রাজনৈতিক পট পরিবর্তিত হবে এমন আশাবাদ নিয়ে শুরু হওয়া বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মসনদে আরোহনের আগে থেকেই একটা বিরোধ ছিলো রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতিদন্ডীদের ভেতরে।
রাজনৈতিক দল নির্মাণ এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মানের সাথে রাজনৈতিক প্রচারণার গুরুত্ব বেশী কারণ এইসব রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং রাজনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র শাসনে তার পন্থা কি হবে এটা জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাই প্রতিটা রাজনৈতিক দল, প্রতিটা রাজনৈতিক মতবাদ পরস্পরের প্রতিদন্ডী রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে। তবে রাজনীতিতে একটা কৃত্রিম ভারসাম্য চলে এসেছিলো শেষের দিকে। আওয়ামী লীগের ভেতরে বিলীন হয়ে যাওয়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কোনোটারই একক কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই। বাম দলগুলো কোনো সময়ই রাষ্ট্র ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে নি। কতকটা ধর্মবিরোধী নাস্তিক হিসেবে পরিচিত হওয়ার কারণে কতকটা রাষ্ট্রীয় চাপে ও নিষ্পেষণে। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ এবং এর ভেতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া ১৪ দলের জোট আর চার দলীয় জোটের ভেতরের লড়াইয়ে পরিনত হয়েছিলো।
এদের মুখোমুখি যুদ্ধংদেহী অবস্থান, ২২শে জানুয়ারীর নির্বাচন অনুষ্ঠানের তৎপরতা- সব মিলে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার আগমনের পশ্চাৎপট এটুকুই ছিলো।
এসেই জরুরি অবস্থা জারি করা এবং শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান বর্জনের বিষয়টা চক্ষুশুল হলেও সবার ধারণা ছিলো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলে লাভবান হবে আওয়ামী লীগ। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবার পরে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। মূলত মাইনাস টু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টায় আওয়ামী লিগ এবং বিএনপির ভেতরে ভাঙন তৈরির চেষ্টা থাকলেও আওয়ামী লীগে ভাঙন ধরানো সম্ভব হয় নি।
শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের আগে আওয়ামী লীগে সংস্কার প্রশ্নে বিভক্তি থাকলেও সেটা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এই গ্রেফতার প্রক্রিয়ায়। বর্তমানে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ কর্মতৎপরতা তাদের নেত্রীকে মুক্ত করবার আন্দোলন গড়ে তুলবার চেষ্টা।
আমার মনে ঠিক এই সময়ে শেখ হাসিনার মুক্তি চেয়ে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। এখন এই আন্দোলনের উপযুক্ত সময় না। যদিও স্থানীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে এমন চাপ আসছে আওয়ামী লীগের মূল নেতৃত্বের উপরে তবে এটা এই মুহূর্তে প্রধান আন্দোলনের ইস্যু হতে পারে না।
আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ কর্মপন্থা ঘোষণা করেছে, শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে অনশন, সাক্ষর সংগ্রহ করছে তবে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিলেও সেটার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এটা উপযুক্ত সময় না।
এই অবসরে বিএনপির ভেতরে ভাঙন ঠেকানোর পরিকল্পনা নেওয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। হাফিজউদ্দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না এবং আদৌ হবে এমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ। বিএনপি মূলত একদল সুবিধাবাদীর খোঁয়ার। এখানে সবাই সুবিধাবাদী। নেতৃত্বে যারা আছে তাদের সবারই রাজনৈতিক ধান্দায় ব্যস্ত থাকতে হয়। রাজনীতিই তাদের অন্যতম জীবিকা। তাই রাজনীতিতে দ্রুত প্রত্যাবর্তনের তাগিদ তাদের ভেতরে।
সংস্কারবাদীদের হয়ে কথা বলছে জেড এ খান, এই মানুষটার কথা শুনলে তাকে কোনো রাজনৈতিক নেতা বলে ভাবতেও কষ্ট হয়। অন্য দিকে জরুরি অবস্থায় নিপীড়িত হয়ে লাইম লাইটে চলে আসা হান্নান শাহ। দুজনেই প্রাক্তন সামরিক বাহিনীর সদস্য।
খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব সবাই চাইছে। খালেদা জিয়াকে বাতিল করে দিয়ে নেতা হতে চাওয়া সংস্কারবাদীদের অনেকেই এখন খালেদা জিয়ার আঁচলের নীচে আশ্রয় খুঁজতে ব্যস্ত।
দর কষাকষি চলছে এবং এই দর কষাকষির মূল উপাদান মূলত নির্বাচনী প্রতিক। আসলে বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক পাবে কোন অংশ। ধানের শীষ কি দিয়ে দেওয়া হবে সংস্কারবাদীদের? যেভাবে তাদের দেওয়া হয়েছে মূল কার্যালয়ের চাবি। না কি দেলোয়ার হোসেন অংশ পাবে এই প্রতীক। প্রতীক তেমন বড় ইস্যু না হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতীকের গুরুত্ব অবহেলা করা যায় না, নৌকা আর ধানের শীষের বাইরে লাঙল প্রতীক নিয়ে লড়াই কম হয় নি। আপাতত বিএনপির বিবাদমান দুই পক্ষই ধানের শীষ চাইছে। কার ভাগ্যে শিকে ছিড়বে বলা মুশকিল।
খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পরে পরিস্থিতি বদলেছে। সামান্য বদলেছে। পূর্বের হানাহানি আর মুখরা রমণীর মতো ঝগড়ার মানসিকতা বদলেছে উভয়ের। যদিও খালেদা জিয়া কৌশলগত রাজনৈতিক মিত্রতার বানী পাঠাচ্ছেন তবে শেখ হাসিনা এখনও নির্বিকার এ বিষয়ে।
খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিলেও শেখ হাসিনা তেমন কোনো বিবৃতি এখনও দেন নি। যদি শেখ হাসিনাও এমন কোনো বিবৃতি দিয়েই দেন, খালেদা জিয়ার আশু মুক্তি কামনা করে তবে সেই দিন বর্তমান সামরিক সমর্থিত সরকারের সকল হিসাব পাল্টে যাবে।
গোয়ার্তুমির চুড়ান্ত করছে তারা। নাইকো দুর্নীতি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করেছে দুদক, এটাকে চুড়ান্ত করেছে। তারা ১৩ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় ক্ষতি সাধনের অভিযোগে এই দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে চুড়ান্ত চার্জ শীট দাখিল করেছে গতকাল।
যদিও আমি নিশ্চিত না কোনো বিচারক এই দুর্নীতির মামলাকে ব্যক্তিগত বিবেচনায় দুর্নীতি বলবে। অন্তত কোথাও এমন কোনো প্রমাণ নেই যে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে হাসিনা কিংবা খালদা জিয়া নাইকোর পক্ষে রায় দিয়েছে। অবশ্যই তাদের অবগতিতেই এটা চুড়ান্ত বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছিলো। তিনি অনুমোদন দেওয়ার পরে এটা মন্ত্রনালয় থেকে পাশ হয়ে নাইকোর কাজের অনুমতিপত্রে রূপান্তরিত হয়েছিলো।
নাইকোর স্থানীয় প্রতিনিধি এ কাজের জন্য শেখ হাসিনাকে কোনো অবৈধ সুবিধা প্রদানের অঙ্গীকার করেছিলেন কি? কিংবা শেখ হাসিনা কি নাইকোর স্থানীয় প্রতিনিধির কাছে কোনো অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করেছিলেন?
শেখ হাসিনা যদি নিজের ব্যক্তগত প্রভাব খাটিয়ে নাইকোর সপক্ষে কোনো সুপারিশ করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কাছে তবে সেটা অবশ্যই দুর্নীতি হিসেবে স্বীকৃত হবে। যেমনটা হতে পারে বর্তমানে কোরিয়ার একটি কাগুজে কোম্পানির হয়ে জ্বালানী মন্ত্রনালয় থেকে সুপারিশের বিষয়টা। প্রধান উপদেষ্টার অফিসে বারংবার অসম্মতি জ্ঞাপন করে জবাব পাঠানো হলেও সেটার বিপরীতে পুনরায় সুপারিশ এসেছে খনিজসম্পদ মন্ত্রনালয়ে।
শেখ হাসিনার পরে অভিযুক্ত খালেদা জিয়াও কি এমন কোনো অনৈতিক সুবিধা ভোগ করেছেন। মূলত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের প্রেক্ষিতে যতটূকু বলা যায় খালেদার পক্ষেও ততটুকুই বলা যায়, তারা দুজনের কেউই আসলে নিজের প্রভাব খাটিয়ে মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেন নি। প্রতিটা বিষয়ের চুড়ান্ত অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় প্রধান মন্ত্রীর গোচরে আনবার জন্যই একবার ফাইল পাঠানোর প্রথা রয়েছে। সেটা পড়ে কিংবা না পড়েই সাক্ষর করে দেওয়ার প্রথাও চালু আছে। এখনও যেমন সমস্ত অধ্যাদেশ চুড়ান্ত হয়ে রাষ্ট্রপতির দরবারে যায় এবং রাষ্ট্রপতির আপত্তি জানানোর কোনো সুযোগ নেই এই বিষয়ে প্রধান মন্ত্রী হিসেবে কাজ করবার সময় আসলেই কি খালেদা জিয়া কিংবা হাসিনার এমন সুযোগ ছিলো।
তাদের কর্মপদ্ধতিকে সহজ করবার জন্যই নানাবিধ কমিটি উপকমিটি উপদেষ্টা কমিটি সহ নানা রকম প্রশাসনিক কাঠামো নির্মিত হয়েছে।
এই প্রশাসনিক কাঠামোতে অনেক বিশেষজ্ঞ রয়েছে। তারা অনুমোদন দিলে সেটা পাশ করিয়ে দেওয়াটাই রীতি।
গোয়ার্তুমি করলে হয়তো সামরিক প্রভাবে এই দুর্নীতির মামলায় রায় দিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। আদালতে সামরিক কতৃপক্ষের ইচ্ছাই চুড়ান্ত বিবেচিত হচ্ছে। তারা যেই নির্দেশ দিচ্ছেন সেটাই পালিত হচ্ছে। তারা এখন কারা জামিন পাবে কারা জামিন পাবে না এটা নির্ধারণ কর দিচ্ছেন। এবং রুহুল আমিনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সকল সিদ্ধান্তই তাদের সমর্থনে যাচ্ছে। হাইকোর্টকেও জামিনের আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয় নি। যদিও মর্যাদা এবং ক্ষমতার বিচারে সুপ্রীম কোর্ট আর হাইকোর্টের ভেতরে তেমন তফাত নেই। তবে সুপ্রীম কোর্ট এটা মানতে চাইছে না।
এ অবস্থায় আগামী ৪ মাসের ভেতরেই এই মামলাগুলোর রায় হয়ে যাবে। তবে মুল সমস্যা হলো সে সময়েও যদি শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া মুক্ত না হয় তবে কি সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিবেশ থাকবে?
যদিও আওয়ামী লীগ এখনও তেমন কঠোর কর্মসূচি দেয় নি তবে অবিলম্বে স্থানীয় সমর্থকদের চাপে তাদের একটা আলটিমেটাম দিতেই হবে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিন নেতৃত্বের যোগ্যতা থাকুক কিংবা না থাকুক, তার ভক্ত শ্রেনীর ভেতরে তার গ্রহনযোগ্যতা এবং ভক্ত কুলের তার জন্য অন্ধ আবেগের বিষয়টা বিবেচনার দাবি রাখে। এই নেত্রীর পদত্যাগের ঘোষণায় এক সমর্থক প্রকাশ্যে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছিলো। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা সম্ভব হয়তো।
এমন ভাবেই খালেদা জিয়ার সমর্থকদের ভেতরেও খালেদা জিয়ার গ্রহনযোগ্যতা সীমাহীন। তাদের কাছে খালেদা জিয়া মানবী নন পরম মানবী। তিনি সকল জাগতিক দোষত্রুটির উর্ধ্বে। এটা সচেতন রাজনীতি নয় তবে বাংলাদশের প্রেক্ষিতে এটাই সব কিছু। এখানে আবেগ সব সময়ই সব সিদ্ধান্ত গ্রহনের প্রধান ভিত্তি। জনগন পাগলের মতো উদ্ভট বিশ্বাস নিয়ে থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষ সেই উদ্ভট বিশ্বাসকে সম্মান করতে শেখায়। কতৃপক্ষেরও এর জন্য কোমল একটা জায়গা থেকেই যায়।
অন্ধ বিশ্বাস যুক্তিহীনতার পাপ রাতারাতি মোচন হবে এমন ভাববার কারণ নেই। এখনও শেখ হাসিনা খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অপরিহার্য একটা ইস্যু, একটা আবেগ, এটাকে হঠাৎ করে আঘাত করা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা। তবে জেনে শুনে সামরিক সমর্থিত সরকার যখন এই কুড়াল মারবার কাজে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন তখন একটু সংশয় জাগে। এক্সিট প্লানে গরমিল হলে তারা কি করবেন? তারা কি সামরিক নেতৃত্বে নতুন সরকার গড়ে তুলবেন?
রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে যেহেতু এখন প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ তাই চলছে টিভির স্ক্রীন দখলের প্রতিযোগিতা। এই নিয়ে হাতাহাতি, হানাহানি ধাক্কাধাক্কি। ক্যামেরার সামনে দেশ প্রেমিক বনে যাওয়া প্রাক্তন রাজনৈতিকেরা এখনও দেশপ্রেমিক, তবে পূর্বে প্রকাশ্য ময়দানে রাজা উজির মারতে ব্যস্ত থাকলেও ইদানিং সেই সুযোগ পাচ্ছেন না, তাই ক্যামেরার সামনে গলা ফুলিয়ে ঝাঁঝালো বক্তৃতা দিচ্ছেন তারা। অবশ্যই তাদের অনেক ক্ষমতা, তাদের সমর্থকের সংখ্যা কম করে হলেও ২ কোটির উপরে। তারা এমন কথা বলতেই পারেন।
ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সুরঞ্জিত আর আমুকে দেখলে মনে হয় কোনো সার্কাসের জোকারকে দেখছি, কয়েকদিন আগে র্যামেরার সামনে বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়ানো এবং বক্তৃতা দেওয়া দেখে ভাঁড়ের কথাটাই মনে আসলো প্রথমে। অনশন ভাঙানোর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলো টিভি ক্যামেরা , সেখানে হাতে জ্যুস নিয়ে একটু বাঁকা হয়ে আওয়ামি লীগের দুই সংস্কারবাদী নেতা যা নাটক করলেন সেটা দেখে ভালোই আমোদিত হলাম।
আর সেই সময়েই সরকার নির্ধারিত সংলাপের প্রাকপ্রস্তুতির জন্য বিএনপির কার্যালয়ের অধিকার বুঝে নেওয়া সংস্কারবাদী বিএনপিকেই নির্বাচনী সংলাপের প্রস্তাব পাঠানো এবং প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রন পাঠানো। যদিও আদালতে নির্ধারিত হয়েই গেছে হাফিজউদ্দিনই আসলে মূল বিএনপি, তবে সাধারণ সমর্থকদের কাছে এখনও দেলোয়ারের নেতৃত্বাধীন বিএনপির গ্রহনযোগ্যতা বেশী।
আদালতের রয় ঘোষিত হওয়ার পরে হাফিজউদ্দিনের কাছে বাইয়্যাত গ্রহন করতে চাওয়া সুবিধাবাদীদের লাইন লম্বা হচ্ছে। ক্ষমতা চাইছে সবাই, রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্বিঘ্নে চর্চা করবার উপযুক্ত ক্ষেত্র বাংলাদেশ। এখানে রাজনৈতিক নেতারা দেবতার মর্যাদা পায়, এবং দেবতাসুলভ উদাসীনতাও তাদের ব্যক্তি ইমেজের তেমন ক্ষতি করতে পারে না, অন্ধ বিশ্বাসী সমর্থকেরা তাদের জন্য ভাঙচুর করবে, তাদের জন্য হত্যা করবে নিহত হবে।
এবং সেই সাথে নেতার সাথে একটা বাঁধানো ছবি পাওয়ার প্রত্যাশায় ক্যামেরা নিয়ে ঘুরবে চার পাশে। এখন স্যাটেলাইট টেলিভিশনে নিজের মুখ দেখানোর জন্য মরিয়া রাজনৈতিক সমর্থক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দেহখ মনে হচ্ছে আগামি দিনে ডিভিডি রাজনীতি শুরু হবে। প্রতিটা সমর্থককে রাজনৈতিক দল একটি ডিভিডি প্লেয়ার কিনে দিবে এবং তাদের ডিভিডি সরবরাহ করা হবে। সেখানে ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য প্রচার করবার সুযোগ থাকবে, সুযোগ থাকবে কম্পিউটারে সম্পাদনার।
বাংলাদেশের রাজনীতি খুব দ্রুতই পরিবর্তিত হয়ে হাইটেক রাজনীতি হয়ে যেতে পারে, সেই দিনের প্রত্যাশায় থাকি।
মন্তব্য
বড় আলোচনা... পড়ার সময়ে যেইসব মন্তব্য করবো ভাবছিলাম... ইতোমধ্যে সেগুলা ভুলে গেছি।
যা হোক... বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সিংহভাগই বর্তমানে সুবিধাভোগী। বিএনপি জাতিয়া পার্টি পয়দাই হৈছে একদল সুবিধাবাদীরে নিয়া... জামাত ও অন্যান্য ধর্মবেচা দলের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না... আর আওয়ামী লীগাররা দেখলো যে তাদের চারপাশের রাজনীতিবিদেরা সকলে গাড়ি হাঁকায়... তাইলে তাদের কি করণীয়? কি আর করা? তারাও লাইনে আসলেন অচিরেই। বামরাও ভীড় করলেন আওয়ামী লীগেরই ঝান্ডাতলে।
বাংলাদেশের নির্বাচনের মাঠে এখন খালেদা হাসিনা ধানের শীষ নৌকা একই বস্তু... যারা খালেদা খালেদা বা হাসিনা হাসিনা বইলা মহান নেত্রির নামে জান কোরবান করতেছেন তারা আসলে ভালো কইরাই জানেন জাতি ভোট দিবো মুজিব বা জিয়ার দলরেই... খালেদা হাসিনা আসলে মুজিব জিয়ারই প্রতীক... ধানের শীষ নৌকার মতোই... আর কিচ্ছু না...
নেত্রি ছাড়ানের আন্দোলন আসলে একটা ইসু্... আমার মনে হয় এই ইসুটাই এখন সবচেয়ে বেশি কার্যকর... বাঙ্গালী ভাত না খাইতে পারলেও গলা ফাটায়া হাসিনা খালেদা কইতে অভ্যস্ত... সো দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির চেয়েও বড় ইসু নেত্রিরাই আসলে।
বর্তমান সরকার আসলে পাঁকেই পতিত মনে হয়... এই কুন্ডলী তারা ভেদ কইরা বাইরইতে পারবো আদৌ? নির্বাচন পরবর্তীকালে তাদের ভবিষ্যত কি? বোঝাপড়া শেষ না কইরা তারা আদৌ ক্ষমতা ছাড়তে পারবো? মনে হয় না।
আর হাইটেক রাজনীতির কাল আদতেই আষণ্ণ। টিভি চ্যানেলের মালিক লিস্টি দেখলেই তা পস্ট... আর ১১ জানুয়ারির আগে হঠাত আমার একটা ডাক আসছিলো... একটা দলের নির্বাচনী পরিকল্পনাধীন বেশ কিছু টিভি প্রোগ্রাম নির্মাণের ক্ষেপ... সেই দলের যুবরাজ আবার বেশ ক্যারিশমাটিক সুদর্শন... (তার স্ত্রীও) সারাদিন বৈঠক হইছিলো... তখন বুঝছিলাম এখন থেকা নির্বাচন উপলক্ষে আমাদেরও কিছু বাড়তি আয় ইনকামের পথ আছে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মাহী নাকি?
নতুন মন্তব্য করুন