তালাক ০২

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শুক্র, ১৬/০৫/২০০৮ - ২:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে ইদ্দতকালীন সময়ের অস্তিত্ব ছিলো না। তালাকের পরে ইদ্দতকালীন সময়ের নির্দেশ ঘোষিত হয় মদিনায় হিজরতের পরে।
আসমা বিনতে ইয়াজিদ আর আনসারি প্রথম মহিলা যারা তালাকের ঘোষণার পরেই এই ইদ্দতকালীন সময়ের প্রথা শুরু হয়।
মূলত তাকে উপলক্ষ্য করেই এই বিধান রচিত হয়।
কোরানের তালাক বিষয়ক সুরার তালিকায় সংযোজিত হবে সুরা তালাক-
১।। হে নবী তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিতে চাইলে ইদ্দতের দিকে খেয়াল রেখে ওদেরকে তালাক দিয়ো। তোমরা ইদ্দতের হিসাব রেখো। আর তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো। তোমরা ওদেরকে বাসগৃহ থেকে বের করে দিয়ো না। আর ওরাও যেনো বের হয়ে না যায়। যদি না ওরা স্পষ্ট অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়।-----------------

২--
ওদের ইদ্দতকাল শেষ হয়ে এলে তোমরা ওদেরকে ভালোভাবে রেখে দেবে না হয় ভালোভাবে ওদের ছেড়ে দেবে। আর তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ন লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহকে মনে রেখে সাক্ষ্য দিবে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহকে ও পরকালে বিশ্বাস করে তাকে এ দিয়ে উপদেশ দেওয়া হচ্ছে।--------------
৪-
তোমাদের যেসব স্ত্রীর ঋতুমতী হওয়ার আশা নেই তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমাদের সন্দেহ হলে গেনে রাখো, তাদের ইদ্দত হবে ৩ মাস। আর যারা এখনও রজঃস্বলা হয় নি তাদের ইদ্দত হবে তাই। আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।


তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যে রকম বাড়ীতে বাস করো তাদেরও সে রকম বাড়ীতে বসবাস করতে দাও। তোমরা তাদেরকে উত্যক্ত করে বিপদে ফেলো না। তারা গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তোমরা তাদের জন্য ব্যয় করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদের স্তন্য দেয় তবে তাদের পারিশ্রমিক দিবে ও সন্তানের মঙ্গলের ব্যাপারে তোমরা নিজেদের মধ্যে ভালোভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পরস্পরকে সহ্য করতে না পারো অন্য স্ত্রীলোক দিয়ে স্তন্য পান করাবে।

তবে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের ভাষ্যে- এই আয়াতের ভেতরে সামান্য সংশোধন হয়েছে- পুর্বে একটা আয়াত ছিলো-
তোমাদের ভেতরে যাদের তালাক হয়েছে তারা নিজেদের ৩ রজঃকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, আর যাদের ঋতু নিয়ে সংশয় হবে তাদের জন্যও অপেক্ষার সময়কাল হবে ৩ মাস। তবে এই আয়াত থেকে বিশেষ একটা অংশ বাদ গিয়েছে(
বাদ যাওয়া অংশ বা রদ হয়ে যাওয়া অংশটি হলো- তোমরা যদি কোনো বিশ্বাসী মহিলাকে বিয়ে করো এবং তাদের স্পর্শ্ব করিবার পূর্বেই তাদের তালাক দিয়ে দাও , তবে তাদের জন্য কোনো ইদ্দতকাল থাকবে না।
যদি কেউ তার স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং ইদ্দতকাল পুরণ হওয়ার আগেই তার সাথে সঙ্গম করে তবে সেটা সুন্নাহর খেলাপ হবে। তালাকের অত্যাশ্যকীয় শর্ত হলো অন্তত ২ জন বিশ্বাসীর সম্মুখে তাকে ত্যাগ করার কথা ঘোষণা দিতে হবে। এর পরে তালাকপ্রাপ্তার ইদ্দতকাল শুরু হবে, সেটা সমাপ্ত হওয়ার পরেই পুনরায় সঙ্গম বৈধ।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেছেন কোরানের আরও একটা সংশোধনীর কথা। এটাও তালাক সম্পর্কিত। হাদিসের ধারাবাহিকতায় বুঝা যাচ্ছে তালাক বিষয়ে পুর্বনির্ধারিত কোনো বিধি ছিলো না আরবে। ইসলামের সময়ই এটার উৎপত্তি হলো।
তালাকপ্রাপ্তা রমনীরা ৩ রজঃকাল সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, আর তাদের গর্ভে যা জন্মেছে সেটা লুকানোও তাদের জন্য বৈধ নয়। এটার অর্থ হলো যদি কেউ তার স্ত্রীকে তালাক দেয় তবে তাকে ইদ্দতকাল সমাপ্ত হওয়ার পরে গ্রহন করা বৈধ, এমন কি সে যদি তাকে ৩বার তালাক দিয়ে দেয়। এর পরে কোরানের আয়াতের সংশোধনীতে এসেছে- কাউকে ২ বারের বেশী তালাক দেওয়া যাবে না- তৃতীয় বার তালাক দেওয়ার পরে তাকে হিল্লা বিয়ে করেই পুনরায় বৈধতা অর্জন করতে হবে। তালাক দিয়ে দাও , তবে তাদের জন্য কোনো ইদ্দতকাল থাকবে না।

ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে যেহেতু আরবে তালাকের নির্দিষ্ট কোনো বিধান ছিলো না, ইসলাম প্রথম তালাকের নির্দিষ্ট সংস্কৃতি তৈরি করে। তালাকপ্রাপ্তাদের গর্ভের সন্তান ভুমিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের দায়িত্ব দেয় স্বামীকে। সেই সন্তানের জন্মের পরে স্ত্রীকে মাসোহারা দেওয়ার বিধান দেয় যদি সে রমনী সন্তানকে স্তন্য দান করে।
এ সময়ে বিধান ছিলো একবার সাক্ষী সমেত তালাক বললেই স্ত্রী ৩ মাসে জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে, সমাজপতি কিংবা সাক্ষীর উপস্থিতিতে ইদ্দতকালীন সময়ে স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করা যাবে, ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হলে যদি ২ বার তালাক দেওয়া হয় তবে স্ত্রীকে বিবাহ করা যাবে। তৃতীয় বার তালাক দেওয়ার পরে সেই স্ত্রীকে গ্রহন করতে হলে তাকে হিল্লা বিয়ে দিয়ে পুনরায় বিবাহ করতে হবে।
তবে মুহাম্মদের মৃত্যুর ৫ বছরের মাথায় মানুষের ভেতরে এই সংস্কৃতি চর্চার প্রচন্ড বাতিকে ওমর বাধ্য হলেন এই বিধি সংস্কারে। তিনি একবারে ৩ তালাক উচ্চারণকেই তালাকের বিধি মেনে নিলেন। তার মতামত পাওয়া যাবে মুসলীমের তালাক সংক্রান্ত হাদিসের ভেতরে।
এরপরেই আমাদের গ্রামীণ মোল্লাদের সুদিন উপস্থিত হলো। তারা এখন ইসলামের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে ওমরের সংস্কারকেই বেশী গুরুত্বপূ্ণ ভাবে।

সুরা তালাকের ভাষ্য এমন যে তোমরা নিজেরা যে রকম বাসভবনে বসবার করো তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদের জন্য এমন বাসভবনের ব্যবস্থা করো। তবে ফাতিমা বিন কায়েসের ঘটনাটা ঘটলো ভিন্ন রকম। তাকে তালাক দেওয়া হলো, তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে যুদ্ধে চলে গেলো, পেছনে রেখে গেলো কয়েক দিন চলবার মতো খাদ্য সামগ্রী, তার স্বামীর স্বজনেরা ফাতিমার ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহনে অপরাগ,

খালিদ বিন ওয়ালিদ কতিপয় মানুষের সঙ্গে মুয়ামিনার গৃহে অবস্থানরত মুহাম্মদের কাছে গিয়ে জানতে চাইলেন-
ফাতিমাকে ৩ বার তালাক দিয়ে চলে গিয়েছে তার স্বামী, সে কি ভরণপোষণের দাবিদার। উত্তরে মোহাম্মদ বললেন, না সে
তার স্বামীর নিকট হতে ভরণপোষণ দাবি করবার অধিকারী নয়। তুমি শরিকের মাতার গৃহে ইদ্দতকালীন সময় অতিক্রান্ত করো। অতঃপর তিনি বললেন, সেখানেও আমার অনুসারীরা যায়, তাই তুমি ইবন উম মুকতিমের গৃহে গিয়ে ইদ্দতকালীন সময় অতিক্রান্ত করো। সে অন্ধ মানুষ তার সামনে তোমার আব্রুর হের ফের হবে না। মুহাম্মদ নির্দেশ দিয়েছিলো, যখন তোমার ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হবে তুমি এসে আমাকে জানাবে।
ফাতিমার ইদ্দতকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর পরই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ৩ জন। মুওয়াইয়া, আবু ঝাম এবং উসামা বিন জায়েদ।
মুহাম্মদ টাকে নির্দেশ দিলেন উসামা বিন জায়েদকে বিয়ে করতে, মুওয়াইয়া ভালো মানুষ হলেও দরিদ্র- আবু ঝামের খামতি ছিলো সে বৌ পেটানোতে ওস্তাদ।

মুহাম্মদ নিয়ম মেনেই স্ত্রীগমন করতেন। তার নিজের বাধা রুটিন ছিলো এই দিনটা এই স্ত্রীর জন্য বরাদ্দ। তবে মাঝে মাঝেই মোহাম্মদের নিয়মভঙ্গ করতে ইচ্ছা হতো। তখন যে স্ত্রীর নির্ধারিত সময় ছিলো, তার অনুমতি নিয়ে মুহাম্মদ যার সাথে সময় কাটানোর বাসনা তার কাছে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করতো।
তবে এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আহজাবের ৫ নং আয়াত নাজিল হয়। এবং একই ধাঁচের আয়াত আছে সুরা তাহরীমে-
সেখানের ৫ নং আয়াতের ভাষ্যটা এমন- নবী যদি তোমাদের সকলকে তালাক দেয়, তবে তার প্রতিপালক তোমাদের পরিবর্তে হয়তো তোমাদের চেয়ে আরও ভালো স্ত্রী তাকে দিবেন, -----
মুহাম্মদ আয়েশার কাছে গিয়ে তালাকের বক্তব্য পেশ করলেন, বললেন, আল্লাহর নির্দেশ এসেছে, তোমরা তোমার পরিবারের সাথে আলোচনা না করে এই সিদ্ধান্ত নেবে না।
মুহাম্মদের কোনো স্ত্রীই মোহাম্মদের দেওয়া এই অধিকার গ্রহন করে মুহাম্মদকে তালাক দিয়ে চলে যায় নি।
পুরুষবাদী হলেও এটা সত্য যে ইসলাম নারীকে তালাকের অধিকার দেয় নি। পুরুষ যদি নারীকে তালাক দেওয়ার অধিকার দেয় তবেই নারীর তালাক দেওয়ার অধিকার জন্মায়। তাই পুরুষকেই নিজ উদ্যোগে বলতে হয় আমার স্ত্রী চাইলে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে- যদি এই ঘোষণার পরে কোনো স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায় তবে সেটার জন্য পুরুষের অনুতপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। নিজের পায়ে যে নিজেই কুড়াল মেরেছে।
আর অন্য একটা বিধান হলো, বিবাহিত নারী চাইলে তার স্বামীর কাছ থেকে ক্ষতিপুরণ প্রদানসাপেক্ষে তালাক দাবি করতে পারে।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই সিরিজটা চলুক বস... ভালো হইতেছে... সময় থাকলে কিছু জিনিস আলোচনা করা যাইতো... কিন্তু বহুদিন পরে রেফারেন্স ঘাঁটাটা সমস্যা... সময়বিধ সমস্যা...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পুরুজিত এর ছবি

ভাল লাগছে। যদি সময় করে উঠতে পারেন তবে রেফারেন্সের তালিকা যুক্ত করে দিতে পারেন, তাতে লেখাটা আরও পরিপূর্ণতা পাবে।

দ্রোহী এর ছবি

যথারীতি অপ বাক ময়!!!

তবে রেফারেন্সের ঘাটতিটুকু বোঝা যাচ্ছে। রেফারেন্স যোগ করে দিবেন নাকি?


কি মাঝি? ডরাইলা?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- লেখা তো ভালোই হইছে মাগার বউই তো পাইলাম না এখনো, বুইড়া হইয়া গেলাম!
তালাক নিয়া চিন্তা কইরা আর কী হইবো! মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

দ্রোহী এর ছবি

এইটা আজকের সেরা মন্তব্য।


কি মাঝি? ডরাইলা?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার যেমন মনে হয়েছে এখানে দুই/তিন বার তালাক বলা নয় বরং তালাক শব্দ প্রতিবারে একবারই উচ্চারণের কথা। তালাক দেয়ার ব্যাপারে ইদ্দতকালীন সময় রাখার উদ্দেশ্য ছিল দু'টি প্রথমত, স্ত্রী সন্তান ধারণ করেছেন কি না তা জানা এবং দ্বিতীয়টি ছিল স্বামীকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সময় দেয়া। কারণ, সংসারে প্রেমভালোবাসা বলে একটা জিনিস তো আর কেউ অস্বীকার করে না। যদি সে ইদ্দতকালীন সময়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে (বৌয়ের লাইগ্যা ভালোবাসা উথলাইয়া উঠে যদি) তাহলে সে ইদ্দতকালীন সময়ের মধ্যেই যে কোন সময় স্ত্রীকে পূনরায় গ্রহন করতে পারে। অর্থাৎ ইদ্দত শেষ হওয়ার আগেই সে তার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে। এজন্য তাদেরকে একঘরে থাকার কথা বলা হয়েছে। এবং স্ত্রীকেও ঘর ত্যাগ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এভাবে আবার অন্য একসময় যদি স্বামীস্ত্রীর মনোমালিন্য ঘটে, তাহলে দ্বিতীয়বার স্বামী অনুরূপ তালাক দিতে পারেন এবং ইদ্দত পালন শেষে তালাক কার্যকর হতে পারে। যদি দ্বিতীয়বারও তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলে স্ত্রীকে রাখেন তো লেঠা চুকে গেল। আবারও অন্য একসময়ে দু'জনের মনোমালিন্য হলে স্বামী তৃতীয়বার তালাক এবং ইদ্দত শেষে স্ত্রীকে আর গ্রহন করতে পারবেন না; তখন তাকে হিল্লা বিয়েতে যেতে হবে। আর একটা ব্যাপার আমার মনে হয়েছে প্রথম দুইবার ইদ্দতকালীন বা ইদ্দত শেষ হলেও স্বামী স্ত্রীকে ত্যাগ করতে না চাইলে তার সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন যার জন্য পূনরায় বিবাহ করার বা বিবাহ পড়ানোর দরকার নেই। বিষয়টা স্পষ্ট তালাককে বৈধ কাজের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত বলা হয়েছে। যাতে কোন অন্যায় পদক্ষেপ কেউ না নেয় সেজন্য এমন ব্যবস্থা। আর সাক্ষীর ব্যবস্থা একারণে যে স্বামী কতবার এধরনের তালাক দিচ্ছে তা সবার জানা থাকা। বোঝা যাচ্ছে আল্লাহ তিনবারের বেশি ফাজলামো মেনে নিতে নারাজ। বাঙলাদেশে কাটমোল্লাদের খপ্পরে পড়লে আর রক্ষা নাই। তাদের মতে তো মোল্লাদেরকে মন্দ কিছু বললেও বৌ তালাক হয়ে যাবে!!!!

জিজ্ঞাসু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।