হীরক রাজার দেশে ৯

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শনি, ১০/১১/২০০৭ - ৭:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতিহিংসাপরায়নতা এই অনির্বাচিত সরকারের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য, তারা কোনো মূল্যেই বিরোধিতা সহ্য করতে নারাজ এবং এ জন্য তারা যেকোনো শক্ত পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর। এমনও হয় যে এই কঠোর অবস্থান তাদের ভুমিকাকে নেতিবাচক করছে এমন কি প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাদের সদিচ্ছাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশন আবারও প্রমাণ করলো তারা আদতে বড় কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লিপ্ত। কি সেই পরিকল্পনা তা এখনও স্পষ্ট নয়- বদরুদ্দোজা কিংবা কিছু রাজনৈতিক বলছে জাতিয় ঐক্যমতের সরকার গঠনো কথা, এবং ্এ বিষয়ে একটা প্রস্তাবনাও চালু আছে বাজারে, সেটা নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করবার পক্ষপাতি আমি নই। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট যে এই অনির্বাচিত সরকার স্বস্তিতে নেই, তারা বরং একটা ভীতির ভেতরে আছেন, এবং তাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত নয় তারাও। যদিও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই অনিশ্চয়তা ভয়ংকর তবে তাদের নিজেদের পিঠ বাঁচানো সুশীল মূল্যবোধের বিরোধিতা তারা হজম করতে চাইছে না। তারা প্রয়োজনে আরও অরাজকতার ভেতরে ফেলে রেখে পালিয়ে যেতে পারেন। এবং তারা এর দায়ও নিতে চাইবেন না। বরং ১০১টা অজুহাত তাদের ক্যাসেটের ফিতা বন্দী। তারা একএকটা ব্যর্থতার কারণ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার পুরোনো গল্প শোনাবেন আমাদের।

বিএন পি নিয়ে একটা অস্থিরতা তৈরী করে নির্বাচন কমিশনের নব নিযুক্ত নিরপেক্ষ(!!!!) কমিশনারেরা উধাও। তারা যে ঘটনার আঁচ গায়ে মাখনেস না এবং সংস্কার প্রশ্নে তাদের অবস্থান যে মান্নান ভূঁইয়াদের পক্ষে এ কথাটা
নগ্নভাবে প্রকাশ করে তারা উধাও, এমন কি যদিও তাদের রাজনৈতিক দলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলে না জড়ানোর একটা মহান প্রথা আছে তবে তারা মনে করে মান্নান ভূঁইয়ার সমর্থকেরাই আসল বিএনপি এবং দলের সবাইকে তার অনুসারী হতে হবে। এবং তারা প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে গেছে মানো কিংবা না মানো তালগাছ আমার আর এই তাল গাছে কে হাঁড়ি বাধবে সেটাও আমরা ঠিক করে রেখেছি, তোমাদের কাজ আমাদের এই অনৈতিকতাকে সমর্থন করা এবং মেনে চলা। যদি কেউ বিদ্রোহ করতে চাও লাঞ্ছনার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকো।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের শেষ বক্তব্যের নির্যাস অনেকটা এরকম। তারা আভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না তবে মান্নান ভূঁইয়ার বরখাস্তের ঘটনাকে তারা যৌক্তিক ভাবেন না বরং ভাবেন মান্নান ভূঁইয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয় নি। অন্যায় স্বেচ্ছাচারিতার শিকার মান্নান ভূঁইয়া এবং সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তি। তবে এই মান্নান ভূঁইয়া কি অপরাধে লিপ্ত ছিলো না? সৎ রাজনৈতিক এমন বক্তব্যের পরিসীমা নির্ধারণ করে যত বড় বৃত্তই আঁকা হোক না কেনো মান্নান ভূঁইয়া সে বৃত্তের অন্তর্ভূক্ত হতে পারবে না। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তার নিজস্ব নির্বাচনী এলাকার এবং পাশ্ববর্তী নির্বাচনী এলাকার সন্ত্রাসীদের সহযোহিতার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে, শিবপুর এবং নরসিংদির মানুষেরা আরও ভালোভাবে বলতে পারতে তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের কথা।

তবে এই সৎ(!!!) রাজনৈতিকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, তিনি সৎ এবং সরকারের অনুগত। এই আনুগত্য তাকে জেলের দেয়াল থেকে পৃথক করেছে। সরকার তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পায় নি এমন না, তবে কিছু কিছু রাজনৈতিক মিত্র প্রয়োজন সরকারের, বি এন পি লীগ. জোট এবং মহাজোট যাই বলা হোক না কেনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে ২টা চালিকাশক্তি, লীগ এবং বি এন পি, দুর্নীতিতে জর্জরিত হলেও এখনও মানুষ অগ্যতা তাদেরই ভোট দিচ্ছে এবং তাদের ভেতরে যে বাসনা কাজ করে তা হলো যদি আমার ভোট প্রধান শাসক দল কিংবা বিরোধী দলের প্রতীককে কালিমালিপ্ত না করলো তাহলে তার ভোট ব্যর্থ হলো।

হান্নান শাহএর অভিযোগ ছিলো তিনি স্পষ্ট করে কলেছিলেন এ অনির্বাচিত সরকার রাজনীতি অঙ্গনে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টায় লিপ্ত এবং এ কাতে সরকার ব্ল্যাক মেইল করছে। কথাটা সত্য কি মিথ্যা এটা প্রকাশ করে সরকারের পদক্ষেপ এবং এখন পর্যন্ত যে ধারাবাহিকতা মেনে রাজনৈতিকদের শায়েস্তা করবার প্রচেষ্টা চলছে তাতে বলতে বাধ্য হচ্ছি আসলেই একটা ব্ল্যাক মেইলিং এর পচা গন্ধ লাগছে নাকে। সাইফুর রহমান বিদ্রোহ করেছেন নাকি বাধ্য হয়েছেন এমন আচরন করতে? সেখানে উপস্থিত মানুষেরা কোনটাকে বেশী পছন্দ করবে, মুক্ত থাকা এবং জেলে থাকবার ভেতরে মুক্ত থাকতে চাওয়ার মতের পাল্লা ভরি আপাতত।

তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবার মহান ব্রত নিয়েছেন তবে সমস্যা হলো আইনের অপন্যবহার ঘটছে তাদের হাতে। তাদের নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য আছে এবং তারা সম্পুর্ণ নির্বাহি বিভাগের উপরে সেই লক্ষ্য পূরণের ভার অর্পণ করেছেন। তাদের প্রথম ইস্যু ২ নেত্রীতে অপসারণ. যদিও এটা নিশ্চিত নয় এখনও এই ২ নেত্রী কি কারণে এত বিশী বিরাগভাজন তাদের? প্রথমত তারা সুশীল পতাকার ছায়াতলে কর্পোরেটদের মুখপত্র প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এসেছেন, তাদের খুঁটি গাড়বার পেছনে তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার দায় যতটা ঠিক একই পরিমাণ দায় বর্তায় এই ২টি পত্রিকার উপরে। এমন কি প্রাথমিক সমর্থন নির্মানে এই ২ পত্রিকাই তাদের অনেক পৃষ্ঠা ব্যয় করেছে দানবের থাবা ভরে দিতে। এর ফল কি হতে পারে এটা অনুমান না করেই কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গিয়ে এতটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশে।
যদি তাদের আগমনে এবং তাদের গতিপথ নির্ধারণে সংগ্রাম এবং নয়া দিগন্ত থাকতো তবে একটা বিষয় বলা যেতো আদতে এটা নারী নেতৃত্ব হারাম বানী উদ্ভুত পরিস্থিতি। যাই হোক এই মাইনাস ২ ফর্মুলা বাস্তবায়নের ফলে ঠিক কি উদ্ধার হবে আমি বুঝি না, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সম্পূর্ণ দায়ভার এই ২ নেত্রীর কাঁধে চাপানোর সহজ পন্থার উদ্ভাবত কে সেটাও জানি না। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দুর হতো যদি এই ২ নেত্রী মুখোমুখি বসে আলোচনা করতো, এ মত হুমায়ন আহমেদের কলম থেকে বাহির হওয়াটা অনুমেয়, তার আসলে বসবাস কল্পলোকে, বাস্তবের রাজনীতির ম্যারপ্যাঁচে তার আনাগোনা নেই। তাদের প্রতিনিধিরা নিয়মিত সংলাপে বসেও একটা অচলাবস্থা নিরসন করতে ব্যর্থ। ব্যর্থতার দায় ২ নেত্রীর না, বরং নেপথ্যে যারাই ক্রিয়াশীল থাকুক না কেনো, মূল দায়ভার আসলে মান্নান ভূঁইয়ার, এবং যেটা অনুমাণ করা হচ্ছে এই যে বিচারপতি বিষয়ক একটা কোন্দল সৃষ্টি এবং আজিজ কেলেংকারী এ ২টাই আসলে বি এন পির নীতি নির্ধারকেরা গ্রহণ করেছিলো কারণ তাদের ধারণা ছিলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এই ২ দলের আভ্যন্তরীণ বিবাদের ফলে ভুক্তভোগী জনগণের কথা কখনই বিবেচনায় আসে না।
একর পর এক বৈঠক এবং একই স্থানে একই অচলাবস্থায় ফিরে আসা। নির্বাচন এবং ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগের সত্যতা প্রকাশিত হয়েছে একটা উপজেলার ৭৫ শতাংশ ভোটার জাল। এবং এই ভোটার তালিকা তৈরি করেছে কারা? নি এন পি যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে জিততে বদ্ধ পরিকর না থেকে যদি প্রতিদন্ডীতায় বিশ্বাশী হতো তবে পরিস্থিতি ভিন্ন রকম হতো।

তবে একটা সমস্য হলো তাদের এই মাইনাস ফর্মূলার গলদ হলো এতে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করা হচ্ছে স্বীয় লক্ষ্য পূরণের সিড়ি হিসেবে- এবং তাদের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রহনযোগ্য না হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা। আদতে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের নাম উল্লেখ নেই তাদের চুড়ান্ত প্রতিবেদনে অপরাধী হিসেবে লিপিবদ্ধ করবার প্রথাটা আইনসম্মত নয়। এমন কি এই যে এত ঝামেলা করে এক একটা অপরাধে অভিযুক্ত করে তাদের কারান্তরীন রাখবার চেষ্টা করা হচ্ছে এসবও একটা পর্যায়ে ব্যর্থ প্রমানিত হবে। তখন কি করবে এই পরিকল্পকেরা?

বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো সরকারের পক্ষ থেকে ২ নেত্রী এবং তার পরিবারবর্গকে। প্রথমে ট্রথামত অস্বীকার করবার পরে মইনুল হোসেন স্বীকারোক্তি করেছেন একটা এমন উদ্যোগ গ্রহনের চেষ্টা করেছিলো সরকার। অর্থ্যাৎ সংবাদপত্রে জল্পনার সবটুকুই নির্জলা মিথ্যা অনুমান ছিলো না। সেখানে সার কিছু ছিলো, এমন কি বছরের প্রথমার্ধে গ্রেফতার হওয়ার কয়েক দিন আগে হান্নাহ শাহ বক্তব্যে বলেছিলো কেউ কেউ ব্ল্যাক মেইলিং করে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করবার চেষ্টা করছে। এবং হয়তো এটার নিদর্শণ হিসেবেই মান্নান ভূঁইয়া সরকারের আস্থাভাজন হয়েছেন, সরকার তার উপরেই নির্ভর করছে এবং সংশোধিত খালেদামুক্ত বিএনপি গঠনের নক্সা তৈরি করেছে। একই রকম সংকেত পাওয়ার পরে এই যে একটা পরিস্থিতি তৈরি হলো এবং একটা চাচক্রে গৃহীত সিদ্ধান্তকে প্রামাণ্য ধরে নিয়ে সেটাকে বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছে অনুমান করে একই রকম ভাবে নির্বাচন কমিশনের গৃহীত সিদ্ধান্ত কোনো ভাবেই সরকারের পরিকল্পনার বাইরের কিছু এমনটা অনুমানের কোনো সুযোগ এখানে নেই। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য হলো মান্নান ভূঁইয়া যে বিএনপির অংশ সেটাই মূল ধারা এবং এটকেই আলোচনার টেবিলে ডাকা হয়েছে। এবং এই সিদ্ধান্ত যে আরও একটা রাজনৈতিক সংঘাতের জন্ম দিতে পারে এমনটা অনুমান করে নি এই পরিকল্পনা করেছে যেই নির্বোধের দল তারা। তাদের ধারনা ছিলো এবং পরিস্থিতিই এমন তৈরি হয়েছিলো যে দিনে রাতে সংবাদ মাধ্যম জানার প্রচেষ্টা করছিলো এবং জানানোর চেষ্টাও করছিলো কারা নিজেদের মূল বিএনপি ভাবছে। মান্নান ভূঁইয়া বহিস্কৃত হওয়ার পরও তার উপরে আস্থা কমে নি সরকারের, এবং ঐক্যের প্রচেষ্টা গৃহীত হওয়ার পরে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে এবং সেই উদ্ভট চা চক্রজাত রাজনৈতিক গোলোযোগে মান্নান ভূঁইয়া অন্তর্ভুক্ত হলেও সেটা মূলত অবনমন। ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক পদে হাফিজুদ্দিনের অন্তর্ভুক্তি একটা বিষয় নিশ্চিত করে যে মান্নান ভূঁইয়ার গ্রহনযোগ্যতা যে বি এন পির ভেতরে শূণ্য এটা স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপলব্ধি করেছেন। তবুও পরোক্ষ কোনো চাপ থেকে কি এই অন্তর্ভুক্তি? প্রশ্নটা এখানেই, মৃত ঘোড়াকে রেসে নামানোর পর নির্বাচন কমিশনের হুমকি যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া হয়তো গ্রহনযোগ্য হতে পারে তবে এই গ্রহনযোগ্যতার মূল শর্ত সেখানে মান্নান ভূঁইয়ার উপস্থিতি থাকতে হবে।

শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পরে তাকে দেশে ফিরতে দেওয়া হবে না এমন প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়া হয়েছিলো, তাকে ফিরলেই গ্রেফতার করা হবে এই হুমকি মাথায় নিয়ে তার প্রত্যাবর্তন এবং এর পরেই মিথ্যা একটা মামলায় তাকে আটক করা যে মামলার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে, যদিও অভিযোগ আছে এটাও পরোক্ষ একটা চপাপ দিয়ে রুজু করা হয়েছে, শেখ হাসিনা অভিযুক্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলো না তাকে আটক করা এবং সেটাকে আরও বর্ধিত করা এবং পুলিশের উপরে চাপ দিয়ে নিজেদের চাহিদামফিক তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া আসলেই কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে? এটা আদতে কোন বক্তব্য প্রকাশ করে? পুলিশের বিরুদ্ধে নান রকম অভিযোগ আছে তবে একটা অভিযোগ সবসময়ই প্রতিষ্ঠিত তা হলো পুলিশ আদতে ক্ষমতাসীনদের হয়রানি করবার যন্ত্র। এবং এই অভিযোগ স্বীকার করেই বর্তমান পুলিশের মহা পরিচালক পুলিশশোধন কর্মসূচি গ্রহন করেছিলেন তবে পুলিশের নৈতিকতা বদলায় নি।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহন করা জরুজি ছিলো, আদতে পুলিশ কার নিয়ন্ত্রনে থাকবে? বিচার বিভাগ নাকি নির্বাহি বিভাগ? বিচার বিভাগের সহযোগি প্রতিষ্ঠান পুলিশ এবং পুলিশের উপরেই আসলে প্রাথমিক অনেকগুলো দায়িত্ব আছে, অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা, অভিযোগের তদন্ত এবং অপরাধীকে ধরে বিচারকের সামনে উপস্থিত করা। এখন পুলিশ যদি বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রনে না থাকে তাহলে বিচার বিভাগ যতই দক্ষ হোক না কেনো সেতো নিজে অপরাধী ধরতে পারবে না, তার সেই জনবল নেই, সে কোনো অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে পারলেও মাঠ পর্যায়ে তদন্ত চালানোর মতো জনবলও তার নেই, ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার এখন বিচার বিভাগ, পূর্ণাঙ্গ নয় এখনও এবং আদতে বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হওয়ার ফলে যেসব সুফলের কল্পনা বা দিবাস্বপ্ন দিখছি আমরা সেটাও অনেকাংশে অনিশ্চিত। পুলিশের ভুমিকা এবং আদালতের দায়বদ্ধতা এবং বিচারকের যোগ্যতা সব কিছুতেই নানা রকম প্রশ্ন চিহ্ন উত্থাপিত হবে এবং তখন একটা প্রশ্নই সামনে আসবে, বিবেচনা করতে হবে আমাদের আইনজীবি সমিতিকেই এই যে উল্লাস তা কতটুকু যৌক্তিক যদি সেটা আশাকৃত প্রতিফল বযে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়।

সাম্প্রকিত সময়ে যা দেখলাম তা হলো যুদ্ধাপরাধী প্রসঙ্গে সংস্কারবাদী নেতাদের অবস্থান, তারা যুদ্ধাপরাধীদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। মান্নান ভূঁইয়া বলেছে- দেশে যুদ্ধাপরাধী নেই এবং এই বক্তব্য প্রদান কালে তার চেহারায় স্বভাবসূলভ একটা ইতর হাসি ছিলো। এই যে বক্তব্য সেই অবস্থানকে সমর্থন করে ইত্তেফাকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রয়াত মানিক মিয়ার জন্য গাঢ় সমবেদনা জাগে। তার পত্রিকার রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সেটার একটা স্পষ্ট অবস্থান ছিলো সামরিকায়ন বিরোধী, এবং মুক্তিযুদ্ধে কয়েকটি ক্রান্ত সংবাদ পত্রের প্রকাশনালয়ের ভেতরে ইত্তেফাক একটি, সেখানে ২৫শে মার্চ রাতেই হামলা চালানো হয় এবং সেখানে কয়েকজন কর্মপারি নিহত হয়, এবং ২৫শে মার্চ যে ঢাকায় গণহত্যা হয়েছিলো তার প্রমাণ স্বরুপ যে কয়েকটি মিলিটারি ট্রান্সক্রিপশন জমা দেওয়া হয়েছিলো জাতিসংঘে তার একটাতে ইত্তেফকের উল্লেখ ছিলো। সেই পত্রিকাই ৩৬ বছরের ব্যবধানে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করলো যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের অনুপস্থিতিকে সমর্থন করা হয়েছে। এবং যে চাতুর্যতা অবলম্বন করা হয়েছে তাতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপকৌশল স্পষ্ট।

সিমলা চুক্তি অনুসারে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীকে ভারতের হাতে হস্তান্তর করা হয়। পাকিস্তানের আসুষ্ঠানিক স্বীকৃতির আগে আসলে তেমন ত্রিপাক্ষিক আলোচনার পরিস্থিতি নেই। এবং এর পরে স্বীকার করা হয়েছে সেসময় ৩০ হাজারের মতো যুদ্ধাপরাধে বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়। যা নেই, এবং যেখানে এই বিভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশলটা কার্যকরী-
যুদ্ধাপরাধীদের প্রকৃত সংখ্যা,
তখন কতজন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত কারাগারে ছিলো
১৯৫ জন থেকে কমিয়ে ১০৮ এবং এর পরে শুণ্য ঘোষনার ঘটনাটা ঘটেছিলো কবে?
এবং ১৯৫ কে হস্তান্তরের পর তাদের যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে মুক্ত করবার প্রতিক্রিয়া কি ছিলো। কারণ ভারতের কাছে হস্তান্তরের পর আদতে তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ছিলো না বাংলাদেশের-

এবং একই সাথে যেসব দালাল কারাগারে ছিলো তাদেরই বা মুক্তি হলো কেনো? কার নির্দেশে? কার নির্দেশে জেল হত্যা? কার নির্দেশে ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ? কার নির্দেশে আবার পিপল’স রিপাবলিকে প্রত্যাবর্তন? ২১টা ক্যু এবং সাম্প্রতিক হান্নান শাহ এবং হাফিজউদ্দিন বিতর্কে পাওয়া তথ্য এবং বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত রশিদের সাক্ষাৎকারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আসলে কি হবে?

হাফিজুদ্দিন বলেছে যুদ্ধাপরাধী প্রসঙ্গে, তার জানা মতে বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। তবে যদি থাকে তবে তাদের বিচারের দাবিতে সে সহমত। যুদ্ধাপরাধী নেই এই সিদ্ধান্তে ঐক্যমত আমাকে আশ্চর্য করেছে এবং একই সাথে ভীত করেছে। বি এন পি জন্মলগ্ন থেকেই একটা অবস্থান গ্রহন করেছে আওয়ামী বিরোধিতার অবস্থান এবং এই অবস্থানের পরিবর্তণ হয় নি। তাই আওয়ামী লীগ এবং ঘাদানিক (যারা আওয়ামী সংশ্লিষ্ঠতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে বি এন পি এবং জামাতের পক্ষ থেকে), যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলে তাহলে তা দমনের চেষ্টায় জামাত স্বীয় অস্তিত্বের জন্য এবং নি এন পি আওয়ামী বিরোধী অবস্থানের জন্য বিরোধিতার ক্ষেত্র তৈরঅ করবে এবং এটা কি একটা আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরিতে সহায়ক হবে?
যেহেতু মান্নান ভূঁইয়া, যার অন্তর্ভুক্তি ছাড়া বি এন পির অস্তিত্ব সম্পূর্ণ হয় না( এমনটা নির্বাচন কমিশনের মত এবং আশ্চর্য হলো তারা রাজনৈতিক দলের আভ্যন্তরীন কোন্দলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না এবং তারা জাজমেন্টালও না।) এবং নবনিযুক্ত মহাসচিব হাফিজউদ্দিন তাদের এই যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে ঐক্যমত আসলে একটা সন্দেহের জায়গা তৈরী করে তাই তাদের রাজনৈতিক অবস্থান হবে এই আন্দোলন বিরোধী। এটা আদৌ কোনো চিন্তার কারণ হতে পারে কি না এটা বিবেচনা করতে হবে।
প্রতিহিংসাপরায়নতা যে সরকারের বৈশিষ্ঠ্য তার এক নায়কতান্ত্রিক এবং ক্ষেত্র বিশেষে স্বৈরাচারি উপাদান বহন করে- তবে কি এটা স্বেরাচার? একনায়কতান্ত্রিক? হান্নান শাহ আবারও গ্রেফতার হয়েছে- এবং এই গ্রেফতারের পেছনে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে অনেকেই মান্নান ভূঁইয়ার অন্তর্ভুক্তি এবং কার্যনির্বাহি কমিটির সিদ্ধান্তকে গ্রহনযোগ্য ভাবে নি। এবং তারা প্রতিবাদি, এই যে কোন্দণে ইন্ধন যোগানো এটার দায় আসলে কার? নির্বাচন কমিশনের উপরে, তারা ধরেই নিয়েছিলো একটাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে সেটাই আসল বিএনপি এমনটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে এবং ক্ষমতালিপ্সু কর্মীরা সেটাকেই মেনে নিবে। তবে পরিস্থিতি সেটা সাক্ষ্য দিচ্ছে না। বরং এই হার্সকর কমিটি যে গ্রহনযোগ্য হয় নি এটাই প্রমাণিত হয়েছে। হান্নাস শাহের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি উস্কানীমূলক কথা বলেছেন। এবং অভিযোগটা যেদিকে যাচ্ছে তাতে একটা বিষয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আছে যে মাহবুবুর রবমানের উপরে হামলার নির্দেশ এসেছে হান্নান শাহের কাছ থেকে কিংবা তিনি জানতেন এটা।

ঝিকে মেরে বৌকে শিখানোর এই প্রক্রিয়া আর কতদিন চলবে এটাও দেখার বিষয়। একই সাথে দেলোয়ার হোসেনকে নাকি হুমকি দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ এসেছে। যদি এটা করা হয় তবে সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত।
হাস্যকর হলো একই সময়ে গ্রেফতার হলো তার ছেলে পবন, বেচারা অনেক আগে থেকেই অভিযুক্ত এবং ঢাকায় বসবাস করছিলো। যদিও নবাই তার উপস্থিতির কথা জানলেও জানতো না পুলিশ। আশ্চর্য এটাই পুলিশ সবসময়এ অনবগত পক্ষ। তবে এ ঘটনার পরপরই বেচারা আটক হলো।

একই সাথে আশ্চর্য হলো শাহজাহান মিয়ার আত্মসমর্পন, এবং সে যেদিন আত্মসমপ্যন করলো সেদিস তার সাথে আরও কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী উপস্থিত ছিলো। তবে পুলিশ এদরও অস্তিত্ব জানতো না, এবং এখনও জানে না। এবং একই সময়ে জনগণকে তুষ্ট করতে শিবির কর্মীদের আটক করা হচ্ছে- এই চোখে ধুলো দেওয়া প্রক্রিয়া চলবে কতদিন। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা হয়েছে, তবে কাদের মোল্লাকে গ্রেফতারের কোনো উদ্যোগ নেই- কোথাকার কোন হরিদাস পালকে ধরে এনে একটা আবঝাব বুঝ দেওয়া ছেলেভুলানো খেলা খেলে নিজেদের নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ না রাখলেও বোধ হয় চলতো।

প্রশ্ন কয়েকটাই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সুফল কি আদৌ পাওয়া যাবে যদি পুলিশ এখনও ক্ষমতাবানের লেজুরবৃত্তি বাদ না দেয় এবং তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনে প্রভাবিত হয় এবং নতি স্বীকার করে। এবং একই সাথে প্রশ্ন হলো যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন হয় তবে কে কোন ভুমিকা প্রহন করবে?
একটা সমস্যা ছিলো প্রাথমিক পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারে, তখন বিচারকদের অনেকেই রাজনৈতিক ভাবে পাকস্তানভাবাপন্ন এবং তারা অনেক সময়ই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রমাণ পান নি। এবং বেকসুর খালাস দিয়েছেন অভিয্ক্তুতে। এটা অন্যায় না করবার একটা সাবধানতা। তবে অনেক সময়ই এটা অপরাধ বিবেচনা করতে না চাওয়ার একটা ঢাল।

এমনও হতে পারে নতুন করে বিচারের কাঠগড়ায় যদি বা সম্ভব হয় যুদ্ধাপরাধীদের দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া তবে কি সেথানে ন্যায় বিচার হবে? মামলার নথি পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে আসলেই কারা কারা অভিযুক্ত হয়েছিলো এবং তাদের বিরুদ্ধে কি সিদ্ধান্ত প্রহন করেছিলো আদালত, এবং তাদের সাক্ষ্য এবং জেরার লিপিবদ্ধ বিবরণ থাকলে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এখন যাচাইয়ের পালা- যদিও আমি নিশ্চিত এই পরিশ্রমে মগ্ন হবে না ঘাদানিকেরা, তবে যদি তারা তা করতো তবে একটা প্রামাণ্য দলিল থাকতো আমাদের কাছে।

কোনো রকম প্রভাবে না থেকেও ১৯৭১ পরবর্তী সময়ে অনেক সময়ই যুদ্ধাপরাধ আমলে আনে নি আদালত, কার প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিলো? এবং ২০০৯ এর বাংলাদেশে যেহেতু এখন এটা প্রতিষ্ঠিত যে খালেদা এবং হাসিনা এখন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক চরিত্র এবং তাদের উপস্থিতি একটা বড় বিষয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং এই সরকার যতগুলো মামলা করেছে সেগুলোর অনেক সিদ্ধান্তই প্রভাবান্বিত সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তীতে যদি একই ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘঠে তবে বিচার বিভাগের উপরে অনাস্থা আরও বাড়বে।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই কঠোর অবস্থান তাদের ভুমিকাকে নেতিবাচক করছে এমন কি প্রশ্নবিদ্ধ করছে তাদের সদিচ্ছাকে।

তথাকথিত 'সদিচ্ছা'য় বিশ্বাস কিংবা ভরসার আসলে কোন যৌক্তিকতা ছিলোনা প্রথম থেকেই ।

'স্বাধীন বিচার বিভাগ' নামের নতুন ফাজলামি ও ইতরামী শুরু হয়েছে । ১ নভেম্বর থেকে থেকে নাকি বচারবিভাগ স্বাধিন হয়াব্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । তো,ব্রিগেডিয়ার হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হলো কি বিচার বিভাগের নির্দেশে?
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

একটা জিনিস এই সরকারের প্রথম থেকে লক্ষ করছি। এরা শুরু থেকেই বহুদিন থেকে তুলতে থাকা বিভিন্ন পপুলার দাবী দাওয়ায় এক একবার কুটুস কুটুস করে চিমটি কেটে চলেছেন। কোনটারই সমাধানের ধার কাছ দিয়ে যাচ্ছেন না। সমস্যা হচ্ছে এই তালিকা একসময় শেষ হবে। তখন কি করবেন তারা?



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ