দূষণ নিয়ন্ত্রণে দৌড়ের উপ্রে রাখা

শামীম এর ছবি
লিখেছেন শামীম (তারিখ: রবি, ২৪/০২/২০১৩ - ৪:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দুষ্টুদের সাইজ করার একটি সহজ টেকনিক ... ...

ইদানিং দেখি আবার বড় বড় মশা বেশ জ্বালাচ্ছে অফিসে। অফিসের ক্লজেটে একটা এ্যারোসল আছে -- দিলাম ফুস্ ফুস্। এতে দেখি মশা মরে না, তবে দৌড়ের উপ্রে থাকে। দৌড়ের উপ্রে থাকে = হয়তো মাথা ঘুরে, বমি পায়, মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে (তখন পাড়িয়ে মারা যায়) --- যাই লাগুক, মূল ব্যাপার হল ওষুধ দেয়া হলে ওরা আমাকে কামড়ানোর জন্য স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আসতে পারেনা। মশা না কামড়ানোটাই আসল উদ্দেশ্য, মারাটা নয় -- এছাড়া প্রকৃতি এবং বাস্তুতন্ত্রে বিভিন্ন প্রাণীর দরকার আছে। এমনকি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টির জন্য ঐ রোগের দূর্বল জীবানু দিয়ে এন্টিবডিদের ট্রেনিং দেয়া হয়। কাকের উপদ্রব না থাকলে সানশেডে লাফিয়ে বেড়ানো ইঁদুর রয়ে যেত অনেক।

এবার পানিতে থাকা দূষকের কেতাবী সংজ্ঞা দেই: একটা পদার্থের নির্দিষ্ট মাত্রার উপস্থিতিতে পানির নির্দিষ্ট কোনো ব্যবহার যদি বাধাগ্রস্থ হয় তাহলে সেই ব্যবহারের জন্য সেই মাত্রাকে দূষণ বলে, এবং সেই পদার্থটিকে দূষক বলে। এই ধারণাটাকে ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে -- ধরুন পানিতে আর্সেনিক আছে কিন্তু সেই পানি দিয়ে কাপড় কাঁচা হয়, সেই পানিতে সাঁতার কাটা হয় কিন্তু খাওয়া বা রান্নার কাজ হয় না -- তাহলে আর্সেনিক দূষক নয়। কারণ আর্সেনিকের কারণে কাপড় কাঁচা বা সাঁতার কাটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে না। একই ভাবে পানির খরতা সাবান ক্ষয় বাড়িয়ে কাপড় কাঁচার ক্ষেত্রে দূষক, কিন্তু খাওয়ার ক্ষেত্রে নয় বরং ঐ খনিজ পদার্থগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কাজেই মশা যদি জঙ্গলে থাকে, সুখে শান্তিতে বংশ বৃদ্ধি করে এবং আমার বাসায় এসে কানের কাছে গান না শোনায় এবং না কামড়ায় তাহলে সেটা সমস্যা নয়, দে আর নট শত্রুজ্। এমনকি মশা যদি ঘরে থাকে কিন্তু আমাকে না কামড়ায় কিংবা কানের কাছে গান না গায় তাহলেও এটাকে সমস্যা বলা ঠিক হবে না। চোখ টিপি

কোন বস্তু যদি দূষণ করে তাহলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এখন প্রশ্ন হল পলিউশন কন্ট্রোল বা দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রথম ধাপ কী?
প্রথম ধাপ হল গোয়েন্দাগিরি। অর্থাৎ দূষক ব্যাটা কখন কী করে, কৈ যায়, কোন দোকানে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুকে সব ডিটেইলস স্টাডি করতে হবে। ভালভাবে স্টাডি করলেই ঐ ব্যাটার সবচেয়ে দূর্বল পয়েন্টটা বের করা যাবে; কোন জায়গায় চিপি দিয়ে ধরলে বা আস্তে একটি টোকা দিলেই ব্যাটার দফারফা হবে সেটা বের করা যাবে। সবচেয়ে নাজুক সময়েই এটা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সুবিধা। এজন্যই দেখা যায় মশা থেকে রক্ষা পেতে এর বাসস্থান নষ্ট করি, প্রজননক্ষেত্র নষ্ট করি আমরা -- এজন্য হাতে হাতে তালি বাজানো কাওয়ালী প্র্যাকটিস করি না। --- আর এই জ্ঞান এর জীবনচক্র গভীরভাবে বিশ্লেষন করেই এসেছে। খর পানির ম্যাগনেসিয়াম ব্যাটারে ধরাই যায় না, কিন্তু দেখা গেল উচ্চ pH এ এটা হাইড্রক্সাইড উৎপন্ন করে যার দ্রাব্যতা মারাত্নক কম --- এইবার পাইছি; আর ছাড়াছাড়ি নাই --- পানিতে ঢালো চুন, বাড়াও pH: মু হা হা এবার ম্যাগনেসিয়াম বাবাজিকে দানা আকারে ফিল্টারে আটকিয়ে ফেলা যাচ্ছে -- এরপর একটু রিকার্বনেশন করলেই আবার পানি নিউট্রাল।

দূষণ নিয়ন্ত্রণের আরেকটা উপায় হল, দুষ্টুদেরকে দুষ্টামী না করতে দেয়া, অন্যভাবে ব্যস্ত রাখা। ওদেরকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখলেও দুষ্টামি করার পরিমান কমে যাবে। এটাকে দৌড়ের উপ্রে রাখা টেকনিক বলা যেতে পারে। যেমন
দুষ্টু লোককে বিয়ে দিয়ে দিলে এ্যাত কিছু সামলিয়ে বিড়ি ফুকে শিস বাজানোর টাইম পাবে না।
কিংবা, দুষ্টু খরতা পানিতে সাবান ক্ষয় করে --- ও আচ্ছা সাবানের সোডিয়াম বিক্রিয়া করে! সাইক্লিক স্ট্রাকচারের সোডিয়াম দিলেই হয়, এর সব বাহু হাতে হাত ধরি ধরি করে ব্যস্ত তাই দুষ্টামিও কম।
আবার, পানিতে ফসফরাস এসে পচনশীল জলজ উদ্ভিদ বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফসফরাস ঠেকানো যাচ্ছে না --- ব্যাপার না ... ... পানিতে এমন কেমিকেল দেয়া হোক যে ফসফরাস ওটার সাথে বিক্রিয়া করে এমন যৌগ গঠন করবে (এমন প্যাঁচে পড়বে) যে জলজ উদ্ভিদের ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় থাকবে না।
আর্সেনিকের দুষ্টামি কমাতে এটাকে আবার মাটির আয়রনের সাথে সুখে শান্তিতে সংসার করাতে অর্থাৎ যৌগ গঠণের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। যতক্ষণ আর্সেনিক আয়রনের সংসার ভেঙ্গে একা একা ঘুরাঘুরি করে ততক্ষনই বিপদ। (এই সংসার ভাঙ্গলো কেমতে সেটাই চিন্তার বিষয় -- কিছু তদন্ত রিপোর্ট বলে ডিশ কালচারের অনুপ্রবেশই এই ঘটনার জন্য দায়ী।)

ইদানিং লক্ষ্য করলাম রাজনীতিতেও বিজি রাখা তথা দৌড়ের উপ্রে রাখার এই টেকনিকটা খুব বহুল ব্যবহৃত।
এই প্রজন্মের দুষ্টু লুকজন জাতির ক্রিমিনালদের বিরূদ্ধে সজাগ, বিপদ ঘটাতে পারে? --- আচ্ছা ব্যাপার না ... ... ব্লগে কিছু কাঁঠাল পাতা ভক্ষক ছেড়ে দাও, ওদের কাজ ম্যা ম্যা করা আর ল্যাদানো --ওগুলোকে তাড়াতে তাড়াতে ব্যস্ত থাকলে এদিকে পরিকল্পনা করে দুষ্টামি কিংবা একতাবদ্ধ হতে পারবে না। বেশ সফলভাবে এ্যাতদিন এই টেকনিকে কাজ চলছে। এখন উল্টাদিকেও পলিউশন কন্ট্রোলের জন্য একই টেকনিক খাটানো যেতে পারে, শুরুও হয়েছে এখন আস্তে আস্তে হিট বাড়াতে হবে।


মন্তব্য

আলতাইর এর ছবি

গুরু......আপনে মহান... গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

শামীম এর ছবি

লইজ্জা লাগে
এনভায়রনমেন্টাল পলিউশন কন্ট্রোল কোর্স পড়াই তো ... ওখানে আরো বেশ কয়েকটা পদ্ধতি আছে, তবে দৌড়ের উপ্রে রাখার মত এ্যাত বেশি মিল কোন পদ্ধতিতে দেখি নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

লুব্ধক এর ছবি

হাততালি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।