সামরিক সুশাসন- সোনার পাথর বাটি ০২

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বুধ, ২৫/০৭/২০০৭ - ৭:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সরকারের প্রতিহিংসাপরায়নতা দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে- বর্তমানের প্রশাসন বালখিল্যতায় মগ্ন কিংবা তাদের কাউকেই বিবেচনায় আনবার প্রয়োজন নেই- তাদের আচরণের উদ্ধত ভঙ্গি দেখে মনে হয় বাংলাদেশে কতিপয় উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী, দুই পয়সা কামানোর ধান্দা নিয়ে ঘোরা কতিপয় সুশীল সমাজের মানুষ এবং সমারিক বাহিনী ভিন্ন আর কেউ বসবাস করে না- দেশের অধিকাংশ মানুষই পশুর পর্যায়ভুক্ত- তাদের কোনো মানবিক অধিকার থাকতে পারে না- তারা নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহন করছে- সাধারন মানুষ হিসেবে বিবেচিত দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষের অবস্থা কোন তলানীতে দিয়ে ঠেকেছে এ বিষয়ে তারা স্বেচ্ছায় উদাসীন-

এসব অসুবিধা স্বত্ত্বেও তাদের সমর্থনের কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ আমার নেই- তাই আমি কোনো ভাবেই তাদের সমর্থন করতে পারছি না- সামরিক বাহিনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্ররোচিত করছে , দল ভাঙার রাজনীতি করছে এবং অনৈতিকভাবে সংস্কারকে প্রভাবিত করছে- এই বিষয়টা প্রকাশ্যে আসলো যখন দুই নেত্রীকে জোর করে নির্বাসনের প্রক্রিয়াটা ব্যর্থ হলো তখন- আর সে সময় সামরিক সমর্থিত সরকার রাজনৈতিকদের ব্ল্যাকমেইল করছে এমন অভিযোগ তুলবার পরপরই প্রতিহিংসা পরায়ন এই সরকার হান্নাহ শাহকে আটক করলো- গ্রেফতারের পর ২ মাস গেছে- যদি এমন অবস্থা বিরাজমান থাকতো যেখানে যা ইচ্ছা তাই করা যায়- তাহলে হয়তো হান্নান শাহকে গুম খুন করে ফেলতো সামরিক সরকার- তা ঘটে নি- তিনি প্রতিহিংসার কবল থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে এসেছেন ২ মাস পরে- একই অভিযোগ ছিলো তারেক জিয়াকে আটক না করবার জন্য যেশ তোয়াজ করছিলো তার মেজর জেনারেল মামা- সে প্রক্রিয়া সফল হয় নি- হতো হয়তো- তারেক জিয়া , খালেদা জিয়া আরাফাত রহমান এবং তার পরিবারবর্গ সসম্মানেই দেশ ত্যাগ করতে পারতো যদি খালেদা জিয়া নির্বাসনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারতেন সময় মতো- তা ঘটে নি- তারেক জিয়া জেলে- এবং তাকে মুক্ত না করবার সিদ্ধান্ত বর্তমানে এত বেশী সমস্যার উদ্ভব করেছে-

এরপর শেখ সেলিম আর জলিলকে আটক করা হলো- একই সাথে আটক হলো বাবর- এবং এদের রিমান্ডে নেওয়ার পর যে সীকারোক্তি তারা দিয়েছিলো সেটা কে কিংবা কাহারা সংবাদপত্রের মানুষদের সরবরাহ করেছে- এবং এই জবানবন্দি বর্তমানে বাংলাদেশে বেচাকেনা চলছে- বিষয়টা গ্রহনযোগ্য নয়- তবে দুটো সম্ভবনা আছে- হয় এই কাজে বর্তমানের প্রশাসনের সহযোগিতা আছে- তারা উৎসাহী হয়েই এই জবানবন্দী সরবরাহ করেছে- অথবা এ বিষয়ে সরকার অনবগত- তাদের অগোচরেই এ কাজ কতিপয় মানুষ করেছে- যদি প্রথমটা সত্য হয় তবে আমার উৎকণ্ঠা কমে না= বরং সরকারের অনৈতিক অবস্থাকেই এটা প্রমাণ করে- আর যদি দ্বীতিয়টা সত্য হয় তবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রশাসনের উপরে কোনো নিয়ন্ত্রন নেই এই সরকারের- দুটোই ভয়াবহ- এমন কি এই জবানবন্দীর একটা অনুলিপি আমরা মতো কতৃপক্ষের অনুগ্রহবঞ্চিত মানুষেরও শোনবার দুর্ভাগ্য হয়েছে- সুতরাং এইটার সহজলভ্যতা ঠিক কিসের ইঙ্গিত বহন করে?

এর পরপরই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হলো- শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রদানের ২ দিনের ভেতরেই তাকে আটক করা হলো- এবং আটক করা হলো এমন পরিস্থিতিতে , এমন অপরাধে যে অপরাধে অভিযুক্ত কয়েকজন জামাতের নেতার চলাচলে কোনো বিধিনষেধ নেই-এবং একই কারণে একটা সন্দেহ দানা বাঁধছে- সরকার জামাতকে কিছুটা অনৈতিক সুবিধা প্রদান করছে- এবং আজকে এম এ মতিন সাহেব বলেছেন সম্ভবত জামাত দুর্নীতিতে জড়িত ছিলো না- কি আশ্চর্য বিষয়- মন্দিরের জমি জবর দখল- কিংবা সরকারী খাস জমি দখলে রাখা কিংবা ত্রান বন্টনে অনিয়ম কোনো অপরাধ নয়- যদি এটাই সত্য হয় তবে কেনো ফালুকে আটক রাখা- তবে কেনো ভুমি দস্যু আর বনদস্যুকে আটকে রাখা- একই যাত্রায় পৃথক ফলের কারণ আইনগত অনৈতিকতাকেই প্রকট করে তুলে-

শেখ হাসিনাকে যে চাঁদাবাজীর মামলায় আটক করা হয়েছে সেখানে চাঁদার জন্য ব্যবহৃত চেকগুলোর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে- কে উত্তোলন করেছে- কবে উত্তোলন করেছে- কোথায় জমা দেওয়া হয়েছে সবই তো ব্যাঙ্কের তালিকা থেকে পাওয়া সম্ভব- এবং আদতেই এটা শেখ হাসিনা গ্রহন করেছেন কিনা এটাওআসলে ব্যাঙ্কের হিসাব পরীক্ষা করে জানা সম্ভব- এই সহজ পথটা তদন্তের পথটা খোলাই ছিলো- শেখ হাসিনা চাইলেই ব্যাংকের হিসাব থেকে তাকা সরিয়ে নিতে পারতো তবে ব্যাংকের হিসাব বইতে এই হিসাব কেনো বিগত ৬ বছরের সকল হিসাবই জমা থাকে- সুতরাং তদন্ত করে এটা বের করে নেওয়া সম্ভব ছিলোই- তা না করে আটক করা হলো এবং চার্জশীটে নাম দেওয়ার আগে তাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো না- এবং এই চার্জশীত আদৌ গ্রহনযোগ্য কিনা এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে ১৫ই আগষ্ট- আমি জানতাম এই ১৫ই আগষ্ট সরকারী বন্ধের দিন ছিলো-

ফ্রিগেট ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলাটা আবার উঠেছে- তবে আমার মনে হয় না আবারও এই মামলার কার্যক্রম চলবে- সামরিক বাহনী নিজেদের ধোয়া তুলসি পাতা ইমেজ রক্ষার জন্যই এখানে কোনো বারাবারি করবে না- কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে যাক এটা তারা চায় না- বরং মামলাটা পুনরায় সামনে আনার উদ্দেশ্য একটা দেনদরবারে বাধ্য করে হাসিনাকে- ভালোই চলছে- তবে আবারও সিদ্ধানত জানাচ্ছি- ছাগল দিয়ে হাল চাষ আর সামরিক বাহিনীকে দিয়ে সুশাসন আর দুর্নীতি দমন সম্ভব না।


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আওয়ামী লীগ-বি.এন.পি.র গ্যাঞ্জাম থামতে থামতে মামাদের মূল মিশন শেষ হইয়া যাইবো। তখন হাতে থাকবো কোরশীর ছাগুদল...আর মোটামুটি ইন্ট্যাক্ট অবস্থায় জামাত...সেইটা আরো বিপজ্জনক হৈবো
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আওয়ামী লীগ - বিএনপির শাসনামলে সৃষ্ট জন-অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে দল ভাঙার রাজনীতি করছে সামরিক সরকার। জনগণও একটা পর্যায় পর্যন্ত চুপ থাকবো, বা বেশি সোচ্চার হবে না। কিন্তু আলটিমেটি সূতায় টান পড়বেই। জানি না, কতোটা দেরি হয়ে যাবে তখন। আসলে জনমানুষের পক্ষে কেউ নেই, না বিএনপি, না আম্লীগ, না সামরিক তত্ত্বাবধায়ক। রাজনৈতিক অস্থিরতাও তাই কখনো শেষ হওয়ার নয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হাসান মোরশেদ এর ছবি

গতকাল কথা হলো আওয়ামীলীগের একজন প্রয়াত জাতীয় নেতার ছেলের সাথে(নিজে রাজনীতিতে তেমন ভাবে জড়িত নয় তবে হাসিনার সাথে ঘনিষ্ঠ) ।
তার অব্জার্বেশন হচ্ছে-মানুষ রাস্তায় নামতে ভরসা পাচ্ছেনা । আবার রাস্তায় নেমে নতুন কোনো তারেক জিয়া কিংবা শেখ হেলাল বানানোর দরকার কি মানুষের?

শেকড়পর্যায়ের অর্থনীতি ইতিমধ্যেই ভেংগে পড়েছে । আরো ভাংবে । বেঁচে থাকার প্রয়োজনই মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে বাধ্য করবে, নেতা বানানো নয় । মধুচন্দ্রিমা শেষ হয়ে গেছে এরই মাঝে ।

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।