জৈবিক ভিন্নতার বাইরেও নর-নারী ভিন্নতা কতটুকু এবং কেন?

শামীম এর ছবি
লিখেছেন শামীম (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/০৩/২০১৩ - ৩:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
ফ্রিকোনমিক্স নামক একটা বইয়ের কিছু অংশ পড়ার পর এদের ওয়েবসাইটে বেশ কয়েকটা পডকাস্ট শুনেছিলাম। তার মধ্যে উইমেন আর নট মেন শিরোনামের পডকাস্টে মহিলা এবং পুরুষদের সম্পর্কে কিছু তথ্য এবং এক্সপেরিমেন্ট তুলে ধরা হয়েছিলো যা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল। এই লেখায় সেই পডকাস্ট থেকে উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরছি। এখানে প্রচুর তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে যার নির্ভরযোগ্য উৎস উল্লেখ করা নাই কিংবা ওগুলো শুধুমাত্র আমেরিকানদের ডেটা থেকে অনুসিদ্ধান্ত আকারে এসেছে। তারপরেও এটাতে বেশ কিছু ব্যাপার আছে যা অনেক ব্যাপারেই নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে বাধ্য করে।

কিঞ্চিত দীর্ঘ লেখাটি পাঠকের সুবিধার্থে নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হল।

২।
আমেরিকার ৫৭% কলেজ পড়ুয়া হল ছাত্রী, অর্থাৎ ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের কলেজে পড়ার হার বেশি। গত জানুয়ারী থেকে সেনাবাহিনীতেও সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। আমেরিকায় নারী ও পুরুষের গড় আয়ের ব্যবধানও কমে আসছে। নিম্ন ও উচ্চ সংসদের (সিনেট ও হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ) উভয় জায়গাতেই ২০%এর বেশি সিট মহিলা সদস্যদের। গত ৫বারের মধ্যে ৩বারই আমেরিকার সেক্টেটারী অব স্টেটের দায়িত্ব পালন করেছেন কোন নারী (বর্তমানে, কন্ডোলিৎসা রাইস)। কাজেই লিঙ্গের উপরে কারো কাজের গুনগত মান নির্ভর করে না এটা এখন প্রতিষ্ঠিতই বলা চলে। নারী-পুরুষের সম অধিকারের ব্যাপারটা খুব দরকারী হলেও বর্তমান সমাজে অনেক অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে নারী এবং পুরুষের মধ্য আকাশ পাতাল তফাৎ বিদ্যমান।

৩।
প্যাটেন্ট ক্লেইম বা রেজিস্টার করার দিকে দেখা যায় নারীরা অনেক পিছিয়ে - মাত্র ৭.৫%। এটার কারন হতে পারে কাজের ধরণ -- ডিজাইন টাইপের কাজে নারীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। আবার দেখুন বজ্রপাতে আহত হওয়ার সম্ভাবনাও নারীদের কম। আমেরিকায় ৮০% থেকে ৮৫% বজ্রপাতের ঘটনা পুরুষদের উপর ঘটে -- অন্ততপক্ষে রেকর্ড তাই বলে। তবে এটারও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে - নারীদের চেয়ে পুরুষদের আউটডোর বা বাইরের কাজ বেশি, এছাড়া পুরুষগুলো দুষ্টু প্রকৃতিরও বটে: বজ্রপাতে সম্ভাবনা থাকলেও পুরুষেরা ভেতরে যেতে চায় না। আমেরিকায় নারীদের চেয়ে পুরুষদের পানিতে ডুবে মরার হারও প্রায় চারগুন বেশি! মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা যে পানিতে বেশি সময় কাটায় তা-ই নয়, পুরুষরা তাদের সাঁতারের ক্ষমতা সম্পর্কে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভোগে --- যা এই ধরণের ঘটনার কারণ হতে পারে। এছাড়া পুরুষদের অ্যালকোহলিক হওয়ার সম্ভাবনা/চান্স মেয়েদের দ্বিগুন, কিন্তু নেশাগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা মেয়েদের তুলনায় অর্ধেক। এছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদের দুই তৃতীয়াংশই মহিলাদের আবেদনের - অর্থাৎ সম্পর্ক খারাপ হলে সেটা মহিলারাই শেষ করে দিতে বেশি আগ্রহী হয়।

৪।
ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সোশাল মিডিয়াতে নারীর সংখ্যা ও অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি অনলাইন গেইমেও নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় বেশি -- এটা নিশ্চয়ই অনেককে অবাক করার মত তথ্য। কিন্তু অনলাইনে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম। বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াতে প্রতি ৬ জনে মাত্র একজন নারী সম্পাদক (২০১১ সালের তথ্য)। এমনকি অবদানকারীদের দিক থেকেও নারীরা আরও পিছিয়ে (১৬% বনাম ৯%)। এমনকি দেখা গিয়েছে যে মহিলাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়েও (প্রেগনেন্সি, মিসক্যারেজ) নারীর চেয়ে পুরুষ অবদানকারীদের অংশগ্রহণ বেশি। উইকিপিডিয়াতে নারীর উপস্থিতি এ্যাত কম থাকাটা বেশ আশ্চর্যজনকই বটে যেখানে অনলাইনের আর সবক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহন সমান কিংবা বেশি।

এটার একটা কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলেন যে মহিলাদের ঘরের কাজ বেশি করতে হয় বলে লেখার মত অবসর কম -- এটা হয়তো পরিসংখ্যানগতভাবেও সঠিক, আমেরিকায় পুরুষরা দৈনিক গড়ে ৪০ মিনিট অবসর পায়, যা মহিলাদের তুলনায় বেশি। কিন্তু সাইকোলজিস্টদের মতামত হল, এটার কারণ নর ও নারীর মানসিক গড়ন। নারীরা সাধারণত কনফ্লিক্ট হতে পারে এমন বিষয় পুরুষদের তুলনায় এড়িয়ে চলতে বেশি পছন্দ করেন। এখানেই উইকিপিডিয়ার মূল সমস্যা -- এখানে কারো লেখা সম্পাদনা করতে হলে সেটা মুছে একটা সঠিক তথ্য দেয়া হয় এবং ভুল তথ্যদানকারীকে অবমাননাকর কথা বলা হয়ে থাকতে পারে। এরকম বিষয়ের মুখোমুখি হতে চায়না নারী। ফেসবুকে কিন্তু কারো তথ্য ঠিক ভুল ধরার ব্যাপারটা উইকিপিডিয়ার মত সিরিয়াস কিছু না। উইকিপিডিয়াতে সঠিকতম তথ্য তুলে ধরার জন্য একজন আরেকজনের কাজ মুছে ফেলে যা সবসময় একজনকে অন্যের পেছনে লেগে থাকার মত অবস্থা সৃষ্টি করে, যা ফেসবুক বা অন্য অনলাইন মিডিয়াগুলোর থেকে সম্পুর্ন আলাদা।

৫।
মানসিক ভিন্নতা কিংবা গ্যাঞ্জাম এড়িয়ে চলার প্রবণতা -- নারীদের উইকিপিডিয়া বিমূখী হওয়ার একটা ভাল ব্যাখ্যা তবে, এটাকে অন্যরকম দৃষ্টিকোন থেকেও কি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা যায় না? এমন কি হতে পারে না যে নারী আর পুরুষদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবে ভিন্নতা রয়েছে?

ছেলে আর মেয়েরা আচরণগত ভাবেই কিন্তু বেশ আলাদা। এক বাবা-মায়ের ২ ছেলে এবং ১ মেয়ে ছিল। একই রকম লিঙ্গ বৈষম্যহীন পরিবেশে মানুষ করার জন্য তাঁরা তিন সন্তানকেই ছোট বেলায় পুতুল আর গাড়ি (ট্রাক) খেলনা দিয়েছিলেন। মেয়েরা খুব খুশি, ট্রাকের উপরে পুতুল রেখে খেলতো তারা, ট্রাকগুলো হল পুতুল রাখার স্ট্যান্ড। ওদিকে ছেলেরাও কিন্তু এই খেলনাগুলোতে দারুন খুশি; এরা পুতুলগুলোকে দেয়ালে আছড়াতো, তারপর পুতুলগুলোকে ট্রাক চাপা দিত। এই যে তাদের ভিন্নতা এটার কতটুকু স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়ার ফলে এসেছে আর কতটুকু চারপাশের পরিবেশের প্রভাবে হয় সেটা জানার চেষ্টা করা হয়েছে বেশ কয়েকভাবেই। প্রথমেই পুরুষ আর নারীর বেতন বৈষম্যের বিষয়টা বিবেচনা করা যাক - পুরুষদের ১ ডলার বেতনের বিপরীতে মহিলারা একই কাজে গড়ে ৮২ সেন্ট পায়। কিন্তু কেন?

এই নিয়ে অনেক রকম গবেষণা হয়েছে। এর কিছু কিছু ফলাফল বলে যে, এর একটা কারণ বৈষম্যমূলক আচরণ তবে এটাও ঠিক যে নারী আর পুরুষের চিন্তাধারা এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে পছন্দ তালিকাটা ভিন্ন - সেটা সংসারের ব্যাপারেই হোক আর কর্মক্ষেত্রেই হোক। তবে অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও এটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে -- সেটা হল, নারী আর পুরুষ বিভিন্ন রকম প্রণোদনা পাওয়ার আশায় একটা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। প্রণোদনার প্রতি ভিন্ন আকর্ষণ বা দৃষ্টিভঙ্গির কারণেরই নারী পুরুষের সিদ্ধান্ত আলাদা হয়।

৬।
পুরুষ আর নারীগণ যে প্রতিযোগীতায় ভিন্ন রকম দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণ করার জন্য দুজন অর্থশাস্ত্রবিদ মাঠ পর্যায়ে কিছু পরীক্ষার আয়োজন করেন। তারা এজন্য পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব মুক্ত অন্য দেশের একটা গ্রাম বেছে নেন -- এতে করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাবটাও বের হয়ে আসবে। গবেষনার জন্য তাই ওনারা সম্পুর্ণ ভিন্ন দুটি জায়গা বেছে নেন। প্রথমটা হল আফ্রিকার তানজানিয়ার একটা গ্রাম। কিলিমানজারো পাহাড়ের কাছে একটা শহরে চলে যান এই গবেষক দল। সেখান থেকে দুটো মাসাই গ্রামে গবেষণা চালান। মাসাই'রা হল পশুপালনকারী গোষ্ঠি -- অর্থাৎ তাদের অর্থনৈতিক কাজ কারবার চলে পশু চরানো আর সেটার কারবার করে। এই সমাজে নারীরা ভীষনভাবে অবহেলিত - এবং প্রচন্ডরকম পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। এদের পুরুষতান্ত্রিকতাটা এমন পর্যায়ের যে, এখানে যদি কোন লোককে জিজ্ঞাসা করা হয় তার সন্তান কয়জন, সে শুধু তার ছেলে বাচ্চাদের সংখ্যাটাই বলবে। এখানে একজন নারীর মূল্য প্রায় ১০টা গরুর সমান, ফলে নারীরা হল ঘরের সম্পত্তির মত -- বউয়ের কাজ কর্ম পছন্দ না হলে স্বামী তাকে মারধোর করে, অত্যাচার করে, যা সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য আচরণ। ওখানকার একজন মহিলার মতে, পুরুষরা তাদেরকে গাধা'র সমতূল্য মনে করে।

প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব পরীক্ষা করার জন্য গবেষকগণ এখানে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। এ বিষয়ে আমেরিকাতেও গবেষণা করা পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান তারা। তাই তাঁরা কম্পিউটারের বদলে কাগজে গোলকধাঁধা এঁকে এটা সমাধান করতে বলেন স্থানীয়দেরকে -- কিন্তু এখানে বিরাট সমস্যা তৈরী হল। প্রথম অংশগ্রহণকারী নারীই বলে বসলো -- আমার পক্ষে এটা করা বেশ অসম্ভব, কারণ এর আগে আমি কখনো কলমই ধরিনি। সুতরাং আগের অভিজ্ঞতায় ঠিক জুইত হইলো না, তাই নতুন করে প্রতিযোগিতা নকশা করতে হল তাদের। নিজেদের পরিচিত পরিবেশ থেকে ১০ হাজার মাইল দুরে কী করি কী করি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখেন যে ওখানকার দোকানে টেনিস বল, ব্যাট এসবও পাওয়া যায়। ব্যাপারটা তাদের জন্য বেশ বিস্ময়কর হলেও তারা সেই টেনিস বল আর বালতি কিনলেন।

৭।
এবারের প্রতিযোগিতা হল, হাত নিচু অবস্থায় ১০ ফুট দুরের বালতির ভেতরে টেনিস বল ছুড়ে ফেলতে হবে (under arm throw)। এরকম ১০ বারে সে কয়টা পারে সেটা হল স্কোরলাইন। কিন্তু টুইস্ট হল, ঐ ভবনের আরেক দিকে আরেক জন অপরিচিত লোকও একই সময়ে একই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বল ছোড়া শেষে প্রতিযোগীকে দুইটা অপশন দেয়া হয় -- ক) সরাসরি প্রতিটা স্কোরের জন্য ১ ডলার সমমানের পুরষ্কার, অথবা খ) অপরদিকের অজানা প্রতিযোগীর চেয়ে বেশি স্কোর করলে প্রতিটা স্কোরের জন্য ৩ ডলার সমমানের পুরষ্কার, নাহলে কিচ্ছু পাবে না। কাজেই অনিশ্চয়তার চ্যালেঞ্জওয়ালা পরের অপশন নিলে তাদের ইনকাম তিনগুন হতে পারে। এরকম একটা গরীব জায়গায় এ্যাত সহজেই টাকা কামানোর সুযোগ নিতে সারা গ্রামের লোকজনই ওখানে জড়ো হয়েছিলো। আর ফলাফল?

নারীদের তুলনায় দ্বিগুন পরিমান পুরুষ ২য় অপশনটি বেছে নিয়েছিল। এই ফলাফলটা আমেরিকার ফলাফলের মতই - যেখানে পুরুষগণ চ্যালেঞ্জিং অপশনটা বেশি পছন্দ করে। ৫০% মাসাই পুরুষ ২য় অপশনটা বেছে নিয়েছিলো। অর্থাৎ জিততে পারলে সে তিনগুন পাবে। ঐদিকে বেশিরভাগ নারী চ্যালেঞ্জ নিতে অনাগ্রহী হয়ে নিরাপদ অপশন বেছে নিয়েছিলো, ২য় অপশন নিয়েছিলো ২৬% নারী।

৮।
পরের পরীক্ষাটা করা হয়েছিলো সম্পুর্ন অন্যরকম সামাজিক ব্যবস্থার খাসিয়াদের নিয়ে। ময়মনসিংহ, সিলেটের ঠিক উত্তরে ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়াদের সামাজিক কাঠামো হল নারীতান্ত্রিক; যেখানে সর্বকনিষ্ঠ কন্যা পরিবারের সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। বিয়ের পর পুরুষগণ মহিলাদের বাসায় গিয়ে উঠে, বাচ্চাদের নামের শেষে মায়ের বংশের নাম যুক্ত হয়। কোথায় টাকা খরচ হবে, কিভাবে হবে সবই মহিলারা সিদ্ধান্ত নেয় -- কাজেই নারীদের অধিকার এখানে পুরুষদের সমান কিংবা বেশি। আরেকটা অবাক করা জিনিষ লক্ষ্য করেছিলো গবেষকগণ, যে এখানকার সমাজের সবাই খুবই মিশুক আর দয়ালু; খুবই নিরাপদ একটা বোধ আসে ওখানে থাকলে। এ্যাতটাই চমৎকার নিরাপদ পরিবেশ যে গবেষকগণ তাদের ৬০ হাজার ডলার একটা স্যূটকেসে ভাড়া ঘরের রাধুনীর জিম্মায় রেখে নিশ্চিন্তে বের হয়ে যেতেন।

এখানেও মাসাইদের মত একই পরীক্ষা করা হয়েছিলো। তানজানিয়া থেকে আনা বালতি আর বলগুলোই এখানে ব্যবহার করা হয়েছিলো! এখানকার সামাজিক কাঠামোর অবদানেই এখানকার নারীদের মানসিকতা ভিন্ন হওয়া উচিত। হয়েছেও তাই: খেলার ২য় চ্যালেঞ্জিং অপশন বেছে নিয়েছিলো ৫৪% নারী। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৩৯%। চরম পুরুষতান্ত্রিক মাসাই পুরুষদের চেয়েও বেশি খাসিয়া নারী চ্যালেঞ্জ বেছে নিয়েছিলো!!

কাজেই এই পরীক্ষার ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে জন্মের সময় যতটুকু জৈবিক পার্থক্যই থাকুক না কেন, পরিবেশের প্রভাবে নারী ও পুরুষের মানসিকতা গড়ে উঠে। এই ফলাফলটা এমনই যে, অতীতের অনেক বিবর্তনের তত্বের (কিংবা অন্যদিকে ধর্মীয়) ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।

৯।
উপরের আলোচনা প্রচলিত জনপ্রিয় মতবাদের বাইরেও নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে নিঃসন্দেহে। তবে পরিবেশ, পরিস্থিতির প্রভাবে যে মানুষের মানসিক গড়ন ভিন্ন হয় এটা হয়ত নতুন কোন তত্ব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকার সময় ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা বন্ধু বান্ধবীদের বিভিন্ন ঘটনায় ভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যেত। বিয়ে শাদীর সময়ে ফ্যামিলি এবং এলাকা দেখে বিয়ে দেয়ার ব্যাপারটাও দেশে খুব ভালভাবেই প্রচলিত। মেজটা কেন অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা হয়, কিংবা পাকিরা কেন বেশি উগ্র স্বভাবের কিংবা কিছু লোক কেন তৃণভোজীদের মত আচরণ করে সেসবও পরিবেশ, সংস্কৃতি দিয়ে সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু যেই জিনিষটা চোখের সামনে থাকা সত্বেও ঠিকভাবে দেখা যায়নি, সেটা হল এই সমাজের মধ্যেই একই ছাদের তলেও নারী ও পুরুষের মধ্য বিভাজনটা কত বেশি, আর এর জন্যও যে প্রায় একই রকম কারণ দায়ী। নারী পুরুষের ভিন্নতা সৃষ্টির জন্য এই সমাজ তথা আমরাই দায়ী, আর এই বৈষম্য দুর করার ক্ষমতাও তাহলে আমাদের মধ্যেই আছে।

১০।
সূত্র: http://www.freakonomics.com/radio/


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চমৎকার লাগল লেখাটা। বিষয়টা আমার কাছে বরাবরই আকর্ষনীয়, বিশেষ করে, বিবর্তন নাকি সমাজব্যবস্থা এই বিতর্কটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে। যদিও সমাজ ব্যবস্থার একটা নির্দিষ্ট রূপ পাওয়াও হয়ত বিবর্তন প্রক্রিইয়ার ফসল। বিশ্বের প্রায় সব জায়গায় পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, কিন্তু অল্প কিছু জায়গায় এর ব্যতিক্রমের কোন কারণ জানা আছে কি? এই বিষয়ক কিছু রেফারেন্স দিলে উপকৃত হতাম।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

Emran এর ছবি

নৃবিজ্ঞানী রবিন ফক্স তাঁর Kinship and Marriage বইতে পিতৃসুত্রীয় বনাম মাতৃসুত্রীয় (patrilineal vs matrilineal) সমাজব্যবস্থার একটা সাংস্কৃতিক বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বইটা সহজপাঠ্য; আপনি পড়ে দেখতে পারেন।

আরেকটা ব্যাপার পপুলার মিডিয়াতে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়, সেটা হল নারীতান্ত্রিক অথবা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। এথনোগ্রাফিকালি এই ধরণের কোন সমাজের উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাতৃসুত্রীয় (matrilineal) সমাজ, যেটাকে সাধারনভাবে আমরা ধরে নেই মাতৃতান্ত্রিক (matriarchal) সমাজ হিসেবে, সেখানেও পরিবারের কর্তৃত্ব কিন্তু থাকে মায়ের ভাইয়ের হাতে। মাতৃসুত্রীয় সমাজে বংশধারা (descent) নির্ধারণ করা হয় মায়ের দিক থেকে (মা --> মেয়ে --> মেয়ের সন্তান, এইভাবে)। এই ধরণের সমাজে পুরুষ/পিতা তার স্ত্রীর বাড়ী/পরিবারে বহিরাগত; তার একমাত্র ভূমিকা হল তার স্ত্রীকে সন্তানলাভে সাহায্য করা। মায়ের ভাই হলো মায়ের নিকটতম রক্তসম্পর্কীয় পুরুষ আত্মীয়, কারণ এই দুই ব্যক্তির মা অভিন্ন।

শামীম এর ছবি

ধন্যবাদ দুজনকেই।
উইকির সূত্র: http://en.wikipedia.org/wiki/Matriarchy

শুনতে শুনতে আর লিখতে লিখতে মনে হচ্ছিলো এরকম সমাজ ব্যবস্থা মনে হয় আমাদের দেশেই আছে --- রাজাও কিন্তু গোপাল ভাঁড়কে ডিম দিয়েছিলো। খাইছে

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নাফিসা এর ছবি

দারুণ ভাবনা জাগানিয়া একটি লেখা। পড়তে চমৎকার লেগেছে!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।।
shorol

 সাম্পানওয়ালা এর ছবি

মাতৃত্বের ব্যাপারটাই বিবর্তনের দৌড়ে নারীকে পেছনে ফেলে দিয়েছে আর এই অসম প্রতিযোগিতা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গঠনে প্রয়োজনীয় রসদ যুগিয়েছে। আমি নৃবিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞান কোনটারই ছাত্র না। আমার নিজস্ব উপলব্ধিবোধ থেকে বললাম। কিভাবে নারী পিছিয়ে পড়ল এব্যাপারে জানার খুব আগ্রহ আমার। কেউ পারলে সহজবোধ্য কোন বইয়ের লিংক দিয়েন। লেখককে এত সুন্দর একটা লেখা দেবার জন্য ধন্যবাদ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সত্যি কথা। কিন্তু মেয়েরাও অনেক কিছু করতে পারে এ ব্যাপারে। এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।

শামীম এর ছবি

চলুক
বেশ ভাল বক্তৃতা।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নাফিসা এর ছবি

দারুণ!

রংতুলি এর ছবি

চলুক

রংতুলি এর ছবি

পোস্টটা ভালো লেগেছে। কালকে এটা পড়ার পর থেকেই কমেন্ট করার জন্যে উশখুস করছি, আমার ল্যাপটপটার অপারেটিং সিস্টেম গেছিলো, ঠিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগলো।

যা'হোক, আমার বক্তব্যে আসি - সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় পরিবার হলো সমাজের সবচেয়ে ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কারণ পরিবারের মধ্যমেই প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, যা পরবর্তী জীবনে সে কেমন হবে তার দিকনির্দেশনা দেয়। ফ্রয়েডের মতেও মানুষের ব্যক্তিত্বের গঠন প্রথম পাঁচ বছরেই মধ্যেই সম্পন্ন হয়, পরবর্তী সময়ে সে এর কোন দিকটা বিকশিত করবে, কোনটাকে পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখবে শুধু তাই আয়ত্ত্ব করতে শেখে। অতএব মনস্তাত্ত্বিক বিচারেও পরিবারের ভূমিকার প্রাধান্য অস্বীকার করার উপায় নাই। এখানে সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান আর পরিবারকে টানার কারণ হলো - প্রতিটা সমাজেই মানুষের মানসিক বিকাশের উপর নির্ভর করছে মূলত সে সমাজ কতটা গতিশীল অথবা স্থবির, আর সেক্ষেত্রে পরিবার আরো গোড়া থেকে দেখলে মা/নারীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। উপরে একজন মন্তব্য করেছে, প্রতিযোগিতায় নারীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ হলো মাতৃত্বজনিত প্রতিবন্ধকতা, অথচ এটাই যে সব সমাজের মূলভিত্তি বা চালিকাশক্তি তা আমরা ভুলে যাই। কেবল শিশুর জন্মদান বা লালন-পালনই নয় বরং ভবিষ্যতে সেই শিশুটি সমাজের অগ্রগতিতে কতটুকু অবদান রাখবে কি রাখবে না, তারও প্রথম ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপটা কিন্তু মায়ের কাছ থেকেই শুরু হয়। অতএব নারী-পুরুষের লিঙ্গবৈষম্যে কে আগালো, কে পিছালো এটা না দেখে সভ্যতার সামগ্রিক উন্নয়নে কার অবদান কতটুকু সেটা বিচার করলেই আর কোন ভেদাভেদের অবকাশ থাকে না, যেখানে নারী শত শত বছর ধরে কোনো রকম স্বীকৃতির ধার না ধেরেই নিজের কাজটা নিষ্ঠার সাথে করে যাচ্ছে, হয়ত পুরুষের চেয়ে বেশি, অথচ যখন বৈষম্যের হিসেব আসে তখন খুব সহজে মানুষ তা ভুলে যায়।

ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পুরষের তুলনায় নারীর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণটাও এখানেই - সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনের তাগিদে তার ভেতরে সেই আদি/সহজাত নিরাপত্তাবোধ। খুব ছোট্ট ও কমন উদাহরণ দিয়ে এটা বোঝানো যায় - সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ছেলেরা যেখানে মেয়েদের বাইরের সৌন্দর্য্যকেই গুরুত্ব দেয় এবং আগপাছ না ভেবে খুব সহজে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চায়, মেয়েরা সেখানে তাদের ভেতরের সেই নিরাপত্তাবোধ থেকে অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্তে আসে। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, একসেপশন ইজ নট এন এগজাম্পল।

মূলকথা, সমতা প্রমান করতে একটি ছেলে যা করে একটি মেয়েকেও তা করে দেখানোর প্রয়োজনীয়তা দেখি না। জৈবিক ও মানসিক ভিন্নতা সত্ত্বেও মানব সমাজের অগ্রগতিতে নারী-পুরুষের অবদান সমান। প্রকৃতি তার সৃষ্টির মাঝে কখনও কোনো অসম্পূর্নতা রাখে না, প্রকৃতির কাছে ভিন্ন লিঙ্গ অর্থ একজন আরেকজনের পরিপূরক, আমরা মানুষরাই এর মধ্যে বৈষম্য খুঁজে বের করি।

শামীম এর ছবি

চলুক
কম্পিউটারের যন্ত্রনা মাঝে মাঝে খুবই বিরক্তিকর ... ...

==
জৈবিক বা বায়োলজিকাল কারণের সাথে অন্য কারণগুলো যুক্ত হয়ে সমগ্রীক আচরণকে কিছুটা প্রভাবিত করে। বায়োলজিকাল কারণকে কিন্তু এখানে অস্বীকার করা হয়নি। ঐ যে প্রথম পরিবারের কথা বললেন --- সন্তানটি শুরু থেকেই দেখছে মা বাবাকে সর্বদা অপদস্থ করে, কিংবা বাবা মাকে পিটায়, কিংবা কোনটা কেনা হবে সেই সিদ্ধান্ত বাবা দেয়... ... এগুলোই কি বিভিন্ন গুন বা অনুভুতিকে গুটিয়ে বা প্রকাশ করতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে না?

বায়োলজিকালি কারো ব্রেন বড় কারো ছোট, কারো ডান ব্রেন বেশি কার্যকর কারো বাম, কেউ ম্যাথে ভাল কেউ লিংগুইস্টিকসে ... ... এগুলোকে অস্বীকার করা হচ্ছে না। কিন্তু পরিবেশের প্রভাবে এগুলোর বিকাশ এবং প্রকাশ এবং ফলস্বরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্যাটার্ন পরিবর্তন হয়।

আরেক জায়গায় একজন প্রশ্ন করেছিলো যে কিছু ছেলে এবং মেয়ে বাচ্চাকে যদি ভিন্ন একটা গ্রহে ঝোকশূন্য রোবটের তত্বাবধানে বড় করা হয় তাহলে কি তাঁদের আচরণ অনুভূতির প্রকাশে পার্থক্য হবে না নাকি হবে?

চিন্তা ভাবনা করে মনে হল: পুরাপুরি এক হবে না। কারণ জৈবিক কারণ আর পরিবেশের প্রভাব -- এই দুইটার সম্মিলিত ইফেক্ট তো আলাদাই হওয়ার কথা।

এটার সপক্ষে একটা নিউমেরিক মডেল কল্পনা করছি: জৈবিক বৈশিষ্টের কারণে কোন একটা স্বভাবের (ধরুন অন্তর্মূখিতা) ঝোঁক ছেলে: -১, মেয়ে: +১ আবার পরিবেশের কারণে সেই স্বভাবে প্রভাব ছেলে: +৫, মেয়ে: +৫ (সমান ইফেক্ট) --- কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে সম্মিলিত ভাবে ছেলে: ৪ আর মেয়ে: ৬। অর্থাৎ পরিবেশের প্রভাব সমান হওয়া সত্বেও মেয়ে বেশি অন্তর্মূখি।

কিন্তু যদি সেই ছেলে মেয়েগুলোকেই রোবট দিয়ে পালন না করে সাধারণ কোন একটা ঝোঁক সম্পন্ন সমাজে লালন পালন করা হত, তাহলে সেটার জন্য প্রভাব হয়ত এমন হত - ছেলে: +৩, মেয়ে: +৫। এবং কিউমুলেটিভ বা সম্মিলিত ইফেক্ট ছেলে: ২, মেয়ে: ৬। এখানেও মেয়ে বেশি অন্তর্মূখি কিন্তু ছেলে মেয়ের পার্থক্যটা বেশি।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

কাজেই এই পরীক্ষার ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে জন্মের সময় যতটুকু জৈবিক পার্থক্যই থাকুক না কেন, পরিবেশের প্রভাবে নারী ও পুরুষের মানসিকতা গড়ে উঠে। এই ফলাফলটা এমনই যে, অতীতের অনেক বিবর্তনের তত্বের (কিংবা অন্যদিকে ধর্মীয়) ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।

চলুক

নারী পুরুষের ভিন্নতা সৃষ্টির জন্য এই সমাজ তথা আমরাই দায়ী, আর এই বৈষম্য দুর করার ক্ষমতাও তাহলে আমাদের মধ্যেই আছে।

চলুক

শামীম, লেখাটা খুব ভাল লেগেছে । এরকম লেখা আরো আশা করব । এই ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষনা ভিত্তিক আলোচনা যত হয়, ততই ভালো । অনেক প্রাচীন ধ্যান-ধারনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করাটা জরুরী ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

শামীম এর ছবি

আমার লেখার পাঠক হিসেবে আপনাকে পাওয়াটা আমার জন্য একটা বড় প্রাপ্তি।

আমার নিজের কন্যা সন্তানের কথা খেয়াল করে এই লেখাটার তাগিদ এসেছিল মাথায়। সবসময় লেখার মত স্থিরতা থাকে না -- তবে চেষ্টা আছে, আউটলাইন তৈরী করা ড্রাফট পড়ে আছে অনেকগুলো।

প্রথম পাতার নিয়ম, আর পার্সোনাল ব্লগ ছাড়া অন্য জায়গার অপ্রকাশিত লেখার নিয়ম মানতে গিয়ে কিছু জিনিষে ছাড় দিতে বাধ্য হই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

আমার নিজের কন্যা সন্তানের কথা খেয়াল করে এই লেখাটার তাগিদ এসেছিল মাথায়।

শামীম, আপনার এই লেখাটা আমাকে অনেক ভাবিয়েছে । এরকম অনেক লেখার ভাবনা মাথায় আসে, কিন্তু আলস্য ঝেড়ে উঠে, পড়াশুনা করে লেখা হয়ে উঠে না ।

আপনাকে যে জন্য আবার লিখছি । শুধু আপনার কন্যা সন্তানটির জন্যই না...আপনার আমার ঘরে ঘরে বেড়ে ওঠা পুত্র সন্তানদের জন্যও খুব জরুরী এই ধরনের গবেষনাধর্মী লেখা । কারন সত্যিকারের সুখী গৃহকোণ, প্রগতিশীল সমাজ গড়তে হলে একজন নারীর মুল্য একজন মানুষের হতে হবে, ১০টি গরুর নয় ।

এরকম লেখার দাবী আবারও রেখে গেলাম ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

ইভা এর ছবি

শামীম ভাই খুব ভালো লাগলো আপনার লেখাটা পড়ে। আমি আর একটা লেখায় হাত দিয়েছিলাম মেয়েদের নিয়ে কিন্তু একদম সময় দিতে পারছিনা। আপনার লেখা আমাকে উৎসাহ দিচ্ছে। খুব ভালো লিখেছেন এবং অনেক তথ্য বহুল বলে খুব ভাল লাগলো। আশা করি আরো লিখবেন এই প্রসঙ্গে।

শামীমা রিমা এর ছবি

তথ্য বহুল লেখা । চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুণ লেখা। এইধরনের গবেষনা খুবই সাড়া জাগানিয়া, বিধায় এগুলোর মান এবং গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও যথেষ্ট আলোচনা প্রয়োজন। এ নিয়ে আমার দুইটি প্রতিক্রিয়াঃ
১।Cognitive Science of Religion (এর বাংলা কি হবে ধর্মীয় জ্ঞানীয় বিজ্ঞান?) নামে বিজ্ঞানের একটা শাখা আছে যেখানে বিবর্তনবাদ এবং কগনিটিভ বিজ্ঞানের আলোকে ধর্মীয় জ্ঞান ও আচরণকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। এরকমই কিছু জিনিস ঘাটতে গিয়ে একটা রিপোর্ট হাতে এসেছিল বছর খানেক আগে। এই ধরনের, কিন্তু আরেকটু জটিল কিছু পরীক্ষা দিয়ে সেই গবেষকরা দেখতে চেয়েছেন যে কোনো দলের মধ্যে কম্যুনিটি ভাব, প্রো-সোশ্যাল বা সামাজিক চিন্তা গড়ে ওঠার পিছনে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের প্রভাব কতটুকু। কোনো সঠিক উত্তর তারা পান নি। কিন্তু মাঝখান দিয়ে আরও একটা মজার জিনিস বের করেছেন। সেটা হল সেক্যুলার (নাস্তিক ও ধর্মহীন ঈশ্বরে বিশ্বাসি)নারী-পুরুষদের এবং ধার্মিক নারীদের মধ্যে কম্যুনিটি ভাবটা ধার্মিক পুরুষদের চাইতে কম। একটু ব্যাখ্যা করি। পরীক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে তারা বেছে নিয়েছেন কিবুতজিম নামের ইজরায়েলের একটি জাতিকে। সেখানকার ধার্মিক এবং অধার্মিক লোকদের নিয়ে দুটো গ্রুপ করা হয়েছে, যেখানে একই পরীক্ষা তাদের দিয়ে করানো হয়েছে। তাদের জন্য পরীক্ষাটা ছিল অনেকটা এমন - একই গ্রুপ থেকে দুইজন লোক নিয়ে তাদের দুইটি আলাদা ঘরে নিয়ে একটা খামে ১০০ শেকেল (ইজরায়েলি টাকা) দিয়ে বলা হবে, সে সেখান থেকে কিছু টাকা নিতে পারে।তার সঙ্গীও অন্য ঘরে আরেকটা খাম থেকে কিছু টাকা নিবে। তাদের দুইজনের টাকার মোট অঙ্ক যদি ১০০ থেকে কম হয় (ধরি n), তাহলে তাদের নেয়া টাকার পাশাপাশি n এর দ্বিগুন পরিমাণ টাকা তাদের ভাগ করে দেয়া হবে। পরীক্ষার শেষে দেখা যায়, ধার্মিক পুরুষেরা গড়ে ২৬ শেকেলের মত নিয়েছে। অন্যদিকে, ধার্মিক নারী নিয়েছে গড়ে ৩০। কিন্তু, অধার্মিক নারী-পুরুষের মধ্যে টাকা নেয়ার হারে খুব একটা তফাত দেখা যায়নি (গড়ে ৩০ এর মত)।আলোচনার শেষে গবেষকরা এও বলেছেন, যে কম্যুনিটি ভাবের জন্য না, বরং ধার্মিক পুরুষের ঝুঁকি-বিরাগীতাই এখানে মূল কারণ। অর্থাৎ, বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেও তারা একে অপরকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেননি। অপরদিকে অধার্মিক নারী-পুরুষেরা, এমনকি ধার্মিক নারীদের মধ্যেও ঝুকি নেয়ার প্রবণতা বেশি। কিন্তু এর পাশাপাশি আরো নানান কারণ-ও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে, যেমন কারা কতদিন ধরে বসবাস করছে একই সমাজে, কারা কতটা আচার পালন করছে ইত্যাদি।
এই অপ্রাসঙ্গিক গবেষণাটার কথা এত ঘটা করে এজন্যে লিখছি, কারণ এ ধরনের গবেষণায় নারী-পুরুষের মত একটা ফ্যাক্টরকেই যদি আমরা নিয়ামক ধরি তাহলে লাভের চেয়ে ক্ষতি হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। মাসাই আর খাসিয়া –এই দুইটি জাতিই পরীক্ষার জন্য কেন বেছে নেয়া হল সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হওয়া উচিত। যদিও কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে একটি জাতি পুরুষতান্ত্রিক, অপরটি মাতৃতান্ত্রিক, তাই নারী-পুরুষের ভিন্নতা বোঝানোর জন্য এটি একটি ভাল তুলনা। তারপরও, দুটি জাতির মধ্যে চিন্তা চেতনার আকাশ পাতাল তফাত। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিক, ঐতিহাসিক, ঔপনিবেশিক ইত্যাদি যদি বাদও দেই, শুধু ধর্মীয় চিন্তার পার্থক্য বিশ্লেষণ দিয়েও হয়তো একই উপসংহার টানা সম্ভব । আগ্রহীদের জন্য উপরের রিপোর্টটার লিঙ্ক দিচ্ছিঃ http://www.anth.uconn.edu/faculty/sosis/publications/sosis%20and%20ruffle%20kibbutz%20CA.pdf
২/ যেসব পরীক্ষায় অর্থ অর্থাৎ টাকা কড়ির ব্যাপার স্যাপার থাকে সেগুলো দিয়ে মানুষের মনস্তত্ত্ব বিচারের ব্যাপারে আমি সবসময়ই একটু সন্দিহান হই। কারণ আমার ধারণা অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে পুরো ঘটনাটাকেই হয়ত অন্যভাবে ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে। কিন্তু, আমি অর্থনীতি সম্পর্কে একেবারেই মূর্খ। অন্য কেউ হয়তো আলোকপাত করতে পারেন।

সবশেষে, এধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ভিত্তিক একটা লেখার জন্য সাধুবাদ জানাই।

শামীম এর ছবি

আপনার মন্তব্য এবং বিস্তারিত লিখনির জন্য আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ। মনস্তত্ব এবং এই ধরণের রিসার্চগুলো আসলে আমার নিজস্ব আওতার বাইরে তাই বেশি গভীরে আলোচনার ক্ষমতা রাখি না, আশায় থাকি যে যাঁরা ভাল জানেন কিন্তু আলাদা পোস্ট লেখার সময় নাই, তাঁদের মন্তব্য থেকে আরও গভীরভাবে বিষয়টাকে জানবো।

আমার মনে হয়, চিন্তাভাবনার খোরাকের জন্য এই ধরণের ফলাফলগুলো ভাল। পডকাস্টের সবকিছু ডিটেইলে লেখার মত ধৈর্য আমার ছিলনা। দুটো কমিউনিটি বেছে নেয়ার কারণ যতটুকু বুঝেছি সেটা বলার আগে গবেষকের ব্যাকগ্রাউন্ডটা বলি: উনি একজন ইকোনমিস্ট যিনি মূলত আচরণগত বৈশিষ্ট বিশ্লেষনের কাজই করেন এবং গবেষক শিক্ষক। ওনার হাইপোথেসিস ছিল যে সামাজিক চাপ বা প্রভাব একজন নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্যাটার্নকে প্রভাবিত করে। এই হাইপোথেসিসটা পরীক্ষা করার জন্য দুটো এক্সট্রিম সোশাল সেটআপ বেছে নিয়েছিলেন - গ্রামগুলোর সন্ধান দিয়েছিলো তার অ্যানথ্রপোলজিস্ট।

হাইপোথেসিসটাই এমন, যে এই এই বৈশিষ্টের কারণে এমন হয় --- কিন্তু কোনো সোসাইটিতে অনেকরকম বৈশিষ্টের মিশ্রন থাকে তাই কেন কোনটা হয় বের করা মুস্কিল। যতদুর বুঝি এক্সট্রিম ঝ‌োঁকের গ্রাম বেছে নেয়া হয়েছিলো এজন্যই যে এখানে এই হাইপোথেসিস অনুযায়ী ফলাফলটা কী হতে পারে আগেই সেটার স্পষ্ট প্যাটার্ন ফোরকাস্ট করা যায় -- ফোরকাস্টের সাথে টেস্টের রেজাল্ট ম্যাচ করলে সেটা হাইপোথেসিসের সঠিকতা নির্দেশ করবে। এখানে দুইটা বিপরীত এক্সট্রিম কন্ডিশনে ফলাফল অনুমানের অনুরূপ।

এখানে তাদের আশা/উদ্দেশ্য ছিল সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রভাবক ভেরিয়েবলগুলো মধ্যে শুধুমাত্র একটা ভেরিয়েবলকে পরিবর্তন করা। এই দুটো গ্রামে সেই ভেরিয়েবলটা বিপরীত মেরুতে, বাকী ভেরিয়েবলগুলো কাছাকাছি। যদিও এটাকে থিওরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আরও অনেক বিস্তারিত ব্যাখ্যা লাগবে, আরও অনেক স্যাম্পলে এটা টেস্ট করতে হবে।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

মানিক মনিরুল এর ছবি

ঠিক এমন একটা লেখাই খুজছিলাম পড়ার জন্য। অনেক ভালো লাগল। অনেক কিছু জানলাম। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ একটি গবেষণামূলক পোস্ট। গত তিন চারদিনে বারকয়েক পড়েছি। আপনার ধৈর্য্যকে স্যালুট। আর সেই সাথে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- এতো চমৎকার একটি পোস্ট পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে।

সামি

কৌস্তুভ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং। এধরনের নানা স্টাডির খবর নানা সময় পড়েছি, আপনি একটা সংক্ষিপ্ত রিভিউ দিলেন। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

জানা হলো, জানা গেলো, এভাবেই এগিয়ে যাক

তুষার রায়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।