হীরক রাজার দেশে ৮দশমিক ৫

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৫/১০/২০০৭ - ৬:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অদ্ভুত উন্নাসিকতা আমাদের উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চবিত্ত উপদেষ্টামন্ডলীর আপত্তিকর অনেক বক্তব্যই এর আগে এড়িয়ে গিয়েছি এই ভেবে যে হয়তো শীঘ্রই তাদের মহামূল্যবান এবং অতিপ্রত্যাশিত চেতনা জাগ্রত হবে। আশাবাদী হওয়া এবং আশাবাদের পুরণ ভিন্নবিষয় এটা জানা থাকলেও আশাবাদ ভুলতে পারি না। তবে উচ্চবিত্তসুলভ উন্নাসিকতা ভুলে সত্যিকারের জনগণের সরকার হতে হলে বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারণিমহল এবং উপদেষ্টামন্ডলীর ভাববার ধরণ বদলানো আবশ্যক। তাদের ধারণার বাংলাদেশ এবং আমাদেও বাংলাদেশের ভেতরের ব্যবধান যতদ্রুত তারা উপলব্ধি করতে পারবেন আমরা ততশীঘ্রই আমাদেও আশাবাদেও প্রতিফলন দেখতে পারবো তাদের গৃহীত সিদ্ধান্তসমুহে।

অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকলে পুর্বের মতো এখনও দাবি আদায় কিংবা দেনদরবারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করা সম্ভব হয় না বাংলাদেশে। যখন বাংলাদেশে শিল্পোদক্তা এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের রক্ষার্থে তথাকথিত ট্রুথ কমিশন গঠিত হচ্ছে, তাদের অনাচার এবং দুর্নীতিতে সহায়তা এবং দুর্নীতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার দায় থেকে তাদের মুক্তি দিতে সরকার নতজানু তখনই বাংলাদেশে সারের দাবিতে কৃষক ক্ষুব্ধ।

অবশ্য কৃষকের সংগঠন নেই, বাঘা সিদ্দিকি বিভিন্ন বড় বড় কথা বললেও কৃষকেরা ব্রাত্য তার কাছে, তাই তাদের দাবি সংবাদমাধ্যমের কল্যানে উপদেষ্টা কমিশনে পৌঁছালেও সেটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। দরিদ্র ও নিরন্ন মানুষের এবং ক্ষুধার রাজনৈতিক ব্যবহারের ধারণা বিষয়ে স্পষ্ট শিক্ষিত উপদেষ্টা পরিষদের চেতনা। তাই তারা সর্বাংশে মিথ্যে না বললেও বলছেন বাজারে সারের সরবরাহ প্রচুর এবং সংকটের কোনো কারণ নেই। সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বাজারে সারের সরবরাহ স্বাভাবিক। আসন্ন বোরো মৌসুমের চাহিদা পুরণে সরকার আরও সার আমদানি করছে, যদিও বাংলাদেশের সারের চাহিদা এবং বাংলাদেশে সারের উৎপাদনের ঘাটতিটা প্রায় ৫ লক্ষ মেট্রিক টনেরও বেশী এবং সরকার ধাপে ধাপে সার আমদানি করছে। যদিও এটা শুধুমাত্র ইউরিয়া সারের চাহিদার হিসেব, এছাড়াও বেয়ারা কৃষকেরা মাঠে টিএস পি, পটাশসহ আরও কিছু সার প্রয়োগ করে থাকে। তার একটি অবশ্য দেশে উৎপাদিত হয় না। সেটা আমাদের আমদানি করতেই হয়।

মাননীয় কৃষি উপদেষ্টা সি ই করিম বলেছেন বাজারে সারের সরবরাহ স্বাভাবিক, হুজুরের মতে অমত কার? সারের দাবিতে বিক্ষোভ আসলে সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত। ষড়যন্ত্র তত্বেও বিস্তৃতি সবখানেই। প্রমাণ নেই তবুও নানাবিধ ষড়যন্ত্র এবং নাশকতামূলক তৎপড়কা অভিযোগ করছেন তারা। তবে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই তাদের। এযেনো পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের খবর, সব সময়ই তারা তদন্তেও স্বার্থে সব তথ্যই গোপন রেখে দেন। আমরা এর কিছুই জানতে পারি না। আদালতে পেশ করা হয় এবং আদালতে পেশ করা তথ্যও আমাদের জানা হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার তদন্ত কমিটির সামনে কোনো স্পষ্ট তথ্য দিতে না পারলেও পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন শিক্ষকদেও সমর্থনে ছাত্ররা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে যায়। রিপোর্ট পেশ করা হবে আগামি মাসের মাঝামাঝি, তবে বাংলাদেশের প্রথা অনুসারে এটা দেখবার সৌভাগ্য হবে না আমাদের।

তবে কৃষি উপদেষ্টার এমন আপত্তিকর বক্তব্যের জন্য তার পদত্যাগ দাবি করা যদি শোভন না হয় তবে তার কাছে দাবি থাকবে তিনি যেনো ক্ষমা প্রার্থনা করে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এমন আলটপকা মন্তব্য যা অনেকাংশে রাজনৈতিক সরকারের সমতুল্য এবং একই সাথে সেখানে আলতাফিয় উপাদান বিদ্যমান, এবং সেটা কৃষকদেও জন্য অসম্মানজনক। তারা যেহেতু ৮০ শতাংশ বাংলাদেশীদেও প্রতিনিধিত্ব করেন তাই এটা সংখ্যাগরিষ্ট মানুষকে অপমানের সামিল।

কৃষকেরা যখন সারের চাহিদা জানাচ্ছেন তখন একটা বাস্তবতা হতে পারে তারা আদতেই সার সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং তাদের চাহিদা মতো সারের যোগান নেই বাজারে। তাদেও এই দাবিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করে এটাকে কোনো গুরুত্ব না দেওয়া এবং রাজনৈতিক সরকারের মতো সেটাকে সম্পুর্ণ অস্বীকারের প্রচেষ্টা লজ্জাজনক আচরণ। আমাদের প্রিয় মইনুল হক অবশ্য বলেছেন সরবরাহ পরিমান মতো এবং স্বাভাবিক হলেও আগে যেসব ডিলারকে কিংবা আগে যেসব দোকানে সার পাওয়া যেতো এখন তার সবগুলোতে সার পাওয়া যায় না। এর পেছনের কারণ বর্তমান সরকারের গৃহীত নীতিমালা।

যদিও পর্যাপ্ত সারের ডিলার নিয়োগ করবার একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সরকার তবে সেটা কেনো ব্যর্থ হলো? এর কোনো উত্তর কি আছে সরকারের কাছে? গীতি আরা সাফিয়া চৌধুরি প্রথম পর্যায়ে বেশ কর্ম তৎপরতা দেথালেও বিউটেনিসের প্রশংসা বানী শুনবার পর থেকে তার কাজের উৎসাহে বোধ হয় ভাটা পড়েছে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তিনি সার সরবরাহ ট্রাক পর্যবেক্ষণ করলেও ইদানিং তেমন কোনো খবর আসছে না। এমন কি তার তৎপরতার খবরও আসছে না মিডিয়ায়।

সমস্যাটা সাংবাৎসরিক, কৃষকের চাহিদা মতো সারের যোগান থাকে না, উৎপাদন ব্যহত না হলেও বাধাগ্রস্ত হয়। কৃষক বিক্ষোভ কওে, পুলিশ গুলি ছুড়ে, কয়েকজন নিহত হলে কতৃপক্ষের টনক নড়ে, সারের ট্রাক আসে, এবং ঘটনার পুনারাবৃত্তি ঘটতে থাকে দেশে। এমনও না যে হঠাৎ করে উদ্ভুত কোনো সমস্যা। এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল সরকার।

তবে নির্মম বাস্তবতা হলো কৃষকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং কৃষকের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ক্ষমতাহীনতার অভিশাপ রয়েছে। যদি কৃষক শেরাটনে বড় সভা করে ১০টা চ্যানেলের মাইক্রোফোন মুখের সামনে ধরে বলতে পারতো আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ সার নেই তবে সম্ভবত পরিস্থিতি ভিন্ন হতো । কিংবা বর্ণবাদের মতো দারিদ্র ললাট লিখনে স্পষ্ট বলে তখনও তারা অবহেলার শিকার হতে পারতো। কৃষকের আবার চাহিদা কি?


মন্তব্য

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

কি বলব বুঝতে পারছি না। গরীবের দুঃখ আমরাইবা কতটুকু বুঝি আর উনারাতো সব সব মহামান্য লোক, মহা মহা চিন্তা কইরাই কূল পায় না।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।