। তারা প্রথম আলো পড়ে বা টিভি চ্যানেল দেখে সেসব শেখেননি। বিএনপি আর তত্ত্বাবধায়ক আমলে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভাকে বছরে কতো টাকার বাজেট দেয়া হয়েছিলো সেটা একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। সেই টাকায় কী হয়, আর আইভী কী করতে পেরেছে সেটাও আরেকটু খোঁজ নিলে জানতে পারবেন।

আট বছরে যিনি কিছু করতে পারেননি তেমন, আগামী মেয়াদে তিনি নারায়ণগঞ্জকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিন, এটাই প্রত্যাশা।

এই বাক্যটা কেমন হলো? আশাব্যঞ্জক, নাকি শ্লেষাত্মক? দুইটা কমা দিয়ে ভাগ করা তিন অংশের এই বাক্যটার প্রথম অংশের সাথে শেষাংশের মিলটা কীভাবে হলো?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

১.
শামীমকে এভাবে দেখানোতে দোষের কিছু নেই আপাতত। কিন্তু শুধু শামীমের দোষ দেখায়ে তৈমুরের ব্যাপারে নিরব থাকাটা সুবিধার লাগে না...

২.
নারায়ণগঞ্জবাসী নিশ্চয়ই জানেন, তা নিয়ে আমার প্রশ্ন না। কিন্তু এই নির্বাচনটা শেষ পর্যন্ত শুধু নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক নির্বাচন থাকে নাই। অন্তত আলোচনা হিসেবে জাতীয় পর্যায়েই ছিলো। অন্য প্রার্থীদের অযোগ্যতা যেহেতু আমরা অনারায়ণগঞ্জবাসীরাও জানছি, তাহলে আইভীর যোগ্যতাটুকু কেন জানতে পারবো না? এখানে গোপনীয়তার কী?

৩.
তারমানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারও বিএনপির মতোই আইভীর সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে? এটা ইন্টারেস্টিং
আওয়ামী লীগ সরকার এলো তাও তো কমদিন হয়নি... সেই ফল কী?
আর বাকীটুকুর জন্য ২ নম্বর দ্রষ্টব্য

৪.
যিনি আট বছরে তেমন কিছু করতে পারেননি, তার জন্য শুভকামনা জানালাম... এর বেশি কিছু না... শ্লেষাত্মক না... আশাব্যঞ্জকও না... শুধুই শুভকামনা

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নজরুল, এই ব্যাপারটা নিয়ে আর কথা বাড়ানো অহেতুক। তবু কয়েকটা কথা বলে যাওয়া দরকার বোধ করি।

১। বাংলাদেশের পত্রিককাগুলো তাদের মালিকের মর্জি অনুযায়ী চলে। তাই প্রথম আলো যখন আইভীকে সমর্থন করে তখন কালের কণ্ঠ-বাংলাদেশ প্রতিদিন শামীমকে ফেরেশতা বানায়, আমার দেশ তৈমুরের গুণগান গায়। এই নির্বাচনের মূল আলোচনায় আইভী আর শামীমই অবশিষ্ট ছিলেন, তৈমুর সবসময়ই তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। তাকে নিয়ে যত বেশি আলোচনা হবে, তাকে ততো বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।

২। আইভীর যোগ্যতাগুলো গোপন কিছু ছিলনা, সেগুলোও পত্রিকাতে এসেছে - প্রথম আলোতে কতটুকু এসেছে সেটা আমি নিশ্চিত নই। আপনি শুধু প্রথম আলোর উপর নির্ভর করলে পোস্টের শিরোনামেও প্রথম আলো আসতে হতো। যেহেতু তা আসেনি তাই ধরে নিতে হবে আপনি মিডিয়া নির্বিশেষে বিষয়টিকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেক্ষেত্রে আইভীর যোগ্যতা গোপন রয়ে গেছে এটা বলতে পারেন না।

৩। মেয়রের শাসন আমল আট বছর নয়, পাঁচ বছর। তার প্রথম চার বছর গেছে বিএনপি'র আমল, তারপর দুই বছর গেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল - এই দুইটা কালই ছিল বৈরী সময়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার একজন আওয়ামী লীগের মেয়রকে ভালো বাসবে, তাকে সহযোগীতা করবে এটা আশা করাই তো বৃথা - সেটা ইন্টারেস্টিং কিছু না। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে আমলাতন্ত্র বার বার চেষ্টা করেছে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে পৌরসভা চালাতে কারণ, টেনিউর অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। মেয়র প্রত্যাশী অন্যদেরও সেখানে ইন্ধন ছিল। আর সিটি কর্পোরেশন হবার আগে পরের একটা লম্বা সময় তো আইভী ক্ষমতাতেই ছিলেন না। এতো বৈরী পরিবেশেও আইভী থেমে থাকেননি। সীমিত বাজেটের সাথে আদায়কৃত কর যোগ করে তিনি কাজ করে গেছেন বলেই তিনি আজ এতো জনপ্রিয়। তাঁর জনপ্রিয়তা কোন আসমানী ব্যাপার না।

৪। আট বছরে আইভী কিছুই করতে পারেননি এটি ডাহা মিথ্যা কথা। নারায়ণগঞ্জবাসীরা দেখেছেন আট বছর আগে শহরের অবকাঠামো কী ছিল, নাগরিক নিরাপত্তা কোন পর্যায়ে ছিল। নারায়ণগঞ্জকে করুণা করে সিটি কর্পোরেশন বানানো হয়নি। নারায়ণগঞ্জ গত আট বছরে সে যোগ্যতা অর্জন করেছে। আট বছরে নারায়ণগঞ্জ বেহেশ্‌ত হয়ে যায়নি, তবে মানবেতর পর্যায় থেকে সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। নাজিম উদ্দিন মাহ্‌মুদরা এরচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকেও এর আধলাটাও করেননি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ছাই এর ছবি

প্রথম আলোর বিরোধিতা করা ইদানীং একটি শ্রেণী-বৈশিষ্ট্য হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন, ইত্তেফাক, কালেরকন্ঠের শামীম ওসমানকে ‘দেবতা’ বানানোর চেষ্টা লেখকের চোখ এড়িয়ে গেছে। শামীম-আইভির ভাই-বোন মার্কা নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক বা সেনাবাহিনী ছাড়া হতেই পারে, কিন্তু একই সূত্র জাতীয় নির্বাচনে টিকবে না।

সেনাবাহিনী চেয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠির ব্যাপারে সরকারের সম্পূর্ণ নীরবতার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাকে ও সংবিধানকে যে সরকার অস্বীকার করেছে তার উপর বৃহত্তর জাতীয় নির্বাচনের আস্থা রাখা যায় কি?

নাসিক শুধু এটাই শিক্ষা দিয়েছে যে, জনগণ সাদা-কালোর বিভেদ সীমিত পরিসরে বুঝতে পারে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন বাণিজ্যে প্রত্যেক আসনের উতরে আসা মূল দুই-তিন প্রার্থীর আসল রংয়ের তেমন কোন ফারাক থাকবে না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সবকিছুতেই প্রথম আলো বিরোধিতার গন্ধ খোঁজাও আজকাল একটা বৈশিষ্ট্য হয়ে যাচ্ছে...
এখানে প্রথম আলো বিরোধিতা কোথায় খুজে পেলেন?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দ্রোহী এর ছবি

বাঙালি এক আজব জাতি! নির্বাচিত সরকারের আমলে সেনাবাহিনির জন্য কান্দে আবার সেনাবাহিনির শাসনামলে নির্বাচিত সরকারের জন্য কান্দে।

চরম উদাস এর ছবি

শামীম ওসমানের স্বপ্ন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ২০ মিনিটে ট্রেন যাবে ঢাকায়। ২৫ মিনিট পর পর ট্রেন চলবে। পার্ক হবে। বিদেশিরা আসবে। নারায়ণগঞ্জ হবে স্কাই সিটি। স্কাই সিটি বলতে কী বোঝাচ্ছেন? উত্তরে বলেন, ‘আকাশের রঙ আকাশি। মেঘের রঙ সাদা। নারায়ণগঞ্জের সব বাড়িঘর আকাশি ও সাদা রঙ করে দেওয়া হবে। এভাবে নারায়ণগঞ্জ হবে স্কাই সিটি। ঢাকা থেকে মানুষ আসবে এই শহর দেখতে।’

এতো বড় লস তা কারো চোখে পড়লো না? নারায়ণগঞ্জ যে এখন গ্রাউন্ড সিটিই থেকে যাবে স্কাই সিটি আর হবে না।

তারেক অণু এর ছবি

অনেক দিন পর আপনার লেখা পেলাম নজু ভাই, যদিও সবসময়ই বলেই যাচ্ছিলেন দিচ্ছি দিব ! লেখা চালু থাকুক--

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

এই নির্বাচন যারা 'ভোটের রাজনীতি' করে বেড়ায় তাদের জন্যে একটা শিক্ষা হতে পারতো। কিন্তু আমরা সহজে শিক্ষা নেইনা এটাই সমস্যা।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সালেক খোকন এর ছবি

আমজনতার জয় হোক ।

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

আইভীর সততাটুকুই ছিলো ট্রাম্পকার্ড।অসৎ রাজনীতিকদের ভীড়ে শুধু এটুকু সম্বল করেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করা সম্ভব, তা দেখা গেলো। যোগ্যতার প্রশ্ন উঠলোই না।

তার মানে আপনি রাজনীতিবিদদের সৎ হওয়াটাকে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ গুণ বা যোগ্যতা মনে করছেন না ? হলেও চলে , নাহলেও তেমন ক্ষতি নেই ? এ লাইনগুলো পড়ে বেশ অবাক হলাম !

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

সাফি এর ছবি

রাজনীতিবিদরা যখন নির্বাচনে দাঁড়াবেন, তখন সততা অটোমেটিক কোয়ালিফিকেশন হওয়া উচিত। ব্যালটে একাধিক সৎ প্রার্থী থাকলে আপনি তখন তার রাজনীতিবিদ বা এক্ষেত্রে মেয়র হিসেবে যোগ্যতার তুলনা করে আপনার ভোট দেবেন। কিন্তু কলির যুগে অসৎ রাজনীতিবিদদের এমন-ই ভীর যে শুধু সততার কারণেই একজন প্রার্থী জিতে যেতে পারেন। আমার মনে হয়েছে নজরুল ভাই এইটা বলতে চেয়েছেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হ...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।