শাহ হান্নানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া - উপসংহার

অপ বাক এর ছবি
লিখেছেন অপ বাক (তারিখ: শনি, ০৩/১১/২০০৭ - ৬:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিষয়টা অজ্ঞানতা প্রসুত কোনো আকস্মিক উচ্চারণ নয় বরং স্পষ্ট বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা। তবে কোটি টাকা দামের প্রশ্ন হলো হঠাৎ করেই জামাতের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা এমন একটা স্পষ্ট বিরোধিতার অবস্থানে চলে যেতে চাইছেন কেনো? তারা গত ১ সপ্তাহে যেসব দুর্বিনীত এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতামুলক বক্তব্য বলেছেন তা যদি পরিমাণগত হিসেবে এবং ধারাবাহিকতায় বিবেচনা করা হয় তবে ১৯৭১এ তারা এবং তাদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের পাতায় নিয়মিত এমন উচ্চাকাংক্ষী বক্তব্য আসতো তাদের। তবে তখনকার ভাষ্য এবং বর্তমানের ভাষ্যের একটা মৌলিক পার্থক্য হলো এখন তারা বলছে বাংলাদেশের নাম নিয়ে এবং তখন তারা বলতো অখন্ড পাকিস্তানের নামে। বক্তব্যের বিষয়বস্তু বদলায় নি ।

ভারত আমাদের সার্বভৌমত্বের পথে প্রধান অন্তরায় এবং এ দেশকে কুক্ষিগত করবার চক্রান্ত করছে। এবং তারা যা করছে এবং ১৯৭১এ যা করেছে তা সবসময়ই শুভ ছিলো।
১৯৭১ প্রসঙ্গে জামাতি বয়ান হলো তৎকালীন সময়ে বাঙালী ২টা অংশে বিভক্ত হয়ে পারস্পরিক সংঘাতে লিপ্ত হয় এবং যেহেতু জামাত ইসলামের রক্ষক এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় ইনলামকে দেখতে চায় এবং যেহেতু জামাত পাকিস্তানের অখন্ডতার রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিলো তাই তাদের বন্ধুতা গড়ে উঠে পাকিস্তন সেনাবাহিনীর সাথে। যদিও অবস্থান প্রসঙ্গে স্পষ্টতা রাখলেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে সখ্যতার বিষয়টা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে দলটি।

পাকিস্তানী মতবাদে বিশ্বাসী বাংলা ভাষিদের সাথে পুর্ব পাকিস্তান অধিবাসি এবং সেক্যুলার বাংলাদেশের জন্য লড়াই করা মানুষদের সাথে সেনাবাহিনী লড়াই করছিলো। তাদের যেহেতু সমর্থন দিয়েছে ভারত তাই এটা একটা ভারতীয় চক্রান্ত ছিলো পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার। এ কাজে সেনাবাহিনীকে নৈতিক ভাবে সমর্থন দিয়েছেপাকিস্তান মতবাদে বিশ্বাসী পুর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীরা। পারস্পরিক এই সংঘাতে উভয় পক্ষই হতাহত হয়েছে এবং বিষয়টা আদতে এক ধরণের গৃহযুদ্ধ। তাই তারা কোনো ভাবেই যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত ছিলো না। এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে চলমান মামলা নেই তাই তাদের যুদ্ধাপরাধী এবং রাজাকার বলাটা এক ধরনের অপমান।

তারা অবশ্যই মানহানীর মামলা ঠুকে দিতে পারে শুধু দয়াপরবশ হয়ে তারা এ কাজটা করছে না। সংঘর্ষিক রাজনৈতিক বিশ্বাসজনিত সহিংসতা ও সশস্ত্র লড়াইয়ে উভয় পক্ষই হতাহত হয়েছে। পাক বাহিনী মেরেছে বাংালী আর মুক্তিযোদ্ধা
পক্ষান্তরে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেছে পাকিস্তানী সেনা আর সেই সেনা বাহিনীর দালালদের। পাকিস্তান পন্থীরাও একই ভাবে তৎকালীন সময়ের দুস্কৃতিকারিদের হত্যা করেছে।
১৯৭২ এ এক চুক্তিতে ভারতের হাতে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দী হস্তান্তরের পরেই সে গল্প শেষ , এখন দেশে সবাই স্বাধীনতাকামি এবং দেশপ্রেমিক। জামাত দলমত নির্বিশেষে সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ গঠন করতে চায়।

এই আদর্শিক অবস্থান জামাতের নিজস্ব নির্মাণ। জামায়াতের বিভিন্ন পুঁথিতে এই আদর্শিক অবস্থান প্রচারিত হয়। জামাত রাজনৈতিক কৌশল বদলে ৭১এ তাদের ভুমিকা নিয়ে লজ্জিত এবং তারা ক্ষমাপ্রর্থী এমন ঘোষনা দিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের একটা চেষ্টা করতে পারতো, তবে ৭৫ পরবর্তী সময়ের বাস্তবতায় একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় জামাতের কাছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসবার জন্য তাদের ক্ষমা প্রাথ্যনার কোনো প্রয়োজন নেই বরং দেশের কর্ণাধার তাদের সাদরে এবং সাগ্রহে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব দিতে অত্যুৎসাহী।

১৯৯২এ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একটা আন্দোলন তৈরি হয়েছে তখনও তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারতো এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের দল থেকে বহিস্কার করে দিয়ে পরিস্কার শ্লেটে রাজনীতি শুরু করবার কধা ভাবতে পারতো। তবে আমার সংশয় তখন সেটা করবার মতো বাস্তবতা ছিলো কি জামাতের ভেতরে? যুদ্ধাপরাধী এবং দালালেরা এখনকার মতো তখনও দলটির প্রধান নেতা এবং নীতি নির্ধারক। কিন্তু সে সময় আবারও রাজনৈতিক বৈরিতার প্রশ্নে গিয়ে বি এন পির সিদ্ধান্ত হলো এটা জনগণের আন্দোলন নয় বরং নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগ এ আন্দোলন পরিচালনা করছে। তাই তারা প্রশাসনিক ভাবে এ আন্দোলন দমনের চেষ্টা করলো এবং অনেককে কারাগারে প্রেরণ করলো। জামাত একটা সবুজ সংকেত পেলো যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভোট ব্যাংক যথেষ্ট না হলেও তারা একটা প্রভাবক বটে। ১৯৮৬ এর নির্বাচনে জামাতকে সাথে নিয়ে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ক্ষতি হয়েছিলো ঠিকই। তবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অংশটা এ দেশের জনগন। তাদের স্বজনের হত্যাকারীরা সে সময়েই প্রধান ২টি দলের সাথে আঁতাত গড়ে তুলতে সমর্থ হয়। এরশাদ এবং জিয়ার দায় ছিলো, ক্ষমতা নিরংকুশ করবার দায় তবে ৮৬ এর হাসিনা এবং ৯২ এর খালেদা জিয়ার এই দায় ছিলো না। এরপরও তাদের এ সিদ্ধান্ত এবং ১৯৭২ এর পরবর্তী সময়ে প্রশাসনে কর্মরত পাকিস্তানপন্থীরা যাদের একজন এই শাহ আব্দুল হান্নান- তাদের পদাধিকার এবং তাদের ন্যস্ততা দেখে আমার এখন মনে হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত মামলার যাবথীয় নথি এবং গুরুতœপূর্ণ প্রমাণগুলো কৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে এবং এর ভেতরে অসংখ্য দলিল আছে যার অনুলিপি পাওয়া কোনো ভাবেই আর সম্ভব হবে না। এবং এ কাজ সম্পূর্ণ এবং সুচারু রুপে সমাধা হয়েছে বলেই জামাতের নেতৃবৃন্দের এই সাম্প্রতিক উলম্ফন।

জামাতের মতাদর্শিক গুরুরা এটা বিশ্বাস করে ৭১এ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষাবলম্বন কোনো ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো না। তারা সঠিক মানুষদের সাথেই গাঁটছাড়া বেধেছিলো। এই মতাদর্শ পরিবর্তনে তারা অনাগ্রহী।

বিষয়টা বিশাল একটা জোচ্চুরি। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ কখনই পাকিস্তান ইসলামপন্থী কোনো দেশ ছিলো না, এমন কি জামাতের কোনো প্রচারনা সেক্যুলার না হওয়ায় তারা জামাতের প্রথান নেতাকেও আটক করেছিলো । এবং জামাত দাবি করলেও পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রের কোথাও নেই যে ইসলামপন্থা হবে পাকিস্তানের রীতি। তাই জামাত ১৯৭১ এর প্রথম পর্যায়েও পাকিস্তানের বিরোধি। তারা হঠাৎ করেই সেক্যুলার বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান নেয় ১৯৭১এর মার্চ থেকে।
২৬শে মার্চ স্বাথীনতার ঘোষনা, ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহন- স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তির লড়াই-

পাকিস্তানী বাহিনী মুক্তিবাহিনীর অস্তিত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং তারা নিশ্চিত ভাবেই জানতো কারা প্রতিরোধ সংগ্রাম করছে। তারা এদর বলেছে ভারতীয় চর, দুস্কৃতিকারি, জামাতও সম্পুর্ণ অবগত ছিলো তদের পরিকল্পনা এবং স্বাথীন বাংলাদেশের সংগ্রাম বিষয়ে।

এর পরে প্রাথমিক প্রতিরোধ লড়াই এবং ২০শে এপ্রিলের ভেতরে অধিকাংশ জেলা শহরই আসলে পাকিস্তান সৈন্যদের দখলে চলে যায়। সে সময়ই শান্তি বাহিনী এবং আল বদর এবং আল শামসের জন্ম বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। এই স্বাধীনতা বিরোধি চক্রগুলো গড়ে উঠেছে এবং তারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে অস্বীকার করেছে।

তবে তাদের ধারাবাহিক তোষণের ফলে তারা নিজেদের বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য ভাবতে শুরু করেছে। ভাবনার এ জায়গাটা আমার কাছে আশ্চর্য লাগে ভাবলে। একই সাথে আমাদের অগ্রজদের সীমাহীন ব্যর্থতায় ক্ষিপ্ত হই।
১০ই এপ্রিলের পর প্রবাসী সরকারের সদস্যরা বেশ চমৎকার কিছু কাজ করেছিলেন। তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং তাদের কর্মদক্ষতা ও বিচক্ষনকার সাক্ষ দেবে ইতিহাস। তারা বাংলা ভাষাভাষিদের ভেতরে একটা জোড়ালো ঐক্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা করেছেন। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্ত বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে ভারতে প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে বাংলাদেশে আসবার সময় তারা পাকিস্তানী বাহিনীর দোসরদের মুক্তিযুদ্ধে সামিল হওয়ার অনুরোধ করেন এবং এই শর্তে তাদের অপরাধ ক্ষমা করা হরে এমন ঘোষনাও দেন। রাজনৈতিক বৈরিতা সত্ত্বেও তাদের এ পদক্ষেপ এতটা গুরুতœপূর্ন কারন এই পদক্ষেপের সাথে সাথে এটা নিশ্চিত হয়ে যায় আমরা রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভে কোনো লড়াই করছি না। মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করছে এ দেশের সকল নাগরিকের স্বাধীনতা স্বাধীকারের জন্য। এবং এখানে স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি যারা বিভ্রান্ত তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

তাদের এই পক্ষ পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েও পক্ষ পরিবর্তনা না করার সিদ্ধান্ত তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক চিন্তকেরাই নিয়েছিলো। আত্তীকরণের কোনো উদ্যোগ ছিলো না মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতরে, আমরা তো বললেই তাদের সাথে যুক্ত হতাম, এমন কোনো অনুযোগের রাস্তা আসলে তাদের সামনে খোলা নেই এখন। এখন তারা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে এটা গৃহযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধারা ব্যক্তিস্বার্থ বিবেচনায় মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তাদের কোনো আদর্শিক ভিত্তি ছিলো না। কুতর্কের খাতিরে মেনে নিলেও এই একই যুক্তিতে বলা যায় যদিও তারা বোনো রকম আদর্শ থেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে নি তবে তারা কিন্তু সঠিক পক্ষেই লড়াই করেছে। তারা এ দেশের মানুষের কাম্য ভবিষ্যতের পক্ষেই লড়াই করেছে এবং এই বুঝদার বিশেষজ্ঞ কাদের মোল্লা তার সকল প্রজ্ঞাসহই স্বাধীনতার বিরোধি পক্ষে থেকে যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত ছিলো সম্পূর্ন সময়। এমন কি কেেিনা আদর্শিক বুনোট যদি ন্ওা থাকে তাতে এই সব কাদের মোল্লা আর মুজাহিদ নিজামি কামরুজ্জামানের এবং আজহারুল ইসলামের যুদ্ধাপরাধের দায় স্খলিত হয়ে যায় না।

তারা যে প্রচারনার চেষ্টা করছে তাতে ১৯৭১এর ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর সময় কালে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একে গৃহযুদ্ধ বিবেচনা করা হয়েছে। অতীব আশ্চর্য হতে হয়। প্রশ্নটা হলো বাঙালীরা এটাকে কি হিসেবে দেখেছে? এর পরও বস্তুগত তেমন প্রমাণ নেই যে এটা আদতেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে গৃহযুদ্ধ বলে বিবেচিত হয়েছে সবটা সময়। এমন কি এ বিষয়ে অনেস পেপার কাটিং উপস্থিত করা যাবে যেখানে এটাকে স্বাথীনতার যুদ্ধ বলা হয়েছে।

তারা যে পণ্য কিংবা রজনৈতিক অবস্থান বাজারে বিত্রির জন্য এনেছে সেটা অনেকটা এ রকম

৭১এ ইসলাম বিপন্ন হবে ভেবে তারা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনীর আগ্রাসন সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়।

বিষয়টা আদতে গৃহযুদ্ধ ছিলো এবং উভয় পক্ষের সমর্থকেরা এতে হতাহত হয়েছে।

তারা যা করেছে তৎকালীন সময়ে বিশেষ একটা আর্থ সামাজিক অবস্থায় তা ছিলো সে সময়ের দাবি- এই পরিপ্রেক্ষিতটাকে বিবেচনা করতে হবে( তবে তারা ঠিক কিভাবে বিবেচনা করবে এই পক্ষচিহ্নিতকরণের ব্যর্থতার বিষয়টি এটাও জানতে আগ্রহী আমি। সে বিশেষ সময়ে পক্ষ পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েও পক্ষ পরিবর্তন না করবার সিদ্ধান্ত এবং মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সমর্থকদের উপরে অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিওয়ার বিষয়টাও ঠিক কোন বিবেচনায় নিতে হবে এটাও পরিস্কার হওয়া প্রয়োজন। )

আদতে ৩০ লক্ষ মৃতু্যু বরণ করে নি। প্রয়োজনে পরিসংখ্যান করে নির্ধারণ করো বলে একটা আলাদা বিতর্ক উস্কে দেওয়া। ( কথা হলো মৃতের শুমারি করে কি অপরাধ কম হয়। যদি ২৬ হাজারই নিহত হয় তবে সেই ২৬ হাজার হত্যার দায় কে নিবে? কিংবা এই হত্যাগুলোর বিচারের মুখোমুখি কি তাদের হতে হবে না? মৃতের শুমারি কোনো ভাবেই বর্বরতার দায় থেকে মুক্ত করে না তাদের। )
এরপরও একটা বিতর্ক জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা।

ধরে নিতেই হচ্ছে জামাতের বিবেচনা ছিলো লাঠি আর সরকি দিয়ে পাবিস্তানী সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করতে পারবে না বাঙালী, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং যুদ্ধে স্বাধীকারসমর্থকেরা পরাজিত হলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পদলেহনকারি তারাই হবে ক্ষমতার মুল অধিকারি। তারাই মূল রাজনৈতিক শক্তি হবে এবং এই একই কারণে আসলে তাদের ক্ষোভ এবং তাদের প্রতিশোধম্পৃহার বলি হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা। এবং তারা চেষ্টা করছিলো যতবেশী সম্ভব লীগপন্থীদের হত্যার।

তারা যখন ইসলাম বিপন্নতার কথা বলে ৭১এ তাদের ভুমিকাকে সমর্থনের চেষ্টা করে যে ভারতের সমর্থনে এবং সহযোগিতায় পাকিস্তানের অখন্ডতা ধ্বংস হলে ইসলাম বিপন্ন হবে ভেবেই ইসলামী প্রেমে মত্ত হয়েই তারা এ অবস্থান গ্রহন করেছে তখন প্রশ্নটা সামনে চলে আসে ইসলাম কি বিপন্ন ছিলো ১৯৭১এ? ইসলাম কি বিপন্ন হয়েছে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬? ইসলাম কি এখন বিপন্ন? এসলাম কি কখনও আদৌ বিপন্ন ছিলো? নির্বোধদের বিবেচনা কি বলে?

তবে জামাতের এই ইসলাম বিপন্নতার বুলি আরও একটা ধোয়াশাচ্ছন্ন অবস্থান, ক্ষমতার রাজনীতিতে একটা ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানোর চেষ্টা এবং নিজেদের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের সপক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা- এবং এই দাবীর নীচের ভুমিতে শক্ত কিছওই নেই। তারা বন্ধু বাছাই নীতিতে সবসময়ই ক্ষমতাবানদের পা চাটা কুকুর রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী এবং রাজনৈতিক সুবিধাবাদ বিবেচনা করে জামাত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে ৭১এ।

লজ্জাজনক সত্য হচ্ছে জামাতের এই সাম্প্রতিক বক্তব্য মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি ক্ষতিগ্র্রস্ত্রদের আহত করলেও এখনও বি এন পির সংস্কারপন্থী নেতাদের ভেতরে জামাতের প্রহনযোগ্যতায় কোনো প্রভাব নেই। মান্নান ভূইয়া বলেছে যুদ্ধাপরাধী নেই- তার সাথে তাল মিলিয়ে মেজর হাফিজুদ্দিন বলছে যুদ্ধাপরাধী নেই। এবং একই সাথে প্রক্তন সেক্টর কমান্ডারদের মামলার সিদ্ধান্ত আরৗ আশ্চর্য করেছে। এদের সবাইকে খারাপ বলতে পারছি না তবে অধিকাংশ সুবিধাভোগী এবং ক্ষমতালিপ্সু। এদের দিয়ে আদতেই কোনো গুনগত পরিবর্তন সম্ভব এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি এ বিষয়ে সংশয়বাদী।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ধরি মাছ না ছুঁই পানি মতবাদে চলছে। একই রকম অবস্থান নির্বাচন কমিশনের।

তবে একটা বিষয় ক্রমশ পরিস্কার যে জামাতের এই উলম্ফনের পেছনে কোনো এক শক্তিশালী পক্ষ রয়েছে। কারা এই পক্ষ এবং কারা জামাতকে আশ্বস্ত করেছে যে এইটাই উপযুক্ত সময়, তোমরা একটা অবস্থান নাও। ফৌজদারি মামলা হবে- পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় তোমরা পার পেয়ে যাবে।
বুদ্ধিজীবি হত্যার বিষয়টা মর্মান্তিক এবং আমাদের সাক্ষীদের অনেকেই এই বুদ্ধিজীবি পর্যায়ের এবং তাদের পরিবারের সদস্য। তবে আমাদের আবারও শুরু করতে হবে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ। মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ প্রতিটা ওয়ার্ডে জনমত সংগ্রহ ও জামাত নির্মূল কমিটি গঠনের আহ্বান করেছে। আরও বড় অবদান তারা রাখতে পারে যদি তারা কোনো ভাবে স্থানীয় রাজাকার বিষয়ে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করে। ঘাতক দালালেরা কে কোথায় এই পুস্তকের কলেবর বৃদ্ধি নয় বরং উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করে সেটা সংরক্ষন করা যেনো বিচারের সময় তারা এসব আদালতে উপস্থাপন করতে পারে।

ফৌজদারি আদালতে মামলা করবার কথা বলে প্রধান উপদেষ্টা তার কৌলিনত্ব অটুট রাখলেও তিনি যে আদতে কোনো ভাবেই স্বদেশসংলগ্ন নন এটার প্রমাণ আবারও উপস্থাপন করলেন। কিংবা তার ঘনিষ্ট মিত্রদের ভেতরে স্বদেশচেতনার অভাবও প্রকাশিত হলো। আমি লজ্জিত জবে আমার মতামত এখনও বদলাতে পারলাম না। আদতে ফখরুদ্দিন কোনো ভাবেই উপযুক্ত ব্যক্তি নন, তার ডিগ্রীর ভার আছে তবে নেতৃত্ব দেবার মতো মানসিকতা এবং যোগ্যতা নেই।

শাহরিয়ার কবিরের যুক্তি এবং তার সংযত উপস্থাপনের পর তার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়েছে। তার বক্তব্য শুনে এবং পড়ে বলছি আদতে যুদ্ধাপরাদ সংঘটিত হয় একটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবং রাষ্ট্রকেই মুল বাদী হতে হয়। দার সম্পদ নষ্ট হয় এই যুদ্ধাপরাধীদের দ্বারা এবং তার মানবসম্পদ ধ্বংস হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের হাতে। আমরা রাষ্ট্রকে সহায়তা করতে পারি উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ দিয়ে তবে বিচারের মূল বাদী হতে হবে রাষ্ট্রকে।

রাষ্ট্র যেনো যুদ্ধাপরাধের বিচার করে এই দাবিতে জনমত গঠনের লজ্জা থাকলেও এটাউ উপযুক্ত পন্থা। বিভিন্ন মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে যুদ্ধাপরাধের নথি সংগ্রহ করেছে এবং তারা প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে সহায়তার জন্য প্রস্তুত। এর ভেতরে বেশ কিছু ক্ষুদে সংবাদ পড়ে একটা বিষয় কানলাম আদতে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হলেও সেটা পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গড়িমসিতে আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে নি। এসব ঘটনা দুঃখজনক এবং হতাশার। এই হতাশার মুখোমুখি হয়েছে অনেক শহীদ পরিবার। এবং তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি থেকে সরে আসে নি। বরং রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতালিপ্সু মানুষেরা সবসময়ই এটাকে রাজনৈতিক অস্ত্র বিবেচনা করে এটাকে চিরতরে বন্ধ করবার কোনো তাগিদ বোধ করে নি।

বরং পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা কখনও মুক্তিযুদ্ধে স্বজনহারাদের পক্ষাবলম্বন করে কখনও যুদ্ধাপরাধীদের আদর করে কোলে তুলে নিয়ে ক্ষমতার অংশীদার বানায়। এবং এই আচরণে লীগ বিএন পি কেউই পিছিয়ে নেই।


মন্তব্য

Rana এর ছবি

জামাতের পিছনের সেই শক্তি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তবতা যে আওয়ামী লীগ কোন দিনও জামাতকে নিষিদ্ধ করতে দেবে না কারণ জামাত নিষিদ্ধ হলে তাদের ১০% ভোট চলে যাবে বি.এন.পির বাক্সে যা ভোটের রাজনীতিকে আওয়ামী লীগের জন্য খুবই বিপজ্জনক। তারা বরং চায় জামাত আরো শক্তিশালী হোক এবং ৯৬ এর মত একক ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহনের সাহস করুক। কেবলমাত্র তখনই আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাবার সম্ভাবনা তৈরী হয়। তা'নাহলে আওয়ামী লীগ জিন্দিগিতেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না।

অপ বাক এর ছবি

হতে পারে সেটা আওয়ামী লীগ, কিংবা আরও কিছু স্বার্থসংশ্লিষ্ঠ গোষ্ঠী, তবে আন্দোলনের সময় কে কোন ভুমিকা নিবে কিংবা নিতে পারে এটা আগে থেকে জানা থাকলে সুবিধা ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইখানে রাস্তা তো একটাই। আওয়ামী লীগকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা। ১৯৯৩/৯৪ এর পাপ স্খালনের আর কোন রাস্তা নেই আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগ কোনদিনই মুসলীম লীগের রাজনীতির ঘেরাটোপ থেকে বের হতে পারবে না কারন সেটা তার গঠন উপাদান। জামায়াতের সাধে তাদের বিরোধ কার্যত বিএনপির সাথে বিরোধ থেকে আলাদা কিছু না। সেক্ষেত্রে তাদেরকে গলায় পাড়া দিয়ে জামাত খতমে বাধ্য করলে সেটা তাদের ভোটের রাজনীতিতে আত্মহত্যাই হবে। সেখানে আসলে কিছু করার নেই। জামাত খতমের দাবী জনগনের। জামাত খতমের দাবী ১৯৭১ এর ৩০ লক্ষ শহীদের। এর প্রতিশোধ নিতে একটা আওয়ামী লীগের ভোটের রাজনীতিতে মার খাওয়া কোন ঘটনা না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীদারদের এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে যাতে আওয়ামী লীগ তাদের ভোটের রাজনীতিন হিসাব নিকাশের বাস্তব ক্ষতি করে জামাত-শিবির খতম করতে বাধ্য হয়। এটা আওয়ামী লীগের চামচার অবস্থান থেকে সম্ভব নয়।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।