আমার আগামীকে নিয়ে শঙ্কায়

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি
লিখেছেন অমি রহমান পিয়াল (তারিখ: শুক্র, ০৮/০৬/২০০৭ - ১০:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:
১. সিএমসিতে এক তালেবর ছাত্রনেতার কাহিনী সাড়া ফেলছিল। স্থানীয় এক ছেলে পাপ ঢাকতে তার শরণ নিছিল। বাচ্চাটা বিক্রি করা হইছিল। সেইটা ঢাকতে গিয়া আরেক কাহিনী। যাক সে কথা। হাসপাতালগুলাতে বাচ্চাকাচ্চা ইধার-উধার হয় বহুত আগে থাইক্যা। মেয়ে বাচ্চা বদল হয় বেশি। আয়া এবং ওয়ার্ড বয়রা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আকামটা করে। সম্প্রতি পত্রিকায় আসছে ডিএনএ টেস্ট কইরা এক দম্পতি জানছে কাউয়ার ঘরে কুকিলের ছাওর কথা। ২. ছোটবেলায় আমার এক আতঙ্কের নাম ছিল ছেলেধরা। মা আমারে জুজুটা দিত ভাল মতোই, আমার নাকে রুমাল চাইপা ধইরা বস্তায় ভইরা নিয়া যাইব কেউ। কারো খাবার খাবা না, অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলবা না। স্বাধীনতার পরপর ব্রাক্ষণবাড়িয়া মিশন স্কুলে আমাদেরই ক্লাসের সুমি নামে একটা মেয়েরে অপহরণ কইরা হত্যা করা হইছিল। আমি আতঙ্কিত থাকতাম। ৩. উটের জকি সেদিনের কথা। টুকরা কইরা প্রত্যঙ্গ বিক্রির গা শিউরানো নির্মমতার কথাও শোনা যায়। এক জায়গায় অনেকগুলা বাচ্চার মাথার খুলি পাওয়া যাওয়ার খবর পত্রিকায় আসছিল। তার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম পোলাপাইন ধইরা নিয়া হাত-পা ভাইঙ্গা ভিক্ষুক বানাইয়া দেয়া হয়। কোনটা সত্য জানি না। নারী ও শিশু পাচারের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানি, কিন্তু তার আগ্রাসি রূপটার সঙ্গে তেমন পরিচয় নাই। ৪. প্রতিদিন তিন-চারটা সিগনালে থামতে হয়। সবগুলাতেই থামা গাড়িতে হাত বাড়ায় আবালবৃদ্ধবনিতারা। বেশিরভাগ প্রতিবন্ধী। সবচেয়ে চমকপ্রদ সমাহারটা কলাবাগান মোড়ে, ধানমন্ডীর দিকে বাঁক নিতে। এইখানে বাচ্চারা সংখ্যায় বেশী। একেকজনের একেক অবস্থা। হাত নাই, পা নাই, টিউমার, মানসিক প্রতিবন্ধী ইত্যাদি ইত্যাদি। বুড়া-বুড়িও প্রচুর। একদিন খেয়াল কইরা দেখলাম, তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা যেমন, তেমনি সমঝোতাও। তারা একটা সমাজ মেন্টেইন করে। একজন একটা জুস দিছে একটা বাচ্চারে। সে তা আরো দুইজনের সঙ্গে ভাগ কইরা খাইল। সবার মুখ হাসিতে ঝলমল। ৫. আন্ডার ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে যেটুকু ধারণা তাতে নারী-শিশু তাদের জন্য দারুণ মুনাফার পণ্য। এবং ভিক্ষুকদের ওপর কর আদায় করা হয়। প্রতিটা জায়গার জন্য এসব ভিক্ষুক জায়গামতো নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতে বাধ্য। ভিক্ষা করা, রাতে থাকা, সব কিছুর জন্যই তারা আয়করের আওতায় ওই অন্ধকার বলয়ে। ব্যাপারটা সম্পর্কে খুব ভালো না জাইনা মন্তব্য করা ঠিক না। তবে আমি একদম ভুল জানি না। ৬. সেদিন রাস্তায় এক বিকট মহিলাকে এক নবজাতক নিয়ে রিকশায় উঠতে দেইখ্যা আমার বুকটা মোচড় দিয়া উঠছিল। মনে হইছে সে বাচ্চাটার মা না। আমার পুলিশ ডাকা উচিত। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ভাবনাই আমার সীমাবদ্ধতা। তার আগে একদিন দুই নেশাখোরের কাছে দেখছি একটা বাচ্চা। এফডিসির সামনের আখড়ায় এক পাবলিক আসত তার বাচ্চা নিয়া, বাপে হেরোইন খাইত, বাচ্চারে ভাড়া দিত শুটিংয়ের জন্য। পরে এক সিনেমায় বাচ্চারে দেইখ্যা মা জানতে পারছে ঘটনা। সে আরেক কেলেংকারি। ৭. আমিও বাবা হমু। আমার সন্তানের ভবিষ্যত নিয়াও আমি শঙ্কিত। ক্যামন লাগে সন্তান চুরি হওয়া এসব বাবা মায়ের? ভাবতে চাই না। জুজুটা ফির‌্যা আসল অন্যরূপে, অন্যভাবে।

মন্তব্য

ভাস্কর এর ছবি
হুমম... ----------------------------------------------------- বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!

স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হাসিব এর ছবি
বস. কাহিনীটার যেই অংশটা আপনার সেইটা কি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা ?
অমি রহমান পিয়াল এর ছবি
সত্য ঘটনা হাসিব ...................................... তুমি হাসো, আমি কাঁদি, বাঁশি বাজুক, কদম তলেরে...

তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

হাসিব এর ছবি
অমি রহমান পিয়াল এর ছবি
একটু ডিসক্লেইমার, ছাত্রনেতাটা আমি না। ঘটনাটা জানি। বাচ্চার বাপ হওয়ার কথা যদি বুঝান, তাইলে ঠিকাছে। মাথা পেতে নিলাম অভিনন্দন .............................. তুমি হাসো, আমি কাঁদি, বাঁশি বাজুক, কদম তলেরে...

তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

উৎস এর ছবি
বাবা হওয়ার সমস্যা হচ্ছে একবার হলে আর পিছিয়ে আসার উপায় নেই।
অমি রহমান পিয়াল এর ছবি
কথা সইত্য ............................... তুমি হাসো, আমি কাঁদি, বাঁশি বাজুক, কদম তলেরে...

তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

উৎস এর ছবি
এজন্য বাবা হতে ভয় করে, আবার অস্বস্তিও লাগে, কেমন প্যারেন্টাল ইন্সটিঙ্কটা আসে না। আসলে বাবার দ্বায়িত্ব অনেক বেশী, তবে অমি ভাই পারবেন, অনেক ভালো ভাবেই পারবেন।
কনফুসিয়াস এর ছবি
এইসব কাহিনি পড়লে গা শিউরাইয়া উঠে। কদিন আগে না পত্রিকায় আসলো যে ভৈরবে পেটের বাচ্চা মেরে ফেলতো গর্ভপাতে টাকা বেশি বলে! এইটা কেমন করে কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব বুইঝা পাই না! ----------- পিয়াল ভাই, অভিনন্দন! ঘুরে ঘুরে আবারো সুকান্তের মত নবজাতকের কাছে অংগীকার করতে হবে আমাদের। এটাই! -কনফুসিয়াস

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সচলায়তন এর ছবি
অভিনন্দন -------------------------------------- ঈশ্বরের ক্ষমতা অসীম, তথাপি তিনি ক্লীব

_________________________________
সচলায়তন.COM কর্তৃপক্ষ

অমিত এর ছবি
সবাই মনে হয় খুব ভয়ে ভয়ে অভিনন্দন দিতাসে !! ঘটনা কি ?? অঅঅঅভিনন্দন।।।। ঝ ঝ ঝ।।। সিগার একখান পাওনা থাকল...
সৌরভ এর ছবি
ছোটবেলায় একটা বই পড়েছিলাম, নাম মনে নেই - ওপারবাংলার কারও লেখা। ছোট ছোট বাচ্চাদের নুলো-কানা করে দিয়ে রাস্তায় ভিক্ষে করতে নামিয়ে দিতো। তারপর থেকে চলতি পথে এরকম কাউকে দেখলেই আমার মনে পড়তো ওই বইটার কথা । ভয় হতো, কেউ এদেরকে নুলো-কানা করে নামিয়ে দিয়েছে না তো ! ------ooo0------ এই আমি যদি জেগে উঠি অন্য কোন সময়ে অথবা অন্য কোন পৃথিবীতে ,তবে কি পারতাম আমি অন্য একজন হয়ে উঠতে ?

আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

sklep rowerowy এর ছবি

Thanks

সৌরভ এর ছবি
নতুন প্রজন্মের আগমনে,দায়িত্বের ভাগটাই বোধহয় খুব বেশি । শুভ কামনা সবসময়ের জন্যে । ------ooo0------ এই আমি যদি জেগে উঠি অন্য কোন সময়ে অথবা অন্য কোন পৃথিবীতে ,তবে কি পারতাম আমি অন্য একজন হয়ে উঠতে ?

আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আরিফ জেবতিক এর ছবি
মুরুব্বি হিসাবে বেশি অভিনন্দন জানাইতে গেলাম না। নাতি নাতনির মুখ দেইখা মরলে সুখ।
হাসান মোরশেদ এর ছবি
অভিনন্দন । দ্বিপদী থেকে চতুস্পদী,তারপর ষষ্ঠপদী, তারপর... মানুষ ক্রমশঃপিপীলিকা হয়ে উঠে,হাহাহা -------------------------- আমি সত্য না হলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হযবরল এর ছবি
শুভেচ্ছা পিয়াল ভাই। অনেক অনেক শুভচ্ছা। প্যারেন্টহুড বেশ বড় দায়িত্ব।
অমি রহমান পিয়াল এর ছবি
ধন্যবাদ সবাইরে। মুরুব্বী, কথা সেইটাই .................................. তুমি হাসো, আমি কাঁদি, বাঁশি বাজুক, কদম তলেরে...

তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।