অনেক আগে লিখেছিলাম, সেই সিডরকালীন সময়ে- তখনও একটা প্রশ্ন ছিলো, ত্রান সহায়তা কেনো সময়মতো পৌঁছালো না ক্ষতিগ্রস্থদের দুয়ারে? আমার নিজস্ব ধারণা ছিলো এটা একটা হায়ার্কি প্রব্লেম, কে কতটা দায়িত্ব নেবে সরকারী গুদাম থেকে নিজস্ব ক্ষমতায় কতটা ত্রান বরাদ্দ দেওয়া যায়- যদি এর বেশি কেউ দিয়েও ফেলে সেটা কি সরকারী নীতির বরখেলাপ হবে কি না- এই সব নানাবিধ সংশয়ে আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে মানুষের ভোগান্তি।
তবে সে সময় শেষ হয়ে যায় নি, এখনও দক্ষণাঞ্চল মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে নি- সেখানে দাদন ব্যবসায়ীদের উৎপাত বেড়েছে- সেখানেও পানির দরে জমি বেচে চলে আসছে মানুষ, মানুষ উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের নানাবিধ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের ভেতরেও সেখানে জীবন বয়ে চলছে-
আশা করি তাদের জীবনের বাস্তবতার পরিবর্তন হবে। তবে ৩৫ টাকার চাল আর ৯০ টাকার ডালের যুগে তাদের ভাতে ডালে বাঙালী হিসেবে পরিচিত করা যাবে কি না এ নিয়ে সংশয় থাকছেই।
হারাধনের দশটি ছেলে নিখোঁজ হলেও প্রত্যাশা রয়ে যায়, আমরা প্রত্যাশার আঁচল পেতে দাঁড়াই আর কৃপনের মুষ্ঠি থেকে খসে পড়ে খুদ, বহুজাতিক আর কর্পোরেশনে ঢেকে যায় শহরের দিগন্ত, নাভিশ্বাস উঠে তবু প্রাণপনে শেষ প্রশ্বাস টেনে নেই বুকের ভেতরে। শহরে সুরম্য প্রাসাদ গড়ছে কারা?
সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেই এসো পরস্পরের হাতে রাখি হাত, আমাদের এখনও দিন রয়ে গেছে সবটুকু শেষ হয়ে যায় নি এখনও, আলো ফুটবে একটু পরেই, কল্পনার রাজা উজির মারছি, ২১শতক আসছে, আমাদের নিজস্ব দায় বদ্ধতা নেই, এখানে আইনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয় নাগরিক আর সবার প্রতি সমান আচরণ করতে পারে না আদালত, কারো কারো জন্য আইন বলবত থাকলেও কারো কারো জন্য আইন শব্দটাই অস্তিত্ববিহীন।
লজ্জাজনক সত্য হলো আজ আবারও আমাদের সময়ের সম্পাদক সাহেব বেশ গম্ভীর মুখে বললেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ১৯৭১এর ঘটনায় এমন কোনো যৌথ সিদ্ধান্ত দিতে পারে নি যে এখানে গণহত্য হয়েছে। মাননীয় সম্পাদককে আসলে ঠিক কিভাবে সহায়তা করবো জানি না। ১৯৭৩ এ জাতিসংঘ সনদ কি পারবে এ ভ্রান্তি দুর করতে? বর্বর গণহত্যার দৃষ্টান্ত দিতে যখন ১৯৭১এর উদাহরণ দেওয়া হয় তখন কি এটা স্পষ্ট করে বলা হয় যে এখানে গণহত্য হয়েছে? আমি জানি না- সংবাদ বেচে খাওয়া এসব মানুষের কাছে ঠিক কোনটার গ্রহনযোগ্যতা আছে।
ইন্টেলেকচুয়াল ফার্ট বলে একটা শব্দ শুনেছিলাম তবে এটার অর্থ সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলাম না- ইদানিং বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা হয় আর তারা নানা রকম বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করে- এটা দেখে আসলে ইন্টেলেকচুয়াল ফার্ট শব্দটার প্রায়োগিক অর্থটা বুঝতে পারলাম- বায়বীয় অসাড় কথা এবং যেখানে কোনো নতুন কিছু সৃষ্টির সম্ভবনা কম। বরং কিছুটা দুর্গন্ধ আর উত্তেজনা ছাড়া অন্য কিছুই হয় না এসব বিবেচনায়।
যেখানে অক্ষমতা স্বীকার এবং সহযোগিতা চাওয়াকে পরাজয় বিবেচনা করা হয়, যেখানে কেউই অক্ষমতা স্বীকার করতে নারাজ, সেখানে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরের চিত্র যেমনটা হওয়া স্বাভাবিক বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তেমনই।
রাজনৈতিক অস্থিরতার পরে আরও একটা অসহনীয় অবস্থায় জনগন সামরিক তত্ত্বাবধানে একটা নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগমনকে স্বস্থিকর বিবেচনা করলেও এবং তাদের আওতাবহির্ভূত নানাবিধ সমাজসংস্কারমূলক কার্যক্রমকে মৃদু সমর্থন জানালেও সেটা যে বিস্ফোটে রুপান্তরিত হতে পারে এমন আশংকা কেউই করে নি, এমন কি এখনও অনেকেই কাল্পনিক নেশায় বুঁদ হয়ে আছে যে যাবতীয় সমস্যার সমাধান আসলে এখানেই।
যদিও লাশের পচন আর মানবিকতার পচন রোধ করা সম্ভব হয় নি, যদিও প্রায় প্রতিটা জলাশয়ের পানি দুষিত এবং পান করবরি পানি এবং ঘরের খাবার নেই অনেকের. যদিও বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮ ভাগের ১ ভাগ কোনো না কোনে ভাবে আক্রান্ত এর পরেও যখন মইন উ আহমেদ বলেন পুর্বপ্রস্তুতির জন্য ক্ষয় ক্ষতি তেমন হয় নি তখন একটু আশ্চর্য লাগে- আসলে তিনি কি বলতে চাইছেন- ২ কোটি মানুষের আক্রান্ত হওয়া বড় কোনো ঘটনা নয়? ১০ লক্ষ ঘরবাড়ী আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বড় মাপের ক্ষতি নয়? কিংবা এই যে সুপেয় জলের অভাবে এবং খাদ্যাভাবে এর পরে যতজন মানুষ ক্রমশ ধুঁকছে তাদের এই ভোগান্তি- বড় কোনো বিপর্যয় নয়? তবে আমাদের ঠিক কত মাপের ক্ষতি হলে আমরা বলতে পারবো ক্ষয় ক্ষতির পরিমান বেশী।
যদিও সবাই সমালোচনা করছে অধিকাংশ এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ হয় নি এবং ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ এলাকার অবকাঠামোগত ক্ষতি এত বেশী যে ত্রান নিয়ে সড়ক পথে যাওয়া যাচ্ছে না তবে তারা সাংবাদিকদের বললেন ৮০ শতাংশ দুর্গত মানুষের কাছে আমরা পৌঁছাতে পেরেছি, আমরা এ দুর্যোগ সামাল দিয়ে ফেলেছি- এমন অম্লান বদনে মিথ্যাচার করার দায়টা নিবে কে?
সেনাবাহিনী প্রধান আজ বললেন অনেক এলাকায় ত্রান চৌঁছানো সম্ভব হয় নি, এবং তারা সবাইকে ত্রাণ সহযোগিতায় আনতে চান তাই যে কোনো ত্রাণ তৎপরতার উদ্যোগ যেনো তাদের সাথে সমন্বয় করে নেওয়া হয়- উদ্দেশ্য মহৎ, তারা চান না যেখানে সহজেই ত্রান পৌঁছানো সম্ভব সেখানেই সবাই ত্রান বিতরন করুক, বরং তারা নিজস্ব অবকাঠামোগত সহায়তা দিয়ে আরও অনেকবেশী মানূষের কাছে ত্রান পৌঁছাতে চান।
তবে এই স্বীকৃতি এসেছে যখন অনেকগুলো রাষ্ট্রদুত আকাশ পথে ক্ষয়ক্ষতি দেখে এসে সাংবাদিকদের জানালেন প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ অনুমানের তুলনায় অনেক অনেক বেশী- এবং আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার তখনই মনে হলো একটা ভাষণ দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টা বিবমিষা জাগায়। সরকার কি মানুষের কল্যানে কাজ করতে চায় নাকি সরকার বড় বড় পরাশক্তিকে দেখাতে চায় তাদের কর্মদক্ষতা এবং তাদের যোগ্যতা।
লজ্জাজনক সত্য হলো আমাদের সার্বভৌমত্ব বোধ ,যেটা এ দেশে রাজনীদির মূল হাতিয়ার, একটা আভিধানিক শব্দ। তাই আমাদের কাছাখোলা হয়ে উপযাচক হয়ে বলতে হয় আমাদের দারিদ্র আর কষ্ট দেখো, দয়া করো ভগবানেরা, ত্রান পাঠাও। আমাদের রাজনীতিবিদদের রাষ্ট্রদুতেরা মৃদু ভৎর্সনা করতে পারেন এবং তাতে আমাদের সাংসদেরা বিগলিত হন। তাই যখন তারা বলেই ফেললেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ বাধ্য হয়ে কঠোর গোপনীয়তার কাছা খুলে সেনাবাহিনী প্রধান এবং সব উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা বলতে শুরু করলেন ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিতে সবারই এগিয়ে আসা প্রয়োজন এবং সেনা ভাষ্য বদলে গিয়ে দাঁড়াল আসলে সবার কাছে এখনও পৌছাঁতে পারি নি আমরা, আমাদের ত্রান অপ্রতুল, প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য।
সরকার ৫ লক্ষ টন খাদ্য সহায়তা চেয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে- তবে এই সাম্প্রতিক দুর্যোগগুলোতে একটা বিষয় পরিস্কার হয়েছে, কৌশলগত মিত্রতার অবস্থানে বাংলাদেশের গ্রহনযোগ্যতা গ্রাস পেয়েছে। এখন বাংলাদেশের মিত্রতা এবং কুটনৈতিক সহায়তার প্রশ্নে তেমন আগ্রহ নেই আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের। এর আগে মূলত উগ্রধর্মীয় মৌলবাদী দেশ হিসেবে তেমন পরিচিত ছিলো না বাংলাদেশ বরং বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান এবং মূলত ধর্মীয় আনতিবিহীন রাষ্ট্র হিসেবে একটু হলেও সুবিধা পেতো।
এরশাদের সময়ের ত্রান সহায়তার পরিমাণ কমেছিলো বি এনপির সময়ে, তৎকালীন মন্ত্রীদের ত্রান লুটপাট এবং উঠতি পূঁজিপতি হয়ে উঠবার পর্যায় শেষ হওয়ার পরে লীগের সময়ে আরও কমলো বৈদেশিক ত্রানের পরিমাণ। আমাদের ত্রান লুটপাটের ঘটনায় এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে আমাদের দেশে সরবরাহকৃত ত্রাণ প্রকৃত দুর্যোগগ্রস্থ মানুষের হাতে পৌঁছায় না।
ফলে ২০০০ থেকেই আমাদের দেশে ত্রানের পরিমাণ প্রায় নেই বললেই চলে, সৈজন্যতা এবং বিবেকের তাড়নার কারণে যতটুকু না দিলেই না সেটুকু ত্রান বরাদ্দ আমাদের জন্য।
সুতরাং দেশব্যপী একটা ত্রান সংগ্রহ অভিযান চলছে। এবং আমাদের বড় বড় কর্পোরেট সেখানে যা প্রদান করছে তা দেখে মনে হয় এটা গালের উপর জুতার বাড়ি।
আমাদের আমলে কতটা সহায়তা প্রয়োজন? যদি আমরা অর্থনীতিকে আরার আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই তবে আমাদের আগামীতে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাক্য ব্যয় করতে হবে-
সরকার আসলে ব্যর্থ হয়েছে ত্রান সরবরাহ করতে এবং এ কারণেও আরও অনেক বেশী মানুষ মারা যাবে। এসব মৃত্যু ঘটবে আমাদের অবহেলায় এবং আমাদের সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে পৌঁছাতে না পারার ব্যর্থতায়। যদিও রাজনীতিবিদেরা ঘৃণ্য চরিত্রের মানুষ এবং সব বিষয়েই তাদের দাবি দাওয়া থাকে এখানেও প্রধান ২ দলের একটা জঘন্য চাওয়া আছে- তারা ২ নেত্রীর মুক্তি চাইছেন যেনো তারা ত্রান বিতরণে অংশ নিতে পারেন- আমার কাছে আশ্চর্য লাগলেও এটাই বাস্তবতা যে মানুষ এখন শুধু মানূষ নয়- এক একটা ভোট আর সংসদের আসন- সে সংসদের আসনে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে যদি ত্রান নামক কৃতজ্ঞতার মায়াজালে আমরা ভোটারদের বাঁধতে পারি।
এবং একই সাথে যদি সরকার এটাকে সমর্থন করে মুক্ত করে দেয় ২ নেত্রীতে তাদের অনুগ্রহে হয়তো একটা শক্তিশালী লবি তৈরি হতে পারে। ক্ষমতাবানের কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত মানুষদের দুর্নীতির তালিকা দেখে অনেক রকম অকল্যান চিন্তা আসে মাথায়।
১০ লক্ষ ক্ষতিগ্রস' বাসস্থান মেরামতের জন্য যদি ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় তাহলেও ১০০০ কোটি টাকা লাগবে- আর জনপ্রতি দৈনিক ১ কেজি চাল আর ২ লিটার পানি আর ডাল বরাদ্দ করলেও লাগবে দৈনিক প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন চাল- এমন সহায়তা হয়তো আরও ৪ সপ্তাহ দিতে হবে যত দিন না ক্ষতিগ্রস্থেরা একটু উঠে দাঁড়াতে পারে। অর্থ্যাৎ আমাদের প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল লাগবে। আমাদের মজুত চালের পরিমাণ কত? যদি ১ কেজি চালের বাজার দর ২০ টাকাও বিবেচনা করি তবে ১ মেট্রিক টন চালের দাম ২০ হাজার টাকা। প্রায় ১০০০ কোটি টাকার চাল প্রয়োজন হবে। এবং অনেকের চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন হবে- শাররীক ভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়া এবং মৃত জনসংখ্যা বিবেচনায় না এনেও যদি আমরা ভাবতে শুরু করি তবে আমাদের স্বীকার করতে হবে যে ক্ষতি হয়েছে আমাদের তার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি- এবং এ দেশের এক অষ্টমাংশ মানুষকে নিয়মিত খাবার ২ বেলা ডাল ভাত তুলে দিতে খরচ লাগে দৈনিক ৩০ কোটি টাকা। অবশ্য এখানে আরও একটা হিসাব চলে আসে- আমাদের সকল মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে চাইলে সরকারের দৈনিক খরচ হবে ২০০ কোটি টাকা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ত্রান এবং ত্রান বিতরনের জন্য সেনাবাহিনী পাঠিয়েছে- কতটুকু ত্রান লুটপাট বন্ধ করতে আর কতটুকু সহায়তার জন্য এই প্রশ্নটা এখন উত্থাপন করাই যায়। যদিও সমালোচিত এই প্রক্রিয়া সব মানুষের কাছেই বিব্রতকর তাই তারা বলছে ত্রান বিতরন শেষ হওয়া মাত্রই তারা চলে যাবে- তবে অনেকেই সংশয়ী এ বিষয়ে। এখানে বিভিন্ন কারণে যে শক্ত ঘাঁটি প্রয়োজন সেটার পাহিদা মিটাতে দীর্ঘ মেয়াদে তারা এখানেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিবে কি না কে জানে।
এর ভেতরেও উপদেষ্টাদের ভেতরের পারস্পরিক যোগাযোগহীনতা প্রকট। তারা একক ভাবে যা বলছেন তা তাদের নিজস্ব অভিমত- সরকারের ঐক্যবদ্ধ কোনো পরিকল্পনা আছে এমনটাও মনে হচ্ছে না।
অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন আমাদের অর্থনীতিতে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না, আবার অর্থনীতিবিদদের ভেতরেও নানা রকম মতামত- কেউ বলছেন এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে আবার তাদের কেউ বলছে আদতে ক্ষতির পরিমাণ এখনও অনির্ণীত। যদিও আশঙ্কা করা হচ্ছে আমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে শতভাগ তবে তারা সান্তনা দিচ্ছেন, বলছেন পরিস্থিতি তেমন খারাপ না আদতে আমাদের ৭০ শতাংশ জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে তবে বাকী ৩০ শতাংশ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং সেখান থেকেও পর্যাপ্ত ফলন পাওয়া যাবে না। আমরা আনন্দিত হই। ক্ষতি তেমন হয় নি- অবকাঠামোগত ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে- সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিবে- আগের ঋণ পরিশোধ করতেই হবে এটাতে কোনো ছাড় নেই।
তবে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে কতটা সময় লাগবে সেটা এখন মূল বিবেচনা। প্রায় ৯টি জেলার ৪০০ ইউনিয়ন কোনো না কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ, অনেকস্থানে কোনো স্থাপনা নেই। সড়ক পথের অবস্থা বেহাল। সম্পন্ন মধ্যবিত্ত অংশ যারা অর্থনীতি চালায় তাদেরও কিছু নেই। জমি আর চিংড়ি ঘেরের মালিকের সম্পদের কতটুকু অবশিষ্ট এবং যারা ভুমিহীন তাদের অবস্থাই বা আর কত খারাপ হবে।
দুর্ভিক্ষের আশংকা নেই বললেও একটা প্রশ্ন চলেই আসে আমাদের আপদকালীন মজুতের চাল শেষ হবে- আমাদের আভ্যন্তরীন বাজারে চালের সরবরাহ কমবে। চাহিদা কমবে না তাই দাম বাড়বে আর এই বর্ধিত দামের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে পারবে সবাই? যদি চালের দাম বেড়ে ৩০ টাকা কেজি হয় তাহলে সে চাল কেনার সামর্থ্য থাকবে কার? কতজনের? অনেকেই তো চালের অভাবে নয় বরং চালের দাম না জোগাতে পেড়ে অনাহারে কাটাবে। বাজারে হয়তো চাল থাকবে তবে সে চাল কেনবার মতো ট্যাঁকের জোর থাকবে কজনের?
আর আমাদের বার্ষিক চালের চাহিদা বিষয়ে কি উপদেষ্টা মন্ডলীর কোনো অনুমাণ আছে। দৈনিক একজন মানুষ ৫০০ গ্রাম চাল খায় এটা বিবেচনা করে ১৪ কোটি মানুষ দৈনিক ৭ কোটি কেজি চাল খায়- অর্থ্যাৎ আমাদের দৈনিক ৭০ হাজার মেট্রিক টন চালের প্রয়োজন হয়। বছরে আমাদের চালের চাহিদা প্রায় ২৫ মিলিয়ন টন। আমাদের মজুত আছে ২ মিলিয়ন টনের মতো। অর্থ্যাৎ আমাদের হাতে এখন আগামি ২ মাস চলবার মতো চাল মজুত আছে তবে সেটা বাড়িয়ে বলা হিসাব- যদি আশংকার কথা বলি তাহলে বলতে হবে আমাদের যদি দ্রুত চাল সরবরাহের ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তবে আমরা খাদ্য সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মাননীয় উপদেষ্টা তপন চৌধুরির আশাবাদ এবং আমাদের বলিষ্ঠ নির্বোধ অর্থ উপদেষ্টার মজুতের তথ্য মাথায় রেখেই বলছি যদি খাদ্যশস্য আমদানির সরকারি উদ্যোগ না নেওয়া হয় তবে আমাদের যাবতীয় অর্থনীতিবিদদের নিজেদের প্রচার যন্ত্র বানিয়েও এই সরকার খাদ্যাভাব ঠেকাতে পারবে না এবং দুর্ভিক্ষ বিষয়ে উদাসিনতা না থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা যাবে।
মানুষ মারা যাবে কারণ তারা খাদ্য কিনতে পারবে না। মানূষ ছড়িয়ে যাবে চারপাশে এবং লোকালয়ে পতিতাবৃত্তি এবং লুন্ঠন বাড়বে। মানুষ যেকোনো মূল্যে বাঁচতে চাইলে সামজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঠেকানো যাবে না। স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলার সংখ্যা বাড়রে- মৃতদের অভিসম্পাত করবে জীবিতরা- বরং নিদারুণ আত্মপীড়নে ভুগবে- প্রতিনিয়ত ভাববে বেঁচে থেকেই বা কি হলো- এর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো ছিলো।
সরকার নানা রকম আশাবাদী বক্তব্য শোনাচ্ছে আমাদের। আমরা অশাবাদী হয়েও উঠতে পারি। তারা আগামি ৬ মাস সহায়তা অব্যহত রাখবে। সরকারের সমস্ত রসদ দিয়ে হলেও এখন আসলে দক্ষিণাঞ্চল পূনর্গঠনের কাজ করা প্রয়োজন। আমাদের এখনকার যেটুকু মজুত খাদ্য তা দিয়ে হয়তো আগামি ৬ মাস তাদের সহায়তা দেওয়া যাবে- তবে বাকী মানুষগুলোর কি হবে? দেশের ১ থেকে ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের অবস্থা পরিবর্তনে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কাজটার পরিকল্পনা আমাদের সামনে নেই। নানা রকম আশার বচন ছাড়া আসলেই কিছু নেই সামনে। এখনও সকল মানুষের হাতে ত্রান না পৌঁছালেও সেনাবাহিনীর দাবি তারা শতভাগ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছে।
সমন্বয়হীনতা- পরিকল্পনাহীনতা এবং অহিতুক নেতৃত্ববিহিনতায় কোনো ভাবেই একটা নির্দিষ্ট লক্ষে তারা পৌঁছাতে চাচ্ছে এমন আশংকা করছি না আমি। প্রশাসনিক ক্ষমতা আসলে কার হাতে? কে নেতৃত্ব দিবে এ কাজে? কার কাছে সরার দায়বদ্ধতা থাকবে? কে তদারক করবে এই পুণগঠনের কাজটা?
নির্দেশনার স্পষ্ট অভাব আছে উপদ্রুত এলাকায়। এমন কি জেলা পর্যায়ে সরকারি গুদামে মজুত খাদ্যও উপদ্রুত এলাকায় পৌঁছানো সম্ভব হয় নি। জেলা প্রশাসক কি এ সিদ্ধান্ত দিবে? উপদেষ্টা পরিষদ দিবে? নাকি বিলুপ্ত এবং অকার্যকর স্থানীয় প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিবে এটার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। সবাই একটা সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষি। প্রশাসনে যোগ্য ব্যক্তির কি এতই অভাব? নাকি এটাও সরকারের সিদ্ধান্তের জের? কেউই আগ বাড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপদে পড়তে চাইছে না।
হয়তো স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষমতায় তারা যতটুকু বরাদ্দ দিতে পারে সেটুকু তারা আন্তরিক ভাবেই দিচ্ছেন তবে প্রকৃত চাহিদা এর কয়েকগুণ। ফলে আসলে সবার চাহিদা পুরণ হচ্ছে না। আর সারা দিশের মানুষের কাছেও এমন উদ্বৃত্ব সম্পদ নেই যে তারা দান করতে পারে- সবাই কৃচ্ছতা সাধন করে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসবে এমন আশাবাদের কোনো কারণ নেই।
যদিও সরকারের আবেদনের পর সামান্য হলেও গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে মানুষ তবে এটা কতটুকু সফল হতে পারে?
মন্তব্য
সমস্যা ! চারিদিকে ! বাঁচি ক্যামনে
eru
-------------------------------------------------
pause 4 Exam
নতুন মন্তব্য করুন